পুকুর নিয়ে আমাদের দেশে ভুতের গল্পের কোন শেষ নেই । নানান পুকুরের প্রচলিত যে গল্প বা লেজেন্ড গুলো আছে তার ভেতরে হচ্ছে পুকুরে জ্বীন বাস করে, পুকুর থেকে নানা রকম থালা বাসন পাওয়া যায় কোন বিশেষ উপলক্ষে এবং সেগুলো আবার ফেরৎ দিয়ে যেতে হয় কাজ শেষ করে নয়তো বিপদ হয় । গ্রাম গঞ্জে এমন অনেক পুরানো পুকুরের সন্ধান পাওয়া যায়, সেই সাথে পাওয়া যায় গল্প । আমার বাড়ির ঠিক পরে একটা পুকুর রয়েছে যার নাম কানাপুকুর । এখানে সন্ধ্যার পরে কেউ সাহস করে নামে না । নামলে নাকি নিচ থেকে কেউ তার পা ধরে টেনে নিয়ে যাবে । ছোট বেলা থেকে এমন গল্প শুনেই আমরা বড় হয়েছি ।
যাই হোক এমন বেশ কিছু পুরুষের ভেতরে একটা বিখ্যাত পুকুর হচ্ছে রামসাগর দিঘি । এটি দিনাজপুর জেলাতে অবস্থিত । এটা আমাদের দেশে মানুষ্য সৃষ্টি সব থেকে বড় পুকুর । উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায় এর তটভূমিসহ রামসাগরের আয়তন ৪,৩৭,৪৯২ বর্গমিটার, দৈর্ঘ্য ১,০৩১ মিটার ও প্রস্থ ৩৬৪ মিটার। গভীরতা গড়ে প্রায় ১০ মিটার। পাড়ের উচ্চতা ১৩.৫ মিটার । এই রামসাগর নিয়ে একটা চমৎকার একটা উপকথা শোনা প্রচলিত রয়েছে।
দিনাজপুরের রাজা ছিলেন প্রাণনাথ । তার রাজত্বকাল ছিল ১৭২২-১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। রাজার হিসাবে তিনি সবার প্রিয় ছিলেন। প্রভাব প্রতিপত্তি আর অর্থকড়ির কোন অভাব ছিল না তার । দীর্ঘদিন পর রাজার ঘরে এক রাজকুমারের জন্ম হল । রাজা তার নাম রাখলেন রাম । জ্যোতিষী রাজকুমারের ভাগ্য গণনা করে বললে যে তার পুত্রকে মানুষ মনে রাখবে ঠিকই তবে সে খুব বেশি দিন বাঁচবে না । রাজকুমার যখন যৌবনে পদার্পন করলেন, সময়টা সম্ভবত ১৭৫০ খ্রিষ্টাব্দ হবে, তখন দিনাজপুর এলাকাতে প্রচন্ড খরা দেখা দেয় । পানির অভাবে রাজ্যের প্রজাদের অবস্থা যখন শোচনীয় তখন রাজা ঠিক করলেন একটা দিঘি খনন করবেন । শুরু হল দিঘি খননের কাজ । সেই সময়েই প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা খরচ হয়েছিলো দিঘিটি খনন করতে । কয়েক হাজার শ্রমিক রাত দিন পরিশ্রম করে দিঘিটি পনের দিনের ভেতরে খনন করা শেষ করে । কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় যে দিঘিতে পানি ওঠলো না । কোন উপায়েই দিঘিতে পানি আনা সম্ভব হল না । একদিন রাজা স্বপ্নে দেখলেন যে যুবরাজ রাম যদি দিঘিতে নেমে পুজো দেন তাহলেই পানি উঠবে ।
দিঘির ঠিক মাঝ বরাবর একটা মন্দির তৈরি হল । যুবরাজ সেই মন্দিরে পুজো দিতে গেলেন । এবং মন্দিরে প্রবেশ করে পুজো দেওয়া শুরুর সাথে সাথেই পুকুরে পানি উঠতে শুরু করলো । এবং এক সময়ে সেই পানিতে মন্দির ডুবে গেল । যুবরাজ রামের আত্মদানে ফলে পুরো রাজ্যের মানুষ খরার হাত থেকে রক্ষা পেল । সেই সাথে জ্যোতিষীর কথাও সত্য হল । যুবরাজ স্বল্পায়ু হলেন ঠিকই তবে প্রজাদের মাঝে অমর হয়ে রইলেন । তার আত্মত্যাগের কথা সবাই স্বরণ করলো আজীবন । এই হচ্ছে রাম সাগরের পেছনের উপকথা । সত্য মিথ্যা এটা আসলে প্রমান করার কোন উপায় নেই । তবে শীত কালে এখনও যখন পানি কমে যায় তখন নাকি পুকুরের মাঝে মন্দিরের একটা চুড়া ভেসে ওঠে মাঝে মাধ্যে ।
তথ্যসুত্রঃ ইউকিপিডিয়া, বাংলা কিংবদন্তী (আসাদুজ্জামান জুয়েল)