মাহদিয়ার গল্প

oputanvir
4.7
(85)

প্রতিটি ক্লাসেই এমন একজন মেয়ে থাকে যাকে ক্লাসের প্রাণ বলা যায় । ক্লাসের প্রতিটি ছেলে সেই মেয়েটিকে গোপনে পছন্দ করে, তার সাথে কথা বলতে চায়, তার সাথে বন্ধুত্ব প্রেম করতে চায় । কেবল ক্লাসেরই না, কিছু এমন থাকে যে পুরো ডিপার্টমেন্টের সবাই সেই মেয়েকে চিনে । বড় ভাইয়েরা সেই মেয়ের পিছনে লেগে থাকে আবার জুনিয়র ব্যাচের ছেলেরাও ঘুরঘুর করে । মাহদিয়া ছিল ঠিক তেমনই একজন । একটা মেয়েকে যে যে ভাবে মানুষ পছন্দ করতে পারে তার সব গুণই যেন ঠেসে ঠেসে ভরা ছিল ওর ভেতরে ।

দেখতে যেমন সুন্দরী তেমনি বড়লোক বাবার মেয়ে । কেবল এই দুই বৈশিষ্টই থাকা যথেষ্ট একটা মেয়ের জনপ্রিয় হওয়ার জন্য । এছাড়াও মাহদিয়া চমৎকার গান গাইতে পারতো, নাচতে পারতো সবার সাথে মিশতেও পারতো । যে কোন কাজে সবার আগে তার আগ্রহ ছিল সব চেয়ে বেশি । বছর খানের ভেতরেই মাহদিয়ার জনপ্রিয়তা পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগলো না । এমন একজন মেয়ের সাথে আমার মত সাধারণ একটা ছেলের প্রেম হওয়াটা ছিল একেবারে অসম্ভব একটা ব্যাপার । এটা আমি খুব ভাল করেই জানতাম । কিন্তু তারপরেও প্রেম হয়ে গেল ।

কেন হল সেটা আজও আমার কাছে খানিকটা রহস্য । মাহদিয়া আমাকে যে কারণটা বলেছিলো সেটাই যদি কারণ হয়ে থাকে তাহলে ক্লাসে আমার মত আরও গোটা বিশেক ছেলে ছিল । তাদের বাদ দিয়ে আমার সাথেই কেন !
আই মিন আমি দেখতে শুনতে আহামরি সুদর্শন না মোটেও । আমার বাপের অঢেল টাকা পয়সা নেই । এমন কি আমি পড়াশুনাতেও খুব বেশি ভাল না । পড়াশুনাতে খুব ভাল হলে মাহদিয়ার সাথে প্রেমটা হওয়ার একটা কারণ বোঝা যেত । তাহলে এই মেয়ে আমার সাথে প্রেম কেন করবে?

ক্যাম্পাসের প্রথম তিনটা বছর মাহদিয়ার সাথে আমার একটা কথাও হল না । আমি সাহস করে কোন দিন মাহদিয়ার সাথে কথাই বলতে পারলাম না । সেকেন্ড ইয়ারে থাকতে মাহদিয়া ওর জন্মদিনের দিন সবাইকে নিজ হাতে চকলেট দিয়েছিলো । সেই চকলেট দেওয়ার সময় ও আমার মুখোমুখি এসেছিলো । বলা চলে এই ছিল প্রথম ওর কাছাকাছি আসা ।
তিন বছরের মাথায় প্রথম মাহদিয়ার সাথে কথা হল আমার । সেদিন সকাল বেলা কোন ক্লাস ছিল না । কদিন পরে ফাইনাল পরীক্ষা হওয়ার কথা । সবাই বাসা, হল থেকে পড়া শোনায় ব্যস্ত । আমি ক্যাম্পাসে এসেছি কারন আমার একটা মিডটার্ম পরীক্ষা দেওয়া হয় নি । সেটা দেওয়ার জন্যই হাজির হয়েছি । যখন পরীক্ষার জন্য ঢুকেছি তখন দেখি মাহদিয়াও বসে রয়েছে । সেও কোন কারণে পরীক্ষা মিস করেছিলো । স্যার প্রশ্ন দিয়ে চলে গেল । মাহদিয়া সেদিনই প্রথমে আমার পাশে এসে বসলো । আমার কাছ থেকে টুকটাক সাহায্য নিয়ে লিখতে শুরু করলো । পরীক্ষা শেষে ক্যান্টিন থেকে আাকে সিঙ্গারাও খাওয়ালো । টুকটাক কথাও হল এবং সব থেকে বড় কথা ওর গাড়িতে লিফটও দিল আমাকে ।

আমার মনে আছে সেদিন আমি সারারাত একটুও ঘুমাতে পারি নি । মনের ভেতরে যে কী একটা আনন্দ হচ্ছিলো সেটা ভাষার প্রকাশ করার কোন উপায় নেই । ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল । ফোর্থ ইয়ারে উঠেই মাহদিয়ার সাথে আমার কথা বার্তা শুরু হল । এবং সেটা আমার চেষ্টায় নয় । মাহদিয়ার চেষ্টায় । মেয়েটা কেন হঠাৎ করে আমার প্রতি এতো আগ্রহী হয়ে উঠলো কেন সেটার কোন ব্যাখ্যা আমার কাছে ছিল না । একদিন ক্যাম্পাস থেকে বাসায় যাচ্ছিলাম । বাসের জন্য অপেক্ষা করছি এমন সময়ে দেখলাম মাহদিয়ার গাড়িটা আমার সামনে এসে থামলো । কাঁচ নামিয়ে মুখটা বের করলো সে । তারপর বলল, অপু উঠে এসো ।
আমার একবার মনে হল যে বলি আমার টিউশনী আছে তবে সেটা বললাম না । চুপচাপ উঠে পড়লাম ।

গাড়ি চলল বেশ কিছু সময় । মাহদিয়ার মুখ একটু যেন গম্ভীর ছিল । আমি আজকে ক্লাসে লক্ষ্য করেছিলাম যে ও কোন কারণে চুপ করে আছে । কি সেই কারণ সেটা অবশ্য বুঝতে পারি নি । আমি কিছু বলতে গিয়েও বলতে সাহস পেলাম না ।

আমরা গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম একটা সময়ে । একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম । সেখানেও ও চুপচাপ হয়েই বসে রইলো কিছু সময় । হঠাৎ এক সময়ে মাহদিয়া বলল, তোমার গার্লফ্রেন্ড নেই তো ?
-এ্যা !

আমি অন্তত এই প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না । বললাম, মানে ! কী বললে?
-বললাম তোমার কারো সাথে প্রেম নেই তো? কাউকে প্রমিস কিংবা কমিটমেন্ট কর নি তো?
-না !
-গুড । শুনো আমাকে তোমার কেমন লাগে?
আমার বুকের ভেতরে একটা ঝড় শুরু হল সাথে সাথে । মাহদিয়া কি বলছে আর কেনই বা বলছে ! আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না । এমন কথা কেন বলছে সে ।
আমার জবাবের অপেক্ষা না করে মাহদিয়া বলল, শোন আজ থেকে আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড !

আমি তখনও অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছি ওর দিকে । এই মেয়ে কী বলছে ! মাথা ঠিক আছে তো এই মেয়ের !
আমি কোন মতে বললাম, তুমি কি সিরিয়াস?
-হ্যা ।
-সত্যিই সিরিয়াস ?
-হুম ।

সেখান থেকেই আমাদের প্রেম শুরু হল । আমি ভেবেছিলাম মাহদিয়া বুঝি ব্যাপারটা লুকিয়ে রাখবে । তবে দুইদিন পরে সে ফেসবুকে রিলেশনশীপ স্টাটাস দিয়ে দিল প্রাইভেসি পাবলিক করে । খবর রাষ্ট্র হতে সময় লাগলো না । রাতের ভেতরে সবাই জেনে গেল যে আমি মাহদিয়ার বয়ফ্রেন্ড । আমি একেবারে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেলাম । পরদিন যখন ক্লাসে গিয়ে হাজির হলাম সবাই দেখি কেমন চোখে আমার দিকে তাকাতে লাগলো । মাঝে মধ্যে কেউ কেউ টিটকারিও মারলো বটে ।

তবে মাহদিয়া এসবের ধার দিয়ে গেল না । আমাদের প্রেম শুরু হল । একটা ব্যাপার আমি সব সময় লক্ষ্য করলাম যে মাহদিয়ার ভেতরে আমার সাথে প্রেমের ব্যাপারটা সবাইকে জানানোর একটা প্রবণতা ছিল । আরও ভাল করে বললে আমার মনে হতে লাগলো যে ও হয়তো সত্যিই কাউকে দেখাতে চাইতো যে দেখো আমি প্রেম করছি । এটাই এক মাত্র কারণ মনে হয়েছিলো । আমার মত ছেলের সাথে ওর প্রেম করার কথা না মোটেও । আমি অবশ্য এতেও খুশি ছিলাম । কারণ মাহদিয়া যে কারণেই আমার সাথে প্রেম করুক কিংবা প্রেমের ভান করুক আমি তো ওর সাথে সময় কাটানোর সুযোগ পাচ্ছিলাম । এটাই আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার ছিল ।
একটা লাভ কিন্তু ঠিকই হয়েছিলো । মাহদিয়ার কারণে আমার পোশাক পরিচ্ছেদ আর চাল চলনে দারুন পরবর্তন আসলো । ওর কারণেই জিমে যাওয়া শুরু করলাম । স্টাইলিস পোশাক পরা শুরু করলাম । সব কিছু বেশ চমৎকারই যাচ্ছিলো । তবে একদিন শেষ হল সব কিছু । আমি নিজেও জানতাম যে একদিন শেষ হবে ।

অনার্সের শেষ পরীক্ষার দিন । পরীক্ষা করে মাহদিয়ার সাথে গল্প করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেল । বাসায় যাওয়ার জন্য উঠতে যাবো তখন মাহদিয়া আমাকে থামালো । বলল যে ওর সাথে আজকে গাড়ি নেই । আমি ওকে বাড়ি পর্যন্ত পৌছে দেই । মাহদিয়া আর আমার বাড়ি আসলে দুই দিকে ছিল । এমনটা ও আগে কোন আমাকে অনুরোধ করে নি । আজকে কেন করলো বুঝলাম না । তবে আমার কোন সমস্যা ছিল না । রিক্সা নিতে গিয়ে ওর বাসার ঠিকানা বলতে যাবো তখনই বলল, নয়ের এ না সাতাশ নম্বর পর্যন্ত রিক্সা নাও ।
আমি আবারও একটু অবাক হলাম । মাহদিয়াদের বাসা ধানমণ্ডি নয়ের এ । আজকে আবার ২৭ নম্বর কেন ! বেশি প্রশ্ন করলাম না ।

রিক্সা যখন ২৭ নম্বর থামলো তখন প্রায় নয়টা বেজে গেছে । আজকে রাস্তায় খুব বেশি জ্যাম ছিল । আমার ইচ্ছে ছিল ওকে নামিয়ে দিয়েই আমি ফিরে যাবো কিন্তু সেটা হল না । মাহদিয়া বলল, আজকে আর রুমে ফিরে কাজ নেই । এসো আমার সাথে ।
-কোথায়?
-এসো তো ।

আমাকে খানিকটা টেনেই নিয়ে এল । একটা বড় এপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের ভেতরে নিয়ে গেল । দশ তলার একটা ফ্ল্যাটের সামনে দাড়িয়ে চাবি দিয়ে দরজা খুলল । আমি সত্যিই কিছু বুঝতে পারছিলাম না । ঘরে ঢুকে ও আমাকে ফ্রেশ হয়ে নিতে বলল। ফ্রিজ থেকে খাবার গরম করলো । এটা কার বাসা জিজ্ঞেস করতেই বলল যে এটা ওর ছোট মামার বাসা । মামা মামি মাস খানেকের জন্য দেশের বাইরে গেছে । মাহদিয়ার দায়িত্ব পড়েছে মাঝে মধ্যে এখানে এসে থাকার । আজকে এখানেই থাকবে সে । এবং আমাকেও থাকতে হবে !

রাতে খাওয়া শেষ করে আর কিছু সময় গল্প করলাম । বুকের ভেতরে একটা ঢিপঢিপানি চলছেই । আমাদের ভেতরে প্রেম এতোদিন চললেও আমি কোন দিন ওর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করি নি । সত্য বলতে সাহসই হয় নি । হাত ধরেই সন্তুষ্ট আমি । অবশ্য মাঝে মধ্য মাহদিয়া আমার গালে চুমু খেয়েছে । এই পর্যন্তই ।

রাতে ঘুমানোর সময় মাহদিয়া খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমার সাথে ঘুমাতে এল । আমি আসলে লজ্জা পাচ্ছিলাম । মাহদিয়াও লজ্জা পাচ্ছিলো । লজ্জা কাটতে একটু সময় লাগলেও কেটে গেল এক সময়ে । তারপরেই আমাদের আদিম খেলা শুরু হল । সকল ভয় আর সংকোচ কেটে যেতেই আমরা দুজনেই যেন আরও সাহসী হয়ে উঠলাম ।
দুজনের শরীর থেকে পোশাক খুলে ফেলে দিলাম সব । আলো বন্ধ করলাম না । পরিস্কার আলোতে দুজন দুজনকে দেখতে পাচ্ছিলাম পরিস্কার । আমার কেবল মনে আছে ওর শরীরের এমন কোন স্থান নেই যেখানে আমি সেদিন চুমু খাই নি । এরপর মাহাদিয়া আরেকটা কাজ করল । ড্রায়ার থেকে লম্বা সক্স আর গ্লোভর বের করে সেগুলো পরল । মোবাইল বের করেই আমাকে বলল ওর কয়েকটা ছবি তুলে দিতে। সত্যি বলতে কী ওকে একেবারে প্রাপ্তবয়স্ক ছবির নায়িকাদের মত মনে হচ্ছিল। আমার দিকে এগিয়ে আবার । আবারও আমাদের আদিম খেলা শুরু হল। এতোটা উত্তেজিত আমি কোন দিন হয়েছি বলে মনে পড়ল না।

একটা সময়ে দুজনেই ক্লান্ত স্রান্ত হয়ে শুয়ে পড়লাম একে অন্যকে জড়িয়ে ।

সকাল বেলা আমার আগেই মাহদিয়ার ঘুম ভেঙ্গেছিলো । আমি একটু দেরি করেই বিছানা থেকে উঠেছিলাম । শুয়ে শুয়ে কেবল রাতের কথাই ভাবছিলাম । অন্য কিছু আমার মনে আর আসছিলো না । সকালে নাস্তা খাওয়ার পরে যখন বের হতে যাবো তখন মাহদিয়া আমার হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিল । বলল, এটা বাসায় গিয়ে পড়বে । কেমন !
-কি আছে এতে?
-পড়লেই বুঝবে ।

ওর কন্ঠস্বরে কিছু একটা ছিল যেটা আমার কেন জানি ভাল লাগলো না । আমি দরজা দিয়ে বের হতে যাবো তার আগে হঠাৎ মাহদিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে । তারপর আমার ঠোঁটে গভীর ভাবে চুমু খেল ।

বাসায় আসা পর্যন্ত আমার তর সইলো না । রাস্তায় নেমে আমি খাম খুলে ফেললাম । কয়েক লাইনের চিঠি । মাহদিয়া লিখেছে,

অপু, তুমি বুদ্ধিমান ছেলে । নিশ্চয়ই এতোদিনে ঠিকই টের পেয়েছিলে যে একজনের উপর জেদ করে আমি তোমার সাথে সম্পর্ক করেছিলাম । একজনকে জ্বালানোর জন্য । আমার মনে হয় আমাদের সম্পর্কটা আর এগিয়ে না নেওয়াই ভাল । আমি মাস্টার্স বাইরে থেকে করবো । আর হয়তো আমাদের দেখা হবে না । একটা অনুরোধ থাকবে তুমি আমার সাথে আর দেখা করার চেষ্টা করো না প্লিজ । আমি তাহলে খুব বেশি গিল্টি ফিল করবো । আমি জানি কাজটা আমি ঠিক করি নি । আমাকে পারলে ক্ষমা করে দিও ।

পুনশ্চঃ আমি জানি আমিই তোমার জীবনে প্রথম মেয়ে যার সাথে তুমি সেক্স করেছো । তুমিও আমার জীবনে প্রথম ছেলে । গতকালই আমার প্রথম ছিল ।

চিঠিটা পড়ে কিছু সময় আমি ফুটপাঠের উপরেই বসে রইলাম । খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো তখনই দৌড়ে চলে যাই ওর ফ্ল্যাটে । কিন্তু গেলাম না । আমি আগেই এমন কিছু আচ করতে পেরেছিলাম । এটাই তো স্বাভাবিক । নয়তো ওর মত মেয়ের আমার সাথে প্রেম করার কোন কারণ ছিল না । আর গতরাতের ব্যাপারটা সম্ভবত ক্ষতিপূরন ছিল । ও যা করেছে নিজের গিল্টি ফিলিং থেকে করেছে । আমি বেশ কিছু সময় ফুটপাথের উপরেই বসে রইলাম । চোখ দিয়ে কেন জানি পানি বের হয়ে গেল । মাহদিয়া কোন দিন আমার ছিল না তারপরেও ওকে হারানোর কষ্টটা আমি যেন তীব্র ভাবে অনুভব করছিলাম । একটা সময় উঠে দাড়ালাম । বিল্ডিংয়ের দিকে তাকাতেই মাহদিয়াকে দেখতে পেলাম । বারান্দায় দাড়িয়ে রয়েছে । আমার দিকে তাকিয়ে ।

আমি হাত নাড়লাম কেবল । বিদায় দিয়ে দিলাম শেষ বারের মত ।

দুই

দিহানের পেছন পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে বাসার সামনে দিকে চলে এলাম । ও চিৎকার করে হাসছে আর দৌড়াচ্ছে । আমি ওকে ধরার জন্য ওর পেছনেই দৌড় দিলাম । দিহান বারান্দা দিয়ে নেমেই সামনের লনের দিকে দৌড় দিল। আমি জানি ওর লক্ষ্য হচ্ছে বাসার গেট । গেট খুলতে পারলেই রাস্তায় দৌড় দিবে । আমি ওকে থামানোর জন্য বারান্দা দিয়ে নেমে লনে আসতেই থেমে গেলাম । আমার চোখ গিয়েছে গেটের দিকে । সেখানে একজন দাড়িয়ে রয়েছে ।
মাহদিয়া দাড়িয়ে রয়েছে । আমার সাথে চোখাচোখী হতেই হাসলো ! ওর চোখে একটু বিব্রত ভাবটা আমি পরিস্কার দেখতে পেলাম । গেট খুলে ঢুকতেই দিহান ওর সামনে গিয়ে দাড়ালো । আমি কিছু বলার আগেই মাহদিয়া দিহানকে কোলে তুলে নিলো । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কেমন আছো অপু?
আমি প্রথমে কিছু সময় যেন কথাই বলতে পারলাম না । কেবল এক ভাবে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে । ও বলেছিলো যেন কোনদিন ওর সামনে না যাই, আর কোন দিন যাই ও নি । তাই ভেবেছিলাম হয়তো আর কোন দিন দেখাও হবে না আমাদের । নিজেকে কোন মতে সামলে নিয়ে বললাম, তুমি কেমন আছো?
অনুভব করলাম ওর জন্য দাবিয়ে রাখা সেই আবেগগুলো আবার কেমন যেন বের হয়ে আসছে । আমি কিছুতেই নিয়ন্ত্রন করতে পারছি না সেটা । খুব ইচ্ছে করলো ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরি, চুমু খাই । কিন্তু চাইলেই কি করতে পারি এসব ?

-মাহদিয়া !
আওয়াজটা এল গেটের পেছন থেকে । মাহদিয়া পেছনে ঘুরে তাকালো । আমিও তাকালাম । দেখলাম একজন সুদর্শন ছেলে গেটের কাছে এসে দাড়িয়েছে ।
-তুমি এখানে ? তোমাকে খুজে বেড়াচ্ছি ।
-আদনান । এসো !
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আদনান হচ্ছে আমার মুভির হিরো । এখানে এসেছি স্যুটিং এ ।
আমি বললাম, ও আচ্ছা ম্যানেজার স্যার বলেছিলো একটা গ্রুপ আসবে । তোমরাই ?
-হুম ।
তারপর হিরো সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল, আদনান ও হচ্ছে অপু । আমার ভার্সিটির বন্ধু । এখানকার এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার !

আমি একটু অবাক হলাম । আমি এখানে চাকরি করি এটা মাহদিয়া জানে ! কিভাবে?
মাহদিয়া দেশে ফিরে অভিনয়ের দিকে গিয়েছে সেটা আমি জানি । তবে আমি যতদুর চেষ্টা করেছি ওর খোজ খবর না রাখতে । তাই এতো দুরে চলে এসেছি যাতে কোন প্রকার খবর আমার কাছে না আসে । তারপরেও কিছু কিছু খবর ঠিকই চলে আসে চোখের সামনে ।

আদনান সাহেব আমাকে খুব একটা পাত্তা দিলেন না । মাহদিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, চল এখান থেকে । কত কাজ পড়ে আছে জানো?
মাহদিয়া বলল, আমার আজকে আর কোন শট নেই তো ।
-তো কি হয়েছে ? তুমি স্পটে না থাকলে স্যুটিং ভাল হবে নাকি ?
মাহদিয়া বলল, আদনান তুমি বরং স্পটে ফিরে যাও । আর আদিব ভাইকে বলবে যেন আমার জন্য অপেক্ষা না করে । আমি আজকে এখানে থাকবো ।
আদনান সাহেব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো । সম্ভবত তার মুভির নায়িকা তাকে পাত্তা না দিয়ে আমার এখানে থাকতে চাইছে এটা তার বিশ্বাস হচ্ছে না ।
আদনান সাহেব বলল, এখানে ? কেন ?
এবার মাহদিয়া ঘুরলো আদনানের দিকে । তারপর শান্ত কন্ঠে বলল, আদনান। আমার আর শট নেই। আমার স্পটে যাওয়াটা মেন্ডাটরি না । আমি এমনিতেও হোটেলে ফিরে যেতাম । অপু এখানে চাকরি করে জেনে এখানে এসেছি । কতদিন পরে পুরানো বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছে তোমার হিসাব আছে ! তোমার কাল সকালে দেখা হবে । তুমি আপাতত চলে যাও। কাল কথা হবে।

এই বলে মাহদিয়া আমার দিকে এগিয়ে এল । দিহানকে কোলে নিয়েই আমাকে পাশ কাটিয়ে বাড়ির বারান্দায় উঠে গেল । আমি কিছু সময় নায়ক সাহেবের দিকে তাকিয়ে থেকে বাড়ির ভেতরে ঢুকলাম ।

দিহান বেশি রাত জাগতে পারে না । আটটার ভেতরেই ঘুমিয়ে পড়ে । ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে বারান্দা এসে বসলাম । কাজের লোকটা কফি দিয়ে গেল । দুজন পাশাপাশি বেশ কিছু সময় বসে রইলাম কেবল । হঠাৎ মাহদিয়া বলল, তুমি আমাকে এখনও ক্ষমা করো নি । তাইনা ?
-ক্ষমা ! ক্ষমার প্রশ্ন কেন আসছে?
-তাহলে বিয়ে করো নি?
-বিয়ে করি নি কিভাবে বুঝলে? দিহান তো আমাকে বাবা ডাকে।
মাহদিয়া হাসলো । তারপর বলল, বিয়ে করলে তোমার বউ থাকতো এখানে নয়তো তার ছবি থাকতো । তোমাদের এক সাথে কোন ছবিই নেই । আর সব থেকে বড় কথা তুমি বিয়ে করলে আমি খোজ পেতাম ।

আমি অনেক টা সময় চুপ থেকে বললাম, মাহদিয়া, তোমার উপরে আমার কোন রাগ নেই । আমার এই জীবনে বলতে পারো ইউ আর দ্য বেস্ট থিংঙ্ক হ্যাপেন্ড টু মি । ঐ সময়টা, ঐ রাত এগুলো জীবনের সেরা সময় ! এর জন্য তোমার কাছে সব সময়ই কৃতজ্ঞ আমি ।
অন্ধকারের ভেতরেও মাহদিয়া আমার দিকে তাকিয়ে রইলো জ্বলজ্বল চোখে । তার পরেই একপ্রকার ঝাপিয়ে পড়ে চুমু খেতে শুরু করলো আমাকে !

এটার জন্য অন্তত আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না । এই মেয়েটা এমন কেন করছে ?

কত সময় ধরে চুমু খেলাম আমি জানি না । একটা সময়ে মাহদিয়া শান্ত হল । তারপর বলল এসো ।
-মাহদিয়া !!
-না । অনেকটা সময় আমি অপেক্ষা করেছি । আর না !
-মানে?
-কোন মানে জানতে চেয়ো না প্লিজ । কেবল এসো !
আমি ওকে থামালাম । বললাম, কাজের লোকটা চলে যাক । তারপর ।
আমার এখানে বলা উচিৎ ছিল যে না । আর না যেখানে ওর কথাতেই আমি রাজি হচ্ছি । কেন হচ্ছি আমি? আমি ওর মোহ থেকে কোন দিন বের হতে পারি নি, এটার পেছনে একটা বড় কারণ ছিল সেদিন রাতের ওর সেক্স করা । সেটা যদি না হত তাহলে হয়তো আরো সহজ হত ওকে ভুলে থাকা । আজকে যদি আবারও একই কাজ হয় তাহলে আর হয়তো বেরই হতে পারবোনা ।

কাজের মানুষটা খাবার টেবিলে সাজিয়ে চলে গেল । মাহদিয়া আমাকে খাওয়ার ভেতরে যেতেই দিলো না । সোজা টেনে নিয়ে গেল বেড রুমের দিকে । আমার কেবল মনে আছে যে কাপড় খোলার আগে আমরা আধা ঘন্টা ধরে কেবল একে অন্যকে চুমুই খেলাম । মনে হল যেন আমাকে চুমু খাওয়ার জন্য মাহদিয়া এতো দিন ধরে মুকিয়ে ছিল । তারপর আমাদের দুজনের মাঝে কি যে হত সেটার সঠিক বর্ণনা আমরা কেউ দিতে পারবো না ।

মাঝ রাতের দিকে মাহদিয়াকে নিয়ে শোবার ঘরের বারান্দায় বসলাম । আমাদের শরীরে কেবল একটা কম্বল জড়ানো । আর কিছু নেই । মাহদিয়া বলল, ঐদিনের কথা মনে আছে কি যখন তুমি চলে যাচ্ছিলে হাত নাড়লে?
-হুম মনে আছে ।
-তোমার চোখে পানি আমি স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিলাম । প্রথমে ভেবেছিলাম বুঝি কিছু না কিন্তু ইংল্যান্ড গিয়ে আমি বুঝতে পারলাম যে তোমাকে আমি কিছুতেই মাথা থেকে বের করতে পারছি না । কিছুতেই না ।
-তারপর?
-কিন্তু নিজেই আসতে পারি নি । বারবার কেবল মনে হয়েছে এতো স্বার্থপর কেন আমি প্রতিবারই নিজের দরকারে তোমাকে ব্যবহার করছি ! আমি দেশে এসে তোমার খোজ করেছিলাম । খোজ পেয়েছিলাম । তুমি হয়তো জেনে অবাক হবে যে এর আগে তোমার এই বাগানে দুইবার এসেছি আমি । কিন্তু তোমার সাথে দেখা করার সাহস পাই নি । দিহান যখন একদম ছোট ছিল তখন একবার এসেছিলাম । বোরকা পরে এসেছিলাম । দুর থেকে দেখেছিলাম । ওকে আদর করতে দেখে ভেবেছিলাম বুঝি তুমি বিয়ে করে ফেলেছো । কি যে কষ্ট লাগছিলো ! বারবার কেবল মনে হচ্ছিলো আমার কাছ থেকে কি যেন হারিয়ে গেছে ।
আমি মাহদিয়ার কথা শুনে যাচ্ছিলাম অবাক হয়ে । মাহদিয়া বলল, তারপর কি যেন মনে হল যে তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারো না । খোজ নিয়ে জানলাম দিহানকে তুমি দত্তক নিয়েছো । আজও হয়তো গেট থেকেই চলে যেতাম যদি ওভাবে তুমি বের না হয়ে আসতে।

মাহদিয়া সকাল বেলা চলে গেল বটে তবে বিকেল বেলা ঠিক একই ভাবে ফিরে এল । দিহানকে খুব করে আদর করলো । এভাবেই সাতদিন চলল । প্রতিদিন কাজ শেষ করে এখানে আসতো, আমার আর দিহানের সাথে সময় কাতাতো । দিহান ওকে খুব ভাল করে চিনে ফেলল এই কদিনেই ।
শেষ দিন চলে যাওয়ার সময় আমি নিজেই হাজির হয়েছিলাম ওদের স্পটে । সব প্যাক করে ওরা যখন রওয়ানা দিবে তখন আমি বললাম, এইবার আবার কোন খাম দিবে না তো ! বলবে না তো আর দেখা না করতে ?
আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে মাহদিয়া একটা কাজ করলো । আমাদের দিকে সবাই তাকিয়ে ছিল । বিশেষ করে ততদিনে ওদের স্যুটিংয়ের সবাই জেনে গেছে যে মাহদিয়া আমার পরিচিত । কিন্তু আজকের পরে ওদের সেই ভুল বুঝি ভেঙ্গে যাব । সবার সামনেই ও আমার ঠোঁটে চুমু খেল। তারপর একটু হেসে বলল, এই যে সিল মেরে দিলাম । এখন আমি চাইলেও তোমার থেকে দুরে যেতে পারবো না ।
মাহদিয়া কেন এই কথা বলল সেটা বুঝতে কষ্ট হল না । স্যুটিং স্পটে সব সময়ই সাংবাদিক ঘুরঘুর করে । আজও হয়তো আছে । আমাকে চুমু খাওয়ার দৃশ্য সবাই দেখেছে । এই নিয়ে সংবাদ ঠিকই ছেপে দিবে তারা !

পরিশিষ্টঃ

সেই ক্যাম্পাসের দিন গুলোর কথা মনে পড়ে গেল । আমি যেমন রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিলাম, মাহদিয়ার কারণে ঠিক তেমন এবারও রাতারাতি পরিচিত হয়ে গেলাম সেই মাহদিয়ার কারণেই । কয়েকটা পত্রিকায় ঐদিনের মাহদিয়ার চুমু খাওয়ার ছবিও প্রকাশ হয়ে গেল । মাহদিয়া অবশ্য কিছু রাগঢাক করলো না । বলেই দিল যে সেই ক্যাম্পাস লাইফ থেকে আমার সাথে তার প্রেম চলছে । এতোদিন গোপন রেখেছে আর না । খুব জলদিই আমরা বিয়ে করছি !

এই হচ্ছে আমার আর মাহদিয়ার গল্প।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 85

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

5 Comments on “মাহদিয়ার গল্প”

  1. Bai aro komaiya den .ak line e oneak kico bojano jai .je 18+ beshi chay o choti porok.obosso manos akhon choti e like kore . wattpad e treading e #1 e choti golpo gola akhon pawa jai ja last year ba tar age celo na

  2. অপু ভাই, চমৎকার ছিল !

  3. মাহদিয়া কাকে রাগাতে অপুর সাথে প্রেম করেছিলো এবং পরে তার কি হলো এসব কিছুই পরিষ্কার করলেন না!!

Comments are closed.