সেহরি টেলসঃ ১৩ নম্বর খুন

oputanvir
4.6
(37)

মেয়েটি আমার দিকে বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রইলো কেবল । মেয়েটি আমার ১৩ নম্বর শিকার । আজকে দিয়ে মোট ১৩টা খুন আমি করতে যাচ্ছি । আনলাকি থার্টিন বলে একটা কথা আছে । এতো সুন্দর একটা মেয়ে আন লাকি থার্টিন নম্বর খুন হতে যাচ্ছে সেটা ভাবতেই আমার খুব খারাপ লাগছে । এই মেয়েটার জন্য একটা চমৎকার নম্বর হলে ভাল হত । অবশ্য মেয়েটারই দুর্ভাগ্য বলা চলে ।
তা না হলে আজকের দিনেই মেয়েটাকে কেন এই মিডল চেয়ারে বসতে যাবে ?
কোন দরকার ছিল কি?
মেয়েটার কপাল আসলে খারাপ !
সত্যিই খারাপ !

আচ্ছা মেয়েটির নাম কী ?
জিজ্ঞেস করবো নাকি?
নাহ দরকার নেই । আগের ১২টা খুনের ব্যাপারে তো কারো নাম জানতে চাই নি । ইচ্ছে হয় নি । আগের বারোটার বেলাতে ওরা কেবল ছিল আমার শিকার ! এই ১৩ নম্বর টাও কেবল আমার শিকার । আর কিছুই নয় ।

মেয়েটি মাটি থেকে উঠতে চেষ্টা করলো । প্রথম আঘাতটা খুব বেশি জোরে মারি নি । মেয়েটার সুন্দর মুখের উপরে যে বিস্ময় দেখা দিয়েছিল সেটার কারণেই আসলে এমনটা করেছি । কিন্তু মাস খানেক আগে যাকে আমি মেরেছিলাম প্রথম আঘতটাই যথেষ্ঠ ছিল । মেয়েটা দেখতে মোটেই সুন্দর ছিল না । অথচ এই মেয়েটা বেশ চমৎকার দেখতে !

মেয়েটা আরেকবার চেষ্টার পর উঠে বসলো । সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কাতর কন্ঠে বলল, আমাকে যেতে দাও । আমি তোমার কোন ক্ষতি করি নি ।
আমি একটু হাসলাম । তারপর বললাম, অবশ্যই তুমি আমার কোন ক্ষতি কর নি ।
-তাহলে কেন করছো ? আমাকে যেতে দাও ।
-করছি কারণ তুমি ঐ মাঝের চেয়ারে বসেছিলে!

মেয়েটা সম্ভবত আমার কথা ঠিক মত বুঝতে পারলো না । অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো । আমার মনে হল মেয়েটাকে বলা উচিৎ কেন সে মারা যাচ্ছে । যদিও এর আগের কোন শিকারকেই এই কারণটা ব্যাখ্যা করি নি । করার কোন দরকার মনে হয় নি । কিন্তু কেন জানি এই মেয়েটার বেলাতে আমার কারণ ব্যাখ্যা করতে ইচ্ছে করছে । আসলে আমি যখন আসল কারণটা বলবো তখন মেয়েটার চোখে মুখে যে বিস্ময়টা আমি দেখতে পাবো সেটা দেখার লোভ আমি সামলাতে পারছি না । বললাম, তুমি সপ্তাহের শেষ সোমবার জনসন রোড পার্কের একেবারে শেষ চেয়ার সারির মাঝের টাকে বসেছিলে ।
মেয়েটি আমার কাছ থেকে আরো কিছু শোনার অপেক্ষা করছিলো । আমি তাকে বললাম, এটাই কারণ । আমি আসলে এভাবেই আমার শিকার ধরি । প্রতি মাসের শেষ সোমবার আমি গিয়ে হাজির হই ঐ পার্কে । তারপর নজর রাখি ঐ চেহারটার উপরে । যেই ঐ মিডল চেয়ারে বসে তার পিছু নেই । সময় সুযোগ মত তারপর তাকে উপরে পাঠিয়ে দিই ।

মেয়েটি এবার বিম্ময় নিয়ে কেবল তাকিয়ে রইলো আমার দিকে । কেউ যে কেবল এই কারণে কাউকে খুন করতে পারে সেটা সম্ভবত মেয়েটির মাথায় ঢুকছে না । ঢোকার কথাও না ।
আমি আবারও বললাম, মন খারাপ করো না । তুমিই কিন্তু প্রথম না । এর আগে আরো ১২ জন মানুষকে আমি ঠিক একই কারণে মেরেছি । তুমি হচ্ছো ১৩ নম্বর । দ্য আনলাকি থার্টিন । এবার তোমার পালা !

মেয়েটির আমার দিকে তীব্র একটা ভয় নিয়ে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । আমি কয়েক থাপ এগিয়ে গেলাম । আমার হাতে একটা বড় বাকারি । এটা দিয়েই এখন সোজা মেয়েটার মাথায় আঘাত করবো । তারপর যত সময় না সে মারা যাচ্ছে তত সময়ে আঘাত করেই যাবো । এভাবে পিটিয়ে মারবো ।

আমি যখন মেয়েটির দিকে আরও একটু এগিয়ে গেলাম তখনই ব্যাপারটা খেয়াল করলাম । একটু আগেও মেয়েটার চোখে মুখে যে ভয় ছিল সেটা এখন আর নেই । তার বদলে সেখানে একটা কৌতুকের হাসি রয়েছে । আমার দিকে তাকিয়ে মেয়েটি একটা হাসি দিল । তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে মেয়েটা বলল অনেক খুজে পেলাম তোমাকে !
-এ্যা ! আমাকে?
-হ্যা । তোমাকে কতদিন ধরে খুজছিলাম জানো ! শেষ পর্যন্ত এলে !
-মানে?
-মানে হচ্ছে তুমি হয়তো ভাবছো আমাকে তুমি ফলো করছিলে কিন্তু আসলে কাহিনী হল আমিই তোমাকে ফলো করছিলাম । আমি ইচ্ছে কলরে তোমার ঐ চেয়ারে বসেছি যাতে তুমি নিজ থেকে আমার কাছে আসো ! আমি জানি যে তুমি কী করো আর কেন করো !

এবার আমার অবাক হওয়ার পালা ! আমি যেন আমার নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলাম না । আমার মনে হল মেয়েটা সম্ভবত মিথ্যা বলছে । আমার মনের কথা যেন মেয়েটা বুঝতে পারলো । চোখের পলকে মেয়েটা উঠে দাড়ালো । আমি অবাক হয়ে দেখলাম মেয়েটার হাতে একটা পিস্তল উঠে এসেছে । আমি কোন কিছু বোঝার আগেই মেয়েটি গুলি চালালো । তবে সেখান থেকে কোন আওয়াজ হল না । চাপা একটা মৃদু শব্দ হল এবং সাথে সাথেই আমি তীব্র একটা ব্যাথা অনুভব করলো । আমার পেটের ঠিক মাঝে একটা তীব্র ব্যাথা অনুভব করলাম । আমার হাত থেকে বাকারিটা পরে গেল ।

মেয়েটি আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল, শেষ কোন ইচ্ছে আছে তোমার?
আমি মেয়েটার দিকে ঘোল চোখে তাকালাম । চিন্তা ভাবনা সব ঘোলা হয়ে আসছে । কোন দিন ভাবি নি আমার সাথে এমন কিছু হবে ।

আমি দেখলাম মেয়েটি আমার কপালের ঠিক মাঝখানে পিস্তল তাক করেছে । মুখে হাসি নিয়ে মেয়েটা বলল, তোমার যেমন মাঝের চেয়ার নিয়ে সমস্যা । আমার তেমনি মাঝের স্থান নিয়ে খুব ফেটিস আছে । আমি সব সময় আমার শিকারের কপালের মিডলে গুলি করি । একটা দারুন ফুটো হয়ে থাকে । দেখে মনে হয় যেন লাল টিপ পরেছে । তুমিও আজ লাল টিপ পরবে কপালে !

আমি আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু সেটা বলতে পারলাম না । তারপর আগেই গুলির সেই চাপা শব্দ হল । আমি শব্দের সাথে একটা ঘুনের ঝলকানি দেখতে পেলাম । আমি নিশ্চিত গুলিটা ঠিক আমার কপালের মাঝ বরাবর এসে লাগবে !

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.6 / 5. Vote count: 37

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →