ক্রিপিপাস্তাসঃ হোয়্যার ব্যাড কিডস গো…

oputanvir
4.6
(10)

ক্রিপিপাস্তাস শব্দটা অনেকের কাছে নতুন মনে হতে পারে । ক্রিপিপাস্তাস হল ওয়েব ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানান ধরনের ভয়ের গল্প । সামাজিক মাধ্যম, বিভিন্ন ওয়েব সাইট কিংবা ইউটিবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানান ভয়ের গল্প গুলোকেই বলে ক্রিপিপাস্তাস । এই গল্প গুলো পড়তে গেলে দেখা যাবে যে গল্প গুলো আমাদের পরিচিত । এই গল্প গুলো থেকে অনুপ্রানিত অনেক বই, শর্টফ্লিম সিরিজ এমন কী মুভিও বানানো হয়েছে । এই রকম বেশ কিছু গল্প আমি পড়েছি নিয়মিত পড়ছি নেট থেকে । বেশ কয়েকটা ওয়েবসাইট আছে যেখানে এই গল্প গুলো পোস্ট হয় । এছাড়া একটা বইও হাতে এসেছে । সেই অনেক গুলো গল্পের ভেতরে আজকে একটা গল্প ।

এই গল্পটা একটা লেবানন সাংবাদিকের । তখন তার বয়স ছিল অল্প । বাচ্ছা ছিল সে । সেই সময়ে লেবাননে যুদ্ধ চরমে । প্রায় দিনই গুলি কিংবা বোমা বর্ষন হচ্ছে । এই কারণে কর্তৃপক্ষ থেকে সবাইকে বলা হয় যে তারা যেন কোন ভাবেই বাড়ির বাইরে না বের হয় । বড় না নিজেদের জীবন বাঁচাতে সব সময় ঘরের ভেতরেই থাকা শুরু করলো কিন্তু বাচ্চারা কি আর এতো কিছু বোঝে । বাচ্চা সুযোগ পেলেই বাইরে বের হয়ে যেত । বাচ্চাদের এই হুটহাট বের যাওয়া বন্ধ করতে প্রতি সপ্তাহে একটা অনুষ্ঠান প্রচার করা শুরু করলো । সেই অনুষ্ঠানে প্রতিবার আলাদা আলাদা কাহিনী দেখানো হত । সব কাহিনীর শেষ পর্যায়ে দেখানো হত যে একটা বাচ্চা এক মুখোশ পরা মানুষ একটা দরজার সামনে নিয়ে যাচ্ছে । সেই দরজায় লেখা হোয়্যার ব্যাড কিডস গো । যেখানে খারাপ বাচ্চারা যায় । বাচ্চাটাকে সেই জং ধরা লোহার দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করানো হত । তারপর নিজেও সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতো । দরজা বন্ধ হয়ে যেত । ঠিক তারপরই বাচ্চার চিৎকার শোনা যেত । মূলত বাচ্চাদের বাইরে যাওয়া থেকে দুরে রাখতেই এমন ভয়ের অনুষ্ঠান প্রচার করা হত ।
কিন্তু যতই দিন যেতে লাগলো অনুষ্ঠানের বিভৎসতা আরও ভয়ংকর হতে শুরু করলো । বাচ্চা গুলোতে যেভাবে অত্যাচার করা হত সেটা খুব বেশি জীবন্ত মনে হত খুব । লেবানন এই সাংবাদিক খুব মনযোগ দিয়ে প্রতিটা অনুষ্ঠানই দেখতো ।

তারপর যখন যুদ্ধ শেষ হল সেই অনুষ্ঠানও প্রচার হওয়া বন্ধ হয়ে গেল । সবাই যেন ভুলে গেল অনুষ্ঠানটার কথা । আমাদের গল্পের মুল চরিত্র সেই অনুষ্ঠানটার কথা ভুলল না ।

তারপর বড় হয়ে সে সাংবাদিকতায় যোগ দিল । সে মিডিয়ার অনেক কিছুর সাথে সে পরিচিত হতে শুরু করলো । তখনও তার মনে সেই অনুষ্ঠানের কথা রয়েই গিয়েছে । তখন সে খোজ খবর করা শুরু করলো । কোন স্টুডিওতে সেই অনুষ্ঠানটা সুটিং হয়েছিলো কে কে ছিল অভিনেতা প্রডিউসার এই সব। কিন্তু খুব বেশি কিছু বের করতে পারলো না । তবে অনেক খোজ খবরের পর এক প্রবীন সাংবাদিক তাকে একটা ঠিকানা যোগার করে দিতে সক্ষম হল । সেই ঠিকানা মোতাবেগ গিয়ে হাজির হল সে । সে স্টুডিওর ভেতরে প্রবেশ করেই বুঝতে পারে যে এই স্টুডিও অনেক দিন আগে থেকে পরিত্যাক্ত । ভেতরে আসলে কোন কিছুই নেই । এদিক সেদিক ঘুরতে ঘুরতে সে হাজির হল একটা দরজার সামনে । এবং দরজার সামনে গিয়েই তার বুকটা ধরাক করে উঠলো । কারণ সে একটা মরচে পড়া লোহার দরজার সামনে এসে দাড়িয়েছে এবং এই দরজাটাই হচ্ছে সেই অনুষ্ঠানের দরজার সেখানে বাচ্চাদের ভেতরে ঢোকানো হত ।

দরজায় কোন তালা লাগানো ছিল না । সাংবাদিক মশাই দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলেন এবং সাথে সাথেই আতংঙ্কে জমে গেলেন । তিনি দেখলেন ছোট ঘরটার ভেতরে দেওয়া কালচে হয়ে আছে রক্তের দাগ । এছাড়া এদিক ওদিক ওদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য মানুষের হাড়গোড় মাথার খুলি । হাড় খুলির সাইজ দেখে মনে হচ্ছিলো যেন সেগুলো সব বাচ্চাদের । এই দৃশ্য আর সাংবাদিক সহ্য করতে পারলেন না । অজ্ঞান হয়ে গেলেন ।
যখন তার জ্ঞান ফিরলো তখন নিজেকে আবিস্কার করলো হাসপাতালে । ডাক্তার জানালো যেন পুরানো স্টুডিওর রাস্তার পাশে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিল যে । লোকজন ধরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে ।
পরে তিনি পুলিশ নিয়ে আবারও সেই স্টুডিওর কাছে গিয়ে হাজির হন । তারা পুরো স্টুডিওর খোজ করেন কিন্তু সেই পুরানো লোহার দরজার আর খুজে পান না । এমন কোন দরজা যেন সেখানে ছিলই না !

Story source

Story source

বই – ক্রিপিপাস্তাস, লেখক লুৎফুল কায়সার

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.6 / 5. Vote count: 10

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →