মাহদিয়ার গল্প

4.7
(82)

প্রতিটি ক্লাসেই এমন একজন মেয়ে থাকে যাকে ক্লাসের প্রাণ বলা যায় । ক্লাসের প্রতিটি ছেলে সেই মেয়েটিকে গোপনে পছন্দ করে, তার সাথে কথা বলতে চায়, তার সাথে বন্ধুত্ব প্রেম করতে চায় । কেবল ক্লাসেরই না, কিছু এমন থাকে যে পুরো ডিপার্টমেন্টের সবাই সেই মেয়েকে চিনে । বড় ভাইয়েরা সেই মেয়ের পিছনে লেগে থাকে আবার জুনিয়র ব্যাচের ছেলেরাও ঘুরঘুর করে । মাহদিয়া ছিল ঠিক তেমনই একজন । একটা মেয়েকে যে যে ভাবে মানুষ পছন্দ করতে পারে তার সব গুণই যেন ঠেসে ঠেসে ভরা ছিল ওর ভেতরে ।

দেখতে যেমন সুন্দরী তেমনি বড়লোক বাবার মেয়ে । কেবল এই দুই বৈশিষ্টই থাকা যথেষ্ট একটা মেয়ের জনপ্রিয় হওয়ার জন্য । এছাড়াও মাহদিয়া চমৎকার গান গাইতে পারতো, নাচতে পারতো সবার সাথে মিশতেও পারতো । যে কোন কাজে সবার আগে তার আগ্রহ ছিল সব চেয়ে বেশি । বছর খানের ভেতরেই মাহদিয়ার জনপ্রিয়তা পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগলো না । এমন একজন মেয়ের সাথে আমার মত সাধারণ একটা ছেলের প্রেম হওয়াটা ছিল একেবারে অসম্ভব একটা ব্যাপার । এটা আমি খুব ভাল করেই জানতাম । কিন্তু তারপরেও প্রেম হয়ে গেল ।

কেন হল সেটা আজও আমার কাছে খানিকটা রহস্য । মাহদিয়া আমাকে যে কারণটা বলেছিলো সেটাই যদি কারণ হয়ে থাকে তাহলে ক্লাসে আমার মত আরও গোটা বিশেক ছেলে ছিল । তাদের বাদ দিয়ে আমার সাথেই কেন !
আই মিন আমি দেখতে শুনতে আহামরি সুদর্শন না মোটেও । আমার বাপের অঢেল টাকা পয়সা নেই । এমন কি আমি পড়াশুনাতেও খুব বেশি ভাল না । পড়াশুনাতে খুব ভাল হলে মাহদিয়ার সাথে প্রেমটা হওয়ার একটা কারণ বোঝা যেত । তাহলে এই মেয়ে আমার সাথে প্রেম কেন করবে?

ক্যাম্পাসের প্রথম তিনটা বছর মাহদিয়ার সাথে আমার একটা কথাও হল না । আমি সাহস করে কোন দিন মাহদিয়ার সাথে কথাই বলতে পারলাম না । সেকেন্ড ইয়ারে থাকতে মাহদিয়া ওর জন্মদিনের দিন সবাইকে নিজ হাতে চকলেট দিয়েছিলো । সেই চকলেট দেওয়ার সময় ও আমার মুখোমুখি এসেছিলো । বলা চলে এই ছিল প্রথম ওর কাছাকাছি আসা ।
তিন বছরের মাথায় প্রথম মাহদিয়ার সাথে কথা হল আমার । সেদিন সকাল বেলা কোন ক্লাস ছিল না । কদিন পরে ফাইনাল পরীক্ষা হওয়ার কথা । সবাই বাসা, হল থেকে পড়া শোনায় ব্যস্ত । আমি ক্যাম্পাসে এসেছি কারন আমার একটা মিডটার্ম পরীক্ষা দেওয়া হয় নি । সেটা দেওয়ার জন্যই হাজির হয়েছি । যখন পরীক্ষার জন্য ঢুকেছি তখন দেখি মাহদিয়াও বসে রয়েছে । সেও কোন কারণে পরীক্ষা মিস করেছিলো । স্যার প্রশ্ন দিয়ে চলে গেল । মাহদিয়া সেদিনই প্রথমে আমার পাশে এসে বসলো । আমার কাছ থেকে টুকটাক সাহায্য নিয়ে লিখতে শুরু করলো । পরীক্ষা শেষে ক্যান্টিন থেকে আাকে সিঙ্গারাও খাওয়ালো । টুকটাক কথাও হল এবং সব থেকে বড় কথা ওর গাড়িতে লিফটও দিল আমাকে ।

আমার মনে আছে সেদিন আমি সারারাত একটুও ঘুমাতে পারি নি । মনের ভেতরে যে কী একটা আনন্দ হচ্ছিলো সেটা ভাষার প্রকাশ করার কোন উপায় নেই । ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল । ফোর্থ ইয়ারে উঠেই মাহদিয়ার সাথে আমার কথা বার্তা শুরু হল । এবং সেটা আমার চেষ্টায় নয় । মাহদিয়ার চেষ্টায় । মেয়েটা কেন হঠাৎ করে আমার প্রতি এতো আগ্রহী হয়ে উঠলো কেন সেটার কোন ব্যাখ্যা আমার কাছে ছিল না । একদিন ক্যাম্পাস থেকে বাসায় যাচ্ছিলাম । বাসের জন্য অপেক্ষা করছি এমন সময়ে দেখলাম মাহদিয়ার গাড়িটা আমার সামনে এসে থামলো । কাঁচ নামিয়ে মুখটা বের করলো সে । তারপর বলল, অপু উঠে এসো ।
আমার একবার মনে হল যে বলি আমার টিউশনী আছে তবে সেটা বললাম না । চুপচাপ উঠে পড়লাম ।

গাড়ি চলল বেশ কিছু সময় । মাহদিয়ার মুখ একটু যেন গম্ভীর ছিল । আমি আজকে ক্লাসে লক্ষ্য করেছিলাম যে ও কোন কারণে চুপ করে আছে । কি সেই কারণ সেটা অবশ্য বুঝতে পারি নি । আমি কিছু বলতে গিয়েও বলতে সাহস পেলাম না ।

আমরা গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম একটা সময়ে । একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম । সেখানেও ও চুপচাপ হয়েই বসে রইলো কিছু সময় । হঠাৎ এক সময়ে মাহদিয়া বলল, তোমার গার্লফ্রেন্ড নেই তো ?
-এ্যা !

আমি অন্তত এই প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না । বললাম, মানে ! কি বললে?
-বললাম তোমার কারো সাথে প্রেম নেই তো? কাউকে প্রমিস কিংবা কমিটমেন্ট কর নি তো?
-না !
-গুড । শুনো আমাকে তোমার কেমন লাগে?
আমার বুকের ভেতরে একটা ঝড় শুরু হল সাথে সাথে । মাহদিয়া কি বলছে আর কেনই বা বলছে ! আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না । এমন কথা কেন বলছে সে ।
আমার জবাবের অপেক্ষা না করে মাহদিয়া বলল, শোন আজ থেকে আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড !

আমি তখনও অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছি ওর দিকে । এই মেয়ে কী বলছে ! মাথা ঠিক আছে তো এই মেয়ের !
আমি কোন মতে বললাম, তুমি কি সিরিয়াস?
-হ্যা ।
-সত্যিই সিরিয়াস ?
-হুম ।

সেখান থেকেই আমাদের প্রেম শুরু হল । আমি ভেবেছিলাম মাহদিয়া বুঝি ব্যাপারটা লুকিয়ে রাখবে । তবে দুইদিন পরে সে ফেসবুকে রিলেশনশীপ স্টাটাস দিয়ে দিল প্রাইভেসি পাবলিক করে । খবর রাষ্ট্র হতে সময় লাগলো না । রাতের ভেতরে সবাই জেনে গেল যে আমি মাহদিয়ার বয়ফ্রেন্ড । আমি একেবারে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেলাম । পরদিন যখন ক্লাসে গিয়ে হাজির হলাম সবাই দেখি কেমন চোখে আমার দিকে তাকাতে লাগলো । মাঝে মধ্যে কেউ কেউ টিটকারিও মারলো বটে ।

তবে মাহদিয়া এসবের ধার দিয়ে গেল না । আমাদের প্রেম শুরু হল । একটা ব্যাপার আমি সব সময় লক্ষ্য করলাম যে মাহদিয়ার ভেতরে আমার সাথে প্রেমের ব্যাপারটা সবাইকে জানানোর একটা প্রবনতা ছিল । আরও ভাল করে বললে আমার মনে হতে লাগলো যে ও হয়তো সত্যিই কাউকে দেখাতে চাইতো যে দেখো আমি প্রেম করছি । এটাই এক মাত্র কারণ মনে হয়েছিলো । আমার মত ছেলের সাথে ওর প্রেম করার কথা না মোটেও । আমি অবশ্য এতেও খুশি ছিলাম । কারণ মাহদিয়া যে কারণেই আমার সাথে প্রেম করুক কিংবা প্রেমের ভান করুক আমি তো ওর সাথে সময় কাটানোর সুযোগ পাচ্ছিলাম । এটাই আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার ছিল ।
একটা লাভ কিন্তু ঠিকই হয়েছিলো । মাহদিয়ার কারণে আমার পোশাক পরিচ্ছেদ আর চাল চলনে দারুন বদল আসলো । ওর কারণেই জিমে যাওয়া শুরু করলাম । স্টাইলিস পোশাক পরা শুরু করলাম । সব কিছু বেশ চমৎকারই যাচ্ছিলো । তবে একদিন শেষ হল সব কিছু । আমি নিজেও জানতাম যে একদিন শেষ হবে ।

অনার্সের শেষ পরীক্ষার দিন । পরীক্ষা করে মাহদিয়ার সাথে গল্প করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেল । বাসায় যাওয়ার জন্য উঠতে যাবো তখন মাহদিয়া আমাকে থামালো । বলল যে ওর সাথে আজকে গাড়ি নেই । আমি ওকে বাড়ি পর্যন্ত পৌছে দেই । মাহদিয়া আর আমার বাড়ি আসলে দুই দিকে ছিল । এমনটা ও আগে কোন আমাকে অনুরোধ করে নি । আজকে কেন করলো বুঝলাম না । তবে আমার কোন সমস্যা ছিল না । রিক্সা নিতে গিয়ে ওর বাসার ঠিকানা বলতে যাবো তখনই বলল, নয়ের এ না সাতাশ নম্বর পর্যন্ত রিক্সা নাও ।
আমি আবারও একটু অবাক হলাম । মাহদিয়াদের বাসা ধানমণ্ডি নয়ের এ । আজকে আবার ২৭ নম্বর কেন ! বেশি প্রশ্ন করলাম না ।

রিক্সা যখন ২৭ নম্বর থামলো তখন প্রায় নয়টা বেজে গেছে । আজকে রাস্তায় খুব বেশি জ্যাম ছিল । আমার ইচ্ছে ছিল ওকে নামিয়ে দিয়েই আমি ফিরে যাবো কিন্তু সেটা হল না । মাহদিয়া বলল, আজকে আর রুমে ফিরে কাজ নেই । এসো আমার সাথে ।
-কোথায়?
-এসো তো ।

আমাকে খানিকটা টেনেই নিয়ে এল । একটা বড় এপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের ভেতরে নিয়ে গেল । দশ তলার একটা ফ্ল্যাটের সামনে দাড়িয়ে চাবি দিয়ে দরজা খুলল । আমি সত্যিই কিছু বুঝতে পারছিলাম না । ঘরে ঢুকে ও আমাকে ফ্রেশ হয়ে নিতে বলল। ফ্রিজ থেকে খাবার গরম করলো । এটা কার বাসা জিজ্ঞেস করতেই বলল যে এটা ওর ছোট মামার বাসা । মামা মামি মাস খানেকের জন্য দেশের বাইরে গেছে । মাহদিয়ার দায়িত্ব পড়েছে মাঝে মধ্যে এখানে এসে থাকার । আজকে এখানেই থাকবে সে । এবং আমাকেও থাকতে হবে !

রাতে খাওয়া শেষ করে আর কিছু সময় গল্প করলাম । বুকের ভেতরে একটা ঢিপঢিপানি চলছেই । আমাদের ভেতরে প্রেম এতোদিন চললেও আমি কোন দিন ওর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করি নি । সত্য বলতে সাহসই হয় নি । হাত ধরেই সন্তুষ্ট আমি । অবশ্য মাঝে মধ্য মাহদিয়া আমার গালে চুমু খেয়েছে । এই পর্যন্তই ।

রাতে ঘুমানোর সময় মাহদিয়া খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমার সাথে ঘুমাতে এল । আমি আসলে লজ্জা পাচ্ছিলাম । মাহদিয়াও লজ্জা পাচ্ছিলো । লজ্জা কাটতে একটু সময় লাগলেও কেটে গেল এক সময়ে । তারপরেই আমাদের আদিম খেলা শুরু হল । সকল ভয় আর সংকোচ কেটে যেতেই আমরা দুজনেই যেন আরও সাহসী হয়ে উঠলাম ।
দুজনের শরীর থেকে পোশাক খুলে ফেলে দিলাম সব । আলো বন্ধ করলাম না । পরিস্কার আলোতে দুজন দুজনকে দেখতে পাচ্ছিলাম পরিস্কার । আমার কেবল মনে আছে ওর শরীরের এমন কোন স্থান নেই যেখানে আমি সেদিন চুমু খাই নি । একটা সময়ে দুজনেই ক্লান্ত স্রান্ত হয়ে শুয়ে পড়লাম একে অন্যকে জড়িয়ে ।

সকাল বেলা আমার আগেই মহদিয়ার ঘুম ভেঙ্গেছিলো । আমি একটু দেরি করেই বিছানা থেকে উঠেছিলাম । শুয়ে শুয়ে কেবল রাতের কথাই ভাবছিলাম । অন্য কিছু আমার মনে আর আসছিলো না । সকালে নাস্তা খাওয়ার পরে যখন বের হতে যাবো তখন মাহদিয়া আমার হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিল । বলল, এটা বাসায় গিয়ে পড়বে । কেমন !
-কি আছে এতে?
-পড়লেই বুঝবে ।

ওর কন্ঠস্বরে কিছু একটা ছিল যেটা আমার কেন জানি ভাল লাগলো না । আমি দরজা দিয়ে বের হতে যাবো তার আগে হঠাৎ মাহদিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে । তারপর আমার ঠোঁটে গভীর ভাবে চুমু খেল ।

বাসায় আসা পর্যন্ত আমার তর সইলো না । রাস্তায় নেমে আমি খাম খুলে ফেললাম । কয়েক লাইনের চিঠি । মাহদিয়া লিখেছে,

অপু, তুমি বুদ্ধিমান ছেলে । নিশ্চয়ই এতোদিনে ঠিকই টের পেয়েছিলে যে একজনের উপর জেদ করে আমি তোমার সাথে সম্পর্ক করেছিলাম । একজনকে জ্বালানোর জন্য । আমার মনে হয় আমাদের সম্পর্কটা আর এগিয়ে না নেওয়াই ভাল । আমি মাস্টার্স বাইরে থেকে করবো । আর হয়তো আমাদের দেখা হবে না । একটা অনুরোধ থাকবে তুমি আমার সাথে আর দেখা করার চেষ্টা করো না প্লিজ । আমি তাহলে খুব বেশি গিল্টি ফিল করবো । আমি জানি কাজটা আমি ঠিক করি নি । আমাকে পারলে ক্ষমা করে দিও ।

পুনশ্চঃ আমি জানি আমিই তোমার জীবনে প্রথম মেয়ে যার সাথে তুমি সেক্স করেছো । তুমিও আমার জীবনে প্রথম ছেলে । গতকালই আমার প্রথম ছিল ।

চিঠিটা পড়ে কিছু সময় আমি ফুটপাঠের উপরেই বসে রইলাম । খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো তখনই দৌড়ে চলে যাই ওর ফ্ল্যাটে । কিন্তু গেলাম না । আমি আগেই এমন কিছু আচ করতে পেরেছিলাম । এটাই তো স্বাভাবিক । নয়তো ওর মত মেয়ের আমার সাথে প্রেম করার কোন কারণ ছিল না । আর গতরাতের ব্যাপারটা সম্ভবত ক্ষতিপূরন ছিল । ও যা করেছে নিজের গিল্টি ফিলিং থেকে করেছে । আমি বেশ কিছু সময় ফুটপাথের উপরেই বসে রইলাম । চোখ দিয়ে কেন জানি পানি বের হয়ে গেল । মাহদিয়া কোন দিন আমার ছিল না তারপরেও ওকে হারানোর কষ্টটা আমি যেন তীব্র ভাবে অনুভব করছিলাম । একটা সময় উঠে দাড়ালাম । বিল্ডিংয়ের দিকে তাকাতেই মাহদিয়াকে দেখতে পেলাম । বারান্দায় দাড়িয়ে রয়েছে । আমার দিকে তাকিয়ে ।

আমি হাত নাড়লাম কেবল । বিদায় দিয়ে দিলাম শেষ বারের মত ।

দুই

দিহানের পেছন পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে বাসার সামনে দিকে চলে এলাম । ও চিৎকার করে হাসছে আর দৌড়াচ্ছে । আমি ওকে ধরার জন্য ওর পেছনেই দৌড় দিলাম । দিহান বারান্দা দিয়ে নেমেই সামনের লনের দিকে দৌড় দিল। আমি জানি ওর লক্ষ্য হচ্ছে বাসার গেট । গেট খুলতে পারলেই রাস্তায় দৌড় দিবে । আমি ওকে থামানোর জন্য বারান্দা দিয়ে নেমে লনে আসতেই থেমে গেলাম । আমার চোখ গিয়েছে গেটের দিকে । সেখানে একজন দাড়িয়ে রয়েছে ।
মাহদিয়া দাড়িয়ে রয়েছে । আমার সাথে চোখাচোখী হতেই হাসলো ! ওর চোখে একটু বিব্রত ভাবটা আমি পরিস্কার দেখতে পেলাম । গেট খুলে ঢুকতেই দিহান ওর সামনে গিয়ে দাড়ালো । আমি কিছু বলার আগেই মাহদিয়া দিহানকে কোলে তুলে নিলো । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কেমন আছো অপু?
আমি প্রথমে কিছু সময় যেন কথাই বলতে পারলাম না । কেবল এক ভাবে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে । ও বলেছিলো যেন কোনদিন ওর সামনে না যাই, আর কোন দিন যাই ও নি । তাই ভেবেছিলাম হয়তো আর কোন দিন দেখাও হবে না আমাদের । নিজেকে কোন মতে সামলে নিয়ে বললাম, তুমি কেমন আছো?
অনুভব করলাম ওর জন্য দাবিয়ে রাখা সেই আবেগ গুলো আবার কেমন যেন বের হয়ে আসছে । আমি কিছুতেই নিয়ন্ত্রন করতে পারছি না সেটা । খুব ইচ্ছে করলো ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরি, চুমু খাই । কিন্তু চাইলেই কি করতে পারি এসব ?

-মাহদিয়া !
আওয়াজটা এল গেটের পেছন থেকে । মাহদিয়া পেছনে ঘুরে তাকালো । আমিও তাকালাম । দেখলাম একজন সুদর্শন ছেলে গেটের কাছে এসে দাড়িয়েছে ।
-তুমি এখানে ? তোমাকে খুজে বেড়াচ্ছি ।
-আদনান । এসো !
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আদনান হচ্ছে আমার মুভির হিরো । এখানে এসেছি স্যুটিং এ ।
আমি বললাম, ও আচ্ছা ম্যানেজার স্যার বলেছিলো একটা গ্রুপ আসবে । তোমরাই ?
-হুম ।
তারপর হিরো সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল, আদনান ও হচ্ছে অপু । আমার ভার্সিটির বন্ধু । এখানকার এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার !

আমি একটু অবাক হলাম । আমি এখানে চাকরি করি এটা মাহদিয়া জানে ! কিভাবে?
মাহদিয়া দেশে ফিরে অভিনয়ের দিকে গিয়েছে সেটা আমি জানি । তবে আমি যতদুর চেষ্টা করেছি ওর খোজ খবর না রাখতে । তাই এতো দুরে চলে এসেছি যাতে কোন প্রকার খবর আমার কাছে না আসে । তারপরেও কিছু কিছু খবর ঠিকই চলে আসে চোখের সামনে ।

আদনান সাহেব আমাকে খুব একটা পাত্তা দিলেন না । মাহদিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, চল এখান থেকে । কত কাজ পড়ে আছে জানো?
মাহদিয়া বলল, আমার আজকে আর কোন শট নেই তো ।
-তো কি হয়েছে ? তুমি স্পটে না থাকলে স্যুটিং ভাল হবে নাকি ?
মাহদিয়া বলল, আদনান তুমি বরং স্পটে ফিরে যাও । আর আদিব ভাইকে বলবে যেন আমার জন্য অপেক্ষা না করে । আমি আজকে এখানে থাকবো ।
আদনান সাহেব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো । সম্ভবত তার মুভির নায়িকা তাকে পাত্তা না দিয়ে আমার এখানে থাকতে চাইছে এটা তার বিশ্বাস হচ্ছে না ।
আদনান সাহেব বলল, এখানে ? কেন ?
এবার মাহদিয়া ঘুরলো আদনানের দিকে । তারপর শান্ত কন্ঠে বলল, আদনান। আমার আর শট নেই। আমার স্পটে যাওয়াটা মেন্ডাটরি না । ঠিক আছে কি? আমি এমনিতেও হোটেলে ফিরে যেতাম । অপু এখানে চাকরি করে জেনে এখানে এসেছি । কতদিন পরে পুরানো বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছে তোমার হিসাব আছে ! তোমার কাল সকালে দেখা হবে । তুমি আপাতত চলে যাই। কাল কথা হবে।

এই বলে মাহদিয়া আমার দিকে এগিয়ে এল । দিহানকে কোলে নিয়েই আমাকে পাশ কাটিয়ে বাড়ির বারান্দায় উঠে গেল । আমি কিছু সময় নায়ক সাহেবের দিকে তাকিয়ে থেকে বাড়ির ভেতরে ঢুকলাম ।

দিহান বেশি রাত জাগতে পারে না । আটটার ভেতরেই ঘুমিয়ে পড়ে । ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে বারান্দা এসে বসলাম । কাজের লোকটা কফি দিয়ে গেল । দুজন পাশাপাশি বেশ কিছু সময় বসে রইলাম কেবল । হঠাৎ মাহদিয়া বলল, তুমি আমাকে এখনও ক্ষমা করো নি । তাইনা ?
-ক্ষমা ! ক্ষমার প্রশ্ন কেন আসছে?
-তাহলে বিয়ে করো নি?
-বিয়ে করি নি কিভাবে বুঝলে? দিহান তো আমাকে বাবা ডাকে।
মাহদিয়া হাসলো । তারপর বলল, বিয়ে করলে তোমার বউ থাকতো এখানে নয়তো তার ছবি থাকতো । তোমাদের এক সাথে কোন ছবিই নেই । আর সব থেকে বড় কথা তুমি বিয়ে করলে আমি খোজ পেতাম ।

আমি অনেক টা সময় চুপ থেকে বললাম, মাহদিয়া, তোমার উপরে আমার কোন রাগ নেই । আমার এই জীবনে বলতে পারো ইউ আর দ্য বেস্ট থিংঙ্ক হ্যাপেন্ড টু মি । ঐ সময়টা, ঐ রাত এগুলো জীবনের সেরা সময় ! এর জন্য তোমার কাছে সব সময়ই কৃতজ্ঞ আমি ।
অন্ধকারের ভেতরেও মাহদিয়া আমার দিকে তাকিয়ে রইলো জ্বলজ্বল চোখে । তার পরেই একপ্রকার ঝাপিয়ে পড়ে চুমু খেতে শুরু করলো আমাকে !

এটার জন্য অন্তত আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না । এই মেয়েটা এমন কেন করছে ?

কত সময় ধরে চুমু খেলাম আমি জানি না । একটা সময়ে মাহদিয়া শান্ত হল । তারপর বলল এসো ।
-মাহদিয়া !!
-না । অনেকটা সময় আমি অপেক্ষা করেছি । আর না !
-মানে?
-কোন মানে জানতে চেয়ো না প্লিজ । কেবল এসো !
আমি ওকে থামালাম । বললাম, কাজের লোকটা চলে যাক । তারপর ।
আমার এখানে বলা উচিৎ ছিল যে না । আর না যেখানে ওর কথাতেই আমি রাজি হচ্ছি । কেন হচ্ছি আমি? আমি ওর মোহ থেকে কোন দিন বের হতে পারি নি, এটার পেছনে একটা বড় কারণ ছিল সেদিন রাতের ওর সেক্স করা । সেটা যদি না হত তাহলে হয়তো আরো সহজ হত ওকে ভুলে থাকা । আজকে যদি আবারও একই কাজ হয় তাহলে আর হয়তো বেরই হতে পারবোনা ।

কাজের মানুষটা খাবার টেবিলে সাজিয়ে চলে গেল । মাহদিয়া আমাকে খাওয়ার ভেতরে যেতেই দিলো না । সোজা টেনে নিয়ে গেল বেড রুমের দিকে । আমার কেবল মনে আছে যে কাপড় খোলার আগে আমরা আধা ঘন্টা ধরে কেবল একে অন্যকে চুমুই খেলাম । মনে হল যেন আমাকে চুমু খাওয়ার জন্য মাহদিয়া এতো দিন ধরে মুকিয়ে ছিল । তারপর আমাদের দুজনের মাঝে কি যে হত সেটার সঠিক বর্ণনা আমরা কেউ দিতে পারবো না ।

মাঝ রাতের দিকে মাহদিয়াকে নিয়ে শোবার ঘরের বারান্দায় বসলাম । আমাদের শরীরে কেবল একটা কম্বল জড়ানো । আর কিছু নেই । মাহদিয়া বলল, ঐদিনের কথা মনে আছে কি যখন তুমি চলে যাচ্ছিলে হাত নাড়লে?
-হুম মনে আছে ।
-তোমার চোখে পানি আমি স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিলাম । প্রথমে ভেবেছিলাম বুঝি কিছু না কিন্তু ইংল্যান্ড গিয়ে আমি বুঝতে পারলাম যে তোমাকে আমি কিছুতেই মাথা থেকে বের করতে পারছি না । কিছুতেই না ।
-তারপর?
-কিন্তু নিজেই আসতে পারি নি । বারবার কেবল মনে হয়েছে এতো স্বার্থপর কেন আমি প্রতিবারই নিজের দরকারে তোমাকে ব্যবহার করছি ! আমি দেশে এসে তোমার খোজ করেছিলাম । খোজ পেয়েছিলাম । তুমি হয়তো জেনে অবাক হবে যে এর আগে তোমার এই বাগানে দুইবার এসেছি আমি । কিন্তু তোমার সাথে দেখা করার সাহস পাই নি । দিহান যখন একদম ছোট ছিল তখন একবার এসেছিলাম । বোরকা পরে এসেছিলাম । দুর থেকে দেখেছিলাম । ওকে আদর করতে দেখে ভেবেছিলাম বুঝি তুমি বিয়ে করে ফেলেছো । কি যে কষ্ট লাগছিলো ! বারবার কেবল মনে হচ্ছিলো আমার কাছ থেকে কি যেন হারিয়ে গেছে ।
আমি মাহদিয়ার কথা শুনে যাচ্ছিলাম অবাক হয়ে । মাহদিয়া বলল, তারপর কি যেন মনে হল যে তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারো না । খোজ নিয়ে জানলাম দিহানকে তুমি দত্তক নিয়েছো । আজও হয়তো গেট থেকেই চলে যেতাম যদি ওভাবে তুমি বের না হয়ে আসতে

মাহদিয়া সকাল বেলা চলে গেল বটে তবে বিকেল বেলা ঠিক একই ভাবে ফিরে এল । দিহানকে খুব করে আদর করলো । এভাবেই সাতদিন চলল । প্রতিদিন কাজ শেষ করে এখানে আসতো, আমার আর দিহানের সাথে সময় কাতাতো । দিহান ওকে খুব ভাল করে চিনে ফেলল এই কদিনেই ।
শেষ দিন চলে যাওয়ার সময় আমি নিজেই হাজির হয়েছিলাম ওদের স্পটে । সব প্যাক করে ওরা যখন রওয়ানা দিবে তখন আমি বললাম, এইবার আবার কোন খাম দিবে না তো ! বলবে না তো আর দেখা না করতে ?
আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে মাহদিয়া একটা কাজ করলো । আমাদের দিকে সবাই তাকিয়ে ছিল । বিশেষ করে ততদিনে ওদের স্যুটিংয়ের সবাই জেনে গেছে যে মাহদিয়া আমার পরিচিত । কিন্তু আজকের পরে ওদের সেই ভুল বুঝি ভেঙ্গে যাব । সবার সামনেই ও আমার ঠোঁটে চুমু খেল । তারপর একটু হেসে বলল, এই যে সিল মেরে দিলাম । এখন আমি চাইলেও তোমার থেকে দুরে যেতে পারবো না ।
মাহদিয়া কেন এই কথা বলল সেটা বুঝতে কষ্ট হল না । স্যুটিং স্পটে সব সময়ই সাংবাদিক ঘুরঘুর করে । আজও হয়তো আছে । আমাকে চুমু খাওয়ার দৃশ্য সবাই দেখেছে । এই নিয়ে সংবাদ ঠিকই ছেপে দিবে তারা !

পরিশিষ্টঃ

সেই ক্যাম্পাসের দিন গুলোর কথা মনে পড়ে গেল । আমি যেমন রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিলাম, মাহদিয়ার কারণে ঠিক তেমন এবারও রাতারাতি পরিচিত হয়ে গেলাম সেই মাহদিয়ার কারণেই । কয়েকটা পত্রিকায় ঐদিনের মাহদিয়ার চুমু খাওয়ার ছবিও প্রকাশ হয়ে গেল । মাহদিয়া অবশ্য কিছু রাগঢাক করলো না । বলেই দিল যে সেই ক্যাম্পাস লাইফ থেকে আমার সাথে তার প্রেম চলছে । এতোদিন গোপন রেখেছে আর না । খুব জলদিই আমরা বিয়ে করছি !

এই হচ্ছে আমার আর মাহদিয়ার গল্প।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 82

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

5 Comments on “মাহদিয়ার গল্প”

  1. Bai aro komaiya den .ak line e oneak kico bojano jai .je 18+ beshi chay o choti porok.obosso manos akhon choti e like kore . wattpad e treading e #1 e choti golpo gola akhon pawa jai ja last year ba tar age celo na

  2. অপু ভাই, চমৎকার ছিল !

  3. মাহদিয়া কাকে রাগাতে অপুর সাথে প্রেম করেছিলো এবং পরে তার কি হলো এসব কিছুই পরিষ্কার করলেন না!!

Comments are closed.