জীবনের এই পর্যায়ে এসে সানিয়া জীবনের কাছ থেকে আর কিছু চায় না । একটা সময় খুব করে কিছু একটার জন্য স্বপ্ন দেখেছিলো । নিজের মনের ভেতরে বুনেছিলো নতুন একটা স্বপ্ন । কিন্তু চোখের সামনে সেই স্বপ্নটা ভেঙ্গে যেতে দেখে আর কিছুই চাইতে সাহস হয় নি । কারন স্বপ্ন ভাঙ্গার কষ্ট আর দ্বিতীয়বার পেতে চায় না ।
কিন্তু সজিবের সাথে যখন আবার দেখা হয়ে গেল তখন সাথে সাথেই আবার পুরানো ক্ষতটা জেগে উঠলো । চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পরতে শুরু করলো আবার !
-আরে সানিয়া না ?
মুখটা খুব স্বাভাবিক করে একটু তাকালো একটু সজিবের দিকে । একটু হাসির ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করলো । ওকে বুঝতে দিতে চায় না কোন ভাবেই । সজিব আবারও বলে উঠলো
-আরে তাই তো ! সানিয়াই তো ! এখানে !
সজিব যেন চিৎকার করে উঠলো । সানিয়া সজিবের চিৎকার শুনে একটু অবাক না হয়ে পারলো না । সাজিব এতো স্বাভাবিক আচরন করছে কিভাবে ? ওর কি কিছুই মনে পড়ছে না ? নাকি মনে করতে চায় না । একটু মনকে শক্ত করে এগিয়ে গেল সজিবের দিকে ।
পারবতিপুর স্টেশনের ওয়েটিং রুমে এসে সজিবের সাথে এভাবে দেখা হবে যাবে সানিয়া ভাবতে পারে নি । মনের ভেতরে এই দেখা হয়ে যাওয়ার ভয়টা ছিল ওর অনেক দিন থেকেই । সেই মইণ স্যারের কোচিং সেন্টার যেদিন ছেড়েছিলো তারপর থেকে সারাটা সময় কেবল এই ভয় ছিল যদি সত্যিই কোন দিন দেখা হয়ে যায় তখন কিভাবে চোখে চোখ রেখে কথা বলবে সজিবের সাথে ! আর দেখা কি না হয়ে গেল এই রেল স্টেশনের ওয়েটিং রুমে !
সজিবকে ও চিনতো সেই কলেজ জীবন থেকে । যদিও ওরা ভিন্ন কলেজে পড়তো তবে একই স্যারের কাছে কোচিং করতো । একই সাথে একই ব্যাচে । অপুর বন্ধু ছিল । সেই হিসাবে সজিবের সাথে কথা হত । কথা বার্তায় দারুন চটপটে ছিল । অল্প সময়েই সবার সাথেই সজিবের খুব ভাব হয়ে গেল ।
তারপরই সানিয়া প্রথম চিঠিটা পেল ওর বইয়ের মধ্যে । কে যেন চিঠিটা ওর ব্যাগের ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছে । কখন দিয়েছে সানিয়া বলতে পারবে না । রাতের বেলা পরতে গিয়ে চিঠিটা আবিস্কার করে । প্রথমে খুব রাগ হলেও কৌতুহল থেকে চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করে । এতো চমৎকার করে কথা গুলো লেখা ছিল যে সানিয়ার মনে আর সেই বিরক্তিটা আর থাকে নি । সারাটা রাত কেবল চিঠির কথা গুলোর কথা ভেবে কাটিয়ে দিলো সেদিন রাতে । পর কয়েক দিন খুব মনযোগ দিয়ে খোজার চেষ্টা করলো কে চিঠিটা রেখে যায় সেটা খোজার জন্য । কিন্তু কিছুতেই ধরতে পারলো না । কাউকে ঠিক লজ্জার কারনে বলতেও পারলো না । এমন কি ওর বন্ধু অপুকেও বলতে পারলো না ।
এভাবে পুরো ফার্স্ট ইয়ারটা কেটে গেল । এর মাঝে বেশ কয়েকটা চিঠি এসে হাজির হয়েছে । তবে একদিন সানিয়া ঠিক ঠিক জেনে গেল । আসলে নিজের চোখে সজিবকে দেখে ফেললো ওর বইয়ের ভেতরে খাম রাখতে । খুব ইচ্ছে করছিলো তখনই হাতে নাতে ধরতে । কিন্তু ধরলো না । তবে ওর মনে একটা অন্য রকম আনন্দ কাজ করছিলো । তারপরও চিঠি আসছিলোই । সানিয়ার এবার মজাই লাগছিলো । কারন সাজিব ভেবেছিলো যে সানিয়া হয়তো জানে না কিন্তু সানিয়া সবই দেখছিলো আর মুচকি মুচকি হাসছিলো ।
এই ব্যাপারটা প্রথম আলাপ করে অপুর সাথে । অপু খানিকটা অবাক হয়ে যায় । সানিয়া হাসতে হাসতে বলে, তোর ঐ বন্ধুকে একদিন হাতে নাতে ধরবো বুঝলি । তুই কিন্তু কিছু বলবি না খবরদার ! আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে চিঠি লেখার মজা বুঝাবো !
তারপর একদিন চিঠি আসা বন্ধ হয়ে যায় । ঠিক তার পরের সপ্তাহেই সানিয়া সজিবের সাথে অন্য একটা মেয়েকে আবিস্কার । সজিবের সাথে কথা বলতেই ও সজিবের কলেজে হাজির হয় । সেখান থেকেই মেয়েটার খোজ পায় । মেয়েটা নাকি সজিবের প্রেমিকা । ওদের কিছু দিন ধরে প্রেম চলছে ।
সানিয়ার পুরো দুনিয়াই যেন নড়ে উঠেছিলো । চিঠি গুলো তাহলে কি সত্যিই মিথ্যা ছিল ? এতো আবেগ দিয়ে লেখা চিঠি গুলো !
সব মিথ্যা ! মানুষ মানুষের অনুভূতির সাথে এভাবে প্রতারনা কিভাবে করতে পারে ! চিঠি গুলো পড়তে পড়তে সানিয়ে কবে যে সজিবের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলো ও বলতেও পারবে না । তাই ধাক্কাটা সামলাতে ওর একটু কষ্ট হয়েছিলো ।
তারপর আর কোটিংএ যায় নি । ও সবার সাথেই যোগাযোগ বন্ধ করে করেছিলো এমন কি অপুর সাথেও । সজিবের বন্ধু বলেই হয়তো অপুকেও আর তখন সহ্য হত না । তারপর এতো গুলো বছর কেটে গেছে । ইউনিভার্সিটি পার করে জবে ঢুকেছে ও । নতুন করে আর প্রেমে পড়ে নি । বাসা থেকে সানিয়ার বিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে কিন্তু ওকে রাজি করাতে পারছে না কিছুই । ইচ্ছে করে চাকরি নিয়ে চলে এসেছে এই গ্রামে । স্বেচ্ছায় নির্বাসনে !
সজিব ওর সাথে খুবই স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলে চলেছে । বিয়ে করেছে সম্প্রতি । এখানে এসেছিলো একটা কাজে । এখন ফেরৎ যাচ্ছে । সানিয়ে এখানে থাকে জেনে অবাক হল । এই অজ পাড়াগায়ে একা একা কেন থাকে সেটাও জানতে চাইলো । সানিয়া এড়িয়ে গেল সে কথা । ও ঠিক করলো যে আগের প্রসঙ্গ তুলবে না । তুলে কি লাভ এখন আর !
তারপর এল অপুর প্রসঙ্গ ! সজিব বলল
-ও কোথায় আছে বলতে পারো ? তুমি যে কোচিং ছেড়ে দিলে ও আর আসতো না । ইন্টারের পর কোথায় যে গেল আর খোজই পেলাম না ।
সানিয়া একটু জানতো । পরীক্ষার পর একবার এসেছিলো ওর সাথে দেখা করতে । ওকে বলেছিলো যে ও জার্মানি চলে যাচ্ছে । অপুর বড় মামা থাকে সেখানে । সেখানেই পড়াশুনা করবে ! সানিয়ে বেশি আগ্রহ দেখায় নি । তখনও অপুকে কেবল সজিবের বন্ধুই মনে হত ওর । তারপর অবশ্য সানিয়ার মনে হয়েছিলো যে ও অপুর সাথে খানিকটা কঠিন ব্যবহারই করেছিলো । ওর তো দোষ ছিল না কোন !
সজিব বলল, এতো চাপা ছেলে আমি নিজে কোন দিন দেখি নি । আর এতো সংশয় মনে ! তোমাকে কোন দিন সাহস করে বলতে পারে নি মনের কথা । তারপর আমার কথা মত তোমাকে চিঠি লিখলো আর আবার কাধে দায়িত্ব পড়লো সেটা তোমার বইয়ের ভেতরে রেখে আসার !
সানিয়ার মনে হল ও যেন ভুল শুনলো । কান গরম হয়ে গেল সাথে সাথে । বুকের স্পন্দনটা সাথে সাথে বেড়ে গেল বহু গুণে ! সানিয়া বলল
-কি বললে তুমি ?
সজিব এবার অবাক হয়ে বলল
-কেন, তুমি জানো না ? ও চিঠিতে ওর নাম লিখে নি কিংবা বলে নি কিছু তোমাকে পরে ?
সানিয়ার চোখ দিয়ে তখন পানি পরতে শুরু করেছে । সে কোন মতে বলল
-ঐদিন তোমাকে আমি চিঠি রাখতে দেখে ফেলেছিলাম । ভেবেছিলাম তুমিই লিখছো ঐ চিঠি গুলো ! আমিও তোমাকে পছন্দ করতে শুরু করি । এ কথা অপুকে আমি বলেছি !
কিছুটা সময় দুজনের কেউ কোন কথা বলল না । সজিব বলল, ছোট বেলা থেকে অপু অনেক চাপা আর অভিমানী । তুমি আমাকে ভুলে পছন্দ করেছো এটার জন্যই হয়তো তোমাকে আর কিছু বলে নি ! একা একাই কষ্ট পেয়ে গেছে । বেটা ছাগলটা যদি সাহস করে একটু তোমাকে বলতো ….
সানিয়া কি বলবে কিছুই খুজে পেল না । বারবার কেবল সেই অপুর চেহারাটা মনে করার চেষ্টা করতে লাগলো !
আরও কিছু সময় পার হয়ে গেল । সজিবের ট্রেনর হুইসেল দিয়ে দিয়েছে । সজিব সানিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল
-আমি আসি । যদি অপুর খোজ পাই তোমার কথা বলবো । কেমন !
সানিয়া উঠলো না। বসেই রইলো । এতোটা দিন ও একটা ভুল ধারনা নিয়ে কাটিয়ে এসেছে । কিন্তু আর না । এভাবে জীবন নষ্ট করার আর মানে হয় না । সানিয়াও উঠে দাড়ালো সাথে সাথে । ট্রেনটা এখনও ছেড়ে যায় নি । একটু একটু নড়তে শুরু করেছে । সানিয়ার মনে হল আর এক মুহুর্ত নির্বাসন নয় । আজ থেকেই ও অপুর খোজ শুরু করবে । খুজে বের করে প্রথমে একটা কষে চড় মারবে । তারপর অন্য চিন্তা ।
সানিয়া খানিকটা দৌড়াতে থাকে । এই ট্রেনটাতে ওকে উঠতেই হবে ! এখান থেকেই অপুর খোজ শুরু করতে হবে ।
এই গল্পটা কার থিমে লিখেছিলাম মনে নেই । প্রতি ভেলেন্টাইনে পাঠকদের কাছ থেকে থিম নিয়ে তাদের নাম দিয়ে গল্প লিখে দিতাম । সম্ভব সানিয়া নামের কোন মেয়ে পাঠিয়েছিল এই থিমটা ।
Very nice story
ভাইয়া এই গল্পটা কি শেষ করা যায়?
মানে পুরো গল্পটা কি লেখবেন?
এই গল্প তো এখানেই শেষ । এটা অন্য একজন থিম পাঠিয়েছিল । সেখান থেকেই লেখা ।