বর্তমানে যে প্রশ্নটি আমাকে সব থেকে বেশিবার শুনতে হয় তা হচ্ছে কেন আমি এখনও বিয়ে করছি না ! আমার সকল বন্ধুবান্ধব সব বিয়ে করে ফেলছে বা ফেলেছে এই লাইন এখন আমার জন্য পুরানো হয়ে গেছে । এখন আমার স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুবান্ধবেরা সবাই বিয়ে তো করেছেই, সেই সাথে তাদের বাচ্চা কাচ্চা পর্যন্ত হয়ে গেছে ! তাহলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমি কেন বিয়ে করছি না !
না, বিয়ে না করে মহাপুরুষ হয়ে থাকার কোন ইচ্ছে আমার কোন কালেই ছিল না এবং এখনও নেই । আমি বিয়ে করতে চাই, অবশ্যই বিয়ে করতে চাই কিন্তু …..
আমি অবশ্যই অস্বীকার করবো না যে সুন্দর মেয়েকে আমি বিয়ে করতে চাই না । অবশ্যই বিয়ের ক্ষেত্রে সুন্দর চেহারা আমার কাছে একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্ট ! আমাদের দেশে বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়েদের কেবল চেহারাটাই খেয়াল করা হয় আর ছেলেদের বেলাতে দেখা হয় তার চাকরিবাকরি । অন্য কিছু খেয়াল করা হলেও সেগুলো গৌণ বিষয় হয়ে দাড়ায় যদি এই দুই গুণ প্রবল হয় । যেমন কোন মেয়ে যদি খুব বেশি সুন্দরী হয় তাহলে পড়ালেখা একটু কম হলেও সেটা না দেখার ভান করা হয় অন্য দিকে কোন ছেলে যদি বিসিএস ক্যাডার হয় তাহলে তার বদ মেজাজ, চরিত্রে সমস্যাও যেন দেখেও না দেখার ভান হয় !
আমি বিয়ের ক্ষেত্রে কোন ব্যাপারটা সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেই? সেই বিষয়ে পরে আসছি তবে সেটা অবশ্যই এই কারণ না যে সবাই বিয়ে করে ফেলছে তাই আমাকেও বিয়ে করতে হবে ।
জীবনে আমি প্রেম পিরিতি কম করি নি । বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু থেকেই একজন মেয়েকে ভালোবেসেছিলাম তার সাথে ঘর বাঁধবো বলে । যদিও পরে একটা সময় বুঝতে পেরেছিলাম যে মেয়েটার সাথে জীবন সুখের হবে না তারপরেও আমি খুব করে চেয়েছিলাম যে এই মেয়েটার সাথেই যেন আমার বিয়ে হয় । কিন্তু উপরওয়ালা না চাওয়াতে শেষ পর্যন্ত হয় নি । প্রথম প্রথম কষ্ট লাগলেও এখন মনে হয় ভাগ্য ভাল যে বিয়ে হয় নি ।
বিয়ের ব্যাপারে আমার নিজেস্ব কয়েকটা পছন্দের ব্যাপার আছে । মেয়ে আমি বিশ্ব সুন্দরী চাই না । সত্যিই চাই না । আমি নিজে রাজপুত্র নই তাই বিশ্ব সুন্দরী চাওয়া আমার মানায় না । আমি সেটা খুব ভাল করে জানি । মোটামুটি একটা চেহারা হলেই চলবে । গায়ের রংও আমার কাছে কোন সমস্যা না । কেবল মেয়ের চেহারাতে যেন একটু মায়া থাকে । কত ফর্সা মেয়েকে দেখেছি যাদের চেহারাতে কোন মায়া থাকে না । চেহারাতে এই একটাই চাহিদা ।
সব থেকে বেশি যে চাহিদা সেটা হচ্ছে মেয়েটির সাথে যেন কথা বলে আমার মন ভরে । যেহেতু এক সাথে বসবাস করবো, তার সাথে যেন আমি কথা বলে দিন পর করতে পারি । এই কোয়ালিটিটা খুব রেয়ার ! খুব বেশি ! আমি আগেই বলেছি যে জীবনে আমি প্রেম কম করি নি । কিন্তু প্রায় সব প্রেমিকাদের বেলাতে একটা ব্যাপার খুব বেশি পরিলক্ষিত হতে যে তাদের সাথে আমি কথা বলার টপিক খুজে পেতাম না । ফোন করার ৫/১০ মিনিটের ভেতরেই আমি তাকে কী বলবো সেটা আর খুজে পেতাম না । তাহলে এই মেয়েটির সাথে আমি পুরো জীবন কিভাবে কাটাবো বলেন? বিয়ে মানে তো কেবল সেক্স না, তাই নয় কি? শারীরিক চাহিদা খুবই গুরুত্বপূর্ন একটা ব্যাপার । বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য এটাই কিন্তু এই চাহিদা তো আমি সারাদিন লাগবে না । দিনের ভেতরে হয়তো সবোর্চ্চ ৩০ মিনিট । কিন্তু বাকি ২৩ ঘন্টা আমি কী করবো ? এই জন্য এই প্রেমিকাদের বিয়ে করার কথা আমি কখনও মনে হয় নি । চাই নি । তবে সব প্রেমিকাদের বেলাতে কিন্তু এমন হয় নি ।
ব্লগে একটা মেয়ের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিলো । বয়সে আমার সমানই ছিল না । তার সাথে যখন আমি কথা বলা শুরু করলাম তখন আবিস্কার করা করলাম যে অন্য সবার মত মোটেও আমি টপিক হারিয়ে ফেলছি না । একটার পর একটা কথা আমি বলছিই । কোন সমস্যা হচ্ছে না । সেইবারই প্রথম আমার মনে হল যে এই মেয়েটাকে বিয়ে করা যেতেই পারে । কিন্তু সম বয়সী ছিলাম যেহেতু, আর মেয়েটি ঢাবিতে পড়তো । আমার আগেই ওর পড়ালেখা শেষ হয়ে গেল । আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জট ছিল । বিয়ে হয়ে গেল তার ।
তারপর আরও কয়েকজনের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে । কিন্তু সেই একই ব্যাপার । কথা বলি কিন্তু কয়েক মিনিট পরেই মনে হয় কী বলবো এর সাথে । এর ভেতরে একজন ছিল চট্টগ্রামে বাড়ি । দেখতে মাশাল্লাহ সুন্দর অনেক । কিন্তু সেই সৌন্দর্য্য আমাকে খুব বেশি দিন আকর্ষণ করতে পারে নি । সত্যি পারে নি কারণ তার সাথে কথা বলে আমি মজা পেতাম না । আগ্রহ পেতাম না । দয়া করে ভুল বুঝবেন না এখানে । আমি বলছি না এটা আসলে তার অপারগতা । কিংবা এটা আমার কোন সমস্যা । আসলে আমাদের মানসিক শ্রেণীটা আলাদা ছিল । আমার যে যে বিষয়ে কথা বলার আগ্রহ ছিল তার সেটা ছিল না । আবার সে যে যে বিষয় আগ্রহী ছিল আমি তা ছিলাম না । এই রকম ভাবে । এমনটা হয়েছে প্রতিটি মেয়ের বেলাতে । আমি আসলে ধরেই নিয়েছিলাম যে এমনই বুঝি হবে ।
তারপরই আমার আরেকজনের সাথে পরিচয় হল । ২০১৭ সালে । আমার সব হিসাব অলট পালট হয়ে গেল । এই মেয়েটির সাথে ২০২০ সাল পর্যন্ত আমি নিয়মিত কথা বলেছি । প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা । সত্যিই বলতে কি ঠিক যেমন মেয়ে আমি পছন্দ করতাম, চাইতাম এই এই মেয়ের মাঝে সব কিছু ছিল । সব । ড্রিম গার্ল যেটা বলে । সব চেয়ে বড় কথা তার সাথে কথা বলতে গিয়ে কোন দিন আমার এমনটা মনে হয় নি যে আমি কোন টপিক খুজে পাচ্ছি না । আমি মূলত ফোনে কথা বলতাম । ইন্টারনেটে না । ব্যাপারটা এমন হত যে আমরা খুব কমই ফোনের লাইন কাটতাম । সীম দিয়ে কথা বলার সময় একটা নির্দিষ্ট সময় পরপরই লাইন কেটে যায় । আমার বেলাতে তাই হত । কখন সময় চলে যেত আমরা দুজনের কেউই হিসাব পেতাম না । সত্যিই এই মেয়েটাকে আমি বিয়ে করতে চেয়েছিলাম প্রবল ভাবেই । কিন্তু এই ২০২১ সালে এসে জানতে পারলাম যে মেয়েটা আসলে ফেইক । সম্পূর্নই মিথ্যা । সে আমাকে যা যা বলেছে সব ছিল মিথ্যা । এই গল্প অন্য কোন দিন ।
এখন বাসা থেকে বিয়ের জন্য বলছে । অন্য সবাই বলছে যে বিয়ে কর বিয়ে কর । কিন্তু আমার ক্রাইটেরিয়াতে কাউকে আমি পাচ্ছি না । ঐ যে যার সাথে এক সাথে বসবাস করা যাবে, ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলা যাবে, আর টপিকের অভাব হবে না, কখনও আটকে যেতে হবে না, কথা খুজতে হবে না ।
বিয়ে করতে হয় বলে যদি বিয়ে করি সবাই বিয়ে করে ফেলছে বলে আমাকেও বিয়ে করতে হবে এই ভেবে যদি বিয়ে করি এবং বিয়ের পরে দেখা যায় যে তার সাথে কথা বলার টপিক খুজে পাচ্ছি না তাহলে তো জীবন বড় দুর্বিষহ হয়ে উঠবে । হ্যা এমন হতেই পারে যে যার সাথে বিয়ে হল সে আমার মনের মত হয়ে উঠলো যেমনটা চেয়েছিলাম তেমনটাই সে । এমনটা হতে পারে । কিন্তু তেমন টা নাও তো হতে পারে এবং না হওয়ার সম্ভবনাই বেশি । এই রিস্ক কি নেওয়া ঠিক হবে?
এই কারণেই আমি বিয়ে করছি না । চাইলে খুব জলদি বিয়ে করা যায় । বাসায় যদি বলি যে বিয়ে করবো, মাস খানেকের ভেতরে বিয়ে হয়ে যাবে । সত্যিই যাবে । কিন্তু তারপর?
প্রশ্ন হচ্ছে যদি কোন দিন আমার ক্রাইটেরিয়াতে না মিলে তাহলে আমি বিয়ে করবো কিনা ?
এমন কারো সাথে বিয়ে করবো না যার সাথে কথা বলে আমি শান্তি না পাই । বিয়ের আগে অবশ্যই তার সাথে মাস খানেক মিশবো আমি । মাস খানেক সময়ও লাগবে না । কেবল ফোনে সপ্তাহ খানেক কথা বললেই আমি টের পেয়ে যাবো ।
সব কিছু আমি কম্প্রমাইজ করতে পারি অন্তত এই ব্যাপারে কম্প্রমাইঝ হবে না । বিয়ে করবোই সঙ্গর জন্য । সেই সঙ্গই যদি না পেলাম তাহলে বিয়ে করে লাভটা কী? তবে আমি সত্যিই বিয়ে করতে চাই । যার সাথে মনের কথা বলা যায় বিরামহীন ভাবে তাকে বিয়ে করতে চাই । এমন কাউকে পেলেই বিয়ে করে ফেলবো । এখন এমন কাউকে পাওয়ার অপেক্ষা কেবল !
আপনার মনস্কামনা পূরন হোক