নীতু তার অফিসটা পছন্দ করতো খুব। ১৫ তলা কনফিডেন্স টাওয়ারে ১২ তম তলায় ছিল নীতুর অফিস। তার উপরে নীতু নিজের ডেস্কটা সব থেকে বেশি পছন্দ করত। নীতুর ডেস্কটা ছিল একেবারে কাঁচে ঘেরা দেয়ালের দিকে। ওর চেয়ার থেকে পুরো ঢাকা শহরটা চমৎকার ভাবে দেখা যেত। প্রতিদিন অফিসে এসে নীতুর প্রথম কাজই হত কফির কাপ হাতে নিয়ে সে পুরো ঢাকা শহরের দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকত। এটা তাকে আনন্দ দিত।
প্রতিদিনের মত আজকেও অফিস শুরু হলেও আজকের দিনটা অন্য গুলোর মত ছিল না। নীতু আপন মনে কাজ করছিল মাঝে মাঝে ওর কলিগরা এসে ওকে কাজ দিয়ে যাচ্ছিল, কাজের আলোচনার পাশাপাশি গল্পও হচ্ছিল। আজকে একটা প্লান ছিল যে অফিসের পরে ওরা সবাই যাবে বসুন্ধরাতে। নতুন একটা মুভি এসেছে মার্ভেলের। সেটাই দেখতে হবে। সেই কথাই আরেকবার নিশ্চিত করে গেল ওরা।
তবে আজকে সেই মুভি দেখতে আর যাওয়া হল না ওদের কারও। দুপুরের ঠিক লাঞ্চ আওয়ারের আগে কনফিডেন্স টাওয়ারের নয় তলাতে আগুন লাগল। মুহুর্তের ভেতরেই আগুন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল। নিচের তলার মানুষগুলো নামতে শুরু করলেও নয়তলার উপরের মানুষগুলো পড়ল সব থেকে বিপদে। তারা ঠিক কিভাবে নামবে বা নিজেদের রক্ষা করবে সেটার কোন উপায় ছিল না।
নীতুর নিজের ডেস্কেই আপন মনে কাজ করছিল। কাজ করার সময়ে নীতুর কানে সব সময় হেডফোন থাকে। ওর কাজটা ক্রিয়েটিভ। কোম্পানির জন্য সে নানান গ্রাফিক্স ডিজাইন করে। আর্টিস্ট সে। আজকেও সে কানে হেডফোন দিয়েই নিজের কাজে মজে ছিল। তাই যখন ফায়ার এলার্মটা বেজে উঠল তখন নীতুর ঠিক মত শুনতে পেল না সে। একটু দেরি হয়ে গেল।
নীতু যখন নিজের পিসি মনিটর থেকে চোখ উপরে তুলল তখন অনেকেই দরজা দিয়ে বের হয়ে গেছে আর বাকিরা যাচ্ছে। নীতু প্রথমে কিছু সময় যেন কিছুই বুঝতে পারল না। কী হচ্ছে না হচ্ছে সেটা তার মাথায় কাজ করল না। যখন হেডফোনটা খুলল তখনই এলার্মের আওয়াজটা কানে এল। কয়েক মুহুর্ত সময় লাগল ব্যাপারটা বুঝতে। তারপরেই নীতুর মনে তীব্র একটা প্যানিক এসে ভর করল।
নীতুর মনটা অন্য যে কারো থেকে একটু নরম। সে অন্য সবার থেকে এতো দৃঢ় মনের অধিকারি নয়। অল্পতেই সে নার্ভাস হয়ে যায়। আর এমন ঘটনাতে সব থেকে শক্ত মনের মানুষটাও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে সেখানে নীতুর মত কেউ একটু বেশি প্যানিক করবে সেটাই স্বাভাবিক।
নীতু প্রথম কয়েক মুহুর্ত বুঝতেই পারলো না যে কী করবে? তার এখন কী করা উচিত? পিসিটা তখনও চালু আছে? সেখানে একটা ডিজাইন প্রায় শেষ হয়ে গেছে। সেভ করা হয় নি। নীতু সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না। এখনই এভাবে এখান থেকে বের হয়ে যাবে? নাকি পিসিটা কি বন্ধ করবে?
নীতু তার বুকের ভেতরে একটা তীব্র আন্দোলন অনুভব করল, বুকটা যেন লাফাচ্ছিল প্রবল ভাবে। নীতু উঠে দাঁড়াল। তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে সে দরজার দিকে পা বাড়াল। তবে সে এতোটাই নার্ভাস ছিল যে কোন দিকে না তাকিয়ে সে দৌড় দিল। আর তখনই ঘটল অঘটন। চেয়ারে পা বেঁধে নীতু পড়ে গেল। মেঝেতে পড়ে বেশ ভাল রকমের ব্যাথাও পেল। মাথার ভেতরটা একটু চক্কর দিয়ে উঠল।
চোখে ঝাপসা দিয়ে সে সামনের দিকে তাকাল। দেখতে পেল ওর পরিচিত সবাই বের হয়ে যাচ্ছে রাকিবকে দেখতে পেল। সে দরজার দিকে দ্রুত বের হয়ে যাচ্ছে। নীতু মৃদুর স্বরে একবার রাকিবের নাম ধরে ডাক দিল। দেখতে পেল রাকিব ওর দিকে ফিরে তাকাল। ওকে পড়ে থাকতে দেখে একটু যেন দ্বিধাবোধ করল সে। নীতুর চোখ বন্ধ হওয়ার আগ মুহুর্তে সে দেখতে পেল যে রাকিব ওকে রেখে দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল।
নীতু কত সময়ের জন্য জ্ঞান হারিয়েছিল সেটা সে বলতে পারবে না তবে একজনের ডাকে তার চেতনা ফিরে আসছে। ঝাপছা চোখে দেখল একজন তার সামনে বসে তাকে ডাকছে। নীতুর মনে হল যে রাকিব আবার ফির এসেছে। ওকে নিয়ে যেতে এসেছে। কিন্তু যখন চোখের দৃষ্টি ভাল করে ফিরে তখন চেহারাটা ভাল করে বুঝতে পারল।
মানুষটা রাকিব নয়, ওদের এইচ আরের আসিফ মাহমুদ । ওর দিকে তাকিয়ে আছে উদ্দিগ্ন চোখে।
-নীতু শুনছেন?
নীতু কয়েক মুহুর্ত কেবল ফ্যাঁলফ্যাল চোখে আসিফের দিকে তাকিয়ে রইল। এখনও তার কাছে সব কিছু কেমন যে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। বিশ্বাস হতে চাইল না যে তাদের বিল্ডিংয়ে আগুন লেগেছে আর সবাই তাকে রেখে নিচে চলে যাচ্ছে। নীতুর কাছে চিৎকার চেঁচামিচির আওয়াজ আসছে। সবাই সিড়ি দিয়ে নামছে নয়তো উঠছে। এমন আওয়াজ আসছে।
-নীতু শুনছেন?
-জ্বী স্যার !
-চলুন নিচে যেতে হবে।
-জ্বী স্যার।
-আমার হাত ধরুন। কোনো সমসয়া নেই।
নীতু আসিফের হাত ধরল। তবে যখনই নিজের পায়ে দাড়াতে যাবে তখনই অনুভব করল যে তীব্র একটা ব্যাথা অনুভব করল। এই তীব্র ব্যাথা অনুভব করল পায়ে। তখনই নীতুর মনে পড়ল যে সে চেয়ারের পায়ার সাথে হোচট খেয়ে পড়ে গিয়েছিল, সেখানেই সে ব্যাথা পেয়েছে। পা টা কি মোচকে গিয়েছে?
ব্যাপারটা আসিফ নিজেও বুঝতে পেরেছে। সে নীতুর দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি হাটতে পারবেন?
নীতুর তখন মনে হল যে আফিস ওকে এখন রেখেই চলে যাবে। এমনটাই হওয়া স্বাভাবিক। ওর পায়ের ব্যাথাতে ও হাটতে পারবে না আর আফিস ওকে রেখে চলে যাবে।
-প্লিজ আমাকে একা রেখে যাবেন না!
বলতে বলতেই নীতুর চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে এল। আসিফ ওকে আস্বস্ত করে বলল, ভয় নেই, আপনাকে একা রেখে যাচ্ছি না। আপনি আমার হাত ধরুন শক্ত করে। আমি আপনাকে টেনে তুলছি। যে পায়ে ব্যাথা সেই পায়ের উপরে জোর দিবেন না। হাতের উপরে জোড় দিন।
নীতু তাই করল। নিজের বাঁম পায়ে ব্যাথা পেয়েছে, সেটার উপরে জোর দিল না। বরং সে ডান উপরের সবটুকু জোর দিল আর দুই হাত দিয়ে আসিফের হাত ধরল। অনুভব করল যে আসিফ বেশ বলিষ্ট দেহের অধিকারি। সে খুব সহজেই নীতুকে উপরে তুলে ফেলল।
নীতু তার ডান পায়ে ভর দিয়ে কিছুটা লাফিয়ে লাফিয়ে যেতে শুরু করল তবে বুঝতে পারল যে এভাবে সামনে গিয়ে যাওয়া সম্ভব না। আসিফ তখন বলল, আপনার আপত্তি না থাকলে আমি আপনাকে কোলে নিই?
নীতু তাকাল আসিফের দিকে। এমন কিছু সে আশা করে নি।
আসিফ আবার বলল, এভাবে আমরা সিড়ি দিয়ে নামতে পারব না। ওকে?
নীতু কোন কথা বলল না। কেবল মাথা ঝাকাল।
আসিফ এবার ওকে কোলে তুলে নিল। কোলে ওঠার সাথে সাথে নীতুর শরীরের ভেতরে একটা শিহরন বয়ে গেল যেন। ছোট বেলায় সে তার বাবার কোলে উঠতো। বুঝতে শেখার পরে সে তার বাবার কোলে ছাড়া আর কারো কোলে ওঠে নি। আত্মীস্বজনদের কেউ কোলে নিতে চাইলে সে উঠতো না আর কেউ যদি জোর করে কোলে নিত তবে কান্নাকাটি শুরু করে দিত। তবে আজকে সে কিছু করল না। তার মনের ভেতরে যে আতঙ্ক কাজ করছে অন্য কিছু তার মনেই এল না।
সিড়ি দিয়ে নিচে নামল না তারা। আগুন লেগেছে নিচে। সেখানে যাওয়া মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। এছাড়া ধোয়া উপরে উঠে আসছে। এই অবস্থা নিচে নামার কোন মানে হয় না। আসিফ নীতুকে কোলে নিয়ে সিড়ি উপড়ে উপরে উঠতে শুরু করল। নীতুর মনের ভয়টা যখন একটু কেটে গেল , তখন মনে হল যে এ যাত্রায় সে হয়তো বেঁচে যাবে তখনই মনের ভেতরে একতা লজ্জার অনুভূতি এসে জড় হল। একজন পুরুষের কোলে চড়েছে সে!
আসিফ যদিও ওদের অফিসেই চাকরি করে তবে আসিদের সাথে নীতুর কোন ঘনিষ্ঠতা নেই। আসিফের সাথে ঠিক অসিফের কারোরি ঘনিষ্ঠতা নেই। সে মাথা নিচু করে অফিসে আসে, মাথা নিচু করে কাজ করে আবার মাথা নিচু করেই অফিস থেকে বের হয়ে জায়। এটা নিয়ে নীতুদের ভেতরে বেশ হাসি মশকরাও হয়। কিন্তু আজকে এভাবে সেই মানুষটাই ওকে রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছে, তার কোলে চড়েই নীতু এখন সিড়ি দিয়ে উপরে উঠছে।
যখন ছাদের উপরে উঠল তখন নীতু দেখল সেখানে বেশ কয়েকজন এসে হাজির হয়েছে। তবে ওদের অফিসের কাউকে দেখতে পেল না। সম্ভবত ওরা সবাই সময় মত নেমে গেছে। আসিফ ওকে ছাদের এককোণে নামিয়ে ওর মোচকে যাওয়া পায়ে হাত দিয়ে পরীক্ষা করল।
-ব্যাথা লাগছে?
নীতু লজ্জায় একটু সিটিয়ে গেল। কোন কথা বলল না। কেবল মাথা ঝাকাল। আসিফ বলল, ফুলে গেছে তবে ভাঙ্গে নি। বরফ দিতে পারলে ভাল হত।
ঘন্টা খানেকের ভেতরেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে এল। আশার কথা হচ্ছে কেবল নয়তলার ভেতরেই আগুনটা সীমাবদ্ধ ছিল। অন্য তলা গুলোতে ছড়ায় নি। তবে অনেক ধোয়া ছড়িয়েছে। এতেই সবাই ভয় পেয়ে গেছে। নীতুদের অফিসটাও একেবারে অক্ষতই রয়ে গেছে।
দুই
তিন দিনের ভেতরেই আবারও সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে গেল। কনফিডেন্স টাওয়ারে কাজ কর্ম এমন ভাবে চলতে শুরু করলো যেন এখানে আসলে কোন দিন আগুন লাগেই নি। নীতু নিয়মিত অফিস শুরু করে দিল। যদিও পরের দুইটা দিন নীতু অফিস থেকে ছুটি নিয়েছিল। এইচ আর থেকে তার ছুটি মঞ্জুর হয়েছে। ছুটিটা কে মঞ্জুর করেছে সেটা নীতু খুব ভাল করেই জানে।
ঐদিনে নীতুর সাথে কী হয়েছিল সেটা অফিসের কেউই জানে না। নীতুও কাউকে বলে নি যে কিভাবে সে ছাদে গিয়ে হাজির হয়েছিল। আজকে অফিসে আসার পরে অনেকেই ওর সাথে কথা বলতে চেয়েছে নীতু কেন জানি ঠিক কারো সাথেই কথা বলার তেমন আগ্রহ পায় নি। কেবল হ্যা হু করে গেছে। আসলে নীতুর কেবল মনে পড়ছে যে সেদিন ওরা সবাই নিজের মত করেই বের হয়ে গেছে। একটা বারের জন্য ওর কথা কারো মনেই পড়ে নি। আজকে তাই লাঞ্চ করার সময়ে সে ঠিক কারো সাথেই বসে নি। অফিসের ক্যান্টিন বাদ দিয়ে সে চলে এসেছে ছাদে। এই ছাদেই সেদিন আসিফ ওকে কোলে করে নিয়ে এসেছিল। সেদিন ঠিক যেখানে বসেছিল আজকেও সেখানেই বসল। সাথে করে কিনে নিয়ে আসা বার্গারটা খেতে শুরু করল।
রাকিবের সাথে সে মাঝে মাঝে এই ছাদে এসে দুপুরের লাঞ্চ করত। এখানে এভাবে বসে বসে দুজন অনেক কথা বলত।
হায় রাকিব!
রাকিবের কথা মনে হতেই নীতুর মুখটা শক্ত হয়ে গেল! তখনই দেখতে পেল রাকিব ঠিক ওর ডেস্কের সামনে এসে হাজির হয়েছে। ওর দিকে তাকিয়ে বলল, কী ব্যাপার তুমি আমার ফোন ধরছো না কেন?
ঐদিনের পর থেকে রাকিব ওকে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছে, অনেকগুলো মেসেজও করেছে। নীতু একটাবারও রাকিবের ফোন ধরে নি কিংবা একটা মেসেজের জবাব দেয় নি। বারবার কেবল নীতুর ঐদিনের কথাই মনে হচ্ছে। রাকিব কিভাবে মুখ ঘুড়িয়ে চলে গেল!
রাকিব আবারও বলল, কী ব্যাপার? কথা বলছো না কেন?
-কী কথা বলব? আমি কাজ করছি!
রাকিব একটু চমকালো। তবে সাথে সাথে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, তুমি কি এখনও আমার উপরে রেগে আছো?
-আমি তোমার উপরে রেগে নেই রাকিব। বিশ্বাস কর রেগে নেই।
-তাহলে?
-তাহলে কী?
-তাহলে এভাবে ইগ্নোর কেন করছো?
-তোমাকে ইগ্নোর করছি না। তোমার উপর থেকে আমার সব আগ্রহ চলে গেছে।
রাকিব যেন প্রথমে কিছু সময় কথাটা ঠিক বুঝতে পারল না। কিছু সময় ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। নীতু শান্ত কন্ঠে বলল, তোমার পরিবারকে বলবে আমাদের ভেতরে আর কিছু নেই। বিয়েটা হবে না।
-কী বলছো তুমি? দেখ এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি!
-এটা বাড়াবাড়ি না। এটাই আমার সিদ্ধান্ত।
-তোমায় বাসায় জানে?
-বাসায় জানাজানি তো ব্যাপার না। বিয়ে তো আমি করব বাসার লোকজন না।
-দেখ যা হবে আমরা দুজন মিলে সেটা আলোচনা করে করতে পারি!
-আমার আর কিছুই আলোচনা করার নেই রাকিব। আমি এখন আসছি!
এই বলে নীতু উঠে পড়ল। রাকিব তার পথ আটকে দাঁড়াল। সে বলল, তুমি আমাকে এভাবে ধোকা দিতে পারো না? এভাবে সম্পর্ক শেষ করে দিতে পারো ন।
-সম্পর্ক!
নীতু যেন আকাশ থেকে পড়ল। একটু যেন বিদ্রুপের হাসি ওর মুখ থেকে আপনা আপনিই বের হয়ে এল। নীতু বলল, তোমার সাথে আমার কোনো দিনই কোন সম্পর্ক গড়ে ওঠে নি। তুমি পারিবারিক ভাবে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিছ সেটা আমি এবং আমার পরিবার বিবেদনায় নিয়েচ্ছিলাম। এর বেশি কিছুই না।
-তুমি এভাবে আমাকে অপমান করতে পারো না। এখানে আমাদের পরিবার জড়িয়ে গেছে। তুমি …
রাকিব এই বলে নীতু হাত ধরতে গেল। নীতু অবশ্য তৈরিই ছিল। সে সরে গেল। রাকিব তার হাত ধরতে পারল না। তবে নীতু তাকে এড়িয়ে ছাদ থেকে বের হতে পারল না। রাকিব ঠিক দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে আছে। ওকে এড়িয়ে দরজাতে যাওয়ার কোন উপায় নেই। রাকিব আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল তখনই চুপ হয়ে গেল। তার চোখ চলে গেছে নীতুর পেছনের দিকে। রাকিবের চোখের দৃষ্টি অনুসরণ করে নীতু যখন পেছন ফিরে তাকাল তখন কিছুটা অবাক হয়ে গেল।
আসিফ!
এই মানুষটা এখানেই ছিল। ছাদটা অনেক বেশি বড় আর বিস্তৃত। অনেক ফ্লোরের মানুষই এখানে আসে, বিশেষ করে যারা সিগরেট খায় তারা এখানে এসেই খায়। নীতু দরকার কাছে এক পাশে বসে ছিল। পুরো ছাদ জুড়েই বেশ কয়েক জায়গাতে ছাউনির মত করে করে দেওয়া আছে।
আসিফ কিছু সময় শান্ত চোখে তাকাল দুজনের দিকে। তারপর নীতুর দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার পায়ের অবস্থা কেমন এখন?
-জ্বী স্যার ভাল।
-লাঞ্চ আওয়ার তো শেষ হয়ে যাচ্ছে, আসুন। কাজে ফাঁকি দিবেন না।
নীতু নিশ্চিত জানে যে আসিফ ওদের কথা বার্তা সবই শুনেছে। এবং এখন সে নীতুকে এখান থেকে বের হতে সাহায্য করছে। নীতু বলল, জ্বী স্যার এইতো এখনই যাচ্ছি।
রাকিব কিছু সময় কী করবে বুঝতে পারল না। আসিফের সামনে সে কোনভাবেই নীতুকে সে আটকে রাখতে পারবে না। নীতু যখন পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিল রাকিব তখন কেবল রাগত চোখে নীতুর দিকে তাকিয়ে রইলো। সে জানে যে এখন তার কিছুই করার নেই।
লিফটে নীতু আর আসিফ এক সাথেই উঠল। লিফটের দরজা যখন চলতে শুরু করল তখন নীতু বলল, থ্যাঙ্কিউ। গতদিনের জন্য আর আজকের জন্যও।
আসিফ বলল, আজকে?
-হ্যা। রাকিবের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য।
কিছু সময় আসিফ কোন কথা বলল না। তারপর বলল, একটা কথা বলব যদি কিছু মনে না করেন। আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলানো হয়ে যাবে।
-জ্বী বলুন।
-দেখুন নীতু ঐদিনের ব্যাপারটা একটা চরম মুহুর্ত। এই সময়ের মানুষের কাজ কর্ম দিয়ে তাকে বিচার না করাই ভাল। মানুষ স্বাভাবিক পর্যায়ে যা করার কথা ভাবতেও পারে না। চরম মুহুর্তে সে সব কাজ করে ফেলে। আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমি কী বলার চেষ্টা করছি?
নীতু ঠিকই বুঝতে পারছে যে আসিফ কী বলার চেষ্টা করছে। নীতু আরেকটা বার সেদিনের দৃশ্যটা মনে করার চেষ্টা করল। সে মাটিতে পড়ে আছে আর রাকিব ওর দিকে তাকিয়ে, ওকে রেখেই চলে গেল। লিফটের দরজাটা খুলে যেতেই নীতু আসিফের মুখোমুখো দাঁড়াল, তারপর বলল, আপনি তো গেলেন না ঐ চরম মুহুর্তে! সে তো ঠিক চলে গেল। আসলে আমি যতই চেষ্টা করি না কেন ঐ দৃশ্যটা কিছুতেই মনের ভেতর থেকে দূর করতে পারছি না। কিছুতেই না।
আসিফ একটা মাথা দোলাল।
-বুঝতে পারছি।
দুজনেই লিফট থেকে বের হল। নিজের ডেস্কে যাওয়ার আগে নীতু বলল, আজকে কি আপনার সময় হবে?
-কেন বলুন তো?
-আপনাকে একটা ট্রিট দিতে হবে।
-আরে না না কী যে বলেন। এসবের দরকার নেই কোন।
-অবশ্যই আছে। আমি কোনো কথা শুনব না। আমাকে সময় দিতেই হবে।
আসিফ হাসল একটু । তারপর বলল, আচ্ছা আজকে অফিসের কফি খাওয়ালেই চলবে।
পরিশিষ্ট
আসিফের সাথে নীতুর প্রেম হয়েছিল কিনা কে বলতে পারবে। হয়তো তারা ভাল বন্ধু হয়েছিল অথবা তাদের মাঝে প্রেমও হয়েছিল। আবার হয়তো কিছুই হয় নি তবে রাকিবের সাথে নীতুর সম্পর্কটা আর এগোয় নি।
চরম মুহুর্তে মানুষ তার স্বাভাবিক আচরণ করতে পারে না। তবে এই চরম মুহুর্তের আচরণ মানুষের জীবনে অনেক বড় পরিবর্তন নিয়ে আসে। এই সময়ে যারা আপনার হাত ছেড়ে দেয় তাদের চেহারা ভাল করে মনে রাখুন। তারা আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মানুষ নয়।
vai please properly happy ending diben golpo gulay. apnar ager golpo gular style ta khub miss kori. golpo sesh kore ekta hasi theke jeto. apnar ekjon purono fan hisebe bollam.