গল্পের মত সুন্দর

oputanvir
4.7
(70)

রাতের বেলা তীব্র একটা ঝগড়া অপুর সাথে । ঝগড়ার এক পর্যায়ে শশী আর কোন কথা বলল না । কারণ জানে যে এখন কথা বললে কথা আরও বাড়বে । কথা বাড়াতে কোন ইচ্ছে করলো না ওর । শোবার ঘরের চুপ করে শুয়ে রইলো কেবল । মনের রাগটা আস্তে আস্তে বাড়ছেই । কোন কারণ ছাড়াই বাড়ছে । ভেবেছিলো যে চুপ করে থাকলে হয়তো রাগ কমে যাবে কিন্তু বুঝতে পারলো সেটা কমছে না মোটেই । বরং আস্তে আস্তে বাড়ছে ।

সন্ধ্যা থেকে নিজের আচরনটা ভাল করে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করলো । কেন ওদের মাঝে আজকে এই কথা কাটাকাটি তারপর সেটা ঝগড়ার দিকে মোড় নিল । শশীর খালাতো বোনের মেয়ের জন্মদিনের উৎসব ছিল আজকে । সেখানেই দাওয়াত ছিল ওদের । ওদের বলতে শশী আর অপুর যাওয়ার কথা ছিল । শশী অপুকে সকাল বেলা বারবার বলে দিয়েছিল যেন সময় করে বাসায় চলে আসে । অপু বলেও ছিল যে চলে আসবে কিন্তু সময় পার হয়ে গেলেও তার কোন খোজ নেই । শশী কতবার যে ফোন দিল তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই তবুও অপু ফোন ধরার কোন নাম নেই । ফোন সম্ভবত সাইলেন্ট করে রেখেছিলো সে । দেখতে দেখতে রাত আটটা বেজে গেল । এদিকে খালার বাসা থেকেও কয়েকবার ফোন দেওয়া হয়ে গেছে । শশী শেষে ফোন করে বলে দিলো যে হঠাৎ করে ওর শরীরটা আজকে ভাল লাগছে না । এই কারণে আজকে ওরা আসবে না । সেই থেকে শশীর মেজাজটা খারাপ হয়ে আছে ।

অপু বাসায় ফিরলো রাত দশটার দিকে । রাতে বাসায় ফিরে এমন একটা ভাব করলো যেন কিছু হয়ই নি । ও যে দেরি করে বাসায় ফিরলো, ওদের একটা প্রোগ্রাম ছিল সেটা যেন অপুর মাথাতেই নেই । আর দেরি করে যে এসে সরি বলল না একবার । এমন একটা ভাব করলো যেন কিছু হয়ই নি । সব কিছু স্বাভাবিক আছে । খাবার দিতে বলল স্বাভাবিক ভাবে ।

রাতে খালার বাসায় খাবে বলে রান্না করা হয় নি । অপুকে সেটা বলল। অপু তাতেও কিছু বলল না । বলল, ফুড পান্ডা থেকে তাহলে খাবার অর্ডার করা যাক । কি খাবে বল!
শশীর মেজাজটা তখন সত্যিই চটে গেল । অপুর মাঝে কোন বিকার নেই । এমন একটা নির্লিপ্ততা ভাব যেন জগতে কোন কিছুতেই আসলে তার কিছু যায় আসে না । তারপরই ঝগড়া শুরু । ঝগড়া বলতে শশী আসলে মুখে যা আসলো তাই বলে গেল । প্রথম প্রথম অপু কিছু না বললেও পরে সেও বলা শুরু করলো । তার খালার বাসার লোকজন কেমন সে কেন যেতে চায় নি এই সব । ঝগড়া চলল কিছু সময় । তারপর দুজন দুইদিকে চলে গেল ! শশী শোবার ঘরে আর অপু বসে বসে টিভির ঘরে টিভি দেখতে শুরু করলো ।

কত সময় পার হল শশী সেটা নিজেও জানে না । ঘরের আলো বন্ধ করে সে শুয়ে রইলো । কিন্তু রাতে অবশ্য ঘুম এল না । একটা সময়ে অনুভব করলো যে শোবার ঘরের দরজা খুলেছে । অপু আস্তে আস্তে ঘরে ঢুকলো । শশী তখনও জেগে । ভেবেছিলো অপু হয়তো আলো জ্বালবে । তবে সেটা সে করলো না । বিছানার অন্য পাশ দিয়ে সে বিছানার উপরে উঠে এল । শশী অন্য পাশ ফিরে শুয়ে আছে । তবে বুঝতে পারছে যে অপু শুয়েছে চুপ করে । শশী তবুও চুপ করে অন্য দিকেই মুখ ফিরে তাকিয়ে শুয়ে রইলো । তারপরই অনুভব করলো যে অপু ওর দিকে সরে আসছে এবং প্রতিদিন ঠিক যেভাবে ওকে জড়িয়ে ধরে শোয় আজকেও ঠিক সেই ভাবেই জড়িয়ে ধরলো ।

শশী একবার ঝটকা দিয়ে অপুকে সরিয়ে দিতে গিয়েও দিল না । কোন কিছুই করলো না । তারপরই অনুভব করলো যে অপু আরও একটু কাছে চলে এসেছে । কানের কাছে মুখ এনে বলল ঝগড়াটা কাল সকালের জন্য ওঠানো থাকুক । এখন খুব ক্ষুধা লেগেছে । চল কিছু খাওয়া যাক ! ঝগড়টা সকালে বেলাতে আবার শুরু করা যাবে । একেবারে ফার্স্ট আওয়ারেই । কেমন !
শশী কোন কথা বলল না । তবে এটা ঠিক ঠিক বুঝতে পারলো যে ওর রাগ খানিকটা কমে আসছে । ও সেটা ধরে রাখার চেষ্টা করলো বটে তবে বুঝতে পারছে যে সেটা খুব একটা কাজ হবে না ।

অপু আবারও বলল, দেখো আমরা কিন্তু দুজনের কাছে একটা প্রমিজ করেছিলাম যে আমরা কখনই রাগ নিয়ে রাতে ঘুমাতে যাবো না । মনে আছে !

শশীর সেটা খুব ভাল করে মনে আছে । বিয়ের সব ঝামেলা শেষ করে তখন সবে নতুন বাসায় ওরা উঠেছে । সংসার শুরু হয়েছে কেবল । একদিন রাতের খাবার শেষ করে যখন ওরা টিভি দেখছিলো এক সাথে অপু তখন হঠাৎ করে শশীকে খানিকটা নিজের কাছে টেনে নিল । এমন হঠাৎ রোমান্টিক হয়ে যাওয়াতে শশী খানিকটা লজ্জাই পেল । তবে সেটা সামলে নিল সাথে সাথেই । খানিকটা ভালোবাসাবাসির পরে অপু বলল, আজকে একটা প্রোমিজ চাই তোমার কাছে ।
-কী প্রোমিজ ?
-দেখো সংসার যখন এক সাথে শুরু করেছি তখন ঝগড়া হবেই । কথা কাটাকাটি মনমালিন্য সব হবে । এসব জীবনের অংশ । আমি কখনই বলছি না যে আমাদের মাঝে এসব হবে না । সেসব না করার জন্য আমি বলছিও না । আমি তোমার একটা মাত্র বর, আমার উপর চিৎকার চেঁচামিচি করবে না তো কার উপরে করবে । আমাকে প্যারা দিবে না তো কাকে দিবে ! তাই না ?
শশী হেসে ফেলে বলল, ঠিক তাই । তো কী প্রোমিজ শুনি আগে ।
-প্রোমিজ টা হচ্ছে আমি যতই ঝগড়া করি না কেন রাতে কখনই আলাদা ঘুমাবো না কখনই মনে রাগ নিয়ে একজনের সাথে আরেকজন কথা না বলে ঘুমাবো না । ঠিক আছে ? প্রোমিজ কর !
-আচ্ছা করলাম ।
-মনে থাকে যেন !
-থাকবে !

শশী এবার অপুর দিকে ফিরলো । তারপর খানিকটা অভিমানী কন্ঠে বলল, প্রতিবার তুমি এমন কর । ভুল করবে তারপর রাতে এসে আমার সেই প্রোমিজে সুযোগ নিয়ে সব মিটিয়ে ফেলবে ।
-আরে বাবা মিটিয়ে ফেললাম কই । কেবল ঝগড়া বিরতীর কথা বললাম । সকালে উঠে আবার শুরু করবো তো । এবার আমি কি করি নি জীবনে সে সব পয়েন্টও বলবে ! কেমন ! তারপর আমাকে বিয়ে না করলে তোমার কার কার সাথে বিয়ে হত, জীবনটা কেমন হত সেসব বিষয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো । আমরা ….

অপু আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো শশী বলল, চুপ একদম চুপ । এতো বাজে কথা তুমি কোথা থেকে পাও বল তো ! কী খাবার অর্ডার দিয়েছো ?
-তা তো দেই নি ।
-মানে ? তাহলে রাতে খাবো কী ?
-না মানে যেভাবে ঝগড়া শুরু করলে !
-আমি করেছি শুরু না ? তোমার কোনন দোষ নেই ?
-আচ্ছা আচ্ছা বাবা আমারই দোষ । এখন কী খাবে বল? রাত বারোটা বেজে গেছে । ফুড পান্ডার সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেছে এতো সময়ে ।
-তাহলে কি খাবো শুনি ?
-চল বাইরে যাই ।
-এই সময়ে?
-হ্যা এই সময়ে । সামনে যে হোটেল পাবো সেই হোটলেই ঢুকে পরবো ।
-যদি না খোলা থাকে?
-আরে থাকবে থাকবে ।

শশীর একবার মনে হল এসবের কোন মানে নেই । ফ্রিজে কিছু না কিছু আছেই । সেগুলো গরম করে নিলেই হবে । পরে মনে হল বেরই হওয়া যাক । ওদের হাসপালের পাশে অনেক কয়টা হোটেল খোলা থাকে রাত ভয় । ডিউটির সুবিধার জন্য অপু শশীর হাসপতালের কাছেই বাসা নিয়েছে । রিক্সা করে যেতে মিনিট দশেক সময় লাগবে ।

টচ জলদি উঠে পরলো । পরনে যা ছিল তাই পরেই দুজন বের হয়ে গেল । সাথে করে কেবল মানি ব্যাগ ছাড়া আর কিছুই নিল না । এমন পাগলামোর কোন মানে নেই শশী জানে । তবে কেন জানি সেটাই করছে ইচ্ছে করছে ।

যখন রাস্তায় বের হয়ে এল তখন শশীর মন থেকে সব রাগ একেবারে পানি হয়ে গেছে । বরং মনে হল যে আজকে ঝগড়া না হলেই বরং খারাপ হত । এতো চমৎকার একটা ব্যাপার ঘটতো না তখন । সেই বোরিং অনুষ্ঠান করে বাসায় ফিরে আসতো । অথচ এই রাতের বেলা সে এখন অপুর হাত ধরে হাটছে খালি রাস্তা ধরে !

হাটতে হাটতে শশীর একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে অপুর দিকে ফিরে তাকালো । তারপর বলল, এমনও থেকো অজীবন ! কেমন ? কখনও বদলে যেও না ।
-যাবো না । ভয় নেই ।
-বদলে গেলে কিন্তু খবর আছে !
-আচ্ছা খবর করে দিও !

শশী হেসে ফেলল । তারপর আবারও অপুর পাশাপাশি হাটতে লাগলো । ওর কাছে মনে হল যে জীবন আসলেই সুন্দর । একেবারে গল্পের মত সুন্দর !

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 70

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →