আমার কেবল নিশাকে দেখার ইচ্ছে ছিল । আর কিছু না । আমি জানি নিশা ভেতরে আছে । একটু আগেই আমি ওর চেকইনটা দেখতে পেয়েছি এখানে । সাথে একটা ছবিও দিয়েছে । টিউশনি থেকে ফেরার পথেই এই রেস্টুরেন্টটা পড়ে । নিজের মনকে শতবার সংশোধন করে বাসার পথে যাওয়ার চেষ্টা করলাম বটে তবে সেটায় কোন কাজ হল না । মনের অন্য যে দিকটা নিশাকে প্রবল ভাবে দেখতে চাইছিলো বারবার কেবল এই অযুহাত দিচ্ছিলো যে দুর থেকে একটু দেখেই চলে যাবো । কোন ঝামেলা হবে না ।
তবে কেবল দুর থেকে যাওয়া হল না । আমি রেস্টুরেন্টের কাছে সাইকেল থেকে নেমে একটু ভেতরের দিকে তাকালাম । এবং তখনই নিশাকে দেখতে পেলাম । এই রেস্টুরেন্টটার ভেতরের থেকে বাইরে বসার জায়গা বেশি .। বেশির ভাগ ইয়াং ছেলেমেয়েরা বাইরেই বসে আড্ডা দেয় । নিশাও বসে ছিল বাইরে । আমি ওকে দেখতে পেলাম । এবং সমস্যা হল নিশাও আমাকে দেখে ফেলল । আমি অবশ্য পালাতে চাইলাম সাথে সাথেই কিন্তু কাজ হল না । নিশা আমার নাম ধরে জোরে ডাক দিল ।
বাধ্য হয়ে ঘুরে তাকাতে হল । ততক্ষণে নিশা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়িয়েছে । আমার দিকে প্রায় দৌড়ে এল । আমার সামনে এসে বলল, অপু তুমি এখানে?
আমি একটু হাসলাম। তারপর বললাম, বাসায় ফিরছিলাম টিউশনি থেকে । মনে যে তোমাকে দেখলাম ! তাই ..
নিশা হাসলো একটু । আমার মনে হল যে ও ঠিক ঠিক বুঝতে পারলো যে আমি আসলে ওকে দেখার জন্যই এখানে এসেছি । বলল, আসো ওদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই ।
-না না ঠিক আছে ।
-আরে আসো না বাবা ।
-প্লিজ না । আমি আসলে ….
আমি আসলে বলতে পারলাম না যে আমি কেন নিশার বন্ধুদের সাথে পরিচিত হতে চাই না । তবে নিশা ঠিকই বুঝে নিল কারণটা তাই আর জোর না আমাকে । তবে আমাকে অবাক করে দিয়ে আরেকটা কাজ করলো । বলল, এখানে দাড়াও। যাবা না কিন্তু ।
বলেই পেছনে ঘুরে বন্ধুদের টেবিলের ওখানে গেল । কী যেন বলল ওদের । তারপর আবার ঘুরে আমার দিকে হাটা দিল । আমার সামনে এসে বলল, চল । ঐ দোকানে চা খাওয়া যাক ।
আমি তাকিয়ে দেখলাম একটু দুরে ফুটপাতে একটা চায়ের দোকানকে নির্দেশ করছে । আমি সত্যিই এটার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না । মানে ও ভাবে আমার সাথে রাস্তার পাশে ফুটপাতের দোকানে চা খেতে চাইবে এটা আমার মাথাতেই আসে নি । আমি ওকে নিয়ে ফুটপাতে বসে চা খেলাম । চা নিয়ে আমরা কথা বলতে শুরু করলাম । কিন্তু চা খাওয়ার পরে ঘটলো আরও একটা ঘটনা । নিশা আমার সাথে সাইকেলে উঠতে চাইলো। আমি খানিকটা অবাক চোখেই তাকিয়ে রইলাম কেবল । আমি অনুভব করতে পারছিলাম যে মনের ভেতরে একটা তীব্র আনন্দের অনুভূতি এসে জড় হয়েছে ।
আমার সাইকেলে ঠিক সামনের রডে ও বসলো । আমি যখন ওকে নিয়ে সাইকেলে উঠলাম তখন অনুভব করতে পারলাম যে আমার বুকের ভেতরে একটা তীব্র স্পন্দন হচ্ছে । সেটা যেন এখনই বুকের ভেতর থেকে বের হয়ে আসবে ।
পুরো ধানমন্ডিতে আমরা ঘুরে বেড়ালাম । রাত হয়ে গেছে বলে এখন গাড়ির সংখ্যা অনেক কম । একটা সময়ে একটা রাস্তার পাশে এসে ও সাইকেল থামাতে বলল । আমাকে জানালো যে একটু সামনেই ওদের বাসা । আমি জানতাম যে নিশাদের বাসা এখানেই ।
তবে আমাকে ও চলে যেতে বলল না । বলল যে এখানে একটু বসতে । আমরা বসলাম ল্যামপোস্টটার নিচে । জায়গাটা একেবারে রাস্তার শেষ মাথায় । এরপরেই লেক শুরু হয়েছে । এখানে বেশ কয়েকটা গাছপালা রয়েছে । রয়েছে বসার জায়গা ।
খানিক সময় কেবল চুপ করেই বসে রইলাম । আসলে কী যে বলবো সেটা ঠিক আমার মাথায় আসছিলো না। আমার কেবল মনে হচ্ছিলো যে আমি যাই বলি না কেন আমি ঠিক ঠিক সব উল্টে পাল্টে ফেলবো । কোন কিছুই এখন ঠিক মত আমার মুখ দিয়ে বের হবে না ।
নিশা বলল, আমি আসলে আজকে খুব চাচ্ছিলাম যে তুমি আসো ।
আমি কোন কথা না বলে তাকিয়ে রইলাম । নিশার কথা ঠিক মত বুঝতে পারলাম না । নিশা বলল, আমি গতদিন তোমাকে এই পথ দিয়ে যেতে দেখেছিলাম । এখানে আমি প্রায়ই আসি বন্ধুদের নিয়ে । তুমি গতকাল এই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিলে, তাই না ?
-হু। এটা আমার ফেরার পথ ।
-আজকে তাই ইচ্ছে করেই চেকইণ দিলাম ছবি দিলাম যাতে তুমি দেখতে পাও । বারবার করে গেটের দিকে তাকাচ্ছিলাম ।
আমি অপলক চোখে তাকিয়ে রইলাম নিশার দিকে । আমার ব্যাপারটা হজম করতে খানিকটা কষ্ট হচ্ছে । কিন্তু তারপর নিশা যা করলো তা আজকের রাতের সব কিছুকে ছাপিয়ে গেল । আমার একেবারে কাছে এগিয়ে এসে আলতো করে আমার ঠোঁটে চুমু খেল । তারপর বলল, নিজেকে আমার কাছ থেকে আর লুকিয়ে রাখবে না, কেমন?
তারপর হাসলো । সেই ল্যাম্পপোস্টের নিচে আমার কাছে হঠাৎ সব কিছু যেমন মায়াবী মনে হতে শুরু করলো । মনে হতে থাকলো যে আমি যেন হঠাৎ করেই ভিন্ন এক জগতে চলে এসেছি । স্বপ্নের কোন এক দেশে ।
-এই কী দেখো ওমন করে?
আমি কোন মতে বললাম, তুমি কীভাবে জানলে ?
-তুমি যেভাবে আমার দিকে তাকাও এই দৃষ্টি মেয়েদের চোখ এড়ায় না বুঝলে । একেবারে ভেতরটা দেখা যায় । কেবল আমি না ক্লাসের সবাই টের পেয়ে গেছে ঠিকই ।
আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম । বললাম সরি ।
-সরি কেন?
-এই তোমকে বিব্রত অবস্থায় ফেলে দিলাম ।
নিশা হাসলো । তারপর বলল, সমস্যা নেই । কেবল এভাবে তাকিও তাহলেও চলবে ।
আরও কিছু সময় থাকার ইচ্ছে ছিল টবে নিশার ফোনে ফোন এসে হাজির । ওর বাসা থেকে ফোন এসেছে । ওকে বাসায় যেতে বলছে । আমি ওর সাথে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে গেলাম । নিশা বলল, কাল এই সময়ে ঐ ল্যাম্পপোস্টের নিচে এসো ফেরার সময়ে । কেমন !
-আচ্ছা ।
আমি একেবার যখন রাস্তার অন্য মাথায় গিয়ে হাজির হলাম তখনই তাকিয়ে দেখি নিশা গেটের কাছে দাড়িয়ে রয়েছে । আমার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়লো । আমার তখনই কেন জানি মনে হল আবার ওর কাছে ছুটে যাই । আবারও বসি ঐ ল্যাম্পোস্টের নিচে । তবে সেটা করা হল না । আগামীকাল আবারও দেখা হবে এই ভাবনা মনকে আচ্ছন্ন করে রাখলো আমাকে কেবল ।
আগামীকাল ল্যাম্পপোস্টের নিচে । এখানেই আমাদের ভালোবাসার গল্প শুরু হল।
গল্পের লিংক সরাসরি পেতে হোয়াটসএপ গ্রুপ কিংবা টেলিগ্রামে যুক্ত হতে পারেন । লিংক পাবেন এই ব্লগসাইট নিচে, ডান দিকে।
Discover more from অপু তানভীর
Subscribe to get the latest posts sent to your email.