গল্পের মত সুন্দর 2.0

oputanvir
4.9
(89)

শশী কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে রয়েছে । পুরো শরীরে ব্যাথা । এতো পরিশ্রম যে হবে সেটা ও ভাবতে পারে নি । আজকে শশী একেবারে মৃত্যুর মুখে পৌছে গিয়েছিলো। সারা জীবনে সে ঘুমিয়েছে শহরের নিরাপদ চার দেওয়ালের মাঝে, চলাচলে করেছে গাড়ি দিয়ে । এই পাহাড়ে এতোটা পথ হাটা কি ওর পক্ষে এতো সহজ? কিন্তু সব থেকে বড় শকটা ও পেয়েছে পাহাড় থেকে পরে গিয়ে ! একেবারে মৃত্যুর কাছে চলে গিয়েছিলো বলতে গেলে ! এটা সামলে নিতে শশীর বেশ কষ্ট হচ্ছে । এক মনে সে সেই মুহুর্তটার কথাই চিন্তা করে যাচ্ছে । কিছুতেই মাথা থেকে বের করতে পারছে না সেটা !

-শশী আপু !

কটেজের একেবারে দেওয়ালের দিকে ঘেষে শুয়ে ছিল ও । শরীরে হাত পড়ায় ফিরে তাকালো । রিনি । মেয়েটা ওর সাথেই এসেছে ট্যুরে!
-কি হল?
-চলুন ভাইয়াদের ঘরে?
-কেন ?
-ওখানে গান হবে । সবাই চলে গেছে । আসুন !

শশীর মনে হল একবার বলে যে যাবে না । কিন্তু তারপরই মনে হল এখানে একা একা শুয়ে থেকেই বা কী করবে ? বরং গান শোনা যাক আড্ডা দেওয়া যাক ! অপুও নিশ্চয়ই ওখানে আছে । ছেলেটাকে একটা ভাল করে ধন্যবাদ দেওয়া হয় নি । সে যদি না থাকতো তাহলে আজকে তার কী অবস্থা হত ?
অন্য কেউ কি তাকে রক্ষা করতে ঐভাবে লাফ দিতে পারতো?
যদি না দিতো তাহলে আজকে ও কোথায় থাকতো? ঐ খাদের ভেতরে আছড়ে পড়তো ! মরে কি যেত?
হয়তো?

শশী উঠে চাদরটা জড়িয়ে নিল। পরনে একটা লেগিংস রয়েছে আর একটা বড় টিশার্ট ! এটা পরেই শুয়েছিলো সে । চাদর জড়িয়েই পাশের ঘরে গিয়ে হাজির হল । সবাই হাজির সেখানে । শশীর চোখ ঘুরতে লাগলো পুরো ঘর জুড়ে । একজন মানুষকে খুজছে । বেশি দুর ঘুরতে হল না । খুজে পেল তাকে । ঐতো । বসে রয়েছে এক পাশে । মোবাইল টিপছে । শশীর খুব ইচ্ছে অপুর পাশেই গিয়ে বসতে । কিন্তু কেন জানি বসতে পারলো না ।

সময়টা বেশ ভালই কাটলো । সবাই গলা মেলাল । শশী আগে কোন দিন এমন সময় কাটায় না । ওর জীবন সব সময়ই নির্দিষ্ট ছিল । ওকে সারা জীবন যা করতে বলা হয়েছে তাই করেছে সে। যা পরতে বলা হয়েছে তাই পরেছে । কোন দিন পরিবারের বিরুদ্দে একটা কথা বলে নি সে । বলা চলে ওর জীবনে এক মাত্র নিজেস্ব সিদ্ধান্ত হচ্ছে একা একা এই ট্যুরে চলে আসা ।

রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই আবার কটেজে ফিরে গেল । কিন্তু শশীর মনে শান্তি লাগছিলো না । বারবার মনে হচ্ছিলো যে অপুকে কিছু বলা দরকার । কাল আবার সকালে নাস্তার পরে নিচে নামা শুরু হবে । তখন কি বলতে পারবে ?
এখন কি যাবে?
সবার সামনে গেলে কি বলবে সবাই?

শশী একটা জোরে নিঃশ্বাস নিল । তারপর মনে মনে বলল, যা বলার বলুক ! এটা মনে করেই উঠে পড়লো । আবারও সেই চাদরটা জড়িয়ে নিল । তারপর মেয়েদের রুম থেকে বের হয়ে পাশের রুমে দরজার সামনে গিয়ে দাড়ালো । দরজাটা খোলা । ভেতর থেকে কথা বলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে । শশী আবারও একটু থামলো । একটু যেন অস্বস্তি হচ্ছে ।
কী ভাববে ওরা !

ভাবুক যা ইচ্ছে !

দরজাতে উকি দিলো । তারপর একটু গলায় জোর নিয়ে ডাক দিল, অপু ভাইয়া !
ঘরের সব গুলো চোখই শশীর দিকে ফিরে তাকালো । হাসাহাসি আওয়াজ থেমে গেল । সোলার লাইটের আলোতে সব গুলো মুখ দেখতে পাচ্ছে শশী !
সে কোথায় ?
ঐ তো কোনার দিকে । ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে !
-বলুন ।
শশী বলল, একটু আসবেন প্লিজ ! একটু দরকার ছিল !

অপুকে একটু দ্বিধান্বিত দেখলো । তবে সে উঠে দাড়ালো । দরজার সামনে এসে বলল, কিছু দরকার ছিল?
-জি ! একটু আসবেন ?
-কোথায় ?
-ঐ চুড়ায় গিয়ে বসি ।

অপুকে আবারও কেমন যেন দ্বিধান্বিত মনে হল । বলল, চলুন !

অপুকে নিয়ে যখন চুড়ার দিকে হাটা দিচ্ছিলো ওর কানে পেছন থেকে হাসির আওয়াজ এল । শশী কিছু মনে করলো না ।
চুড়াতে বসার কয়েকটা জায়গা রয়েছে । তবে সে গুলো সবই ফাঁকা । বাইরে খুব বাতাস দিচ্ছে । বেশ ঠান্ডা লাগছে । এই জন্য বাইরে কেউ নেই এখন । একটা বেঞ্চে বসে পড়লো দুজন । সামনের অন্ধকারের দিকে শশী তাকিয়ে রয়েছে একভাবে । হঠাৎ কেন জানি ওর মনটা খুব বেশি ভাল হয়ে গেল । এমন পরিবেশে ও কোন দিন আসে নি । কোন দিন আসবে ভাবতেও পারে নি ।

শশী হঠাৎ লক্ষ্য করলো যে অপু একটু একটু কাঁপছে যেন । শীত লাগছে ওর । কেবল মাত্র একটা টিশার্ট পরে রয়েছে সে । শীত লাগবেই । শশী বলল, আপনার শীত লাগছে ?
-একটু লাগছে । যে বাতাস !
-আসুন আমার চাদরের ভেতরে আসুন !
-আরে না না ! ঠিক আছে । কি যেন বলবেন বলছিলেন?

শশী অপুর কথা শুনলো না । অপুর একটু কাছে চলে এল । তারপর চাদরটা জড়িয়ে দিল অপুর শরীরে । অপু বুঝতে পারলো যে মানা করে লাভ নেই । একটু টেনে নিল সে । অপুর কাধটা গিয়ে ঠেকলো শশীর কাধে ।
অপু আবার বলল, কি যেন বলবেন বলছিলেন?
শশী যে কি বলবে সেটা সে নিজেই জানে না । কেবল মনে হল কিছু বলা দরকার !
-আজকে যখন পরে যাচ্ছিলাম, জানেন আমার তখন কী মনে হচ্ছিলো?
-কী ?
-মনে হচ্ছিলো এতো জলদি মরে যাবো ! জীবন কিচ্ছু করতে পারলাম না । একটু নিজের মত করে বাঁচতেও না ।
অপু চুপ করে রইলো । শশী আবার বলল, আমি যখন ঘাস লতাপাতা ধরে ঝুলে ছিলাম তখন একবার কেবল নিচে তাকিয়েছিলাম । যেন আমি আমার অতীতের সব কিছু আমার চোখের সামনে এক নিমিষে চলে এল । তারপর …

শশী কিছু সময় চুপ করলো । অপু বলল, তারপর? তারপর কি হল?
-তারপর আমি কেবল বুঝতে পারলাম যে জীবন ভর যে আমি যে যে বিষয়ে ভয় পেয়েছি, অন্যের জন্য নিজের ইচ্ছের গলা টিপে মেরেছি এসব মূল্যহীন । জীবনটা আমার । আমার কাছে আমি সব থেকে গুরুত্বপূর্ন হওয়া দরকার ছিল আমার নিজের ইচ্ছে গুলো। তাহলে এই আফসোসটা হত না।
-ওয়েল । জীবন কিন্তু শেষ হয়ে যায় নি ।
-জানি । থ্যাংস্ক টু ইউ ।
-আরে বাবা এটা যে কেউ করতো ।
-করতো না । তুমি করেছো।

অপু লক্ষ্য করলো শশী ওকে তুমি করে বলেছে । ভুল করে নাকি ইচ্ছে করে সেটা অবশ্য বুঝতে পারলো না । শশী বলল, দ্বিতীয় সুযোগ যেহেতু আমি পেয়েছি তাই এইবার আর এটা নষ্ট করবো না । নিজের মনে যেটা ইচ্ছে করবে সেটা করবো ।
-তাই করা উচিৎ ! আমি সব সময় তাই করি ।
-তাই করবো। আগে বল দেখি তোমার কি প্রেমিকা আছে?

অপু খানিকটা অবাক হয়ে গেল শশীর এই কথা শুনে । মোটেই ভাবতে পারে নি এমন প্রশ্ন শশীর মুখ থেকে বের হবে । অপু বলল, মানে কি বলছো?
-আরে বাবা বললাম যে কোন প্রেমিকা আছে তোমার? নাকি সিঙ্গেল?
-এখনও সিঙ্গেল ।
-গুড । আজ থেকে আর নেই । আজ থেকে আমি তোমার প্রেমিকা ! গার্লফ্রেন্ড !
অপু যে কি বলবে সেটা খুজেই পেল না । মেয়েটার মাথা নিশ্চিত ভাবে খারাপ হয়ে গেছে । নয়তো এমন ভাবে এমন কথা কি কেউ বলতে পারে!

অপু কি বলবে বুঝতে পারলো না । চুপ করে তাকিয়ে রইলো সামনের দিকে । বাতাসের পরিমান আরও যেন বেড়েছে । অপুর একটু শীত শীত অনুভব হচ্ছে । তবে সেটা মুখ ফুটে বলল না । চাদরের সাথে সাথে শশীর শরীরটা খানিকটা ওর শরীরের সাথে ঘেষে রয়েছে । অপুর একটু অস্বস্তি যে লাগছে না সেটা বলবে না তবে কেন জানি ভালও লাগছে ।

শশী বলল, তুমি জানো আমি কিভাবে এই ট্যুরে এলাম? মানে আমি বলতে চাচ্ছি আমি কোন দিন ভাবি নি এই ট্যুরে আমি আসতে পারবো । এটা আমার জীবনে নেওয়া প্রথম সিদ্ধান্ত যেটা আমি একা একা নিয়েছি ।
-তাই নাকি?
-হুম । আমার এই বয়স পর্যন্ত আমি তাই করেছি যা আমাকে করতে বলা হয়েছে। কোন স্কুলে পড়বো, কি খাবো কি পরবো, কার সাথে মিশবো সব । আমি কোন দিন ডাক্তার হতে চাইনি । আমি হতে চেয়েছিলাম সাহিত্যের ছাত্রী । বাংলা কিংবা ইংরেজি । তারপর কোন কলেজের শিক্ষিকা । এটা আমার স্বপ্ন ছিল । কিন্তু আমাকে হতে হয়েছে ডাক্তার ।
-ডাক্তারও তো ভাল।
-ভাল যাদের প্যাশন থাকে । কিন্তু যাদের প্যাশন থাকে না, ডাক্তারি পড়া তাদের জন্য এটা এক দোজখ । স্রেফ হেল । এই পুরো সময়টা আমি কেবল হেলে ছিলাম । আর কিছু না । আমি এখনও রক্ত দেখতে পারি না ঠিকঠাক মত । আমার সাথে যারা ছিল, সবাই এক বছরের ভেতরেই সামলে নিয়েছে । দুইজন অবশ্য মেডিক্যাল ছেড়ে দিয়েছিলো কিন্তু আমি সামলে উঠতে পারি নি । আমার প্রেফেসর একবার আব্বুর সাথে কথা বলেছিলো । তাকে বলেছিলো যে আমার জন্য আসলে ডাক্তারি না । কিন্তু আবার বাবা সেসব কথা শোনে নি । আমাকে বাধ্য করেছে ।
-এরপর?
-এরপর আর কি? হতে হয়েছে । ডাক্তার হয়েছি বটে কিন্তু কেমন ডাক্তার কে জানে । আমি সম্ভবত এমন ডাক্তার যে এখনও রক্ত দেখলে মাথা ঘুরে ওঠে । মাঝে মাঝে অজ্ঞান হয়ে যাই । হিহিহিহি !

অপু চুপচাপ শুনছিলো শশীর কথা । ট্যুর শুরু প্রথমেই জেনেছিলো যে শশী মেয়েটা ডাক্তার । ডাক্তার কথা শুনলেই একটা আলাদা অনুভূতি আসে । অপু সারা জীবন ডাক্তারদের পছন্দ করে এসেছে । অপুর কাছে মনে হয় ডাক্তারী পেশাটা একটা চমৎকার পেশা । এদের ভেতরে একটা আলাদা কুলনেস রয়েছে । মেয়ে হলে তো কথাই নেই । একবার এক ডাক্তার মেয়ের সাথে অপুর বেশ কিছুদিন কথা হয়েছিলো । মেয়ের ভাব ভঙ্গিমা এতো হাই ছিল যে অপু ঠিক কুলিয়ে উঠতে পারে নি । কিন্তু এই মেয়েটাকে একদম অন্য রকম মনে হচ্ছে । একটু আগে সে আবার নিজেকে অপুর গার্লফ্রেন্ড হিসাবে ঘোষণাও দিয়েছে । অবশ্য এটা ঝোকের মাথায় হতে পারে । মেয়েটা আজকে একটা শক পেয়েছে । সত্যি সত্যিই মৃত্যুর কাছে চলে গিয়েছিলো । অপুর কারণে ফিরে এসেছে । সে নিজেও জানে না যে এভাবে সে কেমন করে লাফ দিয়ে মেয়েটার কাছে চলে গেল । হয়তো দুজন এক সাথেই মারা পরতো নিচে গিয়ে পড়ে !

অপু বলল, তারপর কী হল ? কিভাবে এলে এই ট্যুরে?
শশী বলল, বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে । তারই পছন্দের এক ছেলের সাথে । বিয়েটা আজকে হওয়ার কথা ছিল !
অপু খানিকটা অবাক হয়ে বলল, বিয়েটা আজকে হওয়ার কথা ছিল ?
-হুম ! পালিয়ে এসেছি । কোথায় যাবো আসলে ঠিক ছিল না । সারা জীবনে পরিবারের কথা মত চলতে গিয়ে আসলে আমার ভাল কোন বন্ধু ছিল না । কারো সাথে মিশতে শুরু করলে বাসা থেকে বলা হত তার সাথে কম কম মিশতে । তাই কারো সাথে আমার কখনও ভাল কোন সম্পর্ক তৈরি হয় নি কোন দিন । পালিয়ে তাদের কাছে যেই উপায়ও ছিল না । ঘর থেকে সকাল বেলা যখন বের হলাম তখনও আমি ঠিক জানতাম না যে আমি কোথায় যাবো ! সারাদিন এদিক ওদিক ঘুরে বেরিয়েছি । তারপর ফেসবুকে এই ট্যুরের ইভেন্টটা দেখলাম । কোন কিছু চিন্তা না করেই চলে এলাম ।
-বাসায় অনুষ্ঠান ?
-না ঠিক কোন আয়োজন করা হয় নি এখনও । আজকে কেবল আকদ করার কথা ছিল । হোটেল স্কাই ব্লুতে পারিবারিক ভাবে বিয়েটা হওয়ার কথা ছিল । ছেলে অনেক ব্যস্ত । তার এখন সময় নেই বিয়ের আয়োজন করার ! তাই আপাতত ছোট পরিসরে বিয়ে !
-আচ্ছা ! তো এখন কী হবে? মানে যখন বাসায় যাবে তখন ?
-তখন কী হবে জানি না ! তবে আগের মত আর কিছু হবে না । ঐ যে বললাম যখন আমি একেবারে মৃত্যুর কাছে চলে গিয়েছিলাম তখন চোখের সামনে আমার পুরো জীবনটা চলে এসেছিলো । বারবার কেবল মনে হল এই পুরো জীবনে আমি কেবল অন্যের কথাতেই জীবন কাটিয়েছি । কী যে আফসোস হচ্ছিলো তখন ! সো এরপর যদি এমন পরিস্থিতে পরি, তাহলে যেন অন্তত আমার যেন আর আফসোস না হয় !

আর কিছু সময় ওরা বসেই রইলো চুড়ায় । দুজনেরই কেন জানি এই বসে থাকতে বেশ ভাল লাগছে !

দুই
শশী এমন ভাবে বাসায় ঢুকলো যেন কোন কিছু হয়ই নি । অপু ওকে বাসা পর্যন্ত পৌছে দিয়ে গেল । শশী তখন ইচ্ছে করেই অপুকে সিএনজি থেকে নামতে বলল। কারণ শশীর চোখ পড়েছে যে ও বাবা তখন বারান্দায় বসে ছিলেন । প্রতিদিন সকালে নামাজের পরে সে বারান্দায় বসে থাকে । এটা শশী জানতো !
অপু বাইরে বের হয়ে এল। শশী অপুর হাত ধরে বলল, শোন আমি কিন্তু ফান করি নি ঐ ব্যাপারে !
-কোন ব্যাপা…..
শব্দটা শেষ করলো না অপু । কারণ সে বুঝতে পেরেছে । একটু থেমে বলল, আচ্ছা ! বুঝলাম । বাসায় গিয়ে দেখো কী হয় ! যদি আবার জোর করে না বিয়ে দেয় তাহলে অবশ্য হবে । কিন্তু যদি কালই বিয়ে দিয়ে দেয় !
-কেন তাহলে নিজের প্রেমিকাকে রক্ষা করতে আসবে না ? আই মিন ভাগিয়ে নিয়ে যাবে না ?
অপু শশীর কথা শুনে হেসে ফেলল । তারপর বলল, হ্যা হ্যা আসবো তো । কেবল একটা ফোন দিবে । আমি চলে আসবো !

অপু চলে যাওয়ার পরে গেটের সামনে দাড়িয়েই একটা জোড়ে করে দম নিল । তারপর গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকেগেল । দরজা খুলে দিল তার বাবাই । রাতের নাইট ডিউটি শেষ করে যখন শশী সকালে বাসায় আসতো ওর বাবাই দরজা খুলে দিতো । আজও তেমন ভাবেই খুলে দিল । দরজার দিয়ে শশী খুব স্বাভাবিক ভাবেই ভেতরে ঢুকলো প্রতিদিনের মত । এমন একটা ভাব যেন সব কিছু স্বাভাবিক আছে ।

অবশ্য গতরাতে ওর মায়ের সাথে কথা সময়ই অনেক কিছু বলেছিলো । বান্দরবান থেকে চট্টগ্রামে এসে শশী নিজের ফোন খুলেছিলো । তারপর ট্যুরের বেশ কিছু ছবি সে আপলোড দিল । প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করলো । অপুর সাথে তোলা একটা ছবি আপলোড দিয়েছিলো । প্রায় সাথে সাথেই ওর মায়ের ফোন এসে হাজির হল । প্রথমে কিছু সময় খুব বকাঝকা করলো ওকে । ধৈর্য্য সহকারে শুনলো । তারপর মাকে শান্ত কন্ঠে বলল, তোমরা কি চাও আমি তোমাদের সাথে থাকি, নাকি চাও আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাই ?

শশীর কাছ এমন কোন কথা সম্ভবত ওর মা আশা করে নি । কিছু সময় কোন কথা বলল না সে । তারপর বলল, কী বলছিস এসব ?
-বললাম তোমরা কি চাও আমি বাসায় আসি নাকি না আসি?
ফোনের ওপাশ থেকে কোন কথা শোনা গেল না । তবে শশী পরিস্কার বুঝতে পারছিলো যে ফোনটা স্পিকারে দেওয়া । সে যা বলছে তার বাবাও শুনতে পাচ্ছে । শশী বলল, আজ থেকে আমি কী করবো না করবো সেই ব্যাপারে তোমরা আমাকে অবশ্যই পরামর্শ দিতে পারো ভাল মন্দের ব্যাপারে বলতে পারো অবশ্যই । তবে আমার জীবনের সিদ্ধান্ত একান্তই আমার । তোমরা আজ থেকে আমার উপরে নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া বন্ধ করবে । আর একবার যদি নিজেদের সিদ্ধান্ত আমার উপরে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা কর তাহলে সেদিনই বাসা ছেড়ে আমি চলে আসবো ।

শশী আর কোন কথা না বলে ফোন রেখে দিয়েছিলো । তবে এটা ঠিক ঠিক বুঝতে পেরেছিলো যে ফোনের ওপাশের দুজন মানুষই তার আচরনে রাগান্বিত হওয়ার চেয়ে বিস্মিত হয়েছে বেশি ।

ট্যুরের ক্লান্তি ছিল শরীরে । দিনের বেশির ভাগ সময় শশী ঘুমিয়েই কাটালো । দুপুরে একবার খাবার খেল তারপর আবারও শুয়ে পড়লো । বিকেলে উঠে তৈরি হল বাইরে যাওয়ার জন্য । ফোনে অপুকে আসতে বলেছে ধানমণ্ডিতে । ওর সাথে আরও একটু সিরিয়াসলি কথা বলা দরকার । ছেলেটাকে এমন হঠাৎ করে ভাল কেন লেগে গেল সেটা শশী মোটেও বলতে পারবে না । এমন হতে পারে জীবনের প্রথম কিছু করতে যাওয়ার কারণেই সম্ভবত এমন কিছু হচ্ছে । তার উপরে অপু ওভাবে লাফ দিয়ে ওকে রক্ষা করলো । এটা অনেক বড় কিছু । কোন মানুষ কি অপরিচিত কোন মানুষের জন্য এমন কিছু করে? গল্প উপন্যাসের নায়কেরা হয়তো করে । বাস্তবের কেউ করে ?

রেডি হয়ে বের হতে যাবে তখনই শশী মা বের হয়ে এল রান্নাঘর থেকে । ওর দিকে তাকিয়ে বলল, কোথায় যাচ্ছিস ?
-আজকে তো ডিউটি নেই তোর । বাইরে কেন যাবি?
শশী শান্ত কন্ঠে বলল, মা ডিউটি ছাড়া আমি বাইরে যেতে পারি না ? আমার জীবন কি কেবল হাসপাতাল আর বাসা ! এই কাজ আমার?

শশীর কন্ঠে একটা ঠান্ডা উত্তাপ ছিল । ওর মা যে অবাক হয়েছে সেটা বুঝতে শশীর মোটেই কষ্ট হল না । সেই সাথে নিজেও খানকিটা অবাক হল নিজের ভেতরের এই দিকটা দেখে । আসলেই সে কোন দিন এমন ভাবে আচরণ করবে সেটা সে জানতোই না । মায়ের দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল, এখন বাইরে গেলে কী সমস্যা শুনি ?
-না মানে মাহিনটা আসছে এখন ?
-মাহিন কে …..

মাহিন কে বলতে গিয়ে থেমে গেল । নামটা মাথার ভেতর থেকে সরে গিয়েছিলো । মাহিন হচ্ছে সেই ছেলে যার সাথে ওর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল । শশী বলল, ওরা কেন আসছে?
-তুই ফিরে এসেছিস শুনে আসতে চাইলো !
-আর তোমরা রাজী হয়ে গেলে? মা আমি তোমাকে বলেছি না তোমাদের সিদ্ধান্ত আমার উপরে চাপিয়ে দিবে না মোটেও ! বলেছিলাম?

শশী মা কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু ঘর থেকে ওর বাবা বের হয়ে এল । শশীর দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার উপরে কোন সিদ্ধান্ত কেউ চাপিয়ে দিচ্ছে না । ওরা কেবল দেখা করতে আসছে । আর কিছু না । তবে তোমার যদি জরূরী কাজ থাকে তাহলে তুমি যেতে পারো । এখন যেহেতু বড় হয়েছো তাই নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই তো নিবে ! আমি ওদের মানা করে দিচ্ছি !

শশী কিছু সময় বাবার দিকে তাকিয়ে রইলো । তার মনের ভাব বুঝতে চেষ্টা করলো । তাররপ বলল, আচ্ছা আসতে বল । আমি দেখা করছি ।

শশী আবার ঘরের ভেতরে চলে গেল । ফোন করে অপুকে একটু দেরীতে বের হতে বলল । আধাঘন্টা অপেক্ষা করার পরেই মাহিন তার বাবা মা সমেত বাসায় এসে হাজাির হল । তার একটু পরে ডাক পড়লো শশীর । বসার ঘরে শান্ত ভাবেই প্রবেশ করলো সে । সাথে সাথে ঘরের সবার চোখ ওর দিকে ঘুরে গেল ! কোর্ট টাই পরা মাহিন রহমানকে সোফার উপরে বসে থাকতে দেখলো ।
শশী শান্ত ভাবেই গিয়ে বসলো ডান দিকের সোফাতে । ওর পাশের সোফাতেই বসে আছে মাহিন । ওর দিকে তাকিয়ে আছে । একেবারে সরাসরি চোখের দিকে তাকালো । দেখতে পেল মাহিন চোখ সরিয়ে নিলো।

এর আগের বার যখন শশীকে ওরা দেখতে এসেছিলো শশী একটা বারের জন্য কারো দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারে নি । কিন্তু আজকে ব্যাপারটা একেবারেই ভিন্ন একটা ব্যাপার । মাহিনের মা হঠাৎ শশীর বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, দেখুন সমাজে আমাদের একটা মান সম্মান আছে । এভাবে এমন একটা কাজ হবে আমরা কোন দিন ভাবতেও পারি নি । আমরা এখানে আসতামও না । কিন্তু মাহিনের আগ্রহে এখানে এসেছি । এর একটা সমাধান চাই আমরা !

শশীর বাবা কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই মাহিন শশীর দিকে তাকিয়ে বলল, অন্য সবার কথা বাদ দিলাম । আমি আপনার কাছে জানতে চাই যে আপনি কেন কাজটা করলেন ? এভাবে আমাকে অপদস্ত্য না করলেই কি হত না ?

শশী কিছু সময় শান্ত চোখে তাকিয়ে রইলো মাহিনের দিকে । তার এখন সত্যিই মনে হল যে যে কাজটা সে করেছে নিজের দিক থেকে সেটা সঠিক থাকলেও তার সিদ্ধান্তের কারণে মাহিন এবং তার পরিবারের উপরে একটা বিরূপ প্রভাব পড়েছে । একটা লম্বা দম নিল সে । তারপর বলল, দেখুন মাহিন সাহেব, আমি দুঃখিত আমার কারণে কারণে আপনাকে অপদস্ত্য হতে হয়েছে । তবে যে সিদ্ধান্ত আমি নিয়েছি কিংবা যে কাজটা আমি করেছি সেটার জন্য আমি মোটেও দুঃখিত নই । আমি এই বিয়ে করতে চাই নি । আমাকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছিলো । এই কথাটা আমি আপনাকে একবার ফোনে বলার চেষ্টা করেছিলাম । আপনি সম্ভবত নিজের কাজে এতো ব্যস্ত ছিলেন যে সেই ব্যাপার কর্ণপাত করার কোন সময় পান নি ।
-কেন আপনি রাজি না ? আমি কি আপনার যোগ্য নই !

শশী হেসে ফেলল । তারপর বলল, এখানে যোগ্যতার প্রশ্ন কেন আসছে ? আপনি নিজ জীবনে খুব সফল আর প্রতিষ্ঠিত একজন মানুষ । তার মানে কি এই যে জগতের সব মেয়ে আপনার সাথে বিয়ে করতে রাজি হবে ? এটাই কি আপনার ভাবনা ?

শশী একে একে সবার মুখের দিকে তাকালো । সবাই কেমন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে শশীর দিকে । বিশেষ করে ওর বাবা যেন নিজের মেয়েকে ঠিক চিনতেই পারছেন না । শশী বলল, দেখুন মাহিন সাহেব, আপনি অনেক যোগ্য একজন মানুষ । কিন্তু আমার তাতে কিছুই যায় না । আমি কেবল আপনাকে বিয়ে করতে চাই না । ব্যস আর কোন কথা নেই । বুঝতে পারলেন কি ? এই সহজ কথাটা আমার বাবা কোন বুঝেন নি । আরও ভাল করে বললে বোঝার চেষ্টাও করেন নি । আপনার মনভাবও ঠিক আমার বাবার মতই । আপনার সাথে আমার বিয়ে হলে জামাই শ্বশুরে খুব মিল হত কিন্তু আমার জীবন হেল হয়ে যেত । এক দোজখে আমি ছিলাম অন্য দোজখে গিয়ে পড়তাম । আশা করি আমার বক্তব্য পরিস্কার হয়েছে ! আর কিছু জানতে চান ?

মাহিন এবার খানিকটা বেপরোয়া হয়ে বলল, আপনার পছন্দের হতে হলে আমাকে কী করতে হবে বলুন ? কী চান আপনি ?

শশী এবার একটু অবাক হল । বিশেষ করে মাহিনের কন্ঠের বেপরোয়া ভাব দেখে বুঝতে অসুবিধা হল না মাহিন কেন এমন আচরণ করছে। শশী বলল, মাহিন সাহেব, আপনি সম্ভবত রিজেশন নিতে পারেন না । অবশ্য আপনি যেমন সফল একজন মানুষ আপনি এতোদিন সবাইকে রিজেক্ট করে এসেছেন , রাইট ? বিশ্বাস করুন আপনার স্থানে সালমান খান হলেও আমি এই কাজই করতাম । আমি জাস্ট এখন বিয়ে করতে চাই না । আশা করি বুঝতে পারছেন আমার অবস্থা !

সবাইকে সেখানে রেখে শশী উঠে গেল । দরজা খুলে বের হয়ে গেল । সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে নিজের মনের ভেতরে একটা অদ্ভুত আনন্দ আর শান্তি অনুভব করছিলো !

আলফ্রেস্কোতে ঢুকেই দেখতে পেল অপু এক কোনে বসে রয়েছে । ওকে দেখতে পেয়ে হাটার গতিটা একটু যেন বাড়িয়ে দিল । ওর সামনে বসতে বসতে বলল, হাই !
অপু খানিকটা অবাকই হল ওর দিকে তাকিয়ে । বলল, কী ব্যাপার এতো উত্তেজিত কেন?
-জানি না । কেবল মনে হল যে আমি যেন নতুন কোন জীবন পেয়েছি ।
-নতুন জীবন ?
-হুম ! একেবারে নতুন জীবন ! ঐদিন পাহাড় থেকে পড়ে যাওয়ার পরে একেবারে নতুন একটা জীবন । নিজেকে নিজেই চিনতে পারছি না । এমন সব কাজ আজকে আমি করেছি যা করার কল্পনাও করতে পারতাম না আমি ।
-গুড ! ভাল । তোমার উত্তেজনা দেখে আমার নিজেরই ভাল লাগছে ।

শশী কেবল হাসছিলো আপন মনে । তবে সেই হাসিতে একটা উজ্জ্বলতা ছিল । আস্তে আস্তে একটু আগে ওর সাথে ঘটে যাওয়া সব কিছু সে অপুর সাথে শেয়ার করলো । অপু শুনে বেশ অবাকই হল ! তারপর বলল, তুমি সত্যিই একদিনে অনেক বদলে গেছো । এবার থেকে আবার বদলাতে হলে পাহাড়ে গিয়ে আরেকবার ঝাপ দিও । ঠিক আছে !
শশী বলল, তুমি যদি আবার রক্ষা করতে আসো তাহলে লাফ দিতে রাজি আছি ।

তিন

অপুর সাথে গল্প করে বাসায় এসে হাজির হল রাতের দিকে । মনের ভেতরে একটা ক্ষীণ সম্ভবনা ছিল যে এইবার ওর বাবা হয়তো ওর সাথে খুব রাগারাগি করবে । কিন্তু তেমন কিছুই হল না । রাতে খাবেন না বলে নিজের রুমের দিকে চলে গেল । কিছু সময় পরে আলো বন্ধ করে শুয়েও পড়লো । কাল সকালে আবার মর্নিং শিফট আছে । সেখানে যেতে হবে ।

যখন ঘুম চলে এসেছে সেই সময় শশী অনুভব করলো ওর বাবা ওর ঘরে ঢুকেছে । ডিম লাইটের আলোতে তার বাবার আবছায়া অয়বয়টা বেশ ভাল করেই দেখতে পাচ্ছে । ওর বিছানার পাশে চুপ করে দাড়িয়ে রইলো কিছু সময় । তিনি চলে যাবে তখনই শশী বলল, কি বলবে আব্বু !
শশীর কন্ঠ শুনেই তার বাবা যেন একটু যেন চমকে উঠলেন । তবে সামলে নিলেন । তারপর বললেন, ঘুমাস নি?
-এই তো ! আলো জ্বালবো?
-না থাকুক !

এই বলে তিনি বিছানার পাশেই বসলেন । তারপর চুপ করে কিছু সময় বিছানার পাশেই বসে রইলেন । এক সময়ে বললেন, আমার উপরে তোর অনেক রাগ, তাই না মা ?
-এই কথা কেন বলছো আব্বু ?
-না ! আসলে আমি আজকে ঠিক ঠিক বুঝতে পারছি তোর উপরে আমি কতখানি জুলুম করেছি । তোর ভাল চাই, এই অযুহাতে কোন দিন কোন তোকে নিজের মত করে জীবনটাকে দেখতে দেই নি । সব সময় নিজের সিদ্ধান্ত তোর উপর চাপিয়ে দিয়েছি । আমি আসলে কোন দিন বুঝতেও চেষ্টা করি নি । আসলে এমন ভাবেই বড় হয়েছি । আমরা দেখে এসেছি আমাদের বাবা চাচারাও ঠিক এমন আচরণ করেছেন আমাদের সাথে । আমরা ভেবে এসেছি যে এটাই বুঝি সঠিক পথ কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আসলে তোর দিকটা আমার ভেবে দেখা দরকার ছিল । জানতে চাওয়া দরকার ছিল যে তুই কি চাস সেটা শুনতে চাওয়া !

শশী এবার উঠে দাড়ালো । তারপর উঠে গিয়ে ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরলো । হালকা ফোপানির মত আওয়াজ বের হয়ে এল আপনা আপনি । শশী বলল, আই এস সরি !
-না আমি সরি মা । তুই যেদিন চলে গিয়েছিলো আমার কি যে মনে হচ্ছিলো তোকে বলে বোঝাতে পারবো না ।

কত সময় বাবা মেয়ে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে কেউ বলতে পারবে না । এক সময়ে শশীর বাবা বলল, তুই ঘুম দে। কাল কি ডিউটি আছে ?
-হুম আছে !
-আচ্ছা । ঘুমা । কাল কথা হবে । আর তোর ঐ বন্ধুকে একদিন বাসায় নিয়ে আসিস । ঠিক আছে !

শশী হাসলো একটু । একটু লজ্জাও পেল। তারপর বলল, আচ্ছা !

শশী যখন আবার নিজের বিছানায় পিঠ ঠেকালো তখন ওর মনে একটা তীব্র আনন্দ কাজ করছে । সত্যিই সত্যিই বুঝতে পারছে যে সামনের জীবন ওর চমৎকার হতে চলেছে !

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.9 / 5. Vote count: 89

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →