নাইরার নিয়ন্ত্রন

oputanvir
4.8
(63)

নাইরা শরীরটা রাগে জ্বলছে । গতকালকের ঘটনার পর থেকে সে নিজেকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করছে, নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না । বারবার মনে হচ্ছে যে খ্যাঁতা পুড়ি এই চাকরির ! ব্যাটার এতো বড় সাহস আসলো কোথা থেকে ! বস হয়েছে তো কী হয়েছে ! এভাবে একজন মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করার অধিকার কারো নেই ।

কেবিনের সামনে এসে নাইরা একটা বড় দম নিল । তারপর অনুমুতির তোয়াক্কা না করেই কেবিনের ভেতরে ঢুকে পড়লো । আজকে আসলে ওর এমন কোন ভয় নেই । আজকে ও এসেছেই এখানে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার জন্য । আজকে বসকে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই ।

দরজা ঠেলে ঢুকলেই দেখতে পেল সায়েমকে । নিজের চেয়ারে বসে একটা ফাইল দেখছে । ওকে এভাবে কেবিনে ঢুকতে দেখেই চোখ তুলে তাকালো । নাইরা সেটাকে বেশি পাত্তা দিল না । সে সরাসরি তার টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়ালো । তারপর বলল, কালকে আপনি ঐ কথা কেন বললেন ?
-কোন কথা ?
-আপনি জানেন না?
সায়েম এই প্রশ্নের উত্তর দিলো না । নাইরা বলল, আপনার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি । আপনি কোন সাহসে আমার বন্ধুকে ঐ কথা বললেন ! কোন সাহসে !
-তুমি আমার এমপ্লোয়ি !
-এমপ্লোয়ী মাই ফুট । আমি আপনার এখানে কাজ করি সেটা অফিস আওয়ারে । ছুটির দিনে আমি কী করি না করি কার সাথে ঘুরি ফিরি এই কৈফিয়ৎ আমি আপানকে দেব কেন?
-তোমার ভাল মন্দ ….
সায়েমকে লাইনটা শেষ করতে না দিয়ে নাইরা চিৎকারে বলল, ডোন্ট ফাক উইথ মি! ওকে ! আপনার চাকরির আমি খ্যাতা পুড়ি ! এরপরে যদি আমার আশে পাশে আপনাকে দেখি আপনার খবর আছে !

বলে রিজাইন লেটার টেবিলের উপর রাখলো । তারপর আর কিছু না বলার সুযোগ দিয়ে দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল ।

নাইরা যখন দরজা খুলে বের হল দেখতে পেল অফিসের অনেকেই ওর দিেক খানিকটা অবাক চোখে তাকিয়ে রয়েছে । নাইরা এতোটা চিৎকার করে তাদের বসের সাথে কথা বলতে পারে এটা সম্ভবত তারা বিশ্বাস করতে পারছিলো না । নাইরা অবশ্য এতো কিছু চিন্তা করলো না আর । নিজের ডেস্কে গেল । তারপর নিজের জিনিস পত্র নিয়ে বাড়ির দিকে হাটা দিল । এই অফিসে সে আর থাকবে না ।

দুই

কয়েকটা দিন নাইরার কোন ঝামেলা ছাড়াই কেটে গেল । তবে চাকরি ছাড়ার জন্য ওর বাসার লোকজন একটু অখুশি ছিল । নাইরার মায়ের মতে এই দেশের বসেরা নাকি এই রকম একটু করেই থাকে । তারা তাদের কর্মীদের নিজেদের চাকর মনে করে । সব সময় নিজেদের নিয়ন্ত্রনে রাখতে চায় । এই কারনেই এমন করে । আর কর্মচারিরাও নিজেদের চাকরি বাঁচাতে সেটা মেনেও নেয় ।
নাইরা চিৎকার করে বলেছিলো যে ওয়েল সবাই মেনে নিলেও আমি সেটা মানবো না । আমার অফিস আওয়ারের বাইরে আমার জীবন কোন ভাবেই অফিসের সাথে যুক্ত হবে না ।
নাইরার মা বলল, তাহলে চাকরি করতে হবে না আর ।
-দরকার হলে করবো না !

আরও সপ্তাহ খানেক পার হওয়ার পরে নাইরে চাকরি খোজা শুরু করলো । সেই সাথে ছাত্র জীবনের কাজে ফিরে গেল আবার । ছাত্র জীবন থেকেই নাইরা ফ্রিলাঞ্চার হিসাবে অনলাইনে কাজ করে আসছে । চাকরি পাওয়ার পরে সেটা একদম কমে গিয়েছিলো । আবার শুরু করে দিলো । চাকরি যদি নাও পায় তবুও খুব একটা সমস্যা হবে না ওর । তবে ওর পরিবার বলছে যদি চাকরি না করে তাহলে খুব জলদিই ওকে বিয়ে দিয়ে দিবে । এতো জলদি বিয়ে না করার জন্যই নাইরা আবারও চাকরি খোজা শুরু করলো ।

তবে এর মাঝে ঘটে গেল এমন একটা ঘটনা যা ওর জীবনকে একেবারে বদলে দিলো নাইরা ভেবেছিলো ওর জীবন থেকে সায়েব রহমান একেবারে হারিয়ে গিয়েছিলো । এই মানুষটাকে সে দেখার আশা রাখে নি । কিন্তু মানুষ জীবনে এমন অনেক ঘটনার সম্মুখীন হয় যা সে কখনই আশা করে নি । এমন একটা ঘটনা নাইরার সামনে এসে হাজির হল । সেদিন একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিয়ে সে বাসা ফিরছিলো । সময়টা ছিল শনিবার । মতিঝিলে শনিবার মানে একেবারে সব কিছু কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা । ঠিক এমন একটা ফাঁকা রাস্তার যখন নাইরা বাসের অপেক্ষা করছিলো সেই সময়ে একটা মাইক্রোবাস এসে ওর সামনে থামলো । ঠিক তখনই অনুভব করতে পালরো যে একজন মানুষ ওর পেছনেও চলে এসেছে । কিছু বুঝে ওঠার আগেই লোকটা ওকে পাজা করে চেপে ধরলো তারপর মাইক্রোতে তুলে নিলো । নাইরা চিৎকার করতে যাওয়ার আগেই একটা রুমাল চেপে ধরলো কেউ ওর মুখে । মিষ্টিএকটা সুবাস অনুভব করলো । তারপরই সব কিছু ধোঁয়াশা মনে হল ওর কাছে ।

তিন
নাইরার যখন জ্ঞান ফিরলো তখন অনুভব করলো ওর একটা নরম বিছানাতে শুয়ে রয়েছে । চোখ মেলে কিছু সময় বোঝার চেষ্টা রকলো সে কোথায় রয়েছে । তারপরই সব কিছু মনে পড়ে গেল ওর সাথে সাথে । সাথে সাথে একটা ভয় এসে জড় হল ওর মনে । ওকে একদম মানুষ কিডন্যাপ করে নিয়ে এসেছে । কিন্তু কেন?

ওর বাবা তো খুব বেশি বড়লোক না যে ওকে টাকা পয়সা দিয়ে উদ্ধার করবে । কোন মতে ওদের একটা ছোট ফ্লাট আছে ঢাকাতে । এর বেশি কিছু তো ওদের নেই । যদি বাবা টাকা দিতে না পারে তখন?
আর নাইরা শুনেছে যে এই রকম কিডন্যাপার টা মুক্তিপন পাওয়ার পরেও তাদের ভিক্টিমদের ছাড়ে না । মেরে ফেলে । আর সে একটা মেয়ে যদি মেরে ফেলার আগে ওর সাথে কিছু করে !
এসব চিন্তা ভাবনা মনের ভেতরে আসতেই একটা তীব্র ভয় এসে জড় হল ওর মনে । ওর এখন কী হবে ! ওর কিছু হলে ওর বাবা মায়ের কী হবে !

এমন সব চিন্তা ভাবনা যখন ওর মনের ভেতরে ঘুরপাক খাচ্ছে তখনই দরজা খুলে গেল । এবং সে মানুষটাকে ঘরের ভেতরে ঢুকতে দেখলো তাকে সে কোন ভাবেই এখানে দেখবে আশা করে নি ।

সায়েম রহমান !

-আপনি !
সায়েম রহমান হাসলো । তারপর বলল, হ্যা আমি !
-এসবের মানে কী !
-এসবের মানে হচ্ছে তুমি আমার সাথে বেয়াদবি করেছো । তুমি কী ভেবেছো যে এতো সহজে আমি তোমাকে ছেড়ে দিবো !
-আপনি আপনি আমি আপনাকে পুলিশ দেব ! আপনার ….
-হাহাহাহা । তোমার মনে হয় না তুমি আসলে এখন সেই পর্যায়ে নেই । যাই হোক এখন কী হবে তোমাকে বলি !

এই বলেই সে মোবাইল বের করে একটা ছবি বের করলো । তারপর সেটা নাইরার সামনে ধরলো । সাথে সাথে নাইরার চোখ বড় বড় হয়ে গেল । ছবিতে ওর মাকে দেখা যাচ্ছে বারান্দায় বসে আছে ।

সায়েম রহমান বলল, দেখছো তো ! এটা তোমার মায়ের ছবি । তোমার বাবারটাও আছে । এটা তোমাকে দেখানোর কারণ হচ্ছে যেখানে ক্যামেরা পৌছাতে পারে সেখানে বুলেট আরও সহজে পৌছাতে পারে । একটু পরে কাজি আসবে । এবং তুমি স্ব ইচ্ছেতে আমাকে বিয়ে করবে । এটা যদি কোন ঘাড় ত্যাড়ামি কর তাহলে আগে তোমার বাবা মা কে মেরে ফেলা হবে । এবং তোমাকে সেই ছবি দেখানো হবে ।

ভয়ে নাইরার শরীরটা ঠান্ডা হয়ে গেল । অসহায় ভাবে সায়েমের দিকে তাকিয়ে রইলো সে । সায়েম বলল, তুমি সেদিন বলেছিলে না আমি তোমার জীবনের উপর ইন্টারিয়ার যাতে না করি । এখন থেকে তোমার জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্ত আমি গ্রহন করবো । বুঝতে পেরেছো !

আধা ঘন্টা পরেই কাজী চলে এল । এবং সেখানেই সায়েমের সাথে নাইরার বিয়ে হয়ে গেল । নাইরা তখনও ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিল না যে সামনে বসা মানুষটা ওকে বিয়ে করেছে জোর করে এবং নাইরা কিছুই করতে পারে নি । সায়েমকে বিয়ে করেছে ।

কিন্তু সব থেকে বড় ধাক্কা খাওয়ার তখনও বাকি আছে । সায়েম নাইরাকে নিয়ে গাড়িতে করে ওর বাসায় সামনে গিয়ে হাজির হল । তারপর গাড়ির দরজা খুলে দিতে দিতে বলল, কাল সকালে অফিসে হাজির হয়ে যাবে । ঠিক আছে ? আগের মত করেই ।
নাইরা কোন কথা বলল না । কেবল গাড়ি থেকে সোজা বাসার দিকে হাটা দিল । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রায় দশটা বেজে গেছে । এতো রাত পর্যন্ত বাসার বাইরে থাকার কারনে বাসার লোকজন নিশ্চয়ই খুব চিন্তা করে আসে । তবে নাইরা ঠিক করলো যে এখন ও কোন কথাই বলবে না । ওর সাথে যা ঘটে গেছে সেটা আপাতত কাউকে জানানো যাবে না । আস্তে ধীরে বাসায় জানাতে হবে ।

কিন্তু যখন বাসায় ঢুকলো তখন আসল ধাক্কাটা খেল । দেখতে পেল বসার ঘরে একজন অপরিচিত মহিলা বসে ওর মায়ের সাথে গল্প করছে । দরজাটা খোলাই ছিল । ও ভেতরে ঢুকতেই সবাই ওর দিকে তাকালো । ওর মা হাসিহাসি মুখ করে বলল, কিরে জামাই কই?

ব্যাপারটা বুঝতে কিছু সময় লাগলো নাইরার । তারপর বলল, মানে ? তোমরা জানতে …..

নাইরা যেন মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে । নাইরা কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে ওর মায়ের দিকে । তারপর আর কোন কথা না বলে দৌড়ে চলে গেল নিজের ঘরের দিকে। ওর বিশ্বাস হচ্ছে না ব্যাপারটা ! কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না ! নিজের বিছানার শুয়ে সে ফোঁফাতে শুরু করলো । যখন সায়েম ওকে বিয়ে করছিলো তখনও ওর কান্না আসে নি কিন্তু এখন সব সত্য জেনে ওর কান্না আসছে খুব ।

একটা সময় অনুভব করলো যে ওর পিঠে কেউ হাত দিয়েছে । মুখ না তুলেই নাইরা বলল, মা এখন যাও । তোমার সাথে কথা বলতে মোটেও ভাল লাগছে না । তোমরা কীভাবে কাজটা করতে পারলে আমার সাথে ! কিভাবে ?

-আমি তোমার মা তবে সম্পর্কে তোমার শাশুড়ি হই ।

নাইরা একবার ভাবলো যে উঠবে না কিন্তু উঠে বসলো । শত হলেও সম্পর্কে সে শাশুড়ি আর মুরব্বী ।
ভদ্র মহিলা তাহলে সায়েমের মা । নাইরার দিকে বেশ কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বললেন, আমি জানি তুমি খানিকটা আপসেট । আমার ছেলের হয়ে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি ।
-ছিঃ ছিঃ ! আপনি কেন ক্ষমা চাইবেন ।
-মা হয়েছি বুঝোই তো । তবে আমার ছেলেকে তুমি ভুল বুঝো না কেমন । সে নিজের মনের কথা বলতে পারে না । তোমাকে সে সেই শুরু থেকে পছন্দ করে । বলতে পারো একেবারে প্রথম দেখা থেকেই । ছেলে মানুষ তো একটু জেলাসফিল করবেই যখন দেখবে তার পছন্দের মানুষ অন্য ছেলের সাথে ঘুরছে । এই কারণে সেদিন ওমন আচরণ করেছিলো । ভেবেছিলো তোমাকে জোর খাটিয়ে এসব করবে । কিন্তু সব মেয়ে তো আর ভয় পায় না । যেমন তুমি । যেদিন চাকরি ছেড়ে দিলে সেই দিন সায়েম সারা রাত ঘুমাতে পারে নি । তারপর থেকে কী যে অস্থির হয়ে দিন কাটিয়েছে সে ! শেষে আমি না পেরে তোমার খোজ করেছি । তোমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি । তোমার মা জানালো যে যে কোন ভাবেই তুমি বিয়েতে রাজি হবে না । তাই …..

কিছু সময় কেটে চুপচাপ । তারপর সায়েমের মা আবারও বলল, আমার ছেলেটাকে ভুল বুঝো না কেমন মা ! যদি সম্ভব হয় সব কিছু ভুলে গিয়ে একটু ওকে ভালোবাসার চেষ্টা করো ।

আরও কিছু সময় থেকে সায়েমের মা চলে গেলেন । আরও বলে গেলেন যে নাইরা আর সায়েমের মাঝে বোঝা পড়া ভাল হয়ে গেলেই তারা একটা অনুষ্ঠান করে বউ বাসায় নিয়ে যাবে ।

চার
নাইরা অফিসে যখন পা রাখলো তখন বেলা এগারোটা । ওকে ঢুকতে দেখে কয়েকজন এগিয়ে এসে কথা বলল। আবার ওকে চাকরিতে জয়েন করতে দেখে তারা খুশি । নাইরা সবার সাথে কথা বলে চলল সায়েমের কেবিনের দিকে । আজও যথারীতি কেবিনে নক না করেই ঢুকে পড়লো । সে এখন জানে যে ওপাশের মানুষটাকে আর ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই । সায়েব চুপচাপ বসে ছিল । ওর কেবিনে ঢুকতেই বলল, অফিসে এসেছো কত সময় আর এখন এলে কেবিনে?
নাইরা বলল, তো ! অফিসে এসেই নাচতে নাচতে আমার আপনার কেবিনে আসার দরকার ছিল আমার?
সায়েব খানিকটা দ্বিধা নিয়ে তাকালো নাইরার দিকে । নাইরা বলল, শুনুন মিস্টার, আপনি যদি ভেবে থাকেন যে আমাকে জোর করে বিয়ে করে আপনি আমার জীবনের উপর নিয়ন্ত্রন স্থাপন করেছেন তাহলে আপনি খুব ভুল করবেন ! বরং উল্টোটা করেছেন?
-মানে?
-মানে হচ্ছে আপনি তো আগে কোন মেয়ের সাথে এভাবে ইন্টারেকশন করেন নি । আপনার যা স্বভাব কোন প্রেমিকা নিশ্চিত ছিল না জীবেন । যাই হোক বউ যে কী চিজ সেটা আপনি বুঝবেন এখন থেকে ! এবং আপনি খুব ভাল করেই বুঝবেন যে আমাকে বিয়ের আগে আমার উপর আপনার যা নিয়ন্ত্রন ছিল এখন সেটাও আর নেই ।

নাইরা আর কিছু না বলে কেবিন থেকে বের হয়ে গেল । সায়েন কিছুটা সময় কেমন বোকার মত বসে রইলো । এমন কিছু যে নাইরা বলবে সেটা সায়েম ভাবতেও পারে নি । বরং ও ভেবেছিলো বিয়ের পরেই নাইরা একেবারে ওর নিয়ন্ত্রনে চলে আসবে । ওর কথা মত চলবে ।

এবং এক সপ্তাহের ভেতরে সায়েব সত্যি সত্যিই খেয়াল করলো যে নাইরা মোটেই ওর নিয়ন্ত্রনে নেই । বরং উল্টোটা হয়েছে । সায়েমই যেন ওর নিয়ন্ত্রনে চলে গেছে । কখন কী করতে হবে কী খেতে হবে সব নাইরা বলে দিচ্ছে । সব চেয়ে বড় সমস্যায় পড়েছে যে এই সাত দিনে সে একটা সিগারেটও খেতে পারে নি । নাইরে ওকে সিফারেট খেতে দেখে সবার আগে নিজে এসে মুখ থেকে সিগারেট ফেলে দিল । তারপর পকেট সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে ওর সামনে সেটা ডাস্টবিনে ফেলে দিলো । এমন কিছু যে ওর সাথে কেউ কোন দিন করতে পারে সেটা সায়েম কোন দিন ভাবতেও পারে নি ।
তবে এতো কিছুর পরেও সায়েমের কেন নাইরার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে মোটেই খারাপ লাগছে না ।

কিন্তু ঝামেলা বাঁধলো আরও কয়েকদিন পরে । একদিন বিকেশ অফিস শেষ করার একটু আগে আগেই বের হয়ে গেল । সায়েমের চোখ এড়ালো না সেটা । কী মনে করে সে নিজেও নাইরার পিছু নিল । এবং কিছু সময় পরে সে দেখতে পেল সেদিনের সেই ছেলের সাথে নাইরা গল্প করছে রেস্টুরেন্টে । আগের বার যখন এই ছেলের সাথে গল্প করতে দেখেছিলো তীব্র একটা রাগ হয়েছিলো । সরাসরি গিয়েই খানিকটা বকাবকি করেছিলো । কিন্তু আজকে সেটা করলো না । সায়েম অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো যে রাগের বদলে ওর তীব্র অভিমান হচ্ছে । নাইরার উপরে অভিমান হচ্ছে । সে তখনই গাড়ি নিয়ে নিজের বাসায় ফিরে গেল । দরজা বন্ধ করে বসে রইলো নিজের ঘরে । একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে ! বারবার কেবল মনে হচ্ছে নাইরা কেন ছেলেটার সাথে গল্প করতে গেল !
কেন !
কেন !

এর মাঝে সায়েমের মা কয়েকবার ওকে ডাক দিল দরজা খোলার জন্য তবে সে কিছুতেই খুলল না । একই ভাবে নিজের ঘরে শুয়ে রইলো। এর মাঝে কখন যে সে ঘুমিয়ে পড়েছে সেটা নিজেও জানে না । ঘুম ভাঙ্গলো যখন তখন বেশ সময় পার হয়ে গেছে ।
তখনও একটা আওয়াজ কানে এল ওর । দুজন মানুষ হাসাহাসি করছে । পাশের ঘর থেকে আওয়াজটা আসছে সেটা বুঝতে পারলো । এবং কারা কারা হাসাহাসি করছে সেটাও বুঝতে পালরো ।
নাইরা এসেছে ওদের বাসায় !

ঘর বের হয়ে দেখলো পাশের ঘরে নয় বসার ঘরে বসে বউ শাশুর গল্প করছে । ওকে ঘরে ঢুকতে দেখেই নাইরা বলল, আন্টি দেখেন আপনার অভিমানি ছেলের ঘুম ভেঙ্গেছে ! নিশ্চিই কান্নাকাটি করেছে এতো সময় !
এই বলে দুজন আরেক দফা হাসলো !

সায়েমের কান গরম হয়ে গেল । সায়েম রাগত কন্ঠে ওর মায়ের দিকে বলল, মা বাইরে যাচ্ছি । রাতে ফিরবো না ।
সাথে সাথেই নাইরা বলল, কোথাও যাওয়া হবে না । সোজা হাত মুখ ধুরে খেতে আসুন ।
-তুমি বলবে আমি কী করবো?
-হ্যা আমিই বলবো ।
-আমাকে কেন বলবে যাও তোমার বন্ধুকে বল গিয়ে !

নাইরা কিছু সময় সায়েমের দিকে তাকিয়ে থেকেই ফিক করে হেসে ফেলল । তারপর সায়েমের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, দেখেছেন আন্টি আপনার ছেলে কী পরিমান মেয়েদের মত আচরণ করছে !
-তোমাদের মাঝে আমি নাই । যা ইচ্ছে কর।
এই বলে সায়েমের মা রান্না ঘরের দিকে চলে । সায়েম যেই না বাইরের দিকে পা দিতে যাবে তখনই নাইরা ওর সামনে চলে এল । তারপর একেবারে মুখোমুখি দাড়িয়ে বলল, আপনাকে না বললাম বাইরে যাওয়া চলবে না । আসুন আমার সাথে ।

তারপর অনেকটা জোর করেই সায়েমের ঘরে নিয়ে এল । দরজা বন্ধ করতেই সায়েমকে জড়িয়ে ধরলো এবার । ধরেই রইলো বেশ কিছুটা সময় । সায়েম অনুভব করলো এতো সময়ে রাগ অভিমান সব একেবারে পানি হয়ে গেছে । জড়িয়ে ধরে থেকেই নাইরা বলল, এমন ছেলে মানুষ কেন আপনি শুনি? রিয়াদ আমার বন্ধু । সেই ছোট বেলা থেকে । ওর নিজের গার্লফ্রেন্ড আছে । যদি আর কিছু পরে আমাদের দেখতেন তাহলে দেখতে পেতেন যে ওর প্রেমিকাও আমাদের সাথে এসে যোগ দিয়েছে !

তারপর সায়েমকে ছেড়ে দিয়ে বলল, এই রকম ছেলেমানুষী করবেন না আর ! আমি আপনার বিয়ে করা বউ । আমি আর যাই করি কখনো অন্যায় কোন কাজ করবো না । কিন্তু তার মানে এই না আমার কোন বন্ধু বান্ধব থাকবে তাদের সাথে আমি আড্ডা দিতে পারবো না । এটা তো ঠিক না তাই না? বলেন ঠিক?
-না ।
-তাহলে কেন এমন করেন !
-জানি না । আমার কেবল মনে হয় যে তুমি…
-আমি কী?
-এই ঐ ছেলের সাথে হেসে হেসে গল্প করছো, কই আমার সাথে তো এমন করো না ।
-আপনার সাথে করি না কারণ আপনি কিভাবে আমাকে বিয়ে করেছেন মনে আছে তো? ওটার শাস্তি তো ভোগ করবেন নাকি । আগে সেটা শেষ হবে তারপর এর আগে না !
-তাহলে আজকে এভাবে কেন জড়িয়ে ধরলে?
নাইরা চট করে জবাব দিলো না কথাটার । একটু সময় চুপ করে থেকে বলল, কারণ আমি আপনার মত না । এখন আমি যাই।
-না আজকে যাওয়া চলবে না ।
-জ্বী না । এখানে থাকবো না মোটেও ।
নাইরা এই বলে ঘরের বাইরে যেতে চাইলো বটে কিন্তু পারলো না । তার আগেই সায়েম ওকে জড়িয়ে ধরেছে । নাইরা অবশ্য নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো না খুব একটা । সায়েমের উষ্ণ আলিঙ্গল কেন জানি ওর ভাল লাগছে !

সকল গল্প

সামু ব্লগ

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 63

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →