ঈদ স্মৃতি

oputanvir
4.5
(10)

ঈদ বলতে আসলে এখন আর আলাদা ভাবে কিছু নেই । আমার ঠিক মনেও নেই আমার ঈদ গুলো কেমন ছিল । যতদুর স্মৃতি ভাল ভাবে মনে পড়ে তাতে দেখা যায় প্রতিটি ঈদেই আমি সারাদিন বাসায় শুয়ে শুয়ে টিভি দেখেছি, বই পড়েছি নয়তো মোবাইল টিপছি । এছাড়া ঈদে আসলে কোন পরিস্কার স্মৃতি আমার মনে পড়ে না । তবে ভাসা ভাসা কয়েকটা স্মৃতি আমার মনে আছে ।

তখন কোন ক্লাসে পড়ি সেটা আমার মনে নেই । তখন যশোরে থাকি । তখন বাবার কাছ থেকে ঈদি পেতাম বিশ টাকা । সেই বিশ টাকা তখনকার সময়ে অনেক টাকা ছিল । এই ২০ টাকাই ছিল আমার আর আমার বড় ভাইয়ের ঈদের জন্য বরাদ্দ । কিন্তু একবার আমার বড় ভাই বিদ্রোহ করে বসলো । সে ঈদের আগের দিন থেকেই দাবী করলো যে সেইবার তাকে বিশ টাকা নয় বরং ৫০ টাকা দেওয়াই লাগবে । নয়তো সে ঈদ করবে না । কিন্তু আমার বাবা তা দিবে না । দেখা গেল ঈদের দিন সত্যি সত্যিই সে ঈদ করছে না । আমরা যে বাসায় ভাড়া থাকতাম সেই বাসার সামনে একটা দরজা দিল যদিও সেটা সব সময় বন্ধ থাকতো । সেই দরজার সামনে একটা বড় সিড়ি টাইপের কিছু ছিল । সেখানে আমরা বসে আড্ডা দিতাম । আমার বড় ভাই পুরানো জামা পরে সেই সিড়িটার উপরে বসে রইলো । সে নতুন জামা পরবে না, ঈদও করবে না । আমি কিছু বলছি না । তার আশের পাশে নতুন জামা পরে ঘুরাফেরা করছি এই যা…. এক সময়ে আমার বাবার মন গলল । সে বড় ভাইয়াকে ৫০ টাকাই দিল । তবে আমাকে সেই ২০ টাকা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হল ।

এরপরের স্মৃতিটা আরও একটু বড় বেলার । তখন চুয়াডাঙ্গাতে নানী বাড়িতে ঈদ করতে গেছি । তখন ঈদে চকলেট বোমা ফুটানোর খুব চল ছিল । আমার এক ছোট খালা আবার এই বোমার আওয়াজে খুব ভয় পেত । কানে হাত দিয়ে বসে থাকতো । এই কারণে আমার আবার বাবা বোমা ফুটালো খুব রাগ করতো আমার বড় ভাইয়ের উপরে । সে বাবার আদেশ অমান্য করে বোমা ফুটিয়েই চলেছে । আর এদিকে আমার ছোট খালা কানে হাত দিয়ে চিৎকারে চলেছে । আমার বাবা বের হয়ে এল । তারপর বড় ভাইয়ের পেছনে দৌড় শুরু করলো তাকে ধরার জন্য । আমি সিড়ি ঘরের দাড়িয়ে সেই দৌড়ানোর দৃশ্য দেখছি । ভাইয়া দৌড়াচ্ছে পেছন পেছন আমার বাবা দৌড়াচ্ছে । তবে শেস পর্যন্ত আমার বাবা তাকে ধরতে পেরেছিলো কিনা সেটা আমার মনে নেই ।

তিন নম্বর স্মৃতিটা মনে আছে একদম অল্প । ঈদে গিয়েছি বিক্রমপুর । কিন্তু গিয়ে আমাদের মন খারাপ । সারা দিন ধরে বৃষ্টি । বাইরে বের হওয়ার উপায় নেই এমন কি নামাজ পড়তে পর্যন্ত যাওয়া হল না । আমি ঘরের জানালা দিয়ে সেই বৃষ্টি ভেজা মাটির দিকে তাকিয়ে রয়েছে । বাড়ির পাশেই আমার দাদার কবর । তার পাসেই কয়েকটা গাছ । সেই গাছ থেকে বৃষ্টির পানি পড়ছে একমনে । এই দৃশ্য টুকুই কেবল মনে গেঁথে রয়েছে ।

ঈদের স্মৃতি বলতে আলাদা ভাবে আমার এই মনে আছে । আর কিছু মনে নেই । যা মনে আছে সব কিছু একই দৃশ্য । ঈদের সারা দিন বাসায় থাকা । বিকেল কিংবা সন্ধ্যার সময়ে বন্ধুদের ফোন আসতো । বের হতাম বাইরে । বড় বাজার কিংবা বিএডিসির ভেতরে গিয়ে বসতাম । সন্ধ্যা পেরিয়া রাত পর্যন্ত আড্ডা চলত । তারপর বাসায় চলে আসতাম । গত কয়েক বছর ধরে ঈদ বলতে এই একই দৃশ্য ।

গত বছরের ঈদ অবশ্য একটু অন্য রকম ছিল । বাসায় যাই নি । ঢাকার বাসাতেই ছিলাম । একদম একা । যাদের সাথে সাবলেট থাকি তারাও ছিল না । নিজেই রান্না করলাম নিজের খেলাম, মুভি দেখলাম বই পড়লাম টিভি দেখলাম । এই ভাবে কেটে গেল ঈদের দিন ।

আরেকটা স্মৃতির কথা বলি । যদিও এটা ঠিক ঈদের দিনের স্মৃতি না । এটা ঈদের কয়েক দিন আগের স্মৃতি । তখন ক্লাস টেনে পড়ি । জীবনের প্রথম প্রেম তখনও চলমান । সব কিছুতেই তখন আলাদা উত্তেজনা । প্রতিদিন নতুন কিছু ঘটছে । স্কুল ছুটি হয়ে গেছে । তবুও বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে আসছি নিয়মিত । ঈদের আর দুয়েক দিন বাকি সম্ভবত । আড্ডা শেষ করে বাসায় ফিরবো তখন এক বন্ধু আমার দিকে একটা প্যাকেট বাড়িয়ে দিল । খুলে দেখলাম সেটা একটা পাঞ্জাবী । আমার প্রথম প্রেমিকা আমাকে ঈদের জন্য এই পাঞ্জাবীটা উপহার দিয়েছে । সেই সময়ের আনন্দটা কেন জানি আমি এখনও অনুভব করি ।

আমার ঈদের স্মৃতি বলতে এই । আর কিছু আমার মনে নেই ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.5 / 5. Vote count: 10

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →