ল্যাম্পপোস্টের নিচে

oputanvir
4.8
(48)

আমার কেবল নিশাকে দেখার ইচ্ছে ছিল । আর কিছু না । আমি জানি নিশা ভেতরে আছে । একটু আগেই আমি ওর চেকইনটা দেখতে পেয়েছি এখানে । সাথে একটা ছবিও দিয়েছে । টিউশনি থেকে ফেরার পথেই এই রেস্টুরেন্টটা পড়ে । নিজের মনকে শতবার সংশোধন করে বাসার পথে যাওয়ার চেষ্টা করলাম বটে তবে সেটায় কোন কাজ হল না । মনের অন্য যে দিকটা নিশাকে প্রবল ভাবে দেখতে চাইছিলো বারবার কেবল এই অযুহাত দিচ্ছিলো যে দুর থেকে একটু দেখেই চলে যাবো । কোন ঝামেলা হবে না ।

তবে কেবল দুর থেকে যাওয়া হল না । আমি রেস্টুরেন্টের কাছে সাইকেল থেকে নেমে একটু ভেতরের দিকে তাকালাম । এবং তখনই নিশাকে দেখতে পেলাম । এই রেস্টুরেন্টটার ভেতরের থেকে বাইরে বসার জায়গা বেশি .। বেশির ভাগ ইয়াং ছেলেমেয়েরা বাইরেই বসে আড্ডা দেয় । নিশাও বসে ছিল বাইরে । আমি ওকে দেখতে পেলাম । এবং সমস্যা হল নিশাও আমাকে দেখে ফেলল । আমি অবশ্য পালাতে চাইলাম সাথে সাথেই কিন্তু কাজ হল না । নিশা আমার নাম ধরে জোরে ডাক দিল ।

বাধ্য হয়ে ঘুরে তাকাতে হল । ততক্ষণে নিশা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়িয়েছে । আমার দিকে প্রায় দৌড়ে এল । আমার সামনে এসে বলল, অপু তুমি এখানে?
আমি একটু হাসলাম। তারপর বললাম, বাসায় ফিরছিলাম টিউশনি থেকে । মনে যে তোমাকে দেখলাম ! তাই ..
নিশা হাসলো একটু । আমার মনে হল যে ও ঠিক ঠিক বুঝতে পারলো যে আমি আসলে ওকে দেখার জন্যই এখানে এসেছি । বলল, আসো ওদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই ।
-না না ঠিক আছে ।
-আরে আসো না বাবা ।
-প্লিজ না । আমি আসলে ….

আমি আসলে বলতে পারলাম না যে আমি কেন নিশার বন্ধুদের সাথে পরিচিত হতে চাই না । তবে নিশা ঠিকই বুঝে নিল কারণটা তাই আর জোর না আমাকে । তবে আমাকে অবাক করে দিয়ে আরেকটা কাজ করলো । বলল, এখানে দাড়াও। যাবা না কিন্তু ।

বলেই পেছনে ঘুরে বন্ধুদের টেবিলের ওখানে গেল । কী যেন বলল ওদের । তারপর আবার ঘুরে আমার দিকে হাটা দিল । আমার সামনে এসে বলল, চল । ঐ দোকানে চা খাওয়া যাক ।

আমি তাকিয়ে দেখলাম একটু দুরে ফুটপাতে একটা চায়ের দোকানকে নির্দেশ করছে । আমি সত্যিই এটার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না । মানে ও ভাবে আমার সাথে রাস্তার পাশে ফুটপাতের দোকানে চা খেতে চাইবে এটা আমার মাথাতেই আসে নি । আমি ওকে নিয়ে ফুটপাতে বসে চা খেলাম । চা নিয়ে আমরা কথা বলতে শুরু করলাম । কিন্তু চা খাওয়ার পরে ঘটলো আরও একটা ঘটনা । নিশা আমার সাথে সাইকেলে উঠতে চাইলো। আমি খানিকটা অবাক চোখেই তাকিয়ে রইলাম কেবল । আমি অনুভব করতে পারছিলাম যে মনের ভেতরে একটা তীব্র আনন্দের অনুভূতি এসে জড় হয়েছে ।

আমার সাইকেলে ঠিক সামনের রডে ও বসলো । আমি যখন ওকে নিয়ে সাইকেলে উঠলাম তখন অনুভব করতে পারলাম যে আমার বুকের ভেতরে একটা তীব্র স্পন্দন হচ্ছে । সেটা যেন এখনই বুকের ভেতর থেকে বের হয়ে আসবে ।
পুরো ধানমন্ডিতে আমরা ঘুরে বেড়ালাম । রাত হয়ে গেছে বলে এখন গাড়ির সংখ্যা অনেক কম । একটা সময়ে একটা রাস্তার পাশে এসে ও সাইকেল থামাতে বলল । আমাকে জানালো যে একটু সামনেই ওদের বাসা । আমি জানতাম যে নিশাদের বাসা এখানেই ।

তবে আমাকে ও চলে যেতে বলল না । বলল যে এখানে একটু বসতে । আমরা বসলাম ল্যামপোস্টটার নিচে । জায়গাটা একেবারে রাস্তার শেষ মাথায় । এরপরেই লেক শুরু হয়েছে । এখানে বেশ কয়েকটা গাছপালা রয়েছে । রয়েছে বসার জায়গা ।
খানিক সময় কেবল চুপ করেই বসে রইলাম । আসলে কী যে বলবো সেটা ঠিক আমার মাথায় আসছিলো না। আমার কেবল মনে হচ্ছিলো যে আমি যাই বলি না কেন আমি ঠিক ঠিক সব উল্টে পাল্টে ফেলবো । কোন কিছুই এখন ঠিক মত আমার মুখ দিয়ে বের হবে না ।

নিশা বলল, আমি আসলে আজকে খুব চাচ্ছিলাম যে তুমি আসো ।
আমি কোন কথা না বলে তাকিয়ে রইলাম । নিশার কথা ঠিক মত বুঝতে পারলাম না । নিশা বলল, আমি গতদিন তোমাকে এই পথ দিয়ে যেতে দেখেছিলাম । এখানে আমি প্রায়ই আসি বন্ধুদের নিয়ে । তুমি গতকাল এই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিলে, তাই না ?
-হু। এটা আমার ফেরার পথ ।
-আজকে তাই ইচ্ছে করেই চেকইণ দিলাম ছবি দিলাম যাতে তুমি দেখতে পাও । বারবার করে গেটের দিকে তাকাচ্ছিলাম ।

আমি অপলক চোখে তাকিয়ে রইলাম নিশার দিকে । আমার ব্যাপারটা হজম করতে খানিকটা কষ্ট হচ্ছে । কিন্তু তারপর নিশা যা করলো তা আজকের রাতের সব কিছুকে ছাপিয়ে গেল । আমার একেবারে কাছে এগিয়ে এসে আলতো করে আমার ঠোঁটে চুমু খেল । তারপর বলল, নিজেকে আমার কাছ থেকে আর লুকিয়ে রাখবে না, কেমন?
তারপর হাসলো । সেই ল্যাম্পপোস্টের নিচে আমার কাছে হঠাৎ সব কিছু যেমন মায়াবী মনে হতে শুরু করলো । মনে হতে থাকলো যে আমি যেন হঠাৎ করেই ভিন্ন এক জগতে চলে এসেছি । স্বপ্নের কোন এক দেশে ।
-এই কী দেখো ওমন করে?
আমি কোন মতে বললাম, তুমি কীভাবে জানলে ?
-তুমি যেভাবে আমার দিকে তাকাও এই দৃষ্টি মেয়েদের চোখ এড়ায় না বুঝলে । একেবারে ভেতরটা দেখা যায় । কেবল আমি না ক্লাসের সবাই টের পেয়ে গেছে ঠিকই ।
আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম । বললাম সরি ।
-সরি কেন?
-এই তোমকে বিব্রত অবস্থায় ফেলে দিলাম ।
নিশা হাসলো । তারপর বলল, সমস্যা নেই । কেবল এভাবে তাকিও তাহলেও চলবে ।

আরও কিছু সময় থাকার ইচ্ছে ছিল টবে নিশার ফোনে ফোন এসে হাজির । ওর বাসা থেকে ফোন এসেছে । ওকে বাসায় যেতে বলছে । আমি ওর সাথে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে গেলাম । নিশা বলল, কাল এই সময়ে ঐ ল্যাম্পপোস্টের নিচে এসো ফেরার সময়ে । কেমন !
-আচ্ছা ।

আমি একেবার যখন রাস্তার অন্য মাথায় গিয়ে হাজির হলাম তখনই তাকিয়ে দেখি নিশা গেটের কাছে দাড়িয়ে রয়েছে । আমার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়লো । আমার তখনই কেন জানি মনে হল আবার ওর কাছে ছুটে যাই । আবারও বসি ঐ ল্যাম্পোস্টের নিচে । তবে সেটা করা হল না । আগামীকাল আবারও দেখা হবে এই ভাবনা মনকে আচ্ছন্ন করে রাখলো আমাকে কেবল ।
আগামীকাল ল্যাম্পপোস্টের নিচে । এখানেই আমাদের ভালোবাসার গল্প শুরু হল।

গল্পের লিংক সরাসরি পেতে হোয়াটসএপ গ্রুপ কিংবা টেলিগ্রামে যুক্ত হতে পারেন । লিংক পাবেন এই ব্লগসাইট নিচে, ডান দিকে।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 48

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →