ঝুম বৃষ্টির উষ্ণ প্রেম

oputanvir
4.6
(47)

যখন টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো তখন প্রিয়ন্তির মেজাজটা আরো একটু বেশি খারাপ হতে শুরু করলো । আজকে বিকেলে থেকে প্রিয়ন্তির মেজাজ গরম হয়ে আছে । সে কিছুতেই এই অনুষ্ঠানে আসতে চায় নি । অদিব ওকে বলতে গেলে জোর করেই তার অফিসের এই অনুষ্ঠানে নিয়ে এসেছে । বসের ছেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠান । এখানে নাকি না আসলে বস রাগ করবে ।
সারাটা সপ্তাহ অদিব নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে । প্রিয়ন্তু নিজেও নিজের অফিস নিয়ে ব্যস্ত । তাই এই ছুটির দিনে আশা থাকে যে দুজন একান্তে কিছুটা সময় কাটাবে । কিন্তু কোন না কোন ঝামেলা এসেই যায় প্রায় দিনই । গত দুইটা শুক্রবার এমন করেই নষ্ট হয়েছে । একশুক্রবার অদিব গিয়েছিলো ওর বন্ধুদের সাথে রোড ট্রিপে । কথা দিয়েছিলো এই শুক্রবারটা একসাথে কাটাবে । কোন কাজ রাখবে না । অথচ আজকে ঠিক ঠিক ওকে সেই বোরিং অনুষ্ঠানে নিয়ে গিয়েছে ।

এখন ফেরার পথে শুরু হয়েছে বৃষ্টি । মেজাজটা আসলেই খারাপ হল প্রিয়ন্তি ।

আদিব নিজের বাইক থামালো ।
-কী হল? বাইক থামালে কেন?
-আরে বৃষ্টি নামছে । দেখছো না !

প্রিয়ন্তি নিজেও নামলো । আদিন বাইকের সিটটা তুলে সেখান থেকে একটা রেইন কোট বের করলো । তারপর সেটা প্রিয়ন্তির শরীরে জড়িয়ে দিল ভাল করে । বাইকে উঠলে প্রিয়ন্তি হেলমেট পরতে চায় না তবে এবার আদিব শুনলো না সেই অযুহাত । হেলমেটটাও পরিয়ে দিল ।
প্রিয়ন্তি বলল, তুমি কী করবে?
-আমার পরা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না ।

আবার যখন বাইক চলতে শুরু করেছে তখন বেশ জোড়েই বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে । প্রিয়ন্তু দেখলো দেখতে দেখতে অদিবের শরীর ভিজে উঠলো । মনটা একটু শান্ত হয়ে উঠলো । তবে একটা সময় বৃষ্টির জোর এমন বাড়লো যে কোন ভাবেই বাইক চালানো নিরাপদ মনে হল না অদিবের কাছে । নিজে একা থাকলে অদিন এসব কিছু মানে না। কিন্তু যখন প্রিয়ন্তি সাথে আছে তখন সাবধান হতেই হয় ।
অদিব বাইকটা থামালো একটা ছাউনির কাছে । সেখানে কিছু মানুষজন দাড়িয়ে রয়েছে বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেতে । সেখানেই প্রিয়ন্তকে নিয়ে দাড়ালো ।

প্রিয়ন্তু দেখলো সামনের শার্ট একেবারে ভিজে গেছে । মাথার চুল থেকে পানি পরছে । রেইনকোর্টের কারণে প্রিয়ন্তির শরীর ভেজে নি । আদিব যেন একটু একটু কাঁপছে । প্রিয়ন্তির হঠাতই মনটা একটু শিক্ত হয়ে উঠলো । নিজের ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে আদিবের মাথার চুল মুছে দিতে লাগলো ।
পাশে দাড়ানো রয়েছে বেশ কয়েকজন মানুষ । তারা দেখছে ।
দেখুক !
কী যায় আসে তাতে । সে তার স্বামীর মাথার চুল মুছে দিতেই পারে ।
ভেজা শার্টটা বদলে দিতে পারলে ভাল হত !

-চা খাবে?

প্রিয়ন্তি তাকিয়ে দেখলো একটা ভ্রাম্যমান চাওয়ালাও রয়েছে তাদের সাথে বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেতে সেও ছাউনির ভেতরে এসে বসেছে । ঠান্ডার কারণে অনেকে তার কাছ থেকে চা কিনে খাচ্ছে ।
প্রিয়ন্তির উত্তরের অপেক্ষা না করেই আদিব দুটো চায়ের অর্ডার দিল । চা চলে এল দ্রুত । ওরা ভীড়ের একদিকে দাড়িয়েছে । প্রিয়ন্তির গায়ে এখনও রেইনকোর্ট তবে সেটার মুখটা খোলা । বৃষ্টির ভেতরে ছাড়া রেইনকোর্ট পরে থাকলে খুব গরম লাগে । চায়ের কাপ হাতে নিয়ে প্রিয়ন্তি কিছু সময় অন্ধকার বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে রইলো ।

হঠাৎ করেই প্রিয়ন্তির মনটা একদম ভাল হয়ে গেল । এই যে অপরিচিত জায়গাতে আদিবের সাথে এখানে দাড়িয়ে চা খাচ্ছে এটা কিন্তু চমৎকার লাগছে ওর সাথে । জায়গা অপরিচিত হলেও অদিব তো সাথেই রয়েছে । এটাই সব থেকে আনন্দের ব্যাপার । এই রকম সময় তো আর আসে না খুব একটা ।

-কাল কোথাও বের হব না । একদম কথা দিলাম ।
প্রিয়ন্তি বৃষ্টি দেখছিলো । পাশ থেকে অদিবের কথা শুনে ফিরে তাকালো । বলল, কী বললে?
-বললাম কাল একদম সকাল থেকে রাত তোমার সাথে । ঘর থেকেই বের হব না । ঠিক আছে !
-ঢং ! এই রকম কথা কত দিলে !
-কাল রাখবো । আমি জানি আজকে তুমি খুব বিরক্ত হয়েছো । কিন্তু কী করবো বল বসের দাওয়াত । স্পেশালী বলে দিয়েছে যেন তোমাকে নিয়ে যাই ।

প্রিয়ন্তি দেখলো অদিব কেমন অপরাধীর মত মুখ করে কথা গুলো বলছে । প্রিয়ন্তির বড় মায়া লাগলো । একটু একটু কাঁপছে যেন বৃষ্টির ঠান্ডায় । প্রিয়ন্তি বলল, ওকে । এখন আর এসব বলে লাভ নেই ।

তারপর হাসলো । অদিব বুঝলো যে এই হাসিতেই কাজ হয়েছে । এই হাসি মানে যে আর রেগে নেই প্রিয়ন্তি । প্রিয়ন্তি বলল, চল যাওয়া যাক ।
-এখনও বৃষ্টি থামে নি তো ।
-যথেষ্ঠ থেমেছে । এর ভেতরে বাইক চালাতে পারবে না?

অদিব বৃষ্টির দিকে তাকালো । এখন আগের মত আর ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে না । এর ভেতরে বাইক চালানো যাবে । বলল, হ্যা যাবে ।
-তাহলে চল ।

এই বলে প্রিয়ন্তি নিজের রেইনকোর্ট খুলতে যাচ্ছিলো অদিব বলল, আরে আরে কী করো ! তুমি ভিজে যাবে তো !
-হ্যা এটাই প্লান !
প্রিয়ন্তি রেইণকোর্টা ভাজ করেই বাইকের সিটের নিচে রাখলো । সেই সাথে দুজনের পার্ট আর মোবাইলফোন দুটোও । এগুলো নিরাপদ থাকলে আর কিছু চিন্তা নেই ।

বাইক নিয়ে যখন ওরা আবার বের হল তখনও বেশ ভাল বৃষ্টি পড়ছে । তবে রাত হওয়ার কারণে রাস্তায় মানুষজন খুব একটা নেই । বাইক চলতে শুরু করার কিছু সময় পরেই ওরা দুজনই ভিজে গেল বেশ ভাল ভাবেই । প্রথমে একটু ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব লাগলেও এক সময়ে প্রিয়ন্তির বেশ মজাই লাগতে শুরু করলো । অদিবকে খানিকটা জড়িয়েই ধরলো সে । মানুষজন এখনও রাস্তায় আছে । ওদের দেখছে। তাতে কিছুই যায় আসে না অবশ্য ।

-চল বসিলার দিকে যাই ।
-এখন?
-হ্যা চল । সমস্যা কী?
-এই রাতের বেলা ওদিকে যাওয়া কি ঠিক হবে ?
-আরে বাবা চলতো চলচল চলচল ।

একটু নিম রাজি হলেও শেষ পর্যন্ত যেতে রাজি হল । বাইকটা আরও মিনিট পনের চলার পরে গিয়ে হাজির হল বসিলা ব্রিজের উপরে । এখন এখানে মানুষজন নেই । আসার পথে পড়েছে পুলিশ লাইন আর অন্য দিকে র‌্যাব অফিস । তাই জায়গাটাও নিরাপদ । আর তাছাড়া এই বৃষ্টির ভেতরে এখানে কেউ আসবেও না । কেবল মাঝে মাঝে একটা দুটো বাস কিংবা ট্রাক চলে যাচ্ছে ।

প্রিয়ন্তি পুরোপুরি ভিজে গেছে । বাইক থেকে নেমে সে নিচের পানির দিকে তাকালো । একটু পরেই অনুভব করলো যে অদিব ঠিক ওর পেছনে এসে দাড়িয়েছে । তারপর ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো ।

যতই মানুষজন না থাকুক আশে পাশে এভাবে খোলা স্থানে জড়িয়ে ধরাটা একটু অস্বস্তির ব্যাপার বটেই । তবে প্রিয়ন্তি ওকে ছাড়িয়ে দিল না । বলল, কী ব্যাপার জনাব, খুব রোমান্টিক মনে হচ্ছে !
-হ্যা ।
এই বলেই অদিব ওকে একটু শক্ত করেই জড়িয়ে ধরলো । প্রিয়ন্তি এই বৃষ্টির ঠান্ডা পানির ভেতরেও অদিবের শরীরের উষ্ণতা ঠিক ঠিক অনুভব করতে পারছিলো ।

কত সময় ধরে যে ওরা ব্রিজের উপরে ছিল সেটা ওরা কেউ বলতে পারবে না ঠিকঠাক মত । তবে এটা নিশ্চিত ছিল যে আরও বেশি সময় থাকলে হয়তো নিজেদের উপরে আরও বেশি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলতে পারতো । এমন কিছু হয়ে গেলে ব্যাপারটা একটু অশোভনীয় হয়ে যেত ! যতই ওরা স্বামী স্ত্রী হোক না কেন !

যখন আবার ওরা বাইকটা ওদের বাসার দিকে চলতে শুরু করলো তখন প্রিয়ন্তির মনে এক আনন্দময় অনুভূতি ভরে রয়েছে । দুপুর থেকেই ওর মেজাজটা ছিল চরম তিক্ত আর বিরক্তিতে ভরা অথচ এই সময়ে এই ঠান্ডা বৃষ্টিতেও ওর মনে ভরে আছে উষ্ণ ভালোবাসার অনুভূতিতে ভরে আছে ।

গল্পের লিংক সরাসরি পেতে হোয়াটস গ্রুপ কিংবা টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন করুন । লিংক পাবেন এই ওয়েবসাইটের একেবারে নিচে । এছাড়া ইমেল সাবক্রিপশন করতে পারেন । গল্প প্রকাশের সাথে সাথে লিংক চলে যাবে আপনার কাছে ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.6 / 5. Vote count: 47

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →