হাটতে বেড়িয়ে এক ব্যক্তি দেখতে পেলেন পথের ধারে একটা নেড়ি কুকুর বসে আছে । কুকুরটির দিকে তাকিয়ে তিনি বুঝতে পারলেন যে বেচারা কুকুরের অবস্থা বেশি ভাল না । বয়স হয়েছে, না খাওয়া না পরা অবস্থায় দিন পার করছে । ব্যক্তি নিজে নরম মনের মানুষ ছিলেন । তিনি মনে করলেন যে এমন প্রাণীটিকে সাহায্য করবেন । নিজেই লোক লাগিয়ে তাকে নিজের বাসার সামনে নিয়ে এলেন ।
ভদ্রলোকের স্ত্রী বের হয়ে এলেন । নেড়ি কুকুরটির দিকে তাকিয়ে বললেন, আরেক এটাকে কেন নিয়ে এসেছো এখানে?
-আরে বাবা কষ্ট পাচ্ছে ! কেউ খেতে পড়তে দেয় না মনে হচ্ছে ।
-এটা স্বভাব তুমি জানো ? এটাকে আমাদের গ্রামের কেউ পছন্দ করে । খেয়ে একটু শক্তি পেলেই মানুষের দিকে তেড়ে আসে । সারা সময় ঘেউ ঘেউ করে । মানুষকে কামড়াতে যায় !
ভদ্রলোক বললেন, চিন্তা কর না । আমি সামলে নিবো ।
স্ত্রী বললেন, যদি এটা আমাকে কিংবা আমার পরিচিত কাউকে কামড় দেয় তাহলে কিন্তু তোমার খবর আছে !
এরপর ভ্দ্রলোক নেড়ি কুকুরটির দেখা শুনা করতে লাগলেন । প্রতিদিন নিয়মিত খেতে দেন । মাঝে মাঝে আদরও করেন । কয়েক সপ্তাহ পরেই খেয়ে দেয়ে কুকুরটি সুস্থ আর একটু সবল হয়ে গেল । শরীরে বল পেল । তারপর থেকেই যত ঝামেলা শুরু । বাসায় যে কাউকে আসতে দেখলেই ঘেউ ঘেউ শুরু করে দেয় । এমন একটা ভাব যেন বাড়িটা আসলে তার নিজেরই । সবার দিকে দিকে তেড়ে যায় । মাকড়াতে যায় । অবশ্য সবার সাথে পেড়ে ওঠে না । পাড়ার কিছু যুবক ছেলেদের দিকে একদি তেড়ে কামড়া গেল । তারা বাড়ির সামনে দিয়ে খেলতে যাচ্ছিলো । হাতে ছিল ক্রিকেট ব্যাট আর স্ট্যাম্প । ঘেউ ঘেউ করে কামড়াতে আসলেই সোজা মুখ বরাবর একটা বাড়ি দিয়ে দিল । তারপরই কুই কুই করে সে পেছনে দৌড় দিল । বাড়ির মালিক বের হয়ে এল । ছেলে গুলোর দিকে তাকিয়ে বললেন, কী ব্যাপার এভাবে মারলে কেন?
একজন বলল, আঙ্কেল আমরা আপনার কুকুরকে মারতে যাই নি । আমরা যাচ্চি খেলতে । আমাদের দেখে ঘেউ ঘেউ শুরু করে দিয়েছে । কামড়াতে আসছিলো ।
লোকটি বললেন, বুড়ো একটা কুকুর । এভাবে কেউ মারে !
-আঙ্কেল, বুড়ো কুকুর বুড়োর মত থাকতে বলেন ।
এরপর থেকেই কুকুরটি ছেলেদের দেখলে ঘেউ ঘেউ ঠিকই করতো তবে বাইরে আসতে সাহস পেত না । মুখে বাড়ির কথা ঠিকই মনে আছে তার । তবে অন্য সবার বেলাতে ঠিকই তার ঘেউ ঘেউ চালিয়ে গেল । যে বাসায় আসতো কিংবা বাড়ির সামনে দিয়ে যেত তাকে দেখেই ঘেউ ঘেউ শুরু । এমন একটা ভাব যেন এই বাড়ি এই রাস্তা সব কিছুর মালিক আসলে সেই । অন্যদের সে দয়া করে থাকতে দিয়েছে । বাড়ির মালিক ব্যক্তিটি এতোদিন ধৈর্য্য ধরে সব কিছু সহ্য করতো । বারবার মনে হত বেচারা বুড়ো হয়েছে । সে যদি বাড়ি থেকে বের করে দেয় তাহলে কোথায় যাবে ! না খেয়ে মরবে !
কিন্তু আস্তে আস্তে বাড়ির মালিকের সাথে গ্রামের অন্য সবার সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করলো । কেবল মাত্র এই কুকুরের কারণে । কারণ সবার সাথেই এই কুকুর ঘেউ ঘেউ করে । কামড়াতে যায় । অনেকেই বাসায় আসা বন্ধ করে দিল । তবে বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে তো মানুষজন যাতায়াত করবেই । সেটা তো আর বন্ধ করতে পারে না ।
মানুস যখন বিচার নিয়ে আসা শুরু করলো তখন প্রথম প্রথম তিনি নিজের কুকুরটার পক্ষ নিয়ে কথা বলতেন । কিন্তু এক সময়ে নিজেই বিরক্ত হলেন । কিন্তু একদিন সকল সীমা ছাড়িয়ে গেল। কয়েকজন কে কামড়ে দিল , এমন কি বাড়ির মালিককে পর্যন্ত কামড়াতে গেল । এতোদিন যে পেলে পুষে বড় করেছে সেটা যেন মনেই রইলো না। সেদিনই বাখাড়ি দিয়ে পিটিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন । সেই সাথে এও জানিয়ে দিলেন এই কুকুরের সাথে তার আর কোন সম্পর্ক নেই । কজন নেড়ি কুকুরটাকে পিটিয়ে সোজা করে গ্রাম ছাড়া করলো । কয়েকজন অবশ্য একটু উহু আ করলো । বলল যে আহ বেচারা বুড়ো হয়েছে । এভাবে না মারলেও পারতেন ! একজন বলল, এতো মায়া লাগছে নিজের বাড়ি নিয়ে গিয়ে পোষো । এটা শুনে অবশ্য আর কেউ কোন কথা বলল না ।
এভাবে গ্রামে কিছুদিন শান্তিতে ছিল । তারপর কোথা থেকে আবারও সেই নেড়ি কুকুর এসে হাজির । আবারও একই ভাবে বাড়ির সামনে বসে থেকে ঘেউ ঘেউ শুরু করলো । বাড়ির মালিক অবশ্য এবার কিছু বলল না । তবে এও সে সবাইকে জানিয়ে দিল যে এই কুকুরের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই । কারো দিকে ঘেউ ঘেউ করলেই কিংবা কামড় দিতে গেলে কঠিন একটা মাইর যেন দেয় । সবাই এখন এই অপেক্ষাতে আছে । আবারও একটা কঠিন মাইর দিয়ে এটাকে গ্রাম ছাড়া করবে !