পাগলামী

oputanvir
4.8
(98)

সিগনাল ছেড়ে দিতেই বাসটা চলতে শুরু করলো । সাথে সাথে পানিওয়ালা ছেলেটাও । কাঁধে এতো গুলো পানির বোতল নিয়ে কেমন দৌড়াতে লাগলো । নীলুর কেন জানি খুব বেশি খারাপ লাগলো ছেলেটার জন্য । একবার মনে হল যে টাকা ছুড়ে দিতে ছুড়ে দিলে হয়তো ছেলেটা আর বাসের পেছন পেছনে এভাবে দৌড়াবে না । যদি পানির বোতলটা হাতে নিতো তখন নিশ্চিন্তেই টাকাটা ওভাবে ছুড়ে দিতে পারতো । কেবল পানির জন্য পানিওয়ালা ছেলেটাকে ডেকেছিলো তখনই বাসটা ছেড়ে দিলো । আর একটা বোতল বিক্রি হবে ভেবে ছেলেটা বাসের পেছন পেছন দৌড়াতে লাগলো ।

তবে আর একটু গিয়েই বাসটা আবারও থেমে গেল সিগনাল জ্যামে । পানিওয়ালা ছেলেটা জানলার কাছে বানির বোতলটা বাড়িয়ে দিল নীলুর দিকে । মুখে বিস্তৃত হাসি । যেন রাজ্য জয় করে ফেলেছে । আর একটু দেরি হলে নীলু টাকাটা ছেলেটার দিকে ছুড়েই দিতো ! ছেলেটার মুখে হাসি দেকখে নীলুর ভাল লাগলো । তবুও ছেলেটাকে একটু ধমক দিয়ে বলল, এভাবে দৌড়াতে আছে
ছেলেটা আবারও হেসে বলল, কিছু হইবো না আফা !
তারপর অন্য দিকে চলে গেল ।

পানির বোতলটা হাতে নিয়ে নীলু জানলার ভেতরে তাকালো । সামনে দেখলো পেল বিশাল গাড়ির জ্যাম । কবে এই জ্যাম কবে ছাড়বে কে জানে । আবারও যখন জানলা দিয়ে তাকালো তখন দেখতে পেল যে পানিওয়ালা ছেলেটা একজন বাইকার সামনে গিয়ে দাড়িয়েছে । বাইকার লোকটার মাথায় কালো হেলমেট । দেখা যাচ্ছে না চেহারা । সাদা সার্ট আর কালো প্যান্ট পরে আছে । অফিস থেকে ফিরছে সম্ভব । ছেলেটার সাথে কি যেন বলছে । একটু দুর হওয়ার কারণে নীলু সেটা শুনতে পাচ্ছে না । তারপরই দেখতে পেল ছেলেটা হাতের ইশারায় যেন সব গুলো পানি দেখালো । এতো দুর থেকেও নীলু পানিওয়ালার মুখের বিস্ময় ভাবটা দেখতে পেল পরিস্কার । প্রথমে অবিশ্বাস তারপর আনন্দ । দ্রুত সব পানির বোতল গুলতে শুরু করলো সে । তারপর আবারও তাকালো বাইকওয়ালার দিকে ।

নীলুর বুকে তখন অদ্ভুত একটা অনুভূতি হওয়া শুরু করেছে । নীলু এতো দুর থেকেও বুঝতে পারছে যে বাইকওয়ালা কী করতে যাচ্ছে । পকেট থেকে টাকা বের করে দিল । পুরো একটা এক হাজার টাকার নোট । হাত দিয়ে একটা বোতল নিল বাইকওয়ালা । তারপর হাতের নেড়ে নেড়ে কিছু বলল । পানিওয়ালা কেবল মাথা নাড়ালো । সে বুঝতে পেরেছে । বুঝতে পেরেছে নীলুও । বাইকওয়ালা সব পানি কিনে নিয়েছে । তারপর পানিওয়ালাকে বলেছে যারই পানি দরকার তাকেই পানি দিতে । কিন্তু টাকা না নিতে ।

একটু পরে হলও তাই । দেখতে পেল পানিওয়ালা একজনকে পানি দিলো বটে কিন্তু টাকা নিলো না । কিছু বলতেই বাইকওয়ালা কে নির্দেশ করে দেখিয়ে দিল । নীলু এক ভাবে তাকিয়ে আছে বাইকে বসা ছেলেটার দিকে । একটা বার কেবল ছেলেটাকে দেখতে চায় সে । ছেলেটাকে একবার দেখতে চায় !

কিন্তু ভাগ্য সহায় হল না । ছেলেটা নিজের হেলেমট খুলল না । নীলুর খুব ইচ্ছে করছিলো যে বাস থেকে গিয়ে ছেলেটার সাথে কথা বলে কিন্তু ইতস্ততার কারণে সেটা করলো না । কী বলবে ছেলেটাকে সে !
আরেকটু পরে যখন সিগনালটা ছেড়ে দিল তখনও নীলুর চোখ কেবল বাইকের দিকেই । একবার বাইকটা একেবারে কাছে চলে এল । নীলুর এতো ইচ্ছে করলো ডাক দিতে কিন্তু পারলো না । বাইকটা যখন ডান দিকের রাস্তায় চলে যাচ্ছে তখন কেবল বাইকের নাম্বরটা চোখে পড়লো নীলুর । মনের ভেতরে গেথে নিলো সেটা । যত দুর চোখ যায় কেবল তাকিয়েই রইলো । কিছু সময় পরে হারিয়ে গেল বাইকওয়ালা !

নীলু ভেবেছিলো যে হয়তো এই ব্যাপারটা সে সেই সময়েই ভুলে যাবে । ঐদিন রাতে একফোটা ঘুম হল না নীলুর । কেন হল না সেটা নীলু বুঝতেই পারলো না । কিন্তু পরদিনও যখন ঘুম আসলো না তখন নীলু একটু নড়ে চড়ে বসলো । ভোর রাতের দিকে সে আবিস্কার করলো যে সে ঐ নাম না জানা অচেনা বাইকারের প্রেমে পড়েছে । কেবল প্রেম না, উথাপ পাতাল প্রেমে পড়েছে ।
পরবর্তি একটা বছর নীলুর জীবন থেকে শান্তি নামের জিনিসটা একেবারে উধাও হয়ে গেল । কেবল ঘুরে ফিরে সেই রাস্তা সে অফিস ছুটির সময় দাড়িয়ে থাকতে শুরু করলো যদি সেই বাইকারকে আবার দেখা যায় ! বেশ কয়েকবার সেই পানিওয়ালার সাথে দেখা হল নীলুর । তাকে জিজ্ঞেসও করলো যে সেই বাইকার দেখতে কেমন তবে সে কিছুই বলতে পারলো না । হেলমেট পরা ছিল বিধায় তার চেহারা দেখা যায় নি !

দুই
-মিস্টার শাফায়েত হোসেন?
-জ্বী বলছি।
-আমি পল্লবী থানা থেকে বলছি । আমার নাম ইনেসপেক্টার রাশেদুল ইসলাম ! আপনার নামে একটা অভিযোগ আছে । আপনাকে একবার থানায় আসতে হবে ।
-অভিযোগ ? কিসের অভিযোগ ?
-একজন আপনার বাইকের নম্বর দিয়ে আপনার নামে অভিযোগ করেছে । ইভটিজিংয়ের । আপনি আসবেন নাকি আমরা আসবো?
সাফায়েত যেন আকাশ থেকে পড়লো । তারপর বলল, আমি এমন কোন কাজই কোন দিন করি নি । কে করেছে অভিযোগ ?
-সেটা আসলেই দেখতে পারবেন । আসুন । কখন আসবেন ?
-আমি এখনই আসছি । আমার বাসা থানার কাছেই ।

শাফায়েত যখন থানায় ঢুকলো তখন বিকাল সাড়ে ছয়টা বাজে । থানায় গিয়ে রাশেদুর ইসলামের নাম বলতেই তাকে একটা রুমের দিকে ইশারা করা হল । সেই রুমের দিকে পা বাড়ালো । রুমে ঢুকতেই দেখতে পেল একজন অফিসার বসে আছেন । নাম রাশেদুল ইসলাম । সামনে একটা মেয়ে বসা । এই মেয়ে কী তাহলে তার নামে অভিযোগ করেছে ?
ও কবে ইভটিজিং করলো?

শাফায়েত যখন টেবিলের কাছে এসে দাড়ালো ইনেসপেক্ট সাহেব বললেন, আপনিই শাফায়েত?
-জ্বী !
ইনেসপেক্টর সামনে বসা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল, এই নিন আপনার আসামী চলে এসেছে !
শাফায়েতের দিকে মেয়েটি ঘুরে তাকালো । শাফায়েত চিনতে পারলো না মেয়েটিকে । জীবনে এই প্রথম দেখতে পাচ্ছে মেয়েটাকে । এই মেয়েটাকে কবে সে ইভ টিজিং করলো কে জানে ?
শাফায়েত কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইনেসপেক্টর রাশেদুল বলল, শাফায়েত সাহেব আসুন ! বসুন এখানে । চা কফি কিছু চলবে?
শাফায়েত আসলে কিছু বুঝতে পারছে না । মেয়েটি যদি ওর নামে অভিযোগ করেই থাকে তাহলে এই ভাবে তাকিয়ে কেন আছে ওর দিকে ! কী গভীর দৃষ্টি নিয়ে মেয়েটা তাকিয়ে আছে ওর দিকে । একটা কথা পর্যন্ত বলছে না

রাশেদুল ইসলাম বললেন, বসুন আপনাকে একটা গল্প বলি । আপনি খানিকটা দ্বিধায় পরে গেছেন যে এই মেয়েটাকে তো আপনি কোন দিন দেখেনই নি তাহলে ইভটিজিং কিভাবে করলেন, তাই না ?
-হ্যা আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না ।
-আজকে সকালে এই মেয়েটি আমার কাছে এক অদ্ভুত গল্প নিয়ে আসে । কী গল্প শুনবেন?
-বলুন, শুনি ।
রাশেদুল তারপর নীলুর গল্পটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বলল। শাফায়েত কেবল অবাক হয়ে শুনে গেল । গল্প শেষ করে রাশেদুল বলল, মেয়েটি গত ছয়মাস ধরে আপনাকে খুজছে । রাতে শান্তিমত ঘুমাতে পারছে না । চোখের নিচে কালি পরা দেখেই বুঝতে পারছেন । ঠিক মত পড়ালেখা করতে পারছে না । সামনেই পরীক্ষা । তাই আমার সাহায্য চেয়েছে । আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমরা যখন কোন কিছু পা না তখন সেই জিনিসটার প্রতি তীব্র এক আবেগ তৈরি হয় । আপনার প্রতি নীলুরও তাই হয়েছে । তবে এখন আপনাকে দেখা হয়েছে বিধায় এই আবেগটা কমে আসবে আশা করি !

শাফায়েত তখন বলল, থানাতেই বলতে হবে? বাইরে গিয়ে বলি?
-হ্যা হ্যা অবশ্যই ।
তারপর নীলুর দিকে তাকিয়ে বলল, আশা করি আপনি এরপর থেকে শান্তমত ঘুমাতে পারবেন !
নীলু কোন মতে বলল, আপনাকে কী বলে যে ধন্যবাদ দিবো আমি বুঝতে পারছি না !
-ধন্যবাদ দিতে হবে না । কেবল পাগলামী বন্ধ করুন । তাতেই হবে । মনদিয়ে পড়াশুনা করুন !

তিন
নীলু চুপ করে বসে শাফায়েত নামের মানুষটার সামনে । এই ছেলেটার সাথে কোন দিন দেখা হবে সেটা ও ভাবেও নি কোন দিন ।
প্রথম কথা শাফায়েতই বলল, কিছু খাবেন আপনি?
-জ্বী না ।
দুজনই আবার চুপ । নীলু আসলে মনে মনে গুছিয়ে নিচ্ছে কী বলবে । শাফায়েত বলল, আপনি সত্যিই সত্যিই রাস্তায় দাড়িয়ে থাকতেন ?
নীলু কেবল মাথা ঝাকালো !
-এমন পাগলামো কেউ করে?
-আমি করছি । নিজের কাজ কর্ম দেখে নিজেই অবাক হয়ে গেছি । আমি কোন দিন কাউকে এভাবে ভালোবাসবো আমি ভাবতেও পারি নি ।

কথাটা বলেই চট করে তাকালো শাফায়েতের দিকে । তারপর আবার বলল, আপনি প্লিজ বিব্রত হবেন না । আপনার কিছু করতে হবে না । এমন কী আমার সাথে দেখাও করতে হবে না । আপনার নাম্বার আমাকে কেবল দিবেন প্লিজ । আমি কোন দিন আপনাকে ডিস্টার্ব করবো না । কেবল মনের ভেতরে এই একটা শান্তি যে আপনার সাথে চাইলেই কথা বলতে পারবো ! দিবেন নম্বর টা?
শাফায়েত বলল, দেখি আপনার মোবাইল টা !
নীলু মোবাইলটা এগিয়ে দিল । শাফায়েত নম্বরটা সেভ করে দিয়ে বলল, আপনি চাইলে ফোন দিতে পারেন আমাকে !এমন পাগল মেয়ের সাথে কথা বলটে আমার মনে হয় না খারাপ লাগবে !

মোবাইলটা ফেরৎ দিতে দিতে বলল, আসুন এক কাপ কফি খাওয়া যাক ! আমাদের প্রথম দেখা হয়েছে একেবারে খালি মুখে শেষ হলে কেমন দেখায় বলুন ! আমরা একে অন্যের সম্পর্কে জানি একটু !

কফির অর্ডার হয় । কথা এগিয়ে চলে । তারপর কোন দিকে সেটা যায় সেটা বরং পাঠকরাই ঠিক করুক !
ভালোবাসা বড় অদ্ভুত একটা ব্যাপার । কখন যে আপনি কার প্রেমে পড়বেন সেটা আপনি কোন দিন নিশ্চিত ভাবে বলতে পারবেন না !

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 98

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

2 Comments on “পাগলামী”

Comments are closed.