এই সব মিথ্যা গল্প 2.5

oputanvir
4.6
(68)

নীলুর মনটা সন্ধ্যা থেকে খারাপ হয়ে আছে । আজকে ওকে দেখতে এসেছিলো পাত্রপক্ষ । বলা যায় তারা নীলুকে পছন্দ করে গেছে । ছেলের বিসিএসের রেজাল্ট বের হয়েছে কয়েকদিন আগে । একেবারে ডাইরেক্ট ক্যাডার পদ পায় নি সে তবে ননক্যাডারে একেবারে প্রথম দিকে আছে । সরকারি চাকরি । নীলুর বাবা মায়ের জন্য এর থেকে বেশি কিছু চাওয়ার ছিল না ।

নীলুর মন খারাপের কারণটা অন্য খানে । নীলুর ছোট ভাই নিলয়ের স্যার মুহিব। ছেলেটাকে নীলু অনেক দিক টুকটাক পছন্দ করে । নীলু জানে মুহিব ওকে অসম্ভব পছন্দ করে । ফোনে টুকটাক কথাও বলে ওরা । আকারে ইঙ্গিতে নীলুকে সব সময় বোঝানোর চেষ্টা করে মুহিব ওকে বিয়ে করতে আগ্রহী । নীলু ওকে বলেছে যে ওর হাতে আসলে কিছু নেই । বাবা মায়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে সে কিছু করতে পারবে না । তবে সে যদি ভাল করে তাহলে বাবা মা মানা করবে না । নীলুও মানা করবে না ।

এইবার বিসিএস মুহিবও দিয়েছিলো । নীলু খুব অপেক্ষা করে ছিল রেজাল্টের জন্য । যখন শুনলো যে হয় নি তখন মন খারাপ হয়েছে । আর কোন উপায় নেই । আরেকটা বিসিএসের রেজাল্ট দিতে দিতে নীলুর বিয়ে হয়ে যাবে । আজকে যখন পাত্র পক্ষ আসলো তখন মুহিব পড়াতে এসেছিলো । ক্ষণিকের জন্য দুজনের চোখাচোখি হয়েছিলো । মুহিবের চোখে একটা কষ্টের ছায়া সে দেখেছে সেটা নীলু কিছুতেই ভুলতে পারছে না ।
মুহিবকে নীলু পছন্দ করে, এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই কিন্তু নিজ থেকে কিছু করার সাহস হয়তো কোন দিন নীলুর হবে না । কষ্ট পাবে নিজে পাবে, মুহিবও পাবে । মুহিব হয়তো সারা জীবন ওকে লোভী ভেবে যাবে । যেমনটা অধিকাংশ ছেলেরাই মনে করে । কিভাবে ভাল চাকরি পাওয়া একজনকে পেয়ে আগের মানুষটার হাত ছেড়ে দেয় সব গুলো মেয়ে । সারা জীবন পাশে থাকার কথা দিয়ে তারা কেমন করে মাঝ পথে ছেড়ে চলে যায় । নীলু সেখানে কোন কথা দেয় নি তারপরেও ও খারাপ লাগছে । নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে । ঐ মেয়েগুলোর কেমন লাগে কে জানে ।

পরপর দুটি দিন নীলুর শান্তিতে ঘুম এল না । একটা সময় সে বুঝতে পারলো সে শান্তি পাবে না । চোখে ঘুম আসবে না ওর । ও যদি ও সরকারি চাকুরে কে বিয়ে করে তাহলে আজীবন এইঅশান্তি ওকে তাড়া করে বেড়াবে ।

নীলু ফোন করে মুহিবের সাথে দেখা করতে চাইলো । মুহিব ফোনে বলল, দেখা করে কি লাভ?
-লাভ লস জানি না । যা বলছি করুন । আজকে বিকেলে । আর আপনার কাছে কত টাকা আছে?
-কেন টাকা কেন ? টাকা দিয়ে কি হবে ?
-যা জিজ্ঞেস করছি জবাব দেন । কত টাকা আছে?
-আছে কিছু ।
-সাথে নিয়ে আসবেন।

বিকেলে যখন দেখা হল তখন মুহিব অবাক হয়ে খেয়াল করলো সে নীলুর কাধে ছোট্ট একটা ব্যাগ । সে নীলুর দিকে তাকিয়ে বলল, কি ব্যাপার কোথায় যাচ্ছো নাকি?
-হ্যা । আর আপনিও সাথে যাচ্ছেন ।
তীব্র বিস্ময় নিয়ে মুহিব বলল, মানে কি?
-মানে হচ্ছে আমি বাসা থেকে পালিয়েছে ।
-কেন?
-গাধা নাকি আপনি ? মেয়েরা বাসা থেকে কেন পালায়?
মুহিবের যেন তখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না যে নীলু ওর সাথে পালিয়ে যেতে এসেছে ।
হঠাৎ ই মুহিব নীলুর হাত ধরলো। তারপর বলল, আমার সত্যিই বিশ্বাস হচ্ছে না ।
-আমার নিজেরও বিশ্বাস হচ্ছে না আমি কী করছি । কেবল মনে হচ্ছে যে আপনাকে রেখে অন্য কাউকে আমি বিয়ে করতে পারবো না । চলুন এবার যাওয়া যাক । দেরি করে লাভ নেই ।
-নাহ । এভাবে পালিয়ে যাওয়ার কোন মানে নেই । চল তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি।
-কী বলছেন আপনি ?
-চল আমার সাথে ।

নীলু এবার একটু রেগে গেল । তারপর বলল, তার মানে আপনি যাবেন না? আমি তাহলে কেন এলাম ? আসলে আমার আসাই ভুল হয়েছে । আপনি জানেন আমি আসার আগে একটা চিঠি লিখে এসেছি । আমি এবার কিভাবে যাবো বাসায়?
মুহিব তখনও হাত ছাড়ে নি । নীলু নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলেও পারলো না । মুহিব বলল, চল । চিন্তা কর না । কিছু হবে না । আর তোমার বাবা কিছু বলবে না ।
-আপনাকে সেটা নিয়ে ভাবতে হবে না । আমি একা যেতে পাবো । আসলে আমিই গাধা । আস্ত গাধা ।
মুহিব হেসে ফেলল । বলল, চল । সন্ধ্যা হয়ে গেছে ।
নীলুর খুব বেশি রাগ হতে লাগলো । সব চেয়ে বেশি রাগ হতে লাগলো নিজের উপরে । এতো বড় গাধামী সে কিভাবে করলো ।

নীলুদের বাসায় যখন ঢুকেছে তখন রাত আটটা । নীলুকে ফিরে আসতে দেখে ওর মা এগিয়ে এসে ওকে একটা চড় মারতে গেল । মুহিব সামনে চলে এসে ঠেকালো । নীলুর বাবা গম্ভীর চোখে তাকিয়ে রইলো দুজনের দিকে ।
মুহিব বলল, আঙ্কেল আমি নীলুকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করি । আই গেস ও আমাকে পছন্দ করে । কিন্তু ও যে এভাবে বাড়ি ছেড়ে চলে আসবে সেটা আমি ভাবি নি । ওকে বিয়ে করতে চাই তবে এভাবে নয় মোটেও ।
-তুমি যে আমার মেয়ে কে বিয়ে করতে চাও তোমার সাথে কেন মেয়ের বিয়ে দেব? কি কর তুমি কিভাবে খাওয়াবে?
-চাকরিটাই কি সব থেকে জরুরী ? ঐ চাকরিওয়ালা ছেলের সাথে বিয়ে দিলেই কি নীলু সুখী হত?
-শোন এসব ইমোশন বাস্তব জীবনে চলে না ।

মুহিব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল । তারপর বলল, আমার চাকরির ব্যাপারটা আসলে আমি কাউকে জানাই নি । এই বিসিএসটা আমার হয়ে গেছে । একেবারে জয়েন হওয়ার পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করতে চাইছিলাম । এর আগে কাউকে জানানোর প্লান ছিল না ।

ঘরের ভেতরে নিরবতা নেমে এল । কিছু সময় পড়ে মুহিব, বিশ্বাস না হলে পিএসসি থেকে আসা ম্যাসেজটা দেখতে পারেন । এই বলে সে নিজের মোবাইলের মেসেজ অপশনটা বের করে বাড়িয়ে দিল নীলুর বাবার দিকে । সেটা হাতে নিয়ে তাকিয়ে রইলো সেদিকে ।
মুহিব বলল, নীলু এসব না জেনেই কেবল আমার জন্য ঘর ছেড়েছে, এটা আমার কাছে খুব বড় কিছু । আমার খবর বাইরে বললে বিশ্বাস করে বিয়ের জন্য মেয়ের অভাব হবে না । কিন্তু সেটা কেবলই আমার চাকরির জন্য আমার জন্য নয় । কিন্তু নীলু আমার জন্য এসেছে । একজন সহায় সম্বলহীন ছেলের হাত ধরতে সবাই পারে না । এই ভাগ্য সবার হয় না ।

রাতে মুহিবকে খেয়েই যেতে হল । সব কিছু জানার পরে নীলুর বাবা আর কোন কথা বলে নি । জামাই যখন বিসিএস ক্যাডার তখন তো আর কোন আপত্তি থাকতে পারে না । খাবার শেষ করে নিলয়ের রুমে বসে নিলয়ের সাথে কথা বলছিলো, তখন নীলু এসে হাজির হল ঘরে । নিলয়কে বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে মুহিবের সানে বসলো ।
-আমাকে কেন বললেন না?
-কাউকেই বলি নি ।
-আমাকে বলা যেত না? যদি আমি না যেতাম কিংবা ঐ ননক্যাডারকে বিয়ে করে ফেলতাম?
-না । বলা যেত না । তখন আসলে আমি কোন দিন জানতে পারতাম না যে তুমি আসলেই আমাকে ভালোবাসো কিনা । এমন কি তুমি নিজেও জানতে না । জানতে কি? জানো নীলু একজনের প্রতি আরেকজনের ভালোবাসা প্রকাশ পায় কঠিন মুহুর্তে । ভাল আর নিরাপদ মুহুর্তে সবাই ভালোবাসা দেখাতে পারে। সে ভালোবাসার আসল কিনা কোন নিশ্চয়তা নেই । কিন্তু কঠিন আর বিপদের মুহুর্তে যখন একজন আরেকজনের পাশে থাকে শত প্রতিকুলতা স্বত্ত্বেও ছেড়ে যায় না, সেটাই হচ্ছে আসল ভালোবাসা । আমি এই ভালোবাসাই আজীবন খুজেছি । তুমি হয়তো নিজেও জানতে না আমাকে এভাবে অনুভব কর । যদি ঐ ননক্যাডারকে বিয়ে করেই ফেলতে তাহলে হয়তো আমাকে ভাল বাসতেই না । ভালবাসো বলেই করতে পারো নি । রিস্ক নিয়েছো । ভালোবাসলে মানুষ এমন কাজ করতে পারে না । যারা বাসে না তারা পারে না । ভালোবাসলে কেবল ভালোবাসার মানুষটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ন হয় অন্য সব কত ধরনের অযুহাত চলে আসে । বুঝেছো ।
-বুঝলাম । এখন?
-এখন আর কি? জয়েনিংয়ের আগ পর্যন্ত আসো কয়েকদিন ভাল মত প্রেম করা যাক । কি বল ।

নীলু হাসলো । সত্যিই ওরা স্বাভাবিক প্রেমিক প্রেমিকাদের মত আচরন করে নি কোন দিন । এক সাথে রিক্সাকে ওঠে নি, বৃষ্টিতে ভেজে নি । এক প্লেটে শেয়ার করে ফুসকা খায় নি । এই কটা দিন সেই কাজ গুলো করা যাবে বেশ ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.6 / 5. Vote count: 68

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →