সেই সময়ের অপেক্ষা

oputanvir
4.7
(54)

ইতির বিয়েটার বিয়ের কথা বার্তা প্রায় পাঁকা হয়ে গেছে । এই লকডাউনে ওর অনেক বন্ধুর বিয়ে হয়ে গেছে । এবার সম্ভবত ওর পালা । ওর নিজের খুব একটা আপত্তিও নেই অবশ্য । আর ছেলেকে দেখার পরে আরও নেই । এর আগে ছেলের পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা হয়েছিলো । আজকে সে আর ছেলে আলাদা ভাবে দেখা করে এসেছে একটা রেস্টুরেন্টে । ছেলের মুখের ভাব দেখেই ইতি বুঝতে পেরেছে যে ছেলের ওকে পছন্দ হয়েছে । আগামীকাল থেকে আবার লকডাউন শুরু হবে। সম্ভব এটা শেষ হলেই ওদের বিয়েটা হয়ে যাবে ।

গোসল করে নিজের ফোনটা হাতে নিল সে । রাত প্রায় দশটা বাজে । একটা আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে । নাম্বারটা সে চেনে না । ফোন করবে কি করবে এমনটা ভাবতে ভাবতেই আবার ফোন এসে হাজির । একটু চিন্তা করলো ফোন ধরার ব্যাপারে । তারপর ফোনটা ধরলো ।

-হ্যালো ।
-ইতি ?
-হুম !
অপরিচিত কন্ঠটা চিনতে পারলো সে । মারুফের কন্ঠ । ওর সম্ভব্য হবু বর । ইতি বলল, বলুন ।
-কেমন আছো?
ইতি হাসলো । তারপর বলল, আমাদের ঘন্টা দুয়েক আগে দেখা হয়েছে । আপনি জানেন আমি কেমন আছি !
-ও হ্যা হ্যা । তাই তো ….
কয়েক মুহুর্ত ফোনের ওপাশে কোন কথা শোনা গেল না । ইতি একটু ইতস্তর করে বলল, কোন দরকারে ফোন করেছেন কি?
-ইয়ে মানে হ্যা ।
-বলুন ।
-তোমার ম্যাসেঞ্জারের আদার্স বক্সটা একটু চেক করবে?
-কেন ?
-ওখানে দেখো আমি আমার কিছু ছবি পাঠিয়েছি ।
-ছবি !

ইতি ঠিকমত যেন বুঝতে পারলো না । হঠাৎ ছবি কেব পাঠাবে ছেলে ! মারুফ বলল, আজকে আমাদের দেখা হয়েছে । আমি বেশ ফিটফাট হয়ে গিয়েছি । আমি জানি ফিটফাট হয়ে গেলে আমাকে একেবারে খারাপ লাগে না । কিন্তু ওটা আসলে আমার আসল চেহারা না । আমাদের যদি বিয়ে হয় তাহলে তুমি যে চেহারাটা প্রতিদিন দেখবে সেটার কিছু ছবি তোমাকে পাঠিয়েছে । আমার অনুরোধ থাকবে এটা দেখেই তুমি সিদ্ধান্ত নিবে ।
ইতি একটু যেন চমকে গেল । মারুফের কাছ থেকে এমন কথা শুনবে সে আশা করে নি । এয়ারফোন কানে লাগিয়ে এরপর মোবাইলের হাতে নিয়ে ছবি গুলো দেখতে লাগলো । বেশির ভাগই সেলফি । একেবারে ঘরোয়া ছবি । এই ছবি মানুষ নিজের ক্যামেরাতে তোলে বটে কিন্তু সেগুলো কখনও কাউকে দেখায় না । ছবি গুলোর দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো ইতি ।

ওপাশ থেকে মারুফের আওয়াজ শোনা গেল আবার ।
-দেখা হয়েছে?
-হুম !
-ওটাই আমার আসলে চেহারা !
-বুঝতে পেরেছি । আমার আসল চেহারা দেখবেন না । আমিও কিন্তু তেমনটা নই যেমনটা আজকে দেখেছেন ।
-জানি ।
-জানেন ? কিভাবে শুনি?
-আমি তোমার বাসার সামনে আছি । নিচে আসবে একটু?
-এখন?
-হ্যা । আসবে? না আসলে সমস্যা নেই চলে যাচ্ছি ।
-না না দাড়ান । আসছি !

ফোন রেখে ইতি নিজের পোশাক বদলাতে গেল । কিন্তু পোশাক বদলানো না । এমন কি মুখে কিছু মাখলোও না । গোসলের পরে একটা লম্বা টিশার্ট পরেছিলো । যেটা পরে ও বাসায় থাকে । সেটাই রইলো । নিচে একটা কালো লেগিংস পরা ছিল । এমন পোশাকই পরে বাসায় থাকে । কেবল একটা ওড়না নিয়ে নিচে নামলো । ওদের এই এলাকাতে এমনিতেও লোকজন কম । রাত হয়ে গেছে বিধায় মানুষজন কম । মারুফকে দেখতে পেল গেট থেকে একটু দুরে দাড়িয়ে। ও বেরিয়ে আসতে দেখেই হাসলো । ইতি এগিয়ে গেল ওর দিকে । একটু যে অস্বস্তি লাগছিলো না সেটা বলবে না । কারণ এই পোশাকে ও নিজের বন্ধুদের সামনেও ঠিক যায় না । কেউ বাসায় আসার কথা থাকলে আগেই পোশাক বদলে ফেলে । আজকে এই পোশাকে এমন একজন মানুষের সামনে এসেছে যার সাথে ওর বিয়ের কথা বার্তা চলছে ।

-হাই !

ইতি আর কী বলবে সেটা নিজেও জানে না । মারুফের দিকে তাকিয়ে একটু অবাকই হল । ছেলেটার চোখে বিকেলে বেলা যে মুগ্ধতা দেখতে পেয়েছিলো, এখন সেটার পরিমান আরও বেশি মনে হচ্ছে । ইতি শেষে না পেরে বলেই ফেলল, এভাবে তাকিয়ে রয়েছেন কেন শুনি?
-মানুষ আসল কৃত্রিমতার খোসল ছেড়ে বেশি সুন্দর । তুমিও তাই ।
-ঠোট্টা করছেন! তাই না ?
-আমার চোখ দেখে কি মনে হচ্ছে আমি মিথ্যা বলছি?

ইতি জানে যে মারুফ মিথ্যা বলছে না । অন্তত ওর চোখ দেখে তো মনেই হচ্ছে না । মারুফ বলল, দেখি তোমার হাত টা ।
-কী?
-হাত ! এদিকে দেখি ।
ইতি কিছু না ভেবে হাতটা বাড়িয়ে দিল । মারুফ সেই হাতটা নিয়ে ধরলো । একটু উষ্ণ অনুভূতি । তারপর একটা আংটি পরিয়ে দিল ওর আঙ্গুলে। বলল, এখনও আমাদের বিয়ের কথা বার্তা পাঁকাপাকি হয় নি । তবে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই । আমার জীবনে তোমাকে চাই । এটা আমার সিদ্ধান্ত । তোমার সিদ্ধান্ত আামকে জানিও । কেমন ? আমি সেটা শোনার জন্য অপেক্ষা করবো । এমন কি তুমি যদি বল যে এখন না পরে করবো সেটাও আমাকে জানিও । আর একেবারে যদি নাই রাজি হও সেটাও । মনে রাখবে তোমার সিদ্ধান্ত সব থেকে বেশি জরুরী ! কেমন !
ইতি বলল, হুম !
-গুড ! ভাবো । তারপর জানিও । আমি আসি !

ইতির মনে হল মারুফ যদি আরও কিছু থাকতো তাহলে মন্দ হত না । কিন্তু মুখ ফুটে এই কথা সে বলতে পারলো না । মারুফ যখন চলে যাচ্ছিল ইতি পুরো সময়টা সেদিকে তাকিয়ে রইলো । মারুক মোট চারবার পেছনে ফিরে তাকালো । মোড় পার হতেই ইতির মনে একটা বিষন্ন ভাব ফুটে উঠলো । আরও একটু থাকলে কী এমন হত ! আর ও যদি বলতো তাহলে তো থাকতোই । কিন্তু ওকে কেন বলতে হবে? সে কী বুঝতে পারে নি যে ইতি চাচ্ছে সে আরেকটু থাকুক !

মন খারাপ নিচে গেট দিয়ে ঢুকতে যাবে তখনই ইতির ফোনটা একটু কেঁপে উঠলো । মেসেজ এসেছে । মারুফের মেসেজ ।
মন খারাপ কর না । বিয়ের আগে এভাবে রাতের বেলা কাউকে না বলে দেখা করাটা ভাল দেখায় না । বিয়ে হোক তারপর সারাটা সময় কেবল তোমার চোখের সামনেই থাকবো”

মেসেজটার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । তখনই অনুভব করলো যে ওর পেছনে কেউ এসে দাড়িয়েছে । ঘুরে তাকাতেই মারুফকে দেখতে পেল । সে আবার ফিরে এসেছে । ইতির কেন জানি এতো ভাল লাগলো । ইচ্ছে হল মুভির নায়িকাদের মত করে দৌড়ে গিয়ে মারুফকে জড়িয়ে ধরে তবে সেটা করলো না কিছুতেই । ইতি কেবল বলল, বুঝতে পারছি আপনারও যেতে ইচ্ছে করছে না ।
-আর তোমার? তোমার ইচ্ছে করছে না যে আমি থাকি ?
-শুনতে হবে না । আসুন ঐদিকটাই যাই একটু । ঐদিকে একটা চাওয়ালা বসে মাঝে মাঝে । এক কাপ চা খাওয়া যাক !

ইতি আর মারুফ হাটতে লাগলো পাশাপাশি । একটু কাছাকাছি । মাঝে মাঝে ওদের দুজনের হাত একে অন্যের সাথে স্পর্শও করছে । ইতি আর মারুফের দুজনেরই ইচ্ছে করছে হাতটা ভাল করে ধরতে তবে কেউ ধরছে না । এখনও সেই সময় আসে নি । তবে এক সময় ঠিকই আসবে যখন কোন দ্বিধা ছাড়াই একে অন্যের হাত ধরতে পারবে । সেই সঠিক সময়ের স্বপ্নেই এখন দুজন বিভোর হয়ে আছে !

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 54

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

2 Comments on “সেই সময়ের অপেক্ষা”

  1. এমন গল্পের অপেক্ষায় আসা হয় এই ভার্চুয়াল জগতে ❤️❤️😊

Comments are closed.