ছুটির দিন গুলো আমার সব সময়ই বিরক্ত ভাবে কাটে । এই দিন গুলো আমি সারাদিন শুয়ে বসে কাটাই । কোন কিছুই করার থাকে না । সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয় অনেক বেশি । নাস্তা কাম দুপুরের খাবার খেয়ে বসে পড়ি নিজের ল্যাপ্টপের সামনে । যদি আগের দিনে কোন কাজ বাকি থাকে তাহলে সেটা শেষ করি এবং এর পর মুভি নয়তো টিভি সিরিজ দেখতে বসি । কিন্তু রাতের বেলা আসতে আসতে কোন কিছুই আর ভাল লাগে না । না মুভি দেখতে ভালো লাগে, না বই পড়তে আর না অন্য যে কোন কাজ করতে ভালো লাগে ! তখন কি যে করতে ইচ্ছে করে সেটা আমি কিছুইতেই বের করতে পারি না । এটাই সম্ভবত একা থাকার কুফল । এই সময় একটা সঙ্গী থাকলে সময়টা তার সাথে কাটানো যেত হয়তো ।
ক্রিসমাসের এই দিনও আমি বিরক্ত নিয়ে বসে রয়েছে । একটু আগে মুভি দেখা শেষ করেছি । এখন আর কিছুইতেই মুভি দেখা যাবে না । বই পড়ার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু সেদিকেও মন টানে নি ।
আমি বিরক্ত হয়ে চ্যাট রুমে হাজির হলাম । চ্যাট রুম আমি খুব একটা সময় আসি না । আমি খুব ভাল করেই জানি এখান থেকে আমাকে দ্রুত সময়ই চলে যেতে হবে । কয়েক লাইন চ্যাট করার সাথে সাথেই জানি আমার বিরক্তি চলে আসবে । এমন অনেক ওয়েব সাইট রয়েছে যেগুলো অচেনা মানুষের সাথে চ্যাট করতে বানানো হয়েছে । এই চ্যাট রুমটাও সেই রকম । এর একটা সুবিধা হল এক্ষানে চাইলে ভিডিও কল দেওয়া যায় যদিও কথা বলা বা কোন অডিও শোনা যায় না তবে চেহারা দেখা যায় ঠিকই ।
কয়েক মুহুর্ত অপেক্ষা করার সাথে সাথেই একজনকে পেয়ে গেলাম । এখানে কথা বলার মানুষের অভাব হয় না কখনও । এটা আমি খুব ভাল করেই জানি। কত মানুষ এখানে আসে কথা বলার জন্য ।
-হ্যালো ।
-হাই ।
-কি নাম তোমার ?
-আমার নাম অপু । তোমার নাম কি?
-আমার নাম জেনি !
মেয়ে ! আমি জানি বেশিইর ভাগ সময়ই ছেলেরা মেয়েদের নাম করে আইডি খোলে । ছেলেদের সাথে মজা নেয় । সুতরাং এটাও যে একটা ছেলেই হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই ।
আমি জেনি কোথায় থাকে সেটা জানতে চাইলাম । জেনি বলল সে আমেরিকান ।
বাহ! আমার কাছে এবার মনেই হল এই লোক মিথ্যা বলছে । এই ক্রিসমাসের সময় কোন আমেরিকান মেয়ে এই চ্যাট রুমে আসবে কেন ? আসার কোন কারণ নেই ।
আমি মনে মনে ভাবলাম এখনই চ্যাট রুম ছেড়ে চলে যাবো। ঠিক তখনই জেনি লিখলো, আমি কি তোমাকে ভিডিও চালু করে দিতে পারি?
এই লাইন টা পড়ে আমি খানিকটা অবাক হলাম । ছেলে হয়ে মেয়ের নামে চ্যাট করা সহজ । কিন্তু ভিডিও অপশন চালু করলে তো তার চেহারা তো দেখা যাবে । তখন তো লুকানো যাবে না । তাহলে ? তাহলে কি ওপাশে সত্যিই মেয়ে ?
আমি খানিকটা কনফিউজড হয়ে বললাম, ওকে । সাথে সাথেই ভিডিও চালু হয়ে গেল । কিছু সময় কালো স্ক্রিন দেখা গেল । তারপরই আমি ভিডিও দেখতে পেলাম । জেনিকে দেখতে পেলাম আমি ।
জেনি সত্যিই মেয়ে ! এবং যথেষ্ট সুন্দরী । একটু অবাক না হয়ে পারলাম না । কারন ক্রিসমাসের এই সময়ে এই রকম সুন্দরী মেয়েরা সাধারন তাদের বয়ফ্রেন্ডদের সাথে সময় কাটায় । এই চ্যাট রুমে কি করছে? এমন তো হওয়ার কথা না । মেয়েটার কি কোন বয়ফ্রেন্ড নেই? কিংবা পরিবারের মানুষের সাথেও সময় কাটাতে পারতো । সেটা না করে মেয়েটা এখানে কি করছে?
জেনি আমার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ালো । তবে এই চ্যাট রুমে ভিডিও দেখা দিলেও কোন অডিও নেই । কেবল টাইপ করা যায় আর চেহারা দেখা যায় ।
আমি জেনির সাথে নানা বিষয় নিয়ে কোন কথা বলতে শুরু করলাম । বিশেষ করে এখানে কি করছে?
জেনি জানালো যে ওর তার বয় ফ্রেন্ড আছে কিন্তু আজ সে তার সাথে বের হয় নি । সে নিজের ডর্মেটরিতে রয়েছে । কেন জানতে চাইলেই বলল যে একজন তাকে থাকতে বলছে ।
এই ব্যাপারটা আমার মাথায় ঢুকলো না । একজন তাকে এই ছুটির দিনেও ডর্মেটরিতে থাকতে বলেছে আর সে রয়েছে ! কেন থাকবে?
তারপরেই মেয়েটা সব চেয়ে ভয়ংকর কথাটা বলল, সে বলল, আসো একটা খেলা করি।
আমি বললাম, কি খেলা ?
জেনি বলল, খেলাটা হচ্ছে আমার কাছে একটা রিভালবার আছে । সেটার ভেতরে একটা বুলেট ভরে আমি দিবো । তারপর একবার তোমার দিকে তাক করে গুলি করবো আর আমার দিকে তাক করে গুলি করবো । দেখা যাক কি হয় !
আমি খুব বেশি চিন্তিত হলাম না । কারণ এতে আমার কোন চিন্তার কোন কারণ নেই । আর জেনি নিশ্চয়ই কোন আসল গুলি পিস্তল নিয়ে খেলা করবে না । এমন পাগল নিশ্চয়ই সে নয় । আমি বললাম ওকে চল খেলা করি !
দেখলাম জেনি প্রায় সাথে সাথেই একটা রিভালবার বের করলো । সেটা আমি স্ক্রিনে দেখতে পেলাম । অনেক পুরানো দিনের একটা রিভালবার দেখতে পেলাম । আমার কাছে কেন জানি সেটা খেলনা মনে হল না । মনে হল যেন সত্যিই একটা রিভালবার । জেনিকে দেখলাম একটা বুলেট নিয়ে সেটা রিভালভারের গোল ম্যাগজিনের ভেতরে ঢুকালো । তারপর সেটা ঘুরিয়ে দিল । তারপর না দেখেই রিভালবারটা সেট করলো । তার মানে গুলিটা ঠিক কোন খাপে আছে সেটা জেনি জানে না । অনেক হিন্দি মুভিতেই এমন দেখা যায় । ভাগ্য পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে নায়ক কিংবা ভিলেন এমন খেলা খেলে থাকে ।
জেনি আমার দিকে তাকিয়ে লিখলো, আমি এর আগে এটা অনেক খেলেছি এবং প্রতিবারই আমি জিতেছি । অপাশের জন মারা গেছে ।
-আচ্ছা তাই নাকি?
-হ্যা । এবারু তুমি মরবে ।
আমি হাহা ইমো দিলাম । তারপর লিখলাম, তোমার হাতে মরলে আমি ধন্য ।
জেনি সেই বিষয়ে কিছু বলল না । কেবল বলল, ওকে রেডি ! তুমি আগে !
আমি বললাম, ওকে ।
দেখলাম জেনি রিভালবারের নল টা আমার দিকে অর্থ্যাৎ ক্যামেরার দিকে তাক করলো এবং এরপর ট্রিগার চেপে দিল । কিছু হল না । আওয়াজ নেই যেহেতু আমি কোন আওয়াজ শুনতে পেলাম না । কোন কিছু বের হল না । অর্থ্যাৎ বুলেট ফাঁকা ।
জেনি এবার নিজের মাথায় নলটা তাক করলো । আমি স্ক্রিনে দেখছিলাম জেনির হাত যেন একটু কাঁপছিল । তখনই মনে হল যে মেয়েটা ভয় পাচ্ছে ।
কেন?
খেলনা পিস্তল নিয়ে ভয় পাওয়ার কি আছে?
জেনি ট্রিগার চাপ দিল । এবারও কোন কিছু হল না । বুলেট নেই । তবে জেনিকে আমি ঠিকই কেঁপে উঠতে দেখলাম।
জেনি আবার আমার দিকে পিস্তল তাক করলো । ট্রিগার চাপ দিলো । আমি যেন একটু কেঁপে উঠলাম । যদিও আমার ভয়ের কোন কারণ নেই তবুও ভয় পেলাম কেন জানি । তবে গুলি চলল না । এবার দেখলাম জেনি রীতিমত কাঁপছে । নিজের মাথায় পিস্তলের নলটা ঠেকিয়ে সে আমার দিকে তাকালো । দেখতে পেলাম ওর চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে । আমি কি করবো ঠিক বুঝতে পারলাম না । মনে হল এখনই ভয়ংকর কিছু হবে । আমার সন্দেহকে সত্যিই করে দিতেই কাজটা হল ! জেনি ট্রিগার চাপ দিল । এবং সাথে সাথেই দেখলাম জেনির মাথার উড়ে গেল । জেনিকে দেখলাম চেয়ারের উপরেও পড়ে গেল । রক্তে ভেসে গেল । জেনি মারা গেছে !
আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না ।
কি হল !
চোখ বড় বড় করে আমি কেবল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে রইলাম । মৃত মেয়েটা চোখ খোলা করে তাকিয়ে রয়েছে । আমি জোড়ে জোড়ে দম নিতে থাকলাম । কোন কিছু সহজ ভাবে ভাবার ক্ষমতা আমি হারিয়ে ফেলেছি । জেনি সত্যিই মারা গেছে ।
ও মাই গড !
জেনি বলেছিল এর আগে অনেক বার সে জিতেছে । তার মানে কি অন্য কেউ মারা গেছে !
কিভাবে মারা গেছে ? আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না । আমি আর কিছু ভাবতে চাই না ।
তারপর স্ক্রিন বন্ধ করে দিলাম ।
নাহ । আমি কিছু দেখি নি । আমি এই মৃত্যুর জন্য দায়ী না । কোন ভাবেই না । আমি চ্যাট রুম থেকে বের হতেই যাবো তখনই দেখলাম জেনির আইডি থেকে আমার কাছে একটা মেসেজ এসে হাজির হয়েছে । সেখানে লেখা ‘এবার খেলার পালা তোমার’
একটা শীতল ভয়ের স্রোত আমার পুরো শরীর জুড়ে বয়ে গেল !
আমি ল্যাপটপ বন্ধ করে দিলাম । তবে আমার কেন জানি মনে হল কোন এক ভয়ংকর বিপদে পড়েছি আমি । আমারও শেষ পরিনতি জেনির মত হতে চলেছে । এবার আমার পালা !