অভিমান মরে না

4.4
(32)

সকালে নাস্তার টেবিলে মা যখন বলল যে আজকে মেঘলা আসবে আমাদের বাসায় তখন আমি একটু বিরক্ত হয়ে তার দিকে তাকালাম। দুদিন ধরে মেঘলার নাকি শরীর খারাপ। হলে তাকে দেখে শুনে রাখার মত কেউ নেই তার সে কয়েকটা দিন আমাদের বাসায় থাকবে। আমি কোন কথা না বলে চুপচাপ নাস্তা শেষ করে নিজের ঘরে চলে গেলাম। সকালবেলাতেই এমন খবর শুনে আমার মেজাজ একটু খারাপ হল। আজকে রকিব স্যারের ক্লাস কামাই দেওয়ার ইচ্ছে ছিল। সারাদিনে একটা মাত্র ক্লাস তাই ভার্সিটিতে না গিয়ে বাসায় শুয়ে বসে কাটানোর একটা পরিকল্পনা করেছিলাম কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেই বিরক্তিকর ক্লাসটা করাই বরং ভাল।
ক্লাসের নাম করেই আমি পুরোটা দিন বাইরেই থাকলাম। আমার প্রতিদিনের রুটিন হচ্ছে আমি ক্লাস শেষ করেই বাসায় আসি প্রথমে। তারপর বিকেলে টিউশনি করাতে যাই এরপর আবারও বাসায়। আজকে ক্লাস শেষ করে আর বাসায় এলাম না। নাইমের হলে গিয়ে দুপুরের খাবার খেলাম। মাঝে মাঝে এমনটা আমি করি যখন হঠাৎ দুপুরের পরে কোন ক্লাস থাকে। তাই নাইম আলাদা কিছু মনে করল না। যদিও আজকে আমাদের দুপুরের পরে কোনো ক্লাস ছিল না।
হলের বিছানাতে শুয়ে থাকতে থাকতেই আমার ঘুরে ফিরে কেবল মেঘলার কথাই আমার মনে হতে লাগল। মেঘলার গোলগাল মুখটাকে আমি কিছুতেই মন থেকে দূর করতে পারলাম না। আমি জোর করে মেঘলার চিন্তা দূর করে দেওয়ার চেষ্টা করলাম। এই মেয়েকে আমি কোন ভাবেই পছন্দ করতে পারি না।
মেঘলা সম্পর্কে আমার কাজিন হয়। আমার বড় খালার মেয়ে সে। আমার বড় খালা আর আমার মা পিঠাপিঠির বোন। তাদের বিয়েটাও হয়েছিল কাছাকাছি সময়েই এবং আমরা দুইজনও হয়েছিলাম প্রায় কাছাকাছি সময়ে। আমি ছোট থেকেই মেঘলাকে বেশ পছন্দ করতাম। ও যখন আমাদের বাসায় আসতো কিংবা আমরা যখন ওদের বাসায় যেতাম তখন ওর পেছন পেছন ঘুরতাম। ক্লাস যখন ফোরে পড়ি তখন একবার আমি ওর গালে চুমু খেতে গিয়েছিলাম। কেন গিয়েছিলাম সেটা আমার স্পষ্ট ভাবে মনে নেই। তবে সেই মেঘলা আমার নাকে একটা ঘুসি মেরেছিল। ওর ছোট হাতে খুব বেশি শক্তি ছিল না এটা সত্য তবে আমিও তো ছোট ছিলাম। সম্ভবত নাকে এমন জায়গায় ঘুসিটা লেগেছিল যে আমার নাক দিয়ে রক্ত পড়ে একাকার অবস্থা হয়ে গিয়েছিল। রক্ত দেখে মেঘলা নিজেও খানিকটা ভয় পেয়ে গিয়েছিল।
তারপর থেকে আমি আর কোন দিন মেঘলার সাথে কথা বলি নি। এরপর মেঘলা অনেকবার আমাদের বাসায় এসেছে আমিও গেছি ওদের বাসায় কিন্তু আমি স্পষ্ট ভাবেই মেঘলার থেকে দুরেই থেকেছি। আমাদের বাবা মায়েরা অনেক চেষ্টা করেছেন আমাদের মিল করিয়ে দেওয়ার তবে কাজ হয় নি। আমার মনে একটা তীব্র জেদ কাজ করেছে সব সময়। আমার ছোট বোন হওয়ার পরে মেঘলার যাওয়া আসা আমাদের বাসায় অনেক বেড়ে গিয়েছিল তবে আমি কোন দিনই আর মেঘলার সাথে কথা বলি নি। তবে মিলার সাথে মেঘলার বেশ ভাব জমে আছে।
আগে আমরা একই জেলাতেই থাকতাম। আমাদের একে অন্যদের বাসা আধা ঘন্টার দুরত্ব ছিল। তবে এসএসির পরে আব্বা ঢাকাতে চলে আসেন। তারপর থেকে আমাদের পরিবারের যোগাযোগ একটু কমে যায় বটে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময়ে মেঘলা আমাদের বাসা থেকেই কোচিং করেছিল। মিলার রুমে থাকত।
আমরা দুজন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। তবে আলাদা আলাদা বিষয়ে। প্রথম কয়েকটা দিন মেঘলা আমাদের বাসা থেকেই ক্লাস করেছে। বাবা মায়ের দুজনেরই ইচ্ছে ছিল যে মেঘলা যেন আমাদের বাসা থেকেই ক্যাম্পাসে যাওয়া আসা করে। মেঘলাও হয়তো থেকে যেত যদি আমি ওর সাথে স্বাভাবিক আচরণ করতাম। কিন্তু আমি তো সে করতাম না। বাসার ভেতরে একজন মানুষ আপনাকে প্রতিনিয়ত এড়িয়ে চলছে এমন একটা অনুভূতি নিয়ে সেই একই বাসায় থাকাটা সহজ নয়। এই কারণেই মেঘলা হলে উঠে গেল।
তারপরেও মাঝে মাঝে মেঘলা আমাদের বাসায় এসে হাজির হত। প্রায়ই দেখলাম মিলা আর মেঘলা এক সাথে কোথাও না কোথাও যাচ্ছে তবে আমি সব সময় মেঘলাকে এড়িয়েই চলেছি। আজকেও ঠিক করলাম একেবারে রাত করেই বাসায় ফিরব।
রাতে যখন বাসায় ফিরলাম তখন মায়ের মুখ দেখে বুঝলাম যে খানিকটা বিরক্ত আমার উপরে। সে নিজেও জানে আমি কেন রাত করে বাসায় এসেছি। আমি যে তার বড় বোনের মেয়ের সাথে একদম কথা বলি না, এড়িয়ে চলি এই ব্যাপারটা মায়ের মোটেই পছন্দ না। মায়ের ধারণা যে মেঘলা আর আমাদের বাসায় আগের মত আসে না এটার পেছনে একমাত্র আমিই দায়ী। আমি মিলার কাছে শুনতে পেলাম যে মেঘলার শরীর বেশ খারাপ ছিল।আরো আগেই আমাদের বাসায় আসার জন্য বলা হয়েছিল তবে মেঘলা আসে নি। এখন নাকি অবস্থা বেশ খারাপই। বিকেলে নাকি ডাক্তারও এসেছিল।
রাতের খাবার টেবিলে মেঘলাকে দেখলাম না। সে মিলার ঘরেই শুয়ে আছে। টেবিলে এসে খাওয়ার অবস্থা নাকি তার নেই। আমি তাকে নিয়ে আর কোন চিন্তা করলাম না। চুপচাপ খেয়ে চলে এলাম। আমি মনে মনে ঠিক করে নিলাম যে কয়টা দিন মেঘলা এই বাসায় থাকবে আমি ওকে সম্পূর্ন ভাবে এড়িয়েই চলব। ঠিক আগের মত করেই আমি ভেবে নিব যে মেঘলা এই বাসায় নেই। আমি নিজের ঘরের ভেতরে থাকব আর যত সময়ে সম্ভব ঘরের বাইরেই কাটাব।
তবে চাইলেও সেটা সম্ভব হল না। রার বারোটার দিকেই মায়ের ডাক শুনলাম। সে দরজায় কড়া নাড়ছে। আমি তখনো ঘুমাই নি। বিছানাতে শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিলাম। মায়ের ডাক শুনে আমি দরজা খুলে বের হয়ে এলাম। মায়ের চেহারা দেখেই মনে হল যে কিছু একটা হয়েছে। মা বলল, মেঘলার শরীরটা খুব খারাপ হয়ে গেছে। ওকে এখনই হাসপাতালে নিতে হবে। একটা এম্বুলেন্স ডাক জলদি।
আমার ধারণা ছিল যে মেঘলার নাম শুনলেই আমি হয়তো বিরক্ত হয়ে যাব তবে আমার মনের ভেতরে তেমন কোণ বিরক্তি আসল না। কেন আসলো না সেটা আমি জানি না। কিছু সময়ের ভেতরেই এম্বুলেন্স এসে হাজির হল। তারপরই আমি আরেকটা অবাক করা কাজ করলাম। কে কে হাসপাতালে যাবে এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আমি এগিয়ে এলাম। আমি জানি আমার আব্বার রাতে ঘুম না হলে সকালে সে এক সমস্যায় পড়বে। তার শরীর খারাপ করবে। আমি বাবাকে বাসায় থাকতে বললাম। আমি আর মা যাব হাসপাতালে এদিকে আব্বা আর মিলা বাসায় থাকবে। যদি কিছু দরকার পরেই যায় তখন বাবা হাসপাতালে যেতে পারবে।
আমি মেঘলাকে কোলে করে নিয়ে এম্বুলেন্সে তুললাম। মেঘলাকে হাসপাতালে ভর্তি করে ইমার্জেন্সীতে নিয়ে যাওয়া এবং পরে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। রাতের বেলাতেই মেঘলার বাবা মাকে ফোন করা হয়েছিল। তারা সকালের প্লেনেই চলে এল ঢাকাতে। আমি সকাল দশটার দিকে বের হয়ে এলাম হাসপাতাল থেকে। বাসায় গিয়ে একটা লম্বা ঘুম দিলাম। বিকেলের দিকে মায়ের ফোন এসে হাজির। মা আমাকে হাসপাতালে যেতে বলল। কেন যেতে বলল সেটা আমার জানা ছিল না। আমি মেঘলার বাবা মাকে হাসপাতালেই দেখে এসেছি। আমাকে আর কেন দরকার সেটা আমি বুঝতে পারলাম না।
তবুও মানা করলাম না। হাসপাতালে পৌছে একটু অবাক হতে হল। এখন মেঘলার অবস্থার কোনো পরিবর্তন আসে নি। তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। ডাক্তার জানাল যে তার রক্তে নাকি কীসের একটা ইনফেকশন দেখা দিয়েছে। আরও কয়েকদিন তাকে হাসপাতালে থাকতে হবে। তবে আমাকে ডাকা হয়েছে অন্য একটা কারণে। জ্বরের ঘোরে মেঘলা নাকি বেশ কয়েকবার আমার নাম নিয়েছে এবং আমাকে সরি বলেছে। ডাক্তারেরা তাই মনে করছেন যে আমি যদি এই সময়ে তার পাশে থাকি তবে হয়তো উপকারে আসবে। আমি একটু অস্বস্তিতেই পড়লাম বটে তবে মেঘলার মা আমাকে যেভাবে অনুরোধ করলেন সেটা আমার পক্ষে মানা করা কোন ভাবেই সম্ভব হল না।
আমাকে যথাযথ ব্যবস্থার গ্রহন করে আইসিউয়ের ভেতরে ঢুকতে হল। কিছু সময় আমি বোকার মত মেঘলার বেডের কাছে দাঁড়িয়ে রইলাম। সত্যিই বড় অদ্ভুত লাগছিল। আমার আসলে কেন এমন মনে হচ্ছিল সেটাও আমি ঠিক মত বুঝতে পারছিলাম না। তারপরই আমার কী মনে হল যে আমি মেঘলার পাশে বসলাম। বিছানার উপরে থাকা ওর হাতটা স্পষ্ট করলাম যদিও জানি না কাজটা ঠিক হল কিনা। আমি ভাল করেই হাতটা জীবানুমুক্ত করেছি। কেবল হাত নয়, আমি পুরো শরীরটাই জীবানুমুক্ত করেছি। তাই হাত ধরলে সমস্যা হওয়ার কথা না।
আমি কেবল হাতটা ধরে বসে রইলাম। লম্বা একটা সময় ধরে আমি মেঘলার হাত ধরে রাখলাম। তারপর মুখটা ওর কানের কাছে নিয়ে গিয়ে বললাম, মেঘলা তোমার উপর আমার কোন কালেই রাগ ছিল না। যেটা ছিল সেটা হচ্ছে অভিমান। ছোটবেলার সেই ঘটনা আমি কোনোদিন মন থেকে মুছে ফেলতে পারি নি। তোমাকে এতো পছন্দ করতাম, ইভেন এখনও করি, এই কারণেই দেখো না আমার কোন প্রেমিকা হয় নি কোন দিন। তোমার মত করে আর কাউকে ভালও লাগে নি আমার!
আমি মেঘলার হাত ধরেই বসে রইলাম অনেকটা সময়। একটা সময়ে আমি আইসিইউ থেকে বেরও হয়ে এলাম। আমার কেন জানি মনে হল যে মেঘলা সুস্থ হয়ে যাবে। কেন এমন কথা আমার মনে হল সেটার কোন ব্যাখ্যা অবশ্য আমার জানা নেই।

দুই
মেঘলা সুস্থ হয়ে আমাদের বাসায় এল আরও দুইদিন পরে। আমি মাঝে আরও একবার হাসপাতালে গিয়েছিল। তখন ওকে আইসিইউ থেকে বের করে কেবিনে দেওয়া হল। আমি খাবার নিয়ে গিয়েছিলাম। সেটা দেওয়ার সময়ে মেঘলার দিকে আমার চোখ পড়ল। মেঘলা আমার দিকে তাকাল বটে তবে কোন কথা হল না আমাদের মাঝে। আমার মনে একটা সন্দেহ জাগল যে আমি গতদিন ওর হাত ধরে যে কথাগুলো বলেছিলাম সেটা কি শুনতে পেয়েছিল? মনে হয় না। সে তখন ঘুমিয়ে ছিল। আমার কথা শোনার কথা না তার। আমি কোনো কথা না বলে বের হয়ে এলাম।
আরও দিন তিনেক থাকার পরেই মেঘলাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিল। প্রথমে ঠিক হয়েছিল যে মেঘলা সরাসরি ওদের বাড়িতে অর্থ্যাৎ যশোর চলে যাবে কিন্তু মা কিছুতেই রাজি হল না। তার বক্তব্য যে মেঘলার শরীর এখনও দুর্বল আর এখনও ওকে ডাক্তার দেখানোর দরকার পড়তে পারে তাই এখন আপাতত আমাদের বাসাতেই সে থাকবে, যখন ভাল হবে একটু তখন সে চাইলে যাবে যশোরে।
মেঘলার আবারও আমাদের বাসাতে এসে হাজির হল। কয়েকটা দিন স্বাভাবিক ভাবেই চলে গেল। মেঘলা আস্তে আস্তে ধীরে একেবারে সুস্থ হয়ে উঠল। এবং তখনই একটা বড় বোমা পড়ল । পরের শুক্রবারে আমার মা খাবার টেবিলে ঘোষণা দিল যে মেঘলাকে সে আর হলে থাকতে দেবে না। হলের খাবার খেয়ে আবার তার শরীর খাবার হবে এটা সে কোন ভাবেই মেনে নিবে না। তাই মেঘলাকে যদি ঢাকায় থেকে পড়াশোনা করতে হয় তবে এই বাড়িতেই থাকতে হবে। মেঘলা একটু আপত্তি করতে চাইলো তবে মায়ের এক ধমকেই সে চুপ হয়ে গেল।
না এটা বোমা না। বোমাটা পড়ল এর পরে। এটা বলল মেঘলার মা। সে বলল, সেও চায় যে মেঘলা এই বাড়িতেই থাকুক। এবং সেটা স্থায়ী ভাবেই।
আমি প্রথমে কথাটা বুঝতে পারলাম না। আমার বুঝতে কয়েক মুহুর্ত সময় লাগল। কিন্তু যখন বুঝতে পারলাম তখনই আমার চোখ আপনা আপনি ভাবেই চলে গেল মেঘলার দিকে। সে আমার দিকে তাকিয়েছে। তার চোখে একটা বিস্ময়ের আভা দেখতে পাচ্ছি। আমার মত সেও জানে না এসব ব্যাপারে। তবে সেই বিস্ময়ে একটা আনন্দ ছিল।
রাতের বেলা আমার কিছুতেই ঘুম এল না। আমার রাতে দ্রুত ঘুম আসে তবে আজকে কোন ভাবেই এল না। অবশ্য ঘুম না এসে ভালই হল। কারণ রাত একটার দিকে আমার মোবাইলে মেঘলার মেসেজ এসে হাজির হল। আমি এক সময়ে তার নাম্বারটা ব্লক করে রেখেছিলাম। তবে সম্প্রতি তাকে আনব্লক করেছি। মেসেজটায় একটা লাইন লেখা। ছাদে আসো।
আমি বেশি চিন্তা না করেই ছাদে গিয়ে হাজির হলাম। ছাদের এক কোনে মেঘলা দাঁড়িয়ে। আমি তার পাশে গিয়ে দাড়ালাম। বেশ কিছু সময় আমরা কেউ কোন কথা বললাম না। অনেকটা সময় পরে মেঘলা প্রথম কথাটা বলল, আমার শরীর কেন খারাপ হয়েছিল জানো?
-কেন?
-যেদিন আমার জ্বর এসেছিল তার আগের দিন আমি তোমাকে দেখেছিলাম।
আমি বেশ অবাক হলাম। আমাকে মেঘলা কোথায় দেখেছে সেটা বুঝতে পারলাম না।
মেঘলা বলল, তুমি বসুন্ধরাতে গিয়েছিলে। তোমার সাথে কেউ ছিল। তোমার সাথে মেয়েটা এমন ভাবে হেসে কথা বলছিল আমার দেখে মোটেই সহ্য হয় নি। আমি আসলে এতোদিন ভেবে নিয়েছিলাম যে তুমি আমার উপরে রাগ করে নেই, অভিমান করে আছো!
আমি মেঘলার এই কথা শুনে চমকে উঠলাম। মেঘলার উপরে যে আমি রাগ নয় অভিমান করে ছিলাম সেটা মেঘলাও বুঝতে পেরেছে!
মেঘলা বলল, কিন্তু তোমার সাথে মেয়েটাকে দেখে মনের ভেতরে একটা তীব্র অনুভূতি জন্মালো। তখনই মনে হল যে আমি হয়তো ভুল জানতাম, ভুল বুঝেছিলাম। তুমি আমার উপরে রাগই করেছিলে এবং অন্য মেয়েকেও তুমি পছন্দ করতে পারো। বিশ্বাস কর এই অনুভূতিটা আমার সহ্য হয় নি। আমার পুরো শরীর এটা নিতে পারে নি।
আমি মেঘলার কন্ঠে তীব্রতা অনুভব করতে পারছিলাম। এমন ভাবে ওর ব্যকুলতাকে যেন আমি আমার শরীরের ভেতরেই অনুভব করতে পারছিলাম। আমি বললাম, আমি তোমার রাগ করে ছিলাম না।
মেঘলা বলল, জানি, ঐদিন যখন আমার হাত ধরলে, তখনই আমার শরীরের সব অস্থিরতা কেটে গিয়েছিল।
-তুমি জেগে ছিলে?
-হ্যা।
আমি একটা অস্বস্তির ভেতরে পড়লাম। আমি সেদিন যা বলেছি সব মেঘলার শুনতে পেয়েছে। মেঘলা হাসল। তারপর আমার হাত ধরে বলল, সেইদন তোমার নাকে মেরেছিলাম তাই না, আজকে সেটার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছি। আরও আগেই দিতে চেয়েছিলাম তবে তুমি তো সুযোগই দাও নি কোনো দিন।
এই বলে সে আমার দিকে এগিয়ে এল। তারপর আমার নাকে আলতো করে চুমু খেল।
পরের চুমুটা ঠোঁটের উপরে।

পরিশিষ্টঃ
মেঘলা এরপর থেকে আমাদের বাসাতেই থাকতে শুরু করল। তবে এবার আগের মত আর মিলার ঘরে নয়। আমাদের বিয়েটা হল ঘোরোয়া ভাবেই। কাউকেই জানালাম না আমরা। কেবল পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনরা জানল। ঠিক হল যে আমাদের পড়াশোনা শেষ হলে আয়োজন করেই অনুষ্ঠান করা হবে।
আপনি দুরের মানুষের উপরে রাগ করতে পারেন কিন্তু দুরের মানুষের উপরে অভিমান করতে পারবেন না। আর রাগের ক্ষয় থাকলেও এই অভিমানের কোন ক্ষয় নেই। আমার কেবল মনে হয় যে যদি সেদিন মেঘলা আমাকে আমার বান্ধবীর সাথে না দেখত এবং অসুস্থ না হত, আইসিইউতে আমার নাম ধরে না ডাকত তাহলে এই অভিমান কোনোদিন সম্ভবত শেষ হত না। কোনো দিনই না।

ফেসবুকের অর্গানিক রিচ কমে যাওয়ার কারনে অনেক পোস্ট সবার হোম পেইজে যাচ্ছে না। সরাসরি গল্পের লিংক পেতে আমার হোয়াটসএপ বা টেলিগ্রামে যুক্ত হতে পারেন। এছাড়া যাদের এসব নেই তারা ফেসবুক ব্রডকাস্ট চ্যানেলেও জয়েন হতে পারেন।

অপু তানভীরের নতুন অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে

বইটি সংগ্রহ করতে পারেন ওয়েবসাইট বা ফেসবুকে থেকে।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.4 / 5. Vote count: 32

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

2 Comments on “অভিমান মরে না”

  1. গল্পটা খুবই সুন্দর ও হৃদয়স্পর্শী হয়েছে। ছোট ভুল বোঝাবুঝিই মাঝে মাঝে সম্পর্ককে দূরে নিয়ে যায়, আর মমতা আর সময় দিলে তা মিটে যেতে পারে তা খুব সুন্দর করে গল্পে উঠে এসেছে। মেঘলা আর লেখকের বন্ধনের গল্পটা মন ছুঁয়ে গেছে। সম্পর্কের জন্য ধৈর্য আর বোঝাপড়ার গুরুত্ব দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

    1. মানুষের সম্পর্কে ভুল বুঝাবুঝি আসলে থাকবেই। তবে ভালোবাসা শক্ত হয় তবে সেই ভুল বুঝাবুঝি কেটে যাবে।

Comments are closed.