নওরিনের বিপদ

oputanvir
4.8
(60)

নওরিনের শরীরটা জ্বলে উঠলো রাগে । ইচ্ছে করলো বেটাকে ফোনের ভেতরে ঢুকে একটা চড় দিয়ে আসে । রাগ আটকে কোন মতে বলল, আপনি তো আচ্ছা বদমাইশ ! ছেলে হয়ে মেয়ে রুমমেট খুজছেন ?
ওপাশ থেকে যে ফোন ধরেছিল সে খানিকটা সময় চুপ করে রইলো । তারপর শান্ত কন্ঠে বলল, টু লেটে কি কোথাও লেখা যে, টুলেট দাতা মেয়ে ? আছে কি?

স্কিনের দিকে তাকিয়েই আছে নওরিন । সেখানে সত্যিই কোথাও এমন কিছু লেখা নেই । কেবল লেখা যে এক রুম ভাড়া হবে । চাকুরীজীবী মেয়ে ! নিচে একটা ঠিকানা আর ফোন নম্বর !
ওপাশ থেকে আবারও ছেলেটার কন্ঠ শোনা গেল । সে বলল, শুনুন, ইচ্ছে হলে থাকবেন নয়তো থাকবেন না । এতো কথা বলার দরকার কি ! আর আমি আপনার সাথে রুমে থাকবো না । পুরো ফ্ল্যাটে চারটা রুম ! আপনাকে আলাদা একটা রুম দেওয়া হবে । আপনি থাকবেন আপনার মত ! অন্য রুমে কে থাকলো সেটা আপনার দেখার কি দরকার !

ফোনের লাইন টা কেটে গেল । নওরিন ফোন রেখে কিছু সময় চুপ করে বসে রইলো । কদিন থেকে সময়টা ওর ভাল যাচ্ছে না মোটেও । সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে একটা নতুন বাসা ঠিক করতেই হবে ওকে । কোন ভাবেই আর টেকা যাচ্ছে না । বাড়িওয়ালা একেবারে পরিস্কার ভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে এই মাসের ভেতরেই ঘর ছেড়ে দিতে হবে । নয়তো তিনি নিজে তাকে বাসা থেকে বের করে দিবে । অবশ্য নওরিন জানে যে বাড়িওয়ালাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই । প্রতিদিন একই ঝামেলা কে সহ্য করে ! নওরিনই যেখানে সব ঝামেলার মুল তাই নওরিনকেই বিদায় করে দিবে । এটাই সহজ সমাধান ।

নওরিন টুলেট গ্রুপে আরও ভাড়ার জন্য দেখতে শুরু করলো । কিন্তু একটাও মনের মত কিছু পেল না । কয়েকটা পেল সে গুলো ওর অফিস থেকে অনেক দুরে । অনেক বেশি কষ্ট হয়ে যাবে । আরও দুইদিন এভাবে কেটে গেল । দুই তিন টা সাবলেট দেখতেও গেল কিন্তু কোনটাই মন ভরলো না । ঐ সব স্থানে নওরিন থাকতে পারবে না । কোন ভাবেই সে হোস্টেলে উঠতে চাচ্ছে না । হোস্টেলের পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে পারবে না সে । এখন কী করবে ? তখন আবারও সেই আগের রুমটার কথা মনে হল ।
আচ্ছা একবার কি দেখে আসবে রুমটা ! ঠিকানা টা তো একদম কাছেই অফিসের । একবার দেখে আসতে তো কোন দোষ নেই । যে এলাকার ঠিকানা দেওয়া সেটা সম্ভ্রান্ত এলাকা । এই অফিসের কাছে যার ফ্লাট রয়েছে সে নিশ্চিত ভাবে যেন তেন মানুষ হবে না । একবার ঘরটা দেখে আসতে তো দোষ নেই ।

-হ্যালো !
-জ্বী বলুন !

শান্ত কন্ঠ শুনে নওরিন একটু স্বস্তি পেল । ভেবেছিলো যে আবারও ফোন পেয়ে হয়তো ছেলেটা ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করবে । অথবা এমনও হতে পারে যে ওর নম্বার মনেই নেই ছেলেটার ! এই জন্য হয়তো শান্ত কন্ঠে কথা বলছে । নওরিন বলল, জ্বী আমি ঘরের ব্যাপারে কথা বলতে চাচ্ছিলাম !
-একবার না বললেন ! আবারও !

নম্বরটা চিনতে পেরেছে সে । নওরিন একটু বিষম খেল । কী বলবে খুজে পেল না । ওপাশ থেকে বলল, বলুন এখন কী বলার আছে ?
-আসলে গতদিনের ব্যবহারের জন্য সরি ! বুঝতেই পারছেন আমাদের কালচার ! আসলে মানুষ কি ভাববে ! আমি আসলে রিএক্ট করে ফেলেছি !
-ঠিক আছে ! সমস্যা নেই । বলুন !
-ঘরটা কি এখনও আছে?
-জ্বী এখনও আছে !
-আমি কি আসতে পারি দেখতে একটু ?
-হ্যা । চলে আসুন । আমি বাসাতেই আছি ! ঠিকানা তো দেওয়াই আছে । বাসার নিচে কেয়ারটেকার আছে । আমার নাম নাম বললেন ইফতি । আমি বলে দিচ্ছি ।
-জ্বী আচ্ছা ! আমি অফিস শেষ করে আসবো ।
-ওকে সমস্যা নেই ।

অফিস শেষ করে যখন বাসাটার সামনে এসে হাজির হল তখন প্রথম দর্শনেই পছন্দ হয়ে গেল । ওদের অফিস থেকে মিনিট দশেকের হাটার পথ । চমৎকার একটা বিল্ডিং । ছেলেটার একেবারে টপ ফ্লোরে । গেটের কাছে গিয়ে নাম বলতেই নওরিন দেখলো কেয়ারটেকার একদম দৌড়ে এল । তারপর নিজে লিফট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এল । এমন কি লিফ্টের বোতামটাও সেই চেপে দিল ।

যখন বাসার কলিংবেল চাপলো তখনো নওরিন ঠিক মত নিশ্চিত না যে সে এই বাসায় থাকবে কিনা ! একটা ফ্ল্যাটে একটা অচেনা ছেলের সাথে থাকাটা জানা জানি হলে কি হবে কে জানে ! অবশ্য ঢাকা শহরে কে কোথায় থাকে এটা নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই । আর ওর বাসায় এক বাবা মা আর ভাই ছাড়া আর কেউ নেইও । তারা যদি তারা যদি জানে তখন কী হবে ?
আপাতত নওরিন সব চিন্তা ভাবনা দুর করে দিল । কেবলই মনে মনে বলল যে এখন কেবল ঘর দেখতে এসেছে । আর কিছু না । ঘর দেখা মানেই কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়া নয়
একটা ভদ্র চেহারার ছেলেকে দরজা খুলতে দেখলো । নওরিন একটু হেসে বলল, ইফতি !
-জ্বী ! আসুন ।

ঘরে ঢুকতে ঢুকতে নওরিন চারিদিকে তাকালো । এবং একটা ব্যাপার নওরিনের কাছে পরিস্কার হল যে টাকা পয়সার জন্য এই ঘরটা মোটেই ভাড়া দেওয়া হচ্ছে না । ড্রয়িং রুমটা বেশ বড় । সাথেই ডাইনিং রুম । রান্না ঘর একদিকে । তার পাশে একটা রুমের দরজা ।

ইফতি সেই দরজার সামনে গিয়ে দাড়ালো । দরজাটা খুলতে খুলতে বলল, এটাই আপনার রুম । দেখুন !

নওরিন রুমটার ভেতরে ঢুকলো । প্রথমে ঢুকেই ঘরটা ওর পছন্দ হল । ঘরটা বেশ বড় । লাগোয়া বারান্দা আছে । সাথে বাথরুম ! ওর একার জন্য একেবারে পার্ফেক্ট একটা ঘর ! কিন্তু ওর মনের ভেতরে সেই দ্বিধাটা ঠিকই কাজ করতে লাগলো । একটা ছেলের সাথে এক ফ্লাটে থাকবে , এটা মানুষ কিভাবে নেবে?
আচ্ছা ছেলেটা যে ওকে বাসা ভাড়া দিবে এই ফ্লাটের অন্যান্যরা কী মনে করবে ?
তারা কোন অভিযোগ করবে না
নওরিন যখন ঘর দেখা শেষ করে আবার ড্রয়িং রুমে বের হয়ে তখন দেখতে পেল টি টেবিলের উপরে এক কাপ কফি অপেক্ষা করছে । কফির চেহারা দেখেই মনে হচ্ছে যে জিনিসটা খেতে ভাল হয়েছে । নওরিন কফি খুব পছন্দ করে । দিনের ভেতরে কয়েক কাপ কফি তাকে খেতেই হয় ! কফিটা তার জন্যই রাখা হয়েছে কোন সন্দেহ নেই । কারণ সোফার উপরে বসা মানুষটার হাতেও একটা কফির কাপ ।

নওরিন সোফার উপর বসে কফির কাপটা হাতে নিল । তারপর ইফতির দিকে তাকিয়ে বলল, কফির জন্য ধন্যবাদ !
-আগে চুমুক দিয়ে দেখুন খেতে ভাল হয়েছে কিনা !

নওরিন চুমুক দিল এবং সাথে সাথেই অনুভব করলো যে অনেক দিন এমন চমৎকার কফি সে খায় নি । তখনই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল যে এখানে সে থাকবে । যত ঝামেলা হোক আর ভাড়াটা একটু বেশি হলেও থাকবে !
-তো ঘর পছন্দ হয়েছে ?
নওরিন একটু হেসে বলল, পছন্দ না হওয়ার কোন কারণ নেই । আসলে আমি ঘরটা নিতে আগ্রহী ! তবে ….
-তবে?
-তবে আমার কিছু জানার ছিল ?
-হ্যা বলুন !
নওরিন একটু দ্বিধান্বিত হল । মনে মনে আরেকবার ভাবলো । তারপর বলল, মানে আমি একটা মেয়ে । আপনার সাথে যদি একই ফ্ল্যাটে থাকি তাহলে সমস্যা হবে না ?
-আপনার সমস্যা হবে কি?
ইফতি প্রায় সাথে সাথেই জানতে চাইলো ।
-আসলে আমি এখানে একা থাকি । কাজ করি খাই দাই ঘুরে বেড়ায় । মানুষ কি ভাবলো তাতে আমার কিছু যায় আসে না । আামর কাছে আমি ঠিক তো সব ঠিক !
ইফতি বলল, আমার বেলাতেও তাই ।
-না মানে আমি শুনেছি যে প্রতিটা এপার্টমেন্ট বিল্ডিং কমিটি থাকে । তারা কিছু বলবে না?
ইফতি হাসলো। তারপর বলল, ভয় নেই । কেউ কিছু বলবে না । এটা আমার বিল্ডিং ! এখানে অন্য সবাই ভাড়াটিয়া !
-ও আচ্ছা !

নওরিন এটা আশা করে নি । এখন তো তাহলে আরও স্পষ্ট হয়ে গেল যে ঘর ভাড়াটা মোটেই টাকার জন্য দেওয়া হচ্ছে না !
-আসলে আপনি কেন ঘর ভাড়া দিচ্ছেন ! একটা রুম ভাড়া দিয়ে আপনার কী লাভ !
ইফতি আবারও হাসলো । তারপর বলল, আসলে টাকার জন্য আমি ঘর ভাড়া দিচ্ছি না । এতো বড় বাসায় আমি একদম একা থাকি । এই জন্য আর কি ! এছাড়া …।
নওরিন দেখলো যে ইফতি কেমন উদাস হয়ে গেল । নওরিন বলল, এছাড়া ?
নওরিন খেয়াল করলো যে ইফতি কেমন যেন একটু দ্বিধাবোধ করছে কথাটা বলতে । নওরিন সাথে সাথে বলল, যদি না বলতে চান দরকার নেই । আমি যেটা জানতে চাইছি সেটা হচ্ছে মেয়েদেরকেই কেন ভাড়া দিতে চাচ্ছেন !

ইফতি সামনে নিলো সাথে সাথে । আবার আগের চেহারায় ফিরে এল । তারপর বলল, আর বলবেন না । আগে ছেলেদেরই ভাড়া দিয়েছিলাম । একবার না দুইবার ! ছেলে গুলো এমন বদমাইশ । ঘর পরিস্কার রাখে না। গাজা খায় । আরও কত কিছু ! এই জন্য আর ছেলেদের থাকতে দিবো না ঠিক করেছি ।

নওরিন আরও একটু চিন্তা করতে লাগলো । তাকে বাসা বদলাতে হবেই । হাতে আর দুটি দিন সময় আছে কেবল । এর ভেতরে বাসা না পেলে সামনের মাসে ঠিক কোথায় থাকবে সেটা সে জানে না । অন্য দিকে প্রতিদিন বাসার সামনে ঐ ঝামেলা আর সহ্য হচ্ছে না । এখানে আসলে অন্তত বাসার উপরে পর্যন্ত আসতে পারবে না ।

নওরিন ঠিক করে নিল যে এখানই সে উঠবে। যদি পরে সমস্যা হয় তাহলে বাসা ছেড়ে দিবে । নওরিন কফি শেষ করে বলল, আমি আসলে নিতে চাই ।
ইফতি এবার নওরিনের দিকে তাকিয়ে বলল, ওকে তাহলে কয়েকটা শর্ত আপনাকে মানতে হবে !
-জ্বী বলুন !
-এক হচ্ছে বয়ফ্রেন্ড কিংবা কোন ছেলে ফ্রেন্ড আসবে না বাসায় । কোন অবস্থাতেই না ।
-ওকে !
-আপনার গেস্ট আসতে পারে, লাইক আপনার বাবা মা কিংবা বান্ধবি কিন্তু সেটা যেন রেগুলার বেসিসে না হয় ! আমি শান্তি প্রিয় মানুষ ।
-জ্বী ওকে !
-কোন প্রকার মাদক গ্রহন করা যাবে না । আপনি সিগেরেট খেতে পারেন তবে অবশ্যই বাসার বাইরে । নিজের ঘরেও খেতে পারেন তবে সেই গন্ধ কোন ভাবেই যেন ঘরের বাইরে বের না হয় ! যদি আমার নাকে সেটা আসে তাহলে আপনাকে আমি ঘর ছেড়ে দিতে বলবো ! ঠিক আছে কী !
-আমি সিগরেট খাই না ।
-তাহলে তো কোন সমস্যা নেই । এছাড়া পুরো ঘরের সব জিনিস পত্র আপনি নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারে । টিভি ফ্রিজ ওভেন সব কিছু। বুয়া আসে আমার রান্নার জন্য । আপনি চাইলে তাকে নিয়োগ দিতে পারেন অথবা নিজের জন্য বুয়া আনতে পারেন অথবা আপনি চাইলে এক সাথে রান্নাও করতে পারেন । মাস শেষে একটা হিসাব করলেই চলবে !

নওরিন এবার বলল, বাসা ভাড়া কত দিতে হবে?

নওরিন একটু ভয়েই ছিল কিন্তু ইফতি যখন এমাউন্টটা বলল তখন যেন আকাশ থেকে পড়লো । সত্যিই এতো কম সে মোটেও আশা করে নি । আর কোন চিন্তা না করেই এডভান্স দিয়ে দিল । ইফতি তাকে জানালো যে চাইলে সে কালই উঠে পড়তে পারে । কোন সমস্যা নেই । এই কদিনের জন্য কোন আলাদা চার্যও দিতে হবে না ! নওরিন আর দেরি করলো না । সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল যে আগামীকাল পরশুর ভেতরেই সে এই বাসায় উঠে পড়বে !

দুই

নওরিনের জীবনটা হঠাৎ করেই একেবারে বদলে গেল । আগের প্রতিদিন অফিস থেকে বাসায় যাওয়ার পথেই ওর চিন্তা আরাম্ভ হত । মনে হত এই বুঝি পথে তার সাথে দেখা হয়ে যাবে । এখন সেই ভয়টা আর নেই । কোন মতে বাসায় পৌছানোর পরেও বারবার মনে হত যে এখনই বুঝি দরজায় টোকা পড়বে । যতবার বাসার কলিংবেল বেজে উঠতো ততবার ভয় হত ওর যে এখনই বুঝি ওর ডাক পড়বে ! এখানে আসার পর থেকে সপ্তাহ খানেক পার হয়ে গেছে সেই ভয়টা আর নেই । প্রথম প্রথম একটু অস্বস্তি যে লাগে নি সেটা নওরিন বলবে না । বিশেষ করে ইফতির মত একজন অপরিচিত ছেলের সাথে একই ফ্ল্যাটে থাকাটা আমাদের এই সমাজে ঠিক স্বাভাবিক ভাবে দেখা হয় না । প্রথমদিন একটু ভয়ই করছিলো এই ভেবে যে হয়তো ইফতি তার ঘরের দরজায় হামলে পড়বে । তবে একটা সপ্তাহ যাওয়ার পরে খেয়াল করলো যে ইফতিকে তার জন্য নিরাপদ । মেয়েদের মাঝে এই একটা সেন্স কাজ করে যে কোন ছেলেটা তার জন্য নিরাপদ আর কোন ছেলেটা নয় ! ইফতির বেলাতেও এই অনুভূতিটা এসে জমা হল । দুইদিনের ভেতরেই একদম সহজ হয়ে উঠলো ও । ঘরের ভেতরেই নিশ্চিন্তে ঘোরাফেরা করতে শুরু করলো ।
আস্তে আস্তে সব কিছু নিজের মত করে ব্যবহার শুরু করে দিল । সপ্তাহ দুয়েক পরের কথা !
নওরিন রাত দুইটার দিকে নিজের রুম থেকে বের হয়ে দেখলো ইফতি ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে । একটু ইতস্তর করলো । নওরিনের পরনে তখন রয়েছে একটা নীল টিশার্ট আর সাদা লেগিংস । নিজের ঘরে সে এই ধরণের হালকা ড্রেস পরেই থাকে । নওরিন ভেবেছিলো যে রান্না ঘরে গিয়ে এক কাপ কফি বানিয়ে খাবে ।
ইফিতিকে ড্রয়িং রুমে আশা করে নি । দরজা খোলার একটু পরে ইফতি ওর দিকে ফিরে তাকালো । তারপর খুব স্বাভাবিক কন্ঠে বলল, কফি বানানো আছে ফ্লাক্সে । চাইলে খেতে পারেন !

তারপর আবারও টিভির দিকে মনযোগ দিল ।
নওরিনের মন হল যে ইফতির ওর পোশাকের দিকে যেন তাকায়ই নি । অন্য কেউ হলে ওর দিকে আরেকবার ফিরে তাকাতো । এইভাবনাটা কেন জানি নওরিনের ভাল লাগলো বেশ । কফির কাপ হাতে নিয়ে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল ড্রয়িং রুমে । তারপর খব স্বাভাবিক ভাবে বসলো অন্য সোফাতে । ইফতির চোখ তখনও টিভির দিকে । খুব মনযোগ দিয়ে একটা মুভি দেখছে ।
নওরিন কফিতে চুমুক দিতে দিতে বলল, এতো রাতে জেগে আছেন?
ইফতি এবার নওরিনের দিকে তাকালো । টি টেবিল থেকে কাপ টা তুলে নিয়ে একটা চুমুক দিলো তাতে । তারপর বলল, আসলে ভয় লাগছে !
নওরিন একটু অবাক হল । তারপর বলল, ভয় লাগছে মানে?
নওরিন এমন উত্তর আশা করে নি ইফতির কাছ থেকে । ইফতির চেহারায় একটা ইতস্তঃ ভাব দেখতে পেল নওরিন । যেন ঠিক বুঝতে পারছে না যে কথাটা নওরিনকে বলা ঠিক হবে কিনা !
কফিতে আরও একটা চুমুক দিয়ে ইফতি বলল, আসলে এই কারণেই আপনাকে ঘর ভাড়া দেওয়া ! আমার মাঝে মাঝে ভয় করে । আমি কিছু দেখি !
নওরিন খানিকটা কৌতুহলী হয়ে তাকালো ইফতির দিকে । তারপর বলল, খুলে বলা যায়?
-কিভাবে বলবো ঠিক বুঝতে পারছি না । হয়তো হাসবেন ।
-তবুও বলুন শুনি !
একটা লম্বা দম নিয়ে বলল, বাবা মা মারা যাওয়ার পরে আমি আসলে বেশ একাই হয়ে যাই । সব সময় একা একাই থাকি । অবশ্যও ছোট বেলা থেকেই একা থাকার অভ্যাস । মানুষ জনের সাথে কম মিশি । আপু কয়েকবার ওর ওখানে গিয়ে থাকতে বলেছে আমাকে কিন্তু আপুর তিন ছেলে মেয়ে । এমন না যে আমি ওদের পছন্দ করি না কিন্তু সব সময় ওদের উপস্থিতি আমার পছন্দ না ! আসলে সব সময় কারো উপস্থিতিই আামর পছন্দ না ! যখন পুরোপুরি একা হয়ে গেলাম প্রথম প্রথম বেশ ভালই ছিলাম তারপরই ব্যাপারটা খেয়াল করলাম । সব সময় না তবে মাসের ভেতরে কয়েকরাতে হঠাৎ আমার ঘরটা হঠাৎ খুব বেশি ঠান্ডা হয়ে যেত । আমি ঘর অন্ধকার করেই ঘুমাই । তবে পুরোপুরি অন্ধকার হয় না । সেই অন্ধকারের ভেতরে অনুভব করতাম যে আরও একটা অন্ধকার অয়োবয় রয়েছে ঘরের দিকে । একটু নড়ছে যেন । আমার দিকে তাকিয়ে আছে !
-তারপর?
-আর কিছু না । এইটাই ।
-এই জন্য আপনি রুম মেট নিয়েছেন ।
-হুম । এমন হলে আমি ঘর থেকে বের হয়ে এখানে চলে আসতাম । এই ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখি । পাশে একজন রয়েছে এটা ভাবতে ভাল লাগে । তখন কম ভয় লাগে !

নওরিন হঠাৎ উঠে দাড়ালো । তারপর ইফতিকে বলল, আসুন আামর সাথে !
-কোথায়?
-আসুন তো !
-না থাকুক ! ঐ ঘরে এখন যাবো না !

নওরিন এবার নিজ থেকে ইফতির হাত ধরলো । তারপর বলল, আসুন । কোন কথা না !

এক প্রকার টেনে নিয়ে গেল ইফতির ঘরে । আলো জ্বালিয়ে দেখালো পুরো ঘরটা । তারপর বলল, কিছু আছে?
-নাহ !
-তাহলে ? এমন বাচ্চামী করলে চলে !

ড্রয়িং রুমে ফিরে আসার পরেও নওরিন অনুভব করতে পারলো যে ইফতির ভয়টা তখনই কাটে নি । ড্রয়িংরুমে বসেই ওর বাকি রাতটা কাটিয়ে দিল গল্প করে ! সকালে ঘুমাতে যাওয়ার আগে নওরিন বলল এরপর থেকে যদি এমন ভাবে ভয় করে তাহলে আমার দরজায় নক দিবেন । কেমন ! গল্প করা যাবে !
-আচ্ছা !

নওরিন কেবল বুঝতে পারলো যে ইফতির সাথে ওর সম্পর্কটা আরও একটু ভাল হয়ে গেছে । কিন্তু সেই সম্পর্কটা কয়েকদিন পরে যে আরও গাঢ় হয়ে যাবে সেটা নওরিনের জানা ছিল না । অন্তত যেভাবে হল সেটা তো ও কোন ভাবেই আশা করে নি !

তিন

অফিস থেকে বিকেল বেলা বাসায় ঢুকার সময়ই ওর বুকটা কেঁটে উঠলো । রমিজ দাড়িয়ে রয়েছে ঠিক গেটের সামনে ! যার কারণে আগের এলাকাটা ওকে ছাড়তে হয়েছি সেই আপদ আবার এখানে এসে হাজির হয়েছে । নওরিন রমিজকে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলো কিন্তু পারলো না । রমিজ ওর পথ রোধ করে দাড়ালো । তারপর বলল, কি ভাবছিলে? এলাকা বদলাতে সব সমাধান হয়ে যাবে?
-আমাকে যেতে দাও । এখানে আমি কোন সিন ক্রিয়েট করতে চাই না ।
-সিন ক্রিয়েট ! আমার সাথে তুমি যা করেছো ভেবেছো ছেড়ে দিবো !
-তোমার সাথে বলার মত আমার কিছু করি নি । বুঝেছো কি?
-তাই না ? তুমি যদি ভেবে থাকো যে আমি এখানে তোমার কিছু করতে পারবো না তাহলে ভুল করছো । এই দেখ…

এই বলে রাস্তার ওপাশে দাড়িয়ে থাকা দুইটা ছেলেকে দেখালো । তারপর বলল, ওরা এই এলাকার লোক । আজ থেকে ওরা তোমার খোজ খবর রাখবে !

রামিজ এবার খপ করে নওরিনের হাত চেপে ধরলো । তারপর বলল, আমাকে ছেড়ে তুমি যেতে পারবে না ! আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো তখনই নওরিন দেখতে পেল ইফতি এসে দাড়িয়েছে পেছনে । রমিকের হাত থেকে নওরিনকে চাড়িয়ে নিল । তারপর বলল, কী সমস্যা ব্রাদার !
রমিজ ইফতিকে পাত্তা না দিয়ে বলল, আপনি রাস্তা মাপেন । আপনার এসবের ভেতরে পড়ার দরকার নেই ।
ইফতি একটু হাসলো । তারপর, আমার বাসার সামনে আমার স্ত্রীর হাত আপনি ধরে আছেন আর আমাকে বলছেন রাস্তা মাপতে !

রামিজ তো বটেই নওরিনও অবাক হয়ে তাকালো ইফতির দিকে । ইফতি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বলল, এটাই সেইজন যার কথা বলেছিলে?

নওরিন তখনও খানিকটা ফ্রিজ হয়ে আছে । কোন কথা বলল না । কেবল মাথা নাড়ালো । ইফতি এবার রমিজের দিকে তাকালো । তারপর বলল, দেখুন আমি কোন ঝামেলায় যেতে চাই না । আপনার সাথে নওরিনের আগে কি ছিল না ছিল সে সব নিয়ে আমার কথা মাথা ব্যাথা নেই । এখন ও আমার স্ত্রী । এখন ওর উপরে কোন ঝামেলা আমি পছন্দ করবো । ঠিক আছে কি ! এরপর যদি ওকে ডিস্টার্ব করতে দেখি তাহলে পা ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে দেব !

নওরিন দেখলো রমিজ কেবল অবাক হয়ে গেছে । কোন কথাই যেন বের হচ্ছে না ।
ইফতি আবার বলল, আপনি ঐ চ্যালাদের জোরে এখানে এসেছেন রাইট !
নওরিন দেখলো ইফতি রাস্তায় দাড়িয়ে থাকা দুজনকে হাতের ইশারায় ডাকলো । ওরা একটু ইতস্তর করে এগিয়ে এল ওদের সামনে । ইফতি ওদের দিকে তাকিয়ে বলল, অন্য এলাকার লোক আমাদের এলাকায় এসে এই এলাকার বউ মেয়েদের ডিস্টার্ব করে যাচ্ছে তোমরা আবার তাদের সায় দিচ্ছো ! আকিব ভাইকে জানাবো ব্যাপারটা ?
দুইজনের একজন সাথে সাথে বলল, ইফতি ভাই আপনি কী বলছেন এসব ! আমরা তো কিছুই জানি না !
-তাহলে এই লোক তোমাদের সামনে আমার স্ত্রীর সাথে বেয়াদবী করছে আর দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছো ?
-এটা আপনার বউ ভাই ! ভাই আমরা এসব জানিই না কিছু ! জানলে আসতামই না !
-এখন তো জানলে !
-জ্বী ভাই । আর এমন হবে না !

ইফতি বলল, হ্যা দেখো । আমি আকিবভাইয়ের কাছে যেতে চাই না !

ইফতি এবার নওরিনের দিকে তাকিয়ে বলল, চল ঘরে ।

নওরিন গেট দিয়ে ভেতরে ঢোকার সময় রমিজের চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখছিলো । কেন জানি মনে হল যে রমিজের সমস্যাটার সমাধান হয়ে গেছে ! এতোদিন যে ভয়টা ও পাচ্ছিলো সেটা একেবারে শেষ হয়ে গেছে । কিন্তু এভাবে শেষ হয়ে যাবে সেটা তো ভাবে নি !

লিফটে উঠতে ইফতি নওরিনের হাত ছেড়ে দিল । লিফটের দরজা বন্ধ হতেই নওরিন হেসে উঠলো । তারপর বলল, আপনার মাথায় তো দারুন বুদ্ধি !
-এখানে দারুন বুদ্ধির কিছু নেই । স্বাভাবিক ভাবে চিন্তা করলেই হত !
-উহু ! যদি সে আমার স্বামী হত তখন ?
-আমার গেসে স্বামী হওয়ার সম্ভবনা ছিল না । কারণ স্বামী হলে আপনি কোন ভাবেই এখানে থাকতেন না। তাই না ?
-তা অবশ্য ঠিক ।
ফ্রেশ হয়ে আবারও দুজন কফির হাতে বসলো ড্রয়িং রুমে । নওরিন বলল, আসলে আমি কোন দিন ভাবিও নি, ঐ বেটা আমার পিছে এমন ভাবে লাগবে ! আমি কেবল একটা সাহায্যের জন্য গিয়েছিলাম তার কাছে । কিন্তু এরপর এমন ভাবে আমার পেছনে লেগেছিলো যে বলার অপেক্ষা রাখে না ।
ইফতি বলল, এরপর আর লাগবে বলে মনে হয় না । তবে যদি সত্যিই আবার পেছনে লাগে তখন দেখা যাবে !

নওরিনের সত্যিই মনে হচ্ছিলো যে আর ঝামেলা পোহাতে হবে না ওকে !
কিন্তু নওরিনের জীবনে যে অন্য আরেক দিকে ঝামেলা শুরু হবে সেটা নওরিন কি কখনও বুঝেছিল?

চার

ঠিক দুদিন পরের ঘটনা । রাতে নওরিন শুয়ে ছিল । তখনও ওর ঘুম আসে নি । এমন সময় একটা ভয়ার্থ চিৎকার কানে এল । সাথে সাথে বিছানা থেকে উঠে বসলো সে । বুঝতে পারলো চিৎকারটা ঠিক কোথা থেকে এসেছে । উফতির ঘর থেকে ।
নওরিন খুব দ্রুত ওর ঘরের দিকে দৌড় দিল । দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল না । দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়লো নওরিন ।

ভেতরে অন্ধকার আবহাওয়া । তবে একটা ব্যাপার ঠিকই খেয়াল করতে পারলো যে ঘরের আবহাওয়া একটু ঠান্ডা !
এসি চলছে কি?

তারপরেই মনে হল যে ইফতির এসিতে এলার্জি আছে । পুরো বাসায় কেবল ড্রয়িং রুমে এসি লাগানো আছে । আর পাশের ঘরটাতে আছে । ইফতির রুমে কোন এসি নেই । তাহলে ঘর এতো ঠান্ডা কেন ?
আলো জ্বেলে দিল ঘরের । দেখলো ইফতি খাটের এক কোনে কেমন জড়সড় হয়ে বসে আছে । তাকিয়ে রয়েছে বারান্দার কোনার দিকে !
আপনা আপনি সেদিকে চোখ গেল নওরিনের । তবে সেখানে সে কিছু দেখলো না । নওরিন আস্তে ধীরে এগিয়ে গেল এবার ইফতির দিকে । ছেলেটার চোখ মুখ দেখে আসলেই মনে হচ্ছে যে ভয় পেয়েছে বেশ । একেবারে ইফতির কাছে গিয়ে বসলো । তারপর নিজ থেকে ওকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলল, কোন ভয় নেই । এই তো আমি আছি !

তখনই নওরিন অনুভব করলো ইফতি বেশ ভালই কাঁপছে । নওরিনকে কাছে পেয়ে হঠাৎ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো । যেমন ছোট বাচ্চা ছেলে তার মাকে জড়িয়ে ধরে ভয় পেয়ে ঠিক তেমন ভাবে !

নওরিন নিজেকে ছাড়িয়ে নিল না । এমন কি ওর কোন অস্বস্তিও হল না । মনে হল যেন এটা খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার ! আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো ।

সকালে নওরিনের যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন দেখলো ও ইফতির ঘরেই শুয়ে আছে । গতরাতে এখানেই শুয়ে ছিল !
ইফতির সাথেই !
এবার একটু অস্বস্তি জন্মনিল মনে । তবে ইফতি ওর পাশে নেই । সকাল হয়েছে আগেই । উঠে গেছে সম্ভবত !

ঘর ছেড়ে বের হয়ে যখন ডাইনিং রুমের দিকে এল তখন ইফতিকে দেখতে পেল । রান্নাঘর থেকে বের হচ্ছে । হাতে নাস্তার প্লেট ! ওর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল, নাস্তা করবেন না ? আজকে অফিস নেই !
-আছে !
-ফ্রেশ হয়ে আসুন !

নওরিনের একবার মনে হল যে বলে কোন দরকার নেই । ও নাস্তা করবে অফিসের ক্যান্টিনে গিয়ে । প্রায় সব দিনই এমনটা করে । কিন্তু কেন যেন বলতে ইচ্ছে হল না । মনে হল সকালে এখান থেকে আজকে নাস্তা করে যাওয়াই যায় ।
নাস্তা করার সময় নওরিনের যে একটু অস্বস্তি লাগছিল না সেটা সে বলবে না । বারবার কেবল গতরাতের কথা মনে হচ্ছিলো । বিশেষ করে ওভাবে একসাথে ঘুমিয়ে পড়াটা । আচ্ছা কেমন করে ঘুমিয়েছিল ও !
খানিকটা জড়িয়েই ধরেছিলো ইফতিতে । সেই হিসাবে রাতে যদি ঘুমিয়ে পড়ে থাকে তাহলে কোন অবস্থায় যাওয়া হয়েছে কে জানে !

খাওয়া শেষ করে যখন নওরিন উঠতে যাবে তখনই ইফতি বলল, কাল রাতের জন্য ধন্যবাদ !
নওরিন একটু হাসলো । তারপর বলল, আরে এটা কোন ব্যাপার না !
-আমি অনেক দিন পর খুব শান্তি আর নির্ভয়ে ঘুমিয়েছি কালকে ! তুমি যখন আমাকে জড়িয়ে ছিলে তখন এতো নিরাপদ মনে হচ্ছিলো আমি বলে বোঝাতে পারবো না !

নওরিন তখনও বুঝতে পারলো যে কিছু একটা পরিবর্তন হয়েছে । ইফতির কথায় । ইফতি কেবল আপনি থেকে তুমিতেই নামে নি, ওর কন্ঠেও অনেক কিছু পরিবর্তন এসেছে । একটা মেয়ে এই পরিবর্তন ঠিক ঠিক ধরতে পারে !

অফিসের পুরো সময়টা নওরিন কেবল ইফতির কথাই চিন্তা করলো । ওর মনে কেবল দ্বিধা করতে শুরু করলো !
ওর কী খুব জলদিই বাসা বদলানো দরকার?
কিন্তু এতো চমৎকার একটা বাসা থেকে ছেড়ে চলে যাবে ?
একদিনেই এই আরামের সাথে খুব বেশি অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে । নতুন জায়গাতে লেগে সেটা মানিয়ে নিতে পারবে তো ?

পাঁচ

কিন্তু ঝামেলা বাঁধলো অন্য খানে ! ঠিক দুইদিন পরের ছুটির দিন । নওরিন একটু বেলা করেই ঘুমায় ছুটির দিন গুলোতে । আজও ঘুমাচ্ছিলো । ঘুম ভাঙ্গলো তার কলিংবেলের আওয়াজে । বার কয়েক বেজেই চলেছে ।
নওরিন একটু অবাক হল । চোখ মেলে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো সিলিংয়ের দিকে । এই সময়ে সাধারনত বুয়া আসে কিন্তু বুয়ার কাছে আলাদা একটা চাবি থাকে । যদি বাসায় কেউ নাও থাকে তাহলে যাতে সে দরজা খুজে ঢুকতে পারে । দরজা কেউ খুলছে না, মানে হচ্ছে ইফতি বাসায় নেই । কোথাও গেছে হয়তো !

নওরিন নিজেই উঠলো ।ধাই তুলতে তুলতে দরজা খুলতেই চোখ কপালে উঠে গেল ওর । জীবনে এতো বিস্মিত সে কোন দিন হয়েছে কিনা জানে না । দরজার ওপাশে তার বাবা দাড়িয়ে রয়েছে ! ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে অগ্নি দৃষ্টিতে ! নওরিন যে কী বলবে সেটা সে বুঝতেই পারলো না ।
নওরিনের বাবা আরও কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বলল, তাহলে আমি যা শুনেছি সত্যই ! মেয়ে তো বড় হয়ে গেছে যে একা একা বিয়ে করে ফেলেছে !

নওরিন কোন কথা বলল না । আসলে ওর মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হল না ! কী বলবে কিভাবে বলবে ?
এবং তখনই দেখতে পেল যে লিফট থেকে ইফতি বের হচ্ছে । হাতে বাজারের ব্যাগ ।
নওরিনের চোখ বড় হয়ে গেল । সেটা দেখে নওরিনের বাবাও পেছন ফিরে তাকালো ।

নওরিনের নিজেকে এতো অসহায় আর কোন দিন মনে হয় নি ! এখন কী হবে ? কী হবে এখন?

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 60

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

3 Comments on “নওরিনের বিপদ”

  1. অপু ভাই সম্পুর্ন গল্প তারাতাড়ি চাই😇😇

Comments are closed.