অনু ম্যাম অফিসে সব সময় ফর্মাল পোশাক পরে আসলেও আজকে সে একটা জিন্স আর এই বয়ফ্রেন্ড শার্ট পরে এসেছে।
বয়ফ্রেন্ড শার্ট মানে ঠিক বয়ফ্রেন্ডের শার্ট না । অনু ম্যামের কোন বয়ফ্রেন্ড আছে বলে আমাদের অফিসের কেউ জানে না । আসলে বয়ফ্রেন্ড শার্ট নামেই এক ধরনের শার্ট আছে মেয়েদের জন্য । মেয়েরা তাদের প্রেমিক কিংবা স্বামীর শার্ট গায়ে দিয়ে পছন্দ করে । তখন সেই শার্ট তাদের শরীরে একটু বড় হয় । কিন্তু যাদের বয়ফ্রেন্ড কিংবা স্বামী নেই তারা কীভাবে পাবে এই শার্ট !তাদের জন্যই এই টাইপের শার্ট বাজারে আনা হয়েছে। এবং এগুলো বেশ জনপ্রিয়ও বটে । অনেক মেয়েই পরছে । তবে অনু ম্যামও যে এটা পরেই অফিসে আসবে সেটা আমাদের ধারণার বাইরে ছিল । অনু ম্যাম অফিসে সব সময় ফরমাল পোশাকে আসে । আজকে এমন ক্যাজুয়্যাল পোশাকে কেন আসলো কে জানে!
আমরা মোটামুটি ধরেই নিলাম যে অনু ম্যামের কোন বয়ফ্রেন্ড নেই । সে এটা বাজার থেকেই কিনেছে । কিন্তু তখনই অফিসে বোমা ফাটালো আমাদের কামাল ভাই । সে একটা ছবি বের করে দেখালো আমাদের । অফিসের একটা দিনের ছবি । এবং সেই ছবিতেই দেখা যাচ্ছে আমাদের অফিসের সেলস হেড মাহবুব স্যারের গায়ে ঠিক একই রকমের শার্ট ! আমাদের সবার চোখ কপালে উঠল । সবাই সব কাজ কর্ম বাদ দিয়ে গসিপ করা শুরু করে দিল। আমাদের সবার আগে থেকেই একটা সন্দেহ ছিল যে অনু ম্যাম আর মাহবুব স্যারের ভেতরে কিছু চলছে। অফিসে দুজনকে বেশ সময় ধরেই গুটুর করতে দেখা যায় । মাহবুব স্যার প্রায় অনু ম্যামের কেবিনে গিয়ে হাজির হয় নানান কাজে ! কিন্তু আজকে তো আমাদের সবার মনে আর কোন সন্দেহই রইলো না যে তাদের ভেতরে সত্যিই কিছু চলছিল।
আমাদের অফিসে নতুন মুখোরোচক গল্পের সূচনা হল । আমি অবশ্য এসবের থেকে দুরেই রইলাম সব সময় । আমার অফিসের গসিপের অংশ হতে খুব বেশি ভাল লাগে না। আমি সব সময় এসব থেকে দুরে থাকি যদিও আমার কানে এই সব কথা বার্তা ঠিক চলে আসে ।
আজকে অফিস থেকে বের হওয়ার আগেই কামাল ভাই আমাকে পাকড়াও করলেন । তার শালীর জন্মদিনের জন্য একটা উপহার কিনতে হবে। আমি নাকি ভাল বুঝব কোন জিনিসটা ভাল হব । যদিও আমার বিন্দু বিসর্গ কোন ধারণাই নেই এই সব উপহারের ব্যাপারে। তারপরেও কামাল ভাইয়ের হাত থেকে রক্ষা পেলাম না। তার সাথে বের হতেই হল ।
অবশ্য কামাল ভাইয়ের সাথে যাওয়াটা খুব বেশি সমস্যার ব্যাপার না । অফিসের পরে আমার এদিক ওদিক ঘোরাঘুরির অভ্যাস এমনিতেই আছে। আজকে না হয় কামাল ভাইয়ের সাথে একটু ঘুরলাম। আর কামাল ভাই মানুষ হিসাবে বেশ । তার সাথে বের হলে পেট ভরে খাওয়াতে ভোলে না। শপিং শুরুর আগেই আমরা পেটপুজা করে নিলাম। বসুন্ধারাসিটিতে ঘুরতে ঘুরতে দেখতে আমরা দুজন মিলে খুজতে লাগলাম যে তার শালীর জন্য কী উপহার দেওয়া যায় ।
-আপনার শালীকে একটা বয়ফ্রেন্ড শার্ট উপহার দেওয়া যায় !
কামাল ভাই বলল, কী ?
-হ্যা বয়ফ্রেন্ড শার্ট । আজকে যে অনু ম্যাম পরেছিল ।
-ওটা তো মাহবুব স্যারের !
-আপনি কীভাবে এতো নিশ্চিত করে জানেন ?
-আরে তোমাকে ছবি দেখালাম না?
-আরে ছবি তো দেখলাম । শার্ট আলাদা !
-মোটেই আলাদা না । একদম একশার্ট । আমি শতভাগ নিশ্চিত !
-মোটেই এক শার্ট না । আলাদা শার্ট!
-তুমি কিভাবে নিশ্চিত করে বলছ? এমন ভাবে বলছো যেন শার্টটা মাহবুবের না তোমার নিজের !
-শার্টটা মাহবুবের না !
আমরা দুইজনই থমকে গেলাম । কারণ কন্ঠটা এসেছে আমাদের পেছন থেকে । এবং পেছনে ঘুরে না তাকিয়েই আমরা দুজনই বলে দিতে পারি যে কন্ঠটা কার!
আমরা ধীরে ধীরে ঘুরে দাড়ালাম । ভেবেছিলাম আমাদের দিকে হয়তো অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে অনু ম্যাম । তাকে নিয়ে আমরা কথা বলছি এটা জানার পরে আমাদেরকে যে ঝাড়ি দিবে সেটা তো নিশ্চিত ! তবে তার বদলে দেখলা মুখে একটা হাসি হাসি ভাব নিয়েই সে দাঁড়িয়ে রয়েছে । তার হাতে বেশ কয়েকটা শপিং ব্যাগ । আমাদের মতই সেও এসেছে শপিং করতে !
কালাম ভাই মুখের হাসি বিস্তৃত করে বলল, হ্যালো ম্যাম !
-হ্যালো কামাল সাহেব আপনারা এখানে ?
-ম্যাম, আমার শালীর জন্মদিন ! তাই আপনার মত একটা বয়ফ্রেন্ড শার্ট কিনতে এসেছি । সাব্বির এসেছে পছন্দ করে দিতে !
-আচ্ছা । সাব্বির সাহেবের পছন্দ বেশ ভাল মনে হচ্ছে !
এই কথাটা বলেই অনু আমার দিকে তাকাল । আমি খানিকটা বিব্রত বোধ করলাম । কামাল ভাইটা যে কখন কী বলে তার ঠিক নেই । আমি একটু কেবল বিব্রত মার্কা হাসি দিলাম ।
অনু ম্যাম বলল, আচ্ছা যাই হোক আপনাদের পেয়ে ভালই হল । আমার সাথে আসুন দেখি একটু !
এই বলেই সে হাটতে লাগল । আমরা মাধ্য কর্মীর মত তার পেছন পেছন যেতে থাকলাম । দেখলাম সে রিচম্যানের শোরুমে ঢুকল। আমরা তার পেছন পেছন ঘুরতে লাগলাম । সে শার্ট পছন্দ করতে লাগল ।
কামাল ভাই আমার কানে ফিসফিস করে বলল, দেখছো তো ! মাহবুব স্যারের জন্য শার্ট কিনছে । কিন্তু আমাদের কী কাজ সেটাই তো বুঝতে পারছি না । আমার কাছ থেকে তো অপিনিয়ন নিবে না। নাকি নিবে?
কেন যে আমাদের আসতে বলল সেটা বের হল একটু পরেই । অনু ম্যাম শার্ট দুটো আমার হাতে দিয়ে বলল, সাব্বির সাহেব, শার্ট দুটো ট্রায়াল দিয়ে আসুন দেখি ।
আমি বললাম, আমি !
-হ্যা আপনি । আপনি ট্রায়াল দিন । আপনার শরীরে ফিট হলেই চলবে !
আমি একবার তাকালাম অনুর দিকে আরেকবার তাকালাম কামাল ভাইয়ের দিকে । তারপর শার্ট দুটো নিয়ে চলে গেলাম ট্রায়াল রুমে । পরপর দুটো শার্ট পরে অনু আর কামাল ভাইয়ের সামনে এসে দাড়ালাম । অনু আমার দিকে বেশ ভাল করে তাকাল । তারপর বলল, চমৎকার! আপনার গায়ে মানিয়েছে ভাল।
কেনাকেটা শেষ করে অনু আমাদের কফি খাওয়াতে চাইল । আমি সবিনয় মানা করে বললাম যে আমরা একটু আগেই কফি খেয়েছি। অনু অবশ্য খুব বেশি জোড়াজুড়ি করল না । আমাদের রেখে সে চলে গেল।
অনু চলে যেতেই কামাল ভাই বলল, কিন্তু মাহবুবের শরীর আর তোমার শরীর এক রকম না। তোমার মাপে হলে কিভাবে হবে?
-হয়তো অন্য কেউ যার শরীর আমার মত !
আমি দেখলাম কামাল ভাই এই ব্যাপারটা নিয়ে অনেক চিন্তিত বোধ করছেন তিনিই তো ছবি বের করে দেখিয়েছিলেন যে শার্টটা মাহাবুব স্যারের মত । তাই তার ধারণা ভুল হলে তার তো মান ইজ্জত থাকবে না । বাকি সময়টা তিনি আর অন্য কোন কিছুতে মনই বসাতে পারলেন না । কোন মতে একটা উপহার কিনে নিজের বাসার দিকে রওয়ানা দিলেন । আমিও নিজের বাসার দিকে যাওয়ার জন্য শপিংমল থেকে বের হলাম । রিক্সা নেব নাকি উবার ডাকব এই চিন্তা করছি, তখনই অনুকে আবার দেখতে পেলাম । আমাকে দেখে সে আমার দিকেই আবার এদিকে এল । তারপর বলল, কামাল সাহেব কোথায়?
-উনার কাজ শেষ । চলে গেল ।
-আজ কাল অন্যের শালীর জন্য উপহার চুজ করে দেওয়া হচ্ছে ! বাহ !
-আরে এরকম কিছুই না । আমিই কিছুই করি নি ।
অনু আমার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । তারপর শার্টের সেই শপিং ব্যাগটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিল । তারপর বলল, কাল অফিসে নীল শার্টটা পরে আসবে !
আমি বললাম, আরে কামাল ভাই দেখল তো ! উনি কী ভাববে?
-ঐ ছাগলটার মাথায় এই বুদ্ধি আসছে সে যে বুঝবে ! তোমার এই শার্টটা মাহবুবের শার্ট বলে । বেটা আহম্মকের মাথায় এই বুদ্ধি নেই যে মাহবুবের শার্ট আমার গায়ে পাঞ্জাবী হয়ে যাবে।
আমি বললাম, এভাবে আমার শার্ট না পরে গেলেই পারতে অফিসে !
-কেন সমস্যা কী?
-না মানে অফিসে মানুষ কী ভাবছে !
-ভাবুক ! কেন লজ্জা লাগবে তোমার যে আমার সাথে প্রেম করছো এটা প্রকাশ পেলে !
আমি হাসলাম । বললাম, না লাগবে না।
-তাহলে এতো ভাবছো কেন? এখন চল আবার !
-কেন?
-ডিনার করব।
-আরে আমি সত্যিই একটু আগে খেয়েছি।
-তো কী হয়েছে । আবার খাবে আমার সাথে !
আমার আসলে মানা করার উপায় ছিল না । একে তো অনু প্রেমিকা তারপর আমার অফিসে বস । দুই দিকে তার কথার উপরে কথা চলে না। আমি আবার শপিং মলের ভেতরে ঢুকলাম । আজকে রাতে বাসায় গিয়ে আর কিছু খাওয়ার উপায় থাকবে না।
পরদিন আমি অনুর দেওয়া নীল শার্টটা পরেই অফিসে গেলাম । মনে মনে একটু ভয় ছিল যে কামাল ভাই হয়তো চিনতে পারবে । কিন্তু অনু ঠিকই বলেছিল । কামাল ভাই ধরতেই পারলেন না । সাথে আমি আমার আরও দুটো শার্ট নিয়ে এসেছিলাম অফিসে । কাজের অযুহাতে সেটা ওকে দিয়ে এলাম । অনু শার্ট দুটো ব্যাগে ভরে নিল । এই দুটো নিয়ে মোট চারটা শার্ট ওর কাছে রয়েছে । ও আমাকে শার্ট উপহার দেউ ঠিক তবে তার বদলে ওকে আমার ব্যবহার করা শার্ট দিতে হয় । আমরা যখন বাইরে দেখা করি কিংবা ও বাসায় থাকে তখন সে সেই শার্ট পরে । কিন্তু গতকাল যে একেবারে অফিসে চলে আসবে সেটা আমি ভাবতেও পারি নি। আমি ওর পছন্দ করা নীল শার্ট পরে এসেছি দেখে ও হাসল একটু তবে মুখ ফুটে কিছু বলল না । অফিসে আমরা কাজের কথা ছাড়া অন্য কোন কথা একদম বলি না !
জানি না কতদিন আমাদের সম্পর্কটা গোপন থাকবে তবে এভাবে লুকিয়ে চুকিয়ে প্রেম করতে আমার খুব একটা খারাপ লাগছে না।
গল্পের লিংক সরাসরি পেতে হোয়াটস গ্রুপ/চ্যানেল অথবা টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন করুন।