দ্য পিএস (২য় অংশ)

অপু তানভীরের গল্প
4.6
(64)

সব কিছু শোনার পরে ফাহমি বেশ কিছু সময় চুপ করে রইলো । তারপর বলল, এখন তাহলে কি করতে চাও?
তন্বী বলল, আমার আসলে এখন কিছুই করার নেই । আমার হাতে কিছুই নেই । সায়ন চৌধুরীকে আমি কোন ভাবেই রাগিয়ে দিতে চাই না । সত্যি বলতে কি সে অনেক ক্ষমতাবান একজন মানুষ । তাকে আমি না বুঝেই অপমান করেছি । এখন সে এটার শোধ নিচ্ছে । আমাকে এটা সহ্য করতে হবে যতদিন না আমি অন্য কোন উপায় বের করি । কিন্তু বাসার ব্যাপারটা কিছু করার দরকার ?
ফাহমির মুখটা একটু যেন শক্ত হয়ে গেল । তন্বী বলল, চল বিয়ে করে ফেলি।
ফাহমি বলল, তারপর? তোমাকে কী খাওয়াবো?
-আমাকে কেন খাওয়াতে হবে? আমি কি এখন না খেয়ে আছি?
-তুমি ব্যাপারটা বুঝতে পারছো না । এভাবে হয় না । লোকে কি বলবে?
-লোকে বলবেই । তুমি জীবনে যাই কর না কে সব সময় ওরা কথা বলবে । সো তাদের কথা চিন্তা করে লাভ নেই । আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই ।
-এখন আমি বিয়ে করতে পারবো না । আগে কিছু করি তারপর । এর আগে না ।

তন্বী রাগে শরীর জ্বলতে লাগলো । ফাহমি এমন একটা ভাব করে তাকিয়ে রয়েছে যেন কিছুই হয় না । ওর নজর একটু আগে কেনা বাদামের প্যাকেটের দিকে । তন্বীর খুব কান্না আসতে লাগল । আজকে বাসায় গেলে আবারও সেই একই কথা তাকে শুনতে হবে । মা আর বাবা একই ভাবে কথা শোনাতে থাকবে । এসব শুনতে আর তন্বীর ভাল লাগবে না । চিৎকার চেঁচামিচি শুরু করবে ।

কিন্তু আজকে বাসায় গিয়ে তন্বীর জন্য অন্য কিছু অপেক্ষা করছিলো । সন্ধ্যার পরে বাসায় পৌছে দেখতে পেল সেখানে কয়েকজন মানুষ এসেছে । বসার ঘরের দিকে তাকাতেই চোখ কপালে উঠলো তন্বীর । মোট চারজন মানুষ এসেছে ওদের বাসায় । তাদের ভেতরে একজনকে সে চেনে খুব ভাল করে । ওর অফিসে কাজ করে । ওর অফিসে বলতে সায়ন চৌধুরীর অফিসে । ছেলেটার নাম আসাদুজ্জামান । কয়েকবার ছেলেটার সাথে দেখা হয়েছ অফিসে । ছেলেটা বেশ নম্র ভদ্র । এবং তন্বীর বুঝতে মোটেই কষ্ট হল না যে আসাদুজ্জামান কেন তাদের বাসায় এসেছে । ওর মা বাবার চেহারা দেখেই বুঝতে পারছে সব । তন্বীর বুঝতে কষ্ট হল না যে ওর বাবা আর মায়ের ছেলে পছন্দ হয়েছে এবং তন্বী যখন সোফাতে আসাদুজ্জামানের সামনে বসে কথা বলতে লাগলো তখন বুঝতে পারলো যে তাদেরও তন্বীকে পছন্দ হয়েছে । তন্বী অপছন্দ করার মত মেয়ে না । তারা এমন ভাবে কথা বলতে লাগলো যেন এবার ওদের বিয়েটা হয়েই যাবে । তন্বী আসলে কিছু বলতেও পারছিলো না বাব মায়ের দিকে তাকিয়ে । আর যতই তন্বী না চাক, ওদের বাসায় কেউ এসেছে এবং সে তার কলিগদের একজন, তার সাথে তো আর খারাপ ব্যবহার করা যায় না । বলা যায় না যে আপনারা এখনই বের হয়ে যান ।ু

একটা সময়ে তন্বী সবার দিকে তাকিয়ে বলল, আমি কিছু সময় আসাদের সাথে কথা বলতে চাই একটু ! যদি আপনাদের আপত্তি না থাকে !
আসাদের বাবা বললেন, হ্যা হ্যা অবশ্যই ।
তন্বীর মা বলল, হ্যা যাও । ওকে তোমার ঘর ঘুরিয়ে দেখাও ।

ঘরে এসেই আসাদুজ্জামানের দিকে তাকিয়ে তন্বী বলল, হঠাৎ?
-হঠাৎ বলতে?
-না মানে আমাকে না জানিয়ে একেবারে আমার বাসায় ?
-আসলে…..
-আসলে স্যার বললেন তোমার কথা ?
-স্যার মানে? সায়ন ?

তন্বী সায়নকে স্যার না বলে নাম ধরে ডাকছে দেখে আসাদুজ্জামান একটু যেন অবাক হয়ে তাকালো । তারপর বলল,
-হ্যা । স্যারই আমাকে ডেকে বললেন তোমার কথা ।
-কী বলল?
-বললেন বিয়ের জন্য আমি মেয়ে খুজছি তোমাকে কেন দেখছি । সোজা বাসায় চলে আসার বুদ্ধি দিলেন ।

তন্বীর মেজাজটা হঠাৎ করেই গরম হয়ে গেল । ইচ্ছে হল এখনই বেটা কে গিয়ে একটা কঠিন মাইর দিয়ে আসে । কিন্তু সে জানে চাইলেও সে এই কাজটা করতে পারবে না । আগে তো ওর কর্ম জীবনটা নরক বানিয়ে দিয়েছে এখন ওর ব্যক্তিগত জীবনেও নাক গলাচ্ছে । তন্বী নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলো কিছু সময় । তারপর আসাদুজ্জামানের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার কি একবারও মনে হচ্ছেন যে সায়ন এই কাজটা কেন করলো? এতো মানুষ থাকতে সে আমাকে বিয়ে দিতে কেন চাইছে?

আসাদুজ্জামানকে খানিকটা দ্বিধান্বিত দেখালো । কোন মতে বলল, কেন ? মানে । তুমি কী বলছো?
তন্বী একটু হাসলো । তন্বী বলল, সায়নের সাথে আমার কিছু আছে । সে এখন আমার কাছ থেকে মুক্তি চাইছে । এই জন্য আমার বিয়ে ঠিক করতে চাইছে । যে যতই আপনার বস হোক আপনি নিশ্চয়ই চান যে তার ….
লাইনটা সে শেষ করলো না । তন্বী দেখলো যে আসাদুজ্জামানের চেহারাটা কেমন অন্ধকার হয়ে গেছে । তন্বী বলল, আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন আমি কিভাবে অফিসে জয়েন করেছি । আপনি কি কাউকে এভাবে আপনাদের অফিসে জয়েন করতে দেখেছেন? আমি জানি যে দেখেন নি ।
তন্বী এই গল্পটা জানে । অফিসে অনেকেই ওর কাছে জানতে চেয়েছে হঠাৎ করে কিভাবে সে এই চাকরিটা পেয়ে গেল । এতো সহজে এই সায়ন চৌধুরীর অফিসে সাধারনত কেউ চাকরি পায় না । তাহলে ও কিভাবে পেল ? তন্বী এই প্রশ্নের সরাসরি জবান দেয় নি । কেবল একটু হেসেছে । আজকে সেই হাসিটাই সম্ভবত ওর এই গল্পটাকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলল ।

আসাদুজ্জামান আর দাড়ালো না। ঘর থেকে বের হয়ে গেল । তন্বী নিজের ঘর থেকেই টের পেল যে আসাদুজ্জামান নিজের বাবা মাকে নিয়ে দরজা দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে । মনে মনে একটু হাসলো । আর লজ্জা থাকলে বেটা আর আসবে না ওর জন্য বিয়ে ঠিক করতে ।

কিন্তু রবিবার অফিসে গিয়ে তন্বী নতুন কিছু আবিস্কার করলো । সবাই ওর দিকে কেমন করে চোখে নিয়ে তাকিয়ে আছে । এবং সায়নের রুমে গিয়ে অবাক হয়ে দেখলো সায়ন চৌধুরী আগেই সেখানে এসে হাজির হয়েছেন।নিজের ঘড়ির দিকে তাকালো । দশটাই এখনও বাজে নি । এতো সকালে তো সায়ন চৌধুরী অফিসে আসেন না । তাহলে আজকে কী হল এমন যে সে চলে এল?
তন্বী বলল, কফি নিয়ে আসবো ?
সায়ন শান্ত কন্ঠে বলল, না । আমার সামনে এসে বস ।
তন্বী তাই করলো । সামনের চেয়ারে বসলো । সায়ন শান্ত কন্ঠে বলল, তুমি আসাদকে কী বলেছো?
তন্বী সে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলল, তার আগে আমি জানতে চাই যে আসাদ আমার বাসায় গেল কিভাবে? দেখুন আপনি যা বলেছেন আমি করেছি এখনও করছি । তার মানে এই না যে আপনি আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন । বুঝতে পেরেছেন কি?

সায়ন কিছু না বলে তাকিয়ে রইলো তন্বীর দিকে । তন্বীর কাছ থেকে আসলে এমন কোন উত্তর সে আশা করে নি । তন্বী আবার বলল, আমি যা বলেছি এতো কিছু ভেবে বলি নি । তখন রাগ লাগছিলো খুব । তাই যা মনে এসেছে তাই বলেছি ।
-সেটার ইমপ্যাক্ট কী চিন্তা করেছো কিছু?
-না । আপনারও ভাবার দরকার ছিল আসাদ সাহেবকে পাঠানোর আগে ।

সায়ন একটা খাম এগিয়ে দিল ওর দিকে । তন্বী সেটা নিতে নিতে বলল, কী এটা?
-ইউ আর ফায়ার্ড?
-ইউ মিন চাকরি নেই আমার?
-হ্যা ।
-আমি কিন্তু চাকরি ছাড়ছি না । তার মানে আপনি যা যা বলেছিলেন সেব কিন্তু লাঘু হবে না । রাইট?
-রাইট?
-হ্যা রাইট ।
-যাক । আমি তাহলে যাই ।
-আরেকটা কথা ।
-বলুন ।
-তুমি তোমার ঐ হোটেলের চাকরিটাতে ফিরে যেতে পারো ।
-জ্বী ধন্যবাদ । তবে দরকার নেই । আমি অন্য কিছু খুজে নেব ।
-আমি একাউন্সে বলে রেখেছি । তোমার বেতন নিয়ে যাবে । ঠিক আছে?

তন্বীর একবার মনে হল যে বলে দরকার নেই তোর টাকা, তোকে দান করে দিলাম কিন্তু বলল না । হয়তো এখনও মত পাল্টাবে । আবারও ওকে আটকে দিবে । তাছাড়া সে কেন বেতন নিবে না? সে তো পরিশ্রম করেছে । গাধার মত পরিশ্রম করিয়েছে ওকে দিয়ে । বেতন ওর পাওনা । নিবে অবশ্যই নিবে ।

একবার মুক্তি পেয়েছে আর চায় না ঝামেলায় পোহাতে । গতদিন এতো মেজাজ খারাপ হয়েছিল সায়নের উপরে । কিন্তু আজকে এভাবে মুক্তি পেয়ে যাবে সেটা সে ভাবতেও পারে নি। এবার একটা ভাল সিক্ষা হয়েছে । এরপর থেকে সে আরও সাবধানে থাকবে ।

তন্বী ব্যাগ নিয়ে দরজা দিয়ে বের হতে যাবে তখন পেছন থেকে সায়ন বলল, হি ইজ নট হোনা ম্যারি ইউ ।
তন্বী ঘুরে দাড়াল । তারপর বলল, মানে?
-মানে তুমি যা ভাবছো, চাকরি না হওয়ার কারণে সে তোমাকে বিয়ে করছে না, এটা ঠিক না । সে তোমাকে বিয়ে করবে না ।
-আপনি যা জানেন না তা বলবেন না।
সায়ন হাসলো । তবে কিছু বলল না । তন্বী খানিকটা দ্বিধান্বিত হয়ে রুম থেকে বের হল । একাউন্সে গিয়ে যখন দাড়ালো তখন একাউন্সের লোকটা ওকে বেশ মোটা একটা খাম ধরিয়ে দিল । ওজে বেশ অবাকই হল সে । বেশ ভাল পরিমান টাকা রয়েছে খামে বুঝতে পারলো । মন টাই ভাল হয়ে গেল ওর ।

অফিস বিল্ডিং থেকে বের হয়ে ফিরে তাকালো বিল্ডিংয়ের দিকে । এখানে থাকা সময় গুলো তার ভাল কাটে নি মোটেও । আর কোন দিন এদিকে আসবে ঠিক করলো । কিন্তু তন্বী কি জানতো ওকে আবারও আসতে হবে এখানেই ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.6 / 5. Vote count: 64

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

2 Comments on “দ্য পিএস (২য় অংশ)”

  1. আবারও অপেক্ষা! আল্লাহ জানেন আবার কতো দিন অপেক্ষা করতে হবে

  2. গল্পটা দারুন ভাবে এগুচ্ছে।যদিও আপনার যেকোন লিখাই আমার দারুন পছন্দ।কতোবার করে পড়া প্রতিটা গল্প।তবে ইদানীং কিন্তু কম কম লিখতাছেন অপু ভাই। অবশ্য বয়স আর ব্যস্ততার কথাটা মাথায় রাখলে যা লিখতাছেন,যথেষ্ট। শুভকামনা।

Comments are closed.