গাঢ়-লিপস্টিক থিউরী

oputanvir
4.8
(51)

-মেয়ে ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক দেয় ।

মা আমার কথা শুনে কিছু সময় কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো । বিয়ের পাত্রীর বাতিলের পেছনে এমন কারণও যে থাকতে পারে এটা সম্ভবত মায়ের মাথাতে ছিল না। বলল

-কি বললি ?

-বললাম এই মেয়ে ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক দেয় । এই মেয়ের সাথে আমি বিয়ে করবো না ।

-গাঢ় লিপস্টিক দিলে কি সমস্যা ?

-সমস্যা আছে । তোমাকে বলা যাবে না ।

মা কি বলবে ঠিক খুজে পেলেন না । এইবারের এই মেয়ে তিনি খুজে নিয়ে এসেছেন । প্রতিবার বাবা কিংবা বাবার দিককার কেউ বিয়ের পাত্রীর খোজ দেন আর মা সেটাতে হাজারও ভুল বের করে । আমার ভালই হয় আমার কাজটা মা আর বোন মিলে সম্পন্ন করে দেয় । আমাকে কিছু করতে হয় না ।

জর্জ বার্নার শ বলেছেন যে পুরুষ মানুষের জীবনের সব থেকে বড় লক্ষ হচ্ছে যত বেশি দিন সম্ভব অবিবাহিত থাকা যায় । আমি বার্নার শ সাহেবের কথা পালন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি ।

তার উপরেও আমার খানিকটা লিপস্টিক দেওয়া মেয়েদেরকে কেন জানি ঠিক পছন্দ হয় না, তা সে যত সুন্দরই হোক না কেন । যদিও এটা একটা অযুহাত মাত্র ।

মা আর কোন কথা না বলে উঠে গেল । তাকে মোটেই সন্তুষ্ট মনে হল না । মেয়েটি শুনেছি মায়ের কোন এক বান্ধবীর মেয়ে । অন্য দিক দিয়ে মেয়ে নাকি অরিনের ভাল বন্ধুও হয় । দুই প্রজন্মের বান্ধবী তারা । আমাদের বাসাও কয়েকবার এসেছে । যদিও আমি খুব একটা ভাল করে মেয়ে কে লক্ষ্য করি নি এর আগে । আজকে বিকেলেই প্রথম বারের মত ভাল করে লক্ষ্য করলাম ।

মেয়ে দেখতে অরিন আর আমি গিয়েছিলাম । যদিও আমরা সবাই জানতাম এটা বিয়ে পুর্ববর্তী দেখা সাক্ষাত তবুও এমন একটা ভাব করতে লাগলাম যেন খুবই ক্যাজুয়াল একটা দেখা সাক্ষাত । ছোট বোনের বান্ধবীর সাথে শপিং মলে দেখা হয়ে যাওয়া এমন একটা কিছু ।

নিশির প্রথম যে জিনিস টা আমার চোখ পড়লো যে ওর ঠোঁটে লাল গাঢ় লিপস্টিক । আমার চোখ আর অন্য কোন দিকে গেল না । মনে মনে বললাম এই মেয়ে কে কিছুতেই বিয়ে করা যাবে না ।

না ।

মানে না ।

বাবা তখনও খাটের উপর বসে । মা দরজার কাছে গিয়ে ঘুরে দাড়িয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে বলল

-তোমার ছেলের জন্য আমি আর মেয়ে দেখতে পারবো না । যা করার তুমি করবে ..

মা চলে যাওয়ার পর বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-সত্যি করে বল দেখি নিশিকে রিজেক্ট কেন করতে চাচ্ছিস ? মেয়েটা কিন্তু খারাপ না কোন দিক দিয়েই । যদিও তোর মায়ের চয়েজ তবুও আমি খোজ খবর নিয়েছি । না হওয়ার কোন কারন কিন্তু নেই ।

আমি কোন কথা না বলে কেবল হাসলাম । আমার ধারনার কথা বাবারও জানার কথা না । বাবা আবারও আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক দিলে সমস্যা কি ? অনেকেই তো দেয় ।

আমি এবারও বাবার কথার জবাব না দিয়ে হাসি হাসি মুখ করে বাবার দিকে তাকিয়ে রইলাম । বাবা কি বুঝলো কে জানে,বলল

-যাক যখন পছন্দ হয় নি তাহলে থাক । সারা জীবনের প্রশ্ন বলে কথা । তোর মায়ের কথা চিন্তা করিস না । আমি দেখবো । তবে আরেকবার ভেবে দেখতে পারিস কিন্তু ।

আমি আরও কি বলবো ঠিক বুঝলাম না । তবে আপাতত বিপদ যে কেটে গিয়েছে এতেই আমি খুশি । তবে বাবার ঘর থেকে বের হওয়ার পরপরই অরিন আমাকে পাকরাও করলো ।

আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-তুই নিশিকে রিজেক্ট করছিস কেন শুনি ? তোর সাত কপালের ভাগ্য যে নিশির মত মেয়েকে পাত্রী হিসাবে পাচ্ছিস ।

-যা ভাগ । বেশি প্যাঁচাল পারিস না । আমার সাত কপালের ভাগ্য । ফু….।

-তুই জানি এর আগে ও আরও ১১ জন ছেলেকে রিজেক্ট করেছে । তার ভিতর দুই জন ছিল আমেরিকান প্রবাসি ।

-তো । আমি এই কথা শুনে নাচবো ? জ্বালাস না । দুরে যা ।

-ভাইয়া ।

-শোন বিয়ে তুই করবি না । আমি করবো এখানে তোর কোন কথা নেই । এখন সামনে থেকে দুরে যা ।

আমি অরিন কে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে পড়লাম । অরিনও আমার ঘরে ঢুকতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই দরজা বন্ধ করে দিলাম ।

ঠোঁটে লিপস্টিক দেওয়ার ব্যাপার আমার একটা ব্যক্তিগত মতামত আছে । যদিও মতামতটা একেবারে আমার নিজের ব্যক্তিগত না । শোমি ভাইয়ের । পাড়ার বড় ভাই । প্রত্যেক পাড়াতেই কিছু অকাইম্মা বড় ভাই থাকে যাদের কোন কাজ থাকে না । কেবল তার থেকে বয়সে ছোটদেরকে ডেকে নিজের বিস্তার অকাজের জ্ঞান বিতরন করে । যার বেশির ভাগ প্রেম এবং নারী বিষয়ক যদিও সেই বড় নিজে কোন দিন একটা প্রেম করে থাকে কি না সন্দেহ । শোমী ভাই ঠিক সেরকম । কোন দিন কোন মেয়েকে ঠিক মত পটাতে পারে নি অথচ নারী এবং প্রেম বিষয়ক তার জ্ঞানের সীমা নেই ।

তিনি এক দিন হঠাৎ করেই বললেন

-শোন অপু কোন দিন ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক দেওয়া মেয়ের সাথে বিয়ে করবি না ।

-কেন ভাই ?

-করবি না বলছি করবি না ।

-প্রেম করা যাবে ?

-হুম প্রেম করতে পারিস । তবে বিয়ে না । প্রেম একটা অস্থায়ী ব্যাপার । কিন্তু বিয়ে !

পাশে সুমন বসে ছিল । শোমী ভাইয়ের কথা শেষ করার সাথে সাথেই বলল

-আজকার বিয়েও কিন্তু স্থায়ী না ।

-স্থায়ী না হলেই এই বেলায় হবে । আর তোর জীবন একে বারে জাহান্নাম হয়ে যাবে ।

আমরা দুজনেরই একে অপরের দিকে তাকালাম । তারপর শোমী ভাইয়ের দিকে তাকালাম ।

-ঘটনা কি বলেন তো ।

ভাইয়ের কাছে কাছে একটা অদ্ভুত বই আছে । চীনা ভাষায় লেখা । সেখানে এসব অদ্ভুত সব কথা বার্তা লেখা আছে । যদিও সেই চীনা ভাষার বইটা আমাদের কে দেখান নি । আর আমাদের মনে যথেষ্ঠ সন্দেহ আছে তিনি আসলেই চীনা ভাষা পড়তে পারেন কি না ।

যাই হোক শেষ পর্যন্ত তিনি আমাদের কারন টা বলেন নি । কিন্তু মনের ভিতরে সেই কৌতুহল টা রয়েই গেছিল । তখন থেকেই যখনই কোন গাঢ় লিপস্টিক দেওয়া মেয়ে দেখলাম একটু লক্ষ্য করতাম ।

একদিন হঠাৎ করেই লক্ষ্য করলাম যে মেয়ে গুলো ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক দেয় তারা সবাই খানিকটা ডোমেনেটিং মনভাবাপান্ন হয় । বিশেষ করে বিবাহিত মেয়েরা তো স্বামীকে আঙ্গুলের ইশারায় নাচায় । এক দুই তিন করে করে আশে পাশের অনেকর উপর পরিসংখ্যান করে দেখতে পেলাম ঘটনা আসলেই সত্য ।

যাদের বউ ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিপ দেয় তারা সব সময় বউয়ের কথায় ওঠে আর বসে । আমি এমনতেই বিয়ে করতে চাই না তার উপর যদি এমন বউ পাই তাইলে তো খবরই আছে আমার ।

ভেবেছিলাম নিশির চ্যাপ্টার এখানেই শেষ হয়ে যাবে কিন্তু শেষ হল না । মা নিশ্চই জানিয়ে দিয়েছে আমার অমতের কথা তাদেরকে । আমার আর ওদিকে চিন্তা করার কোন কারন নেই । আপাতত মাস খানেক কোন সমস্যা হওয়ার কথা না ।

ঠিক চারদিনের মাথায় নিশি আমার অফিসে এসে হাজির । তবে আজকে দেখলাম তার ঠোঁটে লিসস্টিপ নেই । নেই সেদিনের মত মেকআপও । আজকে মেয়েটাকে দেখে কেন জানি অন্য রকম মনে হল । আমার কেন জানি এমন একটা ক্ষুদ্র সন্দেহ ছিল যে নিশির সাথে আমার আবারও কোন দিন দেখা হবে । সেদিন সে নিশ্চয়ই তাকে না বলার কারন টা জানতে চাইবে । তবে সরাসরি হয়তো জনাতে চাইবে না । ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে জানতে চাইবে । অরিন বলেছিল আমার আগে সে আরও ১১ জন কে না করে দিয়েছে । এমন না করা মানুষকে যখন অন্য কেউ না করে তখন সেই মানুষ গুলো কিছুতেই সহ্য করতে পারে না । মেয়ে হলে তো আরও কথা নেই । কিন্তু এতো জলদি চলে আসবে আমি ভাবি নি ।

নিশির আমার সামনে বসে বেশ কিছুটা সময় কোন কথা বললা না । মনে হল যেন কোন কিছু গুছিয়ে নিচ্ছে । আমি বললাম

-কিছু খাবেন ? চা আনতে বলবো ?

-আমি এখানে চা খেতে আসি নি ।

নিশির কন্ঠে কেমন একটা কাঁপা কাঁপা মনে হল ।

-তাহলে ? কিছু বলার ছিল ।

-জি ।

-বলুন ।

আরও কিছুটা সময় নিরবতা । তারপর নিশির হঠাৎ করেই বলল

-আপনি কি জানেন আমি আপনার আগে আরও ১১ জন রিজেক্ট করেছি ।

-জি না । এখন জানলাম ।

যদিও একথাটা মিথ্যা । আমি খুব ভাল করেই এই তথ্যটা জানি ।

-আমার কেন জানি মেন হচ্ছে আপনি জানতেন ।

-না আমি জানতাম না ।

-ঐ ১১ জনের মধ্যে নিশ্চই আপনার পরিচিত কেউ ছিল । তাই না ?

-আপনি আসলে কি বলছেন ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না ।

আমি মনে মনে হাসছি । আমি যা ধারনা করেছিলাম ঠিক তেমন টাই হয়েছে । নিশির আর কিছু না বলে যেমন করে এসেছিল ঠিক তেমনই হঠাৎ করেই চলে গল ।

আমি কেবল নিশির চলে যাওর দিকে তাকিয়ে রইলাম । তারপর হঠাৎ করেই হেসে ফেললাম নিজের মনে । নিশির মনে এমন চিন্তা টা আসেই নি যে কোন ছেলে ওকে বাতিল করতে পারে । এতো দিন ও কেবল ছেলেদের বাতিল করে এসেছে আমাকে হয়তো বাতিল করে দিতো কিন্তু আমি আগে না করাতে নিশি এটা কিছুতেই নিতে পারছে না ।

আসলে এমন হয় । নিজেকে নিয়ে নিজের চেহারা নিয়ে যাদের অংকারের শেষ নেই তাদের কে হঠাৎ করে কেউ না করলে সেটা তারা ঠিক মত নিতে পারে না । নিশিও মনে হচ্ছে নিতে পারছে না । আমি ওকে না করেছে এটা ও ঠিক মত মানতেই পারছে না ।

কিন্তু মেয়েটা ঠিক মত জানেই না আমি তাকে কেন না করেছে ।

অফিস থেকে ফেরার পথে শোমী ভাইয়ের খোজ করতে লাগলাম । শোমী ভাইয়ের সাথে খানিকটা পরামর্শ করা দরকার । তাকে পাওয়া গেল জায়গা মতই । আমার সব কথা শুনে শোমী ভাই বেশ কিছুটা সময় চুপ করে রইলো । তারপর হঠাৎ করেই বলল

-এক কাজ কর মেয়েটাকে বিয়ে করে ফেল ।

-মানে কি ? আপনি যে আপনার থিউরী বদলে ফেলছেন ।

-আরে থিউরীর গুল্লি মার । মানুষের জন্য থিউরী, থিউরীর জন্য মানুষ না । দেখ, প্রথম দিন নিশিকে কেমন দেখেছিস আর আজকে কেমন দেখলি ?

আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না শোমী ভাই কি বলতে চাইছিলেন ।

-শোন পরিবর্তন টা লক্ষ্য কর । মেয়েটা পরিবর্তিত হচ্ছে । সব চেয়ে বড় কথা তোর জন্য । এটা একটা বড় কথা । শোন থিউরী আজকে ঠিক কালকে ভুল কিন্তু মানুষ যখন একবার কারও জন্য বদলায় তখন আবার সে সহজে বদলায় না । বিয়ে করে ফেল ।

দুর কি বুদ্ধি নিতে এলাম আর কি হয়ে গেল । আমি চাইছি আরও কিছু দিন বিয়ে না করে যত বেশিদিন সম্ভব থাকা যায় আর এই দিকে শোমী ভাই আমাকে কি বুদ্ধি দিচ্ছে ।

বাসায় এসে শুনলাম ঘটনা নাকি আরও ভয়াবহ । নিশি নাকি আমাদের বাসায়ও এসেছিল । মাকে কি কি জানি বলে গেছে । মা তারপর থেকে চুপ করে বসে আছে । কোন কথা বলছে না । বাবাকেও নাকি কোন কিছুই বলে নি ।

আমাকে দেখেও কিছু বলল না । গম্ভীর মুখ আরও বেশি গম্ভীর হয়ে গেল । এদিকে বাবাও চুপ । আমি পড়লাম মহা ঝামেলায় । মা বাবার মুখ দেখে মনে হল যেন তাদের এই গাম্ভীর্যের পেছনে দায়ী একমাত্র আমি । বিয়েতে রাজী হয়ে গেলে আর এতো ঝামেলা হত না । আবার এদিকে কি এক কথা শোমী ভাই মাথার ভিতরে ঢুকিয়ে দিলো ।

শোবার অরিন কে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে । অরিনও বলল সে কিছু জানে না । নিশি নাকি কেবল মায়ের সাথেই কথা বলেছে । দরজা আটকে কি বলেছে অরিনও জানে না । এবং আরও একটা নতুন তথ্য জানলাম, আমি যে নিশিকে গাঢ় লিপস্টিক দেওয়ার জন্য রিজেক্ট করেছি এটা জানার পর নাকি নিশি তার প্রসাধনীর সব কিছু জানলা দিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছে ।

তথ্যটা জেনে কেন জানি একটু ভাল লাগলো । সেদিন অরিন বলেছিল নিশি নাকি সাজতে খুব পছন্দ করে । আর আমার জন্য সে তার পছন্দের জিনিস বাইরে ফেলে দিল ।।।

শোমী ভাইয়ের কথা আবারও আমার মনে গেল ।

আমার জন্য পরিবর্তন !!

রাতে আমি একটু একা একাই থাকতে পছন্দ করি । বিশেষ করে ছুটির দিন গুলোর রাতের বেলা । নিশি বাসায় এসেছিল তারপর থেকে বাসার সবাই কেমন যেন আমার হরতাল মূলক আচরন করছে । ঠিক ঠাক মত কথা বলছে না । বাবা অবশ্য কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু মায়ের জন্য পারছে না । আমি নিজের ঘর ছাড়া বের হচ্ছি না । কে আসলো কে গেল সেদিকেও আমারও কোন খোজ নেই ।

পরদিন রাতে খাওয়ার জন্য টেবিলে গিয়ে হাজির হলাম তখন খুব বড় একটা ধাক্কা খেতে হল । নিশি খুব স্বাভাবিক ভাবে টেবিলে বসে আছে । মা তার প্লেটে খাবার দিচ্ছে । বাবাও হাসি মুখে নিশির সাথে কথা বলছে । অরিন আমাকে দেখে এমন একটা হাসি দিল যেন আমার এবার সত্যই খবর আছে । অবশ্য খুব একটা চিন্তার কারন না । নিশি এর আগেও আমাদের বাসায় এসেছে । কিন্তু এই রাতে রবেলা এই মেয়ে এখানে কি করে ?

আমিও চুপচাপ খেতে বসলাম । নিশি যে দিকে বসলো তার উল্টো দিকে । চুপচাপ খেয়ে উঠে পড়াই শ্রেয় মনে করলাম । না জানি আমার মা আর নিশি মিলে কি এক বুদ্ধি বের করেছে । আমি ঠিক বুঝতে পারছি না । মেয়েটার মনে কি আছে সেটাও ঠিক মত বুঝতে পারছি না ।

আসল ঘটনা ঘটলো রাতের বেলা । আমি নিজের ল্যাপ্টপে ফেসবুক ব্রাউজ করছিলাম তখনই আমার মোবাইলে একটা ফোন এল । অপরিচিত নাম্বার । তবুও আমি জানি যে এটা কার নাম্বার ।

সত্যি বলতে কি আমি নিজেও এমন একটা ফোনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম ।

-হ্যালো ।

-আপনাদের বাসার ছাদে কি ওঠা যায় রাতের বেলা ?

-জি যায় ।

-আমাকে একটু নিয়ে যাবেন । কেন জানি ছাদে যেতে ইচ্ছে করছে ।

একবার মনে হল বলি যে যাওয়া যায় তবে এখন যেতে ইচ্ছে করছে না, আপনি অরিন কে নিয়ে যান । কিন্তু বললাম না । মেয়েটা যখন এতো আগ্রহ দেখাচ্ছে তখন যাই । আজকে নিশিকে দেখে কেন জানি আমার মোটেও সেদিনের মত মনে হয় নি । কিছু একটা পরিবর্তন তো অবশ্য ছিল ।

ছাদের এসে অনেক টা সময় এদিক ওদিক হাটতে লাগলাম । পুরো ছাদে আর কেউ নেই । নিশি এক দিকেই দাড়িয়ে আছে । আমি এদিক ওদিন হাটার পরে নিশির পাসে এলে দাড়াতেই নিশি বলল

-আমার ছোট বেলা থেকেই সাজতে অনেক পছন্দ করি ।

-জি । আমি বুঝতে পারছি ।

বেশ খানিকটা নিরবতা ।

অরিনের কাছে আমি সেদিনই শুনেছিলাম । নিশি নাকি সাজ গোজ অনেক পছন্দ করে । আর আমার মায়েরও এমন একটা ছেলের বউ চাই যে সব সময় ঘর আলো করে সেজে গুজে বসে থাকবে । যে আসবে তাকে দেখাবে দেখো আমার বউমা কত সুন্দরী ।

আমি আর কি বলবো ঠিক বুঝতে পারলাম না । নিশি বলল

-জীবনে এই প্রথম নিজেকে এতো অপমানিত মনে হল আমি আপনাকে বলে বোঝাতে পারবো না । আমি আসলে …….. আমি আসলে…..।

নিশির কথা টা আমি নিজে শেষ করে দিলাম

-আপনাকে কেউ রিজেক্ট করতে পারে এটা আমি কোন দিন ভাবতেই পারেন নি, তাই না ?

একটু চুপ করে থেকে নিশি বলল

-জি ।

-এখন ?

-জানি না ।

-আচ্ছা আপনি হঠাৎ করে আমাদের বাসায় এসে হাজির কেন বলেন তো ?

-জানি না ।

-মা বলেছে ?

-জানি না ।

-অরিনের বুদ্ধি ।

-জানি না ।

যে কথাই বলি সে কথাতেই মেয়ে বলে জানি না ।

আমি বললাম

-আমাকে বিয়ে করবেন ?

-জানি ….. । …….অ্যা…. কি বললেন ?

-কিছু বলি নি ।

বলেই হেসে ফেললাম । অন্ধকারের ভিতর নিশি আমার দিকে কেমন চোখ তাকিয়ে রইলো । আমি বললাম

-আচ্ছা আপনি যে নিজের যখন এতো জন ছেলেকে রিজেক্ট করেছেন তখন কি আপনার একবারও মনে হয় নি যে তাদের মনে কেমন লেগেছে ?

নিশি কোন কথা না বলে চুপ করে রইলো । আমি বললাম

-যদিও পছন্দ অপছন্দের ব্যাপার একান্তই আপনার নিজের ব্যাপার । তেমনি অন্যের পছন্দ অপছন্দের তো একটা ব্যাপার আছে । তাই না ?

-কিন্তু আপনার কারন টা ?

আবারও কিছুটা সময় চুপ ।

-আসলে একটা ব্যাপার কি, মানুষ যেটা পায় না সেটার ব্যাপারে মানুষের আগ্রহের শেষ থাকে না । ঠিক যেমন টা আপনার এখন মনে হচ্ছে আপনার । যখন আপনার সাথে যখন বিয়ে হয় দেখবেন পরে আফসোস হবে ।

-না হবে না ।

“না হবে না” নিশির এই কথাটাতে বেশ দৃঢ়তা লক্ষ্য করলাম ।

-এতো শিওর কেন হচ্ছেন ?

-আমি জানি ।

-তাই ? যদি পরে সমস্যা হয় ?

-হবে না ।

-বাহ । এতো নিশ্চিত আপনি কিভাবে হচ্ছেন বলেন তো ? আমি নিজেই এখন খানিকটা কনফিউজ হয়ে যাচ্ছি । মনে হচ্ছে আপনাকে বিয়ে করে ফেলি ।

-চলুন । বিয়ে করে ফেলি ।

এই মেয়ের মাথায় আসলেই সমস্যা আছে । অবশ্যই আছে । তা হলে এমন পাগলামো কেউ করতে পারে । আমার কেন জানি মনে হচ্ছে কেবল একটা নাই মেয়েটার সব কিছু ওলট পালট করে দিয়েছে । কিছুতই স্বাভাবিক চিন্তা করতে পারছে না ।

আমি আবারও হাহা করে হেসে ফেললাম । বললাম

-চলুন নিচে চলুন । আপনার মাথা গরম হয়ে আছে । রাতে আরও ভালো করে, ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করবেন । সকালে আপনার সাথে কথা হবে আরও । ঠিক আছে ।

আমি ফেরার পথে ঘুরবো ঠিক তখনই নিশি একটা অবাক করা কাজ করলো । কেন করলো আমি জানি না । তবে আমি নিজেও খানিকটা সময় অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম ।

কয়েক মুহর্ত আসলেই যেন সব কিছু থেমে গেল । যখন নিশি আমার থেকে পৃথক হল তখন যেন আবারও পৃথিবী সচল হল ।

সিড়ি নিশি আগে আগে নামছিল আমি ওর একটু পেছন পেছন । অনুভব করছিলাম একটা অন্য রকম ভাললাগার অনুভুতি আমাকে পেয়ে বসেছে ।

এই অজানা অনুভুতির কোন জান নেই । নামতে নামতে শোমী ভাইয়ের কথাই মনে হল “আরে থিউরীর গুল্লি মার । মানুষের জন্য থিউরী, থিউরীর জন্য মানুষ না”

পরিশিষ্টঃ

বিয়ের সাজ পার্লার থেকেও করিয়ে আনলেও অদ্ভুত হলে সত্যি যে নিশি ঠোঁটে বিন্দু মাত্র লিপস্টিক দেয় নি । যদিও তাতে খুব বেশি সমস্যা হচ্ছিলো না । লিপস্টিক ছাড়াই ওর ঠোঁট দুটো বেশি সুন্দর লাগছিল । যাক সমস্যা না । রাতের বেলা লিপস্টিক পেটের ভেতর যাবে না এটা একটা ভাল কথা ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 51

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →