এলিয়েনটি যে পথ দেখিয়েছিল..

oputanvir
4.8
(45)

কম্পাসটার দিকে ভাল করে তাকিয়ে রইলাম । এখনও ঠিক বুঝতে পারছি না যে আমার ভুলটা কোথায় হল ! এমন তো হওয়ার কথা না । আমি ঠিক যেই দিক দিয়ে এসেছি সেই দিকেই ফেরার চেষ্টা করছি । কিন্তু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মনে হল যে এতো সময়ে আমার ঠিক ঠিক পাড়াতে পৌছে যাওয়ার কথা । কিন্তু আমি পৌছাই নি ।

আমার মত নতুন মানুষের জন্য পাহাড়ে পথ হারানোটা স্বাভাবিক । আমাদের গাইড বলেছিলো যে তারা কখনই পাহাড়ে পথ হাড়ায় না । কারণ এক পাড়া থেকে অন্য পাড়াতে যাওয়ার জন্য কেবল একটাই পথা । যে পথ না চিনবে সেও চলে যেতে পারবে ! তাহলে আমার বেলাতে এমন কেন হল ঠিক বুঝলাম না । গাইডকে বলেছিলাম যে ঘন্টা খানেক এদিক ওদিক হাটাহাটি করবো তারপর আবার চলে আসবো পাড়াতে । সে অবশ্য সাথে আসতে চেয়েছিলো । আমার হারিয়ে যাওয়া কিংবা অন্য কোন বিপদে নিয়ে সে চিন্তিত । আমার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে সে বর রকমের বিপদে পড়বে ।

আমি আরও কিছু সময় এদিক ওদিক হাটা হাটি করলাম । কিন্তু কোন লাভ হল না । মনে হল যেন আমি একই জায়গাতে আটকে গেছি । কিছুতেই বের হতে পারছি না । এদিকে দিনের আলো কমে আসছে দ্রুত । যদি অন্ধকার হয়ে যায় তাহলে এই পাহাড়ে সত্যিই আমি বেশ বিপদে পড়বো । ছুটি কাটাতে এসে কী বিপদে পড়লাম !

নীলা আমার এইবারের ছুটি কাটানোর প্লানটা মোটেও পছন্দ করে নি । বারবার আপত্তি করছিলো । এমনকি আমি যখন বান্দরবান শহরে এসে নামলাম সে আমার সাথে সাথে এসেছে । আমি সেখান থেকে সোজা চলে এসেছি সায়রুতে । আগে থেকেই আমার জন্য রুম বুক করা ছিল । নীলা আমার সাথে সায়রু পর্যন্ত এল । আরেকবার আমার সিদ্ধান্ত বদলানোর চেষ্টা করলো । কিন্তু কোন কাজ হল না দেখে মন খারাপ করে আবার গাড়ি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেল । মেয়েটা আমার সেক্রেটারি হলেও আমাকে নিয়ে তার চিন্তার শেষ নেই । ও থাকতে আমাকে অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা করতে হয় না । আমার সব কিছু সেই সামাল দেয় । এই যে আমি এক সপ্তাহের জন্য একেবারে গায়েব হয়ে যাবো এই সময়ে আমার সব কিছু সে একাই সামাল দেবে । আমার কোন চিন্তা করতে হবে না ।

একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর আমি সব কিছু থেকে একেবারে নিজেকে গুটিয়ে নিই । এইবারও সব কিছু থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতেই এখানে চলে আসা । থানচি থেকে এসেচি রেমাক্রিতে । তারপর সেখান থেকে ঘন্টা তিনেক পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি দালিয়ান পাড়াতে । বান্দরবানে যাটা ট্যুর দেয় তারা রেমাক্রি হয়ে নাফাকুমের দিকে যায় বেশি । এই দালিয়ান পাড়াতে খুব বেশি লোকজন আসে না । আসলেও তা কেবল উইকএন্ডে । এখন যেহেতু উইকডে তাই এই পাড়াতে বাইরের লোকজন নেই কেউ । কেবল আমি রয়েছি । পুরো একটা সপ্তাহ এখানে কাটানোর ইচ্ছে আমার । সাথে করে কয়েকটা বই নিয়ে এসেছি । সারাদিন শুয়ে বসে বই পড়লো । পাহাড়ি দৃশ্য দেখবো । পাহাড়ি রান্না খাবো । দুইদিন এমন করে কেটে গিয়েছিল । তারপর মনে হল একেবারে শুয়ে বসে না থেকে এদিক ওদিক থেকে হেটে আসি । বেশি দুরে যাবো না । নির্জন পাহাড়ে ঘুরে বেড়াবো । এমন পরিকল্পনা নিয়েই বের হয়েছিলাম । পাড়া থেকে বেরিয়ে ঘন্টা দুয়েক হেটে বেড়ালাম । একটাই পথ ছিল । যেই পথ দিয়ে গেলাম সেই পথ দিয়েই ফিরে আসা চেষ্টার করলাম । তবে ঘন্টা দুই পার হয়ে গেলেও আমি পাড়ার কাছে এসে পৌছালাম না । যখন আরও ঘন্টা দুয়েক পার হল তখন আমি একটু চিন্তার ভেতরে পড়লাম ।
বুঝতে পারলাম যে পথ হারিয়েছি!

পাহাড়ে পথ হারালে এদিক ওদিক যেতে নেই । যেখানে পথ হারানোর কথা মনে হবে সেখানেই বসে অপেক্ষা করতে হয় । যে আপনার খোজে বের হয়ে তাহলে তার জন্য আপনাকে খুজে বের করা সহজ হবে । আমি তাই বসে পড়লাম পথের উপরেই । আমার গাইড এতো সময়ে ঠিক ঠিক আমার খোজে বের হয়ে গেছে । আমি কোন পথে গিয়ে পথ হারাতে সেটাও বুঝতে পারবে আশা করি । তাই বসে থাকাটাই ভাল সব থেকে ।

এতো নির্জন চারিদিক ! শেষ কবে এতো নির্জনা উপভোগ করেছি আমার মনেও নেই । আমার জীবনটা সব সময় মানুষকে নিয়ে । আমার চারিদিকে সব সময় কেবল মানুষ আর মানুষ । যেখানে যাই আমার মনে শান্তি নেই কোথাও । আন্তর্জাতিক ক্ষ্যাতিসম্পন্ন ক্রিকেট প্লেয়ার আমি । আমাকে দেশের সবাই চেনে । যে কোন স্থানে গেলেই আমাকে ঘিরে ধরে । আমার সাথে কথা বলতে চায়, ছবি তুলতে চায় । আমার অটোগ্রাফ চায় । একটা সময়ে আমি নিজে খুব উপভোগ করেছি এই জনপ্রিয়তা । কিন্তু যতই দিন গেছে ততই আমার কেন জানি মনের ভেতরে একটা অশান্তি কাজ করা শুরু করেছে । গাড়ি দিয়ে রাস্তায় নামলে আমি যখন রাস্তায় পাশে কাউকে হেটে যেতে দেখি তখন আমার মনে একটা সুক্ষ ঈর্ষাবোধ জন্ম নেয়। মনে হয় ঐ মানুষটা কী শান্তি নিয়ে রাস্তায় হেটে বেড়াচ্ছে, একা মনে রেস্টুরেন্টে কফি খেতে পারছে । আমি পারছি না । আমি নিশ্চিত আমার এই ক্ষ্যাতি আর জনপ্রিয়তা দেখে ঐ মানুষটাও কোন না কোন ভাবে ঈর্ষা বোধ করে । আসলে মানুষ এমনই । কখনই নিজের অবস্থান নিয়ে সুখী নয় । আমিও হয়তো তাই । তবে মাঝে মাঝে আমার শান্তি দরকার হয় । তখন সব কিছু থেকে এমন ভাবে দুরে চলে আসি । বিদেশে গেলে অবশ্য এই সমস্যাটা কম হয় । তবুও পুরো পৃথিবীতেই ক্রিকেট পাগল মানুষ আছে । কেউ না কেউ ঠিকই চিনে ফেলে ।

ইদানীং আরও একটা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে । আমার মা আমার বিয়ে নিয়ে বড় তোড়জোড় শুরু করেছেন । এবার আমার বিয়ে তিনি দিয়েই দিবেন এমন একটা অবস্থা । সত্যি বলতে কী আমাকে বিয়ে করার জন্য মেয়ের অভাব হবে না । নীলার কাছ থেকে শুনেছি যে আমার মায়ের কাছে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন মেয়ের বাবারা এসে প্রস্তাব দিয়ে গেছে । তাদের ভেতরে একজন হচ্ছে দেশের স্বনামধন্য নায়িকা আইরিন রহমান । আরেজন আছে শিল্পপতির মেয়ে নাদিয়া আহসান !
নীলা জানিয়েছে এই দুজনকেই নাকি আমার মা পছন্দ করেছে । এই দুইজন আমি বলতে নাকি পাগল । আইরিনের সাথে আমার পরিচয় আছে । একটা বিজ্ঞাপনে আমরা এক সাথে কাজ করেছিলাম । তারপর থেকে কথা হয়েছে আমাদের মাঝে । তবে নাদিয়ার সাথে আমার আগে কথা হয় নি ।

আমার চিন্তা আসলে অন্য স্থানে । এই যে এতো গুলো মেয়ে আমাকে পছন্দ করে এটা কী আমার জন্য?
না আমার জন্য নয় । আমার এই ক্ষ্যাতি আর জনপ্রিয়তার জন্য । আমি নিশ্চিত যেদিন আমার এই ক্ষ্যাতি চলে যাবে আমার প্রতি এদএর আগ্রহ একেবারে নষ্ট হয়ে যাবে । আমার দিকে আর ফিরেও তাকাবে না । এই দুইজন মেয়ে আইরিন আর নাদিয়া, যারা এখন আমাকে বিয়ে করার জন্য মুকিয়ে রয়েছে তখন হয়তো ফিরেও তাকাবে না । আমি সব সময় আসলে এমন একজন মেয়েকে চেয়েছি যে কেবল আমাকে ভালোবাসবে । আমার ক্ষ্যাতি চলে গেলেও আমাকে ছেড়ে যাবে না । এমন মেয়ে কিভাবে পাবো? কোথায় পাবো?

এই সব চিন্তা করছি তখনই মনে হল চোখের কোনে কিছু যেন একটা নড়ে উঠলো । একটু চমকে উঠলাম আমি । আশে পাশে কোন প্রাণী দেখি নি আমি । এমন কি একটা পাখিও না । যদিও পাখির ডাক কানে আসছে । কী নড়লো ?
আমি চটকে বাঁ দিকে তাকালাম ।

কয়েক সেকেন্ড কাটলো এমন করে । তারপরই থপ করে উঠলো আমার বুকটা !
ওটা কি !

প্রাণীটার গায়ের রং হালকা সবুক রংয়ের । প্রানীই বলা চলে ওটাকে ! লম্বা হয়ে তাকিয়ে রয়েছে আমার দিকে । দেখতে অনেকটা গাছ আর মানুসের মাঝামাঝি পর্যায়ে । গার্ডিয়ান অব গ্যালাক্সি মুভির গ্রুটের মত ! আমার বুকের মাঝে টিমটিম করা শুরু করলো । আমি কি করবো ঠিক বুঝতে পারলাম না । আমি কী জ্ঞান হারিয়ে ফেলবো এখানে?
যদি ওটা আমাকে খেয়ে ফেলে !

তখনই কেউ যেন আমার মাথার ভেতরে বলে উঠলো, আচ্ছা আপনারা পৃথিবীবাসীরা এমন কেন ভাবেন? অন্য রকম কিছু দেখলে কেন ভাবেন যে সেটা আপনাকে খেয়ে ফেলবে !
আমি এদিক ওদিক তাকালাম ।
কে বলল কথাটা !
-আমি বলেছি !
-আপনি কে?
-যাকে আপনি গ্রুট বলে ভাবছেন । আমি মোটেই গ্রুট নই । আমি একজন ‘ফিয়োসোটগটারকড’ ।
-কী?
-বাদ দিন । এই জিনিস আপনার মুখ দিয়ে বের হবে না । যাইহোক । কথা হচ্ছে আমি আপনার কোন ক্ষতি করতে চাই না । আমি একটা কাজে এসেছি । কাজ শেষ করে চলে যাবো । আপনার সাথে আমার দেখা হওয়ার কথা ছিল না । আমি যে টাইমলুপ সৃষ্টি করেছি আপনি সেটার ভেতরে ঢুকে পড়েছেন ।

আমার বুকের ভেতরের ভয়টা আস্তে আস্তে কমে এল । বিশেষ করে সামনে দাড়ানো ঐ জিনিসটার সাথে কথা বলতে পেরে সব কিছু কেমন যেন স্বাভাবিক হয়ে আসছে । সত্যি তাই আমারা যা ভয় পাই তা যদি আমাদের সাথে সরাসরি কথা বলে তাহলে সেই ভয়টা আসলেই কমে যায় অনেকটা । আচ্ছা তাহলে ওটা একটা এলিয়েন ? অন্য গ্রহ থেকে এসেছে ? আমাদের পৃথিবীতে এসেছে কিছু নেওয়ার জন্য? কী নেওয়ার জন্য !
কী নিতে এসেছে ! আমার কৌতুহল হল খুব !
আবারও সেটা বলল, আসুন আপনাকে দেখাই কী নিতে এসেছি !
আমি উঠে দাড়ালাম । আস্তে আস্তে আর ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেলাম সেটার কাছে । দেখলাম ওটা খুব মনযোগ দিয়ে মাটি থেকে কিছু যেন তুলছে । ঘাস জাতীয় কিছু উদ্ভিদ । তবে একেবারে ঘাসও নয় ! আমি ঠিক চিনতে পারলাম না ।
দেখলাম গ্রুপ সেই ঘাস জাতীয় গাছ থেকে খুব সাবধানে মাথার অংশটা তুলে নিচ্ছে তারপর সেটা একটা মুখ বন্ধ স্টিলের বক্সের ভেতরে রাখছে । খুব যত্ন সহকারে কাজটা করছে সে !

সে বলল, এটা খুবই রেয়ার প্লান্ট । একমাত্র আপনাদের পৃথিবীতেই জন্মে । অন্য কোন গ্রহে নয় ।
-এটা দিয়ে কী হবে?
-এটা একটি মরন ব্যাধী সারানোর ঔষধ । এটাই নিতে এসেছি ।

আমি তখন আবিস্কার করলাম যে আমি কথা বলার জন্য আমার মুখ নাড়ছি না । কেবল মাথার ভেতরে চিন্তা করছি আর সামনেই এই গ্রুটও একই ভাবে চিন্তা করছে । সরাসরি আমার মাথার ভেতরে কথা ঢুকিয়ে দিচ্ছে ।
গ্রুট আবার বলল, আমি মোটেই গ্রুট না । আমাকে গ্রুট ডাকা বন্ধ করুন ।
-আচ্ছা ।
-চুপচাপ বসে থাকুন । আমার কাজ শেষ হলেই আমি চলে যাবো । তখন আপনি ফেরার পথ খুজে পাবেন!
-আচ্ছা এই জন্য ফিরতে পারছিলাম না ?
-জ্বী ! এখানে আসলে আপনার সাথে দেখা হওয়ার একটা সম্ভবনা ছিল জেনেই এসেছি । অন্য পৃথিবী গুলোতে সেই সম্ভবনা গুলো আরও বেশি ছিল ।
-অন্য পৃথিবী বলতে? আরও পৃথিবী আছে ?
-আপনাদের জ্ঞান বিজ্ঞান আসলে এখনও এতোদুর পৌছায় নি । তাই এই অন্য পৃথিবী সম্পর্কে আপনাদের কোন ধারণা নেই । সহজ ভাষায় বললে আপনাদের এই পৃথিবীতে যেমন আপনি আছেন ঠিক এইরকম আপনি এবং আপনার বন্ধু পরিবার সমেত আরও অসংখ্য পৃথিবীতে বিদ্যমান !
-সত্যি নাকি?
-শত ভাগ সত্য।
-প্যারালাল ওয়ার্ল্ড ?
-অনেকটা । সেখানে আপনি আছেন এই রকম ।
-তার মানে এখানে যা হচ্ছে ওখানেও তাই হচ্ছে ।
-একেবারে হুবাহু যে হচ্ছে তা নয় । তবে কাছাকাছি হচ্ছে । যেমন খুব কাছের একটা পৃথিবীতে এই সময়ে আপনি এখানে এই পাহাড়ে ঘুরতে এসেছেন তবে সাথে আপনার গাইড রয়েছে । আপনি একা আসেন নি । এমন আরেকটা আছে যেখানে আপনার সাথে পুরো একটা দল আছে । এই রকম অনেক পৃথিবীতে একই সাথে কাছাকাছি ঘটনা ঘটছে । আমি এখানে আসার আগে সব গুলো পৃথিবীট ঘটনা কম্পেয়ার করেই এসেছি । আমার হাতে সময়টা একটু কম । এই প্লান্টটা দেখছেন এটা খুব কম সময়ের জন্যই ফোটে এবং বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জন্মে । সময় পার হয়ে গেলে আবারও সামনের বছরে আসতে হবে । তাই রিস্ক নিয়ে আপনাকে লুপের ভেতরে ঢোকাতে বাধ্য হয়েছি । আমরা খুব সাধারনত মানুষের সাথে ইন্টারসেক করি না । তবে আপনার মানসিক অবস্থা বেশ মজবুত । আপনি ধাক্কাটা সহজেই সামলাতে পারবেন বলেই ধারনা করেছিলাম । হয়েও তাই ।
-আচ্ছা । তার মানে আপনাদের কাছে সামনে কী হবে সেটার দেখার যন্ত্র আছে । আমাদের কাছে অনেক কিছুই আছে ! এমন সব টেকনোলজি যা আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না ।
-আচ্ছা ।

আমি আর কী বলবো সেটা বুঝতে পারছি না । আমার মানসিক অবস্থা নাকি আসলেই মজবুত । তারপরেও আমার এইসব হজম করতে একটু সময় লাগছে বইকি ! আসলেই কী এমন কিছু হচ্ছে ? নাকি আমি স্বপ্নে দেখছি । আচ্ছা এমনও তো হতে পারে যে পথ হারানোর পরে আমি আসলে অজ্ঞান হয়ে গেছি, কিংবা ঘুমিয়ে পরেছি । তার ভেতরেই আমি স্বপ্নে দেখছি ।
গ্রুট আবার বলল, আপনি মোটেই স্বপ্নে দেখছেন না । বুঝেছেন ?
-জ্বী বুঝতে পেরেছি ।

দেখলাম গ্রুট আরও বেশ কিছু সময় ধরে সেই প্লান্ট নিয়ে কাজ করে গেল । তারপর বক্সটা বন্ধ করে কি যেন সুইচ চাপ দিলো । আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আপাতত কাল শেষ । এখন এগুলো প্রোসেস হতে একটু সময় লাগবে । আসুন আপনাকে একটা জিনিস দেখাই ।

এই বলে লোকটা একটু দুরে গিয়ে বসলো । আমাকেও তার পাসে বসতে বসলো । আমি চুপচাপ বসে পড়লাম । সে নিজের হাতে সেট করা একটা বড় ঘড়ির মত জিনিসটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিল । তারপর বলল, আপনাকে কিছু ভবিষ্যৎ দেখাই । সামনে কি হবে । আপনার মনের ভেতরে একটা অশান্তি কাজ করছে আমি জানি ।
-কিভাবে জানেন?

প্রশ্নটা করা উচিৎ হল না । তবুও মুখ থেকে বের হয়ে গেল । সে সরাসরি আমার মাথার ভেতরে ঢুকে কথা বলছে । সে আমার ব্রেনে কি হচ্ছে সেটা ঠিকই বুঝতে পারার কথা । গ্রুট একটু হাসলো । মুখ খুলল না বটে তবে আমি তার চেহারা দেখেই বুঝতে পারলাম যে সে হাসছে । গ্রুট বলল, আপনাকে ভবিষ্যৎ দেখালে আপনার একটা সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে । তবে আপনার এই পৃথিবীর ভবিষ্যৎ আপনাকে আমি দেখাবো না । এটা ভাল হবে না মোটেও । সামনে কি হবে সেটা জানতে পারলে আপনি সেটা বদলানোর চেষ্টা করবেন তাতে প্রকৃতিতে একটা কেয়োসের সৃষ্টি হবে । এটা মোটেও ঠিক হবে না । আপনাকে বরং অন্য পৃথিবীর ভবিষ্যৎ দেখাই । সেখানে আপনার কোন হাত নেই । আপনি কিছু করতে পারবেন না ।

