অচেনা পথে দুজনের পথ চলা

oputanvir
4.6
(57)

-ক্যান ইউ ডু মি এ ফেভার প্লিজ ?

নিজের মনেই ছিলাম চোখ বুজে । খানিকটা বিরক্তও ছিল । মিষ্টি একটা কণ্ঠ শুনে চোখ খুলতে হল ।

তাকিয়ে দেখি মিষ্টি কন্ঠের মালিক ভাল করে বলতে গেলে কণ্ঠের মালিকের চেহারা তার কন্ঠ থেকে অনেক বেশি মিষ্টি । আমার মনে পড়ল না এমন মিষ্টি চেহারার মেয়ে আমি খুব একটা দেখেছি কিনা !

-জি বলুন ।

-আমার আসলে জানলার পাশে না বসলে ঠিক শান্তি লাগে না । ইফ ইউ ডোন্ট হেব এনি প্রোবলেম ক্যান উই এক্সচেইঞ্জ আওয়ার সিটস ?

আহা কি মধুর বানী ! এমন মিষ্টির মেয়ের অনুরোধ কি ফেলে দেওয়া যায় ? আমি বললাম

-না ঠিক কোন সমস্যা নাই । আপনি বসতে পারেন ।

আমি আমার জানালার পাশের সিটটা মেয়েটার জন্য ছেড়ে দিলাম । বাস জার্নির পুরোটা সময় এই মেয়েটা আমার পাশে বসে যাবে এটা ভাবতেই মনটা ভাল গেল ।

দিপুর উপর খুব বিরক্ত ছিলাম । এখন দিপুকে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছা করছে । দিপুই আমার জন্য এই গাড়িতে সিট বুক করেছে ।

কদিন থেকে পরিবারের সবার উপরেই আমি খুব বেশি বিরক্ত হয়ে আছি । মা ফোন করলেই বলে বিয়ে কর ।

বিয়ে করবি কবে ? তাড়াতাড়ি বউ আন । তারপর ছোট ভাই দিপু মার কথার সাথে সায় লাগালো । সেও বলছে বিয়ে করতে ।

আরে তুই তো আমার ছোট ভাই , তোর তো বোঝা উচিত্‍ যে আমি কেন বিয়ে করতে চাই না । কে বল সেধে সেধে নিজের গলায় বেড়ি পড়াতে চায় । এখন আছি কত চমৎ‍কার কত স্বাধীন বিয়ে করলেই সব খতম !

বউ বলবে

-এটা কর

-ওটা কর

-এটা করলে কেন

-ওটা করলা না কেন ?

এই কেনোর উত্তর দিতে দিতে আমার জান খতম হয়ে যাবে ! কি দরকার বাপু এসব ঝামেলার !

আমার এক ভার্সিটির বন্ধু , জাকির নাম । আমাদের ইউনিভার্সিটির হিরো ছিল । কি সুন্দর নায়কের মত চেহারা ছিল ।

কয়েক মাস আগে দেখা হয়েছিল । আমিতো প্রথমে চিনতেই পারি নি । মনে হচ্ছিলো পঞ্চাশ বছরের বুড়ো । এতো গুলো প্রশ্ল নিয়ে ওর দিকে তাকালাম । ও কেবল বলল দোস্ত বিয়ে করেছি রে !

ওই একটা লাইন ই ও এমন ভাবে বলল যে আমার আর কিছু বোঝার বাকি রইলো না । আর আমি সেই গলায় ফাঁসি পড়তেই এবার বাড়ি যাচ্ছি ।

না গিয়ে কোন উপায়ও ছিল না । বাবা ফোন করে কড়া করে বলেছে এবার যদি বিয়ে না করি তাহলে ভুলে যাওয়া হবে যে আমি ঐ বাড়ির ছেলে ।

কি করবো আর ? যত বড়ই হই না কেন বাপের উপর কথা বলার সাহস এখনও হয় নি।

-কি বলেন ভাইয়া গাড়ি থেকে নামবো কিভাবে? গাড়ি তো ফেরি তে উঠে গেছে !

আমি খানিকটা অবাক হয়ে মেয়েটার দিকে তাকালাম ! মেয়েটা ফোনে কথা বলছে ! তরতাজা মিথ্যা কথা বলছে !

আমাদের গাড়ি এখনও ছাড়েই নি আর এই মেয়ে বলছে কিনা ফেরীতে উঠে গেছে !

সমস্যা কি এই মেয়ের ?

তারপর আরো কিছু বলল তার সব গুলাই ডাহা মিথ্যা কথা ! এই মেয়েটা এতো মিথ্যা কথা কেমনে বলে যাচ্ছে?

মেয়েটি ফোন রেখে আমার দিকে তাকালো ! আমার মুখে তখনও মনে হয় অবাক হওয়ার বিষয়টা লেগেছিল । আসলে আমার ঠিক মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল যে এতো সুন্দর একটা মেয়ে এভাবে অকপটে মিথ্যা কথা বলতে পারে !

আমার মুখের প্রকাশ ভঙ্গিতে মনে হয় কিছু ছিল, মেয়েটা খানিকটা কৈফতের সুরে বলল

-আসলে আমার বস ? আজ অফিস যাইনি তো তাই !

-ঠিক আছে ! কিন্তু তাই বলে এভাবে মিথ্যা বলা তো ঠিক না ! তাকে কারণটা বুঝিয়ে বললেই হত !

মেয়েটি আমার কথায় মনে হল খানিকটা লজ্জা পেল । তবে মেয়েটা আমার পাশে বসাতে প্রথমে যেমন আনন্দিত হয়েছিলাম এখন আর তেমনটা লাগছে না ! এখন মনে হচ্ছে মেয়েটা না বসলেই হয়তো ভাল হত ।

-বাসায় যাচ্ছেন বুঝি?

-হুম ।

ভেবেছিলাম মেয়েটার সাথে বেশি কথা বলবো না । যে মেয়ে এতো সুন্দর করে অকপটে মিথ্যা বলতে পারে সে মেয়ের কাছ থেকে দুরে থাকাই ভাল ।

-আমিও বাসায় যাচ্ছি ! অনেকদিন বাসায় যাওয়া হয় না । জানেন আমার মা না অনেক সুন্দর করে পায়েস রান্না করতে পারে । কাল রাতে আমাকে ফোন করে বলল যে আজ পায়েস রাননা করবে । আমি খুব পছন্দ করি তো ! তাই আমার কাছে দুঃখ করছিল । অনেক দিন বাড়ি যাওয়া হয় না তো তাই।

-ও আচ্ছা ।

-এই জন্য বাসায় যাচ্ছি । মাকে সারপ্রাইজ দিবো । হঠাৎ বাসায় হাজির হয়ে বলব মা পায়েস দাও ! কেমন হবে বলুন তো ? আমি জানেন আরো কি ঠি রে রেখেছি………

আমি মেয়েটার কথা বলার ক্ষমতা দেখে অবাক না হয়ে পারলাম না । আামর সাথে পরিচয় হয়ে কয়েক মিনিটও হয় নি আর এমন ভাবে কথা বলছে যেন কত দিনের পরিচিত আমরা।

সুন্দরী মেয়েদের মাথায় যে বুদ্ধি একটু কম থাকে টা তো আগেই জানতাম, তাই বলে হবে ?

চেনা নাই জানা নাই একজনের সাথে এমন খেজুরে আলাপ করতে হবে!

আরে তোর মা ভাল পায়েস রান্না করতে পারে ভাল কথা একথা আমাকে বলার কি হল !

বুঝলাম এই মেয়ে সারা রাস্তা আমার মাথা খারাপ করে দিবে ।

তবে একটা কথা মানতেই হবে যে মেয়েটা সুন্দরী হলে অহংকারী না ! মেয়েটার হাবভাব দেখে তো তাই মনে হচ্ছে !

এটা একটা ভাল দিক!

আমাদের অফিসে একটা মেয়ে আছে । বসের ভাতিজি । দেখতে ভাল । মেয়েটার তাতেই কি ভাব ! অহংকারে যেন মাটিতেই পড়ে না । আর এমন বাকা বাকা কথা বলে ! মাঝে মাঝে এমন মেজাজ খারাপ হয় !

আমার মতে যে মেয়ে গুলো নিজেদের রুপ নিয়ে অহংকার করে তাদের মত বেকুব আর দুনিয়াতে নাই । তারা এমন একটা জিনিস নিয়ে গর্ব করে যেটাতে তাদের কোন হাত নেই।

একটা মেয়ে সুন্দরী হবে নাকি অসুন্দরী হবে এটা কেবল উপরয়ালা ঠিক করে । যারা উপরয়ালা বিশ্বাস করে করে তারাও বলবে তাই । মেয়েটা সুন্দরী হবে কি না তা নির্ভর করবে তার বাবা মার ডিএনএ এর উপর ।

তাহলে যে জিনিসটার উপর তোর কোন হাতই নাই তুই সেটা নিয়ে কেমন করে অহংকার করিস? এরকম মেয়েদের সকাল বিকাল নিয়ম করে থাপড়ানো দরকার !

বেয়ুকুফ লারকি!

যাক অন্য কথা চিন্তা করে লাভ নাই । মেয়েটার ভিতর কোন অহংকার নাই কি না অথবা মেয়েটার এমন সহজ ভাবে কথা বলে দেখে কি না তাও জানি না মেয়েটাকে ভাল লেগে গেল !

মেয়েটা তখনও কথা বলেই যাচ্ছে ।

-আপনার নাম কি?

-জি?

কথার মাঝখানে বাধা পেয়ে মেয়েটা ঠিক বুঝলো না আমি কি বললাম !

মেয়েটি আবার বলল

-কি বললেন?

-বললাম আপনার নাম কি?

-ও !

মেয়েটা হাসলো !

-আামর নাম রীদি ! আপনার ?

-আমি অপু । সর্ট ফর্ম ! কোথায় বাসা?

-আমি মিরপুর থাকি।

-না মানে যেখানে যাচ্ছেন, মায়ের কাছে । মা কোথায় থাকে ?

-ও!! আমরা চুয়াডাঙ্গায় থাকি !

-এই বাসটা চুয়াডাঙ্গায়তেই যায় ! ওখানে কোথায় ?

মেয়েটা বলতে গিয়েও থেমে গেল । কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল

-আপনি এতো কথা কেন জানতে চাইছেন ?

-কেন জানতে চাইবো না বলুন ? আপনি বললেন আপনার মা খুব সুন্দর পায়েশ রান্না করতে পারে । বাড়ির ঠিকা না বলবেন না? ভাবলাম বাড়ির ঠিকানা নিয়ে একদিন খেয়ে আসলাম পায়েস।

মেয়েটা আবার আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল

-আপনি আমার সাথে মজা করছেন না?

-আরে মজা করবো কেন ? সত্যি বলছি ।

মেয়েটা আর কিছু বলল না । আমি বললাম

-আপনি কিন্তু কাজটা ভাল করেন নি।

-কোন কাজটা ? পায়েশ রান্নার কথাটা ?

আমি হেসে উঠলাম ।

-আরে না । এই যে একা একা বাসে উঠে পড়লেন । বাসাতেও জানান নি। আপনি বললেন বাসায় সারপ্রাইজ দিবেন । আমার তো মনে হচ্ছে বাসায় গেলে আপনার বাবা আপনাকে বকবে !

আামর কথা শুনে মেয়েটার মুখটা কেমন মলিন হয়ে গেল।

আরে বাচ্চা মেয়ের মত মেয়ে মত কেঁদে দিবে নাতো !

আমি বললাম

-আপনার বাবা কি সত্যিই আপনাকে বকবে?

মেয়েটা আলতো করে মাথা নাড়াল । বলল

-বকবে না । কোন দিন দিন বকবে না । আামর বাবা বেঁচে নেই !

-ও সরি ! আমি জানতাম না ! আমি খুব দুঃখিত !

– না ঠিক আছে । আপানর কোন দোষ নাই ! সরি হবার কিছু নাই !

মেয়েটা চুপ করে গেল ।

আমার নিজের কাছেই খারাপ লাগছে । মেয়েটা নিজের মাঝে কত ফুর্তিতে ছিল । আমি কি করলাম !

এখন কি করি?

-কই বললেন না বাসায় কোথায় ? আর কবে পায়েশ খেতে আসবো । একবার যখন লোভ দেখিয়েছেন তখন কিন্তু দিতেই হবে পায়েশ । আমি কিন্তু ছাড়বো না !

মেয়েটা এই কথায় একটু হাসলো !

-আচ্ছা মা কে কি ফোন করে দিবো যে আমি আসছি !

– না থাক ! এখন বললে উনি চিন্তা করবেন । বেশিতো বাকি না । ৪/৫ ঘন্টার ব্যাপার !

আমার কথাটা শেষ হল না গাড়ি থেমে গেল !

কিছুক্ষন পরে বুঝলাম গাড়ি কোন কারনে নষ্ট হয়ে গেছে ! স্টার্ট নিচ্ছে না । ড্রাইভার চেষ্টা করছে চালু করার জন্য কিন্তু গোঁ গোঁ করে গাড়িটা যেন মানা করে দিচ্ছে ! প্রার পনের মিনিট চেষ্টার পর গাড়ি আবার স্টার্ট নিল । যাত্রা শুরু হল আবার ।

মেয়েটা টুকটাক কথা বলতে লাগলো আমার ভালই লাগছিল । কিন্তু মনে ভিতর কেমন একটা অনুভূতি হচ্ছে যে কোন গড়বড় নিশ্চই হবে !

আর হলই তাই ফেরি পার হয়ে গারি আবার নষ্ট হয়ে গেল । বিকেল বেলা রওনা দিয়েছিলাম ফেরি ঘাটে কিছুটা জ্যাম ছিল । সন্ধ্যা না নেমে গেল ।

এবার ড্রাইভার আর হেলপার মিলে নেমে গেল গাড়ি ঠিক করাতে ! কিন্তু খুব বেশি লাভ হচ্ছে বলে মনে হল না ।

আমি নীচে নামলাম চা খাওয়ার জন্য । দেখলাম একটু পরে মেয়েটাও নেমে এল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-আপনি ঠিকই বলেছিলেন ! এভাবে হুট করে চলে আসা আমার উচিৎ হয় নি ! এখন কি করবো ! যদি গাড়ি ঠিক না হয় ? তাহলে?

-আরে এতো চিন্তা করছেন কেন ? গাড়ি না ঠি হলে এখানে থাকতে হবে । গাড়ির মধ্যে !

-আর ইউ সিরিয়াস?

-হুম ! বসুন ! চা খান ! আর এতো চিন্তা করেন না । একটা কিছু ব্যবস্থা হবে ! বসেন । চা খান ।

রীদি বসলো । তবে একটু চিন্তিত মনে হল মেয়েটিকে ।

রাত দশটার দিকে বাস আবার চালু হয়ে গেল । কিন্তু মেয়েটির মুখে চিন্তার রেখা রয়েই গেল ।

আমি বললাম

-আরে এতো চিন্তার কি আছে ! গাড়িতো চলছেই । রাতের ভিতর পৌছে যাবো । আর বেশিক্ষন লাগবে না ।

মেয়েটি বলল

-সমস্যা তো এই খানেই !!

-মানে কি ?

-আমাদের বাসা পৌরসভার পিছনে । এতো রাতে একা একা কিভাবে যাবো?

আমি একটু ভাবলাম ।

-একটা কাজ কিন্তু করা যেতে পারে !

-কি?

-আপনি আমাদের বাসায় আমার সাথে নেমে যান ! তারপর আমি না হয় আপনাকে পৌছে দিবো !

-আপনি কেন এমনি এমনি কষ্ট করতে যাবেন ?

-আরে পায়েশ খাবো না? মনে নেই আপনার ?

রীদি হাসলো । আর ওর চেহারা দেখে মনে হল খানিকটা খুশিই হয়েছে।

কিন্তু আমি পরলাম খানিকটা চিন্তায় ! মা যদি আমাকে এই রাত দুপুরে মেয়েটাকে নিয়ে বাড়িতে যেতে দেখে তাহলে কি ভাববে ? সেই চিন্তা করতেই বাস বাসার সামনে চলে আসলো ! আমি রীদি নিয়ে নেমে পড়লাম !

রাত এগারোটার মত বাজে ! গ্রাম ঘুমিয়ে পরেছে । কেবল আমাদের বাড়ির লাইট জ্বলছে । জানি, মা জেগে আছে ! জানি না মা এই মেয়েটা কে দেখে কি বলবে ! এমন কিছু করে না বসে যেটাতে রীদির সামনে আামকে লজ্জায় পড়তে হয় !

-আমি বরং এখানে দাড়াই !

রীদি বাড়ির ভিতর ঢুকতে কেমন জানি ইতস্ততঃ বোধ করছে !

-আরে ! তা কেন হবে ? এখানে একা একা দাড়িয়ে থাকবেন নাকি ?

-না মানে আপনার ফ্যামিলির লোকজন আবার কি ভাববে আমাকে দেখে ?

-কোন সমস্যা নাই । কেউ জেগে নেই এখন। কেবল মা জেগে আছে ।

-বলেছে আপনাকে ?

-কি বললেন?

-আমার কেন জানি মনে হচ্ছে সবাই জেগে আছে ।

-মানে ? কি বলছেন এসব ? কোন সমস্যা নাই ।

আমি রীদির দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মুখটা কেমন জানি হাসি হাসি!

আমি ঠিক বুঝলাম না।

মা দরজা খুলল । মায়ের চোখ রীদির দিকে পড়তেই মা কিছু বলতে যাচ্ছিল ! মা কিছু বলার আগেই আমি বললাম

-মা আমি বলছি ! এর নাম রীদি !

মা খুব শান্ত গলায় বলল

-আমি জানি!

-জানো ! মানে??

মা আমার কথার জবাব দিল না । রীদির দিকে তাকিয়ে বলল

-তোমার মা কতক্ষন ধরে অপেক্ষা করছে ! দেখতে দেখতেই বসার ঘর থেকে একটা মাঝ বয়সী মহিলা বের হয়ে এল।

আস্তে আস্তে দেখলাম সবাই রুম থেকে বের হয়ে জড় হতে লাগলো । সবার মুখটা কেমন হাসি হাসি ।

আর আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন আমি যেন কোন চিড়িয়াখানার জন্ত ।

গাধা !!

আস্তে আস্তে আমি সব বুঝতে পারলাম । নিশ্চয়ই দিপুর বুদ্ধি সব ! ও ই আমার গাড়ীর সিট বুক করেছিল ! সব কিছু ছিলো পরিকল্পিত !!

তাই তো বলি !

সবার শেষে বাবা ঘরে ঢুকলো । আমার দিকে তাকিয়ে বলল, এতো দেরি হলেও বিয়ে আজই হবে । কাজীকে খবর দেওইয়া হয়েছে । সে একটু পরেই চলে আসবে । যাও ফ্রেশ হয়ে নাও দুজনই !

কী করবো প্রথমে বুঝতে পারলাম না । তবে বাবার নির্দেশ মোতাবেশ ব্যাগ নিয়ে ঘরের দিকে পা বাড়ালাম ! ঘরে ঢুকে দেখি কেবল আমাদের পরিবারের মানুষই না সাথে সাথে আমাদের বেশ কয়েকজন আত্মীয় স্বজনও আছে । পুরো বাসায় একটা উৎসবমূখর পরিবেশ !

একবার মনে হল এভাবে আমাকে ঢোকা দেওয়া মোটেই ঠিক হয় নি সবার । এই বিয়ে আমি করবো না । কিন্তু পরক্ষণেই মনে হল যে বিয়ের জন্যই তো আসছিলাম । এবং বিয়েটা বাবা মায়ের পছন্দেই হত ! আর রীদিকে আমার খারাপ লাগে মোটেই । কেবল তরতাজা মিথ্যা বলাটা ছাড়া !

ফ্রেশ হওয়ার পর আমার জন্য বরাদ্দকৃত পাঞ্জাবী যখন পরেছি তখনই রীদি ঘরে ঢুকলো । এরই ভেতরে দেখলাম সেও খানিকটা ফ্রেশ হয়ে নিয়েছে তবে পোশাক বদলাই নি তখনও। আমার দিকে তাকিয়ে বলল, দেখুন আমি জানি আপনি বিয়ে করতে চান না ! কেন চান না সেটাও জানি আমি । এই বয়সে সকল ছেলের মনের ভেতরেই এই বিয়ে ভীতি থাকে । আমারও যে নেই সেটা আমি বলব না । তবে এই জার্নিটুকুতে আমি আপনার ব্যাপারে একটা ধারণা পেয়েছি । জানেনই ই তো মেয়েরা আগে থেকে অনেক কিছু বুঝতে পারে ।
আমি বললাম, তা কি বুঝতে পারলেন আমার ব্যাপারে?
-বুঝলাম যে আপনি মানুষ হিসাবে ভাল । অন্তত এমন একজন যার সাথে সময় ভাল যাবে । আমি জানি না আমাকে কেমন লেগেছে তবে আপনি অবশ্যই আমাকে মানা করে দিতে পারেন । যেহেতু বিয়ের ব্যাপার । সারা জীবনের ব্যাপার । আপনার বাবাকে আপনি যতই ভয় পান না কেন আপনি এখনই আমাকে বলতে পারেন । আমি এই বিয়ে হতে দেব না । এবং কোন মন খারাপও হবে না আমার !

আমি রীদির দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলাম । মেয়েটার চোখের দিকে তাকিয়ে কেন যেন আমার মনে হল যে মেয়েটার সাথে বিয়ে হওয়াটা আসলে অতোটা খারাপ হবে না । কেন এমন মনে হল সেটাও বুঝলাম না ।
রীদি আবার বলল, তবে আরেকটা কথা বলি ! বাসের ভেতরে যে কথা গুলো আমি বলেছিলাম সেটা আমার বস ছিল না । দিপুকে ফোন দিয়েছিলাম । তার সাথেই কথা বলছিলাম । আমি জানি আপনি মিথ্যা বলাটা মোটেই পছন্দ করেন না ।

আমাদের বিয়ে হতে হতে রাত একটা বেজে গেল । কাবিন নামাতে যখন সাক্ষর করছিলাম তখন কেমন একটা অদ্ভুত মনভাব এসে জড় হল । এই সাইনের মধ্য দিয়ে নতুন একটা জীবনে প্রবেশ করছি আমি । একদম নতুন একটা জীবন !

পেইজের মেমোরিতে গিয়ে দেখলাম এই গল্পটা পেইজে আমি ১০ বছর আগে পোস্ট করেছিলাম । এই গল্পটার বয়স ১০ বছর । যদিও শেষটা আরেকটু নতুন ভাবে লেখা হল !

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.6 / 5. Vote count: 57

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →