স্বামী বিদেশ

4.5
(33)

নাদিয়া ভেবেছিল আজকে রিয়াদ অফিসে আসবে না। বিশেষ করে কালকে ওদের ভেতরে যা হয়েছে, আর তারপর রিয়াদ যেভাবে চলে গিয়েছিল সেই হিসাবে রিয়াদের আজকে অফিসে আসার কথা ছিল না। কিন্তু ও ঠিকই অফিসে এসে হাজির হয়েছে। তবে প্রতিদিন অফিসে এসে রিয়াদ যেমন আচরণ করে আজকে তেমন আচরণ করছে না। কেউ ব্যাপারটা খেয়াল না করলেও নাদিয়া ঠিকই বুঝতে পারছে। ওর আচরণের ভেতরেই এক ধরণের অস্বাভাবিকতা আছে। ওর দিকে একবারও তাকায় নি সে। নিজের ডেস্কে নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত । কিংবা ব্যস্ত হওয়ার একটা ভান করে আছে। একটু বেশি কাজ করার ভাব দেখাচ্ছে যে । নাদিয়া ওর উপরে রাগ করতে চাইছে বটে কিন্তু ঠিক রাগ করে উঠতে পারছে না। এর পেছনে অবশ্য কারণও আছে। নাদিয়া অপেক্ষা করতে লাগল। ও ঠিক ঠিক জানে যে রিয়াদ নিজেই ওর কাছে আসবে। গতকাল ওদের ভেতরে যা হয়েছে সেটা নিয়ে কথা বলবে।

রিয়াদের সাথে নাদিয়ার পরিচয় এই অফিসে জয়েন করার পরেই। প্রথম কিছুদিন নাদিয়াকে রিয়াদ হাতে কলমে কাজ শিখিয়েছে। সেখান থেকেই ওদের বন্ধুত্ব। এক সময়ে অফিসের বাইরেও ওদের দেখা সাক্ষাৎ হতে থাকে। ফেসবুকে এক সাথে দেখা যেতে থাকে । এটা নিয়ে অবশ্য বাসায় টুকুটাক কথা বর্তা হতে থাকে । বিশেষ করে সামির পরিবারের লোকজন এটা নিয়ে বেশ কথা বলত । তবে নাদিয়া সেদিকে পাত্তা দেয় নি। এসব ঝামেলা থেকে বাঁচতে নাদিয়া ওর শ্বশুর বাড়ির সবাইকে ফেসবুক থেকে রেস্ট্রিক্ট করে দিয়েছিল। তারপরেও কথা থেমে থাকে নি। বিশেষ করে নাদিয়ার বিয়ের করেও কাজ করাটা তারা পছন্দ করত না। এটা নিয়ে নাদিয়ার শ্বাশুড়ি ওকে বেশ কয়েকবারই কথা শুনিয়েছে। নাদিয়া তখন হাসি মুখে তাকে জানিয়েছে যে যখন তার ছেলের সাথে যে এক সাথে থাকা শুরু করবে তখন সে আর কাজ কারবে না । একেবারে গৃহিনী হয়ে থাকবে।

এটা শোনার পরে ভদ্রমহিলা আর বেশি উচ্চ বাচ্চ করে নি। আর নাদিয়া তার শ্বশুর বাড়িতেও থাকে না। এখনও আগের মতই নিজের বাবার বাসাতেই থাকছে। এটা নিয়েও কথা হয়েছে। নাদিয়ার বাবা ওকে শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে থাকতে বলেছে কয়েকবার তবে নাদিয়া তাতে কান দেয় নি । বাবাকে একটু ইমোশনাল ব্লাকমেইল করেছে। বলেছে যে কদিন পরে তো একেবারে দেশ ছেড়ে চলেই যাবে, এই কথা দিন না হয় তোমাদের সাথে থাকি। এই কথার উপরে আর কথা চলে না। আর নাদিয়ার বাবা লতিফ সাহেব মেয়েকে খানিকটা জোর করে এবং তাড়াহুড়া করেই আমেরিকান প্রবাসী ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছেন। নাদিয়ার কোন আপত্তি শোনে নি। সেই হিসাবে নিজের মাঝেও এক ধরণের অপরাধবোধ কাজ করে তার । মাঝে মাঝে মাঝে লতিফ সাহেবের মনে হয় মেয়েকে এতো দূরে না পাঠালেও চলত। দেশেই তো ভাল ছেলে রয়েছে কত ! কেন যে তাড়াহুড়া করে বিয়ে দিয়ে দিলেন ! তাই মেয়ে যখন তার শ্বশুর বাড়ি যেতে চান না তখন যে তাকে আর জোর করেন না। এমন কি মেয়ের চাকরি নিয়েও তার কোন আপত্তি নেই। যে কটা দিন দেশে আছে মেয়ে যা ইচ্ছে করুক। আমেরিকাতে গেলে তখন স্বামীর মন মত চলবে।

নাদিয়ার অপেক্ষা শেষ হল দুপুরের লাঞ্চ আওয়ারের পরে । রিয়াদ নিয়েই এসে হাজির হল । কোন কথা বলতে হল না। চোখের ইশারাতেই ওকে নিয়ে অফিসের ছাদে গিয়ে হাজির হল সে । ছাদটাকে অফিসের কর্মীরা স্মোকিং জোন হিসাবে ব্যবহার করে। তবে এখন এটা পুরোটাই ফাঁকা । দুপুরের খাবারের পরে এখানে একটা ভীড় লেগে থাকে কর্মীদের সিগারেট খাওয়া নিয়ে। তবে এখন সেই সময় পার হয়ে গেছে। সবাই চলে গেছে যে যার মত ।

কিছু সময় ওরা পাশাপাশি চুপ করে বসে রইল। নাদিয়া নিজের মোবাইল বের করে এটা ওটা দেখতে লাগল । বিশেষ করে গতকাল গাজিপুরের রিসোর্টের ছবি গুলো । ওখানে দুজন গিয়েছিল এক সাথে।

-আমাদের এ ছবিটা বেশ ভাল হয়েছে । তাই না?

একটা ছবি বের করে দেখালো রিয়াদকে। রিয়াদ সেটা দেখল, তারপর বলল, হ্যা!

নাদিয়া আরেকটা ছবি দেখালো । ছবিটা একটা সেলফি! ছবিতে নাদিয়া আর রিয়াদ সুইমিং পুলের ভেতরে । নাদিয়ার পরনে একটা টিশার্ট আর কালো লেগিংস। মূলত এই ছবিটা তোলার পরেই ওরা নিজেদের উপরে নিয়ন্ত্রন হারিয়েছিল। ওখান থেকেই রিসোর্টের ঘরে গিয়ে হাজির হয় তারপর …

নাদিয়া দৃশ্যটা আরেকবার কল্পনা করল। কিভাবে যে রিয়াদ ওকে চুমু খেয়েছিল সেটা ভাবতেই নাদিয়ার পুরো শরীরটা আরেকবার কেঁপে উঠল । একেবারে শেষ মুহুর্তে রিয়াদ নিজেকে নিয়ন্ত্রন করে নিইয়েছিল। তারপর দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। নাদিয়া কিছু সময় ঘরে বসে ছিল। সেই সময়ে রিয়াদের উপর তার প্রচন্ড রাগ জন্মেছিল। রাগটা যে ঠিক কোন কারণে সেটা নিয়ে নাদিয়া এখনও খানিকটা সন্দিহান। পরে ওরা দুজনেই আলাদা ভাবে ঢাকায় ফিরে এল ।

রিয়াদ মুখ খুলল একটু পরে, আমি গতকালকের ঘটনার জন্য সরি!

-কোনটার জন্য?

-মানে?

-মানে কোন ঘটনার জন্য? আমাকে ওভাবে চুমু খাওয়ার জন্য নাকি ওভাবে চলে আসার জন্য?

রিয়াদ কিছুটা সময়ের জন্য থমকে গেল। নাদিয়ার মনভাব সে ঠিক যেন বুঝতে পারল না। নাদিয়া ঠিক কোন দিকে ইঙ্গিত করছে? নাদিয়া বলল, যদি চুমু খাওয়ার জন্য সরি বল তাহলে, বলার দরকার নেই। কারণ ওটাতে আমাদের দুইজনের অংশগ্রহন ছিল । হ্যা, আমাকে ওভাবে একলা ফেলে ঘর থেকে চলে যাওয়ার জন্য সরি বলতে পারো !

রিয়াদ আরও কিছু সময় তাকিয়ে রইলো নাদিয়ার দিকে। তারপর বলল, তুমি জানো এটা অন্যায় । তুমি বিবাহিত !

নাদিয়া তীব্র কন্ঠে কিছু বলতে গিয়েও বলল না । নিজেকে সামলে নিল। রিয়াদের উপরে একটু অভিমান হল । রিয়াদ তো সব জানে। সব কথা ওকে বলেছে। কিভাবে ওকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে ওর ইচ্ছের বিরুদ্ধে । রিয়াদকে সে সব বলেছে।

রিয়াদ বলল, আমি সব জানি । কিন্তু তারপরেও এটা অন্যায় হয়েছে আমাদের । আমাদের এতো দূরে যাওয়া ঠিক হয় নি । আমরা লিমিট ক্রস করেছি।

নাদিয়া বলল, বুঝলাম। আর কিছু বলবা?

রিয়াদ যেন একটু হতাশ হল । সে নাদিয়ার কাছ থেকে অন্য রকম উত্তর আশা করেছিল । কিন্তু হঠাৎ করে এমন ঠান্ডা জবাবে একটু দমে গেল। রিয়াদ চুপ করে গেল। নাদিয়া বলল, আর কিছু না বললে আমি ডেস্কে ফিরে যাই । যা হয়েছে আর হবে না। ঠিক আছে ?

-শোনো !

-কী?

রিয়াদ একটু ইতস্তঃ করল। তারপর বলল, আমি ঠিক করেছি আমাদের পুরান ঢাকা ব্রাঞ্চে চলে যাব।

-কেন?

-কারণ তোমার কাছ থেকে আমি নিজেকে আর দূরে রাখতে পারবো না গতদিনের ঘটনার পরে। কোন ভাবেই সম্ভব না আমার পক্ষে । তাই চলে যাওয়াই আমাদের দুজনের জন্য ভাল।

নাদিয়া একটু আগে যে অভিমানটা করেছিল রিয়াদের উপরে সেটা মুহুর্তের ভেতরে ভেঙ্গে চুড়মার হয়ে গেল । সে রিয়াদের চোখের দিকে তাকিয়ে রইল কিছু সময় । রিয়াদকে যে ওকে ভালবাসে সেটা নাদিয়া খুব ভাল করে জানে । ওর চোখ চিৎকার করে এই কথা সব সময় এই কথা বলে। রিয়াদের আচরণও তাই বলে। এতো দিন রিয়াদ নিজেকে নিয়ন্ত্রন করে রেখেছে নাদিয়া অন্যের বউ বলে। তবে গতদিনে ওদের ভেতরে যা হয়েছে তা সব দেয়াল ভেঙ্গে দিয়েছে ওদের ভেতরে। এখন রিয়াদের পক্ষে নিজেকে দূরে রাখা সত্যিই কষ্টের সেটা নাদিয়া নিজেও জানে । এবং কেবল রিয়াদের পক্ষেই না, তার নিজের পক্ষেও এই নিয়ন্ত্রন অনেকটাই অসম্ভব একটা ব্যাপার।

নাদিয়া হঠাৎ করে রিয়াদের কাছে এগিয়ে এল । তারপর ওর ঠোঁটে চট করে একটা চুমু খেল । রিয়াদ বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করল না একদমই। নাদিয়া বলল, যদি তুমি এখান থেকে চলে যাওয়ার কোন চেষ্টা কর তাহলে এই ছাদ থেকে আমি ছাপ দিব নিচে। তখন একেবারে মুক্ত হয়ে যাবে। ঠিক আছে !

রিয়াদকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে নাদিয়া সিড়ির দিকে রওনা দিল । মনে মনে একটু হাসল কেবল। গতকার রাতেই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে সামিকে সে ডিভোর্স দিয়ে দিবে। আমেরিকা সে যাবে না। আর তার সাথে সংসারও করবে না । অবশ্য সামির সাথে সংসার ওর শুরুই হয় নি ।

নাদিয়ার বাবা লতিফ সাহেব অনেকটা জোর করেই নাদিয়াকে বিয়ে দিয়েছেন সামির সাথে। লতিফ সাহেবের এক কলিগের পরিচিত পাত্র। সেই কলিগই খোজ নিয়ে এল । ছেলে আমেরিকার সিটিজেন। পিএইচডি করে গিয়েছিল । এখন সেখানকার একটা বড় কোম্পানীতে চাকরি করে। দেশে এসেছে বিয়ে করতে । খুব জলদিই আবার চলে যাবে। এছাড়া ছেলেদের ঢাকার বাড়িও আছে।

লতিফ সাহেবের মনে হল যেন এই ছেলের থেকে ভাল ছেলে আর হতেই পারে না। কারো কথা না শুনে এবং  জোর করে নাদিয়াকে সামির সাথে বিয়ে দিয়ে দিল। বাসর রাতে সামি যখন নাদিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ হতে চাইল নাদিয়া তাকে একেবারে পরিস্কার ভাবেই জানিয়ে দিল যে এসব এখন কিছুই হবে না। ওর ইচ্ছের বিরুদ্ধে এই বিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং এই ব্যাপারটা মেনে নিতে ওর সময় লাগবে। আগে নিজেকে সে বুঝিয়ে শান্ত করবে তারপর সে ঐদিকে যাবে। আর এখন যেহেতু তাদের সংসার শুরু হচ্ছে না, কয়েকদিনের ভেতরেই সামি আমেরিকা চলে যাবে তাই এসব দিকে নাদিয়া এখন যাবে না । যখন এক সাথে নিজেকে সংসার শুরু হবে তখন এসব নিয়ে ভাবা যাবে। এর আগে না।

সামি খানিকটা অসন্তুষ্ট হলেও মেনে নিয়েছিল । সেদিন রাতে দুজন ঘুমিয়ে পড়ল । সপ্তাহ খানেক পরেই সামি আবার আমেরিকায় ফিরে গেল। তার দুইদিন পরে নাদিয়া ফিরে এল নিজের বাসায় । প্রথম প্রথম সামি খুব ফোন করত, ভিডিও কলে কথা হত ওদের । নাদিয়া নিজেকে খানিকটা বুঝাতে পেরেছিল যে একটা নিশ্চিত ভবিষ্যৎ ওর জন্য অপেক্ষা করছে । এখন সেদিকে যাওয়াই ওর জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

তবে মাস দুয়েক যেতে না যেতেই সামির কলের পরিমান কমে গেল । নাদিয়াও খানিকটা একা হয়ে গেল । ততদিনে নাদিয়ার পড়াশোনা শেষ হয়েছে। হুট করেই একটা চাকরিও জুটে গেল । সেখানেই রিয়াদের সাথে পরিচয় । একদিকে সামির থেকে কম যোগাযোগ অন্য দিকে রিয়াদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ, স্বাভাবিক ভাবেই যা হওয়ার তাই হল। একে অন্যের কাছাকাছি চলে এল ওরা।

নাদিয়া নিজেও জানে এটা অন্যায় একটা কাজ। কিন্তু এই অন্যায় কাজটা থেকে নিজেকে সে দূরে রাখতে পারছে না। মনে মনে একেবারে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছে যে সামির সাথে সংসার করবে না । আজকে প্রায় দেড় বছর হয়ে গেছে সামির সাথে বিয়ে হয়েছে। কথা ছিল মাস ছয়েকের ভেতরেই নাদিয়াকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবে । যদি ছয় মাসের ভেতরেই নাদিয়া চলে যেত তাহলে আজকে হয়তো এই অন্যায় সম্পর্কের ভেতরে ওরা কেউ জড়াত না ।

##

কিন্তু ভাগ্য ওদের পক্ষেই ছিল । নাদিয়া নিজের পরিবার নিয়ে একটু চিন্তিত ছিল । বাবার কথার উপরে সে কখনই কথা বলে নি কোন দিন। তাই তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে রিয়াদকে বিয়ে করাটা একটু কঠিন হয়ে যাবে নাদিয়ার জন্য। ওর বাবা কোন দিন মেনে নিবে না এই সম্পর্ক । যদিও রিয়াদ কোন দিক দিয়েই খারাপ নয়। তারপরেও তার বাবা এই সম্পর্ক যে মেনে নিবে না সেটা সে জানে খুব ভাল ভাবেই। তবে এবার সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছে দরকার হলে সবার অমতে গিয়েই সে বিয়ে করবে। তারপরে সে রিয়াদকে বিয়ে করে ছাড়বে। কিন্তু নাদিয়াকে এতো কিছুর ভেতরে দিয়ে যেতে হল না।

রাতের খাবার পরে নাদিয়া নিজের ঘরে রিয়াদের সাথে কথা বলছিল। তখনই তার বাবা ঘরের দরজায় নক দিল। নায়িয়া রিয়াদকে লাইনে রেখেই দরজা খুলে দিল । বাবার মুখ গম্ভীর দেখে ওর মনের ভেতরে একটা কেমন অনুভূতি হল। মনে হল হয়তো ওর আর রিয়াদের ব্যাপারটা সে জেনে গেছে। এখন হয়তো তাকে বকাবকি করবে।

-কিছু বলবে বাবা?

-তোর সাথে কয়েকটা কথা বলা যাবে?

-হ্যা এসো ! কী হয়েছে?

লতিফ সাহেব ঘরের ভেতরে ঢুকলেন ধীর পায়ে । তারপর নাদিয়ার বিছানার উপর বসতে বসতে বললেন, সামির সাথে যোগাযোগ হয়?

নাদিয়া একটু সংযত হয়ে বলল, হয় তবে কম।

-শেষ কবে কথা হয়েছে?

-আট দশ দিন আগে।

-মা রে আমাকে তুই মাফ করে দিস!

নাদিয়া অবাক হয়ে গেল বাবার কথায়। বাবার কাছে গিয়ে বলল, কী হয়েছে বাবা ! এমন কেন করে কেন বলছো?

-সামি একটা চিটার !

-মানে?

-হ্যা। আমাদেরকে যা বলেছিল তার সব কিছু মিথ্যা । সব।

নাদিয়া কোন কথা না বলে বাবার দিকে তাকিয়ে রইল। লতিফ সাহেব বললেন, ওরা বলেছিল যে সামি নাকি পিএইচডি করতে গেছে কিন্তু সেটা মিথ্যা কথা। আগে সে কাতার গিয়েছিল। সেখান থেকে সে অবৈধ পথে গিয়েছিল কানাডা, সেখান থেকে আমেরিকা। সেখানে একটা মেয়ের সাথে কন্ট্যাক্ট ম্যারেজ করে সিটিজেনশীপ পেয়েছে।

-এরপর ?

-এখন ওখানে ট্যাক্সি চালায়। আমার এক বন্ধু থাকে আমেরিকাতে । মঞ্জুর । তোর বিয়ের ছবি আমি দেখিয়েছিলা ওকে । ভাগ্য ক্রমে একদিন তার ট্যাক্সিতেই চেপে বসে সে । দেখে চিনতে পারে। পরে সন্দেহ হওয়াতে খোজ নেয়। জানতে পারে যে সামিই হচ্ছে সেই ট্যাক্সি চালক।

ঘরের ভেতরে কেউ কোন কথা বলল না । নাদিয়ার কি আনন্দিত হওয়া উচিৎ না?

নাদিয়া তবে নাদিয়া সেটা মোটেই প্রকাশ করল না। নিজেকে সংযত করে নিল । সেই সাথে মুখের ভাব খানিকটা মন খারাপের করে নিল । যেন ওর খুব মন খারাপ হয়েছে।

লতিফ সাহেব এবার মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, আমাকে তুই মাফ করে দিস রে মা !

-এ কথা কেন বলছো?

-নয়তো কী !

-তুমি মন খারাপ কর না।

-এখন কী করবি তুই?

-তুমি কি চাও তোমার মেয়ে ট্যাক্সি চালকের ঘর করুক?

-না চাই না । বেটা একবার আসুক দেশে । ওদের পুরো পরিবারকে আমি জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়ব !

-বাবা এতো চিন্তা কর না । সব ঠিক হয়ে যাবে। কোন চিন্তা কর না তো । সব ঠিক হয়ে যাবে।

বাবাকে নিজের ঘরে পাঠিয়ে দিয়েই নাদিয়া ফোনটা আবার কানে নিল । তো মিস্টার রিয়াদ রহমান। শুনলেন তো?

ওপাশ থেকে রিয়াদের গলার আওয়াজ পাওয়া গেল না । তবে মৃদ্যু গানের আওয়াজ ভেসে আসছে । নাদিয়ার কেন জানি মনে হল রিয়াদ এই গানের তালে তালেই নাচছে।

গল্পের কারণে যদিও মনে হতে পারে এভাবে নাদিয়ার রিয়াদের কাছে যাওয়াটা ঠিক ছিল। তবে পরকীয়া কখনই পরিস্থিতির স্বীকার কিংবা বাধ্য হয়ে করা কোন ঘটনা না। পরকীয় সব সময় একটা চয়েজ ।

আমার একটা অনুবাদ গ্রন্থ বের হইছে এই মেলায় । মেলায় ১০০ নম্বর স্টলে পাওয়া যাবে বইটা । এছাড়া অনলাইন থেকে কিনতে এখানে ক্লিক করুন ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.5 / 5. Vote count: 33

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →