দ্য পিএস (৩য় অংশ)

কেবিন নম্বর ১৭
4.6
(57)

খাম খুলে তন্বী বেশ ভাল অবাক হল । পুরো একটা একটা বান্ডেল । এক হাজার টাকার নোট । টাকা গুলো হাতে নিয়ে কি করবে বুঝতে পারলো না । একমাসের বেতন তাকে বেশি দেওয়া হয়েছে । একে তো ঝামেলা থেকে মুক্তি তার উপরে টাকা বেশি পাওয়া, সব মিলিয়ে তন্বীর মনটা একেবারে ভাল হয়ে গেল । সব কিছু আবার আগের মত হয়ে গেছে । এখন কেবল একটা সমস্যা রয়েছে সেটা হচ্চে বিয়ের ব্যাপারটা । এখন বাসায় বিয়ের ব্যাপারটা সমাধান হলে তন্বীর জীবনটা আবার আগের মত হয়ে যাবে ।
তখনই তন্বীর কথাটা মনে পড়লো । সায়ন চৌধুরী কেন বলল কথাটা ? ফাহমি ওকে বিয়ে করবে না । কথাটা এমন আত্মবিশ্বাসের সাথে কিভাবে বলতে পারলো লোকটা? ফাহমিকে সে চিনে অনেক দিন । বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন থেকে। কত সময় তারা এক সাথে থেকেছে । হেসেছে ঘুরেছে । প্রেমিক হওয়ার আগে ফাহমি ওর ভাল বন্ধু ছিল । কত ভাল করে ওকে বুঝে ফাহমি । ও নিজেও ফাহমিকে কত ভাল করে চেনে । বেঁচারা এখন চাকরি পাচ্ছে না দেখে খানিকটা ডিপ্রেসশনের ভেতরে আছে । চাকরি পেয়ে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে । তন্বীর আশাটা ঠিক এমনই ।

সপ্তাহ দুয়েক কেটে গেল কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই । তারপর তন্বী ঘটনা জানতে পারলো । তন্বী আর ফাহমির একজন কমন ফ্রেন্ডের কাছ থেকে। ফাহমি চাকরি পেয়েছে । ফাহমি ওকে খবরটা দেয় নি । একদিন আগেও ফাহমির সাথে ওর কথা হয়েছে । তখনও সে কিছু বলে নি। কেন বলে নি? তন্বী আরও একটু খোজ খবর করলো । ফাহমি ঠিক কোথায় চাকরি পেয়েছে সেটা জানার চেষ্টা করলো । এবং যখন কোম্পানীর নাম জানতে পারলো সে আরও একটু বেশি অবাক হল । কেন জানি ফাহমির সাথে দেখা করার আগে তন্বী অন্য কারো সাথে দেখা করার প্রয়োজনীয়তাটা আরও বেশি করে অনুভব করলো । তৈরি হয়ে তখনই বের হয়ে গেল ।

অফিসে ঢুকতে খুব একটা সমস্যা হল না । এমন কি যখন সায়ন চৌধুরীর কেবিনের সামনে এল তখনও ভেতরে ঢুকতে সমস্যা হল না । একজন পিএস বসে ছিল । ওকে দেখেই সে বলল, আপনি আসতে পারেন স্যার বলেছিলো । স্যার আসেন ভেতরেই । তন্বী খানিকটা দ্বিধান্বিত হয়ে ভেতরে ঢুকলো । দেখলো সায়ন চৌধুরী একটা ফাইলের দিকে তাকিয়ে রয়েছে । ওকে ঢুকতে দেখেই মাথা তুলে তাকালো । তারপর হাসলো একটু । বলল, আমিও আরও আগে আশা করেছিলাম । তুমি এতো দেরি করলে কেন?
-আপনি ফাহমি কে কেন চাকরি দিয়েছেন?
-টু প্রুভ যে আমি সঠিক?
-আপনি মোটেই সঠিক না । সে আমাকে ভালোবাসে।
-তাহলে আজকে সাতদিন সে চাকরি পেয়েছে, জয়েন করেছে চারদিন হল, এই খবর তোমাকে জানায় নি কেন? আমার তো মনে হয় জানাবে না । এমন কি সে এখন কোথায় থাাকে সেটাও তোমাকে জানায় নি । রাইট?
-মানে? ওরা মোট চার বন্ধু থাকে এক সাথে । ঝিগাতলার কাছে।

রায়ান চৌধুরী এমন ভাবে হাসলো যে তন্বীর নিজের কাছে কেমন যেন মনে হল । নিজেকে কেমন যেন অজ্ঞ মনে হল । সামনের মানুষটা ওর আর ফাহমির ব্যাপারে এতো আগ্রহ কেন দেখাচ্ছে? কেন এসব করছে?
সায়ন চৌধুরী বলল, ও মাই ডিয়ার তন্বী, তুমি কতই না বোকা !
-দেখুন আমি কেবল বলতে এসেছি যে আপনি বলেছিলেন যে আপনি আমার জীবন থেকে চলে যাবেন । কথা দিয়েছিলেন।
-দেখ তন্বী । তুমি এক সময়ে আমার সাথে এমন কিছু করেছিলে যা আমাকে রাগান্বিত করেছিলো। তবে তুমি চাকরি শুরু করলে কিছু দিনের মধ্যেই আমার রাগ চলে গিয়েছিল । তারপর আমি তোমার কেয়ার নিতে শুরু করি । কেবল তোমার না, সব এম্প্লোয়ীদের বেলাতেই আমি এমন করি । তোমার ঐ ফাহমি ঠিক সুবিধার না । বুঝতে পেরেছো কি?

তন্বী কিছু না বলে চুপ করে তাকিয়ে রইলো । ফাহমি বলল আমি জানি তুমি আমার কথা বিশ্বাস করবে না । এখন আমি যা বলছি সেটা শুনো । তাহলে আশা করি বিশ্বাস করবে ।

ঠিক দুইদিন পরের ঘটনা । রাত দশটা । আজকে আকাশে বেশ মেঘ । যে কোন সময় বৃষ্টি নামবে । তন্বী যখন বাড়িটার সামনে এসে দাড়ালো তখন টিপটিপ বৃষ্টি পড়তে পড়তে শুরু করলো। গেট দিয়ে ঢুকলো ভেতরে । ভেবেছিলো যে গেটে দাওয়ারে থাকবে । তবে দেখলো কেউ নেই । চার তলাতে উঠতে হবে ওকে । ডান দিকের ফ্ল্যাট টা ।পা টিপে টিপে উঠে পড়লো । কলিং বেলে চাপ দিতে গিয়েও দিলো না । বুকের ভেতরে কেমন যে একটা অনুভূতি হতে লাগলো ওর । এখন যদি সায়ন চৌধুরীর কথা সত্য হয় ? সত্যিই যদি অন্য কোন মেয়ের সাথে ফাহমিকে দেখে সে তখন? কী হবে তখন? সহ্য করতে পারবে কি? একবার মনে হল কোন পরীক্ষা করার দরকার নেই । ঘুরে চলে যায় সে । কিন্তু তন্বী জানে এখন যদি ফিরে চলে যায় তাহলে হয়তো অনেক কিছু মনের ভেতরে থেকে যাবে। এমন এক সন্দেহ যা কোন দিন দুর হবে না ।
তন্বী পকেট থেকে একটা চাবি বের করলো । চাবিটা ওকে দিয়েছে সায়ন চৌধুরী । এটা এই ফ্ল্যাটের চাবি । সে কিভাবে এটা যোগার করেছে সেটা তন্বী জানে না । জানতে চায়ও নি । তার দ্বারা অসম্ভব কিছু না । তন্বী চাবিটা ঢুকাতেই বুঝতে পারলো দরজাটা খুলে গেছে । দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো । এবং সাথে সাথেই কিছু আওয়াজ ওর কানে এল ।
তন্বী একেবারে জমে গেল । দরজার সাথেই ড্রয়িং আর ডাইনিং রুম । ডান দিকে একটা ঘর দেখা যাচ্ছে । দরজাটা একটু ভেজানো তবে বন্ধ না । সেই ভেজানো দরজার ভেতর থেকেই আওয়াজ ভেসে আসছে । দুজন নরনারী আদিম খেলাতে মত্ত । সেই আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে সে ।
তন্বী কাঁপা কাঁপা পায়ে এগিয়ে গেল । দরজার কাছে একটু থামলো । তারপর হাত দিয়ে দরজাটা খুলে ফেলল । যা দেখতে চাইছিলো না সেই দৃশ্যটাই সে দেখলো । ফাহমি ততক্ষণে ওর দিকে ফিরে তাকিয়েছে । তীব্র বিস্ময় নিয়ে তন্বীর দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । তখনও ওর নিচে একটা মেয়ে রয়েছে । দুইজনের শরীরে কোন কাপড় নেই ।

তন্বীর চোখে দিয়ে পানি পড়তে শুরু করলো কেবল । একটা কথা মুখ দিয়ে বের করতে পারলো না । কেবল কয়েক মুহুর্ত তাকিয়ে রইলো ফাহমির দিকে । তারপর গুরে হাটা শুরু করলো । কিভাবে দরজা দিয়ে বের হয়ে এল তারপর বাড়ির বাইরে চলে এল সেটা ও নিজেও বলতে পারবে না । রাস্তায় পা দিতেই তীব্র বৃষ্টি শুরু হল । অথচ তন্বীর সে দিকে খেয়াল নেই । সে বৃষ্টির ভেতরে হেটে চলল একভাবে । কোন দিকে যাচ্ছে কোন খেয়াল নেই । ওর চোখে কেবল সেই দৃশ্যটাই ভাসছে । ফাহমির সাথে একটা মেয়েকে দেখছে সে ।

এক সময় রাস্তার ফুটপাতে বসে পড়লো । একভাবে বসেই রইলো । ওর কাছে সব কিছু কেমন মনে হচ্ছে । সব কিছু অর্থহীন মনে হচ্ছে । তন্বী এমন সময় খেয়াল করলো যে বৃষ্টির ভেতরে ছাতা নিয়ে কেউ তার সামনে এসে দাড়িয়েছে । চোখ তুলে তাকালো সে । দেখতে পেল সেখানে সায়ন দাড়িয়েছে । হাত বাড়িয়ে তন্বীর হাত ধরলো সে । তারপর টেনে উপরে তুলল । তন্বী কোন বাঁধা দিল না । সায়নের সাথে গাড়িতে গিয়ে উঠলো ।

গাড়ি এগিয়ে যখন যাচ্ছে তখন হঠাৎ তন্বী চিৎকার করে কেঁদে উঠলো । সায়ন কিছু সময় তন্বীর দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর ওকে জড়িয়ে ধরলো । এতে তন্বীর কান্না কমলো না, বরং আরও বাড়লো । কত সময় পরে তন্বীর কান্না একটু থামলো সেটা তন্বী নিজেও জানে না । এক সময় সায়নের কাছ থেকে নিজেকে আলাদা করলো । সায়ন বলল, বাসায় নামিয়ে দেব?
তন্বী বলল, বাসায় যাবো । এই অবস্থায় বাসায় যাবো না ।
-তাহলে?
-যে কোন জায়গাতে নিয়ে যান আমাকে ।
-আমার ফ্লাট আছে একটা কাছেই । সেখানে যাবে?
-চলুন ।

ভেজা কাপড় ওয়াশ রুমে ফেলে রেখে কেবল টাওয়াল জড়িয়ে তন্বী বাইরে বের হয়ে এল । কিছু সময় বিছানার দিকে তাকিয়ে রইলো শূন্য চোখে। বারবার কেবল চোখের সামনে ফাহমি আর সেই মেয়েটির সঙ্গম দৃশ্যটাই ওর চোখের সামনে ভাসছে । কিভাবে পারলো ফাহমি ওর সাথে কাজটা করতে ? কিভাবে পারলো ? এতো গুলো বছর ওদের মাঝে সম্পর্ক রয়েছে ! এতো এতো অনুভূতি এতো ভালোবাসা সব কিছু নষ্ট হয়ে গেল ! তন্বী সামনের দিন গুলো কিভাবে থাকবে?

তন্বী উঠে দাড়ালো । ও আস্তে আস্তে বেরিয়ে এল ডাইনিং রুমে । তাকিয়ে দেখলো সায়ন টেবিলের উপরে কী যেন করছে । ওর আওয়াজ পেয়ে তন্বীর দিকে ফিরে তাকালো । তন্বী একভাবে তাকয়ে রইলো সায়নের দিকে । চোখের দৃষ্টি ঘোলা । তারপর নিজের শরীরে জড়িয়ে থাকা তোয়ালেটা সে মাটিতে ফেলে দিল । কিন্তু তখনও চোখ সায়নের দিকে । দুজন দুজনের দিকে একভাবে তাকিয়ে রইলো একভাবে ।

তন্বী কি চাইছে সায়নের সেটা বুঝতে কষ্ট হল না । মেয়েটা যে তীব্র শক পেয়েছে সেটা থেকে সে মুক্তি চাইছে । যে কোন ভাবেই সে এটার ভেতর থেকে বের হতে চাইছে । তন্বী আরও কয়েক মুহুর্ত তাকিয়ে তারপর সে ঘুরে আবার ঢুকলো ঘরের ভেতরে । সায়ন দেখলো লাইটটা অফ হয়ে গেল । তবে দরজা খোলা । এই আহবান যে কোন ছেলের পক্ষে এড়িয়ে অসম্ভব । সায়নের পক্ষেও সম্ভব হল না । সে ধীরে ধীরে ঘরের দিকে পা বাড়ালো ।

Make a comment about this chapter. what do you think abou it?

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.6 / 5. Vote count: 57

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

One Comment on “দ্য পিএস (৩য় অংশ)”

  1. সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত মতামত : শক থেকে বের হওয়ার কি অন্য কোনো উপায় ছিলো না???

Comments are closed.