মীরা বেশ কয়েকবার শুভর মাইডের ভিডিওটার চালিয়ে দেখলো । একটা ক্যামেরা একটা ছোট মেয়ের পেছনে দৌড়াচ্ছে । ছোট্ট মেয়েটা দৌড়াচ্ছে আর খিলখিল করে হাসছে । মাত্র ১৫ সেকেন্ডের ভিডিও একটা । মীরার কেমন অনুভূতি হওয়া দরকার সেটা মীরা নিজেই জানে না । তবে সারাদিন এতো পরিশ্রমের পর এই বিকেল বেলা একটু ফুরসৎ পেল খাওয়ার জন্য । খাওয়ার আগে ভিডিওটা ফেসবুকে ঢুকলো সে । উদ্দেশ্য ছিল মেসেঞ্জারে শুভ নক দেওয়া । তার আগেই এই ভিডিওটা চোখে পড়লো ।
শুভকে ভিডিও কলে ফোন দিলো । ভিডিও কলটা রিসিভ হ্ল একটু পরেই । যা ভেবেছিল তাই। শুভ পিউকে কে নিয়ে বাড়ির সামনের পার্কে এসেছে । সেখানেই দৌড়াদৌড়ি করছে দুজন ।
মীরা বলল, তোমরা কোথায় শুনি?
শুভ বলল, কোথায় আবার । বাসায় ! তুমি না বলেছো বাড়ির বাইরে না বের হতে !
শুভ ফোনের স্ক্রিনটা পিউয়ের দিকে নিয়ে গেল । তারপর পিউকে বলল, মামনি বলত আমরা কোথায় বাসায় না?
ফোনে মায়ের চেহারা দেখে বলল, হ্যা আম্মু আমরা একদম বাসায় । এই যে ড্রয়িং রুমে বসে আছি । মীরা একটু রাগ করার মুখভঙ্গী করলো বটে তবে সে নিজেই অনুভব করলো যে তার ভাল লাগছে পিউয়ের এই হাসি মুখ দেখে । মীরা শুভকে বলল, বি কেয়ারফুল ।
শুভ উত্তরে কিছু না বলে কেবল হাসলো । এই হাসির অর্থ হচ্ছে কোন চিন্তা কর না । আমি ওকে দেখে রাখবো ।
ফোনটা কেটে দিয়ে আবারও খাওয়ার দিকে মনযোগ দিল । কিন্তু ঘুরে ফিরে সেই পিউয়ের হাসিমাখা মুখটা ভেসে আসতে লাগলো । বারবার মনে হতে লাগলো যে আরেকবার কি জীবনকে সুযোগ দিবে সে? আরেকবার কি চেষ্টা করে দেখবে?
মীরার যখন ডিভোর্স তখন পিউয়ের বয়স মাত্র এক বছর । মূলত মীরার চাকরি এবং স্বাধীনচেতা মনভাবের জন্য মীরার আগের স্বামীর সাথে বনিবণা হয় নি । এদেশের বলতে গেলে সব পুরুষই চায় যেন তার স্ত্রীর তার আজ্ঞাবহ দাস হয়ে থাকে । সে যখন যা বলবে তখন তাই যেন করে । মীরার প্রাক্তন স্বামীর মতভাবটাও তেমনই ছিল । প্রথম প্রথম একটু ঠিকঠাক থাকলেও যখন মীরার প্রমোশন হয়ে বেতনের পরিমানটা ওর স্বামীর থেকে বেশি হয়ে গেল তখন ঝগড়ার পরিমানটা বেড়ে গেল অনেক গুণে । এক সময় তাই মীরা বাধ্য হয়ে সেপারেশনের জন্য এগিয়ে গেল । অনেকে ভেবেছিল বাচ্চা নিলে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে । সেটা ঠিক তো হয়ই নি, বরং বেড়েছে আরও ।
আলাদা হয়ে যাওয়ার পরে প্রায় তিন বছর কেটে গেছে । মীরা পিউকে নিয়ে বেশ সুখকে শান্তিতেই আছে । তখনই শুভর সাথে ওর পরিচয় । শুভ ওদের অফিসেই যোগ দিয়েছে আইটি ডিপার্টমেন্টে । একদিন নিজের পিসির একটা সমস্যার কারণে সে আইটিতে ফোণ করেছিল । এই ছোট খাটো সমস্যা গুলোর জন্য স্বাধারণত জুনিয়র কেউ এসে হাজির । কিন্তু ঐদিন স্বয়ং আইডি হেড এসে উপস্থির হল দেখে মীরা একটু অবাক না হয়ে পারলো না । শুভ নিজেই পিসিটা আবার কর্মক্ষম করে দিল ।
পরে অবশ্য মীরা জেনেছে যে শুভ এটা ইচ্ছে করেই করেছে । অনেক দিন থেকেই মীরাকে সে পছন্দ করে আসছে । ডিপার্টমেন্ট আলাদা হওয়ার কারণে শুভর সাথে ওর দেখা হয় না বললেই চলে তবে শুভ নাকি নিয়মিতই ওকে দেখে । খোজ খবর নেয় ।
তারপর আস্তে আস্তে টুকটাক কথা বলা শুরু থেকে বন্ধুত্ব । তবে একটা দুরুত্ব সব সময়ই মীরা মেনে চলতো । সে জানে যে একজন ডিভোর্স মেয়ের একা এই সমাজে টিকে থাকা কত বড় একটা চ্যালেঞ্জের কাজ । সেখানে যদি আবার আরেকটা ছেলের সাথে তার বন্ধুত্ব হয় তাহলে তো আর কথাই নেই । সে কোণ ভাবেই টক অব দ্য টাউন হতে চায় না ।
কিন্তু এক সময় আস্তে আস্তেই নিজের কাছে টের পায় যে শুভর প্রতি সে নিজেও খানিকটা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে । আজকের ব্যাপারটা এই দূর্বলতার দিকে আরও একধাপ এগিয়েই যাবে । বিশেষ করে পিউ শুভকে অনেক পছন্দ করে । কয়েকবার মীরার বাসায় গিয়ে হাজির হয়েছে সে । শুভ ওকে বলেছিল যে সে বাচ্চাকাচ্চা ঠিক পছন্দ করে না । তবে অদ্ভুত কারণে পিউ শুভকে পছন্দ করে ।
আজকে অফিসে মীরার কাজের চাপ অনেক বেশি । কিন্তু গতকাল ওর বাসার মেইডকে হঠাৎ করে গ্রামের বাড়িতে যেতে হয়েছে । এই অফিস আওয়ারে পিউ কার কাছে থাকবে এটা নিয়ে মীরার চিন্তার শেষ ছিল না । শেষে শুভ এগিয়ে এল । সে জানালো যে সে আজকে ছুটি নিয়ে পিউকে দেখা শোনা করবে । মীরা তখন বলেছিল, তুমি তো বাচ্চাকাচ্চা পছন্দ কর না !
শুভ হেসে বলল, বাচ্চাকাচ্চা পছন্দ করি না, আর তোমার বাচ্চা তো এক হ্ল না ? তুমি কোন চিন্তা কর না । আমি আছি ।
মীরা একটু যেন নিশ্চিন্ত হল । আজকে সকালে ঠিক সময়েই শুভ হাজির হয়ে গেল ওর বাসায় । মীরা ওকে অব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে গেল । পিউকে ভাল করে বলে গেল যেন লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে থাকে । তবে মীরা জানে যে পুরো দিন শুভ সাথে মিলে পিউ অনেক ছুটফুটি করবে । এবং দেখা গেল সেটা করেছোও ।
অফিসের কাজ শেষ করতে করতে প্রায় রাত নয়টা বেজে গেল । আর অফিস থেকে বাসায় আসতে আসতে আরও আধাঘন্টা । অফিস থেকে বের হয়েই শুভ কে ফোন দিয়েছিল মীরা কিন্তু শুভ কোণ কারণে ফোনটা ধরে নি । রাস্তায় আরও কয়েকবার ফোন দিলেও সেটা রিসিভ করে নি । এটা নিয়ে একটু চিন্তিত বোধ করলো মীরা । দ্রুত গাড়ি চালাতে বলল উবার ড্রাইভারকে । বাসায় এসে আরও দ্রুত গিয়ে হাজির হল নিজের ফ্লাটের সামনে । কলিংবেল না বাজিয়ে চাবি দিয়ে ভেতরে ঢুকলো ।
ভেতরে ঢুকেই ড্রইং রুমের সোফা টেবিলের উপরে শুভর ফোণটা চোখে পড়লো । হাতে নিয়ে দেখলো সেখানে ওর সব গুলো মিসকল উঠে আছে । তারপরই চোখ গেল শোবার ঘরের দিকে । সেই ঘরের আলো জ্বলছে । দ্রুত সেই ঘরের দিকে পা বাড়ালো ।
তবে দরজার কাছে আসতেই মীরার সকল চিন্তা একটা অদ্ভুত ভাল লাগায় পরিনত হল । মীরা ঘরের ভেতরে ঢুকলো তারপর বিছানার আরও একটু কাছে এগিয়ে গেল। দেখতে পেল শুভ শুয়ে আছে । ঘুমিয়ে পড়েছে । ঠিক তার পাশে ছোট বালিশে মাথা দিয়ে পিউ ঘুমিয়ে আছে নিশ্চিন্তে । পিউয়ের ঘুমানোর সময় ওর কোন পুতুল জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর অভ্যাস । তবে আজকে পুতুলের পরিবর্তে শুভর হাত জড়িয়ে ধরে আছে । পরম নিশ্চিন্তে সে ঘুমিয়ে আছে । দৃশ্যটা এতো ভাল লাগলো মীরার । নিজের মোবাইল বের করে একটা ছবি তুলে রাখলো । সেই সাথে সাথে মনে মনে একটা সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলল সে ।
মীরার আসার কিছুর পরেই শুভ ঘুম ভেঙ্গে গেল । মীরাকে দেখে একটু হাসলো । তারপর অতি সাবধানে নিজের হাত টা পিউয়ের কাছ থেকে বের করে সেখানে একটা পুতুল দিয়ে দিল । তারপর মীরাকে নিয়ে ড্রইং রুমে গিয়ে বলল, ওকে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে কখন নিজেও ঘুমিয়ে পড়েছি, টের পাই নি ।
মীরার কী হল সে শুভকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো । তারপর শুভকে আরো অবাক করে দিয়ে শুভর ঠোঁটে গাঢ় করে একটা চুমু খেল । কিছু সময় দুজনেই যেন একটা ভাললাগার আবেশে ডুবে রইলো । যখন নিজেকে শুভর কাছ থেকে আলাদা করলো, তখন শুভ হেসে বলল, হঠাৎ এতো আদর ! বেবিসিটিংয়ের পেমেন্ট নাকি?
মীরা হী ফেলল। তারপর বলল, তাই ধরে নাও ।
-তাহলে চাকরি ছেড়ে আমি প্রতিদিন বেসিটিং করতে আসবো ! এতো মূল্যবান পেমেন্ট তো মিস করা যাবে না।
মীরা বলল, চাইলে পারো । তবে চাকরি ছাড়তে হবে না । অন্য উপায়ও আছে । একেবারে স্থায়ী উপায় !
শুভ কিছুটা সময় একভাবে মীরার দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর বলল, তুমি সিরিয়াস?
মীরা কেবল মাথা ঝাকালো । তারপর মোবাইলে তোলা শুভ আর পিউয়ের ছবিটা শুভর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, এই ছবিটার দিকে তাকিয়ে দেখো!
শুভ ছবিটা দেখলো । মীরা বলল, এই কয়টা বছরে আমি পিউয়ের এতো চমৎকার ছবি আর দেখিনি । প্রোমিজ কর যে পিউকে নিজের মেয়ের মত করে আদর করবে । আর কিছু চাই না আমি তোমার কাছে । আমার যদি কিছু হয়ে যায় …
মীরাকে কথাটা শেষ করতে দিল না শুভ। একটু আগের মত করেই আবারও মীরার মুখের কথা সে বন্ধ করে দিলো ।
আমরা সব সময় আশা করি আমাদের জীবন টা সুখের হবে । কিন্তু বাস্তব জীবন আসলে সব সময় সুখের হয় না । তারপরেও আমরা আশা করেই থাকি যে কোন না কোন সময়ে সেই সুখের মুহুর্ত আমাদের জীবনে আসবে । হয়তো আসে না তবুও আমরা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আশা করেই থাকি । এই আশাতেই বেঁচে থাকার নাম জীবন ।
হৃদমোহিনী এই গল্প/উপন্যাস যা হোক আমার এতটাই ভালো লেগেছে যে আরো কিছু পার্ট দিলে ভালো হত, প্লিজ ভাইয়া আরো কিছু পার্ট দেন প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ
প্লিজ প্লিজ প্লিজ ভাইয়া আরো কিছু পার্ট দেন প্লিজ প্লিজ
সুন্দর ছিল 👌