এই সব মিথ্যা গল্প 2.5

oputanvir
4.6
(69)

নীলুর মনটা সন্ধ্যা থেকে খারাপ হয়ে আছে । আজকে ওকে দেখতে এসেছিলো পাত্রপক্ষ । বলা যায় তারা নীলুকে পছন্দ করে গেছে । ছেলের বিসিএসের রেজাল্ট বের হয়েছে কয়েকদিন আগে । একেবারে ডাইরেক্ট ক্যাডার পদ পায় নি সে তবে ননক্যাডারে একেবারে প্রথম দিকে আছে । সরকারি চাকরি । নীলুর বাবা মায়ের জন্য এর থেকে বেশি কিছু চাওয়ার ছিল না ।

নীলুর মন খারাপের কারণটা অন্য খানে । নীলুর ছোট ভাই নিলয়ের স্যার মুহিব। ছেলেটাকে নীলু অনেক দিক টুকটাক পছন্দ করে । নীলু জানে মুহিব ওকে অসম্ভব পছন্দ করে । ফোনে টুকটাক কথাও বলে ওরা । আকারে ইঙ্গিতে নীলুকে সব সময় বোঝানোর চেষ্টা করে মুহিব ওকে বিয়ে করতে আগ্রহী । নীলু ওকে বলেছে যে ওর হাতে আসলে কিছু নেই । বাবা মায়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে সে কিছু করতে পারবে না । তবে সে যদি ভাল করে তাহলে বাবা মা মানা করবে না । নীলুও মানা করবে না ।

এইবার বিসিএস মুহিবও দিয়েছিলো । নীলু খুব অপেক্ষা করে ছিল রেজাল্টের জন্য । যখন শুনলো যে হয় নি তখন মন খারাপ হয়েছে । আর কোন উপায় নেই । আরেকটা বিসিএসের রেজাল্ট দিতে দিতে নীলুর বিয়ে হয়ে যাবে । আজকে যখন পাত্র পক্ষ আসলো তখন মুহিব পড়াতে এসেছিলো । ক্ষণিকের জন্য দুজনের চোখাচোখি হয়েছিলো । মুহিবের চোখে একটা কষ্টের ছায়া সে দেখেছে সেটা নীলু কিছুতেই ভুলতে পারছে না ।
মুহিবকে নীলু পছন্দ করে, এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই কিন্তু নিজ থেকে কিছু করার সাহস হয়তো কোন দিন নীলুর হবে না । কষ্ট পাবে নিজে পাবে, মুহিবও পাবে । মুহিব হয়তো সারা জীবন ওকে লোভী ভেবে যাবে । যেমনটা অধিকাংশ ছেলেরাই মনে করে । কিভাবে ভাল চাকরি পাওয়া একজনকে পেয়ে আগের মানুষটার হাত ছেড়ে দেয় সব গুলো মেয়ে । সারা জীবন পাশে থাকার কথা দিয়ে তারা কেমন করে মাঝ পথে ছেড়ে চলে যায় । নীলু সেখানে কোন কথা দেয় নি তারপরেও ও খারাপ লাগছে । নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে । ঐ মেয়েগুলোর কেমন লাগে কে জানে ।

পরপর দুটি দিন নীলুর শান্তিতে ঘুম এল না । একটা সময় সে বুঝতে পারলো সে শান্তি পাবে না । চোখে ঘুম আসবে না ওর । ও যদি ও সরকারি চাকুরে কে বিয়ে করে তাহলে আজীবন এইঅশান্তি ওকে তাড়া করে বেড়াবে ।

নীলু ফোন করে মুহিবের সাথে দেখা করতে চাইলো । মুহিব ফোনে বলল, দেখা করে কি লাভ?
-লাভ লস জানি না । যা বলছি করুন । আজকে বিকেলে । আর আপনার কাছে কত টাকা আছে?
-কেন টাকা কেন ? টাকা দিয়ে কি হবে ?
-যা জিজ্ঞেস করছি জবাব দেন । কত টাকা আছে?
-আছে কিছু ।
-সাথে নিয়ে আসবেন।

বিকেলে যখন দেখা হল তখন মুহিব অবাক হয়ে খেয়াল করলো সে নীলুর কাধে ছোট্ট একটা ব্যাগ । সে নীলুর দিকে তাকিয়ে বলল, কি ব্যাপার কোথায় যাচ্ছো নাকি?
-হ্যা । আর আপনিও সাথে যাচ্ছেন ।
তীব্র বিস্ময় নিয়ে মুহিব বলল, মানে কি?
-মানে হচ্ছে আমি বাসা থেকে পালিয়েছে ।
-কেন?
-গাধা নাকি আপনি ? মেয়েরা বাসা থেকে কেন পালায়?
মুহিবের যেন তখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না যে নীলু ওর সাথে পালিয়ে যেতে এসেছে ।
হঠাৎ ই মুহিব নীলুর হাত ধরলো। তারপর বলল, আমার সত্যিই বিশ্বাস হচ্ছে না ।
-আমার নিজেরও বিশ্বাস হচ্ছে না আমি কী করছি । কেবল মনে হচ্ছে যে আপনাকে রেখে অন্য কাউকে আমি বিয়ে করতে পারবো না । চলুন এবার যাওয়া যাক । দেরি করে লাভ নেই ।
-নাহ । এভাবে পালিয়ে যাওয়ার কোন মানে নেই । চল তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি।
-কী বলছেন আপনি ?
-চল আমার সাথে ।

নীলু এবার একটু রেগে গেল । তারপর বলল, তার মানে আপনি যাবেন না? আমি তাহলে কেন এলাম ? আসলে আমার আসাই ভুল হয়েছে । আপনি জানেন আমি আসার আগে একটা চিঠি লিখে এসেছি । আমি এবার কিভাবে যাবো বাসায়?
মুহিব তখনও হাত ছাড়ে নি । নীলু নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলেও পারলো না । মুহিব বলল, চল । চিন্তা কর না । কিছু হবে না । আর তোমার বাবা কিছু বলবে না ।
-আপনাকে সেটা নিয়ে ভাবতে হবে না । আমি একা যেতে পাবো । আসলে আমিই গাধা । আস্ত গাধা ।
মুহিব হেসে ফেলল । বলল, চল । সন্ধ্যা হয়ে গেছে ।
নীলুর খুব বেশি রাগ হতে লাগলো । সব চেয়ে বেশি রাগ হতে লাগলো নিজের উপরে । এতো বড় গাধামী সে কিভাবে করলো ।

নীলুদের বাসায় যখন ঢুকেছে তখন রাত আটটা । নীলুকে ফিরে আসতে দেখে ওর মা এগিয়ে এসে ওকে একটা চড় মারতে গেল । মুহিব সামনে চলে এসে ঠেকালো । নীলুর বাবা গম্ভীর চোখে তাকিয়ে রইলো দুজনের দিকে ।
মুহিব বলল, আঙ্কেল আমি নীলুকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করি । আই গেস ও আমাকে পছন্দ করে । কিন্তু ও যে এভাবে বাড়ি ছেড়ে চলে আসবে সেটা আমি ভাবি নি । ওকে বিয়ে করতে চাই তবে এভাবে নয় মোটেও ।
-তুমি যে আমার মেয়ে কে বিয়ে করতে চাও তোমার সাথে কেন মেয়ের বিয়ে দেব? কি কর তুমি কিভাবে খাওয়াবে?
-চাকরিটাই কি সব থেকে জরুরী ? ঐ চাকরিওয়ালা ছেলের সাথে বিয়ে দিলেই কি নীলু সুখী হত?
-শোন এসব ইমোশন বাস্তব জীবনে চলে না ।

মুহিব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল । তারপর বলল, আমার চাকরির ব্যাপারটা আসলে আমি কাউকে জানাই নি । এই বিসিএসটা আমার হয়ে গেছে । একেবারে জয়েন হওয়ার পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করতে চাইছিলাম । এর আগে কাউকে জানানোর প্লান ছিল না ।