আমি আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে গেলাম । গ্রুট নিজের হাতের ঘড়ির মত যন্ত্রটা ঘোরাতে শুরু করলো, আমি লক্ষ্য করলাম আমার চারিপাশের পরিবেশ হঠাৎ করেই বদলে গেছে ।
গ্রুপ বলল, আপনি কেবল এখানের দর্শক । আপনাদের এখানে ভার্চুয়াল রিয়ালিটি আছে না অনেকটা সেই রকম । আপনি ওদের দেখছে পারবেন কিন্তু ওরা আপনাকে দেখতে পাবে না ।
আমি চুপ করে দেখতে শুরু করলাম ।
মোট এগারোটা পৃথিবীতে দেখতে পেলাম আমি । সব ঘটনা আামকে কেন্দ্র করে । সব গুলোতে আমি রয়েছি, একেবারে হুবাহু না হলেও কাছাকাছি । যেমন আমি বিখ্যাত প্লেয়ার, জনপ্রিয় । আমার পরিচিত মানুষজন সব প্রায় একই । আবার কিছু পরিবর্তনও আছে । যেমন একটাতে আমার সাথে আইরিনের বিয়ে হয়েছে অন্যটাতে হয়েছে নাদিয়ার সাথে । একটাতে আমার ক্যারিয়ার চলছে ভাল । অন্য একটাতে চলে নি ।

কত সময় কেটে গেল সেটা আমি নিজেও বলতে পারবো না । দেখলাম গ্রুট তার ঘড়ি বন্ধ করলো । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, এবার আশা করি আপনার সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে । যাইহোক, আমার যাওয়ার সময় হয়েছে । আমি গেলাম !
আমি বললাম, একটা ছবি তুলতে দিবেন প্লিজ !
গ্রুট বলল, লাভ হবে না । আপনার মোবাইল কাজ করবে না । আমরা যখনই আপনাদের এখানে আসি তখন একটা নির্দিষ্ট সীমানা পর্যন্ত আপনাদের সব ডিভাইস কাজ করা বন্ধ হয়ে যায় । আর আমার সাথে ছবি তুললেও কেউ বিশ্বাস করবে না । বলবে যে ফেইক । কী দরকার বলুন ঝামেলা বাঁধানোর ! আমরা কারো ক্ষতি করি না । গোপনে আসি আর গোপনে চলে যাই ! মানুস জানলেই বিপদ বেশি !
-তাও ঠিক !
-ভাল থাকুন । আসি তাহলে !

আমি কিছু বলার আগেই দেখলাম গ্রুপ কেমন করে গায়েব হয়ে গেল চোখের সামনে । আমি কয়েকবার খোজার চেষ্টা রকলাম বটে কিন্তু কাজ হল না ।

-স্যার স্যার !

চোখ মেলে দেখি আমার গাইড আমার মুখের উপর তাকিয়ে রয়েছে । আকাশের দিকে তাকিয়ে বেশ খানিকটা অবাক হয়ে গেলাম । এতো সময়ে অন্ধকার হয়ে যাওয়ার কথা অথচ মনে হচ্ছে যেন সবে মাত্র বিকেল হয়েছে । গাইড আমার দিকে তাকিয়ে বলল, রাস্তায় উপরে ঘুমায়া পড়ছিলেন স্যার ?
-তাই নাকি?
-আমি আইসাই দেখি আমি এইখানে এইভাবে ঘুমাইতাছেন । তাই আর জাগাই নাই । আরও সামনে যাইবেন নাকি ফিরবেন?
-চল ফিরে যাই !
-চলেন !

হাটার সময় মাথার ভেতরে নানা রকম প্রশ্ন কাজ করছিলো । আমি যা দেখলাম এতো সময়ে তা কেবলই স্বপ্ন ছিল নাকি সত্যি ? সময়ের হিসাবটা কোন ভাবেই মিলাতে পারছি না । গ্রুট বলেছিলো টাইম লুপের ভেতরে ঢুকে পড়েছি তাই হয়তো এমন হয়েছে ।

আমার আরও চারদিন থাকার কথা ছিল । তবে আমি পরদিনই ফিরে গেলাম । ঢাকা পৌছাতে পৌছাতে সকাল হয়ে গেল । আমি একটা সিএনজি নিয়ে সোজা হাজির হলাম নীলার বাসায় । গেটের দাওয়ান আমাকে দেখে খুব বেশি অবাক হল । নিজের চোখকে ঠিক যেন বিশ্বাস করতে পারছে না । আমাকে ঢুকতে দিলো । তবে যাওয়ার আগে একটা ছবি তুলতে হল তার সাথে । এবং ভেতরে ঢোকার আগে দারোয়ানকে আমি একটা কাজ দিয়ে বাইরে পাঠালাম !

আমি নীলার ফ্ল্যাটের সামনে দাড়িয়ে কলিংবেল চাপলাম । নীলা দরজা খুলল একটু পরে । এই ফ্ল্যাটে ও আরেকজন রুমমেট নিয়ে থাকে যতদুর জানি । আমাকে দেখে বেশ চমকে উঠলো । বলল, স্যার আপনি ! কখন এলেন ? আমাকে ফোন করেন নি কেন?
-ভাবলাম যে তোমাকে সারপ্রাইজ দেই । ভেতরে আসবো?
-হ্যা হ্যা আসুন !

একটু পরে নীলা একটু গুছিয়ে ফিরে এল । হাতে কফির কাপ । ওর হাতের কফি খেয়ে আমার অভ্যাস ।
আমার পাশে বসতে বসতে বলল, সব কিছু ঠিক আছে স্যার !
কফিতে চুমুক দিতে দিতে বললাম, আমি ঠিক করেছি বিয়ে করবো!
লাইনটা বলার সাথে সাথে দেখলাম নীলার মুখটা একটু যেন মলিন হয়ে গেল । তবে সে সামলে নিলো সাথে সাথেই । বলল, মেয়ে কি ঠিক করে ফেলেছেন ?
-হ্যা ।
-আইরিন নাকি নাদিয়া? কাকে?
-এদের কাউকে না ।
-তাহলে ?
-আমি ঠিক করেছি তোমাকে বিয়ে করবো !

নীলা যেন একটা ধাক্কার মত খেল । আমি ওর অবাক হওয়াটা উপভোগ করলাম বেশ । ও হয়তো কোন দিন এটা আশা করে নি ।
-আর…. আর ইউ সিরিয়াস?
-শতভাগ ! তোমাকেই বিয়ে করবো এবং আজই । তোমার বাড়ির দারোয়ানকে কাজী ডাকতে পাঠিয়েছি । কাজী এলেই বিয়ে ।

নীলা কেবল তীব্র বিস্ময় নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে । এখনও যেন ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না। বিশ্বাস হওয়ার কথাও না ।

গ্রুটের দেখানোর ভবিষ্যৎ গুলোর একটাতে আমি কোন জনপ্রিয় মানুষ ছিলাম না । সাধারন একজন ছিলাম । সেই সাধারন একজনকে একটা মেয়ে খুব ভাল বেসেছিলো । সেই মেয়েটা হচ্ছে নীলা । আরেকটা দেখেছিলাম আমার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতেই আমার স্ত্রী আমাকে ছেড়ে চলে যায় । আমি জানি না ভিনগ্রহের ঐ গ্রুটের সাথে আমার আসলেই দেখা হয়েছিলো কিনা। হয়তো আমি সব স্বপ্নই দেখছিলাম । তারপরও আমার মনে হল যে নীলাকে বিয়ে করারই আমার জন্য সব থেকে সেরা সিদ্ধান্ত হবে । আমি এতোদিন যা বুঝতে পারি নি সেটা এখন বুঝতে পারছি । এই মেয়েটা আমামাকে ভালোবাসে । আমার জনপ্রিয়তার জন্য নয়, আমার আসলে আমিকে এই মেয়েটা ভালোবাসে । সামনে আমার সাথে কী হবে আমি জানি না । হয়তো আমার ক্যারিয়ার চলবে হয়তো চলবে না । তবে একটা জিনিস আমি জানি । তা হচ্ছে নীলা আমাকে ছেড়ে যাবে না । সব সময় আমার পাশে থাকবে !

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 45

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

One Comment on “এলিয়েনটি যে পথ দেখিয়েছিল..”

Comments are closed.