-মেয়ে ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক দেয় ।
মা আমার কথা শুনে কিছু সময় কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো । বিয়ের পাত্রীর বাতিলের পেছনে এমন কারণও যে থাকতে পারে এটা সম্ভবত মায়ের মাথাতে ছিল না। বলল
-কি বললি ?
-বললাম এই মেয়ে ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক দেয় । এই মেয়ের সাথে আমি বিয়ে করবো না ।
-গাঢ় লিপস্টিক দিলে কি সমস্যা ?
-সমস্যা আছে । তোমাকে বলা যাবে না ।
মা কি বলবে ঠিক খুজে পেলেন না । এইবারের এই মেয়ে তিনি খুজে নিয়ে এসেছেন । প্রতিবার বাবা কিংবা বাবার দিককার কেউ বিয়ের পাত্রীর খোজ দেন আর মা সেটাতে হাজারও ভুল বের করে । আমার ভালই হয় আমার কাজটা মা আর বোন মিলে সম্পন্ন করে দেয় । আমাকে কিছু করতে হয় না ।
জর্জ বার্নার শ বলেছেন যে পুরুষ মানুষের জীবনের সব থেকে বড় লক্ষ হচ্ছে যত বেশি দিন সম্ভব অবিবাহিত থাকা যায় । আমি বার্নার শ সাহেবের কথা পালন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি ।
তার উপরেও আমার খানিকটা লিপস্টিক দেওয়া মেয়েদেরকে কেন জানি ঠিক পছন্দ হয় না, তা সে যত সুন্দরই হোক না কেন । যদিও এটা একটা অযুহাত মাত্র ।
মা আর কোন কথা না বলে উঠে গেল । তাকে মোটেই সন্তুষ্ট মনে হল না । মেয়েটি শুনেছি মায়ের কোন এক বান্ধবীর মেয়ে । অন্য দিক দিয়ে মেয়ে নাকি অরিনের ভাল বন্ধুও হয় । দুই প্রজন্মের বান্ধবী তারা । আমাদের বাসাও কয়েকবার এসেছে । যদিও আমি খুব একটা ভাল করে মেয়ে কে লক্ষ্য করি নি এর আগে । আজকে বিকেলেই প্রথম বারের মত ভাল করে লক্ষ্য করলাম ।
মেয়ে দেখতে অরিন আর আমি গিয়েছিলাম । যদিও আমরা সবাই জানতাম এটা বিয়ে পুর্ববর্তী দেখা সাক্ষাত তবুও এমন একটা ভাব করতে লাগলাম যেন খুবই ক্যাজুয়াল একটা দেখা সাক্ষাত । ছোট বোনের বান্ধবীর সাথে শপিং মলে দেখা হয়ে যাওয়া এমন একটা কিছু ।
নিশির প্রথম যে জিনিস টা আমার চোখ পড়লো যে ওর ঠোঁটে লাল গাঢ় লিপস্টিক । আমার চোখ আর অন্য কোন দিকে গেল না । মনে মনে বললাম এই মেয়ে কে কিছুতেই বিয়ে করা যাবে না ।
না ।
মানে না ।
বাবা তখনও খাটের উপর বসে । মা দরজার কাছে গিয়ে ঘুরে দাড়িয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমার ছেলের জন্য আমি আর মেয়ে দেখতে পারবো না । যা করার তুমি করবে ..
মা চলে যাওয়ার পর বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-সত্যি করে বল দেখি নিশিকে রিজেক্ট কেন করতে চাচ্ছিস ? মেয়েটা কিন্তু খারাপ না কোন দিক দিয়েই । যদিও তোর মায়ের চয়েজ তবুও আমি খোজ খবর নিয়েছি । না হওয়ার কোন কারন কিন্তু নেই ।
আমি কোন কথা না বলে কেবল হাসলাম । আমার ধারনার কথা বাবারও জানার কথা না । বাবা আবারও আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক দিলে সমস্যা কি ? অনেকেই তো দেয় ।
আমি এবারও বাবার কথার জবাব না দিয়ে হাসি হাসি মুখ করে বাবার দিকে তাকিয়ে রইলাম । বাবা কি বুঝলো কে জানে,বলল
-যাক যখন পছন্দ হয় নি তাহলে থাক । সারা জীবনের প্রশ্ন বলে কথা । তোর মায়ের কথা চিন্তা করিস না । আমি দেখবো । তবে আরেকবার ভেবে দেখতে পারিস কিন্তু ।
আমি আরও কি বলবো ঠিক বুঝলাম না । তবে আপাতত বিপদ যে কেটে গিয়েছে এতেই আমি খুশি । তবে বাবার ঘর থেকে বের হওয়ার পরপরই অরিন আমাকে পাকরাও করলো ।
আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুই নিশিকে রিজেক্ট করছিস কেন শুনি ? তোর সাত কপালের ভাগ্য যে নিশির মত মেয়েকে পাত্রী হিসাবে পাচ্ছিস ।
-যা ভাগ । বেশি প্যাঁচাল পারিস না । আমার সাত কপালের ভাগ্য । ফু….।
-তুই জানি এর আগে ও আরও ১১ জন ছেলেকে রিজেক্ট করেছে । তার ভিতর দুই জন ছিল আমেরিকান প্রবাসি ।
-তো । আমি এই কথা শুনে নাচবো ? জ্বালাস না । দুরে যা ।
-ভাইয়া ।
-শোন বিয়ে তুই করবি না । আমি করবো এখানে তোর কোন কথা নেই । এখন সামনে থেকে দুরে যা ।
আমি অরিন কে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে পড়লাম । অরিনও আমার ঘরে ঢুকতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই দরজা বন্ধ করে দিলাম ।
ঠোঁটে লিপস্টিক দেওয়ার ব্যাপার আমার একটা ব্যক্তিগত মতামত আছে । যদিও মতামতটা একেবারে আমার নিজের ব্যক্তিগত না । শোমি ভাইয়ের । পাড়ার বড় ভাই । প্রত্যেক পাড়াতেই কিছু অকাইম্মা বড় ভাই থাকে যাদের কোন কাজ থাকে না । কেবল তার থেকে বয়সে ছোটদেরকে ডেকে নিজের বিস্তার অকাজের জ্ঞান বিতরন করে । যার বেশির ভাগ প্রেম এবং নারী বিষয়ক যদিও সেই বড় নিজে কোন দিন একটা প্রেম করে থাকে কি না সন্দেহ । শোমী ভাই ঠিক সেরকম । কোন দিন কোন মেয়েকে ঠিক মত পটাতে পারে নি অথচ নারী এবং প্রেম বিষয়ক তার জ্ঞানের সীমা নেই ।
তিনি এক দিন হঠাৎ করেই বললেন
-শোন অপু কোন দিন ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক দেওয়া মেয়ের সাথে বিয়ে করবি না ।
-কেন ভাই ?
-করবি না বলছি করবি না ।
-প্রেম করা যাবে ?
-হুম প্রেম করতে পারিস । তবে বিয়ে না । প্রেম একটা অস্থায়ী ব্যাপার । কিন্তু বিয়ে !
পাশে সুমন বসে ছিল । শোমী ভাইয়ের কথা শেষ করার সাথে সাথেই বলল
-আজকার বিয়েও কিন্তু স্থায়ী না ।
-স্থায়ী না হলেই এই বেলায় হবে । আর তোর জীবন একে বারে জাহান্নাম হয়ে যাবে ।
আমরা দুজনেরই একে অপরের দিকে তাকালাম । তারপর শোমী ভাইয়ের দিকে তাকালাম ।
-ঘটনা কি বলেন তো ।
ভাইয়ের কাছে কাছে একটা অদ্ভুত বই আছে । চীনা ভাষায় লেখা । সেখানে এসব অদ্ভুত সব কথা বার্তা লেখা আছে । যদিও সেই চীনা ভাষার বইটা আমাদের কে দেখান নি । আর আমাদের মনে যথেষ্ঠ সন্দেহ আছে তিনি আসলেই চীনা ভাষা পড়তে পারেন কি না ।
যাই হোক শেষ পর্যন্ত তিনি আমাদের কারন টা বলেন নি । কিন্তু মনের ভিতরে সেই কৌতুহল টা রয়েই গেছিল । তখন থেকেই যখনই কোন গাঢ় লিপস্টিক দেওয়া মেয়ে দেখলাম একটু লক্ষ্য করতাম ।
একদিন হঠাৎ করেই লক্ষ্য করলাম যে মেয়ে গুলো ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক দেয় তারা সবাই খানিকটা ডোমেনেটিং মনভাবাপান্ন হয় । বিশেষ করে বিবাহিত মেয়েরা তো স্বামীকে আঙ্গুলের ইশারায় নাচায় । এক দুই তিন করে করে আশে পাশের অনেকর উপর পরিসংখ্যান করে দেখতে পেলাম ঘটনা আসলেই সত্য ।
যাদের বউ ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিপ দেয় তারা সব সময় বউয়ের কথায় ওঠে আর বসে । আমি এমনতেই বিয়ে করতে চাই না তার উপর যদি এমন বউ পাই তাইলে তো খবরই আছে আমার ।
ভেবেছিলাম নিশির চ্যাপ্টার এখানেই শেষ হয়ে যাবে কিন্তু শেষ হল না । মা নিশ্চই জানিয়ে দিয়েছে আমার অমতের কথা তাদেরকে । আমার আর ওদিকে চিন্তা করার কোন কারন নেই । আপাতত মাস খানেক কোন সমস্যা হওয়ার কথা না ।
ঠিক চারদিনের মাথায় নিশি আমার অফিসে এসে হাজির । তবে আজকে দেখলাম তার ঠোঁটে লিসস্টিপ নেই । নেই সেদিনের মত মেকআপও । আজকে মেয়েটাকে দেখে কেন জানি অন্য রকম মনে হল । আমার কেন জানি এমন একটা ক্ষুদ্র সন্দেহ ছিল যে নিশির সাথে আমার আবারও কোন দিন দেখা হবে । সেদিন সে নিশ্চয়ই তাকে না বলার কারন টা জানতে চাইবে । তবে সরাসরি হয়তো জনাতে চাইবে না । ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে জানতে চাইবে । অরিন বলেছিল আমার আগে সে আরও ১১ জন কে না করে দিয়েছে । এমন না করা মানুষকে যখন অন্য কেউ না করে তখন সেই মানুষ গুলো কিছুতেই সহ্য করতে পারে না । মেয়ে হলে তো আরও কথা নেই । কিন্তু এতো জলদি চলে আসবে আমি ভাবি নি ।
নিশির আমার সামনে বসে বেশ কিছুটা সময় কোন কথা বললা না । মনে হল যেন কোন কিছু গুছিয়ে নিচ্ছে । আমি বললাম
-কিছু খাবেন ? চা আনতে বলবো ?
-আমি এখানে চা খেতে আসি নি ।
নিশির কন্ঠে কেমন একটা কাঁপা কাঁপা মনে হল ।
-তাহলে ? কিছু বলার ছিল ।
-জি ।
-বলুন ।
আরও কিছুটা সময় নিরবতা । তারপর নিশির হঠাৎ করেই বলল
-আপনি কি জানেন আমি আপনার আগে আরও ১১ জন রিজেক্ট করেছি ।
-জি না । এখন জানলাম ।
যদিও একথাটা মিথ্যা । আমি খুব ভাল করেই এই তথ্যটা জানি ।
-আমার কেন জানি মেন হচ্ছে আপনি জানতেন ।
-না আমি জানতাম না ।
-ঐ ১১ জনের মধ্যে নিশ্চই আপনার পরিচিত কেউ ছিল । তাই না ?
-আপনি আসলে কি বলছেন ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না ।
আমি মনে মনে হাসছি । আমি যা ধারনা করেছিলাম ঠিক তেমন টাই হয়েছে । নিশির আর কিছু না বলে যেমন করে এসেছিল ঠিক তেমনই হঠাৎ করেই চলে গল ।
আমি কেবল নিশির চলে যাওর দিকে তাকিয়ে রইলাম । তারপর হঠাৎ করেই হেসে ফেললাম নিজের মনে । নিশির মনে এমন চিন্তা টা আসেই নি যে কোন ছেলে ওকে বাতিল করতে পারে । এতো দিন ও কেবল ছেলেদের বাতিল করে এসেছে আমাকে হয়তো বাতিল করে দিতো কিন্তু আমি আগে না করাতে নিশি এটা কিছুতেই নিতে পারছে না ।
আসলে এমন হয় । নিজেকে নিয়ে নিজের চেহারা নিয়ে যাদের অংকারের শেষ নেই তাদের কে হঠাৎ করে কেউ না করলে সেটা তারা ঠিক মত নিতে পারে না । নিশিও মনে হচ্ছে নিতে পারছে না । আমি ওকে না করেছে এটা ও ঠিক মত মানতেই পারছে না ।
কিন্তু মেয়েটা ঠিক মত জানেই না আমি তাকে কেন না করেছে ।
অফিস থেকে ফেরার পথে শোমী ভাইয়ের খোজ করতে লাগলাম । শোমী ভাইয়ের সাথে খানিকটা পরামর্শ করা দরকার । তাকে পাওয়া গেল জায়গা মতই । আমার সব কথা শুনে শোমী ভাই বেশ কিছুটা সময় চুপ করে রইলো । তারপর হঠাৎ করেই বলল
-এক কাজ কর মেয়েটাকে বিয়ে করে ফেল ।
-মানে কি ? আপনি যে আপনার থিউরী বদলে ফেলছেন ।
-আরে থিউরীর গুল্লি মার । মানুষের জন্য থিউরী, থিউরীর জন্য মানুষ না । দেখ, প্রথম দিন নিশিকে কেমন দেখেছিস আর আজকে কেমন দেখলি ?
আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না শোমী ভাই কি বলতে চাইছিলেন ।
-শোন পরিবর্তন টা লক্ষ্য কর । মেয়েটা পরিবর্তিত হচ্ছে । সব চেয়ে বড় কথা তোর জন্য । এটা একটা বড় কথা । শোন থিউরী আজকে ঠিক কালকে ভুল কিন্তু মানুষ যখন একবার কারও জন্য বদলায় তখন আবার সে সহজে বদলায় না । বিয়ে করে ফেল ।
দুর কি বুদ্ধি নিতে এলাম আর কি হয়ে গেল । আমি চাইছি আরও কিছু দিন বিয়ে না করে যত বেশিদিন সম্ভব থাকা যায় আর এই দিকে শোমী ভাই আমাকে কি বুদ্ধি দিচ্ছে ।
বাসায় এসে শুনলাম ঘটনা নাকি আরও ভয়াবহ । নিশি নাকি আমাদের বাসায়ও এসেছিল । মাকে কি কি জানি বলে গেছে । মা তারপর থেকে চুপ করে বসে আছে । কোন কথা বলছে না । বাবাকেও নাকি কোন কিছুই বলে নি ।
আমাকে দেখেও কিছু বলল না । গম্ভীর মুখ আরও বেশি গম্ভীর হয়ে গেল । এদিকে বাবাও চুপ । আমি পড়লাম মহা ঝামেলায় । মা বাবার মুখ দেখে মনে হল যেন তাদের এই গাম্ভীর্যের পেছনে দায়ী একমাত্র আমি । বিয়েতে রাজী হয়ে গেলে আর এতো ঝামেলা হত না । আবার এদিকে কি এক কথা শোমী ভাই মাথার ভিতরে ঢুকিয়ে দিলো ।
শোবার অরিন কে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে । অরিনও বলল সে কিছু জানে না । নিশি নাকি কেবল মায়ের সাথেই কথা বলেছে । দরজা আটকে কি বলেছে অরিনও জানে না । এবং আরও একটা নতুন তথ্য জানলাম, আমি যে নিশিকে গাঢ় লিপস্টিক দেওয়ার জন্য রিজেক্ট করেছি এটা জানার পর নাকি নিশি তার প্রসাধনীর সব কিছু জানলা দিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছে ।
তথ্যটা জেনে কেন জানি একটু ভাল লাগলো । সেদিন অরিন বলেছিল নিশি নাকি সাজতে খুব পছন্দ করে । আর আমার জন্য সে তার পছন্দের জিনিস বাইরে ফেলে দিল ।।।
শোমী ভাইয়ের কথা আবারও আমার মনে গেল ।
আমার জন্য পরিবর্তন !!
রাতে আমি একটু একা একাই থাকতে পছন্দ করি । বিশেষ করে ছুটির দিন গুলোর রাতের বেলা । নিশি বাসায় এসেছিল তারপর থেকে বাসার সবাই কেমন যেন আমার হরতাল মূলক আচরন করছে । ঠিক ঠাক মত কথা বলছে না । বাবা অবশ্য কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু মায়ের জন্য পারছে না । আমি নিজের ঘর ছাড়া বের হচ্ছি না । কে আসলো কে গেল সেদিকেও আমারও কোন খোজ নেই ।
পরদিন রাতে খাওয়ার জন্য টেবিলে গিয়ে হাজির হলাম তখন খুব বড় একটা ধাক্কা খেতে হল । নিশি খুব স্বাভাবিক ভাবে টেবিলে বসে আছে । মা তার প্লেটে খাবার দিচ্ছে । বাবাও হাসি মুখে নিশির সাথে কথা বলছে । অরিন আমাকে দেখে এমন একটা হাসি দিল যেন আমার এবার সত্যই খবর আছে । অবশ্য খুব একটা চিন্তার কারন না । নিশি এর আগেও আমাদের বাসায় এসেছে । কিন্তু এই রাতে রবেলা এই মেয়ে এখানে কি করে ?
আমিও চুপচাপ খেতে বসলাম । নিশি যে দিকে বসলো তার উল্টো দিকে । চুপচাপ খেয়ে উঠে পড়াই শ্রেয় মনে করলাম । না জানি আমার মা আর নিশি মিলে কি এক বুদ্ধি বের করেছে । আমি ঠিক বুঝতে পারছি না । মেয়েটার মনে কি আছে সেটাও ঠিক মত বুঝতে পারছি না ।
আসল ঘটনা ঘটলো রাতের বেলা । আমি নিজের ল্যাপ্টপে ফেসবুক ব্রাউজ করছিলাম তখনই আমার মোবাইলে একটা ফোন এল । অপরিচিত নাম্বার । তবুও আমি জানি যে এটা কার নাম্বার ।
সত্যি বলতে কি আমি নিজেও এমন একটা ফোনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম ।
-হ্যালো ।
-আপনাদের বাসার ছাদে কি ওঠা যায় রাতের বেলা ?
-জি যায় ।
-আমাকে একটু নিয়ে যাবেন । কেন জানি ছাদে যেতে ইচ্ছে করছে ।
একবার মনে হল বলি যে যাওয়া যায় তবে এখন যেতে ইচ্ছে করছে না, আপনি অরিন কে নিয়ে যান । কিন্তু বললাম না । মেয়েটা যখন এতো আগ্রহ দেখাচ্ছে তখন যাই । আজকে নিশিকে দেখে কেন জানি আমার মোটেও সেদিনের মত মনে হয় নি । কিছু একটা পরিবর্তন তো অবশ্য ছিল ।
ছাদের এসে অনেক টা সময় এদিক ওদিক হাটতে লাগলাম । পুরো ছাদে আর কেউ নেই । নিশি এক দিকেই দাড়িয়ে আছে । আমি এদিক ওদিন হাটার পরে নিশির পাসে এলে দাড়াতেই নিশি বলল
-আমার ছোট বেলা থেকেই সাজতে অনেক পছন্দ করি ।
-জি । আমি বুঝতে পারছি ।
বেশ খানিকটা নিরবতা ।
অরিনের কাছে আমি সেদিনই শুনেছিলাম । নিশি নাকি সাজ গোজ অনেক পছন্দ করে । আর আমার মায়েরও এমন একটা ছেলের বউ চাই যে সব সময় ঘর আলো করে সেজে গুজে বসে থাকবে । যে আসবে তাকে দেখাবে দেখো আমার বউমা কত সুন্দরী ।
আমি আর কি বলবো ঠিক বুঝতে পারলাম না । নিশি বলল
-জীবনে এই প্রথম নিজেকে এতো অপমানিত মনে হল আমি আপনাকে বলে বোঝাতে পারবো না । আমি আসলে …….. আমি আসলে…..।
নিশির কথা টা আমি নিজে শেষ করে দিলাম
-আপনাকে কেউ রিজেক্ট করতে পারে এটা আমি কোন দিন ভাবতেই পারেন নি, তাই না ?
একটু চুপ করে থেকে নিশি বলল
-জি ।
-এখন ?
-জানি না ।
-আচ্ছা আপনি হঠাৎ করে আমাদের বাসায় এসে হাজির কেন বলেন তো ?
-জানি না ।
-মা বলেছে ?
-জানি না ।
-অরিনের বুদ্ধি ।
-জানি না ।
যে কথাই বলি সে কথাতেই মেয়ে বলে জানি না ।
আমি বললাম
-আমাকে বিয়ে করবেন ?
-জানি ….. । …….অ্যা…. কি বললেন ?
-কিছু বলি নি ।
বলেই হেসে ফেললাম । অন্ধকারের ভিতর নিশি আমার দিকে কেমন চোখ তাকিয়ে রইলো । আমি বললাম
-আচ্ছা আপনি যে নিজের যখন এতো জন ছেলেকে রিজেক্ট করেছেন তখন কি আপনার একবারও মনে হয় নি যে তাদের মনে কেমন লেগেছে ?
নিশি কোন কথা না বলে চুপ করে রইলো । আমি বললাম
-যদিও পছন্দ অপছন্দের ব্যাপার একান্তই আপনার নিজের ব্যাপার । তেমনি অন্যের পছন্দ অপছন্দের তো একটা ব্যাপার আছে । তাই না ?
-কিন্তু আপনার কারন টা ?
আবারও কিছুটা সময় চুপ ।
-আসলে একটা ব্যাপার কি, মানুষ যেটা পায় না সেটার ব্যাপারে মানুষের আগ্রহের শেষ থাকে না । ঠিক যেমন টা আপনার এখন মনে হচ্ছে আপনার । যখন আপনার সাথে যখন বিয়ে হয় দেখবেন পরে আফসোস হবে ।
-না হবে না ।
“না হবে না” নিশির এই কথাটাতে বেশ দৃঢ়তা লক্ষ্য করলাম ।
-এতো শিওর কেন হচ্ছেন ?
-আমি জানি ।
-তাই ? যদি পরে সমস্যা হয় ?
-হবে না ।
-বাহ । এতো নিশ্চিত আপনি কিভাবে হচ্ছেন বলেন তো ? আমি নিজেই এখন খানিকটা কনফিউজ হয়ে যাচ্ছি । মনে হচ্ছে আপনাকে বিয়ে করে ফেলি ।
-চলুন । বিয়ে করে ফেলি ।
এই মেয়ের মাথায় আসলেই সমস্যা আছে । অবশ্যই আছে । তা হলে এমন পাগলামো কেউ করতে পারে । আমার কেন জানি মনে হচ্ছে কেবল একটা নাই মেয়েটার সব কিছু ওলট পালট করে দিয়েছে । কিছুতই স্বাভাবিক চিন্তা করতে পারছে না ।
আমি আবারও হাহা করে হেসে ফেললাম । বললাম
-চলুন নিচে চলুন । আপনার মাথা গরম হয়ে আছে । রাতে আরও ভালো করে, ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করবেন । সকালে আপনার সাথে কথা হবে আরও । ঠিক আছে ।
আমি ফেরার পথে ঘুরবো ঠিক তখনই নিশি একটা অবাক করা কাজ করলো । কেন করলো আমি জানি না । তবে আমি নিজেও খানিকটা সময় অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম ।
কয়েক মুহর্ত আসলেই যেন সব কিছু থেমে গেল । যখন নিশি আমার থেকে পৃথক হল তখন যেন আবারও পৃথিবী সচল হল ।
সিড়ি নিশি আগে আগে নামছিল আমি ওর একটু পেছন পেছন । অনুভব করছিলাম একটা অন্য রকম ভাললাগার অনুভুতি আমাকে পেয়ে বসেছে ।
এই অজানা অনুভুতির কোন জান নেই । নামতে নামতে শোমী ভাইয়ের কথাই মনে হল “আরে থিউরীর গুল্লি মার । মানুষের জন্য থিউরী, থিউরীর জন্য মানুষ না”
পরিশিষ্টঃ
বিয়ের সাজ পার্লার থেকেও করিয়ে আনলেও অদ্ভুত হলে সত্যি যে নিশি ঠোঁটে বিন্দু মাত্র লিপস্টিক দেয় নি । যদিও তাতে খুব বেশি সমস্যা হচ্ছিলো না । লিপস্টিক ছাড়াই ওর ঠোঁট দুটো বেশি সুন্দর লাগছিল । যাক সমস্যা না । রাতের বেলা লিপস্টিক পেটের ভেতর যাবে না এটা একটা ভাল কথা ।