একটি নাটকীয় গল্প

4.7
(81)

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রায় একটা বাজতে চলেছে । এতো রাতে ছেলেটার ফোন পেয়ে একটু অবাক হল নওরিন। অফিসের কোন ইমার্জেন্সি? মনে মনে ভাবলো সে । তারপর ফোনটা রিসিভ করলো।
-হ্যালো!
-নওরিন ।
-বল । এতো রাতে ?
-তোমার সামনে বিপদ । একদল লোক আসছে তোমাকে তুলে নিয়ে যেতে !
-মানে?
-মানে বুঝিয়ে বলার সময় নেই । তুমি এখন বাসা থেকে বের হও। টাকা পয়সা যা আছে নিয়ে নাও আর পাসপোর্ট নিয়ে এসো । প্লিজ দেরি কর না । আমি ঠিক তোমার বাসার পাশের গলিতে এসেছি । দেরি কর না।
-কিন্তু মানে কি? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না । আর আমি ফোন দিচ্ছি থানাতে !
-থানাতে ফোন দিয়ে লাভ নেই । কেউ আসবে না । যে তোমাকে তুলে নিয়ে যেতে আসছে সে প্রচুর ক্ষমতার অধিকারী । আর তুমি জানো এদেশে ক্ষমতা থাকলে কি হয় । প্লিজ আমার কথাটা একটু শোন । আমাকে তো অনেক দিন ধরে চেন । আমার কথাটা শোনো প্লিজ !

নওরিন কি করবে বুঝতে পারলো না । রিয়াদকে সে আসলেই অনেক দিন ধরে চেনে । সেই ইনিভার্সিটি থেকে । যদিও খুব বেশি ঘনিষ্ঠতা ওদের ছিল না । তবে রিয়াদ পড়াশুনাতে বেশ ভাল ছিল । এই জন্য ক্লাসের সবাই ওকে চিনতো । তবে মানুষ হিসাবে বেশ চুপচাপ থাকতো বলে কারো সাথেই খুব একটা ভাব হয় নি । পড়াশুনা শেষ করে নওরিন ওর বর্তমান অফিসে যোগ দেয় । এর বছর খানেক পর একদিন রিয়াদ একই অফিসে জয়েন করে । রিয়াদকে ওখানে জয়েন করতে দেখে নওরিন একটু অবাক হয়েছিলো । শুনেছিলো রিয়াদ নাকি ব্যাটে কাজ করতো । ওখান থেকে চাকরি ছেড়ে দিয়ে এসে ওদের অফিসে জয়েন কেন করলো কে জানে । অফিসে এসেও দেখতো রিয়াদ কেবল নিজের মনে কাজ করে যাচ্ছে । কারো সাথে খুব একটা মিশতো না, আড্ডা দিতো না । কাজ ছাড়া ওদের আর কোন কথাও হত না ।

নওরিন কি করবে বুঝতে পারলো না । রিয়াদ এখনও ফোনে ওপাশেই রয়েছে । নওরিন বলল, আচ্ছা আমি নামছি । আমাকে কয়েক মিনিট সময় দাও ।
রিয়াদ বলল, দেরি করবে না । একদম না । ওরা রাস্তায় রয়েছে । জলদি ।

ফোন রেখে নওরিন ট্রাভেল ব্যাগে কয়েকটা দরকারি জিনিস পত্র নিয়ে নিল । কোথায় যাবে সেটা সে জানে না । টাকা পয়সা যা ছিল সব নিলো । পাসপোর্টটাও নিয়ে নিল । রিয়াদ ওকে আলাদা ভাবে পাসপোর্ট নিতে কেন বলল কে জানে । ওকে কি দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে?
নওরিনের এই দেশে আসলে কেউ থাকে না । এটা ওর বাবা দেশ হলেও ওর মা একজন সুইডিশ । জন্মসুত্রে নওরিন সুইডেনের নাগরিক । ছোট বেলাতে সেখানে বড় হলেও, স্কুলে থাকতে থাকতে সে এখানে চলে আসে বাবার সাথে । ওর বাবা আর মা আলাদা থাকে । নওরিনের আরও একটা ভাই আছে ওখানে। তারপর এক সময়ে ওর বাবা হঠাৎ ক্যান্সারে মারা যায় । চাকরিতে ঢোকার কয়েকদিনের মাঝে । তারপর থেকেই নওরিনের মা ওকে বারবার বলছে ওখানে চলে যেতে । তবে নওরিনের কেন জানি এই দেশে যেতে মন চায় নি । বাবার কবরটা এখানেই । মাস অন্তত একবার সেখানে গিয়ে ঘুরে আসে সে । একটা শান্তি শান্তি লাগে ।

আজকে পুরো ফ্ল্যাটে সে একা । মোট তিনজন মেয়ে এই ফ্লাটটা ভাড়া করে থাকে । বাকি দুজন আজকে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছে । গতকালকে সকালে অফিস থেকে আসার সময় খেয়াল করেছে নিচের ফ্লোর এবং উপরের ফ্লোরের ভাড়াটিয়া ব্যাগ নিয়ে বাইরে যাচ্ছে সম্ভবত ট্যুরে । এর উপরের দুই ফ্লোর আসলে দুইটা অফিস । সন্ধ্যার পরে যা বন্ধ থাকে । হিসাব মত পুরো বিল্ডিং নওরিন এখন একা । সাথে সাথেই রিয়াদের কথাটা কেন জানি সত্য মনে হল । কেউ প্লান করেই ওকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে । এবং তাদের ক্ষমতা প্রচুর ।

ব্যাগ কাধে দরজা দিয়ে বের হল । লিফটের কাছে গিয়ে একটু অবাক হল সে । এই বিল্ডিংয়ের লিফট বারোটার ভেতরে বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু এখনও এটা চালু আছে । একটু সন্দেহ হল ও । লিফটে উঠলো না । এমন কি সিড়ি দিয়েও গেল না । ডান দিকে ছোট একটা ইমারজেন্সী সিড়ি আছে । সেটা দিয়ে নামতে শুরু করলো আস্তে আস্তে । তখন কানে আওয়াজ পেল । কয়েকজন নিচে এসেছে বুঝা যাচ্ছে । নওরিনের বুকের ভেতরে কেমন যে ভয় ভয় করতে লাগলো । ওকে কেন কেউ কিডন্যাপ করতে চাইবে । এটা সত্য যে সে বিদেশী । তবে এটাও সত্য যে বড়লোক বলতে যা বুঝায় তা ওরা মোটেও না সেখানেও সাধারন জীবন যাপন করে । তাহলে?

সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে একবার উকি দিলো চারপাশে । অনুভব করলো কেউ নেই । যারা এসেছিলো সবাই উপরে চলে গেছে । সম্ভবত ওরা কেউ ভাবে নি যে নওরিন এভাবে পালিয়ে যেতে পারে । খুব দ্রুত গেট দিয়ে বের হয়ে এল । বাড়ির সামনে দাড়িয়ে থাকা মাইক্রোটা দেখতে পেল । মাইক্রোর ড্রাইভার এক মনে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে রয়েছে তাই ওকে দেখতে পাই নি । পা টিপে টিপে সে পার হয়ে গেল । পাশের গলিতে যেতে দেখতে পেল রিয়াদকে । একটা বাইকের পাশে পায়চারি করছে । ওকে দেখতে পেয়েই এগিয়ে এল । বলল, চলচল । একটুও দেরি করা যাবে না ।
-ওরা কারা ।
-এসব পরে হবে । আগে চল ।

বাইক স্টার্ট দিতেই আলো জ্বলে উঠলো । তখনই উপর থেকে আওয়াজ শুনতে পেল ।
-ওস্তাদ মাইয়া পালাইতাছে ….
এই থাম ।
এই থাম কইলাম !

কিন্তু ততক্ষনে রিয়াদের বাইক চলতে শুরু করেছে । রিয়াদ ওকে কেবল বলল, শক্ত করে ধরে থাকো ।

নওরিনকে বলতে হল না । ও এমনিতেও রিয়াদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে । নওরিন দেখতে পেল রিয়াদ কতটা দ্রুত বাইক চালাচ্ছে । শান্ত স্বভাবের এই ছেলে যে এই ভাবে বাইক চালাতে পারে সেটা ওর ধারনার বাইরে ছিল ।

একটা সময় ও আবিস্কার করলো ওদের বাইক এয়ারপোর্টের সামনে চলে এসেছে ।
বাইক থেকে নামতেই ওরাএয়ারপোর্টের দিকে রওয়ানা দিল । গেট পর্যন্ত এসে রিয়াদ ওকে কয়েকটা কাগজ পত্র এগিয়ে দিল । তারপর বলল, এখানে তোমার টিকেট কাটা আছে । প্রথমে সোজা যাবে দিল্লিতে । সেখানে গিয়ে নিজের দেশের যাওয়া ব্যবস্থা আশা করি তুমি করে ফেলবে ।
-কিন্তু আমাকে কেন কেউ ধরে নিতে চায় ?
-আমাদের ক্লাসে একজন ক্ষমতাসীন মানুষের ছেলে পড়তো । সে তোমাকে পছন্দ করতো । এটা তার পরিবার জানতে পেরে তোমাকে ধরে নিয়ে জোর করে তার সাথে বিয়ে দিতে চায়। বুঝেছো ? এই দেশের যেখানেই তুমি থাকো না কেন তোমাকে ঠিকই ধরে নিয়ে যাবে ।
-কে?

কে সেটার জবাব দিল না রিয়াদ । কেবল বলল, তুমি আপাতত চলে যাও । তোমার বাকি জিনিস পত্র আমি পাঠিয়ে দেওয়ার ববস্থা করবো । কেমন ।
নওরিন কি বলবে বুঝতে পারলো না । যাওয়ার আগে কেবল ধন্যবাদ দিল অনেক বার । কাঁটের গেট দিয়ে ঢুকে পড়লো ভেতরে ।

দুই

রিয়াদ সব কিছু ঠিক করেই রেখেছিলো । টিকিও কেটে দিয়েছে । ছেলেটা ওর এতো কিছু কিভাবে জানে কে জানে ? তারপর মনে হল হয়তো অফিস থেকে জোগার করেছে । প্লেনের আর কিছু সময় পরেই ছাড়বে । ও কখনও ভাবে নি এই দেশ থেকে এভাবে ওকে পালিয়ে যেতে ! বারবার মনে করার চেষ্টা করলো ওদের ক্লাসে কোন ছেলেটা এমন থাকতে পারে !

এক সময় হঠাৎ অনুভব করলো ওয়েটিং রুমে একটু আগে অনেকেই বসে ছিল। এখন একজনও নেই । পুরো ফাঁকা । বুকের ভেতরে একটু ধক করে উঠলো । হাতের ঘড়ির দিকে তাকালো । এখনও কিছু সময়ে বাকি রয়েছে । এনাউন্সমেন্ট হয় নি এখনও । তাহলে গেল কোথায় সবাই ?
তখনই লোকটাকে দেখতে পেল সে । ওয়েটিং রুমের দরজা দিয়ে ঢুকছে । সাথে সাথেই চিনতে পারলো তাকে । আজমল চৌধুরী । দেশের একজন প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী । হাসি মুখে ওর দিকে এগিয়ে এল । তাকে দেখেই নওরিনের গলা শুকিয়ে গেছে । রিয়াদ যে ক্ষমতাধর মানুষটার কথা বলেছে সে যে ইনি সেটা নওরিনের বুঝতে বাকি রইলো না । পালানো সম্ভবত আর হল না । নওরিন ভীত চোখে তাকিয়ে রইলো আজমল চৌধুরীর দিকে । তবে আজমল চৌধুরী হাসলেন । এবং কাছে এসে নরম কন্ঠে বলল, মা তুমি ভয় পেও না । আর আমার বড় ছেলের কাজ কর্মে আমি তোমার কাছে লজ্জিত ! বস প্লিজ ।

নওরিন বসলো বটে । তবে ভয় গেল না । আজমল চৌধুরী বলল, আমি জানি তুমি পালিয়ে যাচ্ছো। কেন যাচ্ছো সেটাও জানি । আমি এসবের কিছুই জানতাম না । জানলে হয়তো অন্য ভাবে তোমার সাথে পরিচয় হত । আসলে আমার বড় ছেলের মাথা একটু গরম । এই বুদ্ধি নিয়ে সে কিভাবে যে রাজনীতিতে নেমেছে সেটা আমি আজও ঠিক বুঝি না । ছোট ভাই এক মেয়েকে পছন্দ করে, বলতে পারে নি সে মেয়েকে ধরে নিয়ে এসে বিয়ে দিয়ে দাও । কী বুদ্ধি আমার !
নওরিন কি বলবে বুঝতে পারছে না । তবে তার ভয় একটু একটু কমছে ।
আজমল চৌধুরী আবার বলা শুরু করলো, আমি আবারও তোমার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি । তোমার অবশ্যই পালিয়ে যাওয়ার দরকার নেই । এবং আমি নিজে নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে এরপর এমন কিছু আর হবে না । তুমি যদি চলে যেতে চাও তারপরেও আমি তোমাকে বাঁধা দিবো না । কিন্তু নিজের ছেলের জন্য একটা চেষ্টা আমি করতে চাই । বুঝোই বাবা হয়েছি ।

নওরিন তখনও চুপ করে তাকিয়েই আছে । আজমল চৌধুরী বলল, তুমি কি চেনো আমার ছোট ছেলে কে?
নওরিন মাথা নাড়ালো ।
-সে তোমার অফিসেই চাকরি করে ।
কথাটা শোনার সাথে সাথে চোখ বড় বড় করে তাকালো আজমল চৌধুরীর দিকে। মুখ দিয়ে বের হয়ে এল, কে?
-যে তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছে ।
-রিয়াদ !
-হ্যা রিয়াদ !

নওরিন এতোটাই অবাক হল যে কিছু বলতেই পারলো না । ভাবছো রিয়াদ কেন তোমাকে নিয়ে আসবে ! আসলে ও এমন কি! নিজের বাবার ক্ষমতা দিয়ে সে কোন দিন কিছু করতে চায় নি । এই ইউণিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে, নিজের চেষ্টায়, ব্যাটে চাকরি পেয়েছিলো সেটাও নিজের চেষ্টায় । জীবনে কেবল একটা সুপারিস তার জন্য আমি করেছি । সেটা হচ্ছে তোমার অফিসে ঢোকার জন্য সে আমার সাহায্য চেয়েছিলো । দেখো মা আমার ছোট ছেলেটা একটু লাজুক । মেয়েদের সাথে কথা বার্তা বলতে পারে না । এই জন্য সম্ভবত তোমাকে নিজের মনের কথা বলতে পারে নি । বাবা হয়ে কেবল তোমাকে একটা অনুরোধ করবো, একবার কি আমার ছেলেটাকে একটু সুযোগ দেওয়া যায়?
নওরিন আসলে এসব বিশ্বাসই করতে পারছে না । আজমল সাহেব আবার বললেন, আমি বলছি না যে তাকেই বিয়ে কর । একবার একটু মেশো তার সাথে । তারপর যদি মনে হয় যে এই ছেলের সাথে বাকি জীবন কাটানো সম্ভব তাহলেই আমি তোমার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করবো । আর যদি মনে হয় যে না তোমার মন মত হচ্ছে দেন আই প্রমিজ ইউ যে তোমাকে কেউ কোন প্রকার ডিস্টার্ব করবে না । আর আমার বড় ছেলে যে কাজটা করেছে তার জন্য সে তোমাকে সরি বলবে । এটা আমি নিশ্চিত করবো ।

নওরিন আসলে এমনটা আশা করে নি । এতো বড় আর ক্ষমতাধর মানুষ হয়েও আজমল চৌধুরী ওর সাথে কি মোলায়েল স্বরে কথা বলছে । রিয়াদ চাইলেই ওকে তুলে নিয়ে বিয়ে করতে পার। এখনও পারে । এছাড়া এতোদিন ধরে ছেলেটাকে দেখে আসছে কোন দিন ওর মনে হয় নি যে ওর বাবা আজমল চৌধুরী হতে পারে ।
আজমল চৌধুরী বললেন, এরপরেও যদি তুমি চলে যেতে চাও আমি তোমাকে বাঁধা দেব না । কেবল অনুরোধ করলাম ।

তিন
রিয়াদের মন একটু খারাপ । আজকে সে অফিসে যায় নি । বারবার মনে হচ্ছে কাজটা কি সে ঠিক করলো?
এতোদিন নওরিনকে চোখের সামনে সে দেখতে পেত । এখন তো তাও দেখতে পাবে না আর ! ভাইয়াটা এমন কাজটা না করলেই কি হত না । কী দরকার ছিল ! যেমন চলছিলো তেমনই চলতো সব !
এতো সময়ে নিশ্চিত ভাবেই নওরিন চলে গেছে অনেক দুরে । যখন গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকছিলো, বারবার মনে হচ্ছিলো চিৎকার করে ওকে বলে নিজের মনের কথা ।

এমন সময় ওর মেসেঞ্জারে একটা কল আসলো । ফোন হাতে নিয়েই বুকের ভেতরে মোচড় দিয়ে উঠলো । নওরিন ফোন করেছে । মেয়েতা নিশ্চিত ভাবে দিল্লীতে পৌছে গেছে ।
-হ্যালো ।
-কী জনাব মন খারাপ?
-মানে?
-মানে বললাম মন খারাপ?
-না মানে …..
-শুনো আমি তোমার বাসায় নিচে । নেমে এসো তো !

রিয়াদের মন হল যেন ও ভুল শুনছে । বলল, কী বললে ? বাসার নিচে নামে?
-বাসার নিচে মানে বাসার নিচে । জলদি বেরিয়ে আসো তো !

রিয়াদ যখন নিচে নেমে এল তখনও ওর ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না । কী থেকে কি হল সেটা কোন ভাবেই ওর মাথায় ঢুকছে না । নওরিনকে না এয়ারপোর্টে রেখে আসলো তাহলে ও বাসার সামনে এল কিভাবে?
নওরিন ওদের বাসার সামনের ফুটপাথেই বসে ছিল । আজকে নওরিনকে অন্য রকম লাগছে । বয়স যেন একটু কমে গেছে । জিন্স আর একটা শার্ট পরেছে । চোখে কালো একটা সানগ্লাস আর ঠোঁটে গাঢ় করে লিপস্টিক দিয়েছে ।
ওকে বের হতে দেখেই বলল, কই বাইক কোথায়?
রিয়াদ বলল রিক্সায় যাই?
-হ্যা চল !

রিক্সাতে যখন পাশাপাশি বসে ওরা যাচ্ছিলো তখনই রিয়াদের ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না । কত গুলো প্রশ্ন মাথায় খেলা করছে কিন্তু কিছুই জিজ্ঞেস করছে না । ওর কেবল সব কিছু স্বপ্ন সপ্ন মনে হচ্ছে । নওরিন বলল, আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি?
-কর!
-তুমি চাইলেই আমাকে জোর করে বিয়ে করতে পারতে । কেউ কিছু করতে পারতো না । এমন কি আমিও না । তাহলে কেন করলেনা ?
রিয়াদ একটু চুপ করে রইলো । তারপর বলল, আমার কাছে আসলে মনে হয়েছে যে ঐ কাজটা করলে তোমার কাছে অন্য কোন অপশন থাকতো না । এক সময়ে হয়তো তুমি আমার ঘর ঠিকই করতে কিন্তু আমার মনে সারা জীবন এই কাটা বিধেই থাকতো যে তোমার কোন অপসন ছিল না বিধায় তুমি আমার সাথে আছো ! এটা আমাকে শান্তি দিতো না । আমি কেবল চেয়েছিলাম যে তুমি নিজ ইচ্ছেতে আসো !
রিয়াদ একটু চুপ থেকে আবারও বলল, আমার ভাইয়া ভাবীকে এক প্রকার জোর করেই বিয়ে করেছে । ভাবী এখন সুখে আছে কিন্তু আমার এখনও কেন জানি মনে হয় এই সুখের মাঝেও একটা দুঃখ তার লুকিয়ে আছে । তার সামনে কোন পথ খোলা ছিল না !
নওরিন বলল, ইস সবাই যদি তোমার মত ভাবতো !
রিয়াদ হাসলো !

নওরিন বলল, দেখো আমমি বলছি না আমি তোমার প্রেমে পড়ে গেছি কিংবা তোমাকেই বিয়ে করবো । ঠিক আছে তবে …. তুমি আমাকে অবাক করেছো, ইম্প্রেসও করেছো । আমরা কিছুদিন মিশি, গল্প করি সময় কাটাই । এরপর যদি আমাদের মনে হয় যে এক সাথে জীবন কাটানো সম্ভব তাহলে সামনে এগোনে যাবে ! ওকে?
রিয়াদ বলল, ওকে !

রিক্সাটা এগিয়েই চলেছে । কোন নির্দিষ্ট দিকে যাচ্ছে না । রিক্সাতে ওঠার সময় নওরিন ঘন্টা হিসাবে রিক্সা ঠিক করেছিলো । ওদের দুজনের রিক্সাও কী কোন নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাবে? যেতে পারে । সেটা অন্য কোন গল্প । এই গল্প এখানেই শেষ ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 81

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →