মিতুর সকাল

oputanvir
4.8
(99)

  -ম্যাম আপনি আসুন আমার সাথে ?

মিতু একটু ভয়ে ভয়ে উঠে দাড়ালো । এতো চমৎকার একটা অফিসের একজন এমপ্লোয়ি ওকে ম্যাম বলে সম্মোধোন করছে সেটা ও ভাবতেই পারছে না । মিতু বলল
-সে কোথায় ?
-আবির স্যার একটু ব্যস্ত । উনি আমাকে বলেছেন আপনি এই সময়টুকু ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করুন প্লিজ !

মিতু আর কোন কথা বলল না । চুপচাপ মেয়েটার পেছন পেছন হাটতে লাগলো । মনের ভেতরে কত কথা ঘুরপাক খাচ্ছে । সামনের মেয়েটা হয়তো ওকে নিয়ে কত কথা ভাবছে এই জন্যই হয়তো ওকে এতো সম্মান দিয়ে কথা বলছে । কিন্তু মেয়েটা যখন আসল সত্য কথাটা জানতে পারবে তখন কি এই সম্মান মেয়েটার চোখে থাকবে ওর জন্য ?
থাকবে না ।
থাকার কথাও না ।

ভিআইপি ওয়েটিং রুমে বসার প্রায় সাথে সাথে মিতুর জন্য নাস্তা এসে হাজির ।
মেয়েটি হাসি মুখে বলল
-এসিটা কি বাড়িয়ে দিবো ?
-না না ঠিক আছে । আপনাকে এতো ব্যস্ত হতে হবে না ।
-কি বলছেন ব্যস্ত হব না ! আপনি আবির স্যারের গেস্ট ! আপনি জানেন ওনাকে অফিসের সবাই কত পছন্দ করে, ভয়ও করে অবশ্য !

মেয়েটা হেসে ফেলল । মেয়েটা আবার বলল
-আপনি নিশ্চয়ই স্যারের স্পেশাল কেউ হবেন । নয়তো স্যার আপনাকে অফিসে কোন দিন আসতে বলতো না। আমরা স্যারকে চিনি তো !

মিতুর মনটা খুব খারাপ হল তবে মুখের ভাবে সেটা প্রকাশ করতে দিল না । ওদের মত মেয়েদের অনেক কিছুই হজম করতে হয় । মনের আর মুখের ভাব কখনও এক হতে নেই ।

মেয়েটা যাওয়ার আগে টিভির রিমোর্ট টা ওর দিকে বাড়িয়ে দিল ।
-আপনি টিভি দেখুন । আর কিছু দরকার হলেই এই বেলটা বাজাবেন । কেমন !
মেয়েটিটি টেবিলের সামনে একটা বেল সুইট দেখি দিয়ে চলে গেল ।

মেয়েটি চলে যাওয়ার পরেও চুপ করে বসে রইলো কিছুটা সময় । আজকে সে আবিরের সাথে কথা বলতে এসেছে । বলতে এসেছে যে সে আর সাথে দেখা করবে না কোন দিন । তার সজ্জ্যা সঙ্গী হবে না আর । তার মুখের কেমন হবে সেটা মিতু খুব ভাল করেই জানে । কিন্তু মিতুর করার নেই । ওর মত মেয়ের আসলে আবির এক রাতের সজ্জা সঙ্গীই হয়তো হতে পারে, এর বেশি কিছু হওয়ার অধিকার ওর নেই ।

আবিরের সাথে ওর যেদিন পরিচয় সেদিন সারাদিন ও না খেয়ে ছিল । সকাল থেকে খাওয়ার মত একটা টাকাও ওর কাছে ছিল না । ঢাকায় ওর এমন কোন বন্ধুও কিংবা পরিচিত মানুষজন ছিল না যার কাছে ও যেতে পারে । যে হোস্টেলে থাকতো সেই হোস্টের ম্যানেজার ওকে বলেছে এক সপ্তাহের মধ্যেই হোস্টেল ছেড়ে দিতে । অনেক গুলো টাকা ওর বাকি পড়ে গেছে ।

গ্রামে যে ফিরে যাবে, কি মুখ নিয়ে ফিরে যাবে ? ওর মায়ের বড় শখ ছিল মিতুকে বড় অফিসার বানাবে । সরকারি অফিসার । ছেলে নেই তো কি হয়েছে মেয়ে হয়েই সে তাদের সব দুঃখ দুর করবে । ঢাকাতে গিয়ে পড়া শুনা করবে । মায়ের মারা যাওয়ার সব কিছু কেমন ধুয়াশা মতে হত মিতুর কাছে । বাবা তো অনেক আগেই মারা গেছে আর কেউ দেখার মত নেই ও । অনেকে অনেক কথা বলেছিলো ওর একা একা ঢাকা আসার কথা শুনে । কিন্তু মিতু সেদিকে খেয়াল দেয় নি । নিজে নিজেই চলে এসেছে ঢাকাতে ।
কিন্তু ঢাকায় আসার ছয় মাসের মাথায় তার সব আশা আকাঙ্খা সব মাটির সাথে মিশে গেল । এই কঠিন জীবন সংগ্রামে সে প্রায় পরাজিত হয়ে গেল ।

তবে মিতু ঠিক করেই নিল যে গ্রামে সে ফিরে যাবে না । যাই করা লাগুক না কেন সে আর ফিরে যাবে না গ্রামে । কিন্তু চোখের সামনে আর কিছু দেখতে পেল না সে ! শেষে সব থেকে কুৎসিত পথ টাই বেছে নিল সে !

ওর হোস্টেলে থাকা এক মেয়েও ঠিক একই কাজ করে । সবাই ব্যাপারটা জেনেও না জানার ভাব করে থাকে । পেটে যখন ক্ষুধা থাকে তখন আসলে অন্য কিছু মাথায় আসে না । মিতুর এল না !

যখন ধানমন্ডি লেকের কাছে ও দাড়িয়েছিলো প্রথম গাড়িটাই ছিল আবিরের । ওর ঠিক সামনেই গাড়িটা এসে থামলো । জানলার কাচ নামার আগ পর্যন্তও ওর এক মন বলছিলো এখনই এখান থেকে চলে যেতে কিন্তু ক্ষুধার জ্বালা বড় বেশি । সেটা ও আর কত সময় সহ্য করতে পারে ওর জানা ছিল না !

মিতু নিঃশব্দে গাড়িতে উঠে এল । কিছু দুর যাওয়ার পরে পাশে বসা মানুষটা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমার মুখে কোন মেকআপ দেখছি না ! আর মুখটা এমন শুকনা কেন ?
মিতু খুব মৃদু কন্ঠে বলল
-সারা দিন কিছু খাই নি !

আবির বেশ কিছু সময় কোন কথা বলল না । তারপর বলল
-এই জন্য এখানে এসে দাড়িয়েছো !
-অনেক কষ্টে কান্না আটকিয়ে মিতু মাথা ঝাকালো !

আবিরের বাসায় পৌছে আগে মিতুকে পেট ভরে খেতে হল । তারপর আবির ওকে অবাক করে দিয়ে বলল
-তুমি চাইলে এখন চলে যেতে পারো । আমি বুঝতে পারছি তুমি কেন এই রাস্তায় নেমেছো । আমার শারীরিক চাহিদার মেটানোর জন্য আমি তোমার ক্ষুধাকে ব্যবহার করতে পারবো না ।

মিতু কিছু সময় চুপ করে বসে থেকে মুখ তুলে চাইলো । তারপর বলল
-না । ঠিক আছে । আজকে চলে গেলে আজকের দিনটা হয়তো ভাল ভাবে পার হবে কিন্তু কালকে কি খাবো ? আমার আর কোন পথ নেই । আর এমন কোন যোগ্যতাও আমার নেই যে আমি সামনে কিছু করতে পারবো !
-বাবা মা কোথায় ?
-নেই । মরে গেছে ।
আবির আর কিছু জানতে চাইলো না !

সকাল বেলা যখন আবিরের বাসা থেকে ও বের হয় তখন ওর পকেট ভর্তি টাকা ছিল । এত টাকা ও আশা করে নি । পুরো মাসটা খুব ভাল করেই চলে যাবে । তারপর থেকেই মিতু যাওয়া আসা নিয়মিত হতে লাগলো আবিরের কাছে ।

মিতু খানিকটা বুঝতে পারতো কোন কারনে আবিরের মেয়েদের উপর খুব বেশি রাগ আছে । সেটাই ও প্রতি রাতে টের পেত । তবে সকাল বেলা একদম স্বাভাবিক । যতদিন যেতে লাগলো মিতুর একটা অনুভুত হতে লাগলো যে সে আবিরের প্রতি দুর্বল হতে চলেছে । কিন্তু নিজের অবস্থান সে পরিস্কার ভাবেই জানতো । সেটা লুকিয়ে রাখতো নিজের কাছেই ।

বছর খানেক পার হয়ে গেল এভাবে । মিতু অনেক কিছু শিখতে লাগলো । পড়া লেখার পাশাপাশি একটা পার্ট টাইম জবও জোগার করে ফেলল । কিন্তু আবিরের কাছে যাওয়া বন্ধ করলো না । আবিরও কেন জানি অন্য কাউকে ডাকতো না কখনও । হয়তো দুজনেই দুজনের কাছে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলো ।

সব কিছু ভালই চলছিল । কিন্তু একদিন ঝামেলা বেঁধে গেল ।

মিতু আবিরের ফ্যামিলি সম্পর্ক কিছুই জানতো না । একদিন জানতে চেয়েছিলো কিন্তু আবিরের ধমকে সেদিন চুপ হয়ে গিয়েছিলো । আবির ওকে কঠিন করে বলেছিলো যে ও যেন কোন দিন ওর ফ্যামিলি কিংবা পার্সোনাল লাইফ সম্পর্কে না জানতে চায় ! কিন্তু ঐ দিন হঠাৎ করেই আবিরের ফ্যামিলির একজনের সাথে ওর পরিচয় হয়ে যায় ! এবং সেটা অন্য ভাবে যা কোন দিন ভাবে নি সে !

যেদিন যদিন মিতু আবিরের ফ্ল্যাটে হাজির হত সেদিন সকাল বেলা মিতু নিজের মতেই সকালের কাজ কর্ম গুলো করতো । নাস্তা বানানো ঘর-দোর পরিস্কার করা । এমন কি আবীর অফিসের দিকে রওনা হয়ে যাওয়ার পরেও । ঐ ফ্ল্যাটের একটা আলাদা চাবি মিতুকে দিয়েছিলো ও ।

ঐদিনও আবীরকে নাস্তা খেতে দিয়ে মিতু বসার ঘরটা গোছাচ্ছিলো । তখনই কলিংবেল বেজে উঠে । মিতু অবশ্য খুব বেশি চিন্তুিত হল না । বুয়া থেকে শুরু করে দারওয়ান পেপারওয়ালা সবাই মিতুকে ততদিনে চিনে গেছে । এবং সেটা সবাই মনে করে মিতু আবিরে প্রেমিকা টাইপের কিছু একটা । তাই মিতুর দরজা খুলতে খুব একটা সমস্যা ছিল না । কিন্তু দরজা খুলে অবাক হয়ে দেখলো সেখানে অপরিচিত একটা মেয়ে দাড়িয়ে ।
ওর দিকে তাকিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল
-আপনি কে ?
মিতু ততক্ষনে নিজেকে সামলে নিয়েছে । ওকে পাল্টা প্রশ্ন করলো
-আপনি কে ?
মেয়েটি কথার জবাব না দিয়ে বলল
-ভাইয়া কোথায় ? তারপর মিতুকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লো । আবির তখন নাস্তা খাচ্ছে । মিতু মেয়েটির পেছন পেছন এসে হাজির । আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে খানিকটা সংঙ্কিত ভাবে । মেয়েটি যে আবিরের ছোট বোন সেটা বুঝতে ওর বাকি নেই ।
মেয়েটি বলল
-ভাইয়া এই মেয়েটা কে ?
আবির সেটার জবাব না দিয়ে বলল
-কেন এসেছিস ?
-আগে বল এই মেয়ে কে ?
তারপর কিছু একটা বুঝতে পেরেছে এমন ভাব করে চিৎকার করে উঠলো
-ও মাই গড ! এটা তোমার গার্লফ্রেন্ড ?

আবির কোন কথা বলল না । এমন কি মানাও করলো না । নাস্তা খাওয়া শেষ করে নিজের ঘরের দিকে চলে গেল । মিতু প্লেটটা নিয়ে রান্না ঘরের দিকে গেল । আবিরের ছোট বোন তখনও মিতুর পেছন পেছন হাজির ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-সত্যি সত্যিই তুমি ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড ? থ্যাংকস গড ! ভাইটার সুমতি হল অবশেষে । আমরা তো ভেবেছিলাম ভাইয়ার জীবনে আর কোন মেয়েই আসবে না ! ইস ! কি সুইট তুমি দেখতে !

মিতু অস্বস্তি মাখা একটা ভালা লাগা নিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলো । যদিও জানে এটা সত্য হবে না । ওর ভাইয়া কেন ওকে কিছু বলে নি সেটাও বুঝতে কষ্ট হল না । ওর সাথে আবীরের যা সম্পর্ক যা কোন ভাই তার বোনকে সেটা বলতে পারবে না । এর থেকে ও যেটা ভেবে নিয়েছে সেটাই থাকুক !


সেদিন আবির চলে যাওয়ার পরে আবিরের ছোট বোনের সাথে অনেক কথা শুনতে পেল । বিশেষ করে আবিরের জীবন সম্পর্ক । কেন সে এমন আর কেন এমন গম্ভির সেটার কারনও বুঝতে পারলো । কেন মেয়েদের উপর ওর রাগ ওর ফ্যামিলির সম্পর্কে ওর রাগ সব মিতুর জানতে পারলো ওর বোনের কাছ থেকে ।

আবির যখন ইউনিভার্সিটিতে পড়ত তখন একটা মেয়ের সাথে ওর সম্পর্ক ছিল । কিন্তু ব্যাপারটা ওর ফ্যামিলির জানার পর কিছুতেই মেনে নেয় নি । কারন মেয়েটার ফ্যামিলি খুব একটা ভাল ছিল না । ওদের ফ্যামিলি স্টাটাসের সাথে ম্যাচ করতো না । তার কদিনের মাথায় মেয়েটার বিয়ে হয়ে যায় । মেয়েটাও আবিরের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় ।

কিন্তু আরও বছর খানেক পরে আবির জানতে পারে যে ওর বাবা ঐ মেয়েটার সাথে দেখা করে মেয়েটাকে বেশ কিছু টাকার লোভ দেখিয়ে আবিরকে ছেড়ে যেতে বলে । এটা জানার পর থেকে আবির ওর ফ্যামির সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয় । সেদিনের পর বাবা মা কারো সাথেই ও কথা বলে নি ।

এটা জানার পর মিতু কেন জানি আবিরের উপর আরও একটু বেশি দুর্বল হয়ে পড়েছে । কিন্তু সেই কথা কোন দিনই মিতু ওকে বলতে পারবে না ।

কিন্তু সব থেকে বড় ধাক্কাটা মিতুর খায় গত কালকে । কালকে ক্লাস শেষ করে হোস্টেলের দিকে যাচ্ছিলো তখনই এক জন মানুষ ওর পথ রোধ করে দাড়ায় । ওকে বলে একজন ওর সাথে কথা বলতে চাচ্ছে একটু । মিতুকে একটা সাদা রংয়ের গাড়ির দিকে ইঙ্গিত করে । ও একটু ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গিয়ে দেখে সেখানে একজন মহিলা বসে আছে । ওকে ভেতরে ঢুকতে বললে আরও একটু ইতস্তত করে । কিন্তু মহিলার চেহারা আর আভিজাত্য দেখে মনে হল না সে মিতুর কোন ক্ষতি করবে । তাকে কিডন্যাপ করেই বা কি করবে তারা !
গাড়ির ভেতরে বসার পর মিতুকে মহিলা বলল যে উনি আবিরের মা !

মিতুক আসলেই বেশ অবাক হল । ওর খোজ কিভাবে সে পেল সেটা মিতু বুঝতে পারলো না । কিন্তু অবাক হওয়ার ব্যাপারটা মন খারাপের রূপ নিতে সময় লাগলো না । কারন মহিলা কেবল মিতুকেই খুজে বের করেন নি, সে কি এবং কে সেটাও বের করে ফেলেছে । ক্ষমতাবানদের কাছে কিছুই অসাধ্য নয় । মিতু মাথা নিচু করে বসে রইলো । আবিরের মা ওকে ষ্পষ্ট করে বলল যে সে যেন তার ছেলেকে ছেড়ে যায় । এবং এই জন্য তাকে যথেষ্ঠ টাকা সে দিবে !

মিতু যখন গাড়ি থেকে বের হল তখন ওর খুব বেশি কান্না আসতে লাগলো । হোস্টেলে গিয়ে অনেক কাঁদলো । এমনি প্রথম যদিন এ পথে নেমেছিলো সেদিনও এতো কান্না আসে নি এতোটা নিচ মনে নয় নি নিজেকে । কিন্তু আজকে আবিরের মায়ের কথা শুনে কেবল নিজেকে একটা মাংসের দলা ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছে না নিজেকে !

তাই আজকে এসেছে আবিরের সাথে শেষ বারের মত দেখা করতে । আজকের পরে ও আবির সাথে আর দেখা করবে না । হয়তো আবিরের কিছুই যাবে আসবে না । নতুন কাউকে খুজে নেবে !

ভিআইপি রুমেই আবির আসলো একটু পরে । ওর পাশে বসে ওকে একটু ঝাকি দিয়েই মিতু বাস্তবে ফিরে এল ।
ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-হঠাৎ এতো জরুরী যে বাসায় না এসে সোজা অফিসে ?
মিতু কি বলবে খুজে পেল না ।
আবির আবার বলল
-কি হয়েছে ?
মিতু তখনও চুপ !
-আরে বলবা তো !
মিতু এবার মুখ খুলল । বল
-আজকের পর থেকে আমাদের আর দেখা হবে না ।
-কেন ?
-এমনি । আমি আর চাই না তাই ?
-তাই তুমি চাও না ?

আবির বেশ কিছু সময় ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর বলল
-কেবল এই দুই লাইণ বলার জন্য তুমি এখানে এসেছো ? এটা তো ফোনেও বলতে পারতে !

পারতো । কিন্তু শেষ বারের মত আবিরকে দেখা থেকে ও নিজেকে সমালাতে পারে নি । ফোনে বললে তো দেখা হবে না কোন দিন !

আবির বলল
-আমার মা কিংবা বাবা তোমার সাথে দেখা করেছে । তাই না ?
মিতু সরাসরি আবিরের চোখের দিকে তাকালো । কিছু বলতে হল না আবিরের যা বোঝার বুঝে গেকল ।
-কত টাকার অফার দিয়েছে ?
-আমার টাকা লাগবে না !
-তাহলে আমাকে যেতে চাইছো কেন ?
-উনি ভাবছেন হয়তো আপনি আমার উপর দুর্বল হয়ে পরেছেন কিংবা পড়তে পারেন । তাই চাচ্ছেন যেন আমি চলে যাই । মা হিসাবে উণি তো আপনার ভালই চাইবেন । আর আমার মত কাউকে ……

মিতু কথাটা শেষ করতে পারলো না । এতো সময় ধরে আটকে রাখা কান্নাটা বের হয়ে এল ! আবির আরও কিছু সময় ওর দিকে তাকিয়ে থেকে হটাৎ শক্ত করে ওর হাত ধরলো । তারপর এক প্রকার টানতে টানতেই ওকে দরজা দিয়ে বাইরে নিয়ে এল । অফিসের সবাই কেবল দেখলো রাগত চেহারা নিয়ে তাদের আবির স্যার একটা মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছে অফিস থেকে ।

মিতু একবার বলার চেষ্টা করলো আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু ধমক খেয়ে চুপ হয়ে গেল । কিন্তু যখন আবিরের গাড়িটা থামলো মিতু অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো সেটা একটা কাজী অফিস !
-এসো !
মিতু নিজের চোখ কে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলো না । কি হচ্ছে এসব ! ও বলার চেষ্টা করলো যে
-আপনার মা ….. এটা কোন মেনে…..
-এক থাপ্পড় দিয়ে দাঁত খুলে ফেলবো । এসো !

যখন আবার মিতু গাড়িতে এসে বসলো তখন মিতু যেন ঘোরের ভেতরে চলে গেছে । কিছুই বুঝতে পারছে না । তবে তার যে আনন্দ হচ্ছে সেটা সে কোন ভাবেই প্রকাশ করতে পারছে না । আবিরকে জড়িয়ে ধরে চিৎকারে কাঁদতে ইচ্ছে করছে ।
আনন্দের কান্না । এ জড়িয়ে ধরার অধিকার আবির নিজেই ওকে দিয়েছে !  

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 99

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

One Comment on “মিতুর সকাল”

Comments are closed.