জন্মদিনের দিন আমার মন সাধারণত খারাপ থাকে। ছোটবেলা থেকেই এমনটা হয়ে থাকে আমার। এর একটা কারণ সম্ভবত ছিল এই যে আমার বাসায় কখনই আমার জন্মদিনের আয়োজন করা হত না। কারো এই ব্যাপারে মনেই থাকত না। অথচ অন্য সব বাচ্চাদের দেখতাম তারা তাদের জন্মদিনের গল্প করছে। এই ব্যাপারটা আমাকে কষ্ট দিত। যখন বড় হলাম তখনও দেখলাম যে আমার বন্ধুদেরও কারো ঠিক মনে থাকত না। অথচ আমি সবার জন্মদিনের কথা মনে রাখতাম, তাদেরকে সময়মত উইস করতাম। রাত বারোটার সময়ে বন্ধুরা মিলে পার্টি করে, কেক নিয়ে হাজির হয়, এমন ঘটনা আমার জীবনে কখনই ঘটে নি।
আমি তাই এই দিনটির কথা মনে রাখার চেষ্টাই করতাম না। কিন্তু যতই চেষ্টা করি না কেন এই দিনটা এলে আমার ঠিকই মনে পড়ে যেত। আর পুরোদিনটা আমার খারাপ যেত। তবে এইবারের জন্মদিনটা একটু অন্য রকম হল। রাত ঠিক বারোটা বাজার সাথে সাথে আমার হোয়াটসএপে একটা অপরিচিত নম্বর থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা মূলক বার্তা এসে হাজির হল। আমি বেশ অবাকই হলাম। কারণ এই নম্বরটা আমার অফিসের নম্বর। এই নম্বরটা আমার পরিবার আত্মীস্বজন কিংবা বন্ধুদের কাছে নেই। এই নম্বরটা আমাকে অফিস থেকে দিয়েছে। সেই নম্বরে মেসেজটা এসেছে। আমি ফিরতি মেসেজ দিলাম ধন্যবাদ জানিয়ে। সেটা সীন হল। তবে তারপর যখন কে জানতে চাইলাম, তখন সেই মেসেজটা আর সীন হল হল না। কৌতুহল দমাতে না পেরে কল করলাম, অথচ কলটা ঢুকল না। তবে আর বেশি কিছু আর চিন্তা করার সুযোগ পেলাম না। ঘুম আসছিল বেশ।
তবে পরের দিন অফিসে গিয়ে সব থেকে বিস্ময়ের কাণ্ড হল। আমার ডেস্কের কীবোর্ডের নিচে আমি একটা কার্ড চাপা দেওয়া অবস্থায় দেখলাম। কার্ডটা খুলে তীব্র একটা বিস্ময় ভাব জন্মালো আমার মাঝে। সেটা একতা জন্মদিনের কার্ড। সেখানে লেখা বাক্য দুটো দেখে আমি আরও অবাক হলাম।
শুভ জন্মদিন অপু। তোমার জন্মদিনটা চমৎকার কাটুক! কী অদ্ভুত ভাবে আমাদের দুইজনের জন্মদিন একই দিনে।
যদিও গতরাতের মেসেজের কথা এখানে কিছুই লেখা নেই তবে আমার পরিস্কার মনে হল যে গতরাতে যে আমাকে এই মেসেজটা পাঠিয়েছে আর এই কার্ড এখানে যে রেখেছে দুজনেই একই ব্যক্তি। এবং এই মানুষটা এই অফিসেই চাকরি করে, সেই সে একজন মেয়ে। কোন ছেলে নিশ্চিত ভাবে এইটা রহস্য করে আমার জন্য এখানে কার্ড রেখে যাবে না। আর সব থেকে বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে আজকে সেই মেয়েটিরও জন্মদিন। আমি বিস্ময় নিয়ে কিছু সময় বসে বসে ভাবতে লাগলাম। এই অফিসের কোন মেয়ের জন্মদিন আজকে?
অফিসের কাজ কর্মে আমার মন বসল না। আমি এই দিনটা সাধারণত ছুটি নেওয়ার চেষ্টা করি। যখন ছাত্র ছিলাম, এই দিনে আমি ক্যাম্পাসে যেতাম না। নিজেকে বাসায় বন্দি করে রাখতাম। আজকেও আমার অফিসে আসার ইচ্ছে ছিল না, তবে আসতে হয়েছে কাজের কারণে। আগামীকাল একটা প্রজেক্টের কাজ জমা দেওয়ার শেষ দিন। সেই কাজ শেষ করতে হবে আজকে। আজকে অফিস কামাই দিলে চাকরি চলে যাওয়ার সম্ভবনা আছে।
ঠিক লাঞ্চ আওয়ারে আবার আরেক ঘটনা দেখতে দেখলাম। আমার মনে হল আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলাম যে এই অফিসের কোন মেয়ের আজকে জন্মদিন?
নাদিরা আরমান! মেয়েটা সেলস টিমে আছে। আমার ডিপার্টমেন্ট থেকে আলাদা তবে ওদের টিম আর আমাদের টিমের ডেস্কগুলো পাশাপাশি। আমি সেই সুবাদেই মেয়েটার নাম জানি। এই মেয়ে আমাকে চিনে কিনা আমার কোন ধারণা ছিল না। তবে আজকে তার জন্মদিন। সেই কেক কাঁটা হচ্ছে হচ্ছে আমাদের কমন মিটিং রুমে। কাঁচের দেয়াল থেকে সেটাই আমি দেখতে পেলাম। বুকের ভেতরে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হল। এই মেয়ে তাহলে আমার ডেস্কে কার্ড রেখে গেছে?
দেখলাম অনেকেই মিটিং রুমে গিয়ে কেক কাঁটায় অংশ নিচ্ছে। আমার কেন জানি খুব ইচ্ছে হল সেখানে গিয়ে হাজির হতে। সেখানে গিয়ে যদি বলি আজকে আমারও জন্মদিন তাহলে কী হবে? আমি জানি না। তবে কেন জানি যেতে ইচ্ছে করল না। একটু পরেই দেখলাম নাদিয়া নিজেই ডেস্কে ডেস্কে গিয়ে কেক দিতে লাগল। আমার ডেস্কে এসে যখন কেক দিল তখন তার মুখের ভাবটা দেখে আমি সত্যিই বেশ খানিকটা দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে গেলাম। সেখানে আমার জন্য বিশেষ কোন অনুভূতির ছায়া আমি দেখলাম না। তার চোখের চাহনী অনেকটা অপরিচিত ঠেকল।
আমি কেক নিতে নিতে বললাম, আজকে আপনার জন্মদিন?
নাদিরা হাসল একটু। তারপর বলল, আজকে ঠিক না, গতকাল ছিল। গতকাল তো শনিবার ছিল তাই আজকে সবাই কেক কাটল!
আমি কেক নিলাম। তারপর বুঝলাম যে নাদিয়া আমার ডেস্কে কার্ড রাখে নি। তার মানে আরও একজন মেয়ে এই অফিসে রয়েছে যার জন্মদিন আজকে । আমি একে একে অনেকের কথাই চিন্তা করলাম তবে কারোই কথাই মাথায় এল না। অন্তত এমন কাউকে আমি খোজ পেলাম না। অবশ্য বেশি সময় এটার পেছনে সময় দেওয়ার উপায় ছিল না। হাতের কাজটা তখনও অনেকটাই বাকি! সুপারভাইজার কয়েকবার এসে ঝারি দিয়ে গেল। আমি সব চিন্তা বাদ দিয়ে কাজ করতে লাগলাম। সব কাজ যখন শেষ হয়েছে তখন অফিসের অনেকেই বাসায় চলে গেছে। আমিও নিজের ব্যাগগুছিয়ে নিচ্ছিলাম, তখন আবারও ডাক পরল। তবে সুপারভাইজার নয়, ডাক পড়ল প্রজেক্ট ম্যানেজারের ঘরে। রুমে ঢুকে দেখি ম্যানেজার ম্যাম আমার বানানো প্রজেক্টটার দিকেই তাকিয়ে আছে।
আমার দিকে তাকিয়ে বলল, এই রেটগুলো আপনি এভাবে দিয়েছেন কেন? সব দাম ডলারে দিতে হবে, টাকায় না।
আমার মেজাজ একটু খারাপ হল। এই সহজ কথাটা আমাকে কেউ আগে বলে নি। আমাকে যা বলেছে তাই আমি সেই হিসাবে করেছিল। এখন সব হিসাব পত্র আবার শুরু থেকে করতে হবে। কিন্তু এই কথা তো আর এখন বলা যাবে না। আমার দিকে ফাইলটা সে এমন ভাবে এগিয়ে দিল যার অর্থ হচ্ছে এখনই আমাকে সব কাজ করতে হবে। তবুও আমি না বোঝার ভান করে বললাম, কাল করলে হবে না? কাল একটু আগে আগে অফিসে এসে?
-কাল সকালে এই এই প্রজেক্ট সাবমিট করতে হবে। আমি আজকের ভেতরে সব কাজ সমাধান চাই।
আর কোন কথা বলা চলে না। একটু মেজাজ খারাপ হল। আরও ঘন্টা খানেক এখন অফিসে বসে থাকতে হবে।
কাজ যখন আবার শেষ হল তখন রাত নয়টা বেজে গেছে। দেখলাম যে পুরো অফিস একেবারে ফাঁকা হয়ে গেছে। আমি ভেবেছিলাম মীরা ম্যামও অফিস ছেড়ে চলে গেছে। তবে দেখলাম সে অফিসেই রয়েছে। আমার ফাইলের জন্যও সে অপেক্ষা করছিলে। কিন্তু আমি যখন ফাইলটা জমা দিলাম তখন সে ফাইলটা একবারের জন্য খুলেও দেখল না। ফাইলটা ডেস্কের ভেতরে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ডক ফাইল মেইল করেছেন আমাকে?
-জ্বী!
মেজাজ চরমে উঠল। যদি তুই নাই দেখবি তাহলে আমাকে এখানে বসিয়ে রাখার মানে কি? যদি ডক ফাইল মেইল করলেই কাজ হত তাহলে আমি বাসায় গিয়েই তো এই মেইল করতে পারতাম। কিন্তু কিছুই বলা গেল না।
যখন বাইক নিয়ে গেট দিয়ে বের হতে যাবো তখন বাইরে বের হতে যাবো তখন দেখি মীরা ম্যাম গেটের কাছে দাঁড়িয়ে। আমার আমাকে দেখেই বলল, নাদিম সাহেব, একটা ফেভার করেন তো।
মনের বিরক্তি কিছুটা চেপে রেখে বললাম, জ্বী বলুন।
-আমাকে একটু গুলশানে ড্রপ করে আসুন প্লিজ। আজকে অফিস থেকে বের হতে হতে বেশ দেরি হয়ে গেল। একটা অনুষ্ঠানে যেতে হবে।
আমার খুব বলতে ইচ্ছে হল যে অফিস থেকে এই দেরি করে বের হওয়ার জন্য দায়ী কে? কাল সকালেই এই কাজটা আমি এসে করে দিতে পারলাম। অথবা বাসায় গিয়ে কাজ শেষ করে মেইল করতে পারতাম। কিন্তু তো সেটা পছন্দ করবে না। তোমাকে বসে থেকে থেকে এই ঘোড়ার ডিমের কাজ করাতে হবে । দেরি হবে না তো কী হবে!
কিন্তু এই কথা তো চাইলেই বলা যায় না। আমি হাসি মুখেই তাকে লিফট দিতে রাজি হয়ে গেলাম। যখন তাকে আমি গুলশানে নামিয়ে দিলাম তখন দশটার বেশি বাজে। মনের ভেতরে একটা বিরক্তি কাজ করছিল তবে সেটা গোপন করলাম। বাইকে ঘুরিয়ে যখন আমি ফিরে আসছি দেখলাম সে আমাকে একটা সাধারণ ধন্যবাদটুকুও দিল না। মেজাজটা সত্যিই খারাপ হল। এদেশের অফিস কালচারটাই এমন। অধীনস্ত দেখকে দিয়ে অফিসের বাইরে কাজ করিয়ে নিলেও সেটার জন্য সামান্য কৃতজ্ঞতা টুকুও প্রকাশ করে না।
হঠাৎ আমার কেন জানি বাসায় যেতে ইচ্ছে করল না। আমার আবারও সেই মন খারাপের ভাবটা ফিরে এল । জন্মদিনের আরও দুইটা ঘন্টা বাকি আছে। তারপর আবার সব আগের দিনের মত হয়ে যাবে। নতুন একটা দিন চলে আসবে।
দুই
রাত প্রায় এগারোটা বাজে। আমি বাইকটা থামিয়ে রাস্তার পাশে বসে আছি চুপ করে। গাড়ির চাপ কমে গেছে। আমি সেদিকেই শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম কিছুটা সময়। আজকের জন্মদিনটা অন্য জন্মদিনের মত শুরু না হলেও শেষটা একই ভাবে শেষ হচ্ছে। এই কারণে মনটা একটু খারাপ লাগল। এভাবে কত সময় বসে ছিলাম আমার মনে নেই। তবে আমার তন্ময় ভাঙ্গল ম্যাসেজ টোনে। হোয়াটসএপের ম্যাসেজ। সেই নম্বর থেকে ম্যাসেজ এসেছে।
-মন খারাপ?
আমি বেশ অবাক হয়ে গেলাম। আমার মন খারাপ এই ম্যাসেজদাতা কিভাবে জানল? নাকি আন্দাজে বলল। আর এবার কেন জানি আমার মনে আগের মত আর কোন অনুভূতি কাজ করলো না। আমি উত্তরে লিখলাম, কে বলছেন?
-মন তাহলে খারাপই?
-কে বলছেন?
-জানতে চাো কে?
-হ্যা! কে আপনি?
-এই যে আমি!
আমি চমকে উঠলাম। কারণ এই কে আপনি কথাটা ম্যাসেজে নয় বরং সেটা এসেছে আমার পেছন থেকে। আমি পেছন ফিরে তাকাতেই দেখলাম বেশ লম্বা আর একটু রোগা মত একটা মেয়ে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে। তারপর সে আলোতে এগিয়ে এল। আমার দিকে তাকিয়ে হাসল একটু। আমি তীব্র ভাবে অবাক হওয়ার ভাব নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলাম। এই মেয়েটাকে আমি এর আগে দেখেছি বলে মনে পড়ল না। মেয়েটি আমার সামনে এসে দাঁড়াল।
-আপনি কে?
মেয়েটি একটু হেসে বলল, আমি যদি আমার নামও অপু বিশ্বাস করবে?
-সত্যিই আপনার নাম অপু?
-জ্বী। আমার নাম অপু। তবে তোমার মত আমার নাম নাদিম হায়দার অপু নয়। আরিয়ানা অপু।
আমার মনে একই সাথে অনেকগুলো প্রশ্ন জেগে উঠল। এই মেয়ে তার ফোন নম্বর কিভাবে পেল? অফিসের কার্ডটা কি সেই রেখেছে? যদি রেখে থাকে তবে কিভাবে রেখেছে?
-অনেক প্রশ্ন রয়েছে মনে তাই না?
-হ্যা আপনি কে? আমার নাম আর নম্বর কিভাবে পেলেন?
অপু একটু সময় চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর বলল, এখন আমি তোমাকে যা বলব তা শুনে তোমার বিশ্বাস নাও হতে পারে। তবে এটাই সত্যি। আমিই হচ্ছি তুমি। তুমি যে কোম্পানীতে চাকরি কর আমিও ঠিক একই কোম্পানীতে একই পোস্টে চাকরি করি। আমাদের জন্মদিন, বাবা মা সব একই!
-মানে? এসব কী বলছেন?
-হ্যা, ঠিকই বলছি। তবে এই ঠিক এই পৃথিবীর অংশ নই।
আমি যেন ঠিক মত কথাটা বুঝতে পারলাম না। এই মেয়েটা বলছে কী? সে এই পৃথিবীর অংশ নয় মানে কী?
-এই যে তোমার পৃথিবী দেখছ, এই রকম আরও অনেক পৃথিবী আছে যেখানে তোমার মত অপু আছে একই ভাবে তারা তোমার মত কাজ করে। একই দিনে তাদের জন্ম। তবে একেবারে হুবাহু একই ঘটনা সব ঘটে না। এই যেমন এই পৃথিবীতে অপু তুমি আমার পৃথিবীতে অপু আমি।
মাল্টিভার্স !
একটা সময়ে মাল্টিভার্সের কন্সেপ্ট একেবারেই কাল্পনিক মনে করা হত বটে তবে বিগত কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা এটাকে সত্য বলে ধরে নিয়েছেন। তারা অন্য জগতে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আমার সব থেকে কাছের বন্ধু পলাশ পড়াশোনা করেছে থিউরিটিক্যাল ফিজিক্স নিয়ে। সে এখন এম আই টিতে পিএইচডি করছে। ও মাঝে মাঝে এই ব্যাপার নিয়ে আমার সাথে কথা বলে।
অপু বলল, এই জগতে তোমার একজন বন্ধু আছে, এখন এম আই টিতে আছে। তাই না?
-হ্যা।
-ওয়েল, আমারও এমন একজন আছে। সেও এমআইটিতে আছে। তোমার পৃথিবীতে এখনও মাল্টিভার্সে যাওয়ার দরজা খুলতে পারে নি তবে অনেক পৃথিবীতেই পেরেছে।
আমি অবাক হয়ে অপু নামের মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলাম। মেয়েটি আমার দিকে এগিয়ে এসে নিজের জামার হাতা তুলে আমাকে দেখাল। ঠিক কুনই এর কাছে একটা কাঁটা দাগ! আমি সেটা দেখে তীব্র ভাবে বিস্মিত হলাম। কারণ ঠিক একই রকম দাগ আমারও আছে। আমি যখন ক্লান নাইনে পড়ি তখন একবার বাবার সাথে যাওয়ার সময়ে আমার এক্সিডেন্ট হয়েছিল। অপু আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ক্লাস নাইনের এক্সিডেন্ট। তাই না?
-হ্যা।
অপু এবার আকাশের দিকে তাকাল। বলল, প্রতি জন্মদিনে আমার মন খুব খারাপ থাকে। তোমার মত আমারও অবস্থা একই। এবার অদ্ভুত একটা খেয়াল হল আমার। মনে হল মানুষের কাছ থেকে আশা না করে বরং নিজের কাছ থেকেই আশা করা যাক। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম যে এখানকার অপুও মেয়ে হবে আমার মত। তবে তোমাকে দেখে বেশ ভাল লাগল।
এই বলে মেয়েটা হাসতে লাগল। আর আমার এই হাসি দেখেই মনটা ভাল হয়ে গেল। কী অদ্ভুত ব্যাপার আমি অন্য জগতের আমার সাথে বসে কথা বলছি। আমি বললাম, আচ্ছা এই যে আমরা মানে দুই জগতের দুইজন পাশাপাশি বসে আছি এতে সমস্যা হবে না, মানে আমি শুনেছিলাম যে একই ব্যক্তির দুটি সংস্করণ কাছাকাছি এলে অস্থিরতা বা “প্যারাডক্স” তৈরি হয়। তাদের অস্তিত্বকে ধ্বংস করতে পারে বা জগতের মধ্যে কোনো বিপর্যয় ঘটাতে পারে, এমন টাইপের কিছু।
অপু আবারও হাসল। তারপর বলল, আরে বাজে কথা! এবস কিছুই হয় না।
এই কথা বলে সে আবারও হাসতে লাগল। কিভাবে যে সময় চলে গেল আমি বলতে পারব না। অনেক দিন পরে জন্মদিনটা আমার চমৎকার গেল।
পরিশিষ্টঃ
ঘন্টা দুয়েক আমরা একসাথে ছিলাম। এই সময়ে আমি একটা চমৎকার আবিস্কার করলাম। নিজের মনের মত একটা মানুষের সাথে কথা বলতে পারা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। হোক সেটা অন্য জগতের, কিংবা অন্য লিঙ্গের তবুও সেটা আমি নিজেই। অপু আবারও আসবে বলে গেল। আমিও সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করে রইলাম।