সারপ্রাইজ

4.7
(38)

সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গার পরে আমার বেশ কিছুটা সময় বিছানাতে গড়াগড়ি করার অভ্যাস । আজকেও সেটার ব্যতীক্রম হল না । আমি চোখ বন্ধ করে নরম সকালের আমেজটা নেওয়ার চেষ্টা করছি। এটা ঘুম ভাঙ্গার পরে সব সময়ই আমার পছন্দের একটা কাজ । অফিস যাওয়ার আগে এই কাজটা আমার অনেক বেশি আনন্দ দেয় ।

চোখ না মেলেই আমি অনুভব করতে পারি নিলি ঘরের ভেতরে এসে ঢুকেছে । এটাও বলে দিতে পারি যে ওর চুলে তোয়ালে বাঁধা । মাত্রই গোসল শেষ করেছে । চোখ খুললেই আমি ওর স্নিগ্ধ চেহারাটা দেখতে পাবো ।

-এই যে জনাব আর কত সময় শুয়ে থাকবেন শুনি?
আমি চোখ মেলে তাকালাম । তখনই দেখতে পেলাম নিলিকে । আজকে সে একটা কলাপাতা রংয়ের শাড়ি পরেছে । ব্লাউজের রংটা মিলিয়ে পড়েছে । তবে যেন একটু বেশিই পাতলা । নিলির ব্লাউজের ভেতরের সাদা রংয়ের ব্রাটা আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি । আমি সেটার দিকে তাকিয়ে দেখে নিলি বলল, কি জনাব সকাল থেকেই দুষ্টমি?
আমি বললাম, দুষ্টামির কি দেখলে শুনি? নিজের বিয়ে করা বউয়ের দিকে একটু ভাল করে তাকাতেও পারবো না ?
-জি না এখন তাকাতে হবে না । জলদি ওঠো । আজকে না তোমার মিটিং !
আমি খানিকটা গা ফুলিয়ে শুয়ে থাকি । জানি নিলি এখনই আমার কাছে এগিয়ে আসবে এবং আদর করবে । বেশি সময় অপেক্ষা করতে হল না । অনুভব করলাম নিলি আমার খুব কাছে চলে এসেছে । একেবারে আমার শরীরের উপরেই উঠে বসলো। তারপর আলতো করে ওর মুখটা আমার মুখের উপরে নিয়ে এসে প্রথমে আমার নাকে এরপর একটা কপালে চুমু খেল । আমি চোখ মেলে তাকিয়ে নিলিকে দেখতে পেলাম । নিলির নিঃশ্বাসের শব্দ পর্যন্ত শুনতে পাচ্ছি পরিস্কার । নিলি কিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে বলল, জলদি ওঠে তো । আজকে রাতে তোমার জন্য স্পেশাল সারপ্রাইজ আছে ।
-কি শুনি?
-উহু । সেটা বলা যাবে না । এখন জলদি অফিসে যাও । আজকে জরূরি মিটিং রয়েছে ! মনে নেই ।

এই বলে নিলি আমার ঠোঁটে চুমু খেল । আমি কিছু সময় চোখ বন্ধ করে সেই চুমুটা উপভোগ করলাম । নিলি এবার আমাকে রেকে উঠতে যাবে তখনও ওকে জাপটে ধরলাম । নিলি খিলখিল করে বাচ্চাদের মত হেসে উঠে বলল, এতো দুষ্ট হয়েছো তুমি তোমাকে…. ওকে কথাটা শেষ করতে দিলাম না । তার আগেই ওর ঠোঁট দুটোর উপরে আমার ঠোঁট আক্রমন করে বসেছে ।

ফ্রেশ হয়ে অফিসের কাপড় পরে নাস্তার টেবিলে চলে এলাম । নিলি আগে থেকেই সব ব্যবস্থা করে রেখেছে । আমার এই বউটা এতো লক্ষী হয়েছে । জীবনে নিলির মত একজনকে বউ হিসাবে পেয়েছি এটাই বুঝি সব থেকে বড় পাওয়া । নাস্তা শেষ করে গেট দিয়ে বের হওয়ার আগে নিলিকে আরেকবার চুমু খেলাম । তারপর বললাম, কি বলবে না কি সারপ্রাইজ দিবে?
-উহু । এসব এখন না । আগে কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে এসো ।

অফিসে ঢোকার পরে কিভাবে সময় কেটে গেল টেরই পেলাম না । আজকে আমাদের অফিসের জন্য একটা বিশেষ দিন । সব থেকে বড় রিয়েলএস্টেস কোম্পানী গুলোর একটার সাথে ডিন ফাইনাল হওয়ার কথা । যদি সব কিছু ঠিক ঠাক মত হয় তাহলে ডিল টা ফাইনাল হয়ে যাবে । আমাকে তখন আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না । এই প্রোজেক্টের পুরো দা্য়িত্ব আমার নিজের । সব ক্রেডিটও আমিই পাবো । ঠিক তেমনি ভাবে কোন ঝামেলা হলেও দায় আমারই ।

শেষ মুহুর্তের সব কাজ দেখে নিচ্ছি । কোন দিকে যেন ভুল না হয় । দুপুর থেকে কখন বিকেল হয়ে গেল ডিল টা ফাইনাল করতে করতে টেরই পেলাম না । সন্ধ্যার দিকে একটু অবসর পেলাম । ফোনটা হাতে নিতেই খেয়াল করলাম ৪১টা মিস কল । নিলিই আমাকে সারাদিন কল দেয় । কিন্তু আজকে অবাক হয়ে খেয়াল করলাম ওর একটা মিস কলও নেই । দুপুরের আগে ওর সাথে কথা হয়েছে । ওকে বলেছিলাম যে আমি আজকে ব্যস্ত থাকবো । ফোন ধরার সময় থাকবে না । তাই হয়তো ফোন দেয় নি । কিন্তু অন্য এতো গুলো নাম্বার টা কার ?
কল লিস্টে বাসার দারোয়ানের নাম্বার রয়েছে । বাবার ফোন রয়েছে । বন্ধু জামানের ফোন রয়েছে । একটা অপরিচিত নম্বর থেকে সব থেকে বেশিবার ফোন করা হয়েছে । নম্বরটাতে কল করলাম।
-হ্যালো?
-আসিফ সাহেব।
-জি বলছি । আপনি কে?
-আমি মোহাম্মাদপুর থানার ওসি আরাফাত রহমান । আপনাকে আমরা অনেকবার ফোন দিয়েছি।

আমার বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠলো । থানার ওসি আমাকে কেন ফোন দিবে? কি এমন কারণ রয়েছে।
-আমি মিটিংয়ে ছিলাম । একটু ব্যস্ত ছিলাম । কি দরকার বলুন তো ।
ওপাশ থেকে একটা দীর্ঘ শ্বাসের শব্দ শুনলাম। ওসি সাহেব বললেন, আপনার জন্য একটা খারাপ সংবাদ রয়েছে ।
-কি । খারাপ সংবাদ !
-আপনার স্ত্রী ….
আমার বুকটার ভেতরে যেন ধক করে উঠলো । বললাম, কি হয়েছে নিলির?
-আই এম সরি টু সে মিস্টার আফিস । আপনার স্ত্রী আর বেঁচে নেই ।
আমার মনে হল যেন আমি আর দুনিয়াতে নেই । সব কিছু কেমন যেন ঘোলাটে মনে হল । মনে হল আমি যা শুনছি সেটা মোটেও সত্য হতে পারে না । মোটেও সত্য হতে পারে না ।
ওসি সাহেব তখনও বলে চলেছে, আপনার স্ত্রী বাসায় ছিল একাই । তখনই আতোতায়ী ঘরে ঢোকে ডিসের বিল নিতে । এরপর আপনার স্ত্রীকে রেপ করে কয়েকবার । পরে গলা কেটে হত্যা !

আমি এসব কিছু শুনতে চাই না । আমি চিৎকার করে বললাম, চুপ করুন । আপনি চুপ করুন । আপনার কথা আমি বিশ্বাস করি না । আপনি চুপ করুন ।
ওসি সাহেব খিকখিক করে হেসে উঠলো । তারপর বললেন শুনবি না কেন শোন। তোর বউ মরার আগে বারবার তার কাছে কাকুতি মিনতি করছিলো । বারবার বলছিলো তাকে যেন না মারি । সে দুই মাসের প্রেগনেন্ট ছিল । বুঝেছিস । খুনি খুব মজা পেয়েছে আজকে । তোর বউ না সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল ! পেয়েছিস সারপ্রাইড !

আমার মনে হল আমি সত্যিই আর এই জগতে নেই । আমার নিলি ! আমার নিলি আর নেই ! কি ভয়ংকর একটা মৃত্যু পেয়েছে সে । আমার নিলি আর নেই ।

দুই
-কেমন চলছে ?
অপারেটর বলল, ভাল স্যার কোন সমস্যা নেই । একটু পরেই ৫ম সেশন শুরু হবে ।
মনিটরের দিকে তাকিয়ে সুপারভাইজার বলল, এটা সেই হারামজাদা না যে একলা একটা মেয়েকে বাসায় পেয়ে প্রথমে রেপ করেছিলো তারপর মেরে ফেলেছিলো ?
-জি স্যার ।
-মেয়েটা প্রেগনেন্ট ছিল ।
-জি স্যার ।
-হারামদাজার ডোজ আরেকটু বাড়িয়ে দাও । মেমোরি পুরোপুরি মুছো এবার আবার একই পক্রিয়া চালু কর । বেটা বুঝুক অন্যের সুন্দর সংসার ধ্বংস করার কি শাস্তি !

কয়েদী নম্বর ৩৪৫ । নাম আসিফ শাহ । পেশায় ডিস অপারেটর । অপরাধ এক গৃহবধুকে রেক ও খুন । অপারেট অপরাধীর স্মৃতি পুরোপুরি মুছে দিল । তারপর আবারও একটা চমৎকার স্মৃতি প্রবেশ করালো । তার মস্তিস্ক আবার নতুন করে সচল হয়ে গেল । সে নতুন জীবন শুরু করলো আবার । এই জীবনে একটু পরেই সে ঘুম থেকে উঠবে। তারপর তার স্ত্রীর সাথে ভালবাসাবাসি করবে । অফিস যাবে এবং পরে তার স্ত্রীর ভয়ংকর মৃত্যুর সংবাদ শুনবে । সেই ট্রমা নিজে উপলব্ধি করবে ।

২১১৪ সালের শাস্তি গুলো ঠিক এই ভাবেই হয়ে থাকে । আগের মত কেবল মাত্র জেলে আটকে রাখা হয় না । অপরাধী যে ধরনের অপরাধ করে থাকে তার ব্রেনে ঠিক সেি ধরনের সিমুয়েলটেশন দেওয়া হয় । কেউ যদি এখকন খুন করে তাহলে শাস্তিকালে তার ব্রেনে হয় সেই খুন হওয়ার ব্যক্তি অথবা তার কাছের মানুষের স্মৃতি কৃত্রিম ভাবে ভরে দেওয়া হবে । এবং সে প্রতিদিন সেই খুন হওয়ার ব্যক্তির অথবা তার কাছের মানুষটা কিভাবে কষ্ট পেয়েছিলো সেই রকম অনুভব করবে । প্রতিদিন সে অনুভব করবে কেউ তাকে মেরে ফেলছে অথবা কেউ তার কাছের মানুষকে মেরে ফেলছে । সেই কষ্ট টা সে অনুভব করবে । পরে আবার স্মৃতি মুছে ফেলে আবার প্রথম থেকে শুরু হবে ।
আফিস শাহের বেলাতেও একই শাস্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে । সে যে মেয়েটাকে মেরে ফেলেছিলো তার ব্রেনে সেই মেয়েটির স্বামীর কৃত্রিম মেমোরি প্রবেশ করানো হয়েছে । এবং প্রতিদিন তার একই মানসিক কষ্ট পেয়ে শেষ হচ্ছে ! ভভয়ংকর সেই অনুভূতি সে প্রতিদিন পাচ্ছে ।

পরিশিষ্টঃ

সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গার পরে আমার বেশ কিছুটা সময় বিছানাতে গড়াগড়ি করার অভ্যাস । আজকেও সেটার ব্যতীক্রম হল না । আমি চোখ বন্ধ করে নরম সকালের আমেজটা নেওয়ার চেষ্টা করছি। এটা ঘুম ভাঙ্গার পরে সব সময়ই আমার পছন্দের একটা কাজ । অফিস যাওয়ার আগে এই কাজটা আমার অনেক বেশি আনন্দ দেয় ।

চোখ না মেলেই আমি অনুভব করতে পারি নিলি ঘরের ভেতরে এসে ঢুকেছে । এটাও বলে দিতে পারি যে ওর চুলে তোয়ালে বাঁধা । মাত্রই গোসল শেষ করেছে । চোখ খুললেই আমি ওর স্নিগ্ধ চেহারাটা দেখতে পাবো ।

-এই যে জনাব আর কত সময় শুয়ে থাকবেন শুনি?
আমি চোখ মেলে তাকালাম………………

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 38

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

One Comment on “সারপ্রাইজ”

Comments are closed.