রাগ প্রশমন

oputanvir
4.8
(90)

আমির সাহেবের দিকে তাকিয়ে রাকিব বলল, স্যার কিছু একটা করেন প্লিজ !
আমির সাহেব চোখ কপালে তুলে বললেন, আমি কী করবো শুনি?
-স্যার নতুন বিয়ে করেছি । এখন যদি চাকরি চলে যায় তাহলে উপায় আছে ?
-তোমার নতুন বিয়ে ! এখন যদি আমার চাকরি চলে যায় তাহলে আমি নতুন কোথাও চাকরি পাবো ? আমার কী অবস্থা হবে ভেবে দেখেছো ?
-বড় স্যারকে একবার ফোন দিবো?
-কোন লাভ আছে ? তুমি জানো না যে এখন অফিসের সব কিছু তৃষা ম্যামের হাতে । বড় স্যারের কোন হাত নেই । সে কিছুই করতে পারবে না ।

দুজনেই বিমর্ষ হয়ে বসে রয়েছে অফিসের ক্যান্টিনে । অফিস রুমে ঢুকতে সাহস পাচ্ছে না । একটু আগেই তারা খবর পেয়েছে এমডি ম্যাম অফিসে এসেছে । তার মুখ গম্ভীর হয়ে আছে । তারা দুজনেই জানে যে একটু পরে তাদের খোজ করা হবে এবং তাদেরকে টারমিনেট করা হবে । তৃষা ম্যাম তাদের উপর খুব রেগে আছে । রেগে থাকারই কথা । কেবল মাত্র তাদের দুজনের ভুলের কারণে রকলেট ইন্টারন্যাশনালের সাথে ডিলটা হয় নি । প্রায় এগারো কোটি টাকার একটা কাজ হাত ছাড়া হয়ে গেছে । এই অবস্থায় যে কারো মন মেজাজ খারাপ থাকবে সেটা স্বাভাবিক ।
কিন্তু তারা দুজনের কেউ ইচ্ছে করে ভুলটা করেন নি । ঠিক সময় মত বুঝে উঠতে পারেন নি । তৃষা ম্যাম তাদের দুজনকে স্পষ্ট করেই বলেছি যেন বর্তমান বাজেটের দিকটা যেন ভাল করে খেয়াল করে তারপরই ডিলটার প্রোপোজাল পাঠায় । কিন্তু সেটা তাদের দুজনের কারই এই ব্যাপারটা মাথায় ছিল না । ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে ।

দুজনেই ক্যান্টিনে বসে রইলো আরও আধা ঘন্টা । কিন্তু এভাবে আর কত সময় বসে থাকবে তারা ? আজকে যদি অফিসে না যায়ও কাল তো ঠিকই আসতে হবে। তখন কী হবে ?

এমন সময়ে এমডি ম্যামের পিএ কে দেখা গেল ক্যান্টিনে আসতে । ওদের সামনে দিয়ে কাউন্টারে গেল । দুতো কোল্ড ড্রিংস কিনলো । তারপর ওদের টেবিলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়ে একটা কার্ড টেবিলের উপরে রাখলো । ওদের দিকে না তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল, চাকরি বাঁচাতে চাইলে এই নম্বরে ফোন করে এই ছেলে কে অফিসে আসতে বলেন । ম্যামের রাগ যদি কেউ ঠান্ডা করতে পারে তাহলে কেবল এই ছেলে পারবে !

হাসান চলে যেতেই দুজনে কার্ডটার দিকে ঝুকে পড়লো । ম্যামেরই কার্ড সেট । তার উল্টোপিঠে নাম লেখা অপু । নিচে একটা ফোন নম্বর ! আর দেরি না করেই চট জলদি সেখানে ফোন দিল আমির সাহেব । ফোনটা রিসিভ হল একটু পরেই ।
-হ্যালো অপু সাহেব বলছেন?
-জি ! কে ?
-আমি আসলে তৃষা ম্যামের অফিসের একজন এমপ্লোয়ী !
-ও আচ্ছা । বলুন কী সমস্যা ?
-আপনি কি এখন একটু অফিসে আসতে পারবেন?
-এখন ? কেন কী সমস্যা ? তৃষার কিছু হয়েছে ? ও ঠিক আছে ?
-না মানে ম্যাম খুব রেগে আছেন । উনাকে কেউ শান্ত করতে পারছে না ।

যদিও এই অংশটা খানিকটা মিথ্যা তবে নিজের চাকরি বাঁচাতে হলে এই টুকু মিথ্যা তো বলাই যায় । ওপাশ থেকে কিছু সময় চুপ করে থেকে অপু বলল, আচ্ছা আমি আসছি ।

আমির সাহেব ফোন রাখার পরে রাকিবের দিকে তাকিয়ে বললেন, এই ছেলে কি পারবে?
-কী জানি ! তবে স্যার একজন আমি নক না করেই ম্যামের ঘরের দরজা খুলে ফেলেছিলাম । সেদিন দেখি ম্যাম ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছে আর হাসছে । এমন ভাবে তাকে কোন দিন হাসতে দেখি নি । আমার কেন জানি মনে হয় এই ছেলের সাথেই কথা বলছিলো সে । আর সেদিন আমাদের একাউন্স ডিপার্মেন্টের রিদি হক আছে না, সে নাকি ম্যামকে কোন ছেলের সাথে ঘুরতে দেখেছে । তাও আবার রিক্সাতে । ভাবতে পারেন !

আরও ঘন্টা খানেক পরে তার দুজন অফিসে প্রবেশ করলো । পিয়নের কাছে জানতে চাইলো যে এমডি ম্যাম তাদের খোজ করেছিলো কিনা ! পিয়ন বলল যে করে নি । পিয়ন আরও জানালো যে একজন ছেলে ম্যামের কেবিনে ঢুকেছে এই মিনিট বিশেক আগে ।
দুজনেই একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল । ম্যামের রাগ তাহলে একটু কমবে আশা করা যাচ্ছে ।

আরও মিনিট ত্রিশ পরে আমির সাহেব এবং রাকিবের ডাক পরলো এমডি ম্যামের কেবিনে । তারা ভয়ে ভয়ে কেবিনে প্রবেশ করলো । সামনা সামনি বসে রইলো চুপচাপ । আমির সাহেবের বয়সের অর্ধেকের একটু বেশি বয়স হবে তৃষার কিন্তু এই বয়সেই কী যে এক গার্ভীর্য মেয়েটাকে পেয়ে বসেছে । সামনে বসলেই সবার খবর খারাপ হয়ে যায় ।

সামনে রকলেট ইন্টারন্যাশনালের ফাইলটা দেখা যাচ্ছে । সেদিকেই তার চোখ । তবে তাদেকে সেই সম্পর্কে কোন কথা জিজ্ঞেস করলো না । তারা খেয়াল করেছে কেবিনে আরও একজন রয়েছে । অফিসের ডেস্কের পাশে উল্টো দিকে সোফা বসে আছে একজন । তার দিকে তাকানোর সময় পায় নি ওরা ভাল করে । ছেলেটা নিজের মোবাইলে কী যেন করছে ।
তৃষা তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, অপুকে এখানে ডেকে আনার বুদ্ধি কার মাথা থেকে বের হয়েছে?
দুজনেই একে অন্যের দিকে তাকালো । কী বলবে ঠিক বুঝতে পারলো না ।
-ড্যাড বলেছে ?

কোন কথা বলতে যাবে তখনই পেছন থেকে পায়ের আওয়াজ পাওয়া গেল । অপু নামের ছেলেটা তাদের পেছনে এসে দাড়িয়েছে । অপু বলল, আরে বাবা তুমি এমন ভাবে জেরা কেন করছো শুনি ? আমাকে কেন ডেকে আনতে হবে? আমি এমনি আসতে পারি না ?
তৃষা বলল, এখন বাজে বারোটা । তুমি আরও এক ঘন্টা আগে এখানে এসেছো । তার মানে তোরম ঘুম অন্তত দুই ঘন্টা আগে ভেঙ্গেছে । তোমার ঘুম কখন ভাঙ্গে আমি জানি না ?
-আচ্ছা বুঝলাম । ইনারা ভুল করে ফেলেছে । অন্যায় তো আর করে নি !
-এদের জন্য কত টাকা ক্ষতি হয়েছে হিসাব আছে !
-ক্ষতি কোথায় হয়েছে ? ডিল হাত হয়েছে । কাজ শুরুই হয় নি । ক্ষতি কেন হবে? লস তো আর হয় নি । কোম্পানির পকেট থেকে তো টাকা যায় নি । আর এতো টাকা দিয়ে কী হবে শুনি ? একটা ডিল হাত ছাড়া হয়েছে সামনে আরও দশটা আসবে । নো বিগ ডিল !
-তাই না ! নো বিগ ডিল !
-আচ্ছা যাও যখন আমার কোম্পানী হবে আমার একাউন্ট থেকে কেনে নিও ।
-তোমার কোম্পানী ! কবে হবে শুনি ?
-এই যেদিন তুমি বিয়ের জন্য হ্যা বলবে সেদিন । এই এতো বড় কোম্পানীর মালিক হয়ে যাবো !
-ইস শখ কত তোমার !
-এটা শখ না জানেমান, লক্ষ্য ! বড় লোকের মেয়েকে পটিয়ে বিয়ে করে অনেক টাকার মালিক হয়ে যাওয়া !
-পটিয়ে ! ছিঃ কী বাজে শব্দ ! তোমাকে না বলেছি এই শব্দ ব্যবহার না করতে ।
-আরে এটা তো শদ্ধ শব্দ । বাংলা একাডেমি ডিকশনারীতে আছে । দেখাবো তোমাকে?
-চুপ ! একদম চুপ ।

আমির সাহেব আর রাকিব চুপচাপ দুজনের কথোপথন শুনছিলো । তৃষা তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, এই ট্রিক্স দয়া করে দ্বিতীয়বার এপ্লাই করবেন না । যান দুজনে নিজের ডেস্কে যান । আর সামনে সিমনস গ্রুপের যে প্রজেক্টটা রয়েছে সেটা নিয়ে কাজ শুরু করেন । এটা যেন ভুল না হয় !
-জি ম্যাম !

বলেই দুজন উঠে গেল । দরজা দিয়ে বের হতে হতে তাদের খেয়াল হল অপু নামের ছেলেটা তার তৃষা ম্যামের চেয়ারের সামনে গিয়েছে । হাত দিয়ে চেয়ারের হাতলে ভর দিয়ে দাড়িয়েছে ।
রাকিব দরজা বন্ধ হওয়ার আগেও দেখলো তাদের তৃষা ম্যামের মুখে একটা হাসি দেখা যাচ্ছে । কয়েকটা শব্দও তার কানে এল, অপু বলছে তো আমরা যেন কী বলছিলাম ….

নিজের ডেস্কে বসে আমির সাহেব বলল, বড় বাঁচা বেঁচে গেছি ।
-জি স্যার । কিন্তু ছেলে ম্যামকে এভাবে পটালো কীভাবে বলেন তো ?
-কী জানি । আমিও কিছু জানি না ।
-মনে আছে একবার বানিজ্য মন্ত্রীর ছেলে ম্যামকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো । ম্যাম এক বাক্যে না করে দিয়েছে । এই ছেলে কিভাবে পটিয়ে ফেলল বলেন তো দেখি! একেবারে রাজ্যসহ রাজকন্যা পেয়ে গেল !
-জগতে কে কী যে করে ফেলে সেটা বোঝা মুশকিল ! যাই হোক এবার মন দিয়ে কাজ কর । এবার যেন আর ভুল না হয় !

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 90

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →