প্রাক্তন ও বর্তমান

oputanvir
4.8
(53)

মিমি খুব অস্বস্তি নিয়ে বসে আছে লবিতে । এখনও ওর মনে হচ্ছে যে এখানে আসাটা কি ঠিক হল? এই রকম ভাবে নিলুর কথা শুনে এখানে চলে আসাটা মোটেই ঠিক হয়নি । তবে এখন আর এসব ভেবে খুব একটা লাভও নেই । রিয়া নামের মেয়েটার সাথে কথা বলে ফেলেছে সে । এবং কিছু সময়ের ভেতরেই সে চলে আসবে । এখন যদি ও এখান থেকে চলে যায় তাহলে ব্যাপারটা আরও অদ্ভুত দেখবে । তবে নিলয় যাতে এই সবের কিছুই জানতে না পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে ওকে ।

রিয়া মেয়েটা কেমন হবে মিমি তার কোন ধারণা নেই । তবে নিতু বলেছে রিয়া মেয়ে হিসাবে খুবই ভাল । ওর পরিবার মানে নিলয়ের পরিবারের সবাই রিয়া আর নিলয়ের ভেতরকার সম্পর্কের কথা জানতো । ওদের বিয়ের ব্যাপারেও নাকি কারো আপত্তি ছিল না । কিন্তু তারপর হঠাৎ করেই নাকি ওদের ভেতরে ব্রেকআপ হয়ে যায় । কী কারণে ব্রেকআপ হয়েছে সেটা কেউ ই বলে নি কাউকে । কেবল একে অন্যের থেকে দুরে চলে গেছে ।

আজকে অবশ্য মিমি এই কারণ জানতে আসে নি । মিমি এসেছে রিয়ার কাছে সাহায্য চাইতে । মিমি কয়েকদিন থেকে খুব করে অনুভব করছে যে নিলয়কে কিভাবে খুশি করা যায় সেই ব্যাপারগুলো জানতে । কিন্তু মানুষ হিসাবে নিলয় খুবই চুপচাপ । মিমির সাথেও বেশ চুপচাপ । তবে স্বামী হওয়ার সকল দায়িত্ব সে ঠিক ঠিক পালন করে চলেছে । কয়েকদিন আগে মিমির শরীর খারাপ করেছিলো হঠাৎ । প্রায় দুইদিন তার জ্বর ছিল । এই পুরোটা সময়ে নিলয় একেবারে মিমির পাশে ছিল । আসলে মিমি এই রকম আদর কেয়ার পেয়ে ঠিক অভ্যস্ত নয় । ছোট বেলা থেকে মামা মামীর কাছে মানুষ হয়েছে । অনেক গুলো ভাইবোন থাকার কারণে ওর বাবা মা ওকে নিজেদের কাছে রাখতে পারে নি । মামার কাছে মানুষ ।

তাই বিয়ের পর নিলয়ের কাছ থেকে ঐ রকম কেয়ার পেয়ে প্রথমে ঠিক বিশ্বাসই করতে পারে নি । বারবার কেবল চোখ ভিজে উঠছিলো । আর নিলয়ের মনে হচ্ছিলো হয়তো কষ্ট হচ্ছে ওর । এই কারণে নিলয় আরো ব্যস্ত হয়ে উঠছিলো । এটা মিমির খুব বেশি ভাল লাগছিলো । সুস্থ হওয়ার পরে তাই সে নিলয়ের আরও কাছে যেতে উঠে পড়ে লেগেছে ।

নিতুকে ব্যাপারটা বলতেই নিতু বলল, শোন ভাবী ভাইয়ার মন পেতে তোমাকে আলাদা কিছুই করতে হবে না । সে এমনিতেই তোমার কেয়ার করবে । একটু সে চুপচাপ তবে তোমার সব দিকে তার খেয়াল । তোমাকে আলাদা ভাবে কিছু করতে হবে না ।

-না তবুও । মানে আমি যদি জানতে পারতাম ও আলাদা ভাবে কী কী পছন্দ করে কী করলে ওর ভাল লাগবে তাহলে খুব ভাল হত । নিজের ভাই, কিছু তো সাহায্য কর !

-আরে আমি ওসব জানি না । যা জেনেছি তোমাকে তো বলেছি । তবে আরো ভাল করে জানতে হলে তুমি রিয়া আপুর সাথে যোগাযোগ করতে পারো । ভাইয়াকে সে খুব ভাল ভাবে চিনতো । বুঝতো । যদি কেউ সাহায্য করতে পারে তবে সে করবে !

রিয়ার নাম সে নিলয়ের মুখেই শুনেছে । রিয়া তার প্রাক্তন প্রেমিকা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তারা ক্লাস মেট ছিল । সেখান থেকে প্রেম । মিমি প্রথমে একটু ইতস্তর করলো । তারপর বলল, সে কি সাহায্য করবে?

-আরে করবে করবে ! আমি তোমাকে নম্বর দিচ্ছি । তুমি যোগাযোগ করে দেখো ।

যদিও মনের ভেতরে একটু ইতস্তর রইলোই । কী না কী মনে করে এই ভেবে প্রথম দুইদিন মিমি ফোনই দিল না । তবে আজকে ফোন দিয়েই ফেলল । পরিচয় দিতেই চিনে ফেলল । এবং খুব সহজেই ওকে সময় দিয়ে দিল , অফিসের ঠিকানা দিয়ে বলল যে চাইলেই মিমি লাঞ্চ আওয়ারে আসতে পারে । দুপুরের খাওয়াটা এক সাথে খাওয়া যাবে ।

রিয়াকে মিমি আগে দেখে নি তবে যখন রিয়া সামনে এল তখন মিমির বলে দিতে হল না । মেয়েটা দেখতে বেশ সুন্দর । ওর কাছে এসে খুব আন্তরিক ভাবে হাসলো । মিমি বুঝলো যে ওকে রিয়া আগে থেকেই চিনে । হয়তো ছবি দেখেছে । মিমির দিকে তাকিয়ে রিয়া বলল, আমি আসলে বুঝতে পারছি না তুমি কেন এসেছো ? তুমি করেই বললাম । ছোটই হবে আমার থেকে ।

-না ঠিক আছে । তুমি করেই বলুন ।

-আমাকে নিয়ে কি তোমাদের মাঝে কোন ঝামেলা হয়েছে । আই মিন এক্সকে নিয়ে অনেকেই সমস্যা করে অবশ্য !

-না না তেমন কিছু নয় ।

-তাহলে ?

-কোথাও বসে বলি?

-ও হ্যা অবশ্যই । চল সামনেই একটা ক্যাফে আছে । লাঞ্চটা ওখানেই করা যাক একসাথে ।

খাবারের অর্ডার দিয়ে ওরা বসলো কোনার দিকের একটা টেবিলে । মিমি তখনও খানিকটা সময় ইতস্তর করছে । কিভাবে বলবে সেটা ভাবছে । রিয়া বলল, এবার বল কী নিয়ে কথা বলতে চাও?

মিমি আরো কিছুটা সময় নিয়ে বলল, জানি না আপনি কেমন ভাবে নিবেন আর নিলয় যদি জানে সেই বা কেমন ভাবে নিবে বুঝতে পারছি না । রাগ করতে পারে অবশ্য ।

-হ্যা করতে পারে । তবে আমি ওকে বলছি তুমিও বলবে না । তাহলেই হয়ে গেল । ওর সাথে অবশ্য আমার যোগাযোগ নেই ।

-আমি জানি নেই । আসলে আমি আপনার একটু হেল্প চাই ।

-কী ব্যাপারে ?

-নিয়লের ব্যাপারে । নিতু বলল যে আপনি ওকে খুব ভাল করে বুঝতেন । জানতেন ওকে ।

এই প্রশ্নের জবাবটা রিয়া খুব জলদিই দিল না । একটু যেন উদাস হয়ে রইলো । তারপর বলল, হ্যা আমাদের বন্ধুত্ব ছিল খুব ভাল । প্রেমিকার হওয়ার আগে ওর বন্ধু ছিলাম আমি ।

-ও খুব চুপচাপ । আমি আসলে বুঝতে পারছি না কী করলে ও খুশি হবে । ও আমার প্রতিখুব কেয়ারফুল । আমার কখন কী দরকার সব জানে অথচ আমি জানিই না কী করলে ও খুশি হবে ।

রিয়া হাসলো । তারপর বলল, তোমার আসলে কিছুই করতে হবে না । তুমি ওর প্রতি লয়্যাল থাকো । ব্যস । আর কিছুই লাগবে না ।

-তবুও আপু । কিছু যদি বলেন !

ততক্ষণে খাবার চলে এসেছে । রিয়া খাবার মুখে দিতে দিতে বলল, লেট মি থিংক ।

তারপর কিছু চিন্তা করলো কিছু সময় । এরপর বলল, ওকে শুনো কিভাবে ওকে খুশি করবে বলি । বিড়ালের স্বভাব চেনো তো । সব সময় শরীর ঘেষে থাকে । নিলয় যখন বাসায় থাকবে সব সময় ওর কাছাকাছি থাকবে । যখন পাশে বসবে শরীর ঘেষে বসবে । হাত ধরবে । টিভি দেখছো একটা হাত ওর হাতে নিয়ে বসবে । আর তোমার সব কাজে ওর সাহায্য নিবে । লাইক ধর বোয়ামের মুখ খুলতে ডাক দিলে ওকে । শপিংএ যাবে ওকে জোর করে নিয়ে যাবে । হ্যা মুখে যতই বিরক্ত দেখাক এটা ওর ভাল লাগবে। ঠিক আছে ?

মিমি মাথা নাড়ালো ।

-আর সব সময় লয়্যাল থাকবে । যদি কোন ছেলে বন্ধুর সাথে বাইরে যাও তবে অবশ্যই ওকে জানিয়ে যাবে । ও কখনই তোমাকে বাইরে যেতে মানা করবে না । তবে যদি ওকে জানিয়ে যাও কিংবা ধর বললে জানতে চাইলে যাবে কিনা তাহলে ও খুশি হবে খুব । ঠিক আছে ।

-আচ্ছা ।

-মাঝে মাঝে নিজ হাত দিয়ে খাইয়ে দিবে । যদি সুচিবায়ুর সমস্যা না থাকে তাহলে ওর প্লেট থেকে খাবার নিয়ে খেতে পারো । আর …

-আর ?

-আর মেকাপ দিবে কম । সাজগোজ পছন্দ করে না ও । যত কম সাজবে দেখবে তোমার দিকে ততবেশি তাকাবে ও । ঠোঁটে লিপস্টিক দিবে না একদমই । আর বাসায় যখন থাকবে তখন একটু টাইট ফিটিং পোশাক পরবে । লেগিংস টিশার্ট এই টাইপের । ওকে ।

মিমি বলল, জ্বী আচ্ছা ।

-এই তো । এসব করলেই চলবে ।

আর কিছু টুকটাক কথা বলল ওরা । তারপরই মিমি প্রশ্নটা করলো । ভেবেছিলো করবে না তবুও করেই ফেলল । আপনি আপনি এতো ভাবে ওকে বুঝেন, আপনাদের ভেতরে ব্রেক আপ কেন হয়েছিল? যদি বলতে সমস্যা না থাকে আর কি !

মিমি দেখলো যে রিয়ার মুখটা আবারও সেই উদাস হয়ে গেল । কিছু সময় চুপ থেকে রিয়া বলল, আসলে ওর দোষ ছিল না একদম । মাস্টার্সের পর আমি চাকরির জন্য কিছুদিন ঢাকার বাইরে ছিলাম । তখন আমার এক কলিগের সাথে আমার এফেয়ার হয় । আমি আসলে চিট করেছিলাম । যদি আমি ওকে না বলতাম হয়তো কোন দিন আমাকে সন্দেহ করতো না । তবে ওর দিকে আবার যখন আমি তাকালাম নিজেকে এতো ছোট আর ক্ষুদ্র মনে হল যে সেই ভার আমি বহন করতে পারলাম না । তখন মনে হল আই ডোন্ট ডিজার্ভ হিম !

কিছু সময় কেউ কোন কথা বলল না । একটা সময়ের পরে রিয়া বলল, তবে তোমাকে দেখে খুব ভাল লাগছে । ছবিতে দেখেছিলাম তবে বাস্তবে তুমি আরো সুন্দর । আর এই যে আমার কাছে এসেছো নিলয়ের ব্যাপারে জানতে এটা প্রমান করে যে তুমি  কত খানিক ডেডিকেটেড । এটা জেনে সত্যই খুব ভাল লাগছে যে নিলয় একজন চমৎকার সঙ্গী পেয়েছে । আমি সত্যিই আজকে খুব বেশি খুশি ।

-আমি কি আপনার সাথে আবার যোগাযোগ করতে পারি পরে?

-হ্যা অবশ্যই । কোন সমস্যা নেই ।

পরিশিষ্টঃ

-এই নাও কফি।

নিলয় এক হাতে কফির কাপটা নিল । দেখলো মিমির হাতেও একটা কাপ । রাতের খাওয়ার পরে নিলয় কিছুটা সময় টিভি দেখে । এই সময়ে কফি খাওয়ার অভ্যাস অনেক দিনের । আগে নিজেই বানিয়ে খেত তবে এখন মিমি নিজেই বানিয়ে নিয়ে আসে । কদিন ধরে দেখতে মিমিও ওর সাথে বসেই কফি খাচ্ছে এবং ওর পাশে বসে টিভি দেখতে বসছে । এবং বসতে একেবারে শরীর ঘেষে । এই ব্যাপারটা নিলয়ের বেশ ভাল লাগছে ।

এছাড়া মিমি কদিন থেকে বাসায় সব সময়ই নিলয়ের টিশার্ট পরছে । প্রথম দিন দেখে বেশ অবাক হয়েছিলো । সেই সাথে খুশিও হয়েছিলো খুব । আজকে পরেছে ওর কালো টিশার্ট আর নিচে একটা লাল লেগিংস । পায়ে পায়েল ।

নিলয়ের পাশে বসতে বসতে মিমি বলল, শোন কালকের কথা মনে আছে তো !

-কোনটা ?

-আরে বাবা বললাম না মার্কেটে যাবো । আমি তোমার অফিসের গিয়ে হাজির হব। ঠিক আছে?

-আচ্ছা ঠিক আছে ।  

নিলয়ের মনে হঠাৎ কেন জানি একটা আনন্দের রেখা বয়ে গেল । মিমি একদম ওর শরীর ঘেষে বসেছে । ওর শরীরের উষ্ণ ছোঁয়া মনআলাদা একটা আনন্দ এনে দিচ্ছে । এই আনন্দের কোন ব্যাখ্যা ওর জানা নেই ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 53

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

One Comment on “প্রাক্তন ও বর্তমান”

  1. এরকমটা তো বাস্তব এ হয় না হয়তো!

Comments are closed.