ঈদের স্মৃতিঃ ছোটবেলা আর বড়বেলার ঈদ

oputanvir
4.8
(4)

আপনাদের ঈদ গুলো কেমন কাটে এখন ?
একটা সময় ছিল কত আগ্রহ নিয়ে ঈদের জন্য অপেক্ষা করতাম । কত পরিকল্পনা কত জল্পনা কল্পনা । ঈদের দিনের আগে চাঁদ দেখা থেকে শুরু করে ঈদের দিনের নামাজ পড়তে যাওয়া কত কিছু ছিল ! কিন্তু এখন ঈদের দিন গুলো কেমন যেন একই রকম রয়ে গেছে । বড় হয়ে যাওয়ার সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে এই ছোট বেলার নির্মল আনন্দ গুলো থেকে নিজেকে বঞ্চিত করে ফেলা । এখন ঈদ মানেই হচ্ছে সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠো, গোসল করে ঈদের নামাজ পড়তে যাও তারপর ঈদ শেষ । সারা দিন বাসায় শুয়ে বসে থাকো আর বিকেল হয়ে একটু বাইরে বের হয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দাও । আমার গত কয়েক বছর ধরে ঈদ বলতে এই ছিল ।

ছোট বেলায় ঈদের নতুন জামা কাপড় পরে ঈদের নামাজ পড়তে হাজির হতাম । যাওয়ার পথে কত কিছু চোখে পড়তো । ঈদগায়ে যাওয়ার পথে অস্থায়ী ভাবে নানান দোকান পাট বসতো । কিন্তু সমস্যা ছিল যে তখনও হাতে ঈদী এসে পৌছাতো না । তাই চাইলেও কিছু কেনা যেত না ।
আমার ছোট বেলার সব ঈদ করা হত আমার নানা বাড়ি । ওখানেই আমার সব কাজিনটা চলে আসতো । এক সাথে কত গল্প কত আনন্দ তখন আমরা করতাম । আমার কেবল মনে আছে জীবনের একটা ঈদ আমি করেছিলাম আমার দাদা বাড়ি বিক্রম পুরো । সেবার সারা দিন ব্যাপি কেবল বৃষ্টি হচ্ছিলো । সকালে নামাজ পড়ে এসে সেই যে বাসার ভেতরে ঢুকেছিলাম আর বের হই নি । ছোট বেলাতে তেমন ঈদ যেন আমি কল্পনাই করতে পারতাম না । তারপর থেকে আর কোন ঈদে যাওয়া হয় নি দাদা বাড়ি । সব সময় নানা বাড়িতেই ঈদ হত । এরপর তো নানা বাড়ির পাশেই স্থায়ী ভাবে বসবাস করা শুরু করলাম । তখন ভেবেছিলাম এবার থেকে সব ঈদ গুলো বড় চমৎকার হবে । কিন্তু তারপরই হঠাৎ করেই যেন বড় হয়ে গেলাম । খেয়াল করে দেখলাম যে ঈদ আর আগের মত আনন্দময় মনে হচ্ছে না । ঈদের সারা দিন আসলে আমার কোন কিছু করার নেই শুয়ে বসে থাকা ছাড়া !

ছোট বেলায় ঈদের সব থেকে চমৎকার ব্যাপারটা ছিল ঈদের সালামী । আমি প্রথম ঈদে সালামী পেয়েছিলাম ২০ টাকা । এটা আমার মনে আছে । এই পরিমান টাকাটা তখন আমার কাছে বিরাট কিছু । বিশ টাকা দিয়ে কত কিছু করে ফেলা যেত । সেইবারের ঈদটা আমরা করেছিলাম যশোরে । আমাকে ২০ টাকা দেওয়া হয়েছে ঈদের সালামী হিসাবে । কিন্তু আমার বড় ভাই ঈদের সালামী হিসাবে ৫০ টাকা দাবী করে বসলো । নয়তো সে ঈদ করবে না বলে ঘোষনা দিল । এবং ঘোষণা মোতাবেক সে বাড়ির সামনে পুরানো জামা কাপড় পরে মন খারাপ করে বসে রইলো । নতুন জামা সে পরবে না । আমি ২০ টাকা ঈদ নিয়ে, নতুন জামা কাপড় পরে তার আশে পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছি, দেখার চেষ্টা করছি সে কী করে ! অবশেষে বাবার মন গলল । তাকে ৫০ টাকাই দেওয়া হল । তারপরই সে নতুন জামা পরলো । আমি সেই ২০ টাকা নিয়ে চুপচাপ বসে রইলাম । মনে হল যে আমাকেও তো তাহলে ৫০ টাকা দেওয়া উচিৎ তবে সাহস করে সেই কথা বলা হল না ।

