সেই সময়ের অপেক্ষা

oputanvir
4.7
(53)

ইতির বিয়েটার বিয়ের কথা বার্তা প্রায় পাঁকা হয়ে গেছে । এই লকডাউনে ওর অনেক বন্ধুর বিয়ে হয়ে গেছে । এবার সম্ভবত ওর পালা । ওর নিজের খুব একটা আপত্তিও নেই অবশ্য । আর ছেলেকে দেখার পরে আরও নেই । এর আগে ছেলের পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা হয়েছিলো । আজকে সে আর ছেলে আলাদা ভাবে দেখা করে এসেছে একটা রেস্টুরেন্টে । ছেলের মুখের ভাব দেখেই ইতি বুঝতে পেরেছে যে ছেলের ওকে পছন্দ হয়েছে । আগামীকাল থেকে আবার লকডাউন শুরু হবে। সম্ভব এটা শেষ হলেই ওদের বিয়েটা হয়ে যাবে ।

গোসল করে নিজের ফোনটা হাতে নিল সে । রাত প্রায় দশটা বাজে । একটা আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে । নাম্বারটা সে চেনে না । ফোন করবে কি করবে এমনটা ভাবতে ভাবতেই আবার ফোন এসে হাজির । একটু চিন্তা করলো ফোন ধরার ব্যাপারে । তারপর ফোনটা ধরলো ।

-হ্যালো ।
-ইতি ?
-হুম !
অপরিচিত কন্ঠটা চিনতে পারলো সে । মারুফের কন্ঠ । ওর সম্ভব্য হবু বর । ইতি বলল, বলুন ।
-কেমন আছো?
ইতি হাসলো । তারপর বলল, আমাদের ঘন্টা দুয়েক আগে দেখা হয়েছে । আপনি জানেন আমি কেমন আছি !
-ও হ্যা হ্যা । তাই তো ….
কয়েক মুহুর্ত ফোনের ওপাশে কোন কথা শোনা গেল না । ইতি একটু ইতস্তর করে বলল, কোন দরকারে ফোন করেছেন কি?
-ইয়ে মানে হ্যা ।
-বলুন ।
-তোমার ম্যাসেঞ্জারের আদার্স বক্সটা একটু চেক করবে?
-কেন ?
-ওখানে দেখো আমি আমার কিছু ছবি পাঠিয়েছি ।
-ছবি !

ইতি ঠিকমত যেন বুঝতে পারলো না । হঠাৎ ছবি কেব পাঠাবে ছেলে ! মারুফ বলল, আজকে আমাদের দেখা হয়েছে । আমি বেশ ফিটফাট হয়ে গিয়েছি । আমি জানি ফিটফাট হয়ে গেলে আমাকে একেবারে খারাপ লাগে না । কিন্তু ওটা আসলে আমার আসল চেহারা না । আমাদের যদি বিয়ে হয় তাহলে তুমি যে চেহারাটা প্রতিদিন দেখবে সেটার কিছু ছবি তোমাকে পাঠিয়েছে । আমার অনুরোধ থাকবে এটা দেখেই তুমি সিদ্ধান্ত নিবে ।
ইতি একটু যেন চমকে গেল । মারুফের কাছ থেকে এমন কথা শুনবে সে আশা করে নি । এয়ারফোন কানে লাগিয়ে এরপর মোবাইলের হাতে নিয়ে ছবি গুলো দেখতে লাগলো । বেশির ভাগই সেলফি । একেবারে ঘরোয়া ছবি । এই ছবি মানুষ নিজের ক্যামেরাতে তোলে বটে কিন্তু সেগুলো কখনও কাউকে দেখায় না । ছবি গুলোর দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো ইতি ।

ওপাশ থেকে মারুফের আওয়াজ শোনা গেল আবার ।
-দেখা হয়েছে?
-হুম !
-ওটাই আমার আসলে চেহারা !
-বুঝতে পেরেছি । আমার আসল চেহারা দেখবেন না । আমিও কিন্তু তেমনটা নই যেমনটা আজকে দেখেছেন ।
-জানি ।
-জানেন ? কিভাবে শুনি?
-আমি তোমার বাসার সামনে আছি । নিচে আসবে একটু?
-এখন?
-হ্যা । আসবে? না আসলে সমস্যা নেই চলে যাচ্ছি ।
-না না দাড়ান । আসছি !

ফোন রেখে ইতি নিজের পোশাক বদলাতে গেল । কিন্তু পোশাক বদলানো না । এমন কি মুখে কিছু মাখলোও না । গোসলের পরে একটা লম্বা টিশার্ট পরেছিলো । যেটা পরে ও বাসায় থাকে । সেটাই রইলো । নিচে একটা কালো লেগিংস পরা ছিল । এমন পোশাকই পরে বাসায় থাকে । কেবল একটা ওড়না নিয়ে নিচে নামলো । ওদের এই এলাকাতে এমনিতেও লোকজন কম । রাত হয়ে গেছে বিধায় মানুষজন কম । মারুফকে দেখতে পেল গেট থেকে একটু দুরে দাড়িয়ে। ও বেরিয়ে আসতে দেখেই হাসলো । ইতি এগিয়ে গেল ওর দিকে । একটু যে অস্বস্তি লাগছিলো না সেটা বলবে না । কারণ এই পোশাকে ও নিজের বন্ধুদের সামনেও ঠিক যায় না । কেউ বাসায় আসার কথা থাকলে আগেই পোশাক বদলে ফেলে । আজকে এই পোশাকে এমন একজন মানুষের সামনে এসেছে যার সাথে ওর বিয়ের কথা বার্তা চলছে ।

-হাই !

ইতি আর কী বলবে সেটা নিজেও জানে না । মারুফের দিকে তাকিয়ে একটু অবাকই হল । ছেলেটার চোখে বিকেলে বেলা যে মুগ্ধতা দেখতে পেয়েছিলো, এখন সেটার পরিমান আরও বেশি মনে হচ্ছে । ইতি শেষে না পেরে বলেই ফেলল, এভাবে তাকিয়ে রয়েছেন কেন শুনি?
-মানুষ আসল কৃত্রিমতার খোসল ছেড়ে বেশি সুন্দর । তুমিও তাই ।
-ঠোট্টা করছেন! তাই না ?
-আমার চোখ দেখে কি মনে হচ্ছে আমি মিথ্যা বলছি?

ইতি জানে যে মারুফ মিথ্যা বলছে না । অন্তত ওর চোখ দেখে তো মনেই হচ্ছে না । মারুফ বলল, দেখি তোমার হাত টা ।
-কী?
-হাত ! এদিকে দেখি ।
ইতি কিছু না ভেবে হাতটা বাড়িয়ে দিল । মারুফ সেই হাতটা নিয়ে ধরলো । একটু উষ্ণ অনুভূতি । তারপর একটা আংটি পরিয়ে দিল ওর আঙ্গুলে। বলল, এখনও আমাদের বিয়ের কথা বার্তা পাঁকাপাকি হয় নি । তবে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই । আমার জীবনে তোমাকে চাই । এটা আমার সিদ্ধান্ত । তোমার সিদ্ধান্ত আামকে জানিও । কেমন ? আমি সেটা শোনার জন্য অপেক্ষা করবো । এমন কি তুমি যদি বল যে এখন না পরে করবো সেটাও আমাকে জানিও । আর একেবারে যদি নাই রাজি হও সেটাও । মনে রাখবে তোমার সিদ্ধান্ত সব থেকে বেশি জরুরী ! কেমন !
ইতি বলল, হুম !
-গুড ! ভাবো । তারপর জানিও । আমি আসি !

ইতির মনে হল মারুফ যদি আরও কিছু থাকতো তাহলে মন্দ হত না । কিন্তু মুখ ফুটে এই কথা সে বলতে পারলো না । মারুফ যখন চলে যাচ্ছিল ইতি পুরো সময়টা সেদিকে তাকিয়ে রইলো । মারুক মোট চারবার পেছনে ফিরে তাকালো । মোড় পার হতেই ইতির মনে একটা বিষন্ন ভাব ফুটে উঠলো । আরও একটু থাকলে কী এমন হত ! আর ও যদি বলতো তাহলে তো থাকতোই । কিন্তু ওকে কেন বলতে হবে? সে কী বুঝতে পারে নি যে ইতি চাচ্ছে সে আরেকটু থাকুক !

মন খারাপ নিচে গেট দিয়ে ঢুকতে যাবে তখনই ইতির ফোনটা একটু কেঁপে উঠলো । মেসেজ এসেছে । মারুফের মেসেজ ।
মন খারাপ কর না । বিয়ের আগে এভাবে রাতের বেলা কাউকে না বলে দেখা করাটা ভাল দেখায় না । বিয়ে হোক তারপর সারাটা সময় কেবল তোমার চোখের সামনেই থাকবো”

মেসেজটার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । তখনই অনুভব করলো যে ওর পেছনে কেউ এসে দাড়িয়েছে । ঘুরে তাকাতেই মারুফকে দেখতে পেল । সে আবার ফিরে এসেছে । ইতির কেন জানি এতো ভাল লাগলো । ইচ্ছে হল মুভির নায়িকাদের মত করে দৌড়ে গিয়ে মারুফকে জড়িয়ে ধরে তবে সেটা করলো না কিছুতেই । ইতি কেবল বলল, বুঝতে পারছি আপনারও যেতে ইচ্ছে করছে না ।
-আর তোমার? তোমার ইচ্ছে করছে না যে আমি থাকি ?
-শুনতে হবে না । আসুন ঐদিকটাই যাই একটু । ঐদিকে একটা চাওয়ালা বসে মাঝে মাঝে । এক কাপ চা খাওয়া যাক !

ইতি আর মারুফ হাটতে লাগলো পাশাপাশি । একটু কাছাকাছি । মাঝে মাঝে ওদের দুজনের হাত একে অন্যের সাথে স্পর্শও করছে । ইতি আর মারুফের দুজনেরই ইচ্ছে করছে হাতটা ভাল করে ধরতে তবে কেউ ধরছে না । এখনও সেই সময় আসে নি । তবে এক সময় ঠিকই আসবে যখন কোন দ্বিধা ছাড়াই একে অন্যের হাত ধরতে পারবে । সেই সঠিক সময়ের স্বপ্নেই এখন দুজন বিভোর হয়ে আছে !

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 53

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

2 Comments on “সেই সময়ের অপেক্ষা”

  1. এমন গল্পের অপেক্ষায় আসা হয় এই ভার্চুয়াল জগতে ❤️❤️?

Comments are closed.