নাইরা শরীরটা রাগে জ্বলছে । গতকালকের ঘটনার পর থেকে সে নিজেকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করছে, নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না । বারবার মনে হচ্ছে যে খ্যাঁতা পুড়ি এই চাকরির ! ব্যাটার এতো বড় সাহস আসলো কোথা থেকে ! বস হয়েছে তো কী হয়েছে ! এভাবে একজন মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করার অধিকার কারো নেই ।
কেবিনের সামনে এসে নাইরা একটা বড় দম নিল । তারপর অনুমুতির তোয়াক্কা না করেই কেবিনের ভেতরে ঢুকে পড়লো । আজকে আসলে ওর এমন কোন ভয় নেই । আজকে ও এসেছেই এখানে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার জন্য । আজকে বসকে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই ।
দরজা ঠেলে ঢুকলেই দেখতে পেল সায়েমকে । নিজের চেয়ারে বসে একটা ফাইল দেখছে । ওকে এভাবে কেবিনে ঢুকতে দেখেই চোখ তুলে তাকালো । নাইরা সেটাকে বেশি পাত্তা দিল না । সে সরাসরি তার টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়ালো । তারপর বলল, কালকে আপনি ঐ কথা কেন বললেন ?
-কোন কথা ?
-আপনি জানেন না?
সায়েম এই প্রশ্নের উত্তর দিলো না । নাইরা বলল, আপনার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি । আপনি কোন সাহসে আমার বন্ধুকে ঐ কথা বললেন ! কোন সাহসে !
-তুমি আমার এমপ্লোয়ি !
-এমপ্লোয়ী মাই ফুট । আমি আপনার এখানে কাজ করি সেটা অফিস আওয়ারে । ছুটির দিনে আমি কী করি না করি কার সাথে ঘুরি ফিরি এই কৈফিয়ৎ আমি আপানকে দেব কেন?
-তোমার ভাল মন্দ ….
সায়েমকে লাইনটা শেষ করতে না দিয়ে নাইরা চিৎকারে বলল, ডোন্ট ফাক উইথ মি! ওকে ! আপনার চাকরির আমি খ্যাতা পুড়ি ! এরপরে যদি আমার আশে পাশে আপনাকে দেখি আপনার খবর আছে !
বলে রিজাইন লেটার টেবিলের উপর রাখলো । তারপর আর কিছু না বলার সুযোগ দিয়ে দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল ।
নাইরা যখন দরজা খুলে বের হল দেখতে পেল অফিসের অনেকেই ওর দিেক খানিকটা অবাক চোখে তাকিয়ে রয়েছে । নাইরা এতোটা চিৎকার করে তাদের বসের সাথে কথা বলতে পারে এটা সম্ভবত তারা বিশ্বাস করতে পারছিলো না । নাইরা অবশ্য এতো কিছু চিন্তা করলো না আর । নিজের ডেস্কে গেল । তারপর নিজের জিনিস পত্র নিয়ে বাড়ির দিকে হাটা দিল । এই অফিসে সে আর থাকবে না ।
দুই
কয়েকটা দিন নাইরার কোন ঝামেলা ছাড়াই কেটে গেল । তবে চাকরি ছাড়ার জন্য ওর বাসার লোকজন একটু অখুশি ছিল । নাইরার মায়ের মতে এই দেশের বসেরা নাকি এই রকম একটু করেই থাকে । তারা তাদের কর্মীদের নিজেদের চাকর মনে করে । সব সময় নিজেদের নিয়ন্ত্রনে রাখতে চায় । এই কারনেই এমন করে । আর কর্মচারিরাও নিজেদের চাকরি বাঁচাতে সেটা মেনেও নেয় ।
নাইরা চিৎকার করে বলেছিলো যে ওয়েল সবাই মেনে নিলেও আমি সেটা মানবো না । আমার অফিস আওয়ারের বাইরে আমার জীবন কোন ভাবেই অফিসের সাথে যুক্ত হবে না ।
নাইরার মা বলল, তাহলে চাকরি করতে হবে না আর ।
-দরকার হলে করবো না !
আরও সপ্তাহ খানেক পার হওয়ার পরে নাইরে চাকরি খোজা শুরু করলো । সেই সাথে ছাত্র জীবনের কাজে ফিরে গেল আবার । ছাত্র জীবন থেকেই নাইরা ফ্রিলাঞ্চার হিসাবে অনলাইনে কাজ করে আসছে । চাকরি পাওয়ার পরে সেটা একদম কমে গিয়েছিলো । আবার শুরু করে দিলো । চাকরি যদি নাও পায় তবুও খুব একটা সমস্যা হবে না ওর । তবে ওর পরিবার বলছে যদি চাকরি না করে তাহলে খুব জলদিই ওকে বিয়ে দিয়ে দিবে । এতো জলদি বিয়ে না করার জন্যই নাইরা আবারও চাকরি খোজা শুরু করলো ।
তবে এর মাঝে ঘটে গেল এমন একটা ঘটনা যা ওর জীবনকে একেবারে বদলে দিলো নাইরা ভেবেছিলো ওর জীবন থেকে সায়েব রহমান একেবারে হারিয়ে গিয়েছিলো । এই মানুষটাকে সে দেখার আশা রাখে নি । কিন্তু মানুষ জীবনে এমন অনেক ঘটনার সম্মুখীন হয় যা সে কখনই আশা করে নি । এমন একটা ঘটনা নাইরার সামনে এসে হাজির হল । সেদিন একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিয়ে সে বাসা ফিরছিলো । সময়টা ছিল শনিবার । মতিঝিলে শনিবার মানে একেবারে সব কিছু কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা । ঠিক এমন একটা ফাঁকা রাস্তার যখন নাইরা বাসের অপেক্ষা করছিলো সেই সময়ে একটা মাইক্রোবাস এসে ওর সামনে থামলো । ঠিক তখনই অনুভব করতে পালরো যে একজন মানুষ ওর পেছনেও চলে এসেছে । কিছু বুঝে ওঠার আগেই লোকটা ওকে পাজা করে চেপে ধরলো তারপর মাইক্রোতে তুলে নিলো । নাইরা চিৎকার করতে যাওয়ার আগেই একটা রুমাল চেপে ধরলো কেউ ওর মুখে । মিষ্টিএকটা সুবাস অনুভব করলো । তারপরই সব কিছু ধোঁয়াশা মনে হল ওর কাছে ।
তিন
নাইরার যখন জ্ঞান ফিরলো তখন অনুভব করলো ওর একটা নরম বিছানাতে শুয়ে রয়েছে । চোখ মেলে কিছু সময় বোঝার চেষ্টা রকলো সে কোথায় রয়েছে । তারপরই সব কিছু মনে পড়ে গেল ওর সাথে সাথে । সাথে সাথে একটা ভয় এসে জড় হল ওর মনে । ওকে একদম মানুষ কিডন্যাপ করে নিয়ে এসেছে । কিন্তু কেন?
ওর বাবা তো খুব বেশি বড়লোক না যে ওকে টাকা পয়সা দিয়ে উদ্ধার করবে । কোন মতে ওদের একটা ছোট ফ্লাট আছে ঢাকাতে । এর বেশি কিছু তো ওদের নেই । যদি বাবা টাকা দিতে না পারে তখন?
আর নাইরা শুনেছে যে এই রকম কিডন্যাপার টা মুক্তিপন পাওয়ার পরেও তাদের ভিক্টিমদের ছাড়ে না । মেরে ফেলে । আর সে একটা মেয়ে যদি মেরে ফেলার আগে ওর সাথে কিছু করে !
এসব চিন্তা ভাবনা মনের ভেতরে আসতেই একটা তীব্র ভয় এসে জড় হল ওর মনে । ওর এখন কী হবে ! ওর কিছু হলে ওর বাবা মায়ের কী হবে !
এমন সব চিন্তা ভাবনা যখন ওর মনের ভেতরে ঘুরপাক খাচ্ছে তখনই দরজা খুলে গেল । এবং সে মানুষটাকে ঘরের ভেতরে ঢুকতে দেখলো তাকে সে কোন ভাবেই এখানে দেখবে আশা করে নি ।
সায়েম রহমান !
-আপনি !
সায়েম রহমান হাসলো । তারপর বলল, হ্যা আমি !
-এসবের মানে কী !
-এসবের মানে হচ্ছে তুমি আমার সাথে বেয়াদবি করেছো । তুমি কী ভেবেছো যে এতো সহজে আমি তোমাকে ছেড়ে দিবো !
-আপনি আপনি আমি আপনাকে পুলিশ দেব ! আপনার ….
-হাহাহাহা । তোমার মনে হয় না তুমি আসলে এখন সেই পর্যায়ে নেই । যাই হোক এখন কী হবে তোমাকে বলি !
এই বলেই সে মোবাইল বের করে একটা ছবি বের করলো । তারপর সেটা নাইরার সামনে ধরলো । সাথে সাথে নাইরার চোখ বড় বড় হয়ে গেল । ছবিতে ওর মাকে দেখা যাচ্ছে বারান্দায় বসে আছে ।
সায়েম রহমান বলল, দেখছো তো ! এটা তোমার মায়ের ছবি । তোমার বাবারটাও আছে । এটা তোমাকে দেখানোর কারণ হচ্ছে যেখানে ক্যামেরা পৌছাতে পারে সেখানে বুলেট আরও সহজে পৌছাতে পারে । একটু পরে কাজি আসবে । এবং তুমি স্ব ইচ্ছেতে আমাকে বিয়ে করবে । এটা যদি কোন ঘাড় ত্যাড়ামি কর তাহলে আগে তোমার বাবা মা কে মেরে ফেলা হবে । এবং তোমাকে সেই ছবি দেখানো হবে ।
ভয়ে নাইরার শরীরটা ঠান্ডা হয়ে গেল । অসহায় ভাবে সায়েমের দিকে তাকিয়ে রইলো সে । সায়েম বলল, তুমি সেদিন বলেছিলে না আমি তোমার জীবনের উপর ইন্টারিয়ার যাতে না করি । এখন থেকে তোমার জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্ত আমি গ্রহন করবো । বুঝতে পেরেছো !
আধা ঘন্টা পরেই কাজী চলে এল । এবং সেখানেই সায়েমের সাথে নাইরার বিয়ে হয়ে গেল । নাইরা তখনও ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিল না যে সামনে বসা মানুষটা ওকে বিয়ে করেছে জোর করে এবং নাইরা কিছুই করতে পারে নি । সায়েমকে বিয়ে করেছে ।
কিন্তু সব থেকে বড় ধাক্কা খাওয়ার তখনও বাকি আছে । সায়েম নাইরাকে নিয়ে গাড়িতে করে ওর বাসায় সামনে গিয়ে হাজির হল । তারপর গাড়ির দরজা খুলে দিতে দিতে বলল, কাল সকালে অফিসে হাজির হয়ে যাবে । ঠিক আছে ? আগের মত করেই ।
নাইরা কোন কথা বলল না । কেবল গাড়ি থেকে সোজা বাসার দিকে হাটা দিল । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রায় দশটা বেজে গেছে । এতো রাত পর্যন্ত বাসার বাইরে থাকার কারনে বাসার লোকজন নিশ্চয়ই খুব চিন্তা করে আসে । তবে নাইরা ঠিক করলো যে এখন ও কোন কথাই বলবে না । ওর সাথে যা ঘটে গেছে সেটা আপাতত কাউকে জানানো যাবে না । আস্তে ধীরে বাসায় জানাতে হবে ।
কিন্তু যখন বাসায় ঢুকলো তখন আসল ধাক্কাটা খেল । দেখতে পেল বসার ঘরে একজন অপরিচিত মহিলা বসে ওর মায়ের সাথে গল্প করছে । দরজাটা খোলাই ছিল । ও ভেতরে ঢুকতেই সবাই ওর দিকে তাকালো । ওর মা হাসিহাসি মুখ করে বলল, কিরে জামাই কই?
ব্যাপারটা বুঝতে কিছু সময় লাগলো নাইরার । তারপর বলল, মানে ? তোমরা জানতে …..
নাইরা যেন মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে । নাইরা কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে ওর মায়ের দিকে । তারপর আর কোন কথা না বলে দৌড়ে চলে গেল নিজের ঘরের দিকে। ওর বিশ্বাস হচ্ছে না ব্যাপারটা ! কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না ! নিজের বিছানার শুয়ে সে ফোঁফাতে শুরু করলো । যখন সায়েম ওকে বিয়ে করছিলো তখনও ওর কান্না আসে নি কিন্তু এখন সব সত্য জেনে ওর কান্না আসছে খুব ।
একটা সময় অনুভব করলো যে ওর পিঠে কেউ হাত দিয়েছে । মুখ না তুলেই নাইরা বলল, মা এখন যাও । তোমার সাথে কথা বলতে মোটেও ভাল লাগছে না । তোমরা কীভাবে কাজটা করতে পারলে আমার সাথে ! কিভাবে ?
-আমি তোমার মা তবে সম্পর্কে তোমার শাশুড়ি হই ।
নাইরা একবার ভাবলো যে উঠবে না কিন্তু উঠে বসলো । শত হলেও সম্পর্কে সে শাশুড়ি আর মুরব্বী ।
ভদ্র মহিলা তাহলে সায়েমের মা । নাইরার দিকে বেশ কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বললেন, আমি জানি তুমি খানিকটা আপসেট । আমার ছেলের হয়ে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি ।
-ছিঃ ছিঃ ! আপনি কেন ক্ষমা চাইবেন ।
-মা হয়েছি বুঝোই তো । তবে আমার ছেলেকে তুমি ভুল বুঝো না কেমন । সে নিজের মনের কথা বলতে পারে না । তোমাকে সে সেই শুরু থেকে পছন্দ করে । বলতে পারো একেবারে প্রথম দেখা থেকেই । ছেলে মানুষ তো একটু জেলাসফিল করবেই যখন দেখবে তার পছন্দের মানুষ অন্য ছেলের সাথে ঘুরছে । এই কারণে সেদিন ওমন আচরণ করেছিলো । ভেবেছিলো তোমাকে জোর খাটিয়ে এসব করবে । কিন্তু সব মেয়ে তো আর ভয় পায় না । যেমন তুমি । যেদিন চাকরি ছেড়ে দিলে সেই দিন সায়েম সারা রাত ঘুমাতে পারে নি । তারপর থেকে কী যে অস্থির হয়ে দিন কাটিয়েছে সে ! শেষে আমি না পেরে তোমার খোজ করেছি । তোমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি । তোমার মা জানালো যে যে কোন ভাবেই তুমি বিয়েতে রাজি হবে না । তাই …..
কিছু সময় কেটে চুপচাপ । তারপর সায়েমের মা আবারও বলল, আমার ছেলেটাকে ভুল বুঝো না কেমন মা ! যদি সম্ভব হয় সব কিছু ভুলে গিয়ে একটু ওকে ভালোবাসার চেষ্টা করো ।
আরও কিছু সময় থেকে সায়েমের মা চলে গেলেন । আরও বলে গেলেন যে নাইরা আর সায়েমের মাঝে বোঝা পড়া ভাল হয়ে গেলেই তারা একটা অনুষ্ঠান করে বউ বাসায় নিয়ে যাবে ।
চার
নাইরা অফিসে যখন পা রাখলো তখন বেলা এগারোটা । ওকে ঢুকতে দেখে কয়েকজন এগিয়ে এসে কথা বলল। আবার ওকে চাকরিতে জয়েন করতে দেখে তারা খুশি । নাইরা সবার সাথে কথা বলে চলল সায়েমের কেবিনের দিকে । আজও যথারীতি কেবিনে নক না করেই ঢুকে পড়লো । সে এখন জানে যে ওপাশের মানুষটাকে আর ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই । সায়েব চুপচাপ বসে ছিল । ওর কেবিনে ঢুকতেই বলল, অফিসে এসেছো কত সময় আর এখন এলে কেবিনে?
নাইরা বলল, তো ! অফিসে এসেই নাচতে নাচতে আমার আপনার কেবিনে আসার দরকার ছিল আমার?
সায়েব খানিকটা দ্বিধা নিয়ে তাকালো নাইরার দিকে । নাইরা বলল, শুনুন মিস্টার, আপনি যদি ভেবে থাকেন যে আমাকে জোর করে বিয়ে করে আপনি আমার জীবনের উপর নিয়ন্ত্রন স্থাপন করেছেন তাহলে আপনি খুব ভুল করবেন ! বরং উল্টোটা করেছেন?
-মানে?
-মানে হচ্ছে আপনি তো আগে কোন মেয়ের সাথে এভাবে ইন্টারেকশন করেন নি । আপনার যা স্বভাব কোন প্রেমিকা নিশ্চিত ছিল না জীবেন । যাই হোক বউ যে কী চিজ সেটা আপনি বুঝবেন এখন থেকে ! এবং আপনি খুব ভাল করেই বুঝবেন যে আমাকে বিয়ের আগে আমার উপর আপনার যা নিয়ন্ত্রন ছিল এখন সেটাও আর নেই ।
নাইরা আর কিছু না বলে কেবিন থেকে বের হয়ে গেল । সায়েন কিছুটা সময় কেমন বোকার মত বসে রইলো । এমন কিছু যে নাইরা বলবে সেটা সায়েম ভাবতেও পারে নি । বরং ও ভেবেছিলো বিয়ের পরেই নাইরা একেবারে ওর নিয়ন্ত্রনে চলে আসবে । ওর কথা মত চলবে ।
এবং এক সপ্তাহের ভেতরে সায়েব সত্যি সত্যিই খেয়াল করলো যে নাইরা মোটেই ওর নিয়ন্ত্রনে নেই । বরং উল্টোটা হয়েছে । সায়েমই যেন ওর নিয়ন্ত্রনে চলে গেছে । কখন কী করতে হবে কী খেতে হবে সব নাইরা বলে দিচ্ছে । সব চেয়ে বড় সমস্যায় পড়েছে যে এই সাত দিনে সে একটা সিগারেটও খেতে পারে নি । নাইরে ওকে সিফারেট খেতে দেখে সবার আগে নিজে এসে মুখ থেকে সিগারেট ফেলে দিল । তারপর পকেট সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে ওর সামনে সেটা ডাস্টবিনে ফেলে দিলো । এমন কিছু যে ওর সাথে কেউ কোন দিন করতে পারে সেটা সায়েম কোন দিন ভাবতেও পারে নি ।
তবে এতো কিছুর পরেও সায়েমের কেন নাইরার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে মোটেই খারাপ লাগছে না ।
কিন্তু ঝামেলা বাঁধলো আরও কয়েকদিন পরে । একদিন বিকেশ অফিস শেষ করার একটু আগে আগেই বের হয়ে গেল । সায়েমের চোখ এড়ালো না সেটা । কী মনে করে সে নিজেও নাইরার পিছু নিল । এবং কিছু সময় পরে সে দেখতে পেল সেদিনের সেই ছেলের সাথে নাইরা গল্প করছে রেস্টুরেন্টে । আগের বার যখন এই ছেলের সাথে গল্প করতে দেখেছিলো তীব্র একটা রাগ হয়েছিলো । সরাসরি গিয়েই খানিকটা বকাবকি করেছিলো । কিন্তু আজকে সেটা করলো না । সায়েম অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো যে রাগের বদলে ওর তীব্র অভিমান হচ্ছে । নাইরার উপরে অভিমান হচ্ছে । সে তখনই গাড়ি নিয়ে নিজের বাসায় ফিরে গেল । দরজা বন্ধ করে বসে রইলো নিজের ঘরে । একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে ! বারবার কেবল মনে হচ্ছে নাইরা কেন ছেলেটার সাথে গল্প করতে গেল !
কেন !
কেন !
এর মাঝে সায়েমের মা কয়েকবার ওকে ডাক দিল দরজা খোলার জন্য তবে সে কিছুতেই খুলল না । একই ভাবে নিজের ঘরে শুয়ে রইলো। এর মাঝে কখন যে সে ঘুমিয়ে পড়েছে সেটা নিজেও জানে না । ঘুম ভাঙ্গলো যখন তখন বেশ সময় পার হয়ে গেছে ।
তখনও একটা আওয়াজ কানে এল ওর । দুজন মানুষ হাসাহাসি করছে । পাশের ঘর থেকে আওয়াজটা আসছে সেটা বুঝতে পারলো । এবং কারা কারা হাসাহাসি করছে সেটাও বুঝতে পালরো ।
নাইরা এসেছে ওদের বাসায় !
ঘর বের হয়ে দেখলো পাশের ঘরে নয় বসার ঘরে বসে বউ শাশুর গল্প করছে । ওকে ঘরে ঢুকতে দেখেই নাইরা বলল, আন্টি দেখেন আপনার অভিমানি ছেলের ঘুম ভেঙ্গেছে ! নিশ্চিই কান্নাকাটি করেছে এতো সময় !
এই বলে দুজন আরেক দফা হাসলো !
সায়েমের কান গরম হয়ে গেল । সায়েম রাগত কন্ঠে ওর মায়ের দিকে বলল, মা বাইরে যাচ্ছি । রাতে ফিরবো না ।
সাথে সাথেই নাইরা বলল, কোথাও যাওয়া হবে না । সোজা হাত মুখ ধুরে খেতে আসুন ।
-তুমি বলবে আমি কী করবো?
-হ্যা আমিই বলবো ।
-আমাকে কেন বলবে যাও তোমার বন্ধুকে বল গিয়ে !
নাইরা কিছু সময় সায়েমের দিকে তাকিয়ে থেকেই ফিক করে হেসে ফেলল । তারপর সায়েমের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, দেখেছেন আন্টি আপনার ছেলে কী পরিমান মেয়েদের মত আচরণ করছে !
-তোমাদের মাঝে আমি নাই । যা ইচ্ছে কর।
এই বলে সায়েমের মা রান্না ঘরের দিকে চলে । সায়েম যেই না বাইরের দিকে পা দিতে যাবে তখনই নাইরা ওর সামনে চলে এল । তারপর একেবারে মুখোমুখি দাড়িয়ে বলল, আপনাকে না বললাম বাইরে যাওয়া চলবে না । আসুন আমার সাথে ।
তারপর অনেকটা জোর করেই সায়েমের ঘরে নিয়ে এল । দরজা বন্ধ করতেই সায়েমকে জড়িয়ে ধরলো এবার । ধরেই রইলো বেশ কিছুটা সময় । সায়েম অনুভব করলো এতো সময়ে রাগ অভিমান সব একেবারে পানি হয়ে গেছে । জড়িয়ে ধরে থেকেই নাইরা বলল, এমন ছেলে মানুষ কেন আপনি শুনি? রিয়াদ আমার বন্ধু । সেই ছোট বেলা থেকে । ওর নিজের গার্লফ্রেন্ড আছে । যদি আর কিছু পরে আমাদের দেখতেন তাহলে দেখতে পেতেন যে ওর প্রেমিকাও আমাদের সাথে এসে যোগ দিয়েছে !
তারপর সায়েমকে ছেড়ে দিয়ে বলল, এই রকম ছেলেমানুষী করবেন না আর ! আমি আপনার বিয়ে করা বউ । আমি আর যাই করি কখনো অন্যায় কোন কাজ করবো না । কিন্তু তার মানে এই না আমার কোন বন্ধু বান্ধব থাকবে তাদের সাথে আমি আড্ডা দিতে পারবো না । এটা তো ঠিক না তাই না? বলেন ঠিক?
-না ।
-তাহলে কেন এমন করেন !
-জানি না । আমার কেবল মনে হয় যে তুমি…
-আমি কী?
-এই ঐ ছেলের সাথে হেসে হেসে গল্প করছো, কই আমার সাথে তো এমন করো না ।
-আপনার সাথে করি না কারণ আপনি কিভাবে আমাকে বিয়ে করেছেন মনে আছে তো? ওটার শাস্তি তো ভোগ করবেন নাকি । আগে সেটা শেষ হবে তারপর এর আগে না !
-তাহলে আজকে এভাবে কেন জড়িয়ে ধরলে?
নাইরা চট করে জবাব দিলো না কথাটার । একটু সময় চুপ করে থেকে বলল, কারণ আমি আপনার মত না । এখন আমি যাই।
-না আজকে যাওয়া চলবে না ।
-জ্বী না । এখানে থাকবো না মোটেও ।
নাইরা এই বলে ঘরের বাইরে যেতে চাইলো বটে কিন্তু পারলো না । তার আগেই সায়েম ওকে জড়িয়ে ধরেছে । নাইরা অবশ্য নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো না খুব একটা । সায়েমের উষ্ণ আলিঙ্গল কেন জানি ওর ভাল লাগছে !
Discover more from অপু তানভীর
Subscribe to get the latest posts sent to your email.