ঈদ বলতে আসলে এখন আর আলাদা ভাবে কিছু নেই । আমার ঠিক মনেও নেই আমার ঈদ গুলো কেমন ছিল । যতদুর স্মৃতি ভাল ভাবে মনে পড়ে তাতে দেখা যায় প্রতিটি ঈদেই আমি সারাদিন বাসায় শুয়ে শুয়ে টিভি দেখেছি, বই পড়েছি নয়তো মোবাইল টিপছি । এছাড়া ঈদে আসলে কোন পরিস্কার স্মৃতি আমার মনে পড়ে না । তবে ভাসা ভাসা কয়েকটা স্মৃতি আমার মনে আছে ।
তখন কোন ক্লাসে পড়ি সেটা আমার মনে নেই । তখন যশোরে থাকি । তখন বাবার কাছ থেকে ঈদি পেতাম বিশ টাকা । সেই বিশ টাকা তখনকার সময়ে অনেক টাকা ছিল । এই ২০ টাকাই ছিল আমার আর আমার বড় ভাইয়ের ঈদের জন্য বরাদ্দ । কিন্তু একবার আমার বড় ভাই বিদ্রোহ করে বসলো । সে ঈদের আগের দিন থেকেই দাবী করলো যে সেইবার তাকে বিশ টাকা নয় বরং ৫০ টাকা দেওয়াই লাগবে । নয়তো সে ঈদ করবে না । কিন্তু আমার বাবা তা দিবে না । দেখা গেল ঈদের দিন সত্যি সত্যিই সে ঈদ করছে না । আমরা যে বাসায় ভাড়া থাকতাম সেই বাসার সামনে একটা দরজা দিল যদিও সেটা সব সময় বন্ধ থাকতো । সেই দরজার সামনে একটা বড় সিড়ি টাইপের কিছু ছিল । সেখানে আমরা বসে আড্ডা দিতাম । আমার বড় ভাই পুরানো জামা পরে সেই সিড়িটার উপরে বসে রইলো । সে নতুন জামা পরবে না, ঈদও করবে না । আমি কিছু বলছি না । তার আশের পাশে নতুন জামা পরে ঘুরাফেরা করছি এই যা…. এক সময়ে আমার বাবার মন গলল । সে বড় ভাইয়াকে ৫০ টাকাই দিল । তবে আমাকে সেই ২০ টাকা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হল ।
এরপরের স্মৃতিটা আরও একটু বড় বেলার । তখন চুয়াডাঙ্গাতে নানী বাড়িতে ঈদ করতে গেছি । তখন ঈদে চকলেট বোমা ফুটানোর খুব চল ছিল । আমার এক ছোট খালা আবার এই বোমার আওয়াজে খুব ভয় পেত । কানে হাত দিয়ে বসে থাকতো । এই কারণে আমার আবার বাবা বোমা ফুটালো খুব রাগ করতো আমার বড় ভাইয়ের উপরে । সে বাবার আদেশ অমান্য করে বোমা ফুটিয়েই চলেছে । আর এদিকে আমার ছোট খালা কানে হাত দিয়ে চিৎকারে চলেছে । আমার বাবা বের হয়ে এল । তারপর বড় ভাইয়ের পেছনে দৌড় শুরু করলো তাকে ধরার জন্য । আমি সিড়ি ঘরের দাড়িয়ে সেই দৌড়ানোর দৃশ্য দেখছি । ভাইয়া দৌড়াচ্ছে পেছন পেছন আমার বাবা দৌড়াচ্ছে । তবে শেস পর্যন্ত আমার বাবা তাকে ধরতে পেরেছিলো কিনা সেটা আমার মনে নেই ।
তিন নম্বর স্মৃতিটা মনে আছে একদম অল্প । ঈদে গিয়েছি বিক্রমপুর । কিন্তু গিয়ে আমাদের মন খারাপ । সারা দিন ধরে বৃষ্টি । বাইরে বের হওয়ার উপায় নেই এমন কি নামাজ পড়তে পর্যন্ত যাওয়া হল না । আমি ঘরের জানালা দিয়ে সেই বৃষ্টি ভেজা মাটির দিকে তাকিয়ে রয়েছে । বাড়ির পাশেই আমার দাদার কবর । তার পাসেই কয়েকটা গাছ । সেই গাছ থেকে বৃষ্টির পানি পড়ছে একমনে । এই দৃশ্য টুকুই কেবল মনে গেঁথে রয়েছে ।
ঈদের স্মৃতি বলতে আলাদা ভাবে আমার এই মনে আছে । আর কিছু মনে নেই । যা মনে আছে সব কিছু একই দৃশ্য । ঈদের সারা দিন বাসায় থাকা । বিকেল কিংবা সন্ধ্যার সময়ে বন্ধুদের ফোন আসতো । বের হতাম বাইরে । বড় বাজার কিংবা বিএডিসির ভেতরে গিয়ে বসতাম । সন্ধ্যা পেরিয়া রাত পর্যন্ত আড্ডা চলত । তারপর বাসায় চলে আসতাম । গত কয়েক বছর ধরে ঈদ বলতে এই একই দৃশ্য ।
গত বছরের ঈদ অবশ্য একটু অন্য রকম ছিল । বাসায় যাই নি । ঢাকার বাসাতেই ছিলাম । একদম একা । যাদের সাথে সাবলেট থাকি তারাও ছিল না । নিজেই রান্না করলাম নিজের খেলাম, মুভি দেখলাম বই পড়লাম টিভি দেখলাম । এই ভাবে কেটে গেল ঈদের দিন ।
আরেকটা স্মৃতির কথা বলি । যদিও এটা ঠিক ঈদের দিনের স্মৃতি না । এটা ঈদের কয়েক দিন আগের স্মৃতি । তখন ক্লাস টেনে পড়ি । জীবনের প্রথম প্রেম তখনও চলমান । সব কিছুতেই তখন আলাদা উত্তেজনা । প্রতিদিন নতুন কিছু ঘটছে । স্কুল ছুটি হয়ে গেছে । তবুও বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে আসছি নিয়মিত । ঈদের আর দুয়েক দিন বাকি সম্ভবত । আড্ডা শেষ করে বাসায় ফিরবো তখন এক বন্ধু আমার দিকে একটা প্যাকেট বাড়িয়ে দিল । খুলে দেখলাম সেটা একটা পাঞ্জাবী । আমার প্রথম প্রেমিকা আমাকে ঈদের জন্য এই পাঞ্জাবীটা উপহার দিয়েছে । সেই সময়ের আনন্দটা কেন জানি আমি এখনও অনুভব করি ।
আমার ঈদের স্মৃতি বলতে এই । আর কিছু আমার মনে নেই ।
Discover more from অপু তানভীর
Subscribe to get the latest posts sent to your email.