গত পরশুদিন শুয়ে শুনে রিল ভিডিও দেখছিলাম । এখন এই এক বাজে অভ্যাস হয়েছে । বিছানায় শুলেই, মোবাইল হাতে নিলেই রিল ভিডিও সেকশনে চলে যায় । আগে তো কেবল টিকটক ছিল । তার ইনস্টাগ্রামে এল এখন আবার ফেসবুকও নিয়ে এসেছে । অনেকে রিল ভিডিও নিয়ে অনেক অভিযোগ করেন যে আপনার রিলে সব সময় অশালীন ভিডিও আসে । এই কারণে তারা দেখেন না । তবে ইনস্টাগ্রামে রিলে আপনি যে যে প্রোফাইলে যাওয়া আসা করেন বেশি কিংবা যা সার্চ করেন অথবা আপনি যাদের ফলো করেন এই সব কম্বিনেশনে আপনার রিল ভিডিও আসবে । যেমন মাঝে আমা খুব পাহাড় নেচার প্রোফাইলে ঢু মারতাম । তখন আমার রিল ভরে গিয়েছিলো ট্রাভেলের ভিডিওতে । তারপর এক হলিউড অভিনেত্রীর পপ্রোফাইল খুজতে গিয়ে রিল ভরেছিলো হডিউডের নানান ভিডিওতে । এখন রিল ভিডিওতে কেবল আসে কোরিয়ান ড্রামার ভিডিও । এই রকম ভাবেই গতপরশু দিন একটা ছোট ভিডিও ক্লিপ চোখে পড়ে ।
ভিডিওতে দেখা যায় যে নায়ক স্নাইপার রাইফেল হাতে নিয়ে নিজের টার্গেটের দিকে তাক করে থাকে । কিন্তু যখনই টার্গেটের চেহারা পরিস্কার হয় তখন দেখা যায় নায়িকাকে । কী মনে হল আমি ভিডিওর কমেন্ট সেকশনে একবার ঢু মারলাম । এই রকম ভিডিওর কমেন্ট সেকশন চেক করলেই ড্রামা কিংবা মুভির নাম খুজে পাওয়া যায় । পেয়েও গেলাম । সেই নাম লিখে সার্চ দিতেই নেটফ্লিক্সের ড্রামাটা পেয়ে গেলাম । মোট ১৬ পর্বের একটা ড্রামা । ১৬ পর্ব মানে ১৬ ঘন্টা । আমি খুব একটা কে ড্রামা দেখতে চাই না এদের ভাষার কারণে । সাবটাইটেল দিয়ে দেখতে আমার ইচ্ছে করে না । তবে সেটা যদি ইংরেজিতে ডাব করা হয় তাহলে অবশ্য আলাদা কথা ।
ড্রামার কাহিনীতে ফিরে যাই । ড্রামার কাহিনীটা শুরু হয় সেই স্নাইপার ভিডিও থেকেই । নায়ক যখন নিজের টার্গেট কে স্যুট করতে যাবে তখনই নায়িকাকে দেখতে পায় এবং তখন ফ্লাশ ব্যকে সে অতীতে চলে যায় । সেখান থেকে কাহিনী শুরু । কাহিনীতে দেখা যায় এক সিনেমার স্ট্যান্টম্যান এবং তার ভাজিতা নিজেদের স্বাধারণ স্বাভাবিক জীবন কোরিয়াতে বসবাস করে । স্কুলের একটা প্রোগ্রামে একদল বাচ্চা প্লেনে মরক্কোর পথে রওয়ানা দেয় । কিন্তু সেই প্লেন আর মরক্কোতে পৌছায় না । ক্রাশ করে । ২০০ জনের উপরে মারা যায় । চাচা মানে আমাদের গল্পের নায়ক মরক্কোতে গিয়ে হাজির হয় সেই ক্রাশ প্লেনের কাছে । সাথে আরও যাত্রীর আত্মীয় স্বজনও গিয়ে হাজির হয় সেখানে । সব কিছু যখন স্বাভাবিক ভাবে চলছিলো তখনই আমাদের গল্পের নায়কের সাথে একজন লোকের ধাক্কা লাগে । এবং লোকটাকে দেখে নায়ক তীব্র ভাবে বিস্মিত হয় । কারণ সে এই লোকটাকেই ক্রাশ হওয়া প্লেনে দেখেছে । প্লেনে ওঠার সময় তার ভাজিতা নিজের সোস্যাল মিডিয়াতে নিজেদের যাওয়ার ভিডিও আপলোড করেছিলো । সেই ভিডিও যখন নায়ক দেখছিলো আগের দিন রাতে সেখানেই দেখতে পায় লোকটাকে । মানে হচ্ছে যে এই লোকটা প্লেনের ভেতরে ছিল যে প্লেন ক্রাশ করেছে এবং এই লোকটা বেঁচে আছে । লোকটার পিছু নেয় সে । তাদের ভেতরে ক্লেশ হয় তবে লোকটা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় ।
এই গল্পের শুরু । চাচার সন্দেহ হয় যে প্লেন ক্রাশ এমনি এমনি হয় বরং প্লেনটাকে ক্রাশ করানো হয়েছে । এই সত্যের পেছনে নায়ক ছুটতে শুরু করে । কাহিনী এতো দ্রুত এদিক ওদিক মোড় নিতে শুরু করে যে আমি একভাবে সেটা দেখতে শুরু করে দিলাম অন্য সব কাজ কর্ম বাদ দিয়ে । প্রথম দিন দেখলাম টানা সাতটা পর্ব । সাত পর্ব মানে প্রায় সাত ঘন্টার কাছাকাছি । পরেরদিন ছয় পর্ব আর আজকে বাকি টুকু দেখে শেষ করলাম । কাহিনী যেখান থেকে শুরু হয়েছিল সেখানে এসেই শেষ হয় । প্রথম সিজন এখানেই শেষ । অনেক দিন পরেই খুবই চমৎকার একটা থ্রিলার দেখতে পেলাম । একশন থ্রিল কাহিনী এবং সেই সাথে রোমান্স, সব কিছুই রয়েছে । একেবারে ফুল পয়সা উসুল ড্রামা যাকে বলে । তবে একটা ব্যাপার এই ড্রামার বেলাতেও হয়েছে । আমি যখন কোন থ্রিলার সাসপেন্স মুভি/ড্রামা দেখি তখন যাকে আমার ভিলেন হিসাবে সন্দেহ হয়, দেখা যায় যে প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রেই সেটা সত্যি হয় । এই কাহিনীতেও একই ব্যাপার । যাকে সন্দেহ হল তিন কিংবা চার পর্বে গিয়ে, ১৫ তম পর্বে গিয়ে দেখা গেল যে সেই আসলে কার্লপ্রিট । এটা না হলেই বরং ভাল হয় । মুভি কিংবা বইয়ের ক্ষেত্রে ক্লাইমেক্সের আগে যদি অনুমান সত্য হয়ে যায় তাহলে মজা একটু কমে যায় । সত্য না হলেই ভাল লাগে বেশি ।
দুই.
কাজের কথা হচ্ছে এবার থেকে বাইরে যাওয়ার পূর্বে মোবাইলের ওয়ালপেপার বদলে তারপর বাইরে যাচ্ছি । একটা ভিডিওতে দেখলাম যে ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা পথে ঘাটে মানুষের মোবাইল চেক করে দেখছে সেখাবে বিরোধী দলীয় কিছু আছে কিনা । থাকলে তাদের ধরে মাইর তো আছেই সাথে পুলিশেও দেওয়া হচ্ছে । মানে হচ্ছে আমার মোবাইলে যদি বিরোধী দলের কোন মানুষের ছবি পাওয়া যায় কিংবা সেই রিলেটেড কোন কিছু পাওয়া যায় তাহলে আমাকে মাইর খেতে হবে এবং আমাকে পুলিশেও দেওয়া হবে । আমার মোবাইলে যদিও তেমন কিছুই নেই তবে রিস্ক নিবো না ভাবছি । এখন তো কেবল বলছে যে বিরোধী দলের ছবি কেন আছে কদিন পরে এটা জিজ্ঞেস করবে যে আমাদের দলের ছবি নাই কেন, তার মানে তুই বিরোধী পক্ষের । তুই দেশের উ্ন্নয়ন চাস না । তাই কয়েকটি সরকার দলীয় উন্নয়ন মূলক ওয়ালপেপার জমা করে দেখেছি । যখনই বাইরে বের হব সেটা বদলে নিবো । যদি আমার মোবাইল চেকও করে তাহলে লক স্ক্রিনেই দেখতে পাবে যে আমি উন্নয়নের পক্ষের লোক ।
আমার মতে আপনারাও এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন । বলা তো যায় না যে যে কোন দিক দিয়ে কে আবার আপনার মোবাইল চেক করতে চায় । তখন এই ওয়ালপেপারই আপনাকে হয়তো অনেক বিপদ থেকে রক্ষা করবে ।
তিন.
তখন আমি যশোর থাকতাম । পড়তাম রাইফেলস স্কুলে । সেখানে কয়েকজন স্যার ছিল খুব কড়া । আমরা তাদের খুব ভয় পেতাম । তখন স্কুলে স্যারেরা খুবই মাইর দিতো । মাইর খাওয়ার উপরে তখন কোন বিধি নিষেধ ছিল না । স্যারেরা ইচ্ছে মত ছাত্রদের পেটাতে পারতেন । যাই হোক, এমনই একজন শিক্ষক ছিলেন আফরাফ স্যার । এই স্যার আমাদের বাংলা পড়াতেন তখন । একদিন পড়া দিয়েছেন । সেখানে প্রশ্ন ধরবেন । একটা প্রশ্ন ছিল যে ১৪ই ডিসেম্বর কী দিবস? এই প্রশ্ন পুরো ক্লাসকে করা হল কিন্তু কেউ বলতে পারলো না । তখন আমরা সবে মাত্র ক্লাস টু কিংবা থ্রিতে পড়ি সম্ভব । সবার শেষে একজন মাত্র পেরেছিলো । তবে সেই কারণে আমরা কেউ স্যারের হাতে মাইর খেয়েছিলাম কিনা সেটা আজকে অবশ্য মনে নেই। এই মাইর খাওয়া নিয়ে আরও একটা গল্প মনে আছে। এই গল্প সম্ভবত আমি কোন দিন ভুলবো না । একই স্কুলের গল্প সেটা । সময়টাও কাছাকাছি । হয় ফোর কিংবা থ্রিতে পড়ার গল্প। সেই স্কুলের অংক স্যারের নাম ছিল হাবিব স্যা. এই স্যারকে পুরো স্কুল যমের মত ভয় পেত । স্যার ছিলেন উচু লম্বা আর ফর্স । দেখতে নায়কের মত তবে খুব গম্ভীর । আমাদের এই বয়সেই স্যার আপনি করে বলতেন । আর খুব মাইর দিতেন । তবে ভাগ্য ভালো যে আমি কোন দিন স্যারের হাতে মাইর খাই নি । অংকে মোটামুটি আমি ভালই ছিলাম।
সময়টা ছিল কোন ছুটির পরপরেই । হয় কোন ঈদের ছুটি কিংবা গরমের ছুটি । ছুটি শুরুর আগে স্যার আমাদের পড়া দিলেন এক থেকে বিশ ঘরের নমতা মুখস্ত করে যেতে । হাবিব স্যার যেহেতু পড়া দিয়েছেন সেহেতু মুখস্ত না করে উপায় নেই । তবে সেই বয়সে বিশের ঘরের পর্যন্ত নামতা মুখস্ত করাটা আমাদের জন্য একটু কষ্টেরই ছিল । তবুও মুখস্ত হয়েছিলো । তবে আমার মুখস্ত হয়েছি যদি সেটা শুরু থেকে শেষ করে বলতে দেওয়া হয় তবে । যেমন বারো এক এ বারো, বারো দুই চব্বিশ এভাবে বারো দশে একশ বিশ এইভাবে মুখস্ত হয়েছিলো । বেশ কয়েকবার রিভাইস দিয়ে গেলাম স্কুলে । ওমা স্যার এসে পড়া ধরা শুরু করলো অন্য ভাবে । একজন একজন করে দাড় কড়াচ্ছে আর ধরছে ১৪ সাতে কত? বল ১৭ ছয়ে কত ! আমার খবর খারাপ !
আমাকে ধরলো সাত তেরো কত?
যথারীতি আমি বলতে পারলাম না । আমি ১৩, ২৬, ৩৯ করে বলতে গেলাম তবে কাজ হল না । স্যার চলে গেলেন অন্য ছাত্রের কাছে । প্রথমবারের মত স্যারের হাতে মাইর খেতে হবে এটা ভাবতেই হাত পা অবশ হয়ে গেল । তবে কেবল আমারই না, প্রায় পুরো ক্লাসের কেউই পারলো না এভাবে পড়া ।
স্যার স্টাফরুম থেকে বেত নিয়ে আসতে বললেন ফার্স্ট বয়কে । সে দৌড়ে চলে গেল । নিয়েও এল কিছু সময় পরে । যখন আসলে মাইর দেওয়া শুরু করবেন তখন রীনা আপা এসে হাজির হল ক্লাস রুমে । রীনা আপা হচ্ছে আমাদের বাড়িওয়ালার মেয়ে ছিল । তার সাথে স্যারের একটু ভাব ভালোবাসা ছিল বলে আমরা শুনেছিলাম । রীনা এসে স্যারের সাথে কথা বলতে শুরু করলেন । স্যার বারান্দায় দাড়িয়ে কথা বলছেন । আর আমরা দোয়া করছি যেন ঘন্টা পড়া পর্যন্ত গল্প করেন । এবং সত্যি সত্যিই তাই হল । ঘন্টা পড়ার কিছু আগে তাদের গল্প শেষ হল । স্যার ক্লাস রুমে এলেন তবে তার মেজাজ তখন বেশ ভাল । বললেন আজকে তিনি মাইর দিবেন না । কাল আবার পড়া । আমাদের জানে যেন পানি এল । পরের দিন অবশ্য আর ওভাবে ধরেন নি । সেদিন লিখতে দিয়েছিলেন যতদুর মনে পড়ে ।
আমার এখন যদি হঠাৎ করেই কেউ এই ভাবে নামতা ধরে আমি চট করে বলতে পারবো না । ১৭ আটে কত সেটা বলতে কয়েক সেকেন্ড তো লাগবেই । তবে এই যে সাত তেরো একানব্বই হয় এটা আমি কোন দিন ভুলবো না । তেরো ছয়ে কত কিংবা তেরো আটে কত সেটা বলতে একটু সময় লাগবে কিন্তু সাত তেরো মনে আসলেই একানব্বই চলে আসে আপনা আপনিই। এটা এমন ভাবে মনের সাথে গেঁধে আছে যে কোন ভাবে এটা ভোলা সম্ভব না ।
Discover more from অপু তানভীর
Subscribe to get the latest posts sent to your email.