-ভাবী আপনি দেখেন দেখেন কিভাবে মাথাটা ফাঁটিয়ে দিয়েছে ! আপনি দেখেন !
মুনতারিনের রাগে শরীরটা জ্বলতে শুরু করলো । আবারও ইচ্ছে হল আরেকবার মাথায় বাড়ি দিতে । আগেরবার ঠিক জুত মত মারতে পারেনি । তাতেই নাকি মাথা ফেঁটে গেছে । এখন আবার আসছে বিচার দিতে । মুনতারিন চোখ তুলে তাকালো ছেলেটার দিকে । এখন কেমন মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রয়েছে । যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে পারে না । অথচ এই ছেলে মোড়ের মাথায় মেয়েদের জ্বালাতন করে, ছবি তোলে ! মুনতারিনের ইচ্ছে হল, কাছে গিয়ে দেওয়ালের সাথে আরেকবার মাথাটা ঠেসে ধরতে ।
বিচার বসেছে মুনতারিনদের বাসার গ্যারেজে । মুনতারিনের বাবা মাকে ডাকা হয়েছে । সেই সাথে এলাকার কয়েকজন গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গও রয়েছে । সবাই বিচার করতে এসেছে । যদি এখান থেকে কিছু না হয় তাহলে থানাতে মুনতারিনের নামে রিপোর্ট করা হবে এমন একটা বক্তব্য !
মুনতারিন বলতে গেল, কিন্তু মা …..
ওকে থামিয়ে দিয়ে মুনতারিনের মা বলল, চুপ এক দম চুপ । একটা কথা বলবি না তুই …
মুনতারিন চুপ করে গেল । আবার সেই রাগটা ফিরে আসছে । অন্যায় ভাবে ওকে চুপ হয়ে যেতে হলেই রাগ হয় খুব ।
ঠিক এমন সময়ে মুগ্ধ ঢুকলো বাড়ির গেট দিয়ে । মুনতারিনের চোখ চলে গেল তার দিকে । সাথে সাথেই মেজাজটা চড়ে গেল আবার । এই বদটাকেও সে দেখে নেবে ! এই বেটার মাথা যদি সত্যি সত্যিই ফাঁটিয়ে না দেয় । ঐদিন সন্ধ্যা বেলা ওকে একা ছাদে পেয়ে কি করেছে, সেটা ভাবতেই রাগে আবারও শরীর জ্বলে গেল ওর ।
-ভাবী,
ঐ বদ ছেলের মা বলল।
-এই বার কিছু একটা করেন। আপনি যদি বিচার না করেন তাহলে কিন্তু আমরা থানাতে যাবো । ওর বড় মামা রমনা থানার ওসি ! ব্যাপারটা সে নিজে দেখবে ।
কেউ কিছু বলার আগেই একটা আওয়াজ শুনতে পেল মুনতারিন ! চোখ চলে গেল তার দিকে । মুগ্ধ কথা বলছে ।
-ঠিক, থানাতে খবর দেওয়া উচিৎ ! আপনার ঐ ওসি সাহেব কে দেখানো দরকার যে তার ভাগনে কতখানি কুলাঙ্গার !
এইবার ছেলের বাবা বলল, হোয়াট! কি বলছো তুমি এসব ?
মুগ্ধ একটু এগিয়ে গেল । তারপর বলল, কী বলছি? আপনি কী জানেন আপনার এই ছেলে প্রতিদিন মোড়ের মাথায় দাড়িয়ে কি কি করে? জানেন কিছু? এলাকার প্রতিটা মেয়েকে কমেন্ট পাস করে, ইভ টিজিং করে । তারপর মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে সেই সব মেয়েদের শরীরের ছবি তোলে । মুনের ছবি তুলতে গিয়েছিলো, ধরা খেয়েছে ।
-হোয়াট ননসেন্স ! এসব মিথ্যা !
-মিথ্যা !
মুগ্ধ এক লাফে চলে গেল ছেলেটার কাছে । তারপর দ্রুত পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিল । মোবাইলটা বের করে নিয়ে এল । ছেলেটা বাঁধা দিতে চাইলো তবে কাজ হল না । মুগ্ধ বলল, পাসওয়ার্স কত?
ছেলেটা দুর্বল কন্ঠে বাঁধা দিতে গেল তবে কাজ হল না । পাসওয়ার্ডের বদলে হাতের ছাপ দিয়ে সে মোবাইলের লক খুলে ফেলল ।
সবাই কেবল হতবাক হয়ে দেখতে লাগলো মুগ্ধের কাজ । একটু পরেই হাসি ফুটলো মুগ্ধের মুখে । বলল, বলেছিলাম না ! এই যে প্রমান । এই আলিম সাহেব, আপনার মেয়ের ছবি রয়েছে । অহ জামান সাহেব আপনার পুত্রবধুর ছবিও দেখি আছে ! দেখবেন নাকি?