আমি মুলত কখনই অন্য মানুষের কাছ থেকে ঈদী আশা করতাম না । ঈদ যা সব ছিল বাবার কাছ থেকেই । স্কুল জীবে সেই ঈদী ৫০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিলো । তারপর যখন ঢাকায় চলে এলাম । টিউশনী শুরু করলাম তারপর থেকে ঈদ চাওয়া বন্ধ হয়ে গেল । তখন শুরু হল ঈদ দেওয়ার পালা । বাসায় এসে ঈদ দেওয়া হত ভাইয়ের ছেলেকে । সে শুরু থেকেই পেত ৫০০ টাকা । আমি ঈদী পাওয়া শুরু করেছিলাম ২০ টাকা থেকে তার শুরুটা হল ৫০০ টাকা দিয়ে ।

তবে গত বছর একটু ব্যতীক্রম হল । করোনার কারণে ঈদে বাসায় যাওয়া হল না । ঈদ ঢাকাতে করলাম । বিকেল বেলা হাজির হলাম আমার সব স্টুডেন্টদের বাসায় । ঢাকাতে আমার আপন বলতে আমার ছাত্রছাত্রী এবং এদের পরিবারের মানুষ । ঈদে সবার বাসায় দাওয়াত খেলাম । এবং স্টুডেন্টদের ঈদী দিলাম । এবং সব থেকে মজার ব্যাপার হচ্ছে আন্টি আঙ্কেলরা আমাকেও ঈদী দিল । অনেক বছর পরে ঈদী পেয়ে আমার মনটা ভাল হয়ে গেল খুব । ঈদী পাওয়া সেই টাকা গুলো এখনও আমার কাছে রয়েছে । সেই নোট করে আমি যত্ন করে রেখে দিয়েছি ।

ছোট বেলার আরও একটা মজার কাণ্ড ছিল বোম ফুটানো । অবশ্য আমি দুর থেকে দেখতাম এসব। বোম বাজি ফুটানোতে আমার কাজিন আর বড় ভাই ছিল পারদর্শী । তবে একটা সমস্যা ছিল । আমার ছোট খালা একটু মানসিক ভাবে চ্যালেঞ্জড মানুষ । সে বাজি ফুটানোর আওয়াজে ভয় পেত । এটা নিয়ে আমার বাবা বারবার আমার বড় ভাইকে মানা করতো বাজি না ফুটানোর জন্য । কিন্তু তবুও সে ফুটাতো । এক ঈদের একটা দৃশ্য এখনও আমার চোখে ভাসে । বাজি ফুটানোর পরপরই আমার বাবা ভাইয়াকে বকছে এবং মারার জন্য তার পেছনে দৌড়াচ্ছে । ভাইয়া সামনে সামে দৌড়াচ্ছে । আমি আমাদের বাড়ির গাড়িবারান্দার উপর থেকে সেই দৃশ্য দেখছি । এই দৃশ্যটা আমি কোন দি ভুলবো কিনা কে জানে ।
এখন অবশ্য এসবে আর কারো আগ্রহ নেই । আমার ভাইয়ের ছেলে যখন ছোট ছিল তখন সে একবার তার দাদার কাছে বায়না ধরলো যে বাজি ফুটাবে । সাথে সাথে এক কাটন বাজির বক্স এসে হাজির । আমরা সেইবার বাসার ভেতরেই বাজি ফুটিয়েছিলাম । সময়ের সাথে সাথে ভাইয়ের ছেলেও বাজি ফুটানোর ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে ।

ঈদের নতুন জামা কিনতেই হবে । এমন ছিল ছোট বেলার মনভাব । আর শেষ কবে আমি ঈদে নতুন কিছু কিনেছি সেটা আমার মনেও পড়ে না । এখনকার ঈদ মানে কেবল নামাজ পরা আর বিকেল বেলা পুরানো বন্ধুদের সাথে দেখা হওয়া । আজকে একটু আগে বাইরে গিয়েছিলাম । স্কুল জীবনের বন্ধুদের সাথে দেখা হল । অবশ্য দুইদিন আগে ইফতার পার্টিতেও তাদের সাথে দেখা হয়েছিল ।
বড় হয়ে গেলে ঈদের আনন্দ বলে আসলে কিছু থাকে না । বড় হওয়ার এই এক সমস্যা !

তা আপনাদের ঈদ কেমন কাটলো ?

সবাইকে ঈদ মোবারক !

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 4

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

One Comment on “ঈদের স্মৃতিঃ ছোটবেলা আর বড়বেলার ঈদ”

  1. Sad but true. As we get older, the colors of Eid fades away. Now there is no color left to enjoy, but it seems full of monotony. Eid’s also seem boring and monotonous now.

Comments are closed.