মেয়েদের বাইক চালানোটা এখনও এই দেশে খানিকটা বাঁকা চোখেই দেখা হয় । মানুষের ভাবটা হচ্ছে মেয়েরা বসবে বাইকের পেছনে । তারা কেন সামনে বসে বাইক সামলাবে ! এই ব্যাপারটা মুনতারিন প্রতিবারই খেয়াল করে । কিন্তু ওর গায়ের পোশাক আর কাধে ঝোলানো পদবির কারণে কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না । এমন কী বেশি সময় চোখ তুলে তাকাতেও ভরশা পায় না অনেকে । এটা ওকে বেশ আমোদ দেয় ! তবে আজকে সেই আমোদ নেওয়ার কোন মুড নেই মুনতারিনের । বাইকটা এগিয়ে যাচ্ছে আর ওর চোখ পুরো এলাকাটার দিকে দৃ্ষ্টি নিক্ষেপ করে যাচ্ছে । কোন কিছু যেন ওর চোখ না এড়ায় ! কোন অস্বাভাবিকত্ব আছে কি না সেটা ধরার চেষ্টা করছে !
সময় টা এখন দুপুরের কাছাকাছি ! বাস স্ট্যান্ডে বেশ কয়েকজন জওয়ান দাড়িয়ে রয়েছে । সাথে লেফটেনেন্ট আয়ান দাড়িয়ে রয়েছে । ওকে আসতে দেখেই লেফটেনেন্ট এগিয়ে এল ।
মুনতারিন বাইকটা এক পাশে দাড় করিয়ে স্যালুট গ্রহন করলো । বলল, সব কিছু ওকে?
-ইয়েস ম্যাম । গত দুইদিনে বান্দরবানে আসা প্রতিটি মানুষকে আমরা পরীক্ষা করেছি । যতগুলো হোটেল মোটেল রয়েছে সব গুলো ভাল করে পরীক্ষা করে দেখেছি । বেশির ভাগই দলীয় লোক। তবে সবার পরিচয় পত্র এবং রেফারেন্স রয়েছে। আপনি যেমনটা বলেছিলেন তেমন কেউ নেই । আসে নি ।
-সব যাত্রী ?
-ইয়েস ম্যাম !
-গুড !
মুনতারিন একটু চিন্তা করলো । কিছু যেন মিলছে না । মন্ত্রী মহাদয় গতকাল রাতে এসে হাজির হয়েছে বান্দরবানে । আজকে একটা মেডিকেল কলেজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন । বিকালে ফেরৎ যাবেন ! কিন্তু মুনতারিনের ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট বলছে, এই বান্দরবানেই তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে । এবং হত্যার কন্ট্রাক্ট আর কাউকে নয়, রাজকুমার কে দেওয়া হয়েছে । এই কারণেই মুনতারিন তার উর্ধ্বতন অফিসারকে বলেছিলো যাতে মন্ত্রীর আসার প্রোগ্রামটাকে যেন বাতিল করা হয় । রাজকুমার ভয়ংকর এক খুনী । আজ পর্যন্ত যতগুলো কন্ট্রাক্ট কিলিং হাতে নিয়েছ সব গুলোতে সে খুব ভাল ভাবেই সফল হয়েছে । এতো গোপন আর সুচতুর ভাবে সে কাজ করেছে যে কেউ সেটা বুঝতে পর্যন্ত পারে নি । এর ভেতরে সরকারি দলের দুজন নেতা পর্যন্ত রয়েছে । যারা তাদের হত্যার পরিকল্পনা করেছিলো, কন্ট্রাক্ট দিয়েছিলো তারা ঠিকই ধরা পড়েছে কিন্তু রাজকুমার ধরা পড়ে নি । তার চেহারা পর্যন্ত কেউ কোন দিন দেখে নি । তার আসল নাম পর্যন্ত কেউ জানে না । গোয়েন্দা আর ইন্টেলিজেন্সের লোকজন কেবল এই টুকু জানে যে রাজকুমার দেখতে একবারে রাজ কুমারের মত । এই জন্য তার নাম হয়েছে রাজকুমার ।
মুনতারিন বাইকে উঠতে যাবে তখনই চোখ গেল বাসস্ট্যান্ডে দাড়িয়ে থাকা ঈগল বাসটার দিকে । ঘড়ির দিকে তাকালো । দুপুর হয়ে গেছে প্রায় ! এই বাস এখানে কেন দাড়িয়ে !
একটা ব্যাপার মুনতারিনের মাথায় আঘাত করলো । সাথে সাথেই দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল ঈগলের কাউন্টারের দিকে । কাউণ্টার ম্যান সেখানেই বসে ছিল । মুনতারিনকে ঢুকতে দেখেই কেমন ভয়ে ভয়ে তার দিকে চোখ তুলে তাকালো । মুনতারিন তার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনাদের ঢাকা গামী বাস কয়টা?
একটা বড় ঢোক গিলে কাউন্টারম্যান বলল, দুইটা ?
-একটা সকালে একটা রাতে ?
-জি?
-যেটা দাড়িয়ে আছে ওটা ?
-সকালের বাস ।
-যায় নি কেন ? বাস নষ্ট ?
কাউন্টারম্যান কী বলবে খুজে পেল না । ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো মুনতারিনের দিকে । মুনতারিন ধমকে উঠলো । বলল, কথা বলছেন না কেন ?
-ম্যাডাম, নষ্ট না । বাসের ড্রাইভার নাই ।
-ড্রাইভার নেই মানে?
-মানে সকাল বেলা যে ড্রাইভার আসছিলো সে নাই । কই গেছে জানি না !
সাথে সাথে মুনতারিন বুঝে গেল কী হয়েছে । রাজকুমার চলে এসেছে বান্দরবানে । কোন যাত্রী সেজে আসে নি । সে এসেছে ড্রাইভার সেজে !
পেছন পেছনে লেফটেনেন্ট আয়ান এসেছিলো । মুনতারিনের মুখের ভাব দেখেই বুঝতে পারলো কিছু একটা হয়েছে । সে বলল, কী হয়েছে ম্যাম ?
মুনতারিন ধমকের সুরে বলল, সবাই চেক করেছিলে?
-ইয়েস । সবাইকে । এমন যে যে যাত্রী দেখতে একটু সুদর্শন তাকে আলাদা ভাবে চেক করা হয়েছে ।
-আর ড্রাইভার!
প্রশ্নটা শুনে আয়ান যেন একটু যেন থতমত খেয়ে গেল । সে কি বলবে খুজে পেল না । তার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে কোন ড্রাইভারকে চেক করা হয় নি । আর কেনই বা চেক করা হবে !
মুনতারিন বলল, সবাইকে এলার্ট কর । জলদি । মন্ত্রী মহোদয় যেখানই থাকুক না কেন তাকে ক্যাম্পে নিয়ে আসার ব্যবস্থা কর । এখনই ….।
আয়ান দ্রুত নিজের ওয়াকিটোয়াকিটা বের করতে যাবে, তখনই নিজের মোবাইলে একটা মেসেজ আসার শব্দ শুনতে পেল সে । মেসেজটা ওপেন করতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেল তার । একটা মাত্র লাইন লেখা সেখানে । ”মিনিস্টার ইজ ডেড”
হতাশ হয়ে মুনতারিন তাকালো নিজের দিকে । এইবারও রাজকুমার তার কাজ করে ফেলল । সে কিছুই করতে পারলো না ।
দুই
পুরোটা দিন মুনতারিনের উপর দিকে যেন ঝড় বয়ে গেল । পুরো বান্দরবান একেবারে লক ডাউন করে দেওয়া হল । কাউকে ঢুকতে কিংবা বের হতে দেওয়া হয় নি । মিনিস্টারের মৃত্যুর ব্যাপারটা এখনও গোপন রয়েছে । কেবল মাত্র উপরের কিছু লোক বাদ দিয়ে আর কাউকে জানানো হয় নি । কারণ মিনিস্টার মারা গেছে স্থানীয় এক সন্ত্রাসীর বাড়িতে । সে সেখানে কিভাবে পৌছালো সেটা কেউ জানে না । এমন কি সেখানে পুলিশকে পর্যন্ত ঢুকতে দেওয়া হয় নি । দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত মুনতারিন সেখানে ছিল । একটু আগে নিজের কোয়াটারে ফিরে এসেছে । এদিকে আর্মি পুরো শহর চষে বেড়াচ্ছে । খবর চলে গেছে সকল থানাতেও পাহাতের গ্রামেও যাতে নতুন কেউ ঢুকতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে । রাজকুমারকে এবার ঠিক ঠিক ধরে ফেলবে । এমনই আশা ।
নিজের ঘরে ঢুকেই মনে হল একটা কিছু যেন ঠিক নেই । তবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে একটু দেরি হয়ে গেল । কয়েক সেকেন্ড মাত্র । তখনই অনুভব করলো, কিছু একটা এসে বিঁধলো তার গলার কাছে । হাত চলে গেল আপনা আপনি সেখানে ।
একটা ডার্ট !
বুঝতে কষ্ট হল না কি আছে এতে । প্রায় সাথেই মুনতারিনের পুরো শরীর দুলে উঠলো । তবুও মনের জোর একত্র করে সে নিজের পকেটের পিস্তলটা বের করার চেষ্টা করলো দুর্বল হাতে । তাক করলো সামনের দিকে । ঘোলা চোখে একটা ছায়া অস্পষ্ট ভাবে ওর চোখের সামনে ভেসে উঠলো । সেই পরিচিত চোখ !
মুনতারিন ট্রিগার চাপতে ভুলে গেল । জ্ঞান হারানোর আগে কেবল তাকিয়েই রইলো সেদিকে ! এক সময়ে মাটিড়ে লুটিয়ে পরলো সে ।
কত সময় ঘুমিয়ে ছিল সেটা মুনজেরিন মনে করতে পারবেন না । এক সময়ে ওর ঘুম ভাঙ্গলো । নিজেকে সে নিজের শোবার ঘরের সোভার উপর আবিস্কার করলো । ঘরের আলো জ্বলে আছে । মাথাটা একটু ভারভার মনে হতে লাগলো ওর কাছে । তখনই আবিস্কার করলো ওর পরনে কোন কাপড় নেই । পুরোপুরি নগ্ন হয়ে বসে রয়েছে ও সোফাতে । সেই সাথে ওর হাতে একটা হ্যান্ডকাফ দিয়ে আটকানো । যে কোন মেয়ের জন্যই এরকম ভাবে নগ্ন হয়ে থাকাটা একটা লজ্জার কারণ । কিন্তু মুনতারিনের তীব্র একটা ক্রোধ এসে জমা হল মনে । ওর রাগের কথা কথা ক্যাম্পে সবাই খুব ভাল করেই জানে । এমন কি ওর উর্ধ্বতন অফিসারেরও একটু সামলে কথা বলে ওর সাথে । একবার এক অফিস পার্টতে একজন মেজরের আন্ডোকোষ বরাবর লাথি মেরেছিলো সে। তখন ও সবে মাত্র ক্যাপ্টেন হয়েছে । সবাই ভেবেছিলো এই বুঝি মুনতারিনের কোর্টমার্শলে চাকরি চলে যাবে কিংবা কোন শাস্তি পাবে সে । কিন্তু এমন কিছুই হয় নি । নিজের সাফাইতে মুনজেরিন বলেছিলো যে মাতাল হয়ে সেই অফিসের ওর শরীরে হাত দিয়েছিলো এবং এই ভাবে এই রকম বেয়াদবি যদি যত বড় অফিসারই করুক না তাকেই সে একই ভাবে লাথি মারবে ! মুনতারিনকে কেবল ওয়ার্নিং দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিলো । অবশ্য অনেকে মনে করে যে এর পেছনে মুনতারিনের বড় চাচার একটা হাত রয়েছে । মুনতারিনের বড় চাচা একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ।
মেয়ে বলে, পুরুষরা চাইলেও যা ইচ্ছে তাই করবে এই ব্যাপারটা মুনতারিন একেবারে মেনে নিতে পারে না । এটা সেই ছোট বেলা থেকেই । স্কুল কলেজে কেউ কেবল মেয়ে বলে ওর সাথে বেয়াদবি করলেই ওর হাতে মার খেয়েছে । কত যে অভিযোগ ওদের বাসায় এসেছে সেটার কোন হিসাব নেই । এলাকাতে সে গুন্ডি হিসাবে পরিচিত ছিল । একটা সময়ে পাড়ার বখাটে ছেলে গুলো পর্যন্ত ওকে সমীহ করে চলতো ! কেবল একজন মানুষের সামনে মুনতারিন একেবারে ভেজা বেড়াল হয়ে যেত । ওর সব জেদ সব রাগ যে কোথায় হারিয়ে যেত সেটা মুনতারিন নিজেও জানতো না । নিজেকে অনেক বার প্রশ্ন করেছে সে । এমন আচরন সে কেন করে সেটার কোন ব্যাখ্যা সে নিজেও জানে না !
নিজেকে কিছু সময়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু কোন লাভ হল না । ঠিক এই সময়ে সে ঘরে ঢুকলো । হাতে একটা কফির পেয়ালা । এই মগে করেই মুনতারিন কফি খায় ! রাজকুমারের দিকে একভাবে তাকিয়ে রইলো ।
রাজকুমার হাসলো । তারপর কফিতে একটা চুমুক দিতে দিতে বলল, হেই গুন্ডি কী খবর ?
-আমার হাত খোল বললাম।
-মাথা খারাপ ! তোমার হাত খুলি আর তুমি আমাকে পিটিয়ে টকতা বানাও । তা হচ্ছে না ।
তারপর একটু একটু পায়ে এগিয়ে এল ওর দিকে । ওর একদম কাছে এসে ওর গালটা স্পর্শ করলো । মুনতারিন এক ঝটকাতে নিজেকে সরিয়ে নিতে চাইলো । কিন্তু খুব একটা কাজ হল না । রাজকুমার একেবারে ওর মুখের কাছে চলে এল । এবং একটা হাত দিয়ে মুখটা ধরে ওর ঠোঁটে চুমু খেল । নিজেকে আবারও রাজকুমারের বাহু থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে গেল ফলে রাজকুমার এবার মগটা নিচে রেখে দুই হাত দিয়ে ধরে চুমু খেতে শুরু করলো ওকে । নিজের হাত দুটো আটকানো থাকায় মুনতারিন কিছুই করতে পারলো না । রাগে ওর চোখে পানি চলে এল । নিজেকে বড় বেশি অসহায় মনে হল ! এই মানুষটার সামনে সে কেন বরাবরই এই রকমই অসহায় বোধ করে !
রাজকুমার এবার ওকে কোলে তুলে নিল । এরপর প্রায় ছুড়ে ফেলল বিছানাতে । নিজেও এগিয়ে এল ।
মুনতারিন বলল, আমি কিন্তু চিৎকার করবো?
রাজকুমার যেন খুব মজা পেল । বলল, না । তুমি করবে না । আমি খুব ভাল করেই জানি । তুমি কোন ভাবেই চাইবে না তোমার কলিগরা তোমাকে এই ভাবে দেখুক ! আর সব চেয়ে বড় কথা এই যে একটা মেয়ে হয়ে সাহায্য চাইছো, এমন কাজ তো টুমি কোন দিন করবে না !
মুনতারিন একটু হতাশ হল । সে সত্যিই চিৎকারে কাউকে ডাক দিতো না । ডাক দিলে হয়তো কেউ না কেউ শুনতে পাবে । পাশেই বেশ কিছু কোয়াটার রয়েছে । সাধারন কথা বার্তা শোনা গেলেও চিৎকার ঠিকই শোনা যাবে ! কিন্তু মুনতারিন চিৎকার দিয়ে সাহায্য চাইবে না মোটেও ।
এরপর রাজকুমার মুনতারিনের উপরেই উঠে বসলো । মুনতারিন জানে এরপর ওর সাথে কি হতে চলেছে । প্রথমে ঠোঁটে গভীর ভাবে চুমু খেতে শুরু করলো সে । এই চুমুর স্বাধ মুনতারিনের চেনা । সিড়িঘরে কতবার সে একই ভাবে চেপে ধরে মুনতারিনকে চুমু খেয়েছে তার কোন ঠিক নেই । মুনতারিন নিজেকে দুরে রাখতে চেয়েও যেন পারছে না ।
কিছু সময় এই ভাবে কেটে গেল । তারপরই মুনতারিন বুঝতে পারলো ব্যাপারটা । এতো সময়ে রাজকুমার ঐ কাজটা শুরু করে দেওয়ার কথা কিন্তু সে সেই দিকে যায় নি, এমন কি ওর নগ্ন দেহের অন্য কোথাও হাতও দেয় নি ! । কেবল চুমু পর্যন্তই আটকে রয়েছে । মুনতারিনের সেই পুরোনো কথা মনে পড়লো আবার । সে জোর করতো ঠিকই তবে সেটা কেবলই মাত্র চুমু পর্যন্ত । যত সময় মুনতারিন অনুমুতি না দিতো তত সময় সে কোন ভাবেই সামনে এগোবে না !
মুনতারিন নিজেকে প্রবল ভাবে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করলো যে আজকে সে কোন ভাবেই এই মানুষটার কাছে হার স্বীকার করবে না । কিছুতে অনুমুতি দিবে । সামনের মানুষটার থেকেও নিজের সাথে যুদ্ধ শুরু হল ।
দিবে না দিবে না দিবে না !
কিন্তু সে পারলো না। এই তীব্র রাগের ভাবটা কমে এল । মুখ দিয়ে কিছু বলতেও হল না । কেবল ওর শরীরের উপরে বসে থাকা মানুষটার চোখের দিকে তাকালো সে । আর কিছু বলতে হল না । মানুষটা ওর প্রতিটি লোপকুপ খুব ভাল করে চেনে ।
ওদের আদিম খেলা যখন শেষ হল তখন দুজনেই প্রবল ভাবে হাপাচ্ছে ! মুনতারিনের মন থেকে অন্য সব কিছু মুছে গেছে । ওর শরীরের সাথে লেপটে থাকা মানুষটা আজকে একজন মন্ত্রীকে মেরে ফেলেছে । আর ও কিনা তার সাথে এখন শুয়ে রয়েছে এই ভাবে !
কিন্তু এসব মুনতারিনের কিছুই মনে হচ্ছে হচ্ছে । ওর হাত যদিও এখনও হ্যান্ডকাফ দিয়ে আটকানো তবুও খুব বেশি সমস্যা হচ্ছে না । মানুষটার বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রয়েছে । একটা আনন্দ অনুভূতি হচ্ছে !
চোখ বন্ধ রেখেই মুনতারিন বলল, তুমি আমার সাথে একটু যোগাযোগ করতে পারতে না ? তোমাকে কত খুজেছি আমি জানো?
রাজকুমার ওর মাথার চুলে একটু হাত বুলাতে বুলাতে বলল, চেয়েছিলাম । কিন্তু ….
-কিন্তু…..
-কিন্তু সেই সময়টা অন্য রকম ছিল মুন ! একেবারে অন্য রকম !
-তুমি কেন এসব শুরু করলে ?
-জানি না ।
ঘরের ভেতরে নিরবতা নেমে এল । মুনতারিন চোখ বন্ধ করেই রইলো । কিছুটা সময় ওর সব কিছু ভুলে যেতে ইচ্ছে করছে । সব কিছু । কেবল এই মানুষটার বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে । আর কিছু না ! এই অনুভূতিটা নিতে ইচ্ছে করছে কেবল ! অন্য কিছু ভাবতে ইচ্ছে করছে না ।
তিন
ঘুম ভেঙ্গে মুনতারিন অনুভব করলো সে বিছানাতে একা । ওর হাত খোলা । বাইরের জানালার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো ভোর হয়ে আসছে । রাজকুমার চলে গেছে । বিছানাতে আরও কিছু সময় শুয়েই রইলো সে একই ভাবে । কতদিন পরে সে এমন ভাবে মুগ্ধকে কাছে পেল ! কত গুলো বছর কেটে গেছে এর ফাঁকে ! কী স্বপ্ন দেখেছিলো আর কি হয়ে গেল !
বিছানায় আবারও উঠে বসলো সে । তখনই সোফার উপরে একটা কিছু দেখতে পেল । একটা পেন ড্রাইভ ! সেই সাথে একটা কাগজ !
দ্রুত কাগজটা তুলে নিল । হাতের লেখা চিনতে মোটেও কষ্ট হল না ওর ।
গুন্ডি,
শফিউল আলমের মত মানুষের মন্ত্রী থাকা উচিৎ না মোটেও । এই জেলার পুরো ইয়াবা সাপ্লাই সে সামলায় । কিন্তু এইবার সে এসেছিলো আরাকান আর্মড ফ্রিডোম পার্টির সাথে একটা চুক্তি করতে । দেশের কিছু অস্ত্র পাচার করতে । তিনজন কে এক সাথে মারার প্লান ছিল তবে মরুং ডং চালু লোক । সে সম্ভবত টের গেছিলো । তাই সে আসে নি । যাই হোক এই পেন ড্রাইভে সব ছবি আর প্রমান রয়েছে । এটা শফিউল আলমের অপরাধ প্রমাণ করবে । সেই সাথে ব্যাপারটা এমন দাড়াবে যে ঐ চোরাচালানের সময়ে কোন ঝামেলার কারণে মারা পড়েছে তারা ! আর একটা ব্যাপারে সাবধান । তোমাদের ভেতরে একজন এর সাথে জড়িত রয়েছে । কে জড়িতো সেটা এখন বলতেপারছি না । তবে খোজ চলছে । তুমি তোমার চাচুর সাথে এই ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করো !
ভালো থেকো ! আর যদি সম্ভব হয় নতুন কাউকে নিয়ে জীবন শুরু করো । আমার হয়তো আর ফেরা হবে না স্বাভাবিক জীবনে !
তোমার মুগ্ধ
নামটার দিকে একভাবে তাকিয়ে রইলো ।
পরের ঘটনা ঘটলো বেশ দ্রুতই । সাবধান বসত মুনতারিন পেন ড্রাইভের এক কপি করে সেটা নিয়ে গেল ক্যাম্পে । সব কিছু কর্নেল হামিদুরকে দেখাতেই তার মুখ উ্বজ্জর হয়ে গেল । মুনতারিনের দিকে তাকিয়ে বলল, এই জিনিস কোথায় পেলে?
-কোথায় পেয়েছি সেটা মূখ্য না । তবে পেয়েছি !
-একটা কাজের কাজ হয়েছে । শফিউল আলম মাঝে কোথায় গায়েব হয়ে গিয়েছিলো সেটা এখন পরিস্কার । এবং এতে খুব ভাল একটা কাজ হবে । কোন অপরাধী যখন মারা পড়ে যখন সেটার জন্য পাবলিক সেন্টিমেন্ট কাজ করে না । এখনও তার মৃত্যুর খবর বাইরে আসে নি । অল্প কয়েকজন জানে । দাড়াও আগে আমাকে হেড কোয়াটারে যোগাযোগ করতে দাও । তোমাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিবো । এটা দিয়ে সব কিছু সামাল দেওয়া যাবে আশারি !
মুনতারিনও খুব ভাল করেই জানে যে এটা সব কিছু সামাল দেওয়া যাবে । কিন্তু তার মন পড়ে রয়েছে মুগ্ধের দিকে । আবার কি দেখা হবে না ? রাজকুমার কি আর আসবে না ওর জীবনে ?
Next part please
Vaiya next part Kobe pabo???