এই সব মিথ্যা গল্প 2.3

অপু তানভীর
4.7
(60)

জেরিন চোখ মেলে তাকালো । প্রথমে কিছু সময়ে ঠিক বুঝতে পারলো না সে কোথায় রয়েছে । তবে সেটা মাত্র কয়েক সেকেন্ড । সাথে সাথেই মনে পড়লো সব । মনের ভেতরে একটা চাঞ্চল্য জেগে উঠলো । বিছানার বাঁ দিকে ফিরে তাকাতেই তার শাশুড়িকে বসে থাকতে দেখলো ।
জেরিন বলল, আম্মু !
জেরিনের ডাক শুনেই তার শাশুড়ি দ্রুত উঠে এল বেডের কাছে । বলল, এই উঠো না । চুপ চাপ শুয়ে থাকো । তোমাকে একটু আগে কেবিনে দিয়েছে । এখন একদম নড়াচড়া করা যাবে না ।
জেরিন বলল, আপনার ছেলে কোথায়?
সেই কথা যেন তিনি শুনতেই পান নি । তিনি এক মনেই বলে চলেছে, তোমার এপেনডিক্সটা কেটে বাদ দিতে হয়েছে । তোমার যে এতো খারাপ অবস্থা আগে থেকে আমরা কেউ টের পাই নি ।
জেরিন আবার বলল, আপনার ছেলে কোথায়?
এবার শুনতে পেলেন । বললেন, আছে পাসের ঘরে । পায়ে একটু ব্যাথা পেয়েছে ।

কথাটা শুনতেই জেরিন বলল, আমি দেখবো ওকে ।
-এখন কোন ভাবেই নড়া চড়া করা যাবে না । চুপচাপ শুয়ে থাকো। সময় হলে দেখবে।

জেরিনের শাশুড়ি দেখতে পেল জেরিনের চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে এসেছে । তিনি পাশে বসে যত্ন সহকারে সেই পানি মুছে দিলেন । তারপর বললেন, ওর কিছু হয় নি । সামান্য মোচড় গেলেছে । কাল রাতে যা ভয় পেয়েছিলাম আমি !
জেরিন জানে কি হয়েছিলো কাল রাতে । খুব ভাল করেই জানে । সন্ধ্যা থেকে কালকে বৃষ্টি শুরু হয় । রাত বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়তে থাকে বৃষ্টির বেগ । তারপর শুরু হয় ঝড় । গাছ পড়ে সব রাস্তা বন্ধ । রাত এগারোটার দিকে জেরিনের হঠাৎ পেট ব্যাথা শুরু হয় । এতো তীব্র যে কোন ভাবেই সেটা সহ্য করতে পারছিলো । তখনই ঠিক হল ওকে হাসপাতালে নিতে হবে।কিন্তু ঐ ঝড় বৃষ্টির রাতে জেরিনকে কিভাবে হাসপাতালে নেওয়া হবে সেটা নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা দেখা গেল !

জাহিদ আর জেরিন সদর হাসপাতাল থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দুরে থাকে । একে তো পাহাড়ি রাস্তা তার উপরের ঝড়বৃষ্টি । কোন ভাবেই কোন যান বাহনের ব্যবস্থা করা গেল না । এদিকে জেরিনের অবস্থা ক্ষণে ক্ষণে খারাপ হচ্ছে । জেরিন কিছুতেই ব্যাথা সহ্য করতে পারছিলো না । তখনই জাহিদ একটা অসম্ভব কাজ করলো । জেরিনকে প্রথমে রেইন কোর্ট পরালো । তারপর ওর মুখের উপর একটা পাতলা বড় পলিথিন দিলো যাতে মুখে বৃষ্টি না পড়ে । তারপর ওকে কোলে নিয়ে বৃষ্টির ভেতরে বের হয়ে গেল । জেরিনকে এই দশ কিলোমিটারের পাহাড়ি পথ কিভাবে সে কোলে করে নিয়ে দৌড়েছে সেটা জাহিদ নিজেও জানে না । কেবল সে দৌড়েছে !

জেরিনকে নিয়ে হাসপাতালে পৌছেছে তখন জেরিন কেবম ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে ছিল । ভাগ্যভাল যে ডাক্তারদের কোয়াটার সব হাসপাতাল সংলগ্ন। তাই ডাক্তার পেতে খুব একটা সমস্যা হল না । জেরিনকে পরীক্ষা করেই ডাক্তার বলে দিল যে এপেন্ডিক্স । প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঠিক হল যে সকালেই অপারেশন করা হবে ।

জেরিন তার শাশুড়িকে বলল, আম্মু জানেন কাল যখন আপনার ছেলে আমাকে কোলে করে নিয়ে দৌড়াচ্ছিলো তখন বিড়বিড় করে কী বলছিলো ?
-কী?
-বারবার উপরওয়ালার কাছে দোয়া করছিলো আমার জন্য । আমার পুরো জীবনে আমার জন্য কেউ এভাবে এতো তীব্র ভাবে দোয়া চায় নি । যখন বিদ্যুৎ চমকে উঠছিলো তখন পলিথিনের ভেতর দিয়ে আমি তার মুখ দেখতে পাচ্ছিলাম । তার চোখের পানিটা স্পষ্ট আলাদা করে আমার চোখে ধরা পড়ছিলো । তখনই আমার ব্যাথা বেদনা সব কেমন করে যেন গায়েব হয়ে গেল । আমি আর কোন ব্যাথা অনুভব করি নি । কেবল ঐ চেহারার দিকে তাকিয়ে ছিলাম !

রায়েয়া খাতুন দেখলেন তার ছেলের বউ আবারও কাঁদতে শুরু করেছে । তবে এটা কোন কষ্টের কান্না না । আনন্দের কান্না । মানুষ কাছের মানুষকে চিনতে পারে তার বিপদের সময়ে । মানুষ নিজের ভালোবাসার মানুষের বিপদে অসাধ্য সাধন করে ফেলে । জাহিদও তাই করেছে । নয়তো স্বাভাবিক সময়ে এই কাজটা করা অসম্ভব একটা ব্যাপার ছিল ।

রাবেয়া খাতুন আবারও ছেলের বউয়ের চোখের জল মুছে দিলেন । তারপর বললেন, সব বিপদ কেটে গেছে । এখন আর কোন চিন্তা নেই । তুমি একটু ঘুমাও । বাবুও ঘুমাচ্ছে । ও জেগে উঠলেই নিয়ে আসবো তোমার কাছে ।

তারপর জেরিনের মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন । জেরিন আস্তে আস্তে আবার ঘুমিয়ে পড়লো ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 60

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →