বগর-বকর (০১)

4.4
(16)

১. আমার ল্যাপটপটা আমাকে বেশ কদিন থেকে খুব অশান্তি দেওয়া শুরু করেছে । ল্যাপটপটা কেনার পর থেকে মনের সুখে বিছানাতে বসে বসে লেখালেখি কিংবা পড়াশুনার কাজ চালিয়ে যেতাম । ল্যাপটপ টা বেশ ছোট ধরনের । মাত্র ১২ ইঞ্চি । অনেকে দেখি ল্যাপটপ কেনে ১৫/১৬ ইঞ্চি । এতো বড় ল্যাপটপ তারা কিভাবে কেনে আমার আজও মাথায় ঢুকে না । ল্যাপটপ টা হবেই ছোটখাটো । হ্যান্ডি আর সব স্থানে ক্যারি করার মত । যদি তোমার বড় স্ক্রিনের মনিটর লাগেই তখলে সোজা ডেস্কটপ কিনে ফেলো ।
যা বলছিলাম । ল্যাপটপ টা কদিন থেকেই বেশ ঝামেলা শুরু করেছে । সব কিছু ঠিক আছে কেবল যখনই ল্যাপটপে কিছু লিখতে চাই কিছু সময় পরপরই সেটার স্ক্রিন লগঅফ হয়ে যায় । একবার ডাক্তার খানাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো তবে সেখানে কোন রোগের সন্ধান তারা পায় নি । তাদের ভাষ্যমতে যে তাদের কাছে থাকা কালীন সময়ে নাকি ল্যাপটপটা এমন কোন আচরন করেই নি । এমনটা হতেই পারে ।থেকে থেকে তার এই রোগ হয় । কখন মাসের এক দুইবার এমন হয় আবার কখন দিনে কয়েকবার । কেন যে হয় সেটা নিয়ে আমি নিজে গুগলে অনেক রিসার্চ করলাম কিন্তু যুক্তিসংগত কারণ খুজে পেলাম না । তবে গত কাল রাতে কেন যেন মনে আসল সমস্যাটা বের করতে পেরেছি । ল্যাপটপের ব্যাটারিটা রিমুভেবল এবং সেটার অবস্থান টাচ প্যাডের নিচে । আমি আবিস্কার করলাম যে যদি কোন কারণে এই ল্যাপটপটা নড়ে ওঠে তাহলেই স্ক্রিন অফ হয়ে যাচ্ছে । পরীক্ষার জন্য কয়েকবার হাত দিয়ে নড়ালাম এবং প্রায় সব বারই স্ক্রিন অফ হয়ে গেল । বুঝতে পারলাম যে কোন কারণে যখন ল্যাপটপটা নড়ছে তখন ব্যাটারির যে সংযোগ স্থান সেটাও নড়ে উঠছে । এবং সেই কারণে স্ক্রিন অফ হয়ে যাচ্ছে । কিবোর্ডে যখন লেখালেখি করতে যাই তখনই একই ভাবে ল্যাপটপটা নড়ে স্বাভাবিক ভাবেই । তখন স্ক্রিন অফ হয়ে যায় । এই থিউরি প্রমানের জন্য আলাদা ভাবে একটা কিবোর্ড সেট করে সেখানে বেশ কিছু সময় টেপাটেপি করলাম । দেখলাম ল্যাপটপট বাবাজি একবারও রাগ করে চোখ বন্ধ করলো না । রাত তখন দুইটা আড়াইটা বাজে । এই রাতের বেলা এই আবিস্কার করতে পেরে মনটা ভাল হয়ে হল । দেওয়া লিচু ঝুলানো ছিল । সেখান থেকে আরও গোটা দশেক লিচু ছিড়ে নিজেকেই ট্রিট দিয়ে ফেললাম ।

২. লিচুর প্রসঙ্গ যখন এলোই তখন লিচু নিয়ে কয়েকটা কথা না বললেই নয় । মৌসুমী ফলের ভেতরে আম লিচু অনেকের পছন্দের একটা । আমার দুনিয়ার সব ফলের থেকে লিচু সব থেকে বেশি পছন্দ । গত বছর লগ ডাউনের কারণে বাইরে বের হওয়া হয় নি একেবারে । আজ বের হব কাল বের হব করে করে লিচু কেনা হয় নি একদম । সব মিলিয়ে লিচু খাওয়া হয়েছিল । সারা বছর এত আফসোস নিয়ে কেটেছে যে শান্তিমত লিচু খাওয়া গেল না । সেই শোক কাটাতে শেষ যে লিচুর থোকাটা কিনেছিলাম সেটা আমি আমার জানালার সাথে আটকে রেখেছিলাম। প্রতিদিন সেই থোকার শুকনো ডালপালা দেখতাম আর লিচুর কথা মনে করতাম । অনেকে বিশ্বাস করবেন না হয় কিন্তু গত বছর থেকে লিচুর সেই শুকনো ডালপালা আমার জানালার গ্রিলে আটকানো ছিল ।
এইবার নিজের কাছেই প্রতিজ্ঞা করেছি যে এবার ইচ্ছে মত লিচু খাবো । একেবারে গত বছরের টা পুষিয়ে দিতে হবে লিচু খেয়ে । সেই হিসাব মত এগোচ্ছি । বাকিটা উপরওয়ালার হাতে !

৩. গতকালকে একটা মজার খবর জানতে পারলাম । ডেইলি স্টারে খবর বের হয়েছে যে জনৈক কার্টুনিস্টের শরীর থেকে কোন শারীরিক নির্যাতনের আলামত মেডিকেল বোর্ড খুজে পায় নি । সংবাদ জানার পর থেকে মন থেকে যেন একটা দশ মন ওজনের পাথর নেমে গেছে । সত্যিই আমার প্রিয় একটা সংগঠনের বিরুদ্দে এই রকম ডাহা মিথ্যা অভিযোগটা আনার পর থেকেই মনটা খারাপ হয়েছিলো । বারবার মনে হচ্ছিলো যে কেন এই রকম মিথ্যা অপবাদ কেউ দিবে, কেউ দিতে পারে ! এমন মিথ্যাবাদী কেন হবে মানুষ? কিভাবে তারা এমন কথা বার্তা বলতে পারে । পরে আসল সত্য বের হয়ে এল । মনে একটা শান্তি এল !
এই যেমন আরেকটা অশান্তির কারণ হয়ে আছে যে দেশের শীর্ষ ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে মামলা । তাকে শেষ পর্যন্ত দেশে ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিলো । এই ব্যাপারটা দেখে খুব মন খারাপ হয়েছিলো । বারবার মনে হচ্ছিলো এতো টাকা থাকতেও কেন একজন মানুষকে এই রকম ঝামেলাতে পড়তে হবে । কেন ? কিন্তু সেই মন খারাপের ব্যাপারটা খুব বেশি সময় থাকে নি । আমাদের দেশের সব সাংবাদিক ভায়েরা যেমন ভাবে তাকে সমর্থন দিয়ে গেছে, দেখে মনটা ভরে গেছে । তারপর আবিস্কার করলাম যে সে দেশে ফিরে এসেছে এবং একজন দেশীয় শীর্ষ স্থানীয় ক্রিয়া ক্লাবের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছে পুর্ন ভোট পেয়ে । এই যে একটা সুষ্ঠ নির্বাচন হল সেখানে, সবাই তাকে আকুন্ঠ সমর্থন নিয়ে প্রেসিডেন্ট বানিয়ে দিল এটাও মন ভাল করে দেওয়ার মত একটা ব্যাপার । এখানেই শেষ নয়, কয়েকদিন আগে দেখলাম দেশের ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সাংবাদিকরা সেই ব্যবস্থাপককে ফুলের শুভেচ্ছে জানাচ্ছে । এটা দেখে মনটা সব চেয়ে বেশি ভাল হয়ে গেল । সত্যি যদি তার কিছু হয়ে যেত কিংবা তাকে কোন কারণে জেলে যেতে হত তাহলে টাকা পয়সার উপর থেকে আমার বিশ্বাস চলে যেত । সেটা যে যাই নি এই জন্য আমি অনেক বেশি খুশি ।

আজকের বগর-বকর এখানেই শেষ । যদিও শিরোনামে দৈনন্দিন শব্দটা লেখা আছে তার নামে এই না প্রতিদিন এটা লেখা হবে । দুই এক মিস যেতে পারে । আমার একই দিনে একাধিক বারও হতে পারে । বগর-বকর শব্দে অর্থ ঠিক খুজে পেলাম না । বাংলা ডিকশনারীতে দেখলাম এমন কোন শব্দ নেই । না থাকাই ভাল । এই সব শিরোনাম কিংবা লেখার কোন অর্থ নেই ।

আরেকটা তথ্য দেই লেখা শেষ করার আগে । রাজকুমার গল্পটার কথা নিশ্চ্যই মনে আছে সবার । মুগ্ধ আর মুনতারিনের গল্প। সেটার একটা পর্ব আমি প্রকাশ করেছি গতকাল । কিন্তু পেইজে শেয়ার দিই নি । তবে সাইটে নিয়মিত ভিজিট করলে কোণ একদিন গল্প টার আরেকটা পার্ট পেয়েও যাইতে পারেন।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.4 / 5. Vote count: 16

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →