সুখী মানব

oputanvir
4.7
(65)

বৃষ্টি পড়লে আমার মন খানিকটা উদাস হয়ে ওঠে । মন খারাপ হয় । নিজেকে বড় দুঃখী মনে হয় তখন। বৃষ্টির দিনে কোন কাজ কর্ম করতে ইচ্ছে করে না । ইচ্ছে হয় প্রিয় মানুষটির সাথে চুপচাপ শুয়ে থাকি । তার সাথে শুয়ে থাকা মানে আমি অবশ্যই অন্য কিছু বোঝাই নি । আমি জানি আপনারা চোখ বড় বড় করে তাকিয়েছেন লেখার দিকে তাকিয়ে । মিমিও এমন ভাবে চোখ বড় করে তাকিয়েছিলো । আমি যে এমন কোন কথা বলতে পারি সেই সম্ভবত তার বিশ্বাস হচ্ছিলো না । তখনও মিমির সাথে আমার খুব ভাল সম্পর্ক তৈরি হয় নি । সবে মাত্র পরিচয় হয়ে একটু একটু ভালর দিকে এগোচ্ছে ।
মিমি যে অফিসে কাজ করে সেই অফিসের সাথে একটা কন্ট্রাক্ট বেসিসে কাজ করেছিলাম মাস খানেক । ওদের প্রোডাক্টের জন্য কিছু গ্রাফিক্স তৈরি করে দিতে হয়েছিলো । পুরো সময়ই মিমির সাথেই আমার যোগাযোগ হয়েছে । ও ব্যাপারটা সামলে ছিল । সেখান থেকেই আমাদের পরিচয় । এরপর আস্তে আস্তে আমাদের দেখা সাক্ষাত হতে থাকে ।
এমন একদিন মিমিকে কথা টা বলেছিলাম । আমরা রেস্টুরেন্টে বসে গল্প করছি আর খাবার খাচ্ছি । এমন সময় মিমি হঠাৎ জানতে চাইলো যে আমার পছন্দের এমন কি কাজ আছে যা আমি করতে চাই কিন্তু এখনও করতে পারি নি । তখন বললাম, কোন অলস বিকেলে কাছের মানুষটার সাথে শুয়ে থাকা ।
কথাটা বলেই মনে হল যে কী বললাম ! বলা ঠিক হল কিনা !
মিমির দিকে চোখ পড়তেই বুঝলাম যে ওর গালটা খানিকটা লাল হয়ে উঠেছে । আমি দ্রুত বললাম, মানে প্লিজ অন্য কিছু মনে কর না । শুয়ে থাকা মানে আমি কেবল শুয়ে থাকাই বুঝেছি । অন্য কিছু না ।

মিমি দেখলাম তখনও আমার দিকে কেমন চোখে তাকিয়ে রয়েছে । আমি বললাম, ধর কোন অলস বিকেল । বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে । আমার আসলে এমন সময়টাতে মন খারাপ হয় খুব । কোন কারণ ছাড়াই মন খারাপ লাগে । তখন কাউকে ইচ্ছে করে জড়িয়ে ধরে চুপচাপ শুয়ে থাকি । তেমন কোন মন খারাপের বিকেলে তোমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকবো । বাইরে একটু একটু ঠান্ডা পড়বে । তাই একে অন্যের শরীরের খুব কাছাকাছি থাকবো । একেবারে কাছাকাছি । একই বালিশে মাথা দিয়ে । একেবারে মুখোমুখি না । সে মনে কর তুমি আমার দিকে …….

তখন মনে হল ভুলটা কোথায় হয়েছে । আসলে তখনও আমাদের সম্পর্কে এমন হয় নি যে ওকে নিয়ে এমন ভাবে কিছু বলতে পারি । ভুল করে আমি তুমি করে বলে ফেলেছি । সেদিন মিমি খুব বেশি লজ্জা পেয়েছিলো । আর ঠিকঠাক মত কথা বলতে পারি নি আমরা দুজনের কেউই । পরের কয়েকটা দিন মিমি যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছিলো । আমি ভেবেছিলাম যে হয়তো সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে গেল । তবে আশার কথা যে সেটা নষ্ট হয় নি । বরং তারপর আস্তে আস্তে আরও ভালর দিকে গেছে । যদিও এখনও ওকে বিয়ের কথা ভাবছি না । তবে নিশ্চিত যে সব কিছু ঠিক থাকলে ওকেই বিয়ে করবো ।

এই সব ভাবতে ভাবতেই বাইরে তাকালম আবার । অনেকটা সময় ধরে বৃষ্টি পড়ছে । সন্ধ্যা হতে অনেক টা সময় বাকী তবুও চারিদিক কেমন অন্ধকার হয়ে এসেছে । এই বৃষ্টি সহজে থামবে বলে মনে হয় না । সন্ধ্যার দিকে একটা কাজ ছিল । ঠিক করলাম যে বাইরে আর বের হব না আজকে ! আজকে আমার বৃষ্টি বিলাশ করার দিন ।
একবার মনে হল মিমিকে ফোন দিয়ে কিছু সময় কথা বলি । কিন্তু সেই চিন্তা বাদ দিয়ে দিলাম । এখন সে সম্ভবত অফিসে রয়েছে । তাকে বিরক্ত করার কোন মানে নেই । মন খারাপ থাকলে আমার কোন কিছু ভাল লাগে না । এই সময়ে কেবল শুয়ে থাকতে মন চায় । ল্যাপটপটা বন্ধ করে দিয়ে নিজের ঘরের দিকে হাটা দিলাম । দরজার কাছে যেতেই কলিংবেল বেজে উঠলো ।
এমন সময়ে কে এল?
কে আসতে পারে ?
কারো আসার কথা আছে কি !
মনে করার চেষ্টা করলাম বটে কিন্তু মনে পড়লো না । একটু বিরক্ত হলাম । এই সময়ে যে কারো সাথে প্যাচাল পড়তে মোটেই ভাল লাগবে না । বরং মেজাজ গরম হবে ।

কিন্তু যখন দরজা খুললাম তখন আমাকে অবাক হতেই হল । মিমি দাড়িয়ে আছে দরজার সামনে । অনেকটাই ভিজে গেছে সে । আমি বললাম, তুমি?
-হু !
মিমি কেবল হাসলো ।
-এই সময়ে !
-হ্যা । শুনো ভিজে গেছি । নতুন কাপড় দাও দেখি । তার আগে ভেতরে আসতে দাও তো !
আমি সরে দাড়ালাম । মিমি ভেতরে ঢুকলো । আমি ভাবতে লাগলাম যে ওকে কোন পোশাক দেওয়া যায় । আসলে আমি সত্যিই ঠিক বুঝতে পারছি না যে মিমি হঠাৎ করে আজকে এখানে এসে হাজির হওয়ার কারণটা সত্যিই বুঝতে পারছি না । এখন ওর অফিসে থাকার কথা । আর আসার আগে একটা মেসেজ কিংবা ফোন কল দিয়ে আসতে পারতো ।

তোয়ালে দিয়ে দিয়ে শরীর মুছতে মুছতে বলল, যাক অন্তত চুল টা ভেজে নি । চুল ভিজলে কত প্যারা খেতে হয় জানো ! এতো লম্বা চুল কেটে ফেলবো ভাবছি !
আমি আঁতকে উঠলাম। বললাম, খবরদার চুল কাটবে না একদম । তাহলে কিন্তু তোমার সাথে কথা বলবো না আর ।
আমার বলার ভঙ্গি দেখে মিমি হেসে ফেলল । তারপর বলল, ইস ঢং । বড় সামলানো কত ঝামেলার সেটা জানো ? নিজে তো বলেই খালাস !
-হোক । চুল কাটা যাবে না। এটাই হচ্ছে কথা !
-হ্যা এসেছে !

একটু থেমে মিমি আবার বলল, কিছু পরতে না দিতে বললাম! এভাবে ভেজা কাপড়ে থাকবো ?
আমি একটু ইতস্তত করে বললাম, কী দেব পরতে ! তোমার পরার মত কিছু নেই । সবই তো আমার পোশাক ! তুমিই বরং ওয়ার্ডড্রোফে যাও, নিজের পছন্দমত কিছু পরে নাও । আর কফি খাবে? কিংবা অন্য কিছু?

মিমি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, না এখন কিছু খাবো না । সন্ধ্যার সময় খাবো নে । এখন গল্প করতে এলাম !

এরপর মিমি আমার বেড রুমের দিকে পা বাড়ালো । আমি বসার ঘরে চুপ করে বসে রইলাম । মনের ভেতরে কেমন যে অনুভূতি হচ্ছে । আমি মিমির আচরন ঠিক বুঝতে পারছি না । এই বৃষ্টির দিনে মিমি কেবল গল্প করার জন্য এসেছে !

কিছু সময় পার হয়ে গেলেও দেখলাম মিমি ঘর থেকে বের হল না । এতো সময় লাগছে কেন ? একবার কি যাবো ঘরের দিকে?
একবার মনে হল যাই আবার মনে হচ্ছে না থাক যাওয়ার দরকার নেই । দেখা যাবে মিমি কাপড় বদলাচ্ছে । শোবার ঘরের দরজাটা খোলাই রয়েছে । মিমি সেটা বন্ধ করে নি ।
আজকে মিমির আচরণ আমার কাছে একটু যেন কেমন মনে হচ্ছে ! আমাদের মাঝে সম্পর্ক এক বছরেের বেশি সময় হতে চলল । এরমাঝে ওর হাত ধরেছি অনেকবার । রিক্সার ভেতরে হুড তুলে দুইবার চুমুও খাওয়া হয়েছে ওর গালে । তবে এর বেশি আমি এগোই নি । আমার বাসায় এর আগে ও এসেছে ।

আমাকে মিমি খুব ভাল করে চিনে গেছে । বিশেষ করে আমি একটু অলস টাইপের আর ঘর কুনো ধরনের । আমার ছুটির দিন গুলোতে বাইরে ঘুরে বেড়ানোর চেয়ে ঘরে শুয়ে বসে টিভি মুভি দেখে কাটাতে ভাল লাগে । মিমি তাই মাঝে মাঝে আমার বাসায় আসে ছুটির দিনে । আমরা দিনভর গল্প করি একসাথে রান্না করি কিংবা অর্ডার দেই । মুভি দেখি । কিন্তু তারপরও মিমি সব সময় একটা দুরত্ব বজায় রেখেছে । কিছু কিছু ব্যাপারে এই দুরত্ব রাখা দরকারও । আর আমি যেহেতু ওর ব্যাপারে বেশ সিরিয়াস তাই আমিও সেটা সম্মান করেই চলি। কিন্তু আজকে মিমিকে একটু অগোছালো লাগছে যেন !

আমি এবার দেরি দেখে এই ঘর থেকেই বলল, কী হল জামা কাপড় পাও নি কিছু ?
মিমি বলল, পেয়েছি । এঘরে এসো !

আমি আস্তে আস্তে ঘরের দিকে পা বাড়ালাম । দরজার পা দিয়ে সত্যিই অবাক হলাম । দেখলাম মিমি আমার বিছানাতে শুয়ে আছে চাদর গায়ে দিয়ে । ঠিক আমার দিকে তাকিয়ে নেই । জানালার দিকে তাকিয়ে আছে !
আমার বুকের ভেতরে কেমন যেন করে উঠলো । অনুভব করলাম যে সেটা বেশ জোরেই দৌড়াতে শুরু করেছে ।
মিমি আমার দিকে না তাকিয়ে আবার বলল, এমন একটা দিনের জন্য আমি অনেকটা সময় অপেক্ষা করেছি ।
আমি আরও কিছু সময় চুপ করে দাড়িয়ে রইলাম । একবার মনে হল যে আমি হয়তো স্বপ্ন দেখছি । মিমি হয়তো সত্যিই আসে নি । আমি নিজের ঘরে শুয়ে শুনে স্বপ্ন দেখছি আর সাজাচ্ছি এসব । যদি স্বপ্নও হয় তাহলে সেটা সব থেকে মধুর স্বপ্ন !

আমি বিছানার এগিয়ে গেলাম । চাদরের নিচে ঢোকার সময় অনুভব করলাম যে আমার শরীর যেন একটু একটু কাঁপছে । মিমি যে বালিশে মাথা দিয়েছিলো সেখানেই মাথা দিলাম । মিমি আমার দিকে পিঠ করে শুয়ে আছে । আমি নিজের একটা হাত মিমির কাধের কাছ দিয়ে গলিয়ে আরেকটা উপর দিকে বাড়িয়ে ধরে ওকে জড়িয়ে ধরলাম । তারপর নিজের শরীরটা আরও কাছাকাছি নিয়ে গেলাম !

হঠাৎ করেই অনুভব করলাম আমার চোখ যেন সিক্ত হয়ে উঠলো । কতদিন ধরে এমন একটা দিনের জন্য অপেক্ষা করেছি আমি । এভাবে কাছাকাছি আসার !
মিমি মৃদু স্বরে বলল, খুশি ?
-হুম !
-এখন শুয়ে থাকো চুপচাপ ! অন্য কিছু না একদম !
-তোমার কন্ঠস্বর শুনে মনে হচ্ছে তুমি চাও যেন আমি অন্য কিছু করি !
-তাই না ! একদম না । খবরদার বললাম !

আমি মিমির ঘাড়ের কাছে মৃদু ভাবে চুমু খেলাম ! মিমির পুরো শরীর যেন দুলে উঠলো । আমি অবশ্য আর এগোলাম না । তারপর ওকে আরও একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করলাম । বাইরের বৃষ্টির আওয়াজ যেন আরও বেড়েছে । একটানা বৃষ্টি আওয়াজ যেন আমার মনকরে অন্য কোন জগতে নিয়ে গেলাম । কোথাও যেন হারিয়ে গেলাম আমি । অনুভব করলাম যে আমার মনের সেই সিক্তভাবটা চোখ এক কোনে মৃদু পানির আগমন ঘটিয়েছে । আমি সেটা মুছবার কোন চেষ্টা করলাম না অবশ্য । হঠাৎ করেই আমার মনে হল এই জগতে আমার থেকে সুখী মানুষ বুঝি আর কেউ নেই ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 65

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

One Comment on “সুখী মানব”

Comments are closed.