সাথে সাথে ঐ দুইজন উঠে দাড়ালো । অগ্নি চোখে তাকালো ছেলেটা আর তার বাবার দিকে । একজন বলল, আপনি বাইরে আসেন আপনার ছেলেকে নিয়ে। দেখাছি ব্যাপার । তারপর মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে বলল, সব ছবি গুলো ডিলিট কর ।
মুগ্ধ বলল, এখনই করছি !
তারপর সবার দিকে তাকিয়ে বলল, এই ছেলে হচ্ছে নম্বর ওয়ান বদমাইশ । সব মেয়েদের জ্বালাতন করে । মুনতারিনকেও টিজিং করার চেষ্টা করেছিলো মুনতারিন ধরে মেরেছে । আমি হলে ওর হাত পা ভেঙ্গে দিতাম !
এতো সময়ে ঐ ছেলের বাবা মা কেমন একটা উদ্ধত ভাব নিয়ে ছিল । সেটা একেবারে মিইয়ে গেছে । ছেলে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলো । মুগ্ধ বলল, আপনার ছেলে সাবধান করেন, নয়তো এরপর পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে । আর মামার জোর দেখাচ্ছেন না, ডাকেন ঐ মামাকে । দেখি সে কিভাবে ইভটিজারের পক্ষ নেয় ! আমার চোখে যদি সরাসরি পড়ে মেয়েদের ডিস্টার্বের ব্যাপারটা, মেরে হাত পা ভেঙ্গে দেব। এবার এবার বিদায় হোন এখান থেকে !
মুনতারিন চুপ করে তাকিয়ে দেখলো মুগ্ধকে । ছেলেটা যে এই কাজ করবে সেটা বুঝতে পারে নি । একভাবে কিছু সময় তাকিয়ে রইলও ওর দিকে । মুগ্ধ দেখতে যেন একেবারে রাজপুত্রের মত। ওদের বাড়িওয়ালার ছেলে । এলাকার সব মেয়ে এই মুগ্ধ বলতে একেবারে অজ্ঞান । ছেলেটা আবার বুয়েটে পড়াশুনা করে । ভাল ক্রিকেট খেলে । মানে একটা ছেলেকে যত কারণে পছন্দ করা যায় সব গুণ এই ছেলের মাঝে রয়েছে ।
সন্ধ্যা বেলা মুনতারিন ছাদে উঠে দেখলো মুগ্ধ ছাদে বসে রয়েছে । মুনতারিন পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল মুগ্ধের দিকে । তারপর বলল, থ্যাঙ্কিউ !
মুগ্ধ ঘুরে তাকালো । বলল, কেবল খালি মুখ !
-খালি মুখে নয়তো কি? মিষ্টি মুখকে?
-তোমার ঠোঁট কিন্তু বেশ মিষ্টি !
মুনতারিন ক্রুদ্ধ চোখ তাকিয়ে রইলো মুগ্ধদের দিকে । তারপর, আপনিও ঐ নাফির মত বদ । আস্ত বদমাইশ ! আপনারও মাথা ফাটিয়ে দিবো !
মুগ্ধ হো হো করে হেসে উঠলো । তারপর বলল, আচ্ছা ! আসো দেখি !
এই বলে সে উঠে দাড়ালো । মুনতারিন কাউকেই ভয় পায় না । অন্য কেউ ওর দিকে এগিয়ে এলে সে তাকে মারার প্রস্তুতি নিতো কিন্তু মুগ্ধ এগিয়ে আসায় ওর কি যে হল ও নিজেও বলতে পারবে না । ঘুরে সে সিড়ি ঘরের দিকে দৌড় দিলো । তবে বেশি দুর যেতে পারলো না । সিড়ি ঘরে ঢোকার মুখেই মুগ্ধ ওকে ধরে ফেলল । তারপর দেওয়ালের সাথে ওর দুই হাত চেপে ধরলো গতদিনের মত । মুনতারিনের কেমন যেন অসহায় লাগলো নিজের কাছে । এই ছেলেটার সামনে আসলেই সব কিছু কেমন ওলট পালট হয়ে যায় । মুনতারিন কেবল দেখতে পেল মুগ্ধের ঠোঁট দুটো ওর দিকে এগিয়ে আসছে । বাঁধা দেওয়া তো দুরে থাকুক মুনতারিনের নিজের চোখ বন্ধ হয়ে এল । কোন প্রকার যুদ্ধ ছাড়াই সে আত্মসমর্পন করে দিল নিজেকে !
দিস ইজ ইয়োর ক্যাপ্টেন রিয়াজ মাহমুদ …..
মুনতারিন চোখ মেলে তাকালো । প্লেন ল্যান্ডিংয়ের ইনস্ট্রাকশন দিচ্ছে ক্যাপ্টেন ! কত সময়ে ঘুমিয়েছে সেটা নিজেই বলতে পারবে না । ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে অতীতে ফেরৎ চলে গিয়েছিলো । মুগ্ধের কাছে । মনে হয় যেন এই তো সেদিনও ওরা এক সাথে ছিল । কিন্তু মাঝে কতগুলো বছর পার হয়ে গেছে ।
-ঘুম ভালো হয়েছে?
পাশে তাকালো মুনতারিন । মেজর আকিব রায়হান বসে রয়েছে । আকিবের দিকে একবার তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নিল সে । এই ছেলেটাকে সে ভালই পছন্দ করে । গুণে মানে সব দিক সেরাদের একজন । সহকর্মী হিসাবেও চমৎকার । মুনতারিন এও জানে যে আকিব ওকে পছন্দ করে । ওকে বিয়ে করতে চায় ! কিন্তু মুনতারিনকে ঠিক বুঝতে পারে না বলে বলতে সাহস পায় না । বিশেষ করে মুনতারিনের মেজাজের ব্যাপারটা সে খুব ভাল করেই জানে । তাই অপেক্ষা করছে মুনতারিনের পক্ষ থেকে কোন ইশারার ।
মুনতারিন হাসলো । বলল, কত সময় ঘুমিয়েছি?
-তাও ঘন্টা দুয়েক তো হবেই ।
-বোর হয়েছো অনেক?
-নাহ ! তোমার ঘুমন্ত মুখটা বেশ শান্ত ! দেখলে বোঝার উপায় নেই যে জেগে থাকলে তুমি কী পরিমান …..
কথাটা শেষ করলো না আকিব । সম্ভবত যুতসই কোন শব্দ খুজে পাচ্ছে না । মুনতারিন হেসে ফেলল । বলল, জেগে থাকলে খুব বেশি বদরাগি তাই না ?
আকিবও হাসলো ! বলল, সিট বেল্ট বেঁধে নাও । প্লেন ল্যান্ড করবে কিছু সময়ের ভেতরেই !
মুনতারিন তাই বাঁধলো । তারপর বলল, জামান স্যারেরা কি পৌছে গেছেন?
-হ্যা । তারা গতরাতেই পৌছে গেছেন !
মুনতারিন আর কিছু বলতে গিয়েও বলল না । মূলত তারা কয়েকজন যাচ্ছে রাজকুমারকে ধরার জন্য ! কিন্তু মুনতারিন জানে যে তাকে ধরতে পারবে না । যে কোন ভাবেই রাজকুমার ওর সাথে ঠিকই দেখা করবে এবং দেখা করে চলে যাবে ।
গত মাসের শেষের দিকে মুনতারিনের হাতে একটা প্যাকেজ এসে পৌছায় । সেখানে মুনতারিনের জন্য সাউথ আফ্রিকার যাওয়ার একটা টিকিট এবং একটা হোটেল রিভারভেশনের অনলাইন রিসিট ছিল । ওকে রাজকুমার আমন্ত্রন জানিয়েছে । মুনতারিন কিছু সময় ভাবলো আসলে সে তার উপরের কর্মকর্তাদের ব্যাপারটা জানাবে কি না । প্রথমে ভেবেছিলো সে মোটেও জানাবে না কিছু । এবং সাউথ আফ্রিকাতেও যাবে না । পুরোপুরি উপেক্ষা করবে । কিন্তু ঠিক একদিন পরেই এমন একটা তথ্য মুনতারিনের সামনে এল যে সে তখনই সিদ্ধান্ত নিলো যে তাকে সাউথ আফ্রিকা যেতেই হবে । এছাড়া আর কোন উপায় নেই ।
