রাগ প্রশমন

oputanvir
4.8
(92)

আমির সাহেবের দিকে তাকিয়ে রাকিব বলল, স্যার কিছু একটা করেন প্লিজ !
আমির সাহেব চোখ কপালে তুলে বললেন, আমি কী করবো শুনি?
-স্যার নতুন বিয়ে করেছি । এখন যদি চাকরি চলে যায় তাহলে উপায় আছে ?
-তোমার নতুন বিয়ে ! এখন যদি আমার চাকরি চলে যায় তাহলে আমি নতুন কোথাও চাকরি পাবো ? আমার কী অবস্থা হবে ভেবে দেখেছো ?
-বড় স্যারকে একবার ফোন দিবো?
-কোন লাভ আছে ? তুমি জানো না যে এখন অফিসের সব কিছু তৃষা ম্যামের হাতে । বড় স্যারের কোন হাত নেই । সে কিছুই করতে পারবে না ।

দুজনেই বিমর্ষ হয়ে বসে রয়েছে অফিসের ক্যান্টিনে । অফিস রুমে ঢুকতে সাহস পাচ্ছে না । একটু আগেই তারা খবর পেয়েছে এমডি ম্যাম অফিসে এসেছে । তার মুখ গম্ভীর হয়ে আছে । তারা দুজনেই জানে যে একটু পরে তাদের খোজ করা হবে এবং তাদেরকে টারমিনেট করা হবে । তৃষা ম্যাম তাদের উপর খুব রেগে আছে । রেগে থাকারই কথা । কেবল মাত্র তাদের দুজনের ভুলের কারণে রকলেট ইন্টারন্যাশনালের সাথে ডিলটা হয় নি । প্রায় এগারো কোটি টাকার একটা কাজ হাত ছাড়া হয়ে গেছে । এই অবস্থায় যে কারো মন মেজাজ খারাপ থাকবে সেটা স্বাভাবিক ।
কিন্তু তারা দুজনের কেউ ইচ্ছে করে ভুলটা করেন নি । ঠিক সময় মত বুঝে উঠতে পারেন নি । তৃষা ম্যাম তাদের দুজনকে স্পষ্ট করেই বলেছি যেন বর্তমান বাজেটের দিকটা যেন ভাল করে খেয়াল করে তারপরই ডিলটার প্রোপোজাল পাঠায় । কিন্তু সেটা তাদের দুজনের কারই এই ব্যাপারটা মাথায় ছিল না । ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে ।

দুজনেই ক্যান্টিনে বসে রইলো আরও আধা ঘন্টা । কিন্তু এভাবে আর কত সময় বসে থাকবে তারা ? আজকে যদি অফিসে না যায়ও কাল তো ঠিকই আসতে হবে। তখন কী হবে ?

এমন সময়ে এমডি ম্যামের পিএ কে দেখা গেল ক্যান্টিনে আসতে । ওদের সামনে দিয়ে কাউন্টারে গেল । দুতো কোল্ড ড্রিংস কিনলো । তারপর ওদের টেবিলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়ে একটা কার্ড টেবিলের উপরে রাখলো । ওদের দিকে না তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল, চাকরি বাঁচাতে চাইলে এই নম্বরে ফোন করে এই ছেলে কে অফিসে আসতে বলেন । ম্যামের রাগ যদি কেউ ঠান্ডা করতে পারে তাহলে কেবল এই ছেলে পারবে !

হাসান চলে যেতেই দুজনে কার্ডটার দিকে ঝুকে পড়লো । ম্যামেরই কার্ড সেট । তার উল্টোপিঠে নাম লেখা অপু । নিচে একটা ফোন নম্বর ! আর দেরি না করেই চট জলদি সেখানে ফোন দিল আমির সাহেব । ফোনটা রিসিভ হল একটু পরেই ।
-হ্যালো অপু সাহেব বলছেন?
-জি ! কে ?
-আমি আসলে তৃষা ম্যামের অফিসের একজন এমপ্লোয়ী !
-ও আচ্ছা । বলুন কী সমস্যা ?
-আপনি কি এখন একটু অফিসে আসতে পারবেন?
-এখন ? কেন কী সমস্যা ? তৃষার কিছু হয়েছে ? ও ঠিক আছে ?
-না মানে ম্যাম খুব রেগে আছেন । উনাকে কেউ শান্ত করতে পারছে না ।

যদিও এই অংশটা খানিকটা মিথ্যা তবে নিজের চাকরি বাঁচাতে হলে এই টুকু মিথ্যা তো বলাই যায় । ওপাশ থেকে কিছু সময় চুপ করে থেকে অপু বলল, আচ্ছা আমি আসছি ।

আমির সাহেব ফোন রাখার পরে রাকিবের দিকে তাকিয়ে বললেন, এই ছেলে কি পারবে?
-কী জানি ! তবে স্যার একজন আমি নক না করেই ম্যামের ঘরের দরজা খুলে ফেলেছিলাম । সেদিন দেখি ম্যাম ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছে আর হাসছে । এমন ভাবে তাকে কোন দিন হাসতে দেখি নি । আমার কেন জানি মনে হয় এই ছেলের সাথেই কথা বলছিলো সে । আর সেদিন আমাদের একাউন্স ডিপার্মেন্টের রিদি হক আছে না, সে নাকি ম্যামকে কোন ছেলের সাথে ঘুরতে দেখেছে । তাও আবার রিক্সাতে । ভাবতে পারেন !

আরও ঘন্টা খানেক পরে তার দুজন অফিসে প্রবেশ করলো । পিয়নের কাছে জানতে চাইলো যে এমডি ম্যাম তাদের খোজ করেছিলো কিনা ! পিয়ন বলল যে করে নি । পিয়ন আরও জানালো যে একজন ছেলে ম্যামের কেবিনে ঢুকেছে এই মিনিট বিশেক আগে ।
দুজনেই একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল । ম্যামের রাগ তাহলে একটু কমবে আশা করা যাচ্ছে ।

আরও মিনিট ত্রিশ পরে আমির সাহেব এবং রাকিবের ডাক পরলো এমডি ম্যামের কেবিনে । তারা ভয়ে ভয়ে কেবিনে প্রবেশ করলো । সামনা সামনি বসে রইলো চুপচাপ । আমির সাহেবের বয়সের অর্ধেকের একটু বেশি বয়স হবে তৃষার কিন্তু এই বয়সেই কী যে এক গার্ভীর্য মেয়েটাকে পেয়ে বসেছে । সামনে বসলেই সবার খবর খারাপ হয়ে যায় ।

সামনে রকলেট ইন্টারন্যাশনালের ফাইলটা দেখা যাচ্ছে । সেদিকেই তার চোখ । তবে তাদেকে সেই সম্পর্কে কোন কথা জিজ্ঞেস করলো না । তারা খেয়াল করেছে কেবিনে আরও একজন রয়েছে । অফিসের ডেস্কের পাশে উল্টো দিকে সোফা বসে আছে একজন । তার দিকে তাকানোর সময় পায় নি ওরা ভাল করে । ছেলেটা নিজের মোবাইলে কী যেন করছে ।
তৃষা তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, অপুকে এখানে ডেকে আনার বুদ্ধি কার মাথা থেকে বের হয়েছে?
দুজনেই একে অন্যের দিকে তাকালো । কী বলবে ঠিক বুঝতে পারলো না ।
-ড্যাড বলেছে ?

কোন কথা বলতে যাবে তখনই পেছন থেকে পায়ের আওয়াজ পাওয়া গেল । অপু নামের ছেলেটা তাদের পেছনে এসে দাড়িয়েছে । অপু বলল, আরে বাবা তুমি এমন ভাবে জেরা কেন করছো শুনি ? আমাকে কেন ডেকে আনতে হবে? আমি এমনি আসতে পারি না ?
তৃষা বলল, এখন বাজে বারোটা । তুমি আরও এক ঘন্টা আগে এখানে এসেছো । তার মানে তোরম ঘুম অন্তত দুই ঘন্টা আগে ভেঙ্গেছে । তোমার ঘুম কখন ভাঙ্গে আমি জানি না ?
-আচ্ছা বুঝলাম । ইনারা ভুল করে ফেলেছে । অন্যায় তো আর করে নি !
-এদের জন্য কত টাকা ক্ষতি হয়েছে হিসাব আছে !
-ক্ষতি কোথায় হয়েছে ? ডিল হাত হয়েছে । কাজ শুরুই হয় নি । ক্ষতি কেন হবে? লস তো আর হয় নি । কোম্পানির পকেট থেকে তো টাকা যায় নি । আর এতো টাকা দিয়ে কী হবে শুনি ? একটা ডিল হাত ছাড়া হয়েছে সামনে আরও দশটা আসবে । নো বিগ ডিল !
-তাই না ! নো বিগ ডিল !
-আচ্ছা যাও যখন আমার কোম্পানী হবে আমার একাউন্ট থেকে কেনে নিও ।
-তোমার কোম্পানী ! কবে হবে শুনি ?
-এই যেদিন তুমি বিয়ের জন্য হ্যা বলবে সেদিন । এই এতো বড় কোম্পানীর মালিক হয়ে যাবো !
-ইস শখ কত তোমার !
-এটা শখ না জানেমান, লক্ষ্য ! বড় লোকের মেয়েকে পটিয়ে বিয়ে করে অনেক টাকার মালিক হয়ে যাওয়া !
-পটিয়ে ! ছিঃ কী বাজে শব্দ ! তোমাকে না বলেছি এই শব্দ ব্যবহার না করতে ।
-আরে এটা তো শদ্ধ শব্দ । বাংলা একাডেমি ডিকশনারীতে আছে । দেখাবো তোমাকে?
-চুপ ! একদম চুপ ।

আমির সাহেব আর রাকিব চুপচাপ দুজনের কথোপথন শুনছিলো । তৃষা তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, এই ট্রিক্স দয়া করে দ্বিতীয়বার এপ্লাই করবেন না । যান দুজনে নিজের ডেস্কে যান । আর সামনে সিমনস গ্রুপের যে প্রজেক্টটা রয়েছে সেটা নিয়ে কাজ শুরু করেন । এটা যেন ভুল না হয় !
-জি ম্যাম !

বলেই দুজন উঠে গেল । দরজা দিয়ে বের হতে হতে তাদের খেয়াল হল অপু নামের ছেলেটা তার তৃষা ম্যামের চেয়ারের সামনে গিয়েছে । হাত দিয়ে চেয়ারের হাতলে ভর দিয়ে দাড়িয়েছে ।
রাকিব দরজা বন্ধ হওয়ার আগেও দেখলো তাদের তৃষা ম্যামের মুখে একটা হাসি দেখা যাচ্ছে । কয়েকটা শব্দও তার কানে এল, অপু বলছে তো আমরা যেন কী বলছিলাম ….

নিজের ডেস্কে বসে আমির সাহেব বলল, বড় বাঁচা বেঁচে গেছি ।
-জি স্যার । কিন্তু ছেলে ম্যামকে এভাবে পটালো কীভাবে বলেন তো ?
-কী জানি । আমিও কিছু জানি না ।
-মনে আছে একবার বানিজ্য মন্ত্রীর ছেলে ম্যামকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো । ম্যাম এক বাক্যে না করে দিয়েছে । এই ছেলে কিভাবে পটিয়ে ফেলল বলেন তো দেখি! একেবারে রাজ্যসহ রাজকন্যা পেয়ে গেল !
-জগতে কে কী যে করে ফেলে সেটা বোঝা মুশকিল ! যাই হোক এবার মন দিয়ে কাজ কর । এবার যেন আর ভুল না হয় !

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 92

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →