লকডাউনে প্রেম

oputanvir
4.5
(55)

সোফিয়ার মন আজকে সারা দিন খারাপ । কাল রাতে রাফির সাথে এমন বাজে রকমের ঝগড়া হয়েছে যে বলার মত না । কেবল মাত্র একে অন্যকে বলে নি সম্পর্ক শেষ হওয়ার কথা । তবে সোফিয়ার মনে হচ্ছে যেন এরপর আর ওদের সম্পর্ক ভাল হবে না । আর আন্তরিক হবে না আগের মত ।
ঝগড়ার শুরুটা সোফিয়াই করেছিলো । আজ থেকে লগ ডাউন শুরু হয়েছে । তাই কোন ভাবেই আর বাসা থেকে বের হওয়ার উপায় নেই । আবার কবে লকডাউন শেষ হবে তার কোন ঠিকানা ছিল না । তাই সোফিয়ার ইচ্ছে করছিলো রাফির সাথে একটু দেখা করতে । এই ইচ্ছে ওর জাগলো রাতের বেলা । অবশ্য গতকাল সকাল বেলা রাফি বলেছিলো বাইরে বের হতে । ওর বাসার কাছাকাছিই কোথাও আসতে । তখন সোফিয়া নিজেই রাজি হয় নি । বাসায় বাবা আছে বলে বের হয় নি । আর রাতের বেলা ও নিজ থেকেই বলছে আসতে । রাফি তখন জানালো যে তখন বাসা থেকে বের হতে পারবে না ।

কথাটা শুনেই সোফিয়ার কি যে হল নিজেই বলতে পারবে না । ওর কেবল মনে হল ও এতো করে অনুরোধ করছে আর সেটা রাফি শুনছে না । কেন শুনবে না ? এমন হবে সে ? একবার তো দেখাই করতে চেয়েছে । তাছাড়া ওর কাছে তো সাইকেল রয়েছে । চাইলেই সে আসতে পারতো বাড়ির সামনে । কিন্তু আসে নি । কেন আসে নি সে !

সোফিয়ার মাথায় আগুন ধরে গেল । সে রাফিকে বলল, না তা পারবে কেন ? ঐ সুমি বললে তো ঠিকই গিয়ে হাজির হতে !

এই লাইনটা সে কেন বলল সেটা সাফিয়া নিজেও জানে না । সুমির হচ্ছে রাফির ক্লাস মেট । এবং ওরা ভাল বন্ধুও বটে । এটাই সোফিয়ার সহ্য হয় না । যদিও জানে রাফির সাথে সুমির অন্য কোন কিছুই নেই । তারপরেও রাগ হলে মাথা ঠিক থাকে না কিছুতেই । কী বলতে কী বলে ফেলে সেটাও ঠিক থাকে না ।

লাইনটা শুনে কিছু সময় রাফি কোন কথা বলল না । তারপর বলল, কী বলবে তুমি ?
-যা বলেছি ঠিক বলেছি? কেন যেতে না ? তা তো যাবেই ।
-দেখো সোফি কথা বার্তা ভাল করে বল !
-হ্যা এখন তো আমিই কথা বার্তা ভাল করে বলবো । তাই না

এইভাবে কথার পিঠে কথা চলতে থাকলো । ঝগড়া বাড়তে থাকলো ।

সকালে ঘুম ভেঙ্গেই সোফিয়ার কেবল মনে হল দোষ আসলে ওরই ছিল । কী দরকার ছিল ওমন করে কথা বলার । শুরুটা তো সেই করেছে । সারাটা দুপুর বিকেল একই ভাবে কাটলো মন খারাপ করে । সন্ধ্যার কিছু আগ দিয়ে ওদের বাসার ইন্টারকম থেকে ফোন এসে হাজির । আশে পাশে কেউ ছিল না দেখে সোফিয়াই ধরলো ।
-আপু আপনাদের বাসায় খাবার ডেলিভারি এসেছে । পাঠিয়ে দিবো?
একটু ভাবলো সোফিয়া । সে তো খাবার অর্ডার দেয় নি । তাহলে কি ওর মা দিয়েছে ? ইদানীং ওর সন্ধ্যা বেলা নাস্তা বানানোর আগ্রহ দেখান না খুব একটা । নতুন একটা সিরিয়াল শুরু হয়েছে । সেটা দেখায় ব্যস্ত থাকেন । খাবার দাবার সব অনলাইনে অর্ডার দেওয়া হয় । সোফিয়া বলল, হ্যা পাঠিয়ে দেন !

ঠিক তিন মিনিট পরে কলিংবেল বেজে উঠলো । সোফিয়া দরজা খুলতেই একটা ছোট খাটো ধাক্কার মত খেল । ফুডপান্ডার টিশার্ট পরে রাফি দাড়িয়ে রয়েছে । হাতে একটা খাবারের বক্স । সোফিয়ার হঠাৎ চোখটা সিক্ত হয়ে এল । সেই সাথে নিজেকে বড় অপরাধী মনে হল । ইস এই লকডাউনের ভেতরেও রাফি ঠিকই চলে এসেছে ওর সাথে দেখা করার জন্য । আর কালকে ও কী বাজে ব্যবহারই না করলো ছেলেটার সাথে ।
-ম্যাম আপনার অর্ডার !
সোফিয়া একটু নত মুখে খাবারের প্যাকেটটা হাতে নিলো । সে ঠিক ঠিক জানে বক্সের ভেতরে কি আছে । এবং এটাও জানে ঠিক কোন রেস্টরেন্ট থেকে সেটা কেনা হয়েছে । ধানমন্ডির একটা নির্দিষ্ট রেস্টুরেন্টের পাস্তা সোফিয়ার বিশেষ পছন্দ ।
রাফি আবার বলল, ওকে ম্যাম ! আমার পেমেন্ট টা !
সোফিয়া বলল, পেমেন্ট?
-বারে এতো কষ্ট করে এলাম খাবার সরবারহ করতে । পেমেন্ট দিবেন না?

সোফিয়ার শরীর একটু যেন কেঁপে উঠলো । সে রাফির চোখের দিকে তাকিয়ে ঠিক ঠিক বুঝতে পারছে যে রাফি কিসের পেমেন্টের কথা বলছে । কিন্তু এইভাবে দরজার সামনে ? যদি কেউ চলে আসে !
একটু ভয় করলো সোফিয়ার । তারপরই মনে হল যা হয় হবে ! ছেলেটা এতো দুর থেকে এল ! এতো কিছু হওয়ার পরেও ওর জন্য এসেছে ।
আস্তে করে দরজাটা টেনে বাইরে বের হয়ে এল । সামনের ফ্লাটের দরজার দিকে তাকালো । এখন যে কেউ দরজা খুলে বের হয়ে আসলে দেখতে পাবে ওকে । আর দেরী করা ঠিক হবে না । সোফিয়া আরও একটু এগিয়ে একেবারে রাফির কাছেকাছি চলে এল । তারপর রাফির ঠোঁটে একটা গাঢ় চুমু খেল ।

-এবার যাও !
-এতো কম পেমেন্ট ?
-জি এটাই । আর না !
রাফি হাসলো । তারপর বলল, বুঝতে পারছি কাল আবার আসা লাগবে ! আসি !

এই বলে সে লিফটের দিকে পা বাড়াতে যাবে তখন সোফিয়ার কি হল ওর হাত চেপে ধরলো । তারপর ওকে জড়িয়ে ধরল আলত করে । জড়িয়ে ধরেই বলল, সাবধানে যেও ।
-আচ্ছা ।
-আর বাসায় গিয়েই ফোন দিবে । রাস্তায় কোথাও দাড়াবে না !
-আচ্ছা !
-আই লাভ ইউ !
-আই লাভ ইউ টু ।

রাফিকে লিফটের ভেতরে ঢুকতে দেখলো সে । এরপর ও বারান্দায় চলে এল গেট দিয়ে রাফিকে সাইকেল নিয়ে বের হতে দেখলো । যত সময় ওকে দেখা যায় বারান্দায় দাড়িয়েই থাকলো । সকাল থেকে যে মন খারাপের ভাব ছিল সেখানে একটা তীব্র ভালো লাগার অনুভূতি কাজ করা শুরু করেছে !

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.5 / 5. Vote count: 55

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

One Comment on “লকডাউনে প্রেম”

Comments are closed.