শশীর কথা শুনে আমি একটু অবাক না হয়ে পারলাম না। আমি আসলে আশা করি নি যে শশী আমাকে এমন একটা প্রস্তাব দিয়ে বসবে! একেবারে সরাসরি ওর বাসায় যেতে যে বলবে সেটা আমি ভাবি নি। তবে এই কথা শুনে আমি খুব একটা অখুশি হলাম না। আজকে রাতে ওর বাসায় গিয়ে খাওয়া দাওয়া করলে আমার খুব একটা খারাপ লাগবে না। কাল শুক্রবার। তার মানে অফিস আসার কোন তাড়াহুড়া আমাদের মাঝে থাকবে না। একটু রাত করে ঘুমালেও কোন সমস্যা হবে না। আমি হাসি মুখে রাজি হয়ে গেলাম।
শশী আর আমি একই অফিসে কাজ করি। আমার ডেস্কটা ওর ডেস্কের কাছেই। সে সুবাদেই আমাদের টুকটাক কথা হয়। মেয়েটা শান্ত স্বভাবের। প্রতিটা অফিসেই কিছু গ্রুপ থাকে। বিড়িখোরদের গ্রুপ, আন্টিদের গ্রুপ কিংবা বসের চামচামির গ্রুপ। শশীকে আমি কোন গ্রুপের থাকেই ঠিক দেখি না। নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। সময় মত অফিস আসে আবার ছুটি হলে অফিস থেকে বের হয়ে যায়। অফিসে ফাঁকে মাঝে মাঝে আমার সাথে এটা ওটা নিয়ে কথা বলে।
প্রথম প্রথম অবশ্য ও খুব একটা কথা বলত না, তবে একবার বইবেলা থেকে আমি ওর জন্য একটা বই উপহার নিয়ে এলাম। ব্যাপারটা এমন না যে আমি ওকে বই উপহার দেওয়ার জন্যই বইটা কিনেছি। আসলে ব্যাপারটা হল যে আমি যখন বই মেলা থেকে বই কিনি যখন তখন আসলে খুব একটা হিসাব করে বই কিনি না । স্টলে স্টলে ঘুরতে ঘুরতে আমার যে বইটা একটু পছন্দ হয় সেটাই কিনে ফেলি। সেদিন একই ভাবে কিছু বই কিনে বাসায় ফিরেছিলাম। বাসায় বসে যখন বইগুলো দেখতে পেলাম তখন আবিস্কার করলাম যে একটা বই আমার আগে থেকেই রয়েছে। এখন এই বই আমি কী করব সেটা ভাবতেই মনে হল শশীকে বইটা উপহার দেওয়া যায়। সেই ভাবনা থেকেই পরের দিন অফিসে আসার সময়ে আমি বইটা নিয়ে এলাম ওর জন্য। তবে বই পেয়ে ওর চোখে মুখে আমি সত্যি একটা আনন্দ দেখতে পেলাম। তারপর থেকেই আমাদের মাঝে একটা ভাব হয়ে গেল।
দুপুরে এক সাথে লাঞ্চ, একই সাথে অফিস থেকে বের হওয়ার মত ঘটনা ঘটতে লাগল। সপ্তাহ খানেক পরে ও আমার সাথে একদিন বই মেলাতে গিয়েও হাজির হল। আমি সাধারণত বই মেলাতে একা একা ঘুরতে পছন্দ করি। মানুষজনের সাথে নিয়ে ঘুরতে একটু অস্বস্তি লাগে। যখন বই মেলাতে যাই তখন দেখা যায় কাপলরা কেমন সেজে গুজে একে অন্যের পাশাপাশি বই মেলায় ঘুরছে। দেখতে আমার খারা লাগে না। আবার মনের মাঝে যে এমন কিছু করতে ইচ্ছে করে না সেটাও আমি বলব না তবে সেই ইচ্ছেটা আমি শুরুতে মেরে ফেলি। কারণ আমি খুব ভাল করেই জানি যে ঘুরে বেড়ানোর পরে যে প্যারাগুলো শুরু হবে সেটা আমার মোটেই পছন্দ হবে না।
তবে শশী যখন নিজ থেকেই বই মেলায় আসতে চাইল আমি কেন জানি মানা করতে পারলাম না। আমিই যেহেতু এর সূচনা করেছি বই উপহার দিয়ে, তাই এখন মানা করা মানে হচ্ছে মেয়েটার মনে কষ্ট দেওয়া। এই কাজটা করা মোটেই ঠিক হবে না।
নির্দিষ্ট দিয়ে শশী এসে হাজির হল। আমি সব সময় ভীড় এড়িয়েই যাই মেলায়। তাই শুক্রবার সকাল সকাল মেলায় গিয়ে হাজির হলাম। শশী এল একটু পরেই। ওকে দেখে সত্যিই এবার আমি একটু অবাক হলাম। বেশ প্রসাধনী দিয়েছে মুখে। বিশেষ করে লাল লিপস্টিক দিয়েছে বেশ ভাল ভাবে। অফিসে শশী খুব বেশি সাজগোজ করে না। তাই এই সাজে ওকে একেবারে নতুন লাগছে। কপালে টিপ আর চুলে ফুলের মালা। হলুদ কলাপাতা রংয়ের একটা কামিজ সাথে সাদা রংয়ের লেগিংস। আমি কিছু সময় মুগ্ধ হয়েই ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। মেয়েটা যে বেশ সুন্দরী সেটা এতোদিন পরে খেয়াল হল।
দুপুর পর্যন্ত আমরা মেলায় ঘুরাফেরা করলাম। শশীকে বেশ আনন্দিত মনে হচ্ছিল। কেন জানি মনে হচ্ছিল যে ও এখানে আসতে পেরে, বিশেষ করে আমার সাথে মেলাতে ঘুরতে পেরে বেশ আনন্দিত মনে হচ্ছিল। এরপরে আমাদের মাঝে আরও কথা বার্তা শুরু হয়। এবং আজকে সরাসরি শশী আমাকে ওর বাসায় দাওয়াত দিল।
তবে আজকে শশীকে আমার কেমন যেন একটু অস্থির মনে হল। একবার মনে হল যেন ওকে কারণটা জিজ্ঞেস করি তবে পর মুহুর্তেই সেটা বাদ দিলাম। শশীর যদি ইচ্ছে হয় তবে ও নিজ থেকেই আমাকে জানাবে। আমাকে আগ বাড়িয়ে কিছু জিজ্ঞেস করতে হবে না।
বিকেলে অফিস শেষ করে আমি আর বাড়ি গেলাম না। শশীর সাথেই বের হয়ে এলাম। শশী আমাকে নিয়ে প্রথমে বাজারে গেল। ঘুরে ঘুরে শপিং করতে লাগল। তারপর আমরা এক সাথে ওর বাসায় গিয়ে হাজির হলাম।
শশীর বাসায় গিয়ে আরেকটা জিনিস আবিস্কার করলাম। সেটা হচ্ছে ওর বাসায় আর কেউ নেই। শশী আমাকে জানিয়েছিল যে এই ফ্ল্যাটে সে তার এক কাজিনের সাথে শেয়ার করে থাকে। তবে আজকে সে বাসায় নেই।
আমার দিকে তাকিয়ে সে বলল, আজকে রাতে আমি একা থাকতে চাই না। তাই আপনাকে নিয়ে এলাম। আশা করি রাগ করেন নি।
এই লাইনটা বলার সময়ই আমি অনুভব করলাম যে ওর গলাটা যেন একটু কেঁপে উঠল, যেন ও কোন কিছুর ভয় পেয়ে আছে। ব্যাপারটা আমার কাছে কেমন যেন একটু অস্বাভাবিক মনে হল। শশী আমাকে একটা তোয়ালে বের করে দিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিতে বলল। আমি ফ্রেশ হয়ে বাইরে বের হয়ে আসার একটু পরে শশীও বের হয়ে এল ওর ঘর থেকে। আমি ওকে দেখে সত্যিই একটু চমকালাম।
মেয়েদের ঘরের এবং বাইরের চেহারার ভেতরে একটা পার্থক্য থাকে। মেয়েরা যখন বাইরে বের হয়, তখন প্রতিটা মেয়ের মাঝেই একটা পরিপাটি ভাব থাকে। নিজেকে একটু আড়াল করে রাখার প্রবণতা থাকে। এমন কি বাসায় যদি কোন মেহমান আসে তখনও এই ভাবটা থাকে। কিন্তু নিজের বাসার মানুষের সামনে সেই রক্ষনশীল ভাবটা তাদের থাকে না। আমি এই প্রথম শশীকে সেই বাসার রূপে দেখতে পেলাম।
শশী পুরানো একটা টিশার্ট পরে আছে। নিচে থ্রীকোয়াটার একটা কালো লেগিংস পরে আছে। বাসায় সম্ভবত ও এই জিনিসই পরে থাকে। আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল। তারপর বলল, আমার রান্না খেতে পারবেন তো?
আমি ওর দিকে তখনও তাকিয়ে আছি। বললাম, চেষ্টা করা যায়। অবশ্য আমার বুয়ার রান্নার থেকে ভাল হবে আশা করি।
শশী টিভিটা ছেড়ে দিয়ে রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। আমি কিছু সময় টিভি দেখলাম । তারপর মনে হল আমার এখানে বসে না থেকে শশীকে সাহায্য করা উচিৎ। আমি টিভি বন্ধ করে রান্না ঘরে গিয়ে হাজির হলাম।
সব রান্না শেষ করতে করতে রাত নয়টা বেজে গেল। সত্যি বলতে এক সাথে রান্না করতে ভাল লাগল । ওকে যে যে অস্বস্তি লাগছিল প্রথমে সেটা কেটে একেবারে। এখন সেখানে একটা ভাল লাগার অনুভূতি এসে জড় হল। কারণ মেয়েরা শুধু মাত্র তাদের কাছের মানুষদের সামনেই নিজেদেরকে একেবারে অরক্ষিত অবস্থায় নিয়ে যায়। অন্য কারো সাথে এমন ভাবে নিজেদের উপস্থাপন করে না। আমি যে ওর এই অবস্থায় পৌছাতে পেরেছি এটা জেনে আমার ভাল লাগল। রাতে খাওয়ার পরে আমরা ওর বারান্দায় এসে বসলাম । হাতে কফির পেয়ালা।
-আমি আসলে ঠিক স্বাভাবিক মানুষ নই।
শশীর এমন কথা শুনে আমি ওর দিকে তাকালাম। তারপর বললাম, স্বাভাবিক নই বলতে? এই যে মানুষের সাথে কম মিশেন এইটা?
-নাহ। এইটা না। আমি এই কথা খুব কম মানুষকেই বলেছি। যাদের বলেছি তারা সবাই আমার কাছ থেকে দূরে চলে গেছে। আপনিও হয়তো এটা শোনার পরে আর আমার সাথে কথা বলবেন না।
এই কথা শুনে আমি একটু নড়ে চড়ে বসলাম। তারপর বললাম, শুনি আপনার সেই কথা।
শশী একটু থামল। রাতের অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু সময়। তারপর বলল, আপনি কি খেয়াল করেছেন যে আমি মাঝে মাঝে অফিস কামাই করি?
হ্যা আমি এটা জানি। শশী মাঝে মাঝে হঠাৎ অফিস আসে না। কেন আসে না সেটা অবশ্য আমি জানি না।
-সর্ব শেষ যেদিন আমি অফিসে এলাম না, মনে আছে আপনার?
আমি একটু মনে করার চেষ্টা করলাম। এই তো সপ্তাহ তিনেক আগের কথা। তখনও বই মেলা শুধু হয় নি। সেদিন শশী অফিসে আসে নি।
-হ্যা মনে আছে।
-সেদিন আর কী হয়েছিল মনে আছে?
আমার ভাল করে মনে আছে । সেদিন আমাদের অফিসের থেকে একটু দূরে একটা ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগেছিল। প্রায় ২১ জন লোকের মত মারা গিয়েছিল। আমি মাথা ঝাকালাম। শশী তখন বলল, আমি যদি বলি যে আমি জানতাম ঐ দিন ঐ ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগবে। বিশ্বাস করবেন?
আমি প্রথমে ঠিক বুঝতে পারলাম না শশী ঠিক কী বলার চেষ্টা করছে। আমি কোন কথা না বলে শশীর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম এক ভাবে। শশী চোখ সরিয়ে নিল না। বলল, আমি ঠিক ঠিক জানতাম যে ঐদিন ঐ ফ্যাক্টরিতে আগুণ লাগবে। এবং এতোজন মানুষ মারা যাবে।
-কিভাবে?
-ওরা এসেছিল?
-ওরা বলতে?
-আমি জানি না ওরা কারা ! তবে ওরা আমার কাছে আসে। তারপর আমাকে আগাম বার্তা দিয়ে যায়। আমার সাথে এটা অনেক দিন থেকেই হয়। আর যখন ওরা আসে তখন আমার শরীরে একটা জ্বর নেমে আসে। শরীর খারাপ করে। এইজন্যই মূলত আমি অফিসে যাই না।
আমি ব্যাপারটা নিয়ে কিছু বললাম না। বিশেষ করে শশী যেভাবে আমার দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল, আমি সেটা অগ্রাজ্য করতে পারলাম না। আমি বরং বললাম, আপনি চাইলেই কি ওদের বাঁচাতে পারতেন? মানে আপনার কাছে কি সেই সময় ছিল ওদেরকে সতর্ক করার?
-হ্যা ছিল। চাইলেই আমি এটা করতে পারতাম।
-তাহলে কেন করলেন না?
-কারণ যদি ওরা প্রাণে রক্ষা পেয়ে যেত তাহলে ঠিক সমান সংখ্যক মানুষ মারা যেত অন্য কোথায় থেকে যাদের মারা যাওয়ার কথা ছিল না। এবং তারা আমার পরিচিত কেউ হত।
আমি এবার একটু নড়েচড়ে উঠলাম। ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হল। আমি বললাম, একটু খুলে বলুন তো!
শশী কফির কাপে আরেকটা চুমুক দিল। তারপর বলল, আমি তখন সবে ক্লাস সিক্সে ভর্তি হয়েছিলাম, সেই সময়ে প্রথম তারা আমার কাছে এসে হাজির হয়। তারা আসলে দেখতে কেমন সেটা আমি জানি না। কারণ পরিস্কার ভাবে আমি তাদের দেখি নি। তারা যখন আসে তখন ঘরের সব আলো বন্ধ হয়ে যায়। তবে একেবারে অন্ধকার হয়ে যায় না। আবছায়া একটা আলো থাকে । সেই আলোতে তাদের দেখা যায়। লম্বা কিছু আবয়ব। কালো আলখাল্লা পরা। মাথায় হুড নামানো থাকে সেই কাপড়ে। সেখানে অন্ধকার। সেখান থেকেই ভেসে আসে কথা । আমি শুনতে পাই সামনে কী হতে চলেছে। প্রথম সংবাদটা এসেছিল আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যাবেন। কোন দিক আর কোন রাস্তায় । আমি সেদিন খুব ভয় পেয়েছিলাম। সাথে সাথে জ্বর চলে এসেছিল। পরে যখন আমি সুস্থ হই তখন আমি স্যারের মৃত্যুর খবর পাই। একদম সেই সময় আর জায়গা যেটা ওরা আমাকে বলেছিল।
-এরপর?
-এরপর প্রায় তারা আসতো। আমার সেই তীব্র ভয়টা কমে এল বটে তবে ভয় চলে গেল না। ভয়ের বদলে সেখানে এসে জড় হয় এই আগাম মৃত্যু সংবাদ জানার যন্ত্রণা।
-আপনি চেষ্টা করেছিলেন কাউকে বাঁচাতে?
-হ্যা একবার করেছিলাম। কিন্তু তার ফল ভাল হয় নি।
-কী রকম?
-আমি সেদিন একজন কে রক্ষা করেছিলাম। ঘটনাটা ছিল আমাদের স্কুল থেকে দূরে একটা উচিৎ বিল্ডিং তৈরি হচ্ছিল। সেই বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে একটা ইট পড়ার কথা ছিল নিচ দিয়ে হেটে যাওয়া একজনের মাথায়। সেখানেই তার মৃত্যু হওয়ার কথা ছিল। আমি গায়ে জ্বর নিয়েই সেই বিল্ডিংয়ের উপরে গিয়ে সেই ইট সরিয়ে রাখলাম। নির্দিষ্ট সেই দিনে সেই লোকটা মারা গেল না। তার বদলে আমার এক বন্ধু মারা গেল। একই ভাবে ছাদ থেকে মাথায় ফুলের টব পড়ে। আমি সেদিন টের পেয়েছিলাম যে যদি আমি এই অপধারিত মৃত্যুর কাউকে রক্ষা করি তার পরিবর্তে অন্য কারো মৃত্যু হবেই। তাই আর সাহস করি নি।
-আপনার ধারণা হয়তো ভুল । আপনার ঐ বন্ধুর হয়তো সেদিন সত্যিই ওভাবেই মৃত্যুর কথা ছিল।
-হ্যা হয়তো তাই ছিল। কিন্তু আমি এই রিস্ক নিতে রাজি নই। মোটেই রাজি নই।
আমি শশীর ব্যাপারটা বুঝতে পারছিলাম। আমি ওর জায়গায় থাকলে আমিও হয়তো একই কাজ করতাম। নিজের কাছের মানুষদের ব্যাপারে আমি কোন প্রকার ঝুকি নিতে রাজি নই। এমন কি সামান্যতম ঝুকিও না।
-আজকে তারা আসবে?
-হ্যা। আমি এটা এখন আগে থেকেই টের পাই। আর এমন দিনেই আমার সেই কাজিন গিয়েছে বাড়িতে । আসলে একা থাকার সাহস হয় নি। তাই আপনাকে নিয়ে এলাম।
আমি গেস্ট রুমে শুয়ে পড়লাম। তবে ঘুম এল না সহজে। যখন একটু তন্দ্রার মত ঘুম এসেছে তখন আমি শশীর গোঙ্গানীর মত আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি দ্রুত ঘর ছেড়ে উঠে শশীর ঘরের দরজার সামনে গিয়ে হাজির হলাম। ডাক না দিয়েই আমি দরজার নব ঘুরে ভেতরে ঢুকে পড়লাম ।
ঘরে ঢুকেই আমার কেন জানি মনে হল আমি একেবারে অন্য জগতে চলে এসেছিল। ঘরের ভেতরে একটা অন্য রকম অন্ধকার বিরাজ করছে। এই অন্ধকার আমার কাছে মোটেই স্বাভাবিক মনে হল না। ঢাকা শহরের অন্ধকার আমার কাছে পরিচিত । এই অন্ধকার সেই রকম নয়। এছাড়া ফেব্রুয়ারির এই শেষের দিকে ঢাকাতে যেমন তাপমাত্রা থাকে এই ঘরে সেটার থেকেও কম তাপমাত্রা ।
আমার চোখ গেল শশীর দিকে। দেখতে পেলাম বিছানার এক কোণে শশী কানে হাত দিয়ে গুটিশুটি মেরে বসে আছে। আমি জানি জানি না শশী যা বলেছে সেটা সত্য কিনা তবে ও যে ভয় পাচ্ছে সেটা আমি পরিস্কার বুঝতে পারলাম ।
দ্রুত আমি শশীর কাছে গিয়ে হাজির হলাম। তারপর ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম । বারবার বললাম, কোন ভয় নেই। আমি আছি । এইতো আমি আছি।
এভাবে আমি ওকে কত সময় ধরে জড়িয়ে ধরেছিলাম সেটা আমি নিজেও জানি না। তবে এক সময় আমার কাছে মনে হল সব কিছু আবার আগের মত স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।
আমি শশীকে ছেড়ে দিয়ে বললাম, ঠিক আছো তুমি?
শশী মাথা নাড়াল। আমি ওর কপালে হাত দিয়ে দেখলাম। শরীর গরম নয়। সব কিছু স্বাভাবিক।
আমি বললাম পানি খাবে?
শশী আবার মাথা নাড়াল। আমি ওকে পানি এনে দিলাম। পানি খাওয়ার বেশ কিছু সময় পরে ওর স্বাভাবিক হল। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, থ্যাঙ্কিউ।
-কোন সমস্যা নেই।
-আজকে আমি শুনতে পাই নি। মানে ওরা বলতে চেয়েছে সেটা আমি শুনি নি।
-ভাল তো । যাক । এখন ঘুম দাও।
আমি যখন বিছাড়া ছেড়ে উঠতে যাব তখন শশী আমার হাত ধরে বলল, যেও না। এখানে থাকে।
আমার আর যাওয়া হল না। বাকি রাত টুকু ঐ ঘরেই রইলাম।
সকালে যখন আমার ঘুম ভাঙ্গল দেখতে পেলাম যে শশী বিছানাতে নেই। আমি উঠে বাইরে বের হয়ে দেখি ও রান্না ঘরে নাস্তা বানাতে ব্যস্ত। ওর চেহারা হাস্যজ্জ্বল। আমি বললাম, জ্বর আসে নি।
-উহু।
-গ্রেট ।
শশী আমাকে সেদিনও আসতে দিল না। আমরা দুপুরে রান্না করলাম এক সাথে। বিকেলে আবারও বাইরে বের হলাম। রাতে আবারো ফিরে এলাম একই ঘরে। তারপর ? তারপর কী করলাম সেটা গোপনই থাকুক।
পরিশিষ্টঃ
অবাক করার ব্যাপার হচ্ছে শশী আর সেই কালো আলখাল্লা পরা অবয়ব গুলো আর আসে নি। ঐ ঘটনার পরে প্রায় ছয় মাস কেটে গেছে। শশীর সাথে আমার সম্পর্ক আরও গভীর হয়ে উঠেছে। ব্যাপার আমাদের অফিসে তো সবাই জেনেছেই, আমাদের পরিবারের কাছেও খবর চলে গেছে। এতে অবশ্য দুই পরিবারের কোনটিই থেকেই কোন আপত্তি আসে নি। আরও একটু দেখা শোনার পরে হয়তো পাকাপাকি কিছু হবে।
তবে শশী খুশি যে ওকে আর সেই যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে না। ওর মতে সেদিন আমি ওভাবে ঘরে ঢুকে ওকে জড়িয়ে ধরার কারণেই ওরা আর শশীর কাছে আসে নি।
আমি কেবল ওর হ্যা এর সাথে হ্যা মিলিয়েছি। কিন্তু আসল খবর আমি জানি।
ওরা এখন আর শশীর কাছে আসে না, কারণ হচ্ছে ওরা এখন নতুন একজনের কাছে যায়। সেই নতুন একজনটা হচ্ছি আমি । ঐ ঘটনার ঠিক মাস খানেক পরেই এক রাতের বেলা আমি তাদের দেখতে পেলাম আমার ঘরে। শশী আমাকে ঠিক যেভাবে বলেছিল ঠিক সেই রকম। যদি আগে থেকে আমি না জানতাম তাহলে হয়তো আমি ভয় পেতাম তবে আগে থেকে জানার কারণেই আমার ভেতরে কোন ভয় কাজ করে নি। আর ওরা তো আমার কোন ক্ষতিও করছে না। কেবল কিছু দূর্ঘটনার আগাম বার্তা দিয়ে যাচ্ছে। আমি এটা কাউকে বললাম না, এমন কি শশীর কাছেও না। আমার কাছে মন হল মেয়েটা একটু শান্তিতে থাকতে দেওয়া উচিৎ । এই কথা বলে ওকে বাড়তি ঝামেলায় ফেলা উচিৎ না।
ফেসবুকের অর্গানিক রিচ কমে যাওয়ার কারনে অনেক পোস্ট সবার হোম পেইজে যাচ্ছে না। সরাসরি গল্পের লিংক পেতে আমার হোয়াটসএপ বা টেলিগ্রামে যুক্ত হতে পারেন। এছাড়া যাদের এসব নেই তারা ফেসবুক ব্রডকাস্ট চ্যানেলেও জয়েন হতে পারেন।
Discover more from অপু তানভীর
Subscribe to get the latest posts sent to your email.