সকাল থেকে মিলার মেজাজটা খারাপ হয়ে আছে। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে সামনে যা পায় তাই যেন ভেঙ্গে ফেলে। সব কিছুর উপর এমন বিরক্ত লাগছে যে বলে বোঝাতে পারবে না। মাসের এই সময়টা মিলার খুব বেশি অসহ্য লাগে। সবাইকে বিরক্ত লাগে। এমন কি রাশেদকেও সহ্য হয় নি আজকে। অফিস যাওয়ার সময় বেচারা একটু অবাকই হয়েছিল আজকে।
রাশেদের প্রতিদিন অফিস যাওয়ার আগেই প্রতিদিন মিলা ঘুম থেকে ওঠে। যদিও ওকে এখনও রান্না করতে হয় না। কাজের এক মহিলা আছে। সেই রান্না করে। মিলার সকালে ক্লাস থাকে। রাশেদের আগে মিলাই ঘুম থেকে ওঠে। একসাথে নাস্তা করে। তারপর যদি মিলার সকালে ক্লাস থাকে তাহলে এক সাথেই বের হয় ওরা। তবে দুপুরে ক্লাস থাকলে মিলা আর বের হয় না। বিয়ের পর মাত্র ২০ দিন ওরা এক সাথে থাকা শুরু করেছে। প্রতিদিন এমনই হয়েছে। তবে আজকে ব্যতিক্রম হল। রাশেদ অবশ্য জিজ্ঞেস করেছিল যে মিলার শরীর খারাপ কিনা! মিলা সেই প্রশ্নের জবাবও দেয় নি। বিছানাতেই শুয়েছিল।
রাশেদ বের হয়ে যাওয়ার পরে কাজের মহিলাটা দুইবার ডাকতে এসেছিল খাওয়ার জন্য। প্রথমবার কেবল খাবো না বলে তাকে বিদায় করেছিল। কিন্তু যখন দ্বিতীয় বার আবার ডাকতে এসেছিল তখন একটু রুক্ষ ভাবেই বলল যেন তাকে আর ডিস্টার্ব না করে।
এখন অবশ্য মনে হচ্ছে এমন ব্যবহার না করলেই ভাল হত। রাশেদ কিংবা কাজের মহিলার কেউই জানে যে মিলার পিরিয়ড শুরু হয়েছে। শুরু থেকেই মিলার এই সময়টা বড় অসহ্য লাগে। নিজের শরীরের ভেতরে খুব অস্বস্তি লাগে। কিছু করতে ইচ্ছে করে। কাউকে কিছু বলতেও ইচ্ছে করে না। মেয়েদের এই ব্যাপারটা স্বয়ং মেয়েরাই ঠিকমত বুঝে না। প্রথম থেকেই দেখে আসছে বড়রা যখন জানতো ব্যাপারটা, কেমন চোখে তাকাতো। আর ছেলেদের সামনে যদি প্রকাশ পেত কেমন হাসি মশকরা করতো। মিলার শরীর জ্বলে যেত। কলেজে থাকতে আরিফ নামের একটা ছেলের সাথে একটা ভাব হতে শুরু করেছিল। কিন্তু সেটা শুরুর আগে একদিন আরিফ কে এই পিরিয়ড নিয়ে এমন বাজে একটা রসিকতা করতে শুনেছিল। তারপর থেকে আরিফের উপর থেকে মিলার মন উঠে গিয়েছিল।
দুপুরের কিছু পরে কলিংবেল বেজে উঠতে শুনলো মিলা। এই দুপুরবেলা কে এল?
নিজের মনে প্রশ্ন করলো মিলা। মনটা আরেকটু বিরক্তিতে ভরে গেল। এখন এই সময়ে কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। উপর তলায় এক ভাবি আছে। এই কয়দিনে দুইবার এসেছে সে। এই দুপুরবেলাতেই। আজও যদি আসে তাহলে? মিলা মনে মনে ঠিক করে যে আজকে নিজের রুম থেকে বের হবে না। যা মনে করে করুক সে।
কিন্তু মিলাকে অবাক করে দিয়ে রাশেদ ঢুকলো ঘরে। মিলা বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বলল, তুমি এখন?
রাশেদ হাসলো। তখনই রাশের হাতের দিকে চোখ গেল ওর। এক তোড়া তাজা গোলাপ। রাশেদ এগিয়ে এসে সেটা এগিয়ে দিল মিলার দিকে। বলল, তোমার জন্য।
ফুলের তোড়াটা হাতে নিয়ে নাকের কাছে নিয়ে শুকলো। একেবারে তাজা ঘ্রাণ। মনে হচ্ছে যেন এখনই গাছ থেকে তুলে নিয়ে আসা হয়েছে। মিলার মনটা ভাল হয়ে গেল সাথে সাথে। রাশেদ বলল, এখন কেমন লাগছে। ঔষধ নিয়ে এসেছি কিনে।
মিলা বলল, তুমি কিভাবে জানো?
-না জানার কি আছে? তোমার আচরণই বলে দিচ্ছে। কিছু তো খাও নি রাইট?
-উহু। ভাল লাগছে না।
রাশেদ এবার নিজের ব্যাগের পকেট থেকে একটা ছোট প্যাকেট বের করলো। সেটার দিকে তাকিয়ে মিলার মনটা আরও ভাল হয়ে গেল। মিলা কিটক্যাট চকলেট খুব পছন্দ করে। এটা রাশেদ জানে। সেটারই একটা মিনি কার্টুন কিনে এনেছে। মিলা প্যাকেট টা ধরতে গেল। তবে রাশেদ সেটা সরিয়ে নিল। বলল, উহু এভাবে তো এটা পাবে না।
মিলা বলল, মানে কী? দাও বলছি!
-নাহ। আগে দুপুরের খাবার খেতে হবে। তারপর। এর আগে নয়।
-আমার ভাল লাগছে না। পরে খাবো।
-তাহলে এটাও পরে।
-নায়ায়ায়ায়ায়া!চকলেট দাও বলছি।
রাশেদ এবার মিলার কাছে এসে বসলো। ওর কপালে মৃদু ভাবে একটা চুমু খেয়ে বলল, প্লিজ। অল্প একটু খেয়ে নাও। এমন করে না।
মিলার হঠাৎ মন টা একেবারে ভাল হয়ে গেল। আশ্চর্য হয়ে রাশেদের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো সে। সামনে বসা এই ছেলেটা তার জন্য এতো চিন্তা করছে। ওর অস্বস্তি লাগছে জেনে, ওর ভাল লাগছে না জেনে অস্বস্থির হচ্ছে।
মিলা বলল, খেতে পারি কিন্তু তোমাকে খাইয়ে দিতে হবে। এখানে….
রাশেদ এবার হেসে ফেলল। বলল, এমন বাচ্চামি কর তুমি। আচ্ছা আমি খাবার নিয়ে আসছি।
মিলা বলল, আর অফিসে যাওয়া যাবে না। খাওয়ার পরে আমার সাথে বসে গল্প করতে হবে।
রাশেদ আবারও হাসল। বলল, আচ্ছা। আমি খাবার নিয়ে আসি।
অনেক কয় বছর পরে মিলার এই অস্বস্তিকর সময় খুব ভাল গেল। রাশেদ ওকে নিজ হাতে খাইয়ে দিল। খাওয়ানোর পরে মুখ ধোয়া থেকে শুরু করে মুখ টা মুছে দিল। তারপর দুজনে মিলে এক সাথে বস্র টিভি দেখতে শুরু করলো। মিলা অনুভব করলো যে এই সময়ে তার যে বিরক্তি ভাবটা হত সেটা চলে গেছে। হ্যা শারীরিক অস্বস্থির ব্যাপারটা রয়ে গেল বটে তবে প্রিয় মানুষটি সঙ্গ যেন সব কিছু ভুলিয়ে দিল ওকে।