নীতুর ছবি

oputanvir
4.8
(78)

নীতু রান্না ঘরে নিজের কাজে মন দিয়ে রাখলেও ওর একটা কান সব সময় রিয়াদের দিকেই ছিল । কখনও গোসলের জন্য ঢুকবে সেই দিকে খেয়াল ছিল । গোসলে ঢোকার সাথে সাথেই চুড়ার জ্বালটা কমিয়ে দিয়ে সে দ্রুত শোবার ঘরের দিকে এগিয়ে এল । ওর চোখ তখন খুজতে ব্যস্ত । সেটা পেতেও দেরি হল না । বালিশের পাশেই সেটা রাখা । ফোনটা হাতে নিতেই মনের মাঝে একটা অপরাধবোধ কাজ করলো । যতই রিয়াদ ওর স্বামী হোক, এই ভাবে না বলে অন্যের ফোনে হাত দেওয়া কি ঠিক হবে? ফোন হচ্ছে মানুষের সব থেকে ব্যক্তিগত জিনিস । এমন এক ব্যক্তিগত জিনিস যা কোন ভাবেই বিনা অনুমুতিতে হাত দেওয়া ঠিক না ।
তাহলে?
কী করবে নীতু এখন ?
কিন্তু যদি না দেখে তবে শান্তিও পাবে না মনে !

রিয়াদের সাথে নীতু বিয়ে হয়েছে মাস তিনেক । রিয়াদ স্বামী হিসাবে বেশ ভালই মনে হয়েছে নীতুর । তবে একটু চুপচাপ । কথা কম বলে । অবশ্য বিয়ের পর নীতু যখন শ্বশুর বাড়ি ছিল তার শাশুড়ি তাকে এই কথা বলেই দিয়েছিলো । বলেছিলো যে রিয়াদ কথা কম বলে । তবে তার ছেলেটা ভাল । নীতু সেটা এই কদিনে বেশ ভাল ভাবেই বুঝতে পেরেছে । কথা কম বলে রিয়াদ তবে মানুষ হিসাবে বেশ ।

কিন্তু গত পরশুদিন নীতুর মনে একটা দাগ এসে হাজির হয়েছে । কিছুতেই সে মন থেকে কথাটা দুর করতে পারছে না । বারবার মনে হচ্ছে যে ব্যাপারটা ওকে দেখতে হবেই । গত পরশুদিন হঠাৎ করেই রিয়াদের ফোনের দিকে চোখ চলে যায় । সেটার ওয়ালপেপারে একটা মেয়ের ছবি দেওয়া রয়েছে । এই কদিন আগে ওদের একটা বিয়ের ছবি দেওয়া ছিল । কিন্তু গতপরশু দিন দেখলো একটা মেয়ের ছবি । ওয়ালপেপার টা দেখার পর থেকেই মনে শান্তি পাচ্ছে না ।
নিজের মনকে সে বুঝানোর চেষ্টা করেছে যে হয়তো কোন মডেল কিংবা নায়িকার ছবি দেওয়া রয়েছে । কিন্তু তারপরেই মনে হয়েছে যে কেন অন্য কোন মেয়ের ছবি কেন থাকবে? হোক সেটা মডেল কিংবা নায়িকা ! কেন থাকবে ! তাই সে দেখতে চায় যে কার ছবি সেখানে রয়েছে । সেটা দেখার জন্যই সে সুযোগ খুজছিলো এবং সেটা চলে এসেছে । ফোনটা হাতে নিয়ে আর কিছু ভাবলো না । যদি ফোনটা লক করা থাকেও তবুও লক স্ক্রিনে ছবিটা দেখতে পারে ।
পাওয়ার বাটন চালু করতেই ছবিটা ফুটে উঠলো চোখের সামনে । একটা মেয়ের ছবিই । বুকের ভেতরে একটা কষ্ট অনুভব হল নীতুর । একটা মেয়ের ছবি । তবে মেয়েটা পেছন দিকে ফিরে আছে । অন্ধকার অন্ধকার ছবিটা । মেয়েটা শাড়ি পরে রয়েছে । পিঠটা বেশ ফাঁকা । কোমরের কাছটাকে বেশি ভাল করে ফোকাস করা হয়েছে । সেদিকে তাকাতেই নীতুর মনে একটা তীব্র বিস্ময়বোধ এসে ধাক্কা দিল । কারণ ছবিটা ওর নিজের !

নীতু আরও কিছু সময় ছবির দিকে তাকিয়ে রইলো । হ্যা সত্যিই ছবিটা ওর নিজের । ওদের এই বাসার বারান্দার ছবি । সন্ধ্যা বেলা তোলা । রিয়াদ কখন ছবিটা তুলেছে সেটা নীতু জানেও না । যে কষ্টের অনুভূতিটা ছিল সেটা কেটে গেল মুহুর্তেই ।
কী মনে হল শোয়াইপ করলো ফোনটা । ফোনটা আনলোক হয়ে গেল ।ওয়ালপেপারেও ঠিক ওর ছবিই দেওয়া । এই ছবিটাও কখন তুলেছে রিয়াদ সেটা নীতু জানে না । সদ্য গোসল করে বের হয়েছে । পরনে কেবল মাত্র তোলায়ে জড়ানো । আর কিছু নেই । অন্য একটা তোয়ালে দিয়ে চুল মুছছে । কখন তুললো ছবিটা সে ?
নীতু ভাবতে লাগলো !
তারপরই নীতু আরেকটা কাজ করলো । গ্যারালীতে ঢুকলো । মনের ভেতরে আর একটা সন্দেহ দেখা দিল সেটা দুর করা দরকার । গ্যালারিতে ঢুকে দেখলো সেখানে কেবল ওর নিজের ছবি । সব ক্যান্ডিড । ঘুমন্ত চেহারা থেকে শুরু করে রান্না ঘরে কাজ করা পর্যন্ত প্রতি মুহুর্তের ছবি । এমন কী সেখানে আজকেও ছবিও রয়েছে ।

নীতু ফোনটা হাতে নিয়েই চুপ করে বসে রইলো । বিয়ের পর নীতুর একবার মনেও হয়েছিলো যে হয়তো ওকে রিয়াদের পছন্দ হয় নি। চুপচাপ থাকেলও নতুন বউয়ের প্রতি একটা আগ্রহ তো থাকবে । কিন্তু সেটা কম ছিল রিয়াদের । কিন্তু এখন সেটা মনে হচ্ছে না মোটেও । আগ্রহ যদি নাই থাকবে তাহলে এইভাবে এতো ছবি কেন তুলবে সে !

একটু পরেই ওয়াশরুমের দরজা খুলে বের হয়ে এল রিয়াদ । নীতুকে ঘরে বসে থাকতে দেখে আর নীতুর হাতে ফোনটা দেখে বলল, কী ব্যাপার ! এটা কিন্তু ঠিক না !
নীতু বিন্দু মাত্র দ্বিধা না করে বলল, কোনটা ঠিক না ?
-এই যে অন্যের ফোন হাতে নেওয়া ।
-আচ্ছা আর অন্যের ছবি লুকিয়ে লুকিয়ে তোলা খুব ভাল ?
একটু থতমত খেতে রিয়াদ বলল, অন্যের ছবি তো তুলি নি, নিজের বউয়ের ছবি তুলেছি ।
-আমিও অন্যের ছবি দেখি নি । নিজের ছবি দেখেছি । তাও আবার নিজের স্বামীর ফোনে ।

ফোনটা বিছানার উপরে রেখে এবার নীতু উঠে দাড়ালো । রিয়াদ কিছু বলার আগেই ওকে জড়িয়ে ধরলো । সদ্য গোসল করে বের হয়েছে । শরীরটা বেশ ঠান্ডা । নীতু বলল, এতো এতো ছবি কেন তুলেছে শুনি?
রিয়াদ একটু চুপ করে থেকে বলল, তোমাকে দেখতে ভাল লাগে । অফিসে কাজের ফাঁকে সময় পেলে এই ছবি গুলো দেখি ।
-তা আমাকে বললে আমি কি ছবি তুলতে দিতাম না?
-না মানে তুমি আবার কী মনে কর !
-আসছে কী মনে কর ! এখন থেকে ছবি তুলতে চাইলে আমাকে বলবে । আর লুকিয়ে না । মনে থাকবে ?
-আচ্ছা ! মনে থাকবে ….. কিছু পুড়ছে মনে হচ্ছে !

নীতুর তখনই মনে হল চুড়ায় মাছ দিয়ে এসেছিলো । যদিও আগুন কমিয়ে দিয়েছিল তবুও সেটা অনেক সময় । রিয়াদকে ছেড়ে দিয়ে বলল, সর্বনাশ ! আমার মাছ …।
সে দৌড় দিল রান্না ঘরের দিকে ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 78

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

One Comment on “নীতুর ছবি”

  1. একটা সময় ছিল যখন কোন একজনের ছবি কাজের ফাঁকে ফাঁকে দেখতাম,মনে শক্তি আসত। সে চলে যাওয়ার পর নিজেকে নিজে দেখি

Comments are closed.