তৃষার দিকে তাকিয়ে সোহানা বলল, তোর জামাইএতো চুপচাপ! মাই গড! এতো শান্ত জামাই নিয়ে তুই টিকে আসিছ কিভাবে শুনি?
তৃষা ওর বন্ধুর কথা শুনে হাসলো । ওর চোখ চলে গেছে অপুর দিকে । সোহানাদের বাড়ির পেছনটা বেশ বড়, আর ফাঁকা । সেখানেই মুল পার্টিটা হচ্ছে । বেশ কিছু পরিচিত মানুষ জন এসেছে । পুরোনো বন্ধুদের সাথে দেখা সাক্ষাত হচ্ছে। এছাড়া সোহানার শ্বশুর বাড়ির লোকজন তো আছেই । অপুকে সে দেখতে পেল এক কোনে চুপচাপ বসে আছে খাবারের প্লেট নিয়ে । বুফের আয়োজন করা হয়েছে । নিজেরা নিজেদের মত নিয়ে নিচ্ছে খাবার । তারপর পুরো লন জুড়ে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে খেতে খেতে গল্প করছে । অপু বসে আছে একা । মানুষ জনের ভীড় ওর ভালো লাগে না । এখানে খুব একটা মানুষকে সে চিনেও না ।
সোহানার দিকে আবার চোখ ফিরিয়ে নিয়ে তৃষা বলল, অপু আর চুপচাপ !
-নয়তো কী?
-শোন ও অন্য মানুষের সামনে চুপচাপ ! মানুষজন ঠিক পছন্দ না ওর । মেশে কম । এই জন্য ওর যত কথা সব আমার সাথে । মাঝে মাঝে ও এতো বেশি কথা বলে যে আমাকে কানে বালিশ চাপা দিতে হয় । ধকম দিয়ে বলতে হয়, চুপ করতো ! এতো কথা বলতে পারো !
-যাহ ! গুল মারছিস ?
-তোর মনে হচ্ছে আমি গুল মারি !
সোহানা আর কথা বাড়ালো না । সে খুব ভাল করেই জানে তার এই বন্ধুটি মোটেও গুল মারার দলে পড়ে না । তৃষার দিকে চোখ যেতে সে থেমে গেল । তৃষা একভাবে সামনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে । একটু আগেও অপু একটা বসে ছিল এখন সেখানে একটা মেয়ে এসে দাড়িয়েছে !
-ঐ মেয়েটা কে রে?
সোহানা অপুর দিকে তাকালো । তারপরই বলল, এই ডাইনিটা আবার !
-মানে?
-আরে শফিকের কেমন বোন হয় ! এমন ছোক ছোক স্বভাব ! পুরুষ মানুষ দেখলেই হল । গায়ে পড়ে এমন ভাবে আলাপ শুরু করে ! আমি ডুই চোক্ষে দেখতে পারি না । কেবল শফিকের জন্য কিছু বলতে পারি না !
তৃষার সাথে মেয়েটার একটু আগেই দেখা হয়েছে । অপু তখন সাথেই ছিল । অপুর এই রকম পার্টি মোটেই ভাল লাগে না সে জানে । খুব একটা পার্টিতে তাই সে অপুকে নিয়ে আসে না । কিন্তু আজকে নিয়ে এসেছে । সোহানা অনেক দিনের বন্ধু ওর । সোহানার বিয়েতে তৃষা আসতে পারে নি । তখন ও দেশের বাইরে ছিল জরুরী কাজে । তাই প্রথম বিবাহ বার্ষিকীতে আর মিস করে নি । অপুকেও নিয়ে এসেছে তাই ।
একটু পার্টিতে থেকেই অপু হাফিয়ে উঠেছিলো । চোখের ইশারাতে বারবার বলছিলো চলে যেতে । শেষে না পেরে লন ছেড়ে ওকে ঘরের ভেতরে নিয়ে গেল । ওর দিকে ভেতরে নিয়ে গেল। অপুর দিকে তাকিয়ে বলল, তুই কি বাচ্চা ? এমন কেন করছো শুনি?
-আমার ভালো লাগছে না ।
অপুর যে ভাল লাগছে না সেটা তৃষা ওর চেহারা দেখেই বুঝতে পারছে । এদিকে বন্ধুকেও সময় দিতে হবে । নয়তো সে মন খারাপ করবে । অপুকে এখন সামলানোর একটা চমৎকার বুদ্ধি আছে । তৃষা ঘরের ভেতরে একবার তাকিয়ে দেখলো । এদিকে কেউ নেই । তৃষা অপুর ঠোঁটে একটা গাঢ় চুমু খেল । এই অস্ত্রটা সব সময় কাজে দেয় । যে কোন ব্যাপারেই অপুকে একটা চুমু খেলেও সে চুপ । এটা দিয়ে ওকে শান্ত করা যায় ! অপু তৃষার আরও একটু কাছে চলে এল । তারপর বলল, আর একটা !
-জি না জনাব ! যে কেউ চলে আসবে !
-আসুক ! আমার বউ ! আমি চুমু খাবো কার কি !
তৃষা অপুর গালে আরেকটা চুমু খেল । তারপর বলল, বাচ্চামী করো লক্ষী সোনা আমার । আরও কিছু সময় থাকতে হবে ।
-আচ্ছা । দুই ঘন্টা । এর বেশি না কিন্তু ।
-এসব কি সময় ধরে হয় ! আচ্ছা বাবা আমি দেখছি যত দ্রুত বের হওয়া যায় !
অপুকে আরও একটা চুমু খেতে যাবে তখনই বারান্দার দিকে চোখ গেল । দেখতে পেল মেয়েটাকে । ওদের দিকে তাকিয়ে আছে । তৃষার চোখ পড়তেই সরে গেল । এতো সময় মেয়েটা বারান্দাতেই ছিল । তৃষা যদিও কিছু বলল না । অপুকে নিয়ে বের হয়ে এল ঘর থেকে ।
তৃষা তীক্ষ চোখে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে । অপু নিজ মনে খেয়ে যাচ্ছিলো মেয়েটা এসে হাজির হল । তারপর নিজ থেকেই কথা বলতে শুরু করলো । অপুর চেহারার দিকে খেয়াল করতেই বুঝতে পারলো যে অপু খানিকটা বিরক্ত হচ্ছে । অপুর প্রতিটা প্রতিক্রিয়া তৃষা ভাল করে চেনে । এক সময়ে অপু আসন থেকে উঠে গেল। মেয়েটাকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য । প্লেট টা টেবিলে রেখে তৃষার দিকে তাকালো । অপুর চেহারাটা কেমন বিরক্তিতে ভরে উঠেছে । মেয়েটা নিশ্চত ভাবে কিছু বলেছে । ওর দিকে ইশারা করে বলল, সে ঘরের ভেতরে যাচ্ছে ।
তৃষার মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল । অপুকে মেয়েটা কি এমন বলল যে অপু একদম উঠে গেল জায়গা থেকে । অন্য কোন দিকে মন দিতে পারলো না । কিন্তু যখন মেয়েটাকেও দেখতে পেল ঘরের দিকে হাটা দিচ্ছে তখন খানিকটা বিরক্ত না হয়ে পারলো না । কী মনে করে উঠে দাড়ালো সেও । তারপর হাটতে শুরু করলো মেয়েটার পেছন পেছন ।
ঘরের ভেতরে ঢুকতে দেখলো মেয়েটাকে তৃষা দরজার কাছে গিয়ে দাড়ালো । অপুর চড়া গলা শুনতে পেল সাথে সাথেই !
কী ব্যাপার ! আপনি এখানে কেন !
আহ রেগে যাচ্ছেন ! আমি কী এমন বললাম?
আপনি যাই বলেন না কেন আপনি যা বলেছেন সেটা শুনতে আমি আগ্রহী না । প্লিজ বের হয়ে যান ।
যদি না যাই, চিৎকারে বলি যে আপনি আমার সাথে জবরদস্তি করছেন ! আপনার বউ তখন বিশ্বাস করবে আপনাকে !
করবে ! আপনি যাবেন না আমি যাচ্ছি !
যাবেন না । আমি কিন্তু সত্যিই চিৎকার করবো !
রাগে তৃষার শরীর কেঁপে উঠলো । দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো পড়লো সে । দেখতে পেল অপু বারান্দার দরজার কাছে দাড়িয়ে । মেয়েটা দাড়িয়ে রয়েছে একটু দুরে । মেয়েটা ওকে দেখে খানিকটা চমকে গেল । অপু ওর দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে । তৃষা সোজা মেয়েটার সামনে গিয়ে হাজির হল । তারপর সোজাসুজি চুল ধরে একটা ঝাকি দিল !
মেয়েটা এতোই অবাক হয়েছে যে মুখ দিয়ে শব্দ বের হল না ।
তৃষা তীব্র কন্ঠে বলল, এতো বড় সাহস তোর ! আমার অপুর দিকে নজর দিস ! তুই আমাকে চিনিস ?
এই বলে এক চড় বসিয়ে দিল গালে । মেয়েটা খানিকটা ঘুড়ে গিয়ে পড়লো বিছানাতে । তৃষা আরও কিছু করতে যেত তবে অপু সামনে চলে এল । বলল, আরে কর কি?
-ছাড়ো আমাকে !
-আরে বাবা শান্তি শান্তি ।
-এই মেয়েকে আমি পুলিশে দেব । ও আমাকে চেনে !
অপু ওকে জড়িয়ে ধরে শান্ত করলো বেশ কিছু সময় । তটক্ষণে মেয়েটা উঠে পালিয়ে গেছে । সে আসলে ভাবতেই পারে নি এমন কিছু হবে । আধা ঘন্টা পরে তৃষাকে নিয়ে বের হয়ে এল অপু । পুরো লনে খুজে দেখলো মেয়েটা নেই । সোহানা এগিয়ে এল ওদের দিকে । বলল, ঘরের ভেতরে কি করছিলি এতো সময়?
অপু একটু হেসে বলল, তোমার বান্ধবী যে কী করছিলো সেটা যদি দেখতে !
তৃষা কড়া কন্ঠে বলল, এই চুপ । সেই বদমাইশটা কই ?
সোহানা বলল, কে?
-ঐ ডাইনি টা !
-ও । কি জানি দেখলাম দ্রুত চলে যেতে । কি রকম পালিয়ে গেল যেন !
-ওকে আমার সামনে পড়তে মানা করবি এরপর থেকে । আমার সামনে যদি আসলে তাহলে ওর কপালে খারাবি আছে !
সোহানা কিছুই বুঝতে পারছিলো না । অপুর দিকে তাকিয়ে দেখলো যে অপু হাসি চাপার চেষ্টা করছে । আর তৃষা অগ্নিশর্মা হয়ে রয়েছে । কি হল এই সময়ের ভেতরে !
সোহানা যখন পুরো ঘটনা শুনলো হাসিতে ফেটে পড়ল । ওর আগেই বোঝা দরকার ছিল । তৃষা যা রাগি, এমন কাজ যে করতেই পারে সেটা আগেই বোঝা দরকার ছিল । ঐ মেয়েকে বরং সাবধান করা দরকার ছিল !
Discover more from অপু তানভীর
Subscribe to get the latest posts sent to your email.
vaiya ami apner golpo golor akjon regular pathok. Apnar some where in blog ar sobgolo golopo pora hoyeche .. Apner kichu golopo password protected . Segolo kivabe pora jabe , seta ki bola jabe ?
Thanks…
ফেসবুক পেইজে ইনবক্স করুন। কিংবা কন্ট্যাক্ট এ মেইল পাঠান।