মুনতারিনকে ঠিক যে হোটেলে থাকতে বলা হয়েছে ঠিক সেই হোটেলেই, ঐ সময়ে বাংলাদেশ থেকে বিকেইএমএর নেতারা যাচ্ছে একটা আন্তর্জাতিক সম্মলেনে যোগ দিতে । মুনতারিনের বুঝতে মোটেও কষ্ট হল না যে রাজকুমার এবার এদের ভেতরের কাউকে টার্গেট বানিয়েছে । আর মুনতারিনকে আগাম জানিয়েছে । মুনতারিনকে চ্যালেঞ্জ করে সে মজা পায় । মুনতারিন বুঝতে পারলো যে এখন যদি সে না জানায় তাহলে ঐ নেতাদের কেউ না কেউ ঠিকই মারা পড়বে । পরদিনই মুনতারিন সব কিছু খুলে বলে তার উর্ধ্বতন অফিসারদের । তবে অবশ্যই কিছু অংশ বাদ দিয়ে । সব কিছু তো আর তাদের বলার উপায় নেই । তখনই বলে প্লান করা হয় যে এবার যে কোন ভাবেই রাজকুমারকে ধরতেই হবে । ঠিক হয় যে মুনতারিন যাবে সাউথ আফ্রিকা । তবে সে একা যাবে না । তার সাথে পুরো টিম যাবে । যার একটা অংশ সাপোর্ট দিবে বিকেইএমএর নেতাদের আর অন্য অংশ থাকবে মুনতারিনের সাথে । ডেকেছে যখন ঠিক ঠিকই সে মুনতারিনের সাথে দেখা করতে আসবে । তখনই ধরা হবে ওকে !
এয়ারপোর্ট থেকে মুনতারিন আলাদা হয়ে গেল । মেজর আকিব আলাদা ট্যাক্সি নিয়ে হোটেলে পৌছালো
মুনতারিনের জন্য আলাভাবে রুম বুক করা ছিল । রিসিপশনে গিয়ে নাম বলতেই মুনতারিন লক্ষ্য করলো যে মেয়েটির মাঝে কেমন চাঞ্চল্য দেখা গেল । সে কাকে যেন ফোন করলো সাথে সাথেই । এবং মিনিট খানেকের ভেতরেই একজন ভদ্রলোক এসে হাজির হলেন । একটু পরেই মুনতারিন বুঝতে পারলো ইনি এই হোটেলের ম্যানেজার !
সত্যি বলতে কি একটু অবাক না হয়ে সে পারলো না । মুগ্ধ এখানেও যে এতো পরিচিত হবে কিংবা এখানকার লোকজনও যে তাকে এতো ভাল ভাবে মান্য করবে সেটা মুনতারিনের ধারণার বাইরে ছিল ।
ম্যানেজার সাহেব মুনতারিনের ফ্লাইটের খোজ খবর নিতে শুরু করলেন । সব কিছু ঠিক ছিল না কিনা কোন অসূবিধা হচ্ছে কিনা এই সব । এতো গদগদ করতে লাগলেন যে মুনতারিনের অস্বস্থি করতে শুরু করলো । কিং সাইটের ভিআইপি স্যুট মুনতারিনের জন্য ভাড়া করা হয়েছে । শেষ কবে যে সে এতো আরাম আয়েশে থেকেছে সেটা সে নিজেও বলতে পারবে না । এই স্যুটের একদিনের ভাড়া কত হবে কে জানে ।
ম্যানেজার বিদায় নেওয়ার আগে মুনজেরিন জানতে পারলো যে স্বয়ং এই হোটেলে মালিট মুনের জন্য এই স্যুট রেখেছে । এটার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না । বুঝতে পারলো যতটা সহজে ওরা কাজ করবে ভেবেছিলো ঠিক ততটা সহজে কাজটা হবে না । বিকেলে হতেই জানতে পালরো যে কোন ভাবেই মুনতারিনের ফ্লোরে রুম ম্যানেজ করতে পারে নি ওরা টিমের লোকজন । আশে পাশে সব ভিআইপি স্যুট । এবং এগুলোতে সব দেশের ভিআইপি লোকজন রয়েছে । তবে আশার কথা হচ্ছে বিএকেবিকেইএমএর নেতারা যে রুম গুলোতে আসে সেটার পাশা পাশি রুম ম্যানেজ করা গেছে । মুনতারিন সরাসরি কারো সাথে যোগাযোগ করলো না । কেবল ফোনের মাধ্যমেই কথা হল। ওরা ওকে জানালো যে কোন চিন্তা না করতে । সে নিজে সব ম্যানেজ করে নিবে । এবার কোন ভাবেই রাজকুমার কে পালিয়ে যেতে দেওয়া হবে না ।
কথাটা যদিও বলল সে তবে নিজের কাছেই কেমন যেন শোনালো ব্যাপারটা ! কারণ ওর মন বলছেই যে রাজকুমার আসবে এবং তার কাজ করে চলে যাবে । মাঝের দিক দিয়ে ওর সাথে আরও কিছু ঘটবে !
কথাটা মনে হতেই মুনতারিন একটু দম নিলো জোড়ে । বুকের ভেতরে একটা চাঞ্চল্য সৃষ্ট হল । একটা উত্তেজনা সৃষ্টি হল । এই উত্তেজনার ব্যাপারটা মুনতারিন খুব ভাল করেই চেনে ! মুগ্ধকে কাছে পাওয়ার উত্তেজনা । ওকে চুমু খাওয়া ওর সাথে ভালোবাসার উত্তেজনা ! মুনতারিন মোটেও সেক্স ফ্রিক নয় । সে এতো দিনে কাউকে তার কাছে আসতে দেয় নি একবারের জন্য । কিন্তু যখনই মুগ্ধর ব্যাপারটা আসে তখন মুনতারিনের শরীর যেন জেগে ওঠে । সে নিজেকে কোন ভাবেই ধরে রাখতে পারে না । নিজের এই অদ্ভুত মনভাবের জন্য নিজের কাছেই সে বারবার লজ্জিত হয় একই সাথে তার মনে আনন্দের এক অনুভূতি হয় ।
কনফারেন্সের প্রথম দিনটা কেটে গেল বেশ ঝামেলা বিহীন ভাবেই । পুরো টিম ছিল বিএকেবিকেইএমএর নেতাদেরকে ঘিরে । তাদের নিরাপত্তা দিয়ে চলছিলো । অন্য দিকে মুনতারিন নিজের ঘরেই শুয়ে সময় কাটাচ্ছিলো । রাতের বেলা নিচে গিয়ে সুইমিং করে এল হোটেলের সুইমিং পুল থেকে । সাতার কাটার সময়ে সে সুইমিং কসটিউমই পরে ছিল । আকিবকে তখন দেখা গেল পুলের পাশে । ওর দিকে কেমন কেমন অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে ছিল । মুনতারিনকে অবশ্যই আকর্ষনীয় । যে কেউ তার দিকে দ্বিতীয়বার তাকাতে বাধ্য । আকিবও তাই করছিলো । আকিব ওকে পাহারা দেওয়ার সাথে সাথে ওর দিকে তাকিয়ে আনন্দ পাচ্ছিলো । মুনতারিন হাসলো । মনে মনে ভাবলো এই ছেলেটা মুগ্ধদের থেকে কোন অংশ কম নয় অথচ এর প্রতি শারীরিক ভাবে কোন আকর্ষন সে অনুভব করে না । বন্ধু হিসাবে আকিব ঠিক আছে । আকিবকে সে পছন্দও করে কিন্তু প্রেমিক কিংবা ভালোবাসার মানুষ?
মুনতারিন আজ পর্যন্ত এই জায়গাটা মুগ্ধ ছাড়া আর কাউকে দিতে পারে নি । এই কথাটা মুনতারিন যেমন জানে, মুগ্ধও তেমন জানে খুব ভাল করেই ।
ঘটনা ঘটলো রাতের বেলা । মুনতারিন রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়েছে । ঘুম চলেও এসেছিলো তখনই অনুভব করলো কেউ তার ঘরে ঢুকেছে । বালিশের ঠিক নিচেই সে নিজের পিস্তল রেখেছিলো । সেটা হাতে নিতে যাবে তখনই কেউ তার হাত চেপে ধরলো । মুনতারিন নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো বটে তবে কোন লাভ হল না । হাত দুটো নিয়ে এক সাথে নিয়ে একটা হ্যান্ডকাফ দিয়ে আটতে দিলো । এইকাজ মুগ্ধ সব সময়ই করে আসছে । মুনতারিনকে একেবারে অসহায় করে ফেলতে মুগ্ধদের ভাল লাগে । মুনতারিন ভাবলো চিৎকার করবে কিনা । মনে পড়লো ঘুমানোর আগে সে এয়ার পিচের লাইন অফ করে দিয়ে ঘুমিয়েছে । তবে চিৎকার করলে কারো না কারো শোনার কথা । কিন্তু মুন কি আসলেই চিৎকার করতে চায়?
মুগ্ধ পরের তিরিস সেকেন্ডের ভেতরেই ওকে পুরো পুরি নগ্ন করে ফেলল । ঘর অন্ধকার । তবে বাইরে থেকে কিছু আলো এসে ঘরটাকে আলোকিত করে রেখেছে । সেটাতেই নিজের দিকে তাকালো । তাকালো মুগ্ধের দিকে । মুগ্ধ কানে কানে বলল, সুইম স্যুটে তোমাকে চমৎকার লাগছিলো । ভেবেছিলো কাল আসবো কিন্তু তোমাকে দেখে আর একা থাকা গেল না ।
-তুমি জানো আমি ডাক দিলেই এখনই লোকজন চলে আসবে! ছেড়ে দাও বলছি ।
-আচ্ছা ! ডাক দাও দেখি । আসতে পারে অবশ্য । তবে তোমাকে ঠিক এই অবস্থাতে দেখবে । এই ভাবে । তুমি চাও তোমার কলিগরা এভাবে তোমাকে দেখুক । চাও …
মুন নিজেও জানে যে কোন ভাবেই সে ডাক দিতে পারবে না । মুনের মনে আছে ঠিক এই ভাবেই মুনকে মুগ্ধ প্রথমবার কাবু করেছিলো । সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো । সময়টা ছিল সন্ধ্যা বেলা । সন্ধ্যা বেলা ছিল বলেই ছাদে তখন কেউ ছিল না । অল্প অল্প মেঘ ডাক ছিলো আর বিদ্যুৎ চমকা্ছিলো । মুন আপন মনে ভিজছিলো । তখনই আবিস্কার করে পেছন থেকে ওকে কেউ চেপে ধরেছে । ওর হাত দুটো পেছনে নিয়ে গিয়ে ওর ওড়নাটা দিয়ে শক্ত করে বেঁধে ফেলল । ভয়ে মুনতারিনের দম বন্ধ হয়ে আসছিলো । চিৎকার দিতে পারছিলো না কোন ভাবেই । তারপর মুগ্ধ যা করেছিলো সেটা মুনতারিনের কল্পনার বাইরে ছিল । বলা চলে এক টানে ওর টিশার্ট ছিড়ে ফেলল মুগ্ধ । কেবল ব্রা ছিল তখন ওর পরনে । ছাদের মেঝেতে ফেলে দিল । মুনতারিন কেবল একভাবে তাকিয়ে রইলো । মুগ্ধকে কেমন যেন অন্য রকম লাগছিলো ওর কাছে । এরপর মুগ্ধ টান দিয়ে ওর পরের পায়জানাটাও খুলে ফেলল । মুনতারিনের কান্না এল খুব । চিৎকার করে কাঁদতে চাইলো বটে কিন্তু পারলো না । মুগ্ধ যখন ওর উপরে উঠে বসেছে তখনই মুনতারিন চোখ বন্ধ ফেলল । মুখটা এক পাশে সরিয়ে নিল । হাত বাঁধা থাকার কারণে কোন প্রকার বাঁধা দিতে সে পারলো না ।
বেশ কিছু সময় কেটে গেল সেই ভাবেই । মুনতারিন অনুভব করলো মুগ্ধ উঠে গেছে ওর শরীর থেকে । তারপর নিজেই আবার পরনের পায়জামা টা পরিয়ে দিল । টিশার্ট টা ছিড়ে ফেলেছিলো বলে মুনতারিনের হাতের বাধন খুলে নিজের শরীরের টিশার্ট টা পরিয়ে দিল। তারপর ওকে রেখে চলে গেল ।
মুনতারিন বেশ কিছু সময় সেখানেই বসে রইলো । কিছুই যেন বুঝতে পারছিলো না । মুগ্ধের সামনে ও একেবারে অরক্ষিত ছিল । ওর হাত বাঁধা ছিল । পরনে কিছু ছিল না । চাইলে মুগ্ধ ওর সাথে যা ইচ্ছে তাই করতে পারতো । মুনতারিনের কোন প্রকার বাঁধা দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না । তারপরেও কিছু করলো না কেন?
মুনতারিন রাতে শুয়ে শুয়ে কেবল সেই কথাই ভাবতে লাগলো । মুগ্ধের কথা ভাবতে ভাবতে ই ঘুমিয়ে গেল সেদিন । সেদিন রাতেই প্রথম মুগ্ধে স্বপ্ন দেখলো সে । সেই ছাদের দৃশ্যটা । তবে স্বপ্নে আর মুগ্ধ আর তাকে ছেড়ে দিল না । সেদিনই জীবনের প্রথমবারের মত মুনতারিন স্বপ্নে কারো সাথে এমন ভাবে অন্তরঙ্গ ভাবে কিছু করলো । ভোরের দিকে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল । স্বপ্নের দৃশ্যটা তখনও তার স্পষ্ট মনে পড়ছে । লজ্জায় লাল হয়ে গেল সে । পরের দিন পুরো সময় সেই স্বপ্নের দৃশ্যের কথাই কেবল মনে পড়তে লাগলো ওর ।
তবে মুগ্ধের সাথে ওর দেখা হল না । তার পরের দিনও না । মুগ্ধ যেন ওর কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে । দুইবার সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে সামনা সামনি দেখা হয়েছে তবে মুগ্ধ চোখ নামিয়ে নিয়ে চলে গেছে । মুনতারিন প্রথমে ঠিক কিছু বুঝতে পারছিলো না । মুগ্ধ এমন কেন করছে তার সাথে । কিন্তু এক সময়ে বুঝতে পারলো মুগ্ধের আচরনের কারণ । এবং সেটা বোঝার সাথে সাথেই মনের ভেতরে একটা তীব্র আন্দলোন শুরু হল ।
এতোদিন মুগ্ধ ওর সাথে ঠিকই জোর জবরদস্তি করেছে, ওকে জোর করে চুমু খেয়েছে । কিন্তু মুনতারিন নিজে মানতে না চাইলেও মনের গভীরে ঠিকই জানে যে এতে মুনতারিনের একটা সম্মতি ছিল । যেমন মুগ্ধ যখন ওকে চুমু খেত তখন মুনতারিন নিজ থেকে আত্মসমর্পন করে দিতো । প্রথমে একটু জোর খাটালেও একটা সময়ে সে সব কিছু বন্ধ করে দিতো এবং অপেক্ষা করতো কখন মুগ্ধ তাকে চুমু খাবে । এটা মুগ্ধ খুব ভাল করেই বুঝতে পারতো । কিন্তু গতদিন ছাদে মুনতারিন কাঁদছিলো মনের ভেতরে একটা ভয় কাজ করছিলো ওর । এটাই মুগ্ধ বুজতে পেরেছে নিজেকে অপরাধী ভাবছে । তাই ওর কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ।
সেইদিন রাতের মুনতারিন জীবনের সব থেকে ভয়ংকর কাজটা করলো । রাতে যখন ওর বাবা মা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিলো তখন সে পা টপে টিপে ছাদে এসে হাজির হল । ফোন করলো মুগ্ধকে। ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ করতে মুনতারিন কেবল দুইটা লাইণ বলল, ছাদে আসুন । আর আসার সময়ে দড়ি নিয়ে আসবেন।
মুগ্ধ সেদিন ছাদে আসতে একটা বড় রকমের ধাক্কা খেয়েছিলো । মুনতারিন শরীর থেকে সব কাপড় খুলে ছাদের সেই স্থানেই বসে ছিল । একটা কাপড় দিয়ে নিজের চোখ বেঁধেছিলো আর হাত দুটো রেখেছিলো পেছন দিকে । কেন এমন কাজ সে করেছিলো সেটা নিজেও জানে না । কেবল মনে হয়েছিলো যে এমন কিছুই করতে হবে ।
তারপর থেকেই ওদের মধ্যে এই খেলা শুরু হয় সুযোগ পেলেই দুজন দুজনের কাছে চলে আসতো । আজকে যেমন একই ভাবে মুগ্ধ ওকে পেয়েছে । মুনতারিন কিছু সময়ের জন্য যেন সব ভুলে গেল । সব কিছু । কেন সে এসেছে এখানে কী করতে এসেছে কিছুই তার মনে রইলো না । কেবল মনে হল এই পৃথিবীতে কেবল সে আর মুগ্ধ রয়েছে । আর কেউ নেই । দুজনেই সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে । একটা সময় শান্তও হয়ে এল । মুগ্ধ ওকে জড়িয়ে ধরেই শুয়ে রইলো সেখানে ।
এমন সময়ে মুনতারিনের ফোন বেজে উঠলো । মুনতারিনের হাতে হ্যান্ড কাফ দিয়ে আটকে থাকার কারণে ফোনটা সে ধরতে পারছে না । মুগ্ধই নিজ থেকে ফোনটা রিসিভ করে মুনতারিনের কানের কাছে এগিয়ে দিল ।
আকিব ফোন দিয়েছে ।
-হ্যালো ।
-হ্যা কী হল?
-তুমি ঠিক আছো?
-হ্যা । কেন বলতো ?
-না মানে তোমার এয়ার পিচ বন্ধ তো । কয়েকবার যোগাযোগ করেও পাচ্ছি না ।
মুনতারিন এখন চাইলেই বলতে পারে ওর সাথে এখন মুগ্ধ রয়েছে । আকিব সহ ওর টিম আসতে এক মিনিটও লাগবে না । কিন্তু সে বলল না । কেন বলল না সেটা সে নিজেও জানে না ।
-না মানে অনেক সময় তোমার কোন খোজ খবর পাচ্ছি না ।
-আকিব আমি এখন ঘুমাচ্ছি । তুমিও ঘুমাও । ঠিক আছে ।
-আচ্ছা । ঘুমাও । গুড নাইট !
ফোনটা কান থেকে সরিয়ে নিয়ে মুগ্ধ ওর ঠোঁটে আরেকবার চুমু খেল । মুনতারিন তাতে বাঁধা তো দিলই না বরং আরও কিছুটা সঙ্গ দিল ।
একটা সময়ে মুনতারিন বলল, তুমি আমাকে কেন এখানে নিয়ে এসেছো?
-এই যে তোমার সাথে সময় কাটাতে!
-কেবলই সময় কাটাতে? এটা তো তুমি ওখানেও পারতে ।
-উহু । তোমার ওখানে ধরা পড়ার ভয় থাকে । শান্তিমত কিছু করা যায় না ।
-তাই না ? বান্দরবানে কী করেছিলে মনে নেই?
মুগ্ধ শব্দ করে হেসে উঠলো । তারপর বলল, আরে বাবা আমি যেন একা করছি?
-বাহ । আমাকে এভাবে আটকে নিয়ে উনি যা ইচ্ছে করছে আবার বলে আমি একা করেছি ! সত্যি করে বল কাকে মারতে এসেছো এবার? দেখো একটা গুরুত্বপূর্ণ ডিল করতে এসেছেন তারা । তাদের কিছু হলে দেশের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে ।
মুগ্ধ উঠে বসলো বিছানায় । তারপর আলো জ্বেলে দিলো । মুনজেরিন মুগ্ধের শরীরের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । দিন দিন ছেলেটার যেন বয়স করছে । নিয়মিত জিম করা পেটানো শরীর । প্রতিটা পেশি ফুলে উঠেছে । পোশাক পরতেপরতে মুগ্ধ বলল, আমি কাউকে মারতে আসে নি কিন্তু তুমি জানো যে আমার লাইনের কথা বার্তা অনেক কিছুই আমার কানে আসে ।
-তার মানে?
-মানে হচ্ছে মিস্টার কিবরিয়াকে কেউ খুন করার জন্য কন্ট্রাক্ট দিয়েছে । কে দিয়েছে আমি জানি না তবে দিয়েছে । কাল তার উপর হিট আসবে । তার সম্মতি ছাড়া ডিল সই হবে না । সে যদি মারা যায় তাহলে ডিল পিছিয়ে যাবে । অন্য কোম্পানি তখন এগিয়ে আসবে । তোমাদের সাথে আর ডিল হবে না ।
হ্যান্ড কাফের চাবিটা টেবিলের উপর রাখতে রাখতে মুগ্ধ বলল, তুমি কোন ভাবেই কিবরিয়া সাহেবের আশে পাশে যাবে না । কারণ যারা কন্ট্রাক্ট নিয়েছে তারা তাদের কাজে খুব বেশি দক্ষ ।
-দেন হেল্প আস !
-কাউকে বাঁচানো আমার কাজ না । আমি কী কাজ করি তুমি জানো?
-ওকে । তাহলে তো আমি যাবোই । কাল থেকে কিবরিয়া সাহেবের সাথেই আমি লেগে থাকবো ।
মুগ্ধ মুনতারিনের দিকে তাকিয়ে বলল, মুন তোমাকে যা বলেছি শুনো । দুনিয়ার সবাইকে তুমি বাঁচাতে পারবে না । আমি কী পেরেছি আমার বাবা মাকে রক্ষা করতে ?
মুন কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল । মুগ্ধের বাবা আর মায়ের সাথে কী হয়েছে সেটা মুনতারিন খুব ভাল করেই জানে । ষেই ঘটনার কারণেই আজকে মুগ্ধ হয়ে উঠেছে রাজকুমার ! কিন্তু সব কিছু জানার পরেও মুনতারিন কিভাবে চুপচাপ বসে থাকতে পারে ?
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ☺☺
waiting for next
বাকি অংশ টা কবে পাবো?
ঠিক নাই
একটু তারাতারি দেওয়ার চেষ্টা করবেন
Thanks
ভাই ৩ মাস পরে ২য় পার্ট দিছেন এবার তো ৩য় পার্ট দিবেন