বুড়া কুকুরের ব্যাঁকা লেজ

oputanvir
2.3
(3)

হাটতে বেড়িয়ে এক ব্যক্তি দেখতে পেলেন পথের ধারে একটা নেড়ি কুকুর বসে আছে । কুকুরটির দিকে তাকিয়ে তিনি বুঝতে পারলেন যে বেচারা কুকুরের অবস্থা বেশি ভাল না । বয়স হয়েছে, না খাওয়া না পরা অবস্থায় দিন পার করছে । ব্যক্তি নিজে নরম মনের মানুষ ছিলেন । তিনি মনে করলেন যে এমন প্রাণীটিকে সাহায্য করবেন । নিজেই লোক লাগিয়ে তাকে নিজের বাসার সামনে নিয়ে এলেন ।
ভদ্রলোকের স্ত্রী বের হয়ে এলেন । নেড়ি কুকুরটির দিকে তাকিয়ে বললেন, আরেক এটাকে কেন নিয়ে এসেছো এখানে?
-আরে বাবা কষ্ট পাচ্ছে ! কেউ খেতে পড়তে দেয় না মনে হচ্ছে ।
-এটা স্বভাব তুমি জানো ? এটাকে আমাদের গ্রামের কেউ পছন্দ করে । খেয়ে একটু শক্তি পেলেই মানুষের দিকে তেড়ে আসে । সারা সময় ঘেউ ঘেউ করে । মানুষকে কামড়াতে যায় !

ভদ্রলোক বললেন, চিন্তা কর না । আমি সামলে নিবো ।
স্ত্রী বললেন, যদি এটা আমাকে কিংবা আমার পরিচিত কাউকে কামড় দেয় তাহলে কিন্তু তোমার খবর আছে !

এরপর ভ্দ্রলোক নেড়ি কুকুরটির দেখা শুনা করতে লাগলেন । প্রতিদিন নিয়মিত খেতে দেন । মাঝে মাঝে আদরও করেন । কয়েক সপ্তাহ পরেই খেয়ে দেয়ে কুকুরটি সুস্থ আর একটু সবল হয়ে গেল । শরীরে বল পেল । তারপর থেকেই যত ঝামেলা শুরু । বাসায় যে কাউকে আসতে দেখলেই ঘেউ ঘেউ শুরু করে দেয় । এমন একটা ভাব যেন বাড়িটা আসলে তার নিজেরই । সবার দিকে দিকে তেড়ে যায় । মাকড়াতে যায় । অবশ্য সবার সাথে পেড়ে ওঠে না । পাড়ার কিছু যুবক ছেলেদের দিকে একদি তেড়ে কামড়া গেল । তারা বাড়ির সামনে দিয়ে খেলতে যাচ্ছিলো । হাতে ছিল ক্রিকেট ব্যাট আর স্ট্যাম্প । ঘেউ ঘেউ করে কামড়াতে আসলেই সোজা মুখ বরাবর একটা বাড়ি দিয়ে দিল । তারপরই কুই কুই করে সে পেছনে দৌড় দিল । বাড়ির মালিক বের হয়ে এল । ছেলে গুলোর দিকে তাকিয়ে বললেন, কী ব্যাপার এভাবে মারলে কেন?
একজন বলল, আঙ্কেল আমরা আপনার কুকুরকে মারতে যাই নি । আমরা যাচ্চি খেলতে । আমাদের দেখে ঘেউ ঘেউ শুরু করে দিয়েছে । কামড়াতে আসছিলো ।
লোকটি বললেন, বুড়ো একটা কুকুর । এভাবে কেউ মারে !
-আঙ্কেল, বুড়ো কুকুর বুড়োর মত থাকতে বলেন ।

এরপর থেকেই কুকুরটি ছেলেদের দেখলে ঘেউ ঘেউ ঠিকই করতো তবে বাইরে আসতে সাহস পেত না । মুখে বাড়ির কথা ঠিকই মনে আছে তার । তবে অন্য সবার বেলাতে ঠিকই তার ঘেউ ঘেউ চালিয়ে গেল । যে বাসায় আসতো কিংবা বাড়ির সামনে দিয়ে যেত তাকে দেখেই ঘেউ ঘেউ শুরু । এমন একটা ভাব যেন এই বাড়ি এই রাস্তা সব কিছুর মালিক আসলে সেই । অন্যদের সে দয়া করে থাকতে দিয়েছে । বাড়ির মালিক ব্যক্তিটি এতোদিন ধৈর্য্য ধরে সব কিছু সহ্য করতো । বারবার মনে হত বেচারা বুড়ো হয়েছে । সে যদি বাড়ি থেকে বের করে দেয় তাহলে কোথায় যাবে ! না খেয়ে মরবে !
কিন্তু আস্তে আস্তে বাড়ির মালিকের সাথে গ্রামের অন্য সবার সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করলো । কেবল মাত্র এই কুকুরের কারণে । কারণ সবার সাথেই এই কুকুর ঘেউ ঘেউ করে । কামড়াতে যায় । অনেকেই বাসায় আসা বন্ধ করে দিল । তবে বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে তো মানুষজন যাতায়াত করবেই । সেটা তো আর বন্ধ করতে পারে না ।
মানুস যখন বিচার নিয়ে আসা শুরু করলো তখন প্রথম প্রথম তিনি নিজের কুকুরটার পক্ষ নিয়ে কথা বলতেন । কিন্তু এক সময়ে নিজেই বিরক্ত হলেন । কিন্তু একদিন সকল সীমা ছাড়িয়ে গেল। কয়েকজন কে কামড়ে দিল , এমন কি বাড়ির মালিককে পর্যন্ত কামড়াতে গেল । এতোদিন যে পেলে পুষে বড় করেছে সেটা যেন মনেই রইলো না। সেদিনই বাখাড়ি দিয়ে পিটিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন । সেই সাথে এও জানিয়ে দিলেন এই কুকুরের সাথে তার আর কোন সম্পর্ক নেই । কজন নেড়ি কুকুরটাকে পিটিয়ে সোজা করে গ্রাম ছাড়া করলো । কয়েকজন অবশ্য একটু উহু আ করলো । বলল যে আহ বেচারা বুড়ো হয়েছে । এভাবে না মারলেও পারতেন ! একজন বলল, এতো মায়া লাগছে নিজের বাড়ি নিয়ে গিয়ে পোষো । এটা শুনে অবশ্য আর কেউ কোন কথা বলল না ।

এভাবে গ্রামে কিছুদিন শান্তিতে ছিল । তারপর কোথা থেকে আবারও সেই নেড়ি কুকুর এসে হাজির । আবারও একই ভাবে বাড়ির সামনে বসে থেকে ঘেউ ঘেউ শুরু করলো । বাড়ির মালিক অবশ্য এবার কিছু বলল না । তবে এও সে সবাইকে জানিয়ে দিল যে এই কুকুরের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই । কারো দিকে ঘেউ ঘেউ করলেই কিংবা কামড় দিতে গেলে কঠিন একটা মাইর যেন দেয় । সবাই এখন এই অপেক্ষাতে আছে । আবারও একটা কঠিন মাইর দিয়ে এটাকে গ্রাম ছাড়া করবে !

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 2.3 / 5. Vote count: 3

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →