প্রিয়ন্তির মন ভাল নেই ২.০

oputanvir
4.6
(57)

প্রিয়ন্তি মনে মনে ঠিক করেই নিয়েছে আবিদের সাথে সম্পর্কটা আর সে রাখবে না । সিদ্ধান্তটা নেওয়ার পরে একটু সুস্থির লাগছে । তবে সেই সাথে একটু মনও খারাপ লাগছে ওর । আবিদের সাথে ওর সম্পর্কটা খুবই চমৎকার ছিল । প্রায় প্রতিদিন ক্লাসের শেষে দুজনের দেখা হত কথা হত । সব কিছু খুব সুন্দর ভাবে চলছিলো । সব থেকে বেশি যে ব্যাপারটা প্রিয়ন্তির মনে এসে বাঁধছে তা হচ্ছে আবিদ যে ওকে ভালোবাসে সেটা প্রিয়ন্তি খুব ভাল করেই বুঝতে পেরেছিলো । কিন্তু এতো কিছুর পরেও আবিদের প্রতি ওর বিশ্বাসে চিড় ধরেছে । বিশেষ করে যখন আবিদের সরাসরি মিথ্যা বলাটা যখন ওর কাছে প্রমাণিত হল তখন প্রিয়ন্তির মনে আর অন্য কিছু আসে নি । ওর সাথে কিভাবে সরাসরি মিথ্যা বলতে পারলো ও ! এখানেই ওর কষ্ট লাগছে !

বেশ কয়েকদিন ধরেই আবিদের আচরণ ওর কাছে কেমন যেন মনে হচ্ছিলো । আগের মত ছিল না সে । এড়িয়ে চলছিলো প্রিয়ন্তিকে । তারপর শেষে প্রিয়ন্তি গত সোমবার আবিদকে দেখতে পেল অন্য একটা মেয়ের সাথে রেস্টুরেন্টে বসে গল্প কথা বলছে । প্রিয়ন্ত যখন আবিদকে ফোন দিলো আবিদ তখন সরাসরি মিথ্যাই বলল যে ও টিউশনীতে । তখনই ইচ্ছে করছিলো সরাসরি ওর সামনে গিয়ে ধরে ওকে । কিন্তু সেটা করলো না । চোখের কোনে পানি চলে এসেছিলো । সেটা আটকে সেখান থেকে বের হয়ে এল । বাসায় আসার পরেই কিছু সময় কাঁদলো । তারপর এই দুদিন ঢরে সিদ্ধান্ত নিলো যে আর সম্পর্কে সে রাখবে না । এমন ভাবে মানসিক কষ্ট পাওয়ার কোন মানে নেই ।

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রায় এগারোটা বাজে । ভাবলো যে এখনই সে আবিদকে ফোন দিবে । তারপর ফোন দিয়েই নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিবে । কিন্তু ওকে খানিকটা অবাক করে দিয়ে আবিদের ফোন এসে হাজির হল । একবার ফোনটা বাজতে দিলো সে । ফোন ধরলো না । পরের বার যখন ফোন এল তখন প্রিয়ন্তি ফোনটা ধরলো । বলল, বল ।
ফোনের ওপাশ থেকে কিছু সময় কোন কথা শোনা গেল না । প্রিয়ন্তি কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল, চুপ করে থাকবে নাকি কিছু বলবে?
আবিদ বলল, একটু নিচে আসবে?
প্রিয়ন্তি একটু অবাক হল । আবিদ মাঝে মাঝে মাঝেই ওর বাসার সামনে আসে রাতে । আবিদের বাসা ওদের বাসার কাছেই। ওর বারান্দা থেকে রাস্তাটা পরিস্কার দেখা যায় । প্রিয়ন্তি তখন বারান্দায় আসে । প্রিয়ন্তির দিকে তাকিয়ে আবিদ কিছু করে কথা বলে চলে যায় । আগে প্রায়ই এই কাজটা করতো আবিদ । তবে কিছুদিন এই কাজটা করা বাদ দিয়েছে !

প্রিয়ন্তি বলল, নিচে আসতে পারবো না এখন ।
-প্লিজ । খুব দরকার ।
-ফোনে বল ।
-না ফোনে বলা যাবে না । সরাসরি বলতে হবে । বেশি সময় লাগবে না । পনের মিনিট ।

প্রিয়ন্তির একবার মনে হল যে ওকে বলে কোন দেখা হবে না । এখনই আবিদকে বলে দেয় যে ওর সাথে আর সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী নয় সে । কিন্তু কোথায় যেন আটকে গেল সে । মুখ দিয়ে এতো কঠিন কথা কি আবিদকে সে বলতে পারবে? প্রিয়ন্তি বলল, আচ্ছা তুমি উপরে আসো । ছাদে চলে যাও । আমি দারোয়ানকে বলে দিচ্ছি । সে ঢুকতে দিবে !

ফোন রেখে সে দারোয়ানকে ফোন দিয়ে বলল যে ওর একজন বন্ধু আসছে । তারপর নিজে দাড়ালো আয়নার সামনে । চেহারা ঠিকঠাকই মনে হচ্ছে । রাতের বেলা একটা টিশার্ট আর প্লাজো পরে আছে । প্লাজোটা পরিবর্তন করে একটা লেগিংস পরলো । আবিদ ওর প্লাজো পরা একদম পছন্দ করে না । পারতপক্ষে প্লাজো করে আবিদের সামনে যায়ও না । আজকে কী মনে করে লেগিংসটা পরলো । তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে ড্রয়িং রুমের দিকে হাটা দিল ।

প্রিয়ন্তর বাবা ওকে দেখলো বের হতে । বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, বাবা একটু ছাদে যাচ্ছি চলে আসবো এখনই ।
ওর বাবা কিছু বলল না । প্রিয়ন্তি সিড়ি দিয়ে ছাদে উঠে এল । ছাদের এককোনে আবিদকে দেখতে পেল। ছাদের বসার বেশ কয়েকটা বেঞ্চ আছে । সেগুলোর একটাতে বসে আছে আবিদ । আকাশে বেশ বড় চাঁদ উঠেছে । সেই আলোতেই সব কিছু পরিস্কার দেখা যাচ্ছে
আবিদ ওর দিকে একভাবে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । সেই চোখে যে মুগ্ধতা আছে সেটা বুঝতে প্রিয়ন্তির মোটেই কষ্ট হল না । প্রতিবার এই মুগ্ধ চোখেই আবিদ ওকে দেখে ।
প্রিয়ন্তি আরও একটু কাছে আসতেই ওকে খানিকটা অবাক করে দিয়েই আবিদ ওকে জড়িয়ে ধরলো । ব্যাপারটা এতো জলদি হল যে প্রিয়ন্তি কোন প্রতিক্রিয়া দেখানোর সুযোগ পেল না । কিছু সময় কেবল বিস্ময়ে কেটে গেল । তারপরই অনুভব করলো আবিদের পুরো শরীর যেন কাঁপছে । প্রিয়ন্তির মনে হল আবিদ যেন কাঁদছে । প্রিয়ন্তির মন এবার একটু দ্রবীভূত হল । বলল, কী হয়েছে আবিদ? বল আমাকে !
আবিদ আরও বেশ কিছুটা সময় প্রিয়ন্তিকে জড়িয়ে ধরে রইলো । তারপর ওকে ছেড়ে দিয়ে আবারও বেঞ্চের উপরে বসলো । প্রিয়ন্তি বসলো আবিদের খুব কাছে । তারপর আবারও বলল, বল আমাকে কী হয়েছে?
আবিদ এবার বলল, আমি তোমাকে মিথ্যা বলেছি ।
-মিথ্যা ?
-হুম । মনে আছে গত সোমবার তুমি আমাকে বলেছিলে যে আমি কোথায়? মনে আছে ?
-হুম । বলেছিলে টিউশনীতে ।
-হ্যা । আমি তখন টিউশনীতে ছিলাম না । আমি ছিলাম একজনের সাথে ।

প্রিয়ন্তি শান্ত চোখে আবিদের দিকে তাকিয়ে রইলো । প্রিয়ন্তি এখনও ঠিক বুঝতে পারছে না যে ওর এখন কেমন আচরণ করা উচিৎ। ও যে ব্যাপারটা আগেই জানে সেটা কি আবিদকে বলে দিবে ? না থাকুক । আগে শুনে নিক যে আবিদের কী বলার আছে । যদি সত্য বলে সব তবে আজকে নেওয়া সিদ্ধান্ত থেকে হয়তো ফিরেও আসতে পারে ও ।
আবিদ বলল, আমি আসলে আমার এক্স গার্লফ্রেন্ডের সাথে ছিলাম । মেয়েটা কদিন থেকে আমার পিছনে লেগে আছে !
প্রিয়ন্তি বলল, ওকে ! তুমি কী বলতে চাও, বল !
আবিদ বলল, আমার সব টুকু ঘটনা শোনো । তারপর তুমি যা বলবে তাই । আমি কী করবো বুঝতে পারছি না । তোমার কাছে কেনই বা মিথ্যা বললাম সেটাও আমি জানি না । কিন্তু এখন নিজের কাছে বড় অপরাধী মনে হচ্ছে । মনে হয় তোমার সব জানা দরকার !
প্রিয়ন্তি বলল, ওকে বল শুনি ।

আবিদ লম্বা করে একটা দম নিল । তারপর বলতে শুরু করলো ।

”লিন্ডার সাথে আমার স্কুলে থাকতে পরিচয় হয় । ক্লাস নাইন থেকে । আমি নতুন যে স্কুলে ভর্তি হলাম বাবার ভর্তির কারণে লিন্ডা সেই স্কুলের হেড স্যারের মেয়ে ছিল । আমি পড়াশুনার ভাল ছিলাম বিধায় স্যার আমাকে শুরু থেকে খেয়াল করেছিলেন । স্যারের কাছেই আমি প্রাইভেট পরতাম । সেখান থেকেই লিন্ডার সাথে পরিচয় । ক্লাস টেনে উঠলে একদিন বৃষ্টির ভেতরে ওদের বাসায় পড়তে গিয়ে দেখি সেদিন কেউ আসে নি । লিন্ডা আমাকে সেদিন জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়েছিলো । তারপর থেকেই আমাদের প্রেম শুরু হয় । বেশ কয়েক মাস চলল বেশ ভাল করে । কিন্তু তারপর …”
-তারপর ?’
-তারপর আমি জানতে পারি যে লিন্ডা কেবল আমার সাথেই নয় আরও কয়েকজনের সাথেই সম্পর্ক করেছে । তখনও একজনের সাথে সম্পর্কে আছে ওর । আমি আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে খবর পেয়েছিলাম । পরে ওকে জিজ্ঞেস করতে ও ওস্বীকার তো করলোই না বরং সেটা এমন ভাবে আমার সামনে বলল যেন আমি ওর সেই প্রেমিকের কাছে অতি নগন্য কেউ। সত্যি বলছি সেদিক এতো কষ্ট পেয়েছিলাম আমি । জীবনের প্রথম ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে এমন ভাবে প্রতারিত হয়ে আমি একেবারে ভেঙ্গে পড়েছিলাম । পরীক্ষা খারাপ হল । বাবার বদলি হয়ে গেল নতুন জায়গায় । আমার অনেক সময় লেগেছিলো । তারপর থেকে আমি আর কোন দিন কোন মেয়ের প্রতি বিশ্বাস নিয়ে আনতে পারি নি। কিন্তু তোমার সাথে যখন পরিচয় হল তখন আবার কেমন যেন সব বদলে গেল । মনে হল যেন তোমার কাছ থেকে আমি কষ্ট পাবো না ।

আবিদ থামলো একটু । তারপর আবিদ আবারও বলতে শুরু করলো, তারপর কিছু দিন আগে আবারও লিন্ডার সাথে আমার দেখা হল । আমাদেরই ক্যাম্পাসে । ওর কথা বার্তা শুনে শুনে মনে হল যে আমার ব্যাপারে ও সব খোজ খবর নিয়ে এসেছে । বলল যে আবারও আমার কাছে ফেরৎ আসতে চায় । জীবনে ও অনেক ভুল করেছে । সবাই ওকে ছেড়ে গেছে । আমি তোমার কথা বললাম । ও কিছুতেই সেটা মানবে না । শেষে কেমন যেন ভয় দেখালো যে তোমাকে বলে দিবে সব কথা । ওর সাথে আমি কী না কী করেছি সব । অথচ আমি কিছুই করি নি কোন দিন । মনের ভেতরে ভয় হল তুমি জানতে পারলে কী ভাববে । যদি আমাকে ছেড়ে চলে যাও । তাই তোমাকে এড়িয়ে ওকে বোঝাতে লাগলাম । রিকোয়েস্ট করতে লাগলাম । কেন যে করতে গেলাম আমি নিজেও জানি না । শেষে গতদিন তোমাকে মিথ্যা বললাম । লিন্ডা আমাকে বারবার ডিস্টার্ব করছে । বলছে যে তোমাকে বলে দিবে। বলবে যে এখনও আমি ওর সাথে যোগাযোগ রাখি ওর শারীরিক সম্পর্ক করি !

আবিদ থামতেই প্রিয়ন্তি বলল, এই কথাটা সোজাসুজি আমাকে প্রথমে বলা যেত না ?
-বলা উচিৎ ছিল আমি জানি । আমার তখন কী হয়েছিলো আমি জানি না । বিশ্বাস করে এই টুকু ছাড়া আমি আর কিছুই করি নি । আমি তোমাকে হারাতে চাই না !

আবিদের শেষ লাইনটা ”আমি তোমাকে হারাতে চাই না” শুনেই প্রিয়ন্তির সব রাগ একেবারে পানি হয়ে গেল । ছেলেটা ওকে হারানোর কী এক ভয় করছে । প্রিয়ন্তি বলল, ঠিক আছে এতো টেনশন করতে হবে না । কেবল এরপর থেকে আমাকে মিথ্যা বলবে না । আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই । ঠিক আছে ?
-তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না তো ?
-না বাবা । তোমাকে ছেড়ে কেন যাবো শুনি ? তোমার মত এতো কিউট একটা বয়ফ্রেন্ড আমি কোথায় পাবো বল !

আবিদ আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো তখনই ওর ফোনটা বেজে উঠলো । ফোন হাতে নিতেই ওর মুখটা বিরক্তিতে ভরে উঠলো । প্রিয়ন্তি বলল, কি হয়েছে ?
-লিন্ডা ফোন দিয়েছে হোয়াটসএপে !
-ভিডিও কল ?
-হ্যা ।
-রিসিভ কর !
-কেন ?
-কর বলছি ।

আবিদ প্রিয়ন্তির কথা মত ফোনটা রিসিভ করলো । প্রিয়ন্তি ফোন স্ক্রিনে দেখতে পেল লিন্ডার চেহারা । লিন্ডা বলল, হেই বেইবি কোথায় তুমি ?
আবিদ বিরক্ত কণ্ঠে বলল, তোমাকে না বলেছি আমি তোমার বেবি না । আমাকে বেবি ডাকবে না ।
-আরে বাবাটা রাগ করে করছো ! আমি না বললে কে বলবে ?
প্রিয়ন্তি এবার স্ক্রিনটা নিজের দিকে একটু সরিয়ে নিয়ে বলল, কেন আমি বলবো ! আমি তো আছি ।
তারপর আবিদের দিকে তাকিয়ে বলল, তাই বাবু । তা এইটা তোমার এক্স ?
আবিদ কোন কথা বলল না । প্রিয়ন্তিকে এভাবে দেখবে সেটা সম্ভবত লিন্ডা আশা করে নি । প্রিয়ন্তি ফোনের স্ক্রিনটা আরও কাছে নিয়ে এসে বলল, অন্যের জিনিসের দিকে নজর দিতে নেই । ঠিক আছে, এই দেখো আবিদ কেবলই আমার ।
এই বলে ফোনটা ধরেই প্রথমে আবিদের গালে একটা চুমু খেল । তারপর ঠোঁটে । বেশ গাঢ় করেই । আবিদ নিজেও অবাক হয়ে গেল প্রিয়ন্তির কাজ কর্ম দেখে ।

প্রিয়ন্তি ঠিকই দেখতে পাচ্ছিলো ফোনের ওপাশে লিন্ডার ঈর্ষান্বিত চোখ । প্রিয়ন্তি এবার ফোনটা নামিয়ে রেখে আরও একটু গভীর ভাবে আবিদকে চুমু খেল । চুমু পর্ব শেষ করে যখন ফোনটা আবার হাতে নিল তখন লিন্ডা ফোন কেটে দিয়েছে । আবিদ বলল, এটা কী হল?
-কেন ভাল লাগে নি ?
-না লেগেছে । কিন্তু এভাবে?
-তোমার এক্সকে একটু টাইট দিলাম আর কি ! ঐ যে তোমাকে কষ্ট দিয়েছিলো । এখন বাসায় যাও । রাত হয়ে যাচ্ছে । আজকে রাতে তোমার ঐ এক্সের আর ঘুম আসবে না ।
-আমারও তো রাতে ঘুম আসবে না ।

প্রিয়ন্তি হেসে ফেলল । বলল, আজকে তোমার সাথে এক সাথে জেগে থাকবো । ঠিক আছে !
-আচ্ছা !

ছাদ থেকে নামার আগে আবিদ আরেকবার শক্ত করে প্রিয়ন্তিকে জড়িয়ে ধরলো । প্রিয়ন্তি ঠিক করেই রেখেছিলো আজকেই আবিদের সাথে সকল সম্পর্ক শেষ করে দিবে অথচ আজকে ওদের সম্পর্কেটা যেন আরও এক ধাপ গভীরে চলে গেল । চাইলেই কী ভালোবাসা শেষ করা যায় !!

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.6 / 5. Vote count: 57

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →