এবার আমার পালা

4.7
(31)

ছুটির দিন গুলো আমার সব সময়ই বিরক্ত ভাবে কাটে । এই দিন গুলো আমি সারাদিন শুয়ে বসে কাটাই । কোন কিছুই করার থাকে না । সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয় অনেক বেশি । নাস্তা কাম দুপুরের খাবার খেয়ে বসে পড়ি নিজের ল্যাপ্টপের সামনে । যদি আগের দিনে কোন কাজ বাকি থাকে তাহলে সেটা শেষ করি এবং এর পর মুভি নয়তো টিভি সিরিজ দেখতে বসি । কিন্তু রাতের বেলা আসতে আসতে কোন কিছুই আর ভাল লাগে না । না মুভি দেখতে ভালো লাগে, না বই পড়তে আর না অন্য যে কোন কাজ করতে ভালো লাগে ! তখন কি যে করতে ইচ্ছে করে সেটা আমি কিছুইতেই বের করতে পারি না । এটাই সম্ভবত একা থাকার কুফল । এই সময় একটা সঙ্গী থাকলে সময়টা তার সাথে কাটানো যেত হয়তো । 

ক্রিসমাসের এই দিনও আমি বিরক্ত নিয়ে বসে রয়েছে । একটু আগে মুভি দেখা শেষ করেছি । এখন আর কিছুইতেই মুভি দেখা যাবে না । বই পড়ার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু সেদিকেও মন টানে নি । 

আমি বিরক্ত হয়ে চ্যাট রুমে হাজির হলাম । চ্যাট রুম আমি খুব একটা সময় আসি না । আমি খুব ভাল করেই জানি এখান থেকে আমাকে দ্রুত সময়ই চলে যেতে হবে । কয়েক লাইন চ্যাট করার সাথে সাথেই জানি আমার বিরক্তি চলে আসবে । এমন অনেক ওয়েব সাইট রয়েছে যেগুলো অচেনা মানুষের সাথে চ্যাট করতে বানানো হয়েছে । এই চ্যাট রুমটাও সেই রকম । এর একটা সুবিধা হল এক্ষানে চাইলে ভিডিও কল দেওয়া যায় যদিও কথা বলা বা কোন অডিও শোনা যায় না তবে চেহারা দেখা যায় ঠিকই ।

কয়েক মুহুর্ত অপেক্ষা করার সাথে সাথেই একজনকে পেয়ে গেলাম । এখানে কথা বলার মানুষের অভাব হয় না কখনও । এটা আমি খুব ভাল করেই জানি। কত মানুষ এখানে আসে কথা বলার জন্য ।

-হ্যালো ।

-হাই ।

-কি নাম তোমার ?

-আমার নাম অপু । তোমার নাম কি?

-আমার নাম জেনি ! 

মেয়ে ! আমি জানি বেশিইর ভাগ সময়ই ছেলেরা মেয়েদের নাম করে আইডি খোলে । ছেলেদের সাথে মজা নেয় । সুতরাং এটাও যে একটা ছেলেই হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই । 

আমি জেনি কোথায় থাকে সেটা জানতে চাইলাম । জেনি বলল সে আমেরিকান । 

বাহ! আমার কাছে এবার মনেই হল এই লোক মিথ্যা বলছে । এই ক্রিসমাসের সময় কোন আমেরিকান মেয়ে এই চ্যাট রুমে আসবে কেন ? আসার কোন কারণ নেই ।

আমি মনে মনে ভাবলাম এখনই চ্যাট রুম ছেড়ে চলে যাবো। ঠিক তখনই জেনি লিখলো, আমি কি তোমাকে ভিডিও চালু করে দিতে পারি?

এই লাইন টা পড়ে আমি খানিকটা অবাক হলাম । ছেলে হয়ে মেয়ের নামে চ্যাট করা সহজ । কিন্তু ভিডিও অপশন চালু করলে তো তার চেহারা তো দেখা যাবে । তখন তো লুকানো যাবে না । তাহলে ? তাহলে কি ওপাশে সত্যিই মেয়ে ?

আমি খানিকটা কনফিউজড হয়ে বললাম, ওকে । সাথে সাথেই ভিডিও চালু হয়ে গেল । কিছু সময় কালো স্ক্রিন দেখা গেল । তারপরই আমি ভিডিও দেখতে পেলাম । জেনিকে দেখতে পেলাম আমি । 

জেনি সত্যিই মেয়ে ! এবং যথেষ্ট সুন্দরী । একটু অবাক না হয়ে পারলাম না । কারন ক্রিসমাসের এই সময়ে এই রকম সুন্দরী মেয়েরা সাধারন তাদের বয়ফ্রেন্ডদের সাথে সময় কাটায় । এই চ্যাট রুমে কি করছে? এমন তো হওয়ার কথা না । মেয়েটার কি কোন বয়ফ্রেন্ড নেই? কিংবা পরিবারের মানুষের সাথেও সময় কাটাতে পারতো । সেটা না করে মেয়েটা এখানে কি করছে? 

জেনি আমার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ালো । তবে এই চ্যাট রুমে ভিডিও দেখা দিলেও কোন অডিও নেই । কেবল টাইপ করা যায় আর চেহারা দেখা যায় ।

আমি জেনির সাথে নানা বিষয় নিয়ে কোন কথা বলতে শুরু করলাম । বিশেষ করে এখানে কি করছে? 

জেনি জানালো যে ওর তার বয় ফ্রেন্ড আছে কিন্তু আজ সে তার সাথে বের হয় নি । সে নিজের ডর্মেটরিতে রয়েছে । কেন জানতে চাইলেই বলল যে একজন তাকে থাকতে বলছে ।

এই ব্যাপারটা আমার মাথায় ঢুকলো না । একজন তাকে এই ছুটির দিনেও ডর্মেটরিতে থাকতে বলেছে আর সে রয়েছে ! কেন থাকবে?

তারপরেই মেয়েটা সব চেয়ে ভয়ংকর কথাটা বলল, সে বলল, আসো একটা খেলা করি।

আমি বললাম, কি খেলা ?

জেনি বলল, খেলাটা হচ্ছে আমার কাছে একটা রিভালবার আছে । সেটার ভেতরে একটা বুলেট ভরে আমি দিবো । তারপর একবার তোমার দিকে তাক করে গুলি করবো আর আমার দিকে তাক করে গুলি করবো । দেখা যাক কি হয় !

আমি খুব বেশি চিন্তিত হলাম না । কারণ এতে আমার কোন চিন্তার কোন কারণ নেই । আর জেনি নিশ্চয়ই কোন আসল গুলি পিস্তল নিয়ে খেলা করবে না । এমন পাগল নিশ্চয়ই সে নয় । আমি বললাম ওকে চল খেলা করি !

দেখলাম জেনি প্রায় সাথে সাথেই একটা রিভালবার বের করলো । সেটা আমি স্ক্রিনে দেখতে পেলাম । অনেক পুরানো দিনের একটা রিভালবার দেখতে পেলাম । আমার কাছে কেন জানি সেটা খেলনা মনে হল না । মনে হল যেন সত্যিই একটা রিভালবার । জেনিকে দেখলাম একটা বুলেট নিয়ে সেটা রিভালভারের গোল ম্যাগজিনের ভেতরে ঢুকালো । তারপর সেটা ঘুরিয়ে দিল । তারপর না দেখেই রিভালবারটা সেট করলো । তার মানে গুলিটা ঠিক কোন খাপে আছে সেটা জেনি জানে না । অনেক হিন্দি মুভিতেই এমন দেখা যায় । ভাগ্য পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে নায়ক কিংবা ভিলেন এমন খেলা খেলে থাকে । 

জেনি আমার দিকে তাকিয়ে লিখলো, আমি এর আগে এটা অনেক খেলেছি এবং প্রতিবারই আমি জিতেছি । অপাশের জন মারা গেছে ।

-আচ্ছা তাই নাকি?

-হ্যা । এবারু তুমি মরবে ।

আমি হাহা ইমো দিলাম । তারপর লিখলাম, তোমার হাতে মরলে আমি ধন্য ।

জেনি সেই বিষয়ে কিছু বলল না । কেবল বলল, ওকে রেডি ! তুমি আগে !

আমি বললাম, ওকে । 

দেখলাম জেনি রিভালবারের নল টা আমার দিকে অর্থ্যাৎ ক্যামেরার দিকে তাক করলো এবং এরপর ট্রিগার চেপে দিল । কিছু হল না । আওয়াজ নেই যেহেতু আমি কোন আওয়াজ শুনতে পেলাম না । কোন কিছু বের হল না । অর্থ্যাৎ বুলেট ফাঁকা ।

জেনি এবার নিজের মাথায় নলটা তাক করলো । আমি স্ক্রিনে দেখছিলাম জেনির হাত যেন একটু কাঁপছিল । তখনই মনে হল যে মেয়েটা ভয় পাচ্ছে । 

কেন? 

খেলনা পিস্তল নিয়ে ভয় পাওয়ার কি আছে?

জেনি ট্রিগার চাপ দিল । এবারও কোন কিছু হল না । বুলেট নেই । তবে জেনিকে আমি ঠিকই কেঁপে উঠতে দেখলাম।  

জেনি আবার আমার দিকে পিস্তল তাক করলো । ট্রিগার চাপ দিলো । আমি যেন একটু কেঁপে উঠলাম । যদিও আমার ভয়ের কোন কারণ নেই তবুও ভয় পেলাম কেন জানি । তবে গুলি চলল না । এবার দেখলাম জেনি রীতিমত কাঁপছে । নিজের মাথায় পিস্তলের নলটা ঠেকিয়ে সে আমার দিকে তাকালো । দেখতে পেলাম ওর চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে । আমি কি করবো ঠিক বুঝতে পারলাম না । মনে হল এখনই ভয়ংকর কিছু হবে । আমার সন্দেহকে সত্যিই করে দিতেই কাজটা হল ! জেনি ট্রিগার চাপ দিল । এবং সাথে সাথেই দেখলাম জেনির মাথার উড়ে গেল । জেনিকে দেখলাম চেয়ারের উপরেও পড়ে গেল । রক্তে ভেসে গেল । জেনি মারা গেছে !

আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । 

কি হল ! 

চোখ বড় বড় করে আমি কেবল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে রইলাম । মৃত মেয়েটা চোখ খোলা করে তাকিয়ে রয়েছে । আমি জোড়ে জোড়ে দম নিতে থাকলাম । কোন কিছু সহজ ভাবে ভাবার ক্ষমতা আমি হারিয়ে ফেলেছি । জেনি সত্যিই মারা গেছে ।

ও মাই গড !

জেনি বলেছিল এর আগে অনেক বার সে জিতেছে । তার মানে কি অন্য কেউ মারা গেছে !

কিভাবে মারা গেছে ? আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না । আমি আর কিছু ভাবতে চাই না ।

তারপর স্ক্রিন বন্ধ করে দিলাম ।

নাহ । আমি কিছু দেখি নি । আমি এই মৃত্যুর জন্য দায়ী না । কোন ভাবেই না । আমি চ্যাট রুম থেকে বের হতেই যাবো তখনই দেখলাম জেনির আইডি থেকে আমার কাছে একটা মেসেজ এসে হাজির হয়েছে । সেখানে লেখা ‘এবার খেলার পালা তোমার’

একটা শীতল ভয়ের স্রোত আমার পুরো শরীর জুড়ে বয়ে গেল ! 

আমি ল্যাপটপ বন্ধ করে দিলাম । তবে আমার কেন জানি মনে হল কোন এক ভয়ংকর বিপদে পড়েছি আমি । আমারও শেষ পরিনতি জেনির মত হতে চলেছে । এবার আমার পালা ! 

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 31

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →