-দেখ ছবি গুলো !
এই বলে প্রিয়ন্তির দিকে ছবি গুলো বাড়িয়ে দিল সাবিহা । কয়েকদিন আগে একটা ব্রাইডাল স্যুট হয়েছে সাবিহার । সেই ছবি গুলোই আজকে প্রিন্ট করে সাবিহাকে দিয়েছে ওদের মিডিয়া হাউজের রিপন ভাই । প্রিয়ন্তি হাতের বইটা এক পাশে সরিয়ে রেখে খামটা তুলে নিল । তারপর এক মনে ছবি গুলো দেখতে লাগলো । মুখে একটা হাসি ফুটে উঠেছে । ছবি দেখতে দেখতেই বলল, তোকে তো দারুন লাগছে যে সাবিহা ।
সাবিহা একটু খুশি হল বটে । তবে বলল, ঢং করিস না তো । তোকে বউয়ের সাজে সব থেকে বেশি ভাল লাগে । এটা সবাই জানে । তুইও জানিস ।
প্রিয়ন্তি সাবিহার দিকে তাকিয়ে বলল, রিপন ভাই কি রাগ করেছে?
-একটু তো অসন্তুষ্ট হয়েই । আচ্ছা সত্যি করে বল দেখ তুই কেন স্যুট টা করলি না । মিথ্যা বলবি না । সত্যিই করে বল।
প্রিয়ন্তির চোখ জোড়া কিছু সময়ের জন্য একটু চঞ্চল হল । তারপর আবার স্থির হয়ে গেল । চোখ সরিয়ে সে আবারও ছবি গুলোর দিকে তাকালো । সাবিহা আবারও ওকে চেপে ধরলো বলতেই হবে ।
সাবিহা আর প্রিয়ন্তি অনেক দিনের বন্ধু । ওরা একই সাথে বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়ে । দুজনেরই মিডিয়াতে কাজ করার টুকটাক শখ রয়েছে । তবে প্রোফেশন হিসাবে নেওয়ার কথা ওরা কেউ এখনও ভাবে নি । কেবল শখের বসে স্টিল মডেলিং করে থাকে । রিপন মিডিয়া হাউজের সাথে বেশ কয়েকটা কাজও করেছে । সেই হাউজের একটা ব্রাইডাল শ্যুটে রিপন আহমেদের প্রথম পছন্দ ছিল প্রিয়ন্তি । ওকে দিয়েই লিড ছবি গুলো তোলার কথা ছিল । এর আগে একটা ব্রাইডাল শ্যুটে প্রিয়ন্তি অংশ নিয়েছে । সেটা খুবই প্রশংসাও পেয়েছে । আবারও যখন আরেকটা শ্যুটের জন্য ওকে ডাকা হল, প্রিয়ন্তি খানিকটা বেঁকে বসলো । ও শ্যুট করবে না । কেন করবে না সেটার কোন ব্যাখ্যা নেই । কেবল বলল যে করবো না ।
-বলবি না? না বললে আমি চললাম ।
এই বলে সাবিহা বিছানা ছেড়ে উঠে পড়তে যাবে প্রিয়ন্তি ওকে আটকালো । তারপর বলল, শুনলে হাসবি । কিন্তু আমি ….
-বল শুনি?
-শান্ত !
-শান্ত তোকে মানা করেছে ?
-না মানা করে নি । তুই জানিস ও এমন ছেলেই না । আমার কিছুতেই ও কখনও মানা করে না ।
-তাহলে?
কিছু সময় চুপ করে রইলো প্রিয়ন্তি । তারপর বলল, ঐ ব্রাইডাল শ্যুটের কথা মনে আছে তো তোর ?
-হ্যা ।
-শান্ত আমার সাথেই ছিল । শ্যুর শেষ করে যখন ওর সাথে ফিরে যাচ্ছিলাম তখন আমি নিজেই খেয়াল করলাম যে ও কেমন চুপ করে আছে । কয়েকবার জিজ্ঞেস করলাম, কিছু বলল না । এক সময় জোর করতেই স্বীকার করলো ।
আবারও কিছু সময় চুপ করে রইলো প্রিয়ন্তি । সাবিহা এই সময়ে প্রিয়ন্তির চোখের দিকে তাকিয়ে খানিকটা অবাক হয়ে গেল । তার প্রিয় বান্ধবির চোখের কোনে পানি জমতে শুরু করেছে । প্রিয়ন্তি বলা শুরু করলো, আমরা রাস্তার পাশের ফুটপাথের বসে ছিলাম । শান্ত হঠাৎ বলল, ঐ শ্যুটে তোমার সাথে যে ছেলেট ছিল বর হিসাবে, তোমরা দুজন পাশাপাশি দাড়িয়ে কিংবা বসে ছবি তুলছিলে, তুম বউ সেজেছো, তোমার পাশে বর হিসাবে অন্য কেউ এই দৃশ্যটা আমার চোখে এতো তীব্র ভাবে লাগলো !
এক ফোটা জল প্রিয়ন্তির চোখ গড়িয়ে পড়লো । প্রিয়ন্তি বলল, জানিস সাবিহা, এই লাইণ টুকু বলতে শান্তর গলা ধরে এসেছিলো । কী যে তীব্র একটা কষ্ট সেই কন্ঠে ছিল ! আমার পুরো শরীরটা কেঁটে উঠলো মুহুর্তেই । আমার আর কিছু মনে রইলো না , আমি ওকে জড়িয়ে ধরলাম ঐখানেই । আশে পাশে কত মানুষ রয়েছে সেসব আমা মনেই রইলো না । কত সময়ে ওজে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলাম আমি নিজেও জানি না । সেদিনই ঠিক করেছিলাম যে অন্য কারো সাথে এই রকম শ্যুট করবো না ।
সাবিহা হয়তো অন্য সময় হলে এই ব্যাপারটা নিয়ে হাসি তামাশা করতো কিন্তু সে নিজেও খানিকটা চমকে গিয়েছে প্রিয়ন্তির মনভাব দেখে । বলল, তুই লাকি রে, এমন একজন কে পেয়ে !
প্রিয়ন্তি হাসলো। বলল, সত্যিই বলেছিস । আমি নিজেকে লাকি মনে করি যে শান্ত আমার জীবনে এসেছে ।
আপনার গল্প গুলো সবসময়ই সুন্দর।