অতিমানব

অতিমানব - অপু তানভীর
4.3
(27)

এক

-হেই বেইবি ! এদিকে একটু তাকাও ! তাকাও না !

কালো রংয়ের হ্যামার গাড়িটার দিকে তাকিয়ে নীলু খানিকটা অসহায় বোধ করতে লাগলো । একবার মনে হল জানলার সিট থেকে সরে অন্য কোন সিটে গিয়ে বসে । কিন্তু তার উপায় নাই ।

ওদের এই স্কুল বাসটায় আগে বসার সিট নিয়ে প্রায় বাচ্চাদের ভিতর গন্ডগোল বেঁধে যেত । তাই স্কুল কর্তৃপক্ষ সবার বসার সিট নির্দিষ্ট করে দিয়েছে ।

আর নীলু জানলার পাশে ছাড়া ঠিকমত বসতেও পারে না । বাস চলার সময় জানলা দিয়ে বাতাস না আসলে নীলুর কেমন দম বন্ধ হয়ে আসে । তাছাড়া পুরো বাসটার ভিতর নীলুই সব চেয়ে বয়সে বড় । আর সবাই নিচের ক্লাসে পড়ে । মোটামুটি সেই এই পুরো বাসের গার্জিয়ান ।

এতো গুলো বাচ্চার ভিতর নিজেকে খানিকটা বাচ্চা বাচ্চা লাগে । বাচ্চাদের সাথে স্কুল বাসে উঠতে একটু লজ্জা লজ্জাই লাগে ।

ওদের ক্লাসের কেউই আর স্কুল বাসে করে স্কুলে আসে না । কিন্তু নীলুর স্কুল বাসে না এসে কোন উপায় নাই । ওদের বাসা থেকে স্কুলটা বেশ খানিকটা দুরে । রিক্সা বা সিএনজিতে যাওয়ার মত এতোটা বিলাশিতা ওদের নেই । যাতায়াতের জন্য বাসই ভরশা । কিন্তু আজকে এই কি উটকো ঝামেলা এসে জুটলো ।

কালো রংয়ের বড় গাড়িটা থেকে ছেলে গুলো রীতিমত অশালীন মন্তব্য ছুড়ে দিচ্ছে । বলাই বাহুল্য সব ইঙ্গিত গুলো ওকে লক্ষ্য করেই ।

নীলুর আর না থাকতে পেরে জানালার সিট থেকে উঠে দাড়ালো । ঐ দিককার কোন সিটে গিয়ে বসবে ।





দু

ডন একটু একটু কাঁপছে । স্টীয়ারিংয়ে ধরা হাতটাও একটু একটু কাঁপছে । এতো বড় হ্যামার গাড়িটা ঠিক মত সামলাতে পারছে না । তবুও সেই দিকে হুশ নেই ওর । এক হাতে এখনও একটা হুইস্কির বোতল ধরা । ক্ষণে ক্ষণেই তাতে চুমুক দিচ্ছে ।

এতোক্ষণ একটা স্কুল বাসের পাশে পাশি চলছিল । জিম স্কুল বাসের ভিতর বসা একটা মেয়েকে টিজ করছিল । আর ওরা হা হা করে হাসছিল ।

-এই শালা #&@$ !

জিম একটা খারাপ গালি দিয়ে উঠলো । ডনের অবশ্য খুব বেশি হুস নেই । দু তিনবার বললে একবার শুনছে । জিমের আরেকবার গালিতে একটু যেন হুস ফিরলো ।

-কি হল ?

-আরে শালা দেখছিস না মেয়েটা উঠে গেল । জলদি সামনে চল ।

-কোথায় ?

-আরে খানকির পো গাড়ির স্পীড বাড়া ।

স্পীড বাড়া কেবল এই কথাটা ই কানে আসলো । এক্সেলেটরে চাপ দিয়ে দিল ।

গাড়ি ততক্ষণে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের অর্ধেক টা পার করে ফেলেছে । এই ফ্লাই ওভারটা নতুন হয়েছে । চলাচলের জন্য বেশ ভাল । গাড়িও দ্রুত চালানো যায় ।

গাড়ির গতি বেড়েই চলেছে হু হু করে । হঠাত্‍ ডনের চোখের সামনে কিছু একটা দেখা গেল । দেখতে দেখতে একদম কাছে চলে এল । একটা কার গাড়ি । দাড়িয়ে আছে ।

রাস্তার দিকে খুব বেশি লক্ষ্য নেই বলে ডন ঠিক সময়ে ব্রেক চাপতে পারলো না ।

-আরে মাদা§&€¥$ বাঁয়ে কাট । বাঁয়ে ।

হুম বাঁয়ে নিতে হবে । ধাক্কা এড়ানোর জন্য হ্যামারটাকে বাঁয়ে নেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নাই ।

ডন স্টীয়ারিং টা বাঁ দিকে ঘুড়িয়ে দিল ।







তিন

হামিদ আলী সেন্ট জোসেফ ইন্টারন্যালাল স্কুল এন্ড কলেজের বাস ড্রাইভার । হামিদ আলীর ডিউটি মিরপুর রোড থেকে যাত্রাবাড়ি রুটে গাড়ি চালানো । কদিন আগেও এই রুটে গাড়ি চালানো খুব ঝামেলার একটা কাজ ছিল । সারা রাস্তা জ্যাম আর জ্যাম । কিন্তু নতুন এই ফ্লাই ওভারটা হওয়াতে এখন গাড়ি চালিয়ে বেশ আরাম পাচ্ছে ।

আজকেও গাড়ি চালাচ্ছিলেন আপন মনেই তখনই মিরর ভিউতে দেখতে পেলেন একটা কালো রংয়ের বড় গাড়ি তার বাসটার পাশাপাশি চলছে । তিনি কিছুক্ষন গাড়ির গতি কমিয়ে দেখলেন কিন্তু কালো গাড়িটা তার পাশাপাশিই রইলো । গতি বাড়িয়েও দেখলেন একই অবস্থা ।

তার আর বুজতে বাকি রইলো না যে গাড়িতে থাকা লোক গুলো বাসের মেয়েদের বিরক্ত করছে ।

ফ্লাইওভারে ওঠার পরেই হামীদ আলী গাড়ীর গতি বাড়িয়ে দিল । কয়েক মুহুর্ত কালো গাড়িটা পিছিয়ে পড়েছিল কিন্তু পর মুহুর্তেই এগিয়ে আসতে শুরু করলো ।

এই কাছে চলে এসেছে ।

এই !

ঠিক তখনই একটা ঘটনা ঘটলো । কালো গাড়িটা হঠাত্‍ করেই স্কুল বাসটার দিকে বাঁয়ে চেপে এল । চেপে আসতে আসতে একেবারে বাসের সামনের ডান চাকার সাথে লাগিয়ে দিল ।

হামিল আলী কেবল লক্ষ্য করলেন তার গাড়ি তার নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে । গাড়ি কয়েক সেকেন্ড সোজা চলার পরে বা দিকে ঘুরে গেল আপনা আপনি ।

হামিদ আলী গায়ের সর্ব শাক্তি দিয়ে ব্রেকে চাপ দিয়ে ধরলেন কিন্তু কোন লাভ হল না । গাড়ির গতি বিন্দু মাত্র না কমে সরাসরি উড়াল সেতুর রেলিংয়ে আঘাত করলো ।

প্রচন্ড একটা ঝাকি খেল পুরো বাসটা । হামিদ আলীর মাথা ঠুকে গেল সামনের স্টীয়ারিং এ । জ্ঞান হারানোর আগে হামিদ আলী কেবল এই টুকু অনুভব করল রেলিংটা বাসের ধাক্কা ঠিক মত সহ্য করতে পারে নি । গতি যদিও কমে গেছে । কিন্তু গাড়িটা পুরোপুরি থেমে যায় নি । আস্তে আস্তে রেলিং পার হয়ে বাসটা নাচে পড়তে চলছে ।







চার

আরমানের মেজাজটা একটু খারাপ । খুব বেশি না । সামান্য খারাপ । প্রায়ই তার এই রকম মেজাজ খারাপ হয় । বাসে উঠে যদি জানালার পাশে বসতে না পারে তাহলে এমন মেজাজ খারাপ হয় । আরমান খুব ভাল করেই জানে পাবলিক বাসের যাত্রীদের এমন হাস্যকর কারনে মেজাজ খারাপ করা মানায় না কিন্তু আরমানের মেজাজ খারাপ হয় । আর মেজাজ খারাপ টা গিয়ে পরে ওর পাশে বসা লোকটার উপর ।

আজকেও আরমান জানলার পাশে বসতে পারে নি । এই জন্য যথেষ্ঠ বিরক্ত । আর বিরক্তিটা ওর পাশে বসা ছেলেটার উপরে । ছেলেটার বয়স খুব বেশি হলে বাইশ তেইশ হবে । চুলগুলো একটু বড় আর ঘন । কালো রংয়ের একটা প্যান্ট পড়ে আছে আর লালকালো গ্রামীন চেকের ফুল হাতা শার্ট পরে আছে । কানে হেড লাগিয়ে আপন মনে গান শুনছে ।

আরমানের একবার মনে হল ছেলেটাকে একবার বলে যে জানালার পাশের সিট টা ওকে দিতে । দেখতে তো ভদ্রছেলেই মনে হচ্ছে । অনুরোধ করলে নিশ্চই দিবে । কিন্তু কেন জানি বলতে পারছে না ।

দুইবার বলবে বলে ঠিক করেও বলতে পারে নি । এই বার বলতেই হবে । ছেলেটা নিশ্চয়ই শুনবে । আরমান বলতে যাবে ঠিক তখনই জানলা দিয়ে উল্টো দিকের দিকে চোখ চলে গেল । সঙ্গে সঙ্গে আরমানের মুখ হা হয়ে গেল ।

একটা কালো রংয়ের হ্যামার পাশ থেকে একটা স্কুল বাস কে ধাক্কা দিল । বাসটা নিয়ন্ত্রন হারিয়ে সোজা পাশের রেলিংয়ে ধাক্কা মারলো । রেলিং বাসের ধাক্কায় ভেঙ্গে পড়েছে । বাসটা ফ্লাইওভারের নিচে পড়ে যাচ্ছে ।

আরমান স্কুল বাসটা পড়ে যেতে দেখছে । সব কিছু ঘটলো মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ভিতর ।

আরমানের মুখ থেকে আপনা আপনি একটা চিত্‍কার বেরিয়ে এল । কেবল ও না ওর আসে পাশের পাশের যাত্রীরাও দুর্ঘটনা টা দেখতে পেয়েছে ।

আরমানের মুখদিয়ে চিত্‍কার বের হওয়ার আগেই আর একটা অবাক করা ঘটনা ঘটলো ।



চোখের নিমিষে আরমানের সিটের জানালার ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল ।আরমান কেবল অবাক হয়ে গেল পড়ে যাওয়া বাসটার পেছন দিকটা কেউ একজন চেপে ধরেছে । চেপে ধরা মানুষটা আর কেউ না ওর পাশে বসা লাল কালো গ্রামীন চেকের শার্ট পড়া ছেলেটি ।







পাঁচ

তানজিনা কয়েক মুহুর্ত কোন যেন নিতে ভুলে গেছেন ।

ডিউটি না থাকায় আজকে হাসপাতাল থেকে একটু আগে আগেই বের হয়েছিলেন । উড়াল সড়ক হওয়ায় ইদানিং এটার উপর দিয়েই যান । দ্রুত যাওয়া যায় ।

আজকে ফ্লাইওভারের উপরে ওঠায় পর থেকেই তিনি ব্যাপায়টা লক্ষ্য করছিলেন । একটা কালো রংয়ের হ্যামার আর একটা বাস পাশাপাশি চলছে ।

হ্যামারটা ঠিক পেছনেই তানজিনার গাড়ী ছিল । তাই সব কিছু দেখা যাচ্ছিল পরিস্কার ।



হঠাত্‍ কি হল কালো রংয়ের হ্যামার গাড়িটার গতি বেড়ে গেল । বাসটাটে ক্রস করার সময় ঠিক ওর সামনে গিয়েই বাসটাকে পাশ থেকে ধাক্কা দিল । বাসটা চোখের সামনে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে পাশের রেলিংয়ের ধাক্কা মারলো । তারপর রেলিং ভেঙ্গে নিচে পড়তে শুরু করলো । সব কিছু ঘটলো মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ভিতরে ।

তানজিনা বাসটাকে চোখের সামনে পড়ে যেতে দেখছেন । এমন দৃশ্য চোখ মেলে দেখতে পারলো না , চোখ বন্ধ করে ফেললো ।

এখনই হয়তো ভারী কিছু পতনের শব্দ শোনা যাবে তারপর চিত্‍কায় আর আর্তনাদ ।

প্রতিদিন হাসপাতালে এমন আর্তনাদ তাকে শুনতে হয় । অভ্যাস এখনও হয়ে উঠতে পারে নি ।

মানুষের চিত্‍কার আর্তনাদে এখনও তানজিনার বুকটা কেঁপে উঠে । তানজিনার চোখ এখনও বন্ধ ।

হঠাত্‍ তানজিনার মনে হল এতোক্ষনে বাসটার নিচে পড়ে যাওয়ার কথা । কিন্তু পতনের আওয়াজ এখনও পাওয়া গেল না । তাহলে কি পড়ে নি । একটু ভয়ে ভয়েই তানজিনা চোখ খুলল ।

চোখ খুলে যে অবিশাশ্য দৃশ্য দেখলো তা দেখার জন্য সে মোটেই প্রস্তুত ছিল না । তানজিনা দেখলো ওর গাড়িটা বাসটার খুব কাছে গিয়েই থেমেছে । আর বাসটার চার ভাগের তিন ভাগই ফ্লাইওভারের বাইরে । শূন্য ভাসছে ।

আর একটা বিশ পঁচিশ বছরের ছেলে বাসটা পেছন থেকে টেনে ধরেছে । খানিকটা হাস্যকর লাগছে কিন্তু তানজিনা কাছ থেকে ছেলেটার ফুলে ওঠা পেশী দেখতে পাচ্ছে । এবং বাসটাকে যে ছেলেটাই ধরে রেখেছে এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই ।

কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব ?

তানজিনা নিজের চোখ কে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না ।

এটা হতে পারে না ।

একটা ছেলের পক্ষে পুরো একটা বাসকে এভাবে টেনে ধরা কিছুতেই সম্ভব না ।

তানজিনা গাড়ি থেকে বাইরে বের হল । চারপাশে ততক্ষণ সব গাড়ি থেকে গেছে । তানজিনা লক্ষ্য করলো ওর মতই আশেপাশের সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে । সব কিছু যেন থেমে গেছে এখানে । কারো মুখে কোন কথা নেই । কেউ কেউ হা করে তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে ।

তানজিনা যখন বাস্তবে ফিরে এল তখন ও চিত্‍কার শুনতে পেল । চিত্‍কার আসছে বাসের ভেতর থেকে ।

কি করবে ও এখন ?

বাসের জানলা দিয়ে একটা বাচ্চার মুখ দেখা গেল ।

-আন্টি ! আন্টি !

বলতে বলতে মেয়েটা কেঁদে ফেলল ।

-না আম্মু । তোমাদের কিছু হবে না । একটু সাহস রাখো ।

বাচ্চা মেয়েটার পাশের আরো কতগুলো কান্না রত মুখ দেখা গেল ।

-শান্ত হও । কিছু হবে না ।

তানজিন বাচ্চা গুলোকে শান্তনা তো দিচ্ছে কিন্তু ঠিক কিসের জোরে শান্তনা দিচ্ছে ও নিজেই জানে না ।

হঠাত্‍ পেছন থেকে ভারী গলার আওয়াজ পাওয়া গেল ।

-বাচ্চা গুলো কে সব পেছনের দিকে আসতে বলেন ।

হ্যা তাই । তানজিনার আর দেরী না করে বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে বলল

-তোমরা সবাই পেছনের দিকে আসো । সবাই পেছনেয় দিকে আসো ।

মনেহল বাচ্চা গুলো তানজিনার কথা শুনছে । একটু পরেই হুটপুটি শোনা গেল । সবাই পেছনের দিকে আসছে ।

ঠিক তার এক মিনিট পরেই বাসটা একটু নড়ে উঠলো । ছেলেটা বাসটাকে এতোক্ষণ কেবল টেনে ধরে রেখে ছিল । এখন পেছনের দিকে টানতে শুরু করেছে ।

তানজিনা নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না । ছেলেটার শরীরের প্রতিটা পেশী তীর তীর করে ফুলে উঠেছে । শার্টের হাটা ফেটে হাতে পেশী গুলো বের হয়ে এসেছে ।

এই তো আসছে !

বাসটা উঠে আসছে ।

আসছে !



তানজিনার মত আসেপাশের অনেকেই অবাক হয়ে কেবল দেখতে লাগলো কিভাবে বাসটা আস্তে আস্তে ফ্লাইওভারের দিকে উঠে আসছে ।

কয়েক জন আবার ছেলেটাকে নিয়ে স্লোগান দিতে লাগলো । কেউ বা হাতে তালি দিতে লাগলো । মোট কথা সবাই ছেলেটাকে উত্‍সাহ দিতে শুরু করেছে ।



বাসটাকে টেনে নিরাপদ জায়গায় আনতে আরো পনের মিনিট লেগে গেল । তারপর ছেলেটা চোখের নিমিষেই বাসের ভিতর চলে গেল । ফিরে এল তারপর পরই ।

সব গুলো চোখ তখন ছেলেটার উপর নিবদ্ধ !

-এখানে কেউ ডাক্তার আছে ?

-জি আমি ডাক্তার ।

তানজিনা এগিয়ে এল ।

-আসুন আমার সাথে !

তানজিনাকে নিয়ে ছেলেটা আবার বাসের ভিতর চলে গেল ।

বাসের ভিতর বাচ্চা দের মোটামুটি সবারই কিছু না হয়েছে । কারো মাথা ফেটে গেছে কারো হাত কেটে রক্ত পড়ছে । কারো পায়ে ব্যাথা লেগেছে । বাসের ড্রাইভার তখনও অজ্ঞান হয়ে আছ তবে একটা মেয়ের অবস্থা খুব খারাপ । মাথার ডান দিকটায় একটা ভয়ানক ক্ষত ।

তানজিনা মেয়েটাকে পরীক্ষা করতে লাগলো । পরীক্ষা করে বলল

-এর অবস্থা খুব খারাপ । এখনই হাসপাতালে নিতে হবে ।

ছেলেটি আর বাক্যব্যয় না করে গুরুতর আহত মেয়েটাকে কোলে করে বাসের বাইরে এল ।

তানজিনাও ছেলেটার সাথে সাথে বাইরে চলে এল । কিছুক্ষন এদিক ওদিক তাকিয়ে কি যেন দেখলো ।

দুর্ঘটনার জন্য সারা এলাকায় জ্যাম লেগে আছে ।

মেয়েটাকে কিভাবে হাসপাতালে নিবে ? ছেলেটা হঠাত্‍ বলল

-আপনি বাসের ভিতর গিয়ে দেখুন কার অবস্থা কেমন ! ঠিক আছে ?

-আচ্ছা ! কিন্তু এই মেয়েটার কি হবে ?

-সমস্যা নেই আমি একে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি ।

-কিভাবে ? রাস্তায় তো প্রচুর জ্যাম ।

ছেলেটা কোন কথা বলল না ।



তারপর তানজিনা সহ আরও চারিপাশের সবাইকে অবাক করে দিয়ে মেয়েটাকে কোলে নিলো তারপর উড়ে চলে গেল । তানজিনার মত সবাই কেবল মুখ হা করে তাকিয়ে রইলো ! তানজিনার কেবল মনে হল এতোক্ষণ ও কোন ইংরেজি সুপার হিরো মুভির কোন দৃশ্য দেখছিল ।



এতোদিত নীল প্যান্টের উপর আন্ডারওয়ার পরা সুপার ম্যানকে দেখে এসেছে । আজকে প্রথম কালো জিন্স আর শার্ট পরা সুপার ম্যানকে দেখছে । একেবারে দেশী সুপার ম্যান !

একটু অবাক তো হওয়ার কথা ! কিন্তু চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা সে কিভাবে অস্বীকার করবে?







ছয়

পরদিন সকালে দেশের প্রতিটা সংবাদ পত্রে কেবল এই একটাই সংবাদ । ঢাকায় সুপারম্যান । সব কথা চ্যানেলে একই খবর প্রকাশ । কেউ কেউ পুরো রেস্কিউ ঘটনাটা মোবাইলে ভিডিও করেছে সেটাও দেখানো হচ্ছে ।

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় কেউ ই এই দেশী সুপারম্যানের কোন পরিস্কার ছবি তুলতে পারে নি । সবাই যখন এই সুপারম্যানের খবর নিয়ে ব্যস্ত তখন প্রায় সবারই চোখ এড়িয়ে গেল ভিতরের পাতার ছোট্ট একটা সংবাদ ।

পোস্তখোলা ব্রীজের নীচে একটা ভাঙ্গা চোড়া কালো রংয়ের হ্যামার গাড়ি পাওয়া গেছে । কেউ যেন প্রচন্ড আক্রোসে গাড়িটাকে দুমড়িয়ে মুচড়িয়ে এখানে এনে ফেলেছে । ঠিক তার কাছে দুইজন যুবককে উলঙ্গ আর প্রায় মৃত অবস্থায় একটা গাছের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে ।

অতিমানব গল্পটা প্রথম লিখেছিলাম ঢাকাইয়া সুপারম্যান নামে ২০১৩ সালে । বড় হাস্যকর লাগলেও এই গল্পটা আমার অনেক পছন্দের একটা গল্প।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.3 / 5. Vote count: 27

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

One Comment on “অতিমানব”

Comments are closed.