ঘরের ভেতরে নিরবতা নেমে এল । কিছু সময় পড়ে মুহিব, বিশ্বাস না হলে পিএসসি থেকে আসা ম্যাসেজটা দেখতে পারেন । এই বলে সে নিজের মোবাইলের মেসেজ অপশনটা বের করে বাড়িয়ে দিল নীলুর বাবার দিকে । সেটা হাতে নিয়ে তাকিয়ে রইলো সেদিকে ।
মুহিব বলল, নীলু এসব না জেনেই কেবল আমার জন্য ঘর ছেড়েছে, এটা আমার কাছে খুব বড় কিছু । আমার খবর বাইরে বললে বিশ্বাস করে বিয়ের জন্য মেয়ের অভাব হবে না । কিন্তু সেটা কেবলই আমার চাকরির জন্য আমার জন্য নয় । কিন্তু নীলু আমার জন্য এসেছে । একজন সহায় সম্বলহীন ছেলের হাত ধরতে সবাই পারে না । এই ভাগ্য সবার হয় না ।

রাতে মুহিবকে খেয়েই যেতে হল । সব কিছু জানার পরে নীলুর বাবা আর কোন কথা বলে নি । জামাই যখন বিসিএস ক্যাডার তখন তো আর কোন আপত্তি থাকতে পারে না । খাবার শেষ করে নিলয়ের রুমে বসে নিলয়ের সাথে কথা বলছিলো, তখন নীলু এসে হাজির হল ঘরে । নিলয়কে বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে মুহিবের সানে বসলো ।
-আমাকে কেন বললেন না?
-কাউকেই বলি নি ।
-আমাকে বলা যেত না? যদি আমি না যেতাম কিংবা ঐ ননক্যাডারকে বিয়ে করে ফেলতাম?
-না । বলা যেত না । তখন আসলে আমি কোন দিন জানতে পারতাম না যে তুমি আসলেই আমাকে ভালোবাসো কিনা । এমন কি তুমি নিজেও জানতে না । জানতে কি? জানো নীলু একজনের প্রতি আরেকজনের ভালোবাসা প্রকাশ পায় কঠিন মুহুর্তে । ভাল আর নিরাপদ মুহুর্তে সবাই ভালোবাসা দেখাতে পারে। সে ভালোবাসার আসল কিনা কোন নিশ্চয়তা নেই । কিন্তু কঠিন আর বিপদের মুহুর্তে যখন একজন আরেকজনের পাশে থাকে শত প্রতিকুলতা স্বত্ত্বেও ছেড়ে যায় না, সেটাই হচ্ছে আসল ভালোবাসা । আমি এই ভালোবাসাই আজীবন খুজেছি । তুমি হয়তো নিজেও জানতে না আমাকে এভাবে অনুভব কর । যদি ঐ ননক্যাডারকে বিয়ে করেই ফেলতে তাহলে হয়তো আমাকে ভাল বাসতেই না । ভালবাসো বলেই করতে পারো নি । রিস্ক নিয়েছো । ভালোবাসলে মানুষ এমন কাজ করতে পারে না । যারা বাসে না তারা পারে না । ভালোবাসলে কেবল ভালোবাসার মানুষটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ন হয় অন্য সব কত ধরনের অযুহাত চলে আসে । বুঝেছো ।
-বুঝলাম । এখন?
-এখন আর কি? জয়েনিংয়ের আগ পর্যন্ত আসো কয়েকদিন ভাল মত প্রেম করা যাক । কি বল ।

নীলু হাসলো । সত্যিই ওরা স্বাভাবিক প্রেমিক প্রেমিকাদের মত আচরন করে নি কোন দিন । এক সাথে রিক্সাকে ওঠে নি, বৃষ্টিতে ভেজে নি । এক প্লেটে শেয়ার করে ফুসকা খায় নি । এই কটা দিন সেই কাজ গুলো করা যাবে বেশ ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.6 / 5. Vote count: 69

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →