গল্পের মত সুন্দর

oputanvir
4.7
(75)

রাতের বেলা তীব্র একটা ঝগড়া অপুর সাথে । ঝগড়ার এক পর্যায়ে শশী আর কোন কথা বলল না । কারণ জানে যে এখন কথা বললে কথা আরও বাড়বে । কথা বাড়াতে কোন ইচ্ছে করলো না ওর । শোবার ঘরের চুপ করে শুয়ে রইলো কেবল । মনের রাগটা আস্তে আস্তে বাড়ছেই । কোন কারণ ছাড়াই বাড়ছে । ভেবেছিলো যে চুপ করে থাকলে হয়তো রাগ কমে যাবে কিন্তু বুঝতে পারলো সেটা কমছে না মোটেই । বরং আস্তে আস্তে বাড়ছে ।

সন্ধ্যা থেকে নিজের আচরনটা ভাল করে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করলো । কেন ওদের মাঝে আজকে এই কথা কাটাকাটি তারপর সেটা ঝগড়ার দিকে মোড় নিল । শশীর খালাতো বোনের মেয়ের জন্মদিনের উৎসব ছিল আজকে । সেখানেই দাওয়াত ছিল ওদের । ওদের বলতে শশী আর অপুর যাওয়ার কথা ছিল । শশী অপুকে সকাল বেলা বারবার বলে দিয়েছিল যেন সময় করে বাসায় চলে আসে । অপু বলেও ছিল যে চলে আসবে কিন্তু সময় পার হয়ে গেলেও তার কোন খোজ নেই । শশী কতবার যে ফোন দিল তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই তবুও অপু ফোন ধরার কোন নাম নেই । ফোন সম্ভবত সাইলেন্ট করে রেখেছিলো সে । দেখতে দেখতে রাত আটটা বেজে গেল । এদিকে খালার বাসা থেকেও কয়েকবার ফোন দেওয়া হয়ে গেছে । শশী শেষে ফোন করে বলে দিলো যে হঠাৎ করে ওর শরীরটা আজকে ভাল লাগছে না । এই কারণে আজকে ওরা আসবে না । সেই থেকে শশীর মেজাজটা খারাপ হয়ে আছে ।

অপু বাসায় ফিরলো রাত দশটার দিকে । রাতে বাসায় ফিরে এমন একটা ভাব করলো যেন কিছু হয়ই নি । ও যে দেরি করে বাসায় ফিরলো, ওদের একটা প্রোগ্রাম ছিল সেটা যেন অপুর মাথাতেই নেই । আর দেরি করে যে এসে সরি বলল না একবার । এমন একটা ভাব করলো যেন কিছু হয়ই নি । সব কিছু স্বাভাবিক আছে । খাবার দিতে বলল স্বাভাবিক ভাবে ।

রাতে খালার বাসায় খাবে বলে রান্না করা হয় নি । অপুকে সেটা বলল। অপু তাতেও কিছু বলল না । বলল, ফুড পান্ডা থেকে তাহলে খাবার অর্ডার করা যাক । কি খাবে বল!
শশীর মেজাজটা তখন সত্যিই চটে গেল । অপুর মাঝে কোন বিকার নেই । এমন একটা নির্লিপ্ততা ভাব যেন জগতে কোন কিছুতেই আসলে তার কিছু যায় আসে না । তারপরই ঝগড়া শুরু । ঝগড়া বলতে শশী আসলে মুখে যা আসলো তাই বলে গেল । প্রথম প্রথম অপু কিছু না বললেও পরে সেও বলা শুরু করলো । তার খালার বাসার লোকজন কেমন সে কেন যেতে চায় নি এই সব । ঝগড়া চলল কিছু সময় । তারপর দুজন দুইদিকে চলে গেল ! শশী শোবার ঘরে আর অপু বসে বসে টিভির ঘরে টিভি দেখতে শুরু করলো ।

কত সময় পার হল শশী সেটা নিজেও জানে না । ঘরের আলো বন্ধ করে সে শুয়ে রইলো । কিন্তু রাতে অবশ্য ঘুম এল না । একটা সময়ে অনুভব করলো যে শোবার ঘরের দরজা খুলেছে । অপু আস্তে আস্তে ঘরে ঢুকলো । শশী তখনও জেগে । ভেবেছিলো অপু হয়তো আলো জ্বালবে । তবে সেটা সে করলো না । বিছানার অন্য পাশ দিয়ে সে বিছানার উপরে উঠে এল । শশী অন্য পাশ ফিরে শুয়ে আছে । তবে বুঝতে পারছে যে অপু শুয়েছে চুপ করে । শশী তবুও চুপ করে অন্য দিকেই মুখ ফিরে তাকিয়ে শুয়ে রইলো । তারপরই অনুভব করলো যে অপু ওর দিকে সরে আসছে এবং প্রতিদিন ঠিক যেভাবে ওকে জড়িয়ে ধরে শোয় আজকেও ঠিক সেই ভাবেই জড়িয়ে ধরলো ।

শশী একবার ঝটকা দিয়ে অপুকে সরিয়ে দিতে গিয়েও দিল না । কোন কিছুই করলো না । তারপরই অনুভব করলো যে অপু আরও একটু কাছে চলে এসেছে । কানের কাছে মুখ এনে বলল ঝগড়াটা কাল সকালের জন্য ওঠানো থাকুক । এখন খুব ক্ষুধা লেগেছে । চল কিছু খাওয়া যাক ! ঝগড়টা সকালে বেলাতে আবার শুরু করা যাবে । একেবারে ফার্স্ট আওয়ারেই । কেমন !
শশী কোন কথা বলল না । তবে এটা ঠিক ঠিক বুঝতে পারলো যে ওর রাগ খানিকটা কমে আসছে । ও সেটা ধরে রাখার চেষ্টা করলো বটে তবে বুঝতে পারছে যে সেটা খুব একটা কাজ হবে না ।

অপু আবারও বলল, দেখো আমরা কিন্তু দুজনের কাছে একটা প্রমিজ করেছিলাম যে আমরা কখনই রাগ নিয়ে রাতে ঘুমাতে যাবো না । মনে আছে !

শশীর সেটা খুব ভাল করে মনে আছে । বিয়ের সব ঝামেলা শেষ করে তখন সবে নতুন বাসায় ওরা উঠেছে । সংসার শুরু হয়েছে কেবল । একদিন রাতের খাবার শেষ করে যখন ওরা টিভি দেখছিলো এক সাথে অপু তখন হঠাৎ করে শশীকে খানিকটা নিজের কাছে টেনে নিল । এমন হঠাৎ রোমান্টিক হয়ে যাওয়াতে শশী খানিকটা লজ্জাই পেল । তবে সেটা সামলে নিল সাথে সাথেই । খানিকটা ভালোবাসাবাসির পরে অপু বলল, আজকে একটা প্রোমিজ চাই তোমার কাছে ।
-কী প্রোমিজ ?
-দেখো সংসার যখন এক সাথে শুরু করেছি তখন ঝগড়া হবেই । কথা কাটাকাটি মনমালিন্য সব হবে । এসব জীবনের অংশ । আমি কখনই বলছি না যে আমাদের মাঝে এসব হবে না । সেসব না করার জন্য আমি বলছিও না । আমি তোমার একটা মাত্র বর, আমার উপর চিৎকার চেঁচামিচি করবে না তো কার উপরে করবে । আমাকে প্যারা দিবে না তো কাকে দিবে ! তাই না ?
শশী হেসে ফেলে বলল, ঠিক তাই । তো কী প্রোমিজ শুনি আগে ।
-প্রোমিজ টা হচ্ছে আমি যতই ঝগড়া করি না কেন রাতে কখনই আলাদা ঘুমাবো না কখনই মনে রাগ নিয়ে একজনের সাথে আরেকজন কথা না বলে ঘুমাবো না । ঠিক আছে ? প্রোমিজ কর !
-আচ্ছা করলাম ।
-মনে থাকে যেন !
-থাকবে !

শশী এবার অপুর দিকে ফিরলো । তারপর খানিকটা অভিমানী কন্ঠে বলল, প্রতিবার তুমি এমন কর । ভুল করবে তারপর রাতে এসে আমার সেই প্রোমিজে সুযোগ নিয়ে সব মিটিয়ে ফেলবে ।
-আরে বাবা মিটিয়ে ফেললাম কই । কেবল ঝগড়া বিরতীর কথা বললাম । সকালে উঠে আবার শুরু করবো তো । এবার আমি কি করি নি জীবনে সে সব পয়েন্টও বলবে ! কেমন ! তারপর আমাকে বিয়ে না করলে তোমার কার কার সাথে বিয়ে হত, জীবনটা কেমন হত সেসব বিষয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো । আমরা ….

অপু আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো শশী বলল, চুপ একদম চুপ । এতো বাজে কথা তুমি কোথা থেকে পাও বল তো ! কী খাবার অর্ডার দিয়েছো ?
-তা তো দেই নি ।
-মানে ? তাহলে রাতে খাবো কী ?
-না মানে যেভাবে ঝগড়া শুরু করলে !
-আমি করেছি শুরু না ? তোমার কোনন দোষ নেই ?
-আচ্ছা আচ্ছা বাবা আমারই দোষ । এখন কী খাবে বল? রাত বারোটা বেজে গেছে । ফুড পান্ডার সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেছে এতো সময়ে ।
-তাহলে কি খাবো শুনি ?
-চল বাইরে যাই ।
-এই সময়ে?
-হ্যা এই সময়ে । সামনে যে হোটেল পাবো সেই হোটলেই ঢুকে পরবো ।
-যদি না খোলা থাকে?
-আরে থাকবে থাকবে ।

শশীর একবার মনে হল এসবের কোন মানে নেই । ফ্রিজে কিছু না কিছু আছেই । সেগুলো গরম করে নিলেই হবে । পরে মনে হল বেরই হওয়া যাক । ওদের হাসপালের পাশে অনেক কয়টা হোটেল খোলা থাকে রাত ভয় । ডিউটির সুবিধার জন্য অপু শশীর হাসপতালের কাছেই বাসা নিয়েছে । রিক্সা করে যেতে মিনিট দশেক সময় লাগবে ।

টচ জলদি উঠে পরলো । পরনে যা ছিল তাই পরেই দুজন বের হয়ে গেল । সাথে করে কেবল মানি ব্যাগ ছাড়া আর কিছুই নিল না । এমন পাগলামোর কোন মানে নেই শশী জানে । তবে কেন জানি সেটাই করছে ইচ্ছে করছে ।

যখন রাস্তায় বের হয়ে এল তখন শশীর মন থেকে সব রাগ একেবারে পানি হয়ে গেছে । বরং মনে হল যে আজকে ঝগড়া না হলেই বরং খারাপ হত । এতো চমৎকার একটা ব্যাপার ঘটতো না তখন । সেই বোরিং অনুষ্ঠান করে বাসায় ফিরে আসতো । অথচ এই রাতের বেলা সে এখন অপুর হাত ধরে হাটছে খালি রাস্তা ধরে !

হাটতে হাটতে শশীর একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে অপুর দিকে ফিরে তাকালো । তারপর বলল, এমনও থেকো অজীবন ! কেমন ? কখনও বদলে যেও না ।
-যাবো না । ভয় নেই ।
-বদলে গেলে কিন্তু খবর আছে !
-আচ্ছা খবর করে দিও !

শশী হেসে ফেলল । তারপর আবারও অপুর পাশাপাশি হাটতে লাগলো । ওর কাছে মনে হল যে জীবন আসলেই সুন্দর । একেবারে গল্পের মত সুন্দর !

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 75

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →