দুঃস্বপ্ন সত্যি হয় না

oputanvir
4.7
(65)

ঘড়িতে ঠিক যখন দশটা বেজে সতের মিনিট তখন সবাই মোবাইলের সাইরেন বেজে উঠলো । অফিসের সবাই মুহুর্তের ভেতরে সচকিত হয়ে গেল । তারপর তাড়াহুড়া করে নিজেদেরকে সামলে নিতে শুরু করলো। সাইরেন বাজার অর্থই হচ্ছে নাইরা ম্যাম আসছে । সবাই সাবধান হও ।

সাইরেনটা ঠিক বিশ সেকেন্ড বেজেই বন্ধ হয়ে গেল । আমরা সবাই জানি নাইরা ম্যামের গাড়ি যখন গ্যারেজ দিয়ে প্রবেশ করে তখন গেটের দারোয়ান ফোন করে জানিয়ে দেয় রিসিপশনের মেয়েটাকে । সেই তখন সাইরেন বাজায় । এছাড়া অন্য কেউ যদি তাকে ভেতরে ঢুকতে দেখে সেও মোবাইলের সাইরেন এপসটা চালু করে দেয় ! এই সাইরেনের কথা ম্যাডাম জানে না । জানলে আমাদের খবর আছে । তবে এই ব্যাপারে আমরা কেউ মুখ খুলি না । সবাই নাইরা ম্যামের কাছ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে ব্যস্ত । তাই অন্তত এই ব্যাপারে সবাই একমত । অন্তত কেউ এই সকাল বেলা নাইরা ম্যামের কাছে বকা শুনতে রাজি নয় । তাহলে দিন একেবারে খারাপ যাবে ।

আমাদের অফিসের সব কিছু ভাল । তবে সবাই আমাদের বস মানে নাইরা ম্যামকে ভয় পায় । আরও ভাল করে বললে কেউ ই ঠিক পছন্দ করে না তাকে । এই রকম বস হলে কেউই পছন্দ করতে পারে না । কিন্তু আবার চাকরিও ছেড়েও যেতে চায় না । যতই নাইরা বদরাগি হোক, এই অফিসের স্যালারী অনেক ভাল । অনেক ভাল বলতে অনেক বেশি ভাল । যেখানে টাকা এতো আসছে তাই হাজারটা বকা শুনেও আমরা সবাই টিকে আছি । টিকে থাকার নানান কৌশল শিখে নিচ্ছি । সেই কৌশলের একটা হচ্ছে এই সাইরেন । এই সাইরেন এপটা আমরা স্পেশাল ভাবে অর্ডার দিয়ে বানিয়ে নিয়েছে । আমাদের অফিসের সবাই মোবাইলে এটা ইনস্টল করা । যখনই ম্যাম গাড়ি নিয়ে গ্যারাজে ঢুকবে তখনই খবর আসবে । আর সে এপ বের করে সাইরেন চালু করবে । সাথে সাথেই যাদের মোবাইলে এই এপ আছে সব বেজে উঠবে ।

আমরা নিজেদের সামলে নিলাম । টেবিলে বসে পরিপাটি হয়ে নিলাম যাতে কোন ভুল না হয় ।

সকাল বেলা নাইরা ম্যাডাম যখন অফিসে ঢোকা তার আগেই আমরা টের পেয়ে যাই । আজও তাই হল । সে অফিসে ঢোকার আগে আমরা সবাই মন দিয়ে কাজ করতে শুরু করলাম । ম্যাম দরজা দিয়ে ঢুকে করিডোর দিয়ে হাটতে হাটতে এগিয়ে গেল তার কেবিনের দিকে । প্রত্যেকেই তাকে গুড মর্নিং জানালো বটে তবে সে কারো দিকে ফিরে তাকালো না । কদিন থেকেই সে খানিকটা আপসেট হয়ে আছে । সবাই সাথেই একটু বেশি খারাপ ব্যবহার করছে । কেন আছে সেটার কারণ হয়তো আমি জানি । আবার হয়তো জানি না । কদিন থেকে তার কাজ কর্মেও ঠিক মত মন নেই । সারাটা সময় কী যেন ভাবতে থাকে ! কী যে ভাবতে থাকে সেটা কেউ জানে না ।

অফিস শেষ করতে করতে সন্ধ্যা পার হয়ে গেল । আমি অফিস থেকে যখন বের হলাম তখন প্রায় সবাই বের হয়ে গেছে । যখনই গেট দিয়ে বের হতে যাবো তখনই একটা মেসেজ এল আমার মোবাইলে ।
বিএফসির সামনে গিয়ে দাড়াও”

মেসেজটা এড়িয়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই । আমি অফিস গেট থেকে বের হয়ে হাটা দিলাম ডান দিকে । ডান দিকের মোড়টা পার হলেই একটা ছোট বিএফসি স্টল আছে । আমি সেখানেই চুপচাপ দাড়িয়ে রইলাম । খুব বেশি সময় অবশ্য অপেক্ষা করতে হল না । কালো রংয়ের গাড়িটা এসে থামলো আমার সামনে । আমি খানিকটা এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম কোন পরিচিত মানুষ আছে কিনা আসে পাশে । তারপর গাড়ির গেট খুলে ভেতরে ঢুকে পড়লাম । গাড়ি চলতে শুরু করলো ।

কিছু সময় কেউ কোন কথা বলল না । তারপর নাইরা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ভয় কেন পাচ্ছো?

আমি কিছুটা নার্ভাস যে ফিল করছি না, সেটা বলবো না । বসের সাথে গাড়িতে মানুষ উঠতেই পারে । এর আগেও আমি নাইরার গাড়িতে উঠেছি কয়েকবার । সে আমাকে নিয়ে কাজে কয়েক স্থানে গিয়েছে । একবার ফ্যাক্টরি ভিজিতে গিয়েছি তার সাথে । কিন্তু সেই সময়ে গাড়ি চালায় তার ড্রাইভার । কিন্তু এখন গাড়ি চালাচ্ছে সে নিজে । এবং আমরা কোন কাজে যাচ্ছি না। আমরা যাচ্ছি তার বাসায় !

আমি কেবল ভাবছি যে এই কথাটা যদি অফিসের কেউ জানতে পারে তাহলে কী অবস্থা হবে ! আজকে আবারও আমি যাচ্ছি নাইরার বাসায় ।

প্রথম দিন তার বাযায় যাওয়ার ঘটনা মনে হল আমার এখনও ঠিক বিশ্বাস হয় হতে চায় না। প্রতিদিন রাতে আমি একা একা হাটতে বের হই । রাতের খাওয়া শেষ করে আমি বাইরে বের হই । এই সময়ে আমার এলাকার লোকজন কমে যায় । রাস্তাঘাট খানিকটা ফাঁকা হতে শুরু করে । হাটতে বের ভাল লাগে । মাস খানেক আগে তেমনই ভাবে আমি রাতে হাটতে বের হয়েছিলাম । হাটতে হাটতে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে ঠিক তখনই চোখ গেল গাড়িটার দিকে । গাড়িটা অনেকটা রাস্তার মাঝখানেই যেন দাড়িয়ে রয়েছে । রাস্তা ঘাট ফাকা বলেই হয়তো কোন জটলা লাগে নি । আমি গাড়িটার নম্বর দেখেই চিনে ফেললাম ।

বসের গাড়ির নম্বর সবারই জানা থাকে । আমারও জানা ছিল । আমি কৌতুহল নিয়ে এগিয়ে গেলাম । কালো কাঁচে ভেতরে কী আছে দেখ যায় না। গাড়ির সামনে এসে দেখলাম একজন মেয়ে গাড়ির স্টিয়ারিংয়ের উপর মাথা দিয়ে রয়েছে । নড়ছে না । সাহস করে দরজা টোকা দিলাম কয়েকটা । ডাক দিলাম ম্যাম বলে কিন্তু কোন কাজ হল না । শেষ দরজা লক ধরে টান দিয়েই সেটা খুলে গেল । লক করা ছিল না দরজাটা ।

কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না । একবার মনে হল রেখে চলে যাই তবে সেটা করতে পারলাম না। আরও একটু সাহস করে নাইরার কাধে একটু হাত রেখে ঝাকি দিলাম । কিন্তু কোন কাজ হল না । তবে একটা কড়া ওয়াইনের গন্ধ ঠিকই নাকে এল । বুঝলাম যে আজকে ড্রিংক করেছে বেশ ভাল রকমই । গাড়ি নিয়ে কেন বের হয়েছে কে জানে । তবে কারো সাথে যে ধা্ক্কা মেরে দেয় নি এটাই অনেক । তারপর আমি একটা ভয়ংকর কাজ করে ফেললাম । এতোটা সাহসের কাজ করা সম্ভবত আমার ঠিক হয় নি । গাড়িতে থেকে নাইরাকে নামিয়ে পেছনের সিটে শুইয়ে দিলাম । তারপর নিজে গাড়িটা ড্রাইভ করে নিয়ে গেলাম তার বাড়িতে । তাকে কিভাবে গাড়ি থেকে নামিয়ে তার ঘর পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলাম সেটা কেবল আমি জানি। অবাক হওয়ার ব্যাপার হচ্ছে ফ্ল্যাটটাও লক করা ছিল না । আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না যে এতো বেখেয়ালি ভাবে সে কিভাবে বাসা থেকে বের হয়ে গেল ? এই মেয়ে কত শক্ত হাতে ব্যবসা সামলাচ্ছে অথচ এমন ভাবে দরজা খুলে বাসা থেকে কিভাবে বের হয়ে গেল?

আমি তখন খানিকটা দ্বিধার ভেতরে পরে গেলাম । আমার আসলে কী করা উচিৎ সেটা বুঝতে পারছিলাম না । একবার মনে হল ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে চলে যাই । সকালে ঘুম থেকে উঠলে সে নিজেই নিজেকে সামলে নিবে । কিন্তু কেন জানি আমি বের হতে পারলাম না । পুরো রাস্তা জুড়ে আমি কতবার যে পেছনের সিটের দিকে ফিরে তাকিয়েছি সেটা আমি নিজেই বলতে পারবো না । নাইরাকে আমার কেন জানি খুব বেশি অন্য রকম লাগছিলো ! এতো ভলনারেবল আমার কখনই ওকে মনে হয় নি । এমন কি তাকে বিছানাতে শুইয়ে দেওয়ার পরে, তার মুখ দেখে কেবলই মনে হল যে সে কিছু একটার কাছ থেকে পালিয়ে যাচ্ছে, ভয় পাচ্ছে । একটু একটু কাঁপছে ওর ঠোঁট আর চোখের পাতা । এই অবস্থায় তাকে ছেড়ে যেতে পারলাম না । যতই সে বদরাগী হোক, সে আমার বস ।

আমি অনেকটা নিশ্চিত ছিলাম যে সকাল বেলা তার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পরে আমাকে দেখে সে বকাঝকা শুরু করবে নিশ্চিত । তবে আমাকে খানিকটা অবাক করে দিয়েই সেটা সে করলো না । আমি সোফার উপরেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । কারো স্পর্শে আামর ঘুম ভাঙ্গলো । তাকিয়ে দেখি নাইরা দাড়িয়ে আছে সামনে ! তার হাতে দুটো কাপ ! আমি ধড়মড়িয়ে উঠে বসলাম ! নাইরা একটা কাপ আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, নাও ! কফিতে আমি চিনি খাই না । তোমারটাতে কম দিয়েছি । দরকার হলে নিয়ে নাও ।
টি-টেবিলের সামনে রাখা চিনির পটের দিকে ইঙ্গিত করলো সে । তারপর নিজে পাশের সোফাতে বসে পড়লো ।
আমি কী বলবো খুজে পেলাম না । চুপচাপ কফিতে চুমুক দিলাম !
আসলেই একদমই চিনি হয় নি । আর আমি চিনি ছাড়া চা কফি একদমই খেতে পারি না । আমি সামনে রাখা চিনির পট থেকে দুই চামচ চিনি নিয়ে কাপে দিলাম । আমার চিনি নেওয়ার ঘটনাটা নাইরা তাকিয়ে দেখলো কেবল । তারপর বলল, এর থেকে শরবত খাও । কফি কেন খাচ্ছো ? দুই চামচ চিনি ! সিরিয়াসলি !
আমি কিছু না বলে কেবল একটু সংকুচিত ভাবে হাসলাম । নাইরা বলল, আমাকে কোথায় পেয়েছো কাল রাতে …
আমি জায়গার নাম বললাম ।
-গাড়ির লক খোলা ছিল?
-জি !
-বাসার লকও?
-হুম !

নাইরা কিছু বলতে গিয়েও যেন বলল না । আমি বললাম, একটা কথার উত্তর দিবেন কি?
-বল !
-আমার কেন জানি মনে হল আপনি কিছুর একটা ভয় পাচ্ছিলেন গতকাল রাতে । এই কারণেই সম্ভবত রাতে ড্রিংক করেছিলেন এবং সেটার কারণে ভয়টা তো কমেই নি বরং বেড়ে গিয়েছে ।

নাইরা কিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । কোন জবাব দিলো না । আমি আর দ্বিতীয়বার জানতে চাইলাম না ।

কফি খাওয়া শেষ করে আমি বললাম, আমি তাহলে আসি । অফিসে যেতে হবে ।
নাইরা বলল, আজকে ছুটি নাও তুমি । কেমন !
-ছুটি ! থাকুক । জমা । অন্য কোন দিন নিবোনে !
-আচ্ছা ! আর ….
আমি উঠতে উঠতে বললাম, ভয় নেই । এই কথা আমি কারো সাথেই শেয়ার করবো না ….
নাইরা হাসলো । বলল, শেয়ার করলেও কেউ বিশ্বাস করবে না ।
-তা অবশ্য ঠিক !
-আমি বলতে চাচ্ছিলাম ধন্যবাদ ! আমাকে নিয়ে আসার জন্য !

ঘটনা এখানেই শেষ হল না । বলা যায় যে ঘটনা কেবল মাত্র শুরু হল ! ঠিক চারদিন পরে আবারও আমার ডাক পড়লো নাইরার বাসায় । রাত তখন একটা বাজে । নাইরা গাড়ি নিয়ে আবার বাসার সামনে এসে হাজির হয়েছে । আমি যখন গাড়িত উঠলাম তখন মনে হল সে খানিকটা ভয় পেয়েছে । কেন ভয় পেয়েছে সেটা আমি বুঝলাম পরে, তার বাসায় গিয়ে ।

নাইরা নিজ থেকেই আমাকে বলল । প্রায় রাতে সে ড্রিংক করে ঘুমায় । ড্রিংক না করে ঘুমালে সে দুঃস্বপ্ন দেখে । ভয়ংকর সেই দুঃস্বপ্ন । যদিও কি দেখে সেটা বলল না । মাঝে মাঝে ভয়ের মাত্রা এতোই তীব্র হয় যে তখন ড্রিংক করেও কাজ হয় না । আজকেও রাত এগারোটার দিকে ঘুমিয়ে পড়েছিলো । বারোটার দিকে ভয়ে ঘুম ভেঙ্গে গেছে । ড্রিংক করতেই যাচ্ছিলো তখনই আমার কথা মনে পড়লো । কেন মনে পড়লো সেটা সে জানে না । কেবল তার মনে হল যে আমি যদি আশে পাশে থাকি তাহলে হয়তো ভয় পাবে না । আমাকে পাশের ঘরে ঘুমাতে বলে সে নিজের ঘরে চলে গেল ঘুমাতে । আমি জেগে রইলাম । আমার ঘুম এল না ।

ঠিক ঘন্টা খানেক পরে আমি নাইরার ঘর থেকে একটু আওয়াজ পেলাম যেন । মনে হল যেন বিড়বিড় করে কিছু বলছে কেউ । আমি উঠে গিয়ে হাজির হলাম নাইরার ঘরের সামনে । একটু দ্বিধাবোধ হল অবশ্য । তবে সেটা খুব বেশি আমলে নিলাম না । দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলাম । ঘরের আলো জ্বালানোই রয়েছে । আমি নাইরার খাটের কাছে গিয়ে দাড়ালাম । তার ঘুমন্ত চোখের দিকে তাকিয়ে আমি সত্যিই খানিকটা অবাক হয়ে গেলাম । আমার পরিচিত সেই নাইরা ম্যাডামকে খুজে পেলাম না কোথাও । তার বদলে মনে হল বারো তের বছরের একটা মেয়ে যে কিনা রাতে ঘুমের ভেতরে দুঃস্বপ্ন দেখে ভয় পাচ্ছে । এতো ভয় যে তার চেহারাতে সেটা ফুটে উঠেছে । আমার মাথায় তখন কি খেয়াল এল আমি ঠিক বলতে পারবো না । আমি তার বিছানার পাশে এসে বসলাম । তারপর তার হাতটা একটু ধরলাম । অন্য হাত দিয়ে মুখের উপরে আসা চুল গুলো সরিয়ে দিলাম যত্ন করে।

কিছু সময় পরেই লক্ষ্য করলাম যে নাইরার মুখের উপর থেকে ভয়ের ভাবটা আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে । আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে সে । আমি তার হাতটা ধরে সেখানেই বসে রইলাম রাত ভর । ভোরের দিকে পাশের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লাম । তবে ঘুম এল না । বারবার ঘুরে ফিরে কেবল নাইরার সেই ঘুমন্ত চেহারাটাই চোখের সামনে আসতে লাগলো ।

নাইরা নিজের ব্যাপারে কারো সাথে কখনই কিছু শেয়ার করেনা । আগে এই অফিসটা ওর বাবা সামলাতো । তবে বাবার সাথে সম্পর্ক ভাল ছিল না । বাবার সাথে থাকতো না সে । এমন কী মায়ের সাথেও না । নাইরার মা মারা গেছে অনেক আগেই । বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন । তার জন্যই সম্ভবত বাবার সাথে সম্পর্ক খারাপ ছিল । বাবা হঠাৎ করে মারা যাওয়ার আগে নাইরার হাতে ব্যবসা দেখা শুনার দায়িত্ব দিয়ে যান । বলতে গেলে একেবারে উইল করে । অন্য ঘরে একটা মেয়ে আছে তবে সে কলেজে পড়ে মাত্র । সবাই ভেবেছিলাম যে নাইরা সম্ভবত ব্যবসা সামলাতে পারবে না । তবে দেখা গেল যে বাবার থেকেও ভাল করে ব্যবসা সামলাচ্ছে । এতো শক্ত মেয়ে সাধারনত দেখা যায় না । অন্তত আমরা তাকে এমনই দেখে এসেছি । অথচ ভেতরে ভেতরে মেয়েটা এখন রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে ভয় পায় ! কি আজব !

সকালে নাইরার ডাকেই আমার ঘুম ভাঙ্গলো । একটু তন্দ্রার মত চলে এসেছিলো । নাস্তার টেবিলে যথারীতি সে আমাকে কফি বানিয়ে দিল । সামনে টোস্টার ছিল । আমি নিশ্চুপ মুখে একটা কলা আর টোস্ট করা পাউরুটি মুখে দিচ্ছিলাম তখনই নাইরা জিজ্ঞেস করলো, রাতে তুমি আমার ঘরে এসেছিলে?
আমি অর্ধকে খাওয়া কলা নিয়ে তাকালাম নাইরার দিকে । একবার মনে হল যে বলি না আসি তারপর মনে হল সে নিশ্চিত জানে আমি এসেছিলাম । তাই মিথ্যা বলে লাভ কি !

আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই নাইরা বলল, তোমার চোখ দেখে মনে হচ্ছে সারা রাত তুমি ঘুমাও নি । আর কাল রাতে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে?
-কী ঘটনা?
-আমি যে স্বপ্নটা সব সময় দেখি সেটা কালকে সেটা শুরু হতেই যাচ্ছিলো । এমন সময়….
-এমন সময়…।?
-এমন সময়ে মনে হল যে কেউ এসে আমার হাত ধরেছে । সেই সাথে সাথেই লক্ষ্য করলাম যে সেই দুঃস্বপ্নটা আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল।

আমি আর কিছু বললাম না । তবে এরপর থেকেই আমার এক রকম ডিউটি শুরু হয়ে গেল । তবে কাজটা আমার নিজের কাছেও বেশ ভাল লাগতে শুরু করলো । অফিসে সে আমার বস হলেও এই বাসায় সে মোটেও আমার বস ছিল না । আপনি থেকে আমি তুমিতেই নেমে এসেছিলাম । অফিসে নাইরা যেমন কঠিন হৃদয়ের বদরাগী মেয়ে হিসাবে দেখতাম, এই বাসায় ওর সাথে মেশার পর সেটা মোটেই মনে হল না । বরং মনে হল এই মেয়েটার ভেতরে চমৎকার একটা মন রয়েছে। কেবল সে কোন দিন কারো কাছে সেটা প্রকাশ করে নি । আমার সামনে যেটা আস্তে আস্তে প্রকাশ পাচ্ছে । তার ভেতরে যে চমৎকার একটা মন রয়েছে সেটা আমি খেয়াল করতে শুরু করলাম । এটাই আমাকে নাইরার দিকে টেনে নিয়ে যেতে শুরু করলো আস্তে আস্তে ।

প্রায় দিনই আমি নাইরার বাসায় গিয়ে হাজির হতাম । রাতভর গল্প করতা । তারপর ওকে রেখে ঘুমাতে যেতাম । তবে আমার কান থাকতো খাড়া । রাতে আমার ঘুম একটু পাতলাই । সামান্য শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যেত । তাই ওর ঘর থেকে কোন আওয়াজ এলেই আমি সেখানে গিয়ে হাজির হতাম । তবে নাইরার ঘুম ভাল হত । ওর ভাষ্যমতে এতোদিন সব সময় একা একা থেকেছে । এই ভয়টাই ও পেতে সব সময় । তবে আমি পাশের ঘরে আছি এটা জানার কারণে মনের ভেতরে একটা সাহস এসে হাজির হয়েছে । ও জানে যে কিছু হলে আমি ছুটে আসবো তাই দুঃস্বপ্নের পরিমানটা কমে গিয়েছে ।

আজও নাইরার বাসার দিকেই গাড়িটা এগিয়ে চলেছে । নাইরা আমাকে আবারও প্রশ্নটা করলো । বলল, ভয় কেন পাচ্ছো তুমি?
আমি বললাম ভয় কেন পাবো?
-তোমার চেহারা বলছে ।
-চেহারা ভুল বলছে।
-তার মানে কেউ যদি আমাদের দেখে ফেলে তাহলে সেটাতে তোমার কিছু যাবে আসবে না?
-আমি তোমার সাথে এমন কোন খারাপ কাজ করছি না যে যাবে আসবে ।
-ও তার মানে খারাপ কাজ করলে যেত আসছো?
-তুমি কি বলছো আমি বুঝছি না ।
-খারাপ কাজ বলতে এই ধর আজ রাতে আমরা সেক্স করলাম !

আমি পানির বোতল নিয়ে মুখে দিয়েছিলাম । পানি টুকু বের হয়ে এল মুখ দিয়ে । নাইরার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালাম । বললাম, মানে ?
-মানে সেক্স করতে পারি না? আমি নিশ্চয়ই দেখতে খারাপ না । আমি বডি ফিগারও ভাল । তাই নয় কি । তুমি ফিট একজন পুরুষ । ফিট তো !
আমি খানিকটা চিৎকার করে উঠলাম, নাইরা এসব কি কথা !
-ঠিকই তো বলছি । আমি তো মাঝে মাঝে ভাবি আামর দরজা খোলাই থাকে । রাতে তুমি এখনও কেন আসো নি । তার মানে কোন শারীরিক সমস্যা!!
-আমার কোন শারীরিক সমস্যা নেই । বুঝতে পেরেছো?
-তাহলে কী তুমি মেয়ে পছন্দ কর না । ছেলেদের পছন্দ । বল বল ! ছেলেদের !
-তুমি চুপ করবা নাকি আমি নেমে যাবো ?

নাইরা গাড়ি চালাতে চালাতে হাসতে শুরু করলো জোরে জোরে । তারপর হাসি থামিয়ে বলল, তুমি দেখি লজ্জায় লাল হয়ে গেছ । আরে বাবা একটু ঠোঁট্টা করছি । আর তো কিছু না । এমন কেন করছো !
আমার ভেতরে তবুও কেন অস্বস্তিটা রয়েই গেল । আসলে নাইরাকে কোন বিশ্বাস নেই । কখন যে কি কথা বলবে এবং মুখে ওর কিছুই আটকাবে না ।

রাতে খেয়ে দেয়ে ঘুমানোর সময় আজকে ভয়ানক ঘটন ঘটলো । এতোদিন কেবল সামান্য রিএকশন দেখেছি ওর ঘুমের সময় । ঘুমের ভেতরে অল্প অল্প কাঁপতো কিংবা মৃদু ভাবে চিৎকার করতো । আমি গিয়ে হাত ধরলেই সে আবার শান্ত হয়ে যেত । তবে আজকে ভয়ংকর ভাবে চিৎকার করে উঠলো । আমি দৌড়ে গিয়ে ওর ঘরে হাজির হলাম । দেখলাম যে ভয়ে একেবারে কুকড়ে গিয়েছে । আমি বিছানার উপরে উঠেই ওকে জড়িয়ে ধরলাম । দেখতে পেলাম নাইরা আমাকে জড়িয়ে ধরেই চিৎকার করে কাঁদছে । কাঁদতে কাঁদতেই নাইরা বলল, তুমি চলে যাও অপু । প্লিজ চলে যাও । ও তোমাকে মেরে ফেলবে । ও তোমাকে মেরে ফেলবে …. চলে যাও প্লিজ …।

আমি নাইরাকে এই অবস্থায় কোন দিন দেখি নি । এমন ভাবে কাঁদতে দেখি নি । এমন ভাবে কারো কাছে কিছু চাইতেও দেখি নি কোন দিন । আমার হঠাৎ কী হল আমি ওকে আরও একটু শক্ত করেই জড়িয়ে ধরলাম । তারপর ওর মাথাটা আমার বুকের ভেতরে টেনে নিয়ে বললাম, ভয় নেই । কিছু হবে না । আমি আছি ।

ও তখনও বলেই চলেছে যে প্লিজ চলে যাও । ও তোমাকে মেরে ফেলবে …. প্লিজ চলে যাওয়া …..
তবে ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে অনুভব করলাম যে নাইরা আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে এসেছে । এবং আমাকে বেশ শক্ত করেই জড়িয়ে ধরেছে । আবারও ঘুমিয়ে গেছে সে । আমি বালিশ কাধে নিয়েই হেলাম দিলামর খাটের সাথে । তারপর ওকে জড়িয়ে ধরে রেখেই চোখ বন্ধ করলাম । এখন নড়তে গেলে হয়তো ওর ঘুম ভে্ঙ্গে যাবে ।

আজকেই আসার সময়ে নাইরা কি বলছি আর এখন ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রয়েছে ।

দুই
সকালে যখন ঘুম থেকে জেগে উঠলাম তখন তাকিয়ে দেখি নাইরা আমার পাশে নেই । সে আগেই উঠে গেছে । আমি আরও কিছু সময় গড়াগড়ি খেয়ে যখন উঠলাম তখন সকাল আটটা । ডাইনিং রুমে গিয়ে দেখি নাইরা কফির কাপ নিয়ে বসে রয়েছে টেবিলে । আমাকে দেখে হাসলো ।
-ঘুম ভাল হয়েছে ?
নাইরা জবাব দিলো না । কেবল হাসলো । নাস্তা করে যখন আমি বের হতে যাবো তখন নাইরা বলল, আজকে আমার সাথে অফিস চল ।
আমি জবাব শুনে আকাশ থেকে পড়লাম । বললাম, কী বললে?
-বললাম যে আজকে আমার সাথে অফিস চল ।
-মাথা খারাপ !
-কেন মাথা খারাপ?
-অফিসের লোকজন কী ভাববে?
-কী ভাবতে তাতে কি যায় আসে ? আমার কিছু যায় না । আই ডোন্ট ইভেন কেয়ার কে কি ভাবলো ।
-না মানে আমি সেটা মিন করি নি ।
-তাহলে? আমার সাথে অফিস গেলে কী সমস্যা ?

আমি কোন জবাব দিতে পারলাম না । নাইরার সাথে আমাকে অফিস যেতে দেখলে সবাই কী কথা বলা শুরু করবে সেই ব্যাপারে আমার আসলে কোন আইডিয়াই নেই । তবে অফিসে যে একটা বড়সর বোমা ফাঁটবে সেই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই । নাইরার ব্যাপারে অফিসে নানা রকম কথা প্রচলিত রয়েছে । যার ভেতরে একটা হচ্ছে সে ছেলে পুরুষদের একদম পছন্দ করে না । আমাদের অফিসে ডিল করতে আসা অনেক পুরুষই নাইরার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে । অনেক রাইভাল কোম্পানীর বস তার ছেলে কিংবা ছোট ভাইয়ের সাথে নাইরার বিয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে বলে আমি শুনেছি । তবে নাইরা সবাইকে রিজেক্ট করে দিয়েছে । এমন কী আমাদের কোম্পানী দিন দিন ছেলে কর্মী কমে যাচ্ছে, মেয়েদের সংখ্যা বাড়ছে । অনেকে তো কানাশুশা করে যে নাইরা আসলে মেয়েদের পছন্দ করে ।

আমার হঠাৎ নাইরার মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হল সত্যিই তো কী সমস্যা ? কোন সমস্যা আছে কি যদি আমি ওর সাথে অফিস যাই?
আমি বললাম, চল। কোন সমস্যা নেই ।
-শিওর তুমি?
-হ্যা । শতভাগ নিশ্চিত ।

ইদানীং প্রায়ই এই বাসায় এসে থাকতাম বলে এমন হত যে আমি সরাসরি এখান থেকেই অফিস যেতাম । তার কয়েক সেট কাপড় এনে রেখেছিলাম । আজও তৈরি হয়ে নাইরার সাথেই রওয়ানা দিলাম । যখন অফিসে এক সাথে ঢুকলাম আমি কেবল লক্ষ্য করছিলাম যে সবাই কেমন বড় বড় চোখ নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে আমাদের দিকে । নাইরা অবশ্য এই সব দিকে খুব একটা খেয়াল করছে না । সে আমার সাথে গল্প করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছে নিজের ক্যাবিনের দিকে ।

আমার জীবন তারপর থেকে হঠাৎ করেই নাইরার সাথেই আটকে গেল । আমি বলতে গেলে প্রায়ই দিনে অফিসের পরে নাইরার সাথে বাসার দিকে যেতাম । অফিসের সবাই এটা জেনে গেছে যে নাইরার সাথে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে । অনেকে সম্ভবত এটাও জানে যে আমি ওর বাসায় থাকি প্রায়ই । কিছু কথা আমার কানে আসে । একটু যে অস্বস্থি লাগে না সেটা আমি বলবো না তবে এসব নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করি না । নাইরা তো একেবারেই এসব নিয়ে চিন্তা করে না । এখন অফিসের সবার সামনেই আমাকে কেবিনে ডেকে নিয়ে যায়, এক সাথে লাঞ্চ করে । আমার সাথে গল্প করে এবং হাসে । এটা দেখে অফিসের সবাই বেশ অবাক । তারা নাইরাকে কখনও হাসতে দেখি নি । আমিও নিজের থেকে এটা মেনে নিতে শুরু করেছি, সব কিছুর সাথে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছি তখনই ঘটলো ঘটনা ।

সেদিন রাতে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম । নাইরা একদম আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে । হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল । আগে একটা সময় নাইরা ঘরে আলো জ্বালিয়ে ঘুমানো । তবে এখন আর আলো জ্বেলে ঘুমায় না । একটা মাত্র ডিম লাইট জ্বলে । আজও তেমন আলো জ্বলছিলো । আমি ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে কিছু সময় তাকিয়ে রইলাম উপরের দিকে । ঠিক যেন বুঝতে পারছিলাম না কেন ঘুম ভাঙ্গলো । কোন আওয়াজ শুনেছি নিশ্চিত । কিন্তু কিসের আওয়াজ শুনলাম । একটু উঠতে যাবো তখনই আমার চোখ গেল পায়ের দিকে । সাদা দেওয়ালে একটা কালো কাপড় পরা অয়বয় ঝুলে আছে। মনে হচ্ছে দেওয়ালের সাথে তার পিঠ আটকে আছে । আমার দিকে তাকিয়ে আছে সরাসরি । আমি তার চোখ মুখ কিছুই দেখতে পাচ্ছি না । তবে সে যে আমার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে সেটা বুঝতে পারলাম ।

তারপর চোখের সামনে দিয়ে সে জানালা দিয়ে বের হয়ে গেল । বাকি রাত আমার আর ঘুম এল না । আমি কেবল ভাবতে লাগলাম যে কী দেখলাম ! সত্যিই কি দেখলাম নাকি ঘুমের ঘোরে ভুল দেখেছি ।

কৌশলে পরদিন নাইরাকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা আগে রাতে যে ঘুমাতে পারতে না, কিসের দুঃস্বপ্ন দেখছে ?

নাইরা আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, কেন এই প্রশ্ন ?
-এর আগেও জানতে চেয়েছি । তুমি উত্তর দাও নি ।
-এবারও দেবো না ।
-প্লিজ এমন করে না । বল না !

নাইরার মুখটা যেন একটু অস্বস্তিতে ভরে উঠলো । তারপর বলল, সেই চেহারাটার কথা ভাবলে এখনও ভয় লাগে আমার ! যখন ঘুমাতে যেতাম প্রায়ই দেখতাম দেওয়ালের কেউ যেন ঝুলে আছে । ঠিক ঝুলে না মনে হয় যেন দেওয়ালে পিঠ আটকে আছে । আমার দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে রয়েছে । আর বলছে আমি তার হাতে বন্দী । আমাকে সে ছাড়বে না ।
-আচ্ছা ।
আমার মনের ভেতরে তখন ঝড় চলছে । আমিও একই জিনিসটাকে দেখেছি । তার মানে ব্যাপারটা মোটেই মিথ্যা না ।
নাইরা বলল, আসলে একদিন মনে আছে তোমাকে চলে যেতে বলেছিলাম।
-হুম । মনে আছে ।
-ঐদিন ঐ জিনিসটা আমার শরীরের উপরে উঠে এসেছিলাম । তারপর বলেছিলো যে আমাকে বাঁচাতে আসবে সে তাকে মেরে ফেলবে । তোমার জন্য আমার খুব ভয় হচ্ছিলো । আমার কারণে যদি তোমার কিছু হয়ে যায় তাহলে ….
-এখন আর স্বপ্ন দেখো না ?
-দেখি….।

আমি আকাশ থেকে পড়লাম । বললাম, দেখো মানে?
-মানে এখনও সেই কালো অয়বয়টাকে আমি দেখি মাঝে মধ্যে। তবে এখন আর ভয় লাগে না । আমি বুঝে গেছি যে ঐ বেটা আসলে কিছু করতে পারবে না । হিহিহিহি !!

আমিও ওর সাথে হাসলাম বটে তবে মনের ভেতরে সেই অস্বস্তিটা ঠিকই রয়ে গেল । নাইরা যতই বলুক বেটা কোন ক্ষতি করতে পারবে আসলেই কি ক্ষতি করতে পারবে না ?

আমার মনের সন্দেহটা যে এভাবে একদিন সত্যিই হয়ে যাবে সেটা আমি কোন দিন ভাবতেও পারি নি । আরও সপ্তাহ খানেক পরের ঘটনা । ছুটির দিন ছিল । এখন ছুটির দিন গুলো আমরা একেবারে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এক সাথে কাটাই । নানান স্থানে ঘুরে বেড়াই শপিং করি, শপিং করিব বলতে নাইরা করে আমি পেছনে ব্যাগ টানি আরও কত কিছু । কোন দিন ফিরতে রাত হয়ে যায় বেশ । দুজন এক সাথে আছি বলে কোন চিন্তা থাকে না । ঐদিনও তাই হল । বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত একটা বেজে গেল । ততক্ষণে বাসার লিফট বন্ধ হয়ে গেছে । সিড়ি দিয়ে উঠতে হবে । আমি ব্যাগ গুলো নিয়ে সিড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে উঠতে শুরু করলাম । নাইরা আমার থেকে একটু পেছনে ছিল । সিড়িটা মনে হল একটা অন্ধকার । আলো নিভিয়ে দিয়েছে সম্ভবত ।
প্রতি ফ্লোর পার হতে হলে দুই ভাগের সিড়ি উঠতে হয় ! নিচ থেকে একটা ভাগ উঠেছি । এমন সময় আমি পেছন থেকে নাইরার ভয়ার্থ ডাক শুনলাম । ব্যাগ গুলো হাতে নিয়ে কোন মতে পেছনে তাকালাম । তাকিয়ে দেখি নাইরা কেমন বিস্ফারিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । ঠিক সেই সময়েই আমি একটা ধাক্কা অনুভব করলাম । কেউ আমাকে ধাক্কা দিয়েছে ।

তারপর কীভাবে যে আমি হুড়মুড় করে নিচে নামলাম সেটা আমার আর মনে নেই । সিড়ির সাথে মাথা ঠুকে গেল । জ্ঞান হারানোর আগে কেবল নাইরার চিৎকার শুনতে পেলাম আমি । তারপর আমার আর কিছু মনে নেই ।

পরে আমার যখন জ্ঞান ফিরলো তখন তাকিয়ে দেখি আমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে রয়েছি । আমার দিকে উৎদিগ্ন চোখে তাকিয়ে রয়েছে নাইরা । সাথে আরও কয়েকজন রয়েছে ঘরে ।
-এখন কেমন আছো ?
প্রথম প্রশ্নটা নাইরার কাছ থেকেই এল । আমি একটু নড় গিয়ে টের পেলাম ঘাড় আর মাথায় বেশ ব্যাথা অনুভব করছি । তবুও বললাম, ভাল ! কত সময় বেহুস ছিলাম আমি ।
প্রশ্নের উত্তর দিলো পাশে ডাক্তার । সে বলল, প্রায় দুই দিন । আপনি সব কিছু পরিস্কার দেখতে পাচ্ছেন তো ? আর মাথার ভেতরে কি যন্ত্রনা হচ্ছে ?

আমি বললাম, ভেতরে হচ্ছে না । তবে নড়তে গেলে ব্যাথা লাগছে ।
-গুড । ভাল লক্ষ্যন । আর দৃষ্টি ? পরিস্কার ?
আমি চারিপাশে তাকিয়ে দেখলাম । বললাম, হ্যা । পরিস্কার ।
-গুড । তাহলে আর ভয়ের কোন কারণ নেই । আপনি ঠিক হয়ে যাবেন !

আরও সপ্তাহ খানেক আমাকে হাসপাতালে থাকতে হল । এবং সুস্থ হতে আরও মাস খানেক । এই পুরোটা সময় নাইরা একেবারে আমার সাথে ছিল । যখন হাসপাতালে ছিলাম তখন একটা দিনের জন্য সে হাসপাতাল ছেড়ে যায় নি । বাসায় এসেও একটা দিন অফিস যায় নি । সব সময় আমার কী লাগবে, কোনটা প্রয়োজন এসবই ছিল তার চিন্তার প্রধান কারণ । এবং সেই সাথে আরও একটা ব্যাপার সব সময়ই লক্ষ্য করতাম যে নাইরা যেন নিজেকে সব সময় কেমন অপরাধী মনে করছে । যেন আমার এমন অবস্থাটা হয়েছে কেবল ওর কারণে ।

যখন আমি পরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলাম সেদিনই নাইরা আমাকে কথাটা বলল।
-তুমি আজকের পরে আর আমার বাসায় আসবে না । আমার থেকে দুরে দুরে থাকবে ।
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম । তারপর বললাম, মানে কী বলছো এসব ?
-ঠিকই বলছি। তোমার এই অবস্থা হয়েছে কারণ তুমি আমার সাথে ছিলে । না থাকলে এমন কিছুতেই হত না !
-হোয়াট রাবিশ ! কি বলছো এসব ? আমি সিড়িতে পা পিছলে পড়েছি । দুর্ঘটনা !
একটু মিথ্যা বললাম আমি । নাইরা জানে না যে আমিও রাতে ঐ কালো অয়বয়টা দেখেছ। নাইরা বলল, শোন আমি কোন আলোচনাতে যেতে চাচ্ছি না । আমি চলে যেতে বলছি চলে যাবে । ব্যাস !
-আমি যাবো না ।
-অবশ্যই যাবে । আমি কিন্তু পুলিশ ডেকে তোমাকে বাসা থেকে বের করবো । তুমি জানো আমি এটা করবো । সো বলছি বিদায় হও !

আমি নাইরাকে খুব ভাল করেই চিনি । সে সত্যিই আমাকে পুলিশ ডেকেই বিদায় করতে পারে । কোন সন্দেহ নেই তাতে । কিন্তু এখন আমি কি করবো? কিন্তু ও আমাকে চলে যেতে বলছে কেন ? এতোদিন এতো কেয়ার করলো তারপর এখন এইভাবে বের করে দিচ্ছে বাসা থেকে !

ঠিক তখনই আমার নাইরার সেই দিনের কথা মনে পড়লো । ঐ অয়বয়টা ওকে ভয় দেখিয়েছিল যে ওর কাছে যে আসবে তারই ক্ষতি করবে । সো সে ভাবছে যে আমি যদি থাকি তাহলে আমার ক্ষতি হবে !
আমি নিজের ঘরের দিকে হাটতে শুরু করলাম আর ভাবতে লাগলাম কি করে এখানে থাকা যায় ! কিন্তু কোন বুদ্ধি খুজে পেলাম না । বাধ্য হয়ে নিজের ব্যাগ গুছাতে শুরু করলাম । ব্যাগ গুছানো শুরু করে সেটা হাতে নিয়ে হাটতে যাবো তখনই আমার পায়ের আঙ্গুলের সাথে টিটেবিলের ধাক্কা লাগলো । মুখ দিয়ে আপনা আপনিই একটা চিৎকার বের হয়ে এল । তখনই দেখলাম নাইরা একেবারে সাথে সাথেই ঘরে প্রবেশ করলো । আমার কাছে এসে ব্যস্ত হয়ে বলল, কী হল ? মাথা ঘুরছে ?
আমি নিজের পায়ের ব্যাথা পাওয়ার ব্যাপারটা বললাম না । বললাম যে হ্যা কেমন যেন মাথা ঘুরে উঠলো । সম্ভবত ভারী ব্যাগ নিয়ে উঠেছি ! যাক তুমি চিন্তা কর না । আমি বরং আসি !

দেখলাম নাইরা আমাকে জড়িয়ে ধরলো । তারপর বলল, আরও কটা দিন থাকো । তারপর যেও ।
একটু অভিমানের সুরে বললাম, যেতে যখন হবে এখনই যাই ।
নাইরা এবার আমাকে আরও একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, প্লিজ রাগ করো না । আমার সাথে থাকলে তোমার ক্ষতিই হবে । আমি চাইনা আমার কারণে তোমার ক্ষতি হোক !
-আর আমি চলে গেলে যদি আবারও রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে চিৎকার করে ওঠো, তখন ?
-উঠলে উঠবো ! তুমি যখন ছিলে না তখনও তো বেঁচে ছিলাম । নাকি?
-সেটাকে বাঁচা বলে না ।

আমাকে তখনই যেতে হল না বটে । তবে নাইরাকে আমি চিনি । আমাকে যেতে হবেই । তার আগেই আমাকে সমাধান বের করতে হবে । ঐ কালো অয়বয়টাকে দুর করতে হবে । কিন্তু কিভাবে ?

তখনই আমার এক বন্ধুর কথা মনে পড়লো । তারও এমনই একটা সমস্যা হয়েছিলো । আমি সেই বন্ধুকে ফোন দিলাম । সে কিভাবে সমাধান পেয়েছিলো সেটা আগে জানা দরকার !

ঠিক দুইদিন পরের ঘটনা । নাইরা এবার বলেই দিয়েছে যে কালকেই আমাকে চলে যেতে হবে। কোন কথা না আর । রাতে আমি শেষ বারের মত নাইরার ঘরেই চলে এলাম । লাইফ বন্ধ করতে যাবো তখনই নাইরা বলল, আলো বন্ধ কর না । তাহলে …
-তাহলে কি?
নাইরা কিছু যেন বলতে গিয়েও বলতে পারলো না । আমি বললাম, আমি আছি । ভয় নেই ।
নাইরা আর প্রতিবাদ করলো না । আমার বুকের উপরেই মাথা রাখলো । তারপর বলল, আমার উপর রাগ করো না প্লিজ !
-না রাগ করছি না ।
-এখানে থাকলে তোমার ক্ষতি হবে । প্লিজ বিশ্বাস কর ! আবার যদি তোমার কিছু হয় তাহলে আমি নিজেকে কখনও মাফ করতে পারবো না ।
-আচ্ছা বাবা । ঘুমাও । কিছু করতে হবে না ! আমি কাল চলে যাবো ।
দেখলাম আস্তে আস্তে নাইরার নিঃশ্বাস ভারী হচ্ছে । সম্ভবত শেষ বারের মত আমার বুকে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে চাইছে । আমি নিজেও খানিকটা সময় পরে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । ঘুম ভাঙ্গলো আবারও কিছুর একটা শব্দ শুনে । চোখ মেলে আমার চোখ চলে গেল সেই দেওয়ালে ।

হ্যা ! আজও রয়েছে সেই দেওয়ালেই সে রয়েছে !
আজকে কেন জানি সেটাকে দেখে আমার মোটেই ভয় লাগলো না । আমি আমার অন্য হাতে ধরে রাখা ছোট যন্ত্রটার সুইচ টিপে দিলাম । সাথেই সাথেই ক্লিক করে আওয়াজ হল । আমি জানি কি হয়েছে । এবং বুঝতে পারলাম যে ঐ কালো অয়বয়টাও বুঝতে পারলো যে কিছু একটা হয়েছে । সে দ্রুত জানালার দিকে চলে যেতে উদ্ধত হল । এবং জানলা দিয়ে বের হতে গিয়েই ধাক্কা খেল । এতো জোরেই যে জানলার কাঁচ ভেঙ্গে পড়লো ঝনঝন করে । সাথে সাথেই নাইরা জেগে উঠলো । আমি তো উঠে বসলাম !
-কি হল ?
-তোমার নাইটমেয়ারকে ধরেছি ।
-মানে ?
-ঐ দেখো !

নাইরার দিকে তাকিয়ে দেখি সে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে । সেই কালো অয়বয়টা বারবার জানলা দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু একটা অদৃশ্য দেওয়াল যেন তাকে বাঁধা দিচ্ছে । সে বারবার ধাক্কা খাচ্ছে । আমরা দুজনই সেটার গড়গড় আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি । সে বের হতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না । পারবে না আমি জানি । কারন যখন আমি সুইচ টিপে দিয়েছি তখন একটা বোতলের মুখ খুলে গিয়েছে । সেখান থেকে একটা তরল পদার্থ পরে একটা সার্কেল পূর্ন হয়েছে । এই টুকুই ফাঁকা রাখা হয়েছে যাতে এই অশরীরিটা প্রবেশ করতে পারে । তরল পরে সেটা লাইনটা পূর্ন হয়েছে এবং অশরীরিটা আটকা পরেছে ।

এবার অশরীরিটা আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করলো । চিৎকার শুনতে পেলাম সেটার । কিন্তু সেটা আর এগোতে পারলো না । অনুভব করলাম যে আরও একজন ঘরে প্রবেশ করেছে ।
একটা অপরিচিত শব্দ উচ্চরন করলো সে । আমি কেবল দেখলাম একটা আলো ঝলকানী দরজার কাছ থেকে সোজা গিয়ে লাগলো অশরীরির গায়ে । সে এবার দেওয়ালের সাথে গিয়ে ধা্ক্কা খেল । আরেকবার উঠতে চাইলো কিন্তু সেই অপরিচিত আগন্তক সেটার সামনে গিয়ে কি যেন করলো । তারপর পকেট থেকে একটা বোতল বের করে সেটার শরীরে ঢেলে দিতেই সেটা আবারও চিৎকার করে উঠলো । এবার দেখা গেল যে সেটা দৌড়ে গেল জানালার দিকে । এবং এবার আর বাঁধা পেল না । জানালা দিয়ে পালিয়ে গেল ।

এতো সময়ে কি হল সেটা নাইরা কিছুতেই বুঝতে পারছে না । আলো জ্বলে উঠতেই সেই অচেনা মানুষটা আমাদের সামনে এসে দাড়ালো । যদি সে একেবারে অচেনা নয় । আমার সাথে আরেকবার দেখা হয়েছে । তার কথা মতই আমি এই কাজ গুলো করেছি ।
নাইরা বলল, আপনি কে ? এই ঘরে কিভাবে ঢুকলেন?
আগন্তক বলল, চাবি দিয়ে । অপু সাহেব আমাকে চাবিটা দিয়েছে ।
নাইরা আমার দিকে তাকালো । তারপর বলল, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না !
-আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি !
আমি আর নাইরা তার দিকে তাকালাম । মানুষটার বয়স আমার থেকে একটু ছোটই হবে । ২৫/২৬ বয়স হবে হয়তো । মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি । আর সব থেকে লক্ষনীয় হচ্ছে তার চোখ । এতো তীক্ষ্ম যেন মনে হয় ভেতরের সব কিছু সে জেনে ফেলেছে । সে বলল, আপনাকে কেউ ব্লক ম্যাজিক করেছে । সম্ভবত আপনার পরিচিত কেউ ।
নাইরা বলল, মানে ?
-হ্যা । যে অশরীরিটা আপনার পেছনে পাঠানো হয়েছে সেটা এমনি এমনি কারো সাথে যুক্ত হতে পারে না । এরজন্য ভিক্টিমের শরীরের কিছু অংশ লাগে । তবে যাই হোক এখন সমস্যা সমাধান হয়েছে । সে আর আপনার কাছে আসতে পারবে না । এই দেখুন।
এই বলে আগন্তক হাতের ভেতরে একটা কালো কাগজ দেখালো । সেখানে কয়েকটা চুল রয়েছে । সাথে এক টুকরো নখ !
আগন্তুক বলল, এই চুল আর নখ আপনার ! যেটা দিয়ে ঐটা আপনার সাথে কানেক্টেড ছিল । এখন আর নেই ।
নাইরা বলল, তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন আমি আর কখন দুঃস্বপ্ন দেখবো না ।
-দুঃস্বপ্ন দেখবেন না সেটা গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি না । স্বপ্ন সবাই দেখে । তবে ঐ অশরীরির আপনাকে নিয়মিত ভাবে যে দুঃস্বপ্ন দেখাচ্ছিলো সেটা আর দেখবেন না । এবং সে আপনাদের আর কোন ক্ষতিও করতে পারবে না । তবে …..

নাইরা বলল, তবে?
-তবে যে তাকে আপনার পেছনে লাগিয়েছিলো তার কোন একটা ক্ষতি হবে । কারণ এই ব্লাক ম্যজিক করার সময় আপনার চুল আর নখ যেমন দেওয়া হয়েছিলো সেই মানুষও নিজের কিছু অংশ যুক্ত করেছিলো । আপনারটা তো আমি নিয়ে নিলাম কিন্তু তার কাছে এখনও ঐ মানুষটার অংশ গুলো রয়েছে ।

আগন্তক চলে যাওয়ার আগে নাইরা তাকে টাকা সাঁধলো । আমিও সেধেছিলাম তবে সে নেয় নি । সে বলেছিলো যে এই কাজ গুলো সে এমনিই করে । দরজা বন্ধ করে আমি নাইরাকে বলল, চল ঘুমানো যাক । আর ভয় নেই । আমাকে আবার কাল চলে যেতে হবে !
নাইরা এবার আমার কাছে এসে আমাকে আরেকবার জড়িয়ে ধরলো । তারপর বলল, তোমাকে কোথাও যেতে দিবো না । কোথাও না ! বুঝেছো?
-বুঝলাম !
-আচ্ছা ঐ মানুষটার নাম কী?
-নাম তো জানি না । জানতে চাই নি ।
-আশ্চর্য আমাদের এতো বড় উপকার করলো নাম জানতে চাইবে না ?
-আচ্ছা বাবা আচ্ছা । আমি মিশুর কাছ থেকে জেনে বলবো !
-এই মিশুটা আবার কে?
-আরে আমার বন্ধু । ভার্সিটিতে পড়েছি এক সাথে । ওর বড়বোনের একবার এই রকম সমস্যা হয়েছিলো । তখন ইনিই সাহায্য করেছিলো ।

পরিশিষ্টঃ

নাইরাকে বিয়ে করে যখন হানিমুন থেকে ফিরে এলাম তখন সংবাদটা কানে গেল আমাদের । নাইরার সৎমা মারা গেছে । নাইরার সেই সৎবোনটার এসেছিলো আমাদের বাসায় । মৃত্যুর আগে নাকি নাইরার সৎমা খুব চিৎকার চেঁচামিচি করতো ভয়ে । আর বারবার নাইরার কাছে আসতে চাইতো । কিন্তু আমরা হানিমুনে থাকার কারণে আসতে পারে নি ।
আমি নাইরার দিকে তাকিয়ে দেখি সে স্বাভাবিক ভাবে তার সৎবোনের দিকে তাকিয়ে আছে । আমার মনে এতোদিন যে কৌতুহলটা ছিল সেটা মিলে গেল । নাইরাও সম্ভবত বুঝতে পেরেছে । তবে সে কিছুই বলল না । বরং বলল যে যে কোন দরকারেই যেন নাইরাকে ডাক দেয় । সে তার বোন এটা যেন মনে রাখে সে ।

এই গল্পটা আমি মূলত একটি কোরিয়ান ড্রামা “ইটস ওকে নট টু বি ওকে” এর একটা দৃশ্য থেকে অনুপ্রাণীত হয়ে লিখেছি ।  

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 65

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

One Comment on “দুঃস্বপ্ন সত্যি হয় না”

  1. আমিও koo moon young এর ঐ ভাইব টা ফিল করেছি তারপর শেষে দেখলাম আপনি ওটা থেকেই অনুপ্রাণিত।

Comments are